নিজের বাড়ি নিয়ে সকলেরই মনে একটা ইচ্ছে, স্বপ্ন থাকে। বাড়িটিকে পছন্দমতো সাজিয়ে তুলতে কার না মন চায় কিন্তু পকেট পারমিট করতে হবে। সবকিছু ভেবেচিন্তে তবে কাজে নামা। বিভিন্ন ধরনের কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখে বিপণিগুলি নিত্য নতুন পণ্যসম্ভারে বাজার ভরিয়ে তুলেছে। বাজেট অনুযায়ী, পছন্দসই ফার্নিশিংস আর আসবাবের কোনও অভাব নেই বাজারে। বাছাই করে নিতে পারলেই হল।
এখন এমন অনেক বিপণি রয়েছে, তাদের সার্ভিস প্রোভাইডারও বলতে পারেন, যারা গ্রাহকের পছন্দমতো ও প্রয়োজন সাপেক্ষে বাড়ির ডেকর এবং সাজাবার অ্যাক্সেসরিজ নিজেরাই মাপজোখ নিয়ে বানিয়ে দেয়। গ্রাহককে রেডিমেড কিনতে হয় না। সবসময় এর জন্য যে ইন্টিরিয়র ডেকরেটর-এর দরকার হয়, তা না। ইন্টিরিয়র ডেকরেটরের মতামত নিতেও দরকার অর্থ। যদি আপনার বাজেট পারমিট না করে, তাহলে নিজেই পছন্দ করে অনেক কম অর্থের বিনিময়ে বাসস্থানকে ডিজাইনার টাচ দিতে পারেন।
প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে কীরকম অন্দরসজ্জা আপনার এবং আপনার পরিবারের পছন্দ– ট্র্যাডিশনাল না ফিউশন। তারপরে আসবে আলোর বিকল্প, আসবাব, ফ্লোরিং, বাড়ির বাইরের এবং ভিতরের রং। এই সবকিছুরই দাম জেনে, কিছুটা দরদাম করে, বাজেটের মধ্যে যেটা আসবে, সেই পছন্দের জিনিস দিয়েই সাজিয়ে তুলুন নিজের ‘একান্ত আপন’ বাড়িটিকে।
কাস্টমাইজড অন্দরসজ্জার লাভ
হোম-ডেকরের জন্য কাস্টমাইজড অন্দরসজ্জার সবথেকে বড়ো লাভ হল, প্রত্যেক গ্রাহক নিজের পছন্দ অনুসারে আলাদা স্টাইল এবং ডিজাইন-এর আসবাব অথবা অ্যাক্সেসরিজ অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। একটা সময় ছিল যখন একজনের বাড়ির আসবাবপত্র অথবা দেয়ালের রং কিংবা পর্দার ডিজাইন দেখে, অপরজন নিজের বাড়ির জন্যও একই ডিজাইনের বা হয়তো একই দোকান থেকে আসবাবপত্র অথবা অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ-এর অর্ডার দিয়ে বসতেন। ফলত একই অ্যাপার্টমেন্টে সব ফ্ল্যাটেই প্রায় একই ধরনের ডেকর দেখতে পাওয়া যেত। সেই বেতের সোফা, লাল সিমেন্টের অথবা মোজাইক করা মেঝে, একই ডিজাইনের পর্দা ইত্যাদি। বাড়িতে ঢোকার আগেই বুঝে নেওয়া মুশকিল হতো ব্যক্তিটির সোশ্যাল স্ট্যান্ডার্ড। এখন একজন মানুষের সোশ্যাল স্টেটাস-এর উপরই নির্ভর করে ব্যক্তিটির বাড়ির অন্দরসজ্জা কীরকম হবে, কেমন হবে তার ব্যবহারিক আসবাব। কোথাও নিজস্বতার ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন এর ঠিক উলটোটাই দেখা যায়। সকলেই চায় তার নিজের পছন্দ যেন অন্যের সঙ্গে না মেলে। সে নিজের বাড়ি সাজাবার জন্য যা-যা পছন্দ করে কিনেছে, তাযেন অন্যের অনুকরণ একেবারেই না হয়। বহু ঘুরে এক্সক্লুসিভ অন্দর-সাজ কিনে আবাসিকদের সোশ্যাল স্টেটাস, রুচি সবকিছু মাথায় রেখে, তবেই বাড়ির প্রতিটি ঘর ডিজাইন করা হয়।
বাড়িটি সাজাবার আগে, যিনি ওই বাড়িতে থাকবেন তাঁর প্রয়োজন জেনে নেওয়াও জরুরি। বাড়ির প্রত্যেকটি ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বারান্দা, সেখানে কতটা করে জায়গা রয়েছে, কতটা জায়গা খালি ছাড়তে হবে ইত্যাদি মাথায় রেখে যখন বাড়িটিকে সাজাবার কথা ভাবা হয়, তখন তাকেই বলা হয় কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং। এতে ব্যক্তির প্রয়োজন, ঘরের রং, আসবাবের শেপ, ফ্যাব্রিক, মেটিরিয়াল, ডিজাইনিং, একের সঙ্গে অপরের সামঞ্জস্য বজায় রেখে সোফা, কুশন, দেয়াল, সিলিং, পর্দা– সবকিছুরই বিশেষ খেয়াল রাখা হয়।
বাজারে গিয়ে কিছু পছন্দ হলেই বাড়িতে নিয়ে এসে দেখা গেল ঘরের আকার অনুযায়ী ঠিকমতো অাঁটানো যাচ্ছে না– এরকম ঝামেলা অনেকসময়ই হয়ে থাকে। যেটাই বাড়িতে নতুন তৈরি করা হবে, তা যেন বাড়ির পুরো ডেকরের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে করানো হয় অথচ বাজেটও অ্যাপ্রুভ করে। লিভিংরুম-টি হয়তো আকারে ছোটো অথচ দোকানে গিয়ে পছন্দ হল বড়োসড়ো একটি সোফা। কখনওই সেটা মানানসই হবে না উপরন্তু জায়গাতেও সংকুলান ঘটবে। তার থেকে ভালো,ঞ্জঘরের আকার অনুযায়ী কাস্টমাইজড সোফা বানিয়ে নেওয়া এবং দেখাদেখি ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্রও।
একটি নামি বিপণির কর্ণধার জানালেন ‘কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র বিভিন্ন রকমের ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, জায়গা ইত্যাদি দেখে বানানো হয়। এতে গ্রাহকের নিজস্ব পছন্দের বিষয়টিও বিদ্যমান থাকে। সারা বাড়ির ডেকর এইভাবে পুরো বদলে ফেলা সম্ভব।
লেদার আপহোলস্ট্রির সঙ্গে সলিড কাঠের় আসবাব মানানসই হলেও গরমের অনুভূতি জাগায়। একটু বদলে যদি উড-এর জায়গায় তা কাচের করানো যায়, তাহলে রুচির সঙ্গে সঙ্গে গরজিয়াস লুক-ও পাওয়া যাবে। এইরকম ডিজাইনার ফার্নিচারের প্রচুর বিকল্পও রয়েছে। এগুলিকে মডার্ন লুকও দেওয়া যায় আবার গ্রাহক চাইলে ট্র্যাডিশনাল লুক দিয়েও তৈরি করা যায়।’
বিভিন্ন সটাইলে পাওয়া যায়
পরিবর্তিত ট্রেন্ডি স্টাইল-এর কথা মাথায় রেখে, বাড়িকে একটা ডিফারেন্ট লুক দেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকেও উপেক্ষা না করে, ডিজাইন এবং স্টাইল-এ বহু বিকল্প নিয়ে আজ হাজির রয়েছে বহু বিপণি। তাই রমরম করে চলছে কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র-এর ব্যাবসা।
অনেকেই মনে করেন কাস্টমাইজড লুক-এর জনপ্রিয়তার পিছনে মিডিয়ারও একটা বড়ো অবদান রয়েছে। টিভির পর্দায় নানা ধরনের আসবাবপত্রের বিজ্ঞাপন, সেলিব্রিটিদের বাড়ির অন্দরমহল, ভালোভাবে জীবনযাপনের নানা পরামর্শ ইত্যাদি নিয়ে কোনও না কোনও চ্যানেলে অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। ফলে সাধারণ জনসমাজেও এইরকম বাড়ি সাজাবার ইচ্ছে এখন আরও প্রাধান্য পাচ্ছে।
এখন নতুন গ্রাহকরা চাইছেন স্টাইলাইজড লুক যেটা কাস্টমাইজড মেকওভারেই পাওয়া সম্ভব। গ্রাহকের কী প্রয়োজন, কোনটা গ্রাহকের জন্য বেশি উপযোগী, গ্রাহকের কাছে জায়গা কতটা আছে, এইসব কিছুই মাথায় রেখে সুন্দর, উপযোগী থিম, প্রোডাক্ট এবং সুসজ্জার সমাধান করতেই এসেছে কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে সঙ্গে টেকনিকও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এইজন্য টেকনিক্যাল ভিউ পয়েন্টের দিক থেকেও এর কদর অনেক বেশি।
পছন্দসই ডেকর
আমরা যে-রঙের পর্দা লাগাই সেই রঙের কুশন কভার, বেড কভার ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজাবার চেষ্টা করি, যাতে রং ও স্টাইল-এ একটা মিলমিশ থাকে। পর্দার ঝালর লাগাতে চাইলে দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাগানো যেতে পারে। ঘর আকারে ছোটো হলে, বড়ো যাতে লাগে সেইজন্য দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগানো যেতে পারে অথবা ওয়ালপেপারে পেন্ট করানো যেতে পারে। বেশিরভাগ বাড়িতে মোজাইক-এর মেঝে হয়। সোফার রং যদি ব্রাউন হয় তাহলে মেঝেতে ক্রিম রঙের টাইলস লাগালে সুন্দর লাগবে এবং এরসঙ্গে ম্যাচ করে ঘরে ওয়াল হ্যাঙ্গিং ঝোলালে ঘরের লুক কমপ্লিট হবে।
রান্নাঘরে কাস্টমাইজড লুক-এর সবথেকে বেশি দরকার। কারও উচ্চতা হয়তো মাঝারি কিন্তু ক্যাবিনেটগুলি অনেক উঁচুতে বানানো। কিছু বার করতে হলে দরকার লম্বা স্টুল-এর। এটা সত্যিই অসুবিধাজনক। নিজের উচ্চতা অনুযায়ী ক্যাবিনেট বানিয়ে নিলে ক্যাবিনেটে জিনিস রাখতে অনেক সুবিধা হবে। রান্নাঘরে স্টোরেজ-এর জন্য সবসময়ই প্রয়োজন ক্যাবিনেট-এর। তাই উচ্চতা অনুযায়ী ক্যাবিনেট বানিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধির পরিচয়।
জনসাধারণের মনে এই ধারণা রয়েছে যে, নিজের পছন্দমতো বাড়ি সাজাতে গেলেই অর্থব্যয় অনেক বেশি হবে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো এই ধারণাটা সত্যি ছিল কিন্তু এখন সময় বদলেছে। কারণ আর কিছুই নয়, এখন বাজারে ভ্যারাইটি এবং বিভিন্ন রকমের মেটিরিয়ালের প্রাচুর্য রয়েছে। কাঠের আসবাব কিনতে গেলে, কাঠের মধ্যেই নানা ভ্যারাইটি পাবেন। তাছাড়াও দামি থেকে শুরু করে কমদামি, সবই পেয়ে যাবেন একই ছাদের তলায়। এরকমই ফ্যাব্রিক, কিচেন অ্যাক্সেসরিজ, ডেকরেশনের জিনিস, সবই ফ্ল্যাট অথবা অ্যাপার্টমেন্ট অনুযায়ী এবং বাজেটের মধ্যে পেয়ে যাওয়া কিছুমাত্র মুশকিল নয় এখন। প্রয়োজন শুধুমাত্র সঠিক খোঁজখবর নেওয়ার। সুতরাং অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রয়োজন জানুন এবং জীবনকে করে তুলুন আরামদায়ক।