হঠাৎ বুক ধড়ফড়, কখনও অল্পস্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে কেউই খুব একটা মাথা ঘামান না। এমনকী অল্প সময়ের জন্য ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলেও অ্যাসিডিটিকে দায়ী করেন। অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ হার্টের ছন্দের তারতম্য হলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাঝে মধ্যেই ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসে, একটু উত্তেজিত হলেই প্যালপিটেশন শুরু হয়, কখনও আবার চোখের সামনে ক্ষণিকের জন্য নেমে আসে অন্ধকার পর্দা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে কার্ডিয়াক ডিসরিদিমিয়া, সাধারণের কাছে পরিচিত হার্ট অ্যারিদমিয়া নামে। অর্থাৎ কিনা হার্টের ছন্দের গোলমাল। কখনও হার্ট প্রয়োজনের থেকে দ্রুত গতিতে পাম্প করে, কখনও আবার অত্যন্ত ধীর গতিতে। একথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হার্টের ছন্দের এই গোলযোগ বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে, যে-কোনও সময়েই অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ডা. প্রকাশ চন্দ্র মণ্ডল।
হার্টের অসুখে বিপদ এড়ানোর উপায় কী?
স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের থেকে কম বা বেশি হৃদস্পন্দন হলেই নানান শরীরিক সমস্যার সূত্রপাত হয়। মিনিটে ১০০ বা তারও বেশিবার হৃদস্পন্দন হলে তাকে বলে ট্র্যাকিকার্ডিয়া। আর মিনিটে ৬০-এর কম বার হলে তাকে বলা হয় ব্র্যাডিকার্ডিয়া। হার্টের এই অসুখকে গ্রাহ্য না করলে আচমকা বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদিও অল্পস্বল্প গোলযোগ হলে ব্যাপারটা খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু অনেক সময় অ্যারিদমিয়া থেকে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেলিয়োরের মতো মারাত্মক শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। তাই হার্টের যে-কোনও সমস্যা হলে গ্যাস অম্বল ভেবে ফেলে না রেখে, অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
হার্টের ছন্দ কম বেশি হয় কেন?
বিভিন্ন কারণে হার্টের ছন্দ বিঘ্নিত হতে পারে। যেমন–
- হার্টের কোনও জন্মগত ও গঠনগত ত্রুটি থাকলে
- ধূমপান ও নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান
- ডায়াবিটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার
- থাইরয়েড
- লাগাতার স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি
- হার্বাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- প্রচলিত ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অসুখের প্রবণতা বাড়ে
কী কী উপসর্গ দেখলে সাবধান হতে হবে?
এই অসুখের অন্যতম উপসর্গ বুক ধড়ফড় করা। এছাড়াও কিছু আনুষঙ্গিক লক্ষণ দেখলে অবশ্যই হার্ট স্পেশালিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
- বুকে ব্যথা
- নিশ্বাসের কষ্ট
- সামগ্রিক দুর্বলতা
- মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। এছাড়া বুক ধড়ফড় আর হাঁপিয়ে যাওয়া তো আছেই।
কী কী পরীক্ষা করাতে হবে?
- ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি
- হল্টার মনিটর
- ইকোকার্ডিওগ্রাম
- চেষ্ট এক্স-রে
- টিল্ট টেবল টেস্ট ও ইপি স্টাডি, এছাড়া রক্তের ও প্রস্রাবের কিছু রুটিন পরীক্ষা করানো দরকার। হৃৎপিন্ডের অবস্থা বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঠিক কী চিকিৎসা করা দরকার।
হার্টের ছন্দ বিঘ্নিত হওয়ার চিকিৎসা কী?
এই ধরনের হার্টের অসুখে প্রথমেই রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ দেওয়া হয়। কেননা এর মধ্যে রক্তের জমাটবাঁধা ডেলা আটকে গেলে রোগীর অবস্থা আচমকা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া যদি রোগীর হৃদস্পন্দন আচমকা থেমে যায়, তখন ডিফিব্রিলেটরের সাহায্য নিতে হয়। তবে এই রোগের সব থেকে ভালো চিকিৎসা আইসিডি পেসমেকারের প্রতিস্থাপন। অ্যারিদমিয়ার চিকিৎসা না করালে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভাবনা থাকে। তাই সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সুচিকিৎসা করানো দরকার। আর অবশ্যই ধূমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস ছেড়ে দিতেই হবে।