শরীরের কাঠামোর উপকরণ হচ্ছে অস্থি বা হাড়। তাই শরীরের প্রতিটি অস্থি এবং অস্থিসন্ধিকে সতেজ ও সবল রাখতে হবে। আর এই অস্থিকে বাঁচিয়ে রাখে সঠিক রক্ত চলাচলের ধারা। কিন্তু কোনও কারণে যদি কোনও অংশে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, তাহলে সেই অংশের হাড় বা অস্থির মৃত্যু ঘটে। এই অবস্থাটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম’ বা এভিএন।

আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম-এর আক্ষরিক অর্থ কী ?

‘আভাস্কুলার’ শব্দের অর্থ নো ব্লাড ভেসেল্স এবং ‘নেক্রোসিস’ শব্দের অর্থ ‘ডেথ’। এককথায় বলা হয় অস্টিয়োনেক্রোসিস অর্থাৎ ‘বোন ডেথ’।

কোন বয়সের লোকেরা বেশি শিকার হন এই রোগের?

সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের লোকেরা এই রোগের শিকার হন বেশি। তবে শরীরের যে-কোনও জায়গার হাড়ে এই রোগ হতে পারে। অর্থাৎ, শুধু হিপ জয়েন্ট কিংবা গ্রোইন এরিয়া-র (কুঁচকি) জয়েন্ট এই রোগে আক্রান্ত হয় না, এভিএন শরীরের যে-কোনও অস্থিসন্ধিতে হতে পারে। তবে হিপ জয়েন্ট-এ যেহেতু ব্লাড ভেসেল (রক্তবাহী নালি) কম থাকে, তাই হিপ জয়েন্ট বেশি আক্রান্ত হয় এভিএন-এ।

কী কারণে ব্লাড ভেসেল ড্যামেজ হয়ে এভিএন-এর শিকার হয় অস্থিসন্ধি?

দুর্ঘটনাজনিত কারণে হাড় যদি ভেঙে যায় কিংবা স্থানচ্যুত হয়, তাহলে ব্লাড ভেসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এভিএন-এর শিকার হয়। তবে ব্লাড ভেসেল ড্যামেজ হওয়ার অন্য কারণও আছে। যেমন– বেশি পেইনকিলার সেবন, মদ্যপান কিংবা ধূমপানের কারণে অনেকসময় রক্তবাহী নালি ছোটো হয়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।

এভিএন-এর শিকার হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেবে?

এভিএন-এর শিকার হলে, কোনও ভারী জিনিস তোলার সময় কোমরে, কুঁচকিতে, নিতম্বে, উরুতে কিংবা শরীরের অন্য কোনও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভূত হবে। এই ব্যথা উৎসস্থল থেকে আশপাশের অংশে ছড়াবে। বিশ্রামের সময়, এমনকী ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এই ব্যথা।

এভিএন-এ আক্রান্তরা কী ধরনের চিকিৎসার সুযোগ পাবেন?

রোগী কতদিন ধরে এই রোগে ভুগছেন, অর্থাৎ কতদিন আগে এভিএন-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তার ওপর নির্ভর করবে চিকিৎসার পদ্ধতি। অবশ্য শুধু ডিডিজ-এর টাইম পিরিয়ড-ই নয়, আক্রান্তের বয়স, পেশাগত ধরন এবং স্বাস্থ্যগত দিকটিও চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়। এভিএন ছাড়াও যদি অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে শরীরে, তাহলেও চিকিৎসা পদ্ধতির হেরফের হতে পারে। তবে নন-সার্জিক্যাল এবং সার্জিক্যাল দু’রকম চিকিৎসা পদ্ধতিই আছে এভিএন-এর ক্ষেত্রে।

নন-সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্টঃ নন-সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট-এর ক্ষেত্রে বেশিরভাগই পেইনকিলার ট্যাবলেট সেবন করেই রোগমুক্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে হিতে বিপরীত হবে। অর্থাৎ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই, আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম বা এভিএন যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, তাহলে বডি ওয়েট-এর ফলে যাতে হাড় ভেঙে না যায়, সেইজন্য রোগীকে ক্রাচ কিংবা ওয়াকার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন বা শক্ ওয়েব থেরাপির মাধ্যমে রক্তবাহী নালিগুলিকে সতেজ করার চেষ্টা করা হয়।

সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্টঃ আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ডোম বা এভিএন যদি অ্যাডভান্স স্টেজ-এ থাকে, তাহলে সার্জারি ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এভিএন অসুখটি যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিপ জয়েন্ট-এ হয়, তাই টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম হিপ-বোন ব্যবহার করা হয় এবং লেটেস্ট টেকনোলজি-র (শর্ট ফেমোরাল স্টেম উইদ অক্সিডাইজ্ড জারকোনিয়াম) সাহায্য নিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হয়। এরফলে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান। তবে সার্জারির পর কিছুদিন ফিজিয়ো থেরাপি করতে হবে দিনে অন্তত দুবার, কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...