বয়স পঞ্চাশ ছাড়ালে ছোটোখাটো স্মৃতিভ্রংশকে বয়স বাড়ার স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু এই লক্ষণগুলিকে যতটা সাধারণ ব্যাপার বলে ধরে নেওয়া হয়, ততটা নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে যে, রোগটি Alzheimer’s disease-এর প্রথম ধাপ।
হ্যাঁ, অ্যালজাইমারস এমন একটা ক্রমবর্ধমান রোগ, যা স্মৃতিশক্তি তো ধবংস করেই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্যান্য ক্ষমতাগুলিকেও নষ্ট করে দেয়। এই রোগটি ডিমেনশিয়া নামক ব্যাধিটির সবচেয়ে ব্যাপ্ত ধরন। ডিমেনশিয়া আসলে মস্তিষ্কের একগুচ্ছ অসুখের নাম যার কারণে বুদ্ধি এবং সামাজিক চালচলনের দক্ষতা ক্রমাগত লোপ পেতে থাকে এবং যা বেড়ে গেলে দৈনন্দিন জীবনযাপনে অসুবিধা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, কোশগুলিই নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের মৃত্যু হয়। ফলে Mental Health সংক্রান্ত এই রোগে, স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের আরও অনেক ক্রিয়াকর্ম লোপ পেতে থাকে।
Alzheimer’s রোগের কারণ
বিশ্বে সাতাশ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ষাটোধর্ব মানুষই বেশি। বৈজ্ঞানিকদের ভবিষ্যদ্বাণী যে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্রতি পঁচাশিজন মানুষের মধ্যে একজন, এই রোগে ভুগবেন। মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত এবং তারা বেশি ভোগেন। কিছু রিস্ক-ফ্যাক্টর্স আছে যা রোগীকে এই রোগের দিকে ঠেলে দেয়। প্রথমত, কোনও ফার্স্ট-ডিগ্রি আত্মীয়ের এই রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, মাথার গভীরে আঘাত পেয়ে থাকলে বা এরকম বারংবার আঘাতের ইতিহাস থাকলেও এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। চাকরিতে, কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্কে ও জীবনের মূল্যবোধে অসন্তুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা থেকেও অ্যালজাইমারস ডিজিজের জন্ম হতে পারে। কম বয়সে মেনোপজ হওয়ার কারণেও এই রোগ হতে পারে।
সমস্যা ঠেকাতে
অ্যালজাইমারস ডিজিজের কবল থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভের পথ নেই বটে, তবে সাম্প্রতিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে কিছুদিন স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা সম্ভব এবং চিন্তাশক্তির ক্ষয় কিছুটা বিলম্বিত করা যায়। ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিটির জন্য একটা নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের অতিরিক্ত আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। তার চলাফেরার পথে মজবুত হ্যান্ড-রেল বা হাতলের ব্যবস্থা করা দরকার, কারণ এদের পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এদের ঘর্ষণশক্তি যুক্ত চটি-জুতোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ঘরে আয়নার সংখ্যা কমিয়ে দিতে হবে। কারণ এতে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘাবড়ে যেতে পারেন। প্রতিদিন আধঘন্টা ব্যায়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন। কম তৈলাক্ত খাবার এবং ফল ও সবজি খাওয়া দরকার।
ওমেগা-থ্রি-ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই উপকারী। দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং পুরোনো ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, এমন আলোচনার আদানপ্রদান এদের সঙ্গে প্রতিদিন করতে হবে।
দশটি পূর্বলক্ষণ
- দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন ঘটানোর মতো স্মৃতিক্ষয়, যেমন সাম্প্রতিক শোনা খবর, গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও নিজের বিয়ের তারিখ বা সন্তানের জন্মদিনের মতো জীবনের ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়া। একই কথা বারবার জানতে চাওয়া। কিছু একটা মনে রাখার জন্য লিখে রাখা বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নেওয়া।
- – পরিকল্পনা করতে বা সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধে বোধ করা। জানা রান্নার প্রণালী মনে রাখায়, মাসিক কোনও বিল মেটানোর কথা মনে রাখায়, সংখ্যা নিয়ে কাজ করায়, সঠিক ভাবে হিসেব করায় এবং আগের মতো দীর্ঘক্ষণ কাজে মনোনিবেশ করায় অসুবিধে বোধ করা।
- বাড়ির বা কর্মক্ষেত্রের পরিচিত ও অভ্যস্ত কোনও কাজ সম্পূর্ণ করতে অসুবিধা। যেমন পরিচিত জায়গায় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে, বাজেটের মধ্যে খরচ বেঁধে রাখতে, খেলাধুলার নিয়ম মনে রাখতে অসুবিধে বোধ করা।
- স্থান ও কাল নিয়ে গোলমাল। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সপ্তাহের দিন নিয়ে গোলমাল।
- ভিজুয়াল ইমেজ ও অবস্থানের দূরত্ব বুঝতে অসুবিধা, যেমন পড়তে, দূরত্ব বিচার করতে এবং রং চিনতে অসুবিধা।
- কথা বলা ও লেখার সময় শব্দ নিয়ে সমস্যা, যেমন আলোচনার সময় কথার খেই রাখতে না পারা, বা সঠিক শব্দ চয়ন করতে সমস্যা।
- বেঠিক জায়গায় কোনও জিনিস রেখে দিয়ে তারপর ধাপে ধাপে স্মৃতিচারণ করে ফিরে দেখার সমস্যা। এরা অসম্ভাব্য জায়গায় জিনিস ফেলে রেখে মনে মনে ধাপে ধাপে ফিরে দেখে সেগুলোকে আর খুঁজে বার করতে পারেন না।
- বিচার শক্তির দীনতার কারণে এরা বেঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
- কাজ ও সামাজিক ক্রিয়াকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ায় কাজের, পারিবারিক ও সামাজিক দায়দায়িত্ব নিতে চান না, এমনকী নিজের শখের কাজের থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেন।
- মেজাজের ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনে এরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সন্দেহপ্রবণ, হতাশাগ্রস্ত, ভীতসন্ত্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।