শহুরে মানুষদের বেড়ানোর ইচ্ছা আর ধর্মভীরুদের তীর্থযাত্রা, এটাই হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে একশ্রেণির অর্থ পিপাসুর লোভ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গাছ কেটে রাস্তা, ইমারত, বেআইনি হোটেল নির্মাণ যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে, তাতে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবেই। তাই অল্প ধ্বসই আজকাল বড়োসড়ো বিপদের সম্ভাবনা ডেকে আনছে। যখন তখন ভূমিস্খলন বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে।
পর্যটনশিল্পকে চাঙ্গা করার চেষ্টা সব রাজ্যেরই থাকে, এতে স্থানীয়দের আয় যেমন বাড়ে, সরকারের ঘরেও টাকা আসে। কিন্তু টুরিজম ডেভেলপমেন্ট এক জিনিস, আর বেআইনি কারবারকে মদত দেওয়া আর-এক ব্যাপার। পর্যটকরা ভ্রমণের জন্যই আসুক কিংবা তীর্থযাত্রায়, কিছু পরিষেবা তো তাদের প্রাপ্য। থাকার বন্দোবস্ত, গাড়ি চলাচলের মতো রাস্তা সবই অপরিহার্য। কিন্তু এর জন্য অহরহ গাছ কেটে ফেলা ও পাহাড় ফাটিয়ে রাস্তা নির্মাণে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার ছিল।
পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে এই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পর্যটন শিল্প।Hill Tourism in India -র ক্ষেত্রে রয়েছে সচেতনতার অভাব৷ সিমলা, নৈনিতাল, মুসৌরি, দার্জিলিং-এর সঙ্গে এখন দিল্লি বা মুম্বইয়ের কোনও তফাত নেই। অট্টালিকার সারিতে মুখ ঢেকে গিয়েছে। বৈষ্ণদেবী, কেদার, বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী- ফি বছর চারধাম যাত্রার নামে পুণ্যার্থীদের উপর লুঠতরাজ চলছে। মোটা দক্ষিণা নিচ্ছেন পুরোহিতরা।
বাস্তব কথা হল আমাদের দেশে প্রকৃতিকে ভালোবেসে পর্যটনে অভিলাষী হন হাতে গোনা কিছু মনুষ৷ তারাই বেড়াতে গিয়ে প্লাস্টিকের ঠোঙা, কোল্ড ড্রিংস-এর বোতল প্রভৃতি ছড়িয়ে নোংরা করে আসেন না৷ তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিষয়টা, প্রকৃতি রক্ষা, গাছ লাগানোর গুরুত্ব৷ কিন্তু দেশের আপামর জনগণের সেই সচেতনতা কই? সরকারও তাদের সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায় না৷
সরকার চায় আরও বেশি করে মানুষ ধর্মকর্মে নিমজ্জিত থাকুক। পাহাড়ে তীর্থক্ষেত্র তৈরি করার এটাই সবচেয়ে লাভজনক দিক৷ যেখানে রাস্তা বানানো প্রাকৃতিক ভাবে অনুচিত, এই ধর্মের ব্যাবসার প্রসারে সেখানেও পাহাড় ফাটানোর কাজ চলছে। ভূমি অশক্ত হচ্ছে। গাছ কমছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে। একদিকে হোটেল রিসর্টের ঠেলায় প্রকৃতির হত্যালীলা চলছে। অন্যদিকে টুরিস্ট তথা পুণ্যলোভীদের পকেট কাটতে ব্যস্ত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সব মিলে পাহাড়ে পর্যটন এখন এক জঘন্য খেলায় পরিবর্তিত হয়েছে। হিমালয়ে যে-ক্ষতি আমরা করেছি, প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিতে এবার প্রস্তুত। ক্লাউড বার্সট থেকে জলোচ্ছ্বাসের মতো ঘটনা বাড়ছে।
পর্যটন ভালো। শিল্পও ভালো। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য ফেরাতে বেড়াতে যাবেন এও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু যদি বেড়াতে গিয়ে বিপদের ভয় লেগে থাকে, তাহলে তো গোটা বিষয়টাই মাটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটনে যাওয়ার ব্যাপারে এবার সত্যিই ভেবে দেখতে হবে।তাই Protect Nature. Protect Mountains.