মিটিংয়ের জন্য রেডি হয়ে হোটেলের লাউঞ্জে বসেছিল অর্ক। আচমকা চোখ ছুটে গেল ব্যালকনিতে। ব্যালকনির রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাধুরি দীক্ষিত। স্কিনটাইট ব্লু জিন্স। খাটো ইয়ালো টপ। জিন্স আর টপের মাঝখানে সরু রেখার মতো ফুটে আছে কোমরের তকতকে মেদুর ত্বক। পেছন থেকে কর্নিয়ার ক্যামেরায় লুক থ্রু করে যেটুকু নিরীক্ষণ করল অর্ক, তাতে এর বেশি ধরা পড়ছে না।

অর্কর ঘাড় থেকে এই এত বছরেও মাধুরি দীক্ষিতের প্রেমে পড়ার ভূত নামেনি। কোনও অপরূপার সৌন্দর্য বর্ণনায় ওর ওই একটাই উপমা। একটাই তুলনা। ভদ্রমহিলাকে পিছন থেকে দেখে অর্কর মন বলে উঠল আহা! ঠিক মাধুরি দীক্ষিত। একইরকম গড়ন সৌষ্ঠবের নিতম্ব। স্কিন টাইট জিনসের কল্যাণে তা বেশ রমণীয় ভাবে প্রকাশিত হয়ে আছে। অর্ক একটু ডান পাশে ঝুঁকে মাধুরির সাইড ফেসটা দেখতে পেল। চোখে স্নানগ্লাস। শীতের সকালের মিঠে রোদ যেন তাকে দেখেই হামলে পড়েছে।

অর্কর মন বলে উঠল, ইটস আ রিয়্যাল গুড মর্নিং। মিটিংয়ের হোমওয়ার্ক কাল রাতে গুছিয়ে নিয়েছে। প্রেজেন্টেশনও হবে ঝাক্কাস। অর্ক সময়ের অনেক আগে তৈরি হয়ে নিতে অভ্যস্ত। শেষমুহুর্ত বলে যেন কিছু না থাকে। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়োয় এটা নিতে ভুল হল। ওটা যেন কোথায় রাখলাম! এসব ঝক্কি থেকে যোজন মাইল দূরে থাকার অভ্যেস করে নিয়েছে সে। অর্ক কবজি ঘুরিয়ে সময় দেখল, এখনও ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেরি। মিনিট পনেরো আগে সে ঢুকে যাবে কনফারেন্স হলে। তবু আধঘণ্টা সময় না হয় প্রবাসের এই সুন্দরীকে দেখেই কেটে যাক।

ভদ্রমহিলার ঘাড় খানিকটা ঘোরানো। ফলে সাইড ফেস যেটুকু চোখে পড়ছে, কাফি। অর্কর বুকের মধ্যে সেই এক একযুগ আগের ধুকপুকুনিটা ফিরে এল। মন বলছে, সে ভালো কথা নয়। বিবাহিত পুরুষের এই বাতিকটা মোটেই সুবিধার নয়। আবার মনই তাকে উসকে দিচ্ছে, গিয়ে একটু আলাপ করলে কেমন হয়? সেই যে সেই ‘যেখানে দেখিবে ছাই?”

কিন্তু কী ছুতোয় আলাপ করবে সে? আপনাকে যেন কোথায় দেখেছি, মাপ করবেন আপনি কি বাঙালি, ও কলকাতার? তাই বলুন, ভেরি নোন ফেস। আলাপ জমানোর এসব কৌশল সব আর্কাইভে চলে গেছে। এখন এসবে উলটে হ্যাটা খেয়ে যেতে হবে। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই আচমকা অর্কর সামনে দিগন্ত খুলে গেল। তোফা মুশকিল আসান। এর চেয়ে স্মার্ট টেকনিক আর হয় না।

অর্ক লক্ষ্য করল, তার হাতে একটা লম্বা সিগারেট জ্বলছে। আর দেখল, সে যে রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেই চওড়া রেলিয়ের ওপর রাখা আছে একটা দামি সিগারেটের প্যাকেট। তার ওপর রাখা একটা সুন্দর লাইটার। ওই লাইটারে সিগারেট জ্বালিয়ে নেওয়ার অছিলায় অনায়াসেই কাছে যাওয়া যায়। মন তক্ষুনি সায় দিয়ে বলে উঠল ভেরি গুড আইডিয়া। আই অ্যাপ্রিশিয়েট ইউ। তবে?

তবে আর দেরি কেন? চট করে নিজের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে ঝুলিয়ে নিয়ে ধীর পায়ে নায়কোচিত ভঙ্গিতে হেঁটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াল অর্ক। অর্ক তার অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে যাকে বলে ফুল কনফিডেন্ট। মাধুরির উদ্দেশ্যে সে তার ঋজু ও রোমান্টিক কণ্ঠস্বরকে ভাসিয়ে দিয়ে বলল, ‘মে আই গেট ইওর ফায়ার প্লিজ?’ মাধুরি দীক্ষিত লাইটারটাকে অর্কর হাতে দিল না। নিজেই স্ট্রোক দিল। নীলাভ আগুনের শিখা জ্বলে উঠল।

ক্রমশ …

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...