কাজলের বহু প্রতীক্ষিত ওয়েব সিরিজ ‘The Trial’, জনপ্রিয় আমেরিকান আইনি নাটক ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এর দেশি রূপান্তর। এটিতে কাজলের অভিনয় দেখার জন্য দর্শকমহল যথেষ্টটিসিরিজটির কোর্টরুম দৃশ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে কাজল সে ভাবে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করতে অসফল হয়েছেন। অন্যদিকে ‘Kohra’ একটি সম্পূর্ণ মৌলিক অপরাধমূলক অনুসন্ধানী কাহিনি যেখানে পাঞ্জাবে মাদকের অপব্যবহার, অত্যধিক আধিপত্যশীল এবং প্রভাবশালী পিতার (Balbir এবং Steave)রূপে পিতৃতন্ত্র, দুর্নীতি, জমি বিরোধ, সমকামীদের অগ্রহণযোগ্যতার মতো সামাজিক কুসংস্কারগুলির উপর আকর্ষণীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করা হয়েছে।
শীর্ষ স্থানীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাকালীনই বিনোদনের জগৎ অভূতপূর্ব উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছিল মহামারির সময়। থিয়েটারগুলি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাকে আবার নতুন উদ্দমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় বা বলা যেতে পারে প্রাক-কোভিড যুগকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় এখন সকলে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
ওটিটি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় যে, এমন একটা সময় ছিল যখন মূলধারার অভিনেতারা ভয়ে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে এড়িয়ে চলতেন কারণ নতুন কিছু নিয়ে পরীক্ষা করতে গেলে যদি তাদের স্টারডম-এ আঘাত লাগে তাহলে তাদের আসল সম্ভাবনা পূরণ হবে না বলে ভয় পেতেন। অনেকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব কমপ্লেক্সটি খুব তাড়াতাড়ি ম্লান হয়ে যায় এবং তারা অনেকেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম- এর নীচে আশ্রয় নেন। অনেকগুলি সিরিজ দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে, অন্যরা আবার হারিয়ে গেছেন অভিনেতাদের ভিড়ে।
অনুরাগ কাশ্যপ, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে এবং নীরজ ঘায়ওয়ানের ‘সেক্রেড গেমস’-এ অভিনয় করে সইফ আলি খান এই বিশাল পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন এবং পথ প্রদর্শকও বটে তিনি। অনেকে এই পথ অনুসরণ করেছিলেন এবং চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিলেন। মনোজ বাজপেয়ী, রাধিকা আপ্তে, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো অভিনেতারা শীঘ্রই তাঁদের অনবদ্য অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে আবার সম্ভবত দুর্বল গল্প এবং অসম্পূর্ণ পরিচালনার কারণে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে দুটি সিরিজ। কাজলের বহুপ্রতীক্ষিত ওয়েব সিরিজ The Trial-এ অভিষেক হয়, হিট আমেরিকান লিগ্যাল ড্রামা ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এর দেশি রূপান্তরের মাধ্যমে। স্বামীর কেলেঙ্কারি, তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে তোলার পরে তাকে আবার কাজ শুরু করতে হবে এমন একজন গৃহবধূর চরিত্রে তিনি কীভাবে অভিনয় করবেন তা দেখার জন্য সব দর্শকই কৌতূহলী ছিল। এছাড়াও, গল্প বলার ক্ষেত্রেও অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে – দুর্বল স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে নিস্তেজ কেস, গল্পের অবিশ্বাস্য টুইস্ট এবং টার্ন দর্শকদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি।
অন্যদিকে রয়েছে বরুণ সোবতি এবং সুবিন্দর ভিকির ‘Kohra’ নামের ক্রাইম সিরিজ, যার গল্প একটি এনআরআই বরের হত্যাকে কেন্দ্র করে, যাকে তার আসন্ন বিয়ের কয়েক দিন আগে হত্যা করা হয়। সিরিজটির মূল দুই অভিনেতাই পাঞ্জাবের পুলিশ সদস্যদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যাদের সিনিয়র এবং পরিবারের সদস্যদের চাপের মধ্যে সত্য উন্মোচন করতে হবে এবং খুনিকে খুঁজে বের করতে হবে।
রিমেক বনাম অরিজিনাল
সিরিজের রিমেকগুলি কাজ করে না, এই ধারণা কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। রানা নাইডু, দ্য নাইট ম্যানেজার, আরিয়া, ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং অন্যান্য ওয়েব সিরিজগুলি প্রমাণ করে যে, যদি একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া হয় গল্পগুলিতে তবে রিমেকগুলি ভালো কাজ করতে সক্ষম! যাইহোক, দ্য ট্রায়ালটি, ব্যর্থ হয়েছে কারণ মূল গল্পটির সঙ্গে রূপান্তরিত সিরিজটির বিরাট পার্থক্য রয়ে গেছে মামলার সিনগুলির ক্ষেত্রে এবং কোর্টরুমের দৃশ্যে, যেখানে কাজল অভিনয়তে কোনও ভাবেই মূল ছবিটির অভিনেত্রীর মোকাবিলা করে উঠতে পারেননি ।
‘Kohra’ একটি মৌলিক অপরাধ অনুসন্ধানী সিরিজ, যেখানে পাঞ্জাবে মাদকের অপব্যবহার, অত্যধিক আধিপত্যশীল ও প্রভাবশালী পিতার (বলবীর ও স্টিভ) আকারে পিতৃতন্ত্র, দুর্নীতি, জমি বিরোধ এবং সমকামীদের গ্রহণ না করার মতো সামাজিক কুসংস্কারের উপর আকর্ষণীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বিনোদনমূলক এবং পরিপূর্ণ উপায়ে এমন একটি আকর্ষণীয় গল্প তুলে ধরার কৃতিত্ব, নির্মাতা গুঞ্জিত চোপড়া এবং দিগগি সিসোদিয়া, সুদীপ শর্মা এবং পরিচালক রণদীপ ঝা-র।
কাজল যখন কোনও প্রোজেক্ট-এর মুখ, তখন প্রত্যাশা অবশ্যই বেশি! অ্যালিসিয়া ফ্লোরিক ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এ দর্শকদের যে বৈচিত্র্য দিয়েছিলেন, কাজল তা দেননি। যাইহোক, তিনি দুর্দান্ত শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে জাহাজটি ডোবার হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন যা ছিল দ্য ট্রায়াল। অন্যদিকে, বরুণ সোবতি একজন টিভি শিল্পী যিনি ওটিটি-তে এসে অসুরের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘কোহরা’-তে তিনি সুবিন্দর ভিকি, হারলিন শেঠি, বরুণ বাদোলা এবং অন্যান্যদের সাথে এমন চমৎকার অভিনয় করেছেন যে তাঁদের প্রশংসা করতেই হয়।
যাদের এটি অজানা এটি তাদের জন্য, যে দলটি কোহরা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরাই আমাদের সুপার ডুপার হিট সিরিজ পাতাল লোক-ও উপহার দিয়েছেন অতীতে। যদিও প্রথমটি, ইন্সপেক্টর হাথি এবং তার দলকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল, কোহরা কোনওভাবেই একই সূক্ষ্মতা বা চরিত্রের স্কেচগুলির পুনরাবৃত্তি করেনি। বরুণ এবং ভিকি দুজনেই পুলিশের ভূমিকাকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চিত্রিত করেছেন এবং গল্পটি বহুস্তরযুক্ত। মূলটির সাথে সংযুক্ত বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে বলে এটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অপ্রত্যাশিত রয়ে গেছে। অপ্রত্যাশিত অন্ধকার হাস্যরস কেবল আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
কোহরার গল্প ধীরগতিতে আরম্ভ হলেও প্রথম থেকেই দর্শকরা এটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। বৃহত্তর ঐকমত্য কোহরার দিকেই ইঙ্গিত দেয় কারণ দর্শকরা তারকাখচিত গুড ওয়াইফ রিমেকের চেয়ে এটিকে বেশি পছন্দ করছেন।