হুজুগে সকলেই একটা জিনিস কমবেশি করেই থাকেন, যার বর্তমান বাজারি নাম– ‘শপিং’। সেটা নিজের নিজের আর্থিক অবস্থানুসারে মান পায়– ‘আলপিন টু এলিফ্যান্ট’। অর্থাৎ কেউ হয়তো তার স্ত্রীকে দিল একটা মিক্সার-গ্রাইন্ডার, আবার কেউ হয়তো গতবছরে দেওয়া কথারাখতে গিয়ে কিনে দিল একটা ফ্ল্যাট।
মূল্যর বিনিময়ে এই ক্রয় করতে গিয়ে বহু মানুষকেই পরবর্তীকালে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সমস্যা – ১
সূর্যকান্তবাবু এক বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্ণধার। গত দু’বছর আগে কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি ফ্ল্যাট ‘বুক’ করেছিলেন। ফ্ল্যাট তৈরি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে বেশ কিছুটা বেশি টাকা চেয়ে বসল প্রোমোটার। নানান অছিলায় সূর্যবাবুকে বার তিরিশেক ঘুরতে হল ওই প্রোমোটারের দরজায়। কিন্তু সঠিকভাবে কোনও সুরাহা হল না। সেই প্রোমোটার সাহেবের বেআইনি টাকা চাইবার অঙ্কটা এবার যেন আরও একটু বেড়ে গেল।
সূর্যবাবুও দমবার পাত্র নন। তিনি স্থানীয় বিধায়কের দরবারে কড়া নাড়লেন। বিধায়ক মশায়ের আদেশে অবশ্য প্রোমোটার তার অতিরিক্ত দাবির দশ শতাংশ ছাড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হল। অর্থাৎ বেআইনি এক দাবির অনেকটাই বলবৎ রইল।
শেষ পর্যন্ত আইনি উপদেশে ‘কনজিউমার ফোরাম’-এর দারস্থ হলেন সূর্যবাবু। আট মাস পরে সূর্যবাবু তার মেয়ের বিয়েতে ওই ফ্ল্যাট যৌতুক দিয়েছেন। তাও ফ্ল্যাটটাকে মনের মতো করে সাজিয়ে।
সমস্যা – ২
শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে পেটের ব্যথার উপশম খুঁজতে এক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন অন্তরাদেবী। মোটা টাকা দিয়ে মাসে মাসে ওষুধও কিনছিলেন ওই ডাক্তারবাবুর কাছ থেকেই। কিন্তু মাস দু’য়েক যাওয়ার পর ব্যথাটা এমন আকার ধারণ করল যে, অন্তরাদেবী এবার শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। অন্তরাদেবীর ছেলে দিল্লি থেকে এসে মায়ের এহেন হাল দেখে আর একদিনও কালবিলম্ব না করে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করলেন চিকিৎসা করাতে। সেখানে গিয়ে বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হলেন। অন্তরাদেবীর পেটে একটা টিউমার হয়েছে যেটা এমন অবস্থায় যে, যখন-তখন বার্স্ট করতে পারে।
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে দিন কুড়ি বাদে অন্তরাদেবী অপারেশন করিয়ে, সুস্থ হয়ে ফিরে এলেন। কনজিউমার ফোরামের আদেশে ওই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ এবং তৎসহ সমগ্র অপারেশন-এর খরচ দিতে হয়েছে। অন্তরাদেবীর ছেলে নিশ্চিন্ত মনে আবার ফিরে গেছে দিল্লিতে।
সমস্যা-৩
‘যাইহোক আর তাইহোক এই সুন্দর ফ্রিজটাই আমি কিনব।’– কথাটা সংযুক্তা বলেছিল রাহুলকে। রাহুল বউয়ের এই আবদারটাও ফেলতে পারেনি কিন্তু কেনার সময় এটাও ভাবেনি যে কতবড়ো জোড়ানলের বন্দুকের মতো জোড়া সমস্যা সে বাড়ি নিয়ে আসছে।
সমস্যার প্রথমটা হল সেই ‘ফ্রিজ’ আর দ্বিতীয়টা এল ব্যাংক-এর দিক থেকে।
ফ্রিজটা বাড়ি আনার এগারো দিন পর থেকেই তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একের পর এক বিকল হতে থাকে। বহুবার কোম্পানিকে জানানোর পরেও ফ্রিজ নিয়ে কোনও সুরাহা প্রায় চারমাস পরেও কোম্পানি দিতে না পারায় এবং শেষের দিকে কোম্পানির বিষয়টার প্রতি একটা গা-ঝাড়া হাবভাব দেখে, কনজিউমার ফোরাম-এর দ্বারস্থ হয় রাহুল।
এদি্কে ব্যাংক-এর যে – ক্রেডিট কার্ড দিয়ে রাহুল এই ফ্রিজ কিনেছিল, দেখা গেল ব্যাংক দু’বার ফ্রিজের দাম কেটেছে এবং তারপরেও ব্যাংক-এর কোনও হেলদোল নেই। এই বিষয়টাও শেষমেশ কনজিউমার ফোরাম-এর হাতে তুলে দেয় রাহুল। রাহুল দুটি বিষয়েই ন্যায্য সুরাহা পেয়েছে। ফ্রিজও নতুন এসেছে।
ক্রেতা সুরক্ষার জন্য সরকার এই বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করেছে। এর জন্য আইন আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট আর এর অন্তর্গত ‘রুলস’ সমূহ।
অর্থের বিনিময়ে পাওয়া কোনও বস্তু বা পরিষেবা যদি দেয় অর্থের মান-পর্যায়ের না হয়, তবে জেলার কনজিউমার আদালতে দরখাস্ত করতে হয় এবং এব্যাপারে দু’মাসের মধ্যে মামলা শেষ করতে আইন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তাহলে এবার নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করুন। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এবং ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সর্বদা উপভোক্তাদের পাশে আছে। সঙ্গে আছে ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ক আইন।