তাহলে কী…? ভেজানো দরজাটা দু’হাত দিয়ে খুলতেই গায়ের ভেতরটা গুলিয়ে ওঠে। অন্ধকার ঘরে দলা দলা একটা বিশ্রী গন্ধ লেগে। তার সাথে সিগারেটের ধোঁয়ায় চোখমুখ জ্বালা জ্বালা করছে।
তমাল ড্রিংক করেছে? কেন? ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে দেয় কস্তুরী। দেখে বিছানার কোণে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে তমাল। আলো জ্বালাতেও ওর মুখে কোনও হেলদোল নেই। কী বিষ পুষে রেখেছে মনে তমাল?
তমাল…। ছোট্ট ডাকে কাছে এগিয়ে যায় কস্তুরী।
তুমি কখন এসেছ? আমাকে তো বলোনি আজ আগে ফিরবে?
তাহলে কি তুমি যেতে না?
কী বলছ কী তুমি? কেন এমন করছ? আমি তো পরশু একবার বলেছিলাম তোমায় সহেলীর কাছে…।
ভাট বোকো না তো। কোন নাগরের কাছে রস দেখাতে গেছ আমার ভালো করে জানা আছে। আমাকে প্লিজ আর মিথ্যে কথা বলতে এসো না। তোমার চরিত্র আমার জানা হয়ে গেছে। আমার লাইফটা হেল করে দিলে তুমি। হেল…।
প্লিজ চুপ করো। একটু আসতে কথা বলো। সবাই শুনতে…। কস্তুরী কাকুতিমিনতি করে।
আর বাকি কী রেখেছ তুমি? সব তো শেষ করে দিয়ে?
প্লিজ…।
বউমা কী হল তোমাদের। ছেলেটা সন্ধে থেকে এসে বসে আছে ঘরে, তোমার পাত্তাই নেই। দ্যাখো তো আমার শান্ত ছেলেটাকে শেষ করে দিলে। হায় কপাল! কী ভাগ্য নিয়ে এসেছি, একটু শান্তি নেই। কী হল দরজাটা খোলো বলছি! শাশুড়ি, ঠাকুমাশাশুড়ি হয়তো শ্বশুরও দরজার কাছে এসেছে। এখন কী করবে কস্তুরী? কী উত্তর দেবে ওদের?
হে ঈশ্বর! নিজেকে এতটা অপরাধী আগে কখনও মনে হয়নি। কেন গেল শৈবালের কথা শুনে?
তমাল প্লিজ একটু শান্ত হও। একবারটি আমার কথা ভাবো। একটু বোঝার চেষ্টা করো।
আমি বুঝতে চাই না। আমাকে বলতেই তো পারতে তুমি আমার সঙ্গে শুয়ে শান্তি পাও না?
তমাল…!
বউমা আর কত মুখ পোড়াবে? দরজাটা খোলো। পাড়া প্রতিবেশী সবাই শুনছে তো নাকি। কোন বেহায়া ঘরের মেয়ে তুমি? তোমার কী লজ্জা বলে কিছু নেই? চিত্কার করে করে বলেন শাশুড়ি মা।
তমাল আমরা এভাবে শেষ হয়ে যাব কেন বলতে পারো? এরকম কথা তো আমরা দুজন-দুজনকে দিইনি। সেইদিনগুলোর কথা মনে নেই তোমার? মনে নেই তুমি কী বলে ডাকতে আমায়?
না না না আমার মনে নেই, মনে রাখতে চাই না। চলে যাও চোখের সামনে থেকে।
কোথায় যাব বলো? আমার তো যাওয়ার জায়গাটাই নেই। কোথাও নেই…।
তমালের মুখ, চিবুক কস্তুরীর বুকের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। কস্তুরী দেখতে পাচ্ছে তমালের চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। ও তমালকে কাছে টেনে নেয়। আরও কাছে। ওর চিবুক তুলে উগ্র আঁশটে গন্ধে ঠোঁট ডোবায় নিজের। তমাল তো ওরই। যা কিছু ভুল বোঝাবুঝি সম্পূর্ণ ওদের মধ্যে। দুজনের মধ্যের ফাঁকটা বড়ো হতে দিতে চায় না ও। কিছুতেই না।
তমাল শিশুর মতো কস্তুরীর বুকে মুখ ঢোকায়। ও বুঝতে পারে তমাল কাঁদছে। কিন্তু কেন? কেন ওদের সম্পর্ক ফিকে হয়ে যাচ্ছে? কেন হারিয়ে ফেলছে রঙিন দিন? কস্তুরী দুহাতে টেনে নেয় দুর্বল পুরুষ শরীরটাকে। আবার সেই পুরোনো শরীরী ছন্দ ফিরে পেতে চেষ্টা করে। চেষ্টা করে সব বাধা ঠেলে কস্তুরীর রোমে রোমে আনন্দের স্পন্দন জাগাতে।
তমাল ওর মধ্যে ডুবে যাচ্ছে! খুব চেনা সুখ মিলিয়ে দিচ্ছে দুটো শরীরকে। কখনও আলগোছে, কখনও নিজ জেদে দুজন দুজনকে প্রাণপণ আঁকড়ে ধরছে।
আহঃ!
রোমে রোমে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসার স্বেদবিন্দু চুঁইয়ে পড়ার মুহূর্তেরা যেন মিশে যাচ্ছে একটু একটু করে। সেই ভালোবাসার চূড়ান্ত মুহূর্ত। তমালের পৌরুষ মিশে যাচ্ছে কস্তুরীর গভীরে। কোথায় যেন একটা পোড়া গন্ধ। রান্নাঘরে কি ভাতটা…।