দেশের মধ্যেই দুটো ভিন্ন সমাজ তৈরির জোর প্রয়াস চলছে। এক- আর্থিকভাবে সচ্ছলদের সমাজ, দুই- গরিব মানুষের সমাজ। এমনভাবে এই সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে যে, ভবিষ্যতে হয়তো এই দুই সমাজের লোকজন কেউ কারওর মুখদর্শন করবেন না। আর্থিক সচ্ছলরা শুধু ধনীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন আর গরিবরা দিনভর পরিশ্রম করে দিনান্তে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেবেন বিছানায়- এটাই হয়তো বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। এই দুই শ্রেণির মধ্যেও হয়তো আরও ভাগাভাগি হবে। খুব ধনী, মাঝারি ধনী, ধনী আবার খুব গরিব, মধ্য গরিব এবং হতদরিদ্র শ্রেণির ভেদাভেদ আরও প্রকট হবে।
দিল্লি-আগ্রার মধ্যে বিমান যোগাযোগ করার জন্য যে-জহর বিমানবন্দরের প্রস্তাব করেছেন নরেন্দ্র মোদি, তা ধনী-গরিবের বিভাজন আরও বাড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা নেবে। বিশাল ৩ হাজার একর জুড়ে গড়ে ওঠা এই বিমানবন্দরের জন্য খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করার পর তা জনগণের থেকে কর বাবদ তোলা হবে। অথচ ওই ৭৫ কিলোমিটার পথে বায়ুপথে আরামে সফর করবেন হয়তো শুধু আর্থিক সচ্ছল মানুষেরা। বাকি লোকেরা ভেড়ার মতো গাদাগাদি করে বাসে যাতায়াত করবেন। তাই যতই যা হোক না কেন, গরিবের কষ্ট কোনওদিনই লাঘব হবে না। তারা ন্যুনতম আরামটুকুও পাবেন না। যাতায়াতের কষ্টকর অভিজ্ঞতার বড়ো নিদর্শন মুম্বই এবং কলকাতার লোকাল ট্রেন। আবার দিল্লিতে তিন চাকার যান ছাড়া মধ্যবিত্ত অচল।
এই ভেদাভেদের দরুণ সড়কপথও এমন ভাবে তৈরি হবে হয়তো, যার ফলে ধনী-গরিব কেউ কাউকে একসঙ্গে পাবে না। কেউ কারওর মুখ দেখবে না। ধনীরা শুধু ধনীদের সঙ্গেই মেলামেশা করবে, গরিবের বস্তি থাকবে একইরকম ব্রাত্য।
জহর বিমানবন্দর পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ বিমানবন্দর হতে চলেছে। কিন্তু ভারতের প্রতি ব্যক্তির আয়, পৃথিবীর চতুর্থ স্হানে থাকা ধনী ব্যক্তির সমান কি? এই বিমানবন্দর এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর হতে চলেছে। কিন্তু চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া তো অনেক দূর, থাইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনাম-এর জনগণের সমান কোনওদিন হবে কি আমাদের দেশের নাগরিকরা?
জহর বিমানবন্দর হয়তো জাঁকজমকে বিদেশের সঙ্গে পাল্লা দেবে, দামি খাবারও পাওয়া যাবে বড়ো বড়ো রেস্তোরাঁয়। এক কাপ চায়ের দাম হয়তো হবে ২৫০ টাকা কিন্তু গরিব মানুষের তাতে কী লাভ হবে? সাধারণ গৃহবধূদের মুখে কি হাসি ফুটবে? তারা তো যেই তিমিরে ছিলেন সেখানেই বিরাজ করবেন।
জহর বিমানবন্দর হয়তো প্রগতির প্রতীক হবে। কিন্তু এই প্রগতি তখনই সার্থক হবে যখন আমজনতার জীবনও সমান মর্যাদা পাবে। যেখানে আমজনতার জীবন নিম্নমুখী হচ্ছে ক্রমশ, সেখানে মোদি-যোগীর এই বাহাদুরি কোন কাজে লাগবে?