অবনীবাবু অফিস থেকে ফিরে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে চায়ের কাপটা মুখে তুলতে তুলতে অফিসের বিভিন্ন সমস্যার কথা ভাবছিলেন। তিনি যেহেতু কোম্পানির উচ্চপদে আছেন তাই সকলের সুবিধে অসুবিধের কথা তাঁকেই ভাবতে হয়। তাঁর কাজটাই এরকম। তাঁর ওপর কর্পোরেট অফিস বলে কথা।

মনে মনে ভাবেন এই কর্পোরেট গাল ভরা কথাটা শুনতে যেমন ভালো লাগে, আসলে তেমন নয়। আজকাল মাল্টিন্যাশানাল, কর্পোরেট এসব কথাগুলো শুনতে মন্দ লাগে না। এমনকী খবরের কাগজে ‘পাত্র-পাত্রী’ কলমেও এর ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনদাতারা নিজের কুলীন গোত্রের নিদর্শন তুলে ধরতে চান।

অবনীবাবু বহুদিন ধরেই একটি মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে চাকরি করছেন। নানান সমস্যার সমাধান করতে করতে এখন আর সমস্যাগুলোকে সমস্যা বলেই মনে হয় না। তবে দু’-একটি সমস্যা যে তাঁকে ভাবিয়ে তোলে না এমন নয়! গতকাল স্নেহা গুপ্তা-কে কাউন্সেলিং করতে গিয়েই বেশ মুশকিলে পড়েছিলেন। কীভাবে সমস্যাটার সমাধান করবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না, কারণ এই সমস্যার সমাধান তাঁর হাতে নেই। আর সে বয়সও তাঁর নেই।

স্নেহা-কে ক’দিন খুব ম্রিয়মাণ দেখে তাঁর প্রজেক্ট ম্যানেজার, মনদীপ জ্বলি, অবনীবাবুকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন— স্নেহার কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন আছে। যে-মেয়েটা ক’দিন আগেও হাসি-খুশিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখত, হঠাৎই কী এমন হল যে, সে কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।

অবনীবাবু এর আগেও বহু কর্মচারীরই কাউন্সেলিং করেছেন কিন্তু স্নেহা-র কথা শুনে উনিও আজকাল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। চিন্তা শুধু এজন্য— এর সমাধান তাঁর হাতে নেই। কারণ এই সমস্যাটি একান্তই প্রেমঘটিত এবং ব্যক্তিগত। যদিও এর আগে এই কর্পোরেট সেক্টরে উনি বহু প্রেমেরই সাক্ষী হয়ে আছেন।

একবার মনে আছে গভীর রাতে অফিসে শিফট চলাকালীন ইলেকট্রিকের ফোরম্যান পরেশবাবু এসে বললেন— স্যার চলুন, আপনাকে একটা জিনিস দেখাই। বেশ কিছুদিন ধরে আমি এটা লক্ষ্য করছি। কোনওদিন কোনও বিপদ হয়ে গেলে আপনি আমাকেই চাকরি থেকে বের করে দেবেন।

অবনীবাবু— কী এমন হল যে আমাকে ডেকে দেখাতে হবে?

পরেশ বাবু— চলুনই না স্যার। দেখলেই বুঝতে পারবেন।

এর পরের ঘটনা অবনীবাবুকে সত্যিই খুব অবাক করেছিল। তখন তিনি নতুন ছিলেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে তাই অদ্ভুত লেগেছিল। আজকাল অবশ্য অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। সেদিন ইলেকট্রিক সুইচরুমের ভেতর থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র একটি ছেলে ও একটি মেয়েকে আপত্তিজনক অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন।

অন্য এক ঘটনা— অবনীবাবু খবর পেয়েছিলেন যে এক ম্যানেজার নাকি তাঁর অধস্তন মহিলা কর্মচারীদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করছেন। কিন্তু এর কারণ তিনি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে এক মহিলা-র সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলেন, সেই ম্যানেজার প্রথমে কাজের চাপ ও ভয় দেখিয়ে তাঁকে বশবর্তী করেন এবং পরে তাঁর সঙ্গে অশ্লীলতা করেন।

অবনীবাবুর আর বুঝতে বাকি রইল না, কীভাবে এর অনুসন্ধান শুরু করতে হবে। অবনীবাবু প্রথমেই ডেকে পাঠালেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার মিস্টার তিওয়ারি-কে। বললেন— মি. তিওয়ারি, আমি মি. সন্দীপ চাড্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত সব খবর জানতে চাই। কখন সকালে আসেন, কখন কোথায় যান এবং ক’টা অবধি রাতে থাকেন?

মি. তিওয়ারি— স্যার, উনি তো বড়ো পোস্টে আছেন তাই ওনার সব খবরাখবরই আমরা লিখে রাখি। আপনি কী জানতে চান বলুন, আমি জানিয়ে দিচ্ছি।

—উনি রাত ক’টা অবধি অফিসে থাকেন?

—স্যার, কোনও ঠিক নেই। মাঝে মাঝে রাতে থেকেও যান কাজের জন্য, আবার কখনও কখনও রাত বারোটায় বেরিয়ে যান।

-ওঁর সঙ্গে কি অন্য কেউ থাকে?

–হ্যাঁ স্যার, থাকেন। মিস ডলি থাকেন।

—আপনি কি ওদের দু’জনের পরিবারের সম্পর্কে কিছু জানেন?

—স্যার, মি. চাড্ডার স্ত্রী একটি নামি কাগজের রিপোর্টার এবং তাঁর ডিউটি রাতেই থাকে, সেই কারণেই হয়তো মি. চাড্ডা রাতে অনেকদিনই বাড়ি যান না। মিস ডলি এই শহরে একাই থাকেন কারণ তাঁর মা-বাবা অন্য শহরে থাকেন।

—এদের সম্পর্কে কি আপনার কোনও কিছু বলার আছে?

—স্যার, আমাদের সিকিউরিটি গার্ডরা এদের নিয়ে নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা বলে থাকে। রাতে নাকি এরা একই বন্ধ কেবিনে বসে কাজ করেন। আমাদের অফিসের একজন নাকি একদিন দু’জনকে রাতে পাশের শিপ্রা হোটেলে একসঙ্গে বসে বিয়ার খেতেও দেখেছেন।

—ঠিক আছে আপনি যান। ইলেক্ট্রিশিয়ান জন-কে একটু পাঠিয়ে দিন তো।

একটু পরেই জন এসে কেবিনের দরজায় টোকা দিয়ে প্রবেশ করে।

জন— স্যার আপনি আমাকে ডেকেছেন?

অবনীবাবু— হ্যাঁ। আচ্ছা আমাদের ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো সব ঠিকমতো চলছে তো? আগামীকাল আমি কিন্তু সবগুলো চেক করতে চাই। শোনো, মি. চাড্ডা-র কেবিনে আমার ঘরের সামনের ক্যামেরাটা খুলে নিয়ে গিয়ে লাগাবে, তবে এখন নয়। সকলে অফিস থেকে চলে যাবার পর। আর এটা তুমি আর আমি ছাড়া কিন্তু কেউ জানবে না। জানলে তোমার চাকরি যাবে। ওটা লাগানো হয়ে গেলে তুমি রাতে আমাকে ফোনে কনফার্ম করবে।

জন— ঠিক আছে স্যার।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...