বাথরুম থেকে বেরিয়ে চিনি মেশানো পেঁয়াজের মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিল। বুঝতে পারছিল, ঠিকঠাক পথেই রান্না এগিয়ে চলেছে। মেয়ে উঠে ব্রাশ মুখে নিজের মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে বাবার সঙ্গে হাসাহাসি করছিল।

বেডরুমের দেয়ালেও একটা ছোটো ‘এলইডি’ টিভি ঝোলানো আছে। বিছানায় আধশোয়া হয়ে সেটা অন করল কাবেরী। দু’টো সিরিয়ালের এপিসোড সকালে আবার টেলিকাস্ট হয়। আজকে একটু আরাম করে দেখা যাবে। ‘অমর-সিঁথি’ সিরিয়ালটার শ্রমণার তিন নম্বর স্বামীর সঙ্গে এক নম্বর স্বামীর দেখা হওয়ার এপিসোডটা বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল কাবেরী।

বেশ কয়েকটা বিজ্ঞাপনের পর শুরু হয়ে গেল, ‘আমিও দুর্গা’। রত্না বলে চরিত্রটার অভিনয় মনে ধরলেও, কাবেরী বোঝে স্ক্রিপ্টের চাপে মেয়েটা হাঁসফাস করে। রত্নাকে গুলিবিদ্ধ স্বামীর সাঁড়াশি দিয়ে গুলি বের করতে দেখার দৃশ্যটা স্লো মোশনে দশ মিনিট দেখতে দেখতে চোখে চুল এসে গিয়েছিল, হঠাৎ একটা প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ শুনে ধড়মড় করে উঠে বসল কবেরী। তাড়াতাড়ি টিভি অফ করে রান্নাঘরে ছুটে গিয়ে দৃশ্য দেখে কিছু বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল।

মিক্সিতে পেঁয়াজ বাটছিল অমলেন্দু। মিক্সির বাটির মুখ পর্যন্ত পেঁয়াজ দিয়ে ওভারলোড করে মিক্সি ঘোরাতেই দু’টো কাণ্ড ঘটেছে। বাটা পেঁয়াজ পুরো রান্নাঘরের বাসন আর দেয়ালে মকবুল ফিদা হুসেনের ক্যানভাসে রং ছিটোনোর মতো ছড়িয়েছে। অমলেন্দুর চশমায় আর বুকের লোমেও অসহায় পেঁয়াজবাটা ঝুলতে ঝুলতে যেন ভাবছে, কড়া আর গরম তেলের বদলে এ কোথায় এসে পড়লাম! অন্যদিকে মিক্সি বসে গিয়েছে শব্দ করে।

কাবেরীকে দেখে চশমাটা চোখ থেকে খুলে ক্যাবলার মতো হেসে অমলেন্দু বলল, “আসলে ইউটিউবে না বেশ বড়ো মিক্সিতে পেঁয়াজটা বাটছিল…’

পুরো কিচেনের অবস্থা দেখে মাথা ঘুরছিল কাবেরীর। রাগটা কনট্রোল করে মৃদুস্বরে বলল, ‘রাখো তো ইউটিউব। রাতদিন তোমার আর তোমার মেয়ের ওই ডিজিটাল কচকচানি।”

একটু দমে গেছে অমলেন্দু। আঙুল দিয়ে চশমার উপর থেকে পেঁয়াজবাটা সরিয়ে মিনমিন করে শুধু বলল, ‘আবার এর মধ্যে মেয়েকে টানা কেন…।”

তিন্নিও শব্দ পেয়ে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাণপণে হাসি চাপার চেষ্টা করছে, বোঝা যাচ্ছে। সেই অবস্থাতে শুধু বলল, ‘শেফ হবার মিশন মনে হচ্ছে, আজ ফেল করল বাবা।’ আরও কিছু বলত হয়তো তিন্নি। মা কটমট করে তাকাতে ফোনে মাথা গুঁজে হাওয়া হয়ে গেল নিজের ঘরের দিকে।

অমলেন্দুকে কাবেরী এবার ধমকে উঠল, ‘গ্যাস অফ করে বেরিয়ে এসো। পরিষ্কার করতে দাও। তারপর পিণ্ডি পাকিও।”

—তোমার সিরিয়ালের নায়িকারা তাদের হাজব্যান্ডের যে-কোনও কাজ কী সুন্দর মেনে নেয়। আর তুমি…

—ও সব টিভিতেই থাক। তুমি বেরোও এবার। আর খবরদার, সিরিয়াল ফিরিয়াল টেনে আনবে না রান্নাঘরে, বলে দিলাম। সুড়সুড় করে বেরিয়ে যায় অমলেন্দু।

সমস্ত পরিস্কার করে আবার যখন গা হাত পা ধুতে গেল কাবেরী, বারোটা বেজে গেছে। আজকের খাওয়ারও যে বারোটা বাজবে, বুঝতে পারছিল। ইতিমধ্যেই আবার দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছে অমলেন্দু।

গা-হাত-পা ধুয়ে বেডরুমে ফ্রেশ হবার সময় রান্নাঘর থেকে বেশ সুগন্ধ ভেসে আসছিল। একটু হলেও এবার নিশ্চিন্ত হল কাবেরী।

ডাইনিংয়ে অফিসের কোনও কলিগের সঙ্গে হেসে কথা বলছে অমলেন্দু।

নিজের ফোন বেজে উঠতে কাবেরী দেখল, মা। অন করে কানে দিতে মা বলল, ‘সত্যিই আজ অমলেন্দু রান্না করছে?”

অবাক হয়ে পালটা প্রশ্ন করল কাবেরী, ‘তুমি কী করে জানলে?”

—কী করে আবার, তিন্নি ফোন করেছিল।

—ও, হ্যাঁ, করছে বটে। তবে আমার ভরসা নেই। ওর এসব আসে না। জীবনে কোনওদিন করতে দেখেছ!

—সেটাই। আমি তো শুনেই অবাক। যতবার তোর ওখানেই গেছি, ওর শুধু এ রেস্টুরেন্ট আর ও রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার। ছেলেটা খেটে করছে, বড়ো দেখতে ইচ্ছে করছে রে।

ক্রমশ…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...