অনেকটা সময পার করে ফেলেছি, তবুও করোনার সংক্রমণ আজও অব্যাহত। বরং বলা চলে এতদিনে আরও শক্তি সঞ্চয় করে এই ভাইরাস মানুষের দেহ-মনে ভীতির সঞ্চার করছে। ইউ কে-তে নতুন করে শুরু হয়েছে লকডাউন।আমাদের দেশে সরকারের একটাই লক্ষ্য, জনজীবনে স্বাভাবিকতা, গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। অতএব এখন করোনার সংক্রমণ-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে,জীবনধারণ করছি আমরা।

বাড়ির বাইরে যারা বেরোচ্ছেন, তাদের মধ্যেও একটাই ভয় হয়তো কাজ করছে, কোউ বা আবার অন্ন সংস্থা্নের দায়ে মরীয়া। বিশেষ করে করোনার এই নতুন স্ট্রেন কী ভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে তা নিয়ে এখনও আমরা সংশয়ে।

এতদিন দেখা গেছে, করোনা রোগী যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে সেই রোগীর বিপদের ঝুঁকি আরও ৮ গুন বেড়ে যায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং পঞ্চাশের উপর বযস, এক্ষেত্রে তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বেশি। বিশেষ করে যারা ৭০ বছর বযসের ঊর্ধ্বে, তাদের জীবনহানির আশঙ্কা প্রায় ৯ গুন বেশি এবং যারা ৮০ বছর বযসের ঊর্ধ্বে, তাদের জীবনহানির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে প্রায় ১৫ গুন। তাই করোনার ভ্যকসিন যতদিন না গ্রহণ করছি, আমাদের একমাত্র বাঁচার উপায় হল শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়িযে নেওয়া এবং নিজেকে শক্তিশালী করে তোলা।

একদিকে এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য যেমন সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, স্যানিটাইজেশন, হাত ধোওয়া, করমর্দন না করা, মাস্ক পরা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি মেনে চলা জরুরি, তেমনি অপরদিকে ইমিউনিটি মজবুত করাও খুব দরকার। যাদের ইমিউনিটি শক্তি বেশি, তাদের অসুস্থ হওযার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। বড়ো কোনও অসুখে পড়লেও তাদের সুস্থ হযে উঠতে বেশি সময লাগে না।

অবসাদ দূরে রেখে যোগ-ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে ইমিউনিটি বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও ইমিউনিটি শক্তি বাড়াতে সুষম এবং পুষ্টিকর আহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

Daily exercising habit

ইমিউনিটি বাড়াবার জন্য কী খাবেন?

  • সবুজ শাকসবজি, পালংশাক, মেথিশাক, সরষেশাক ইত্যাদি সবুজ পাতা-যুক্ত সবজি রাখুন খাদ্য-তালিকায়। এগুলি আয়রন, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ফলিক অ্যাসিড ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ফসফেট ইত্যাদি তত্ত্বে ভরপুর। এই উপাদান ইমিউনিটি বাড়িযে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • কমলালেবু, আমলকী, পাতিলেবু, কিউযি, পেযারা, ব্রোকোলি, পালংশাক ইত্যাদি ফল ও সবজি ভিটামিন সি-তে ভরপুর। শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি খাওযা খুবই জরুরি। এগুলো ইমিউনিটি শক্তি বাড়িযে শরীরকে নানা অসুখের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা দেয।
  • কমলা বা লাল রঙের ফল আর সবজি যেমন পেঁপে, গাজর, রাঙাআলু, তরমুজ, লাল আঙুর, আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এটা আমাদের ইমিউনিটি পাওযার বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হাড় শক্ত করতেই যে শুধু দরকার ক্যালসিয়ামের এমন নয়, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। দুধ, দই, ঘি, ছানা, চিজ, ছাছ, ভিন্ডি, পালং, ব্রোকোলি, বিন্স এবং ফলের মধ্যে কমলালেবু, কিউয়ি, ব্ল্যাকবেরি, পেঁপে ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।
  • ফাইবার-যুক্ত আহার আমাদের হজম প্রক্রিয়া মজবুত করতে সাহায্য করে। ফাইবার-যুক্ত সবজি, ফল, ব্রাউন ব্রেড, ডাল, গমের আটা, ড্রাইফ্রুটস, ওটস, কড়াইশুঁটি, ভুট্টা ইত্যাদি ইমিউনিটি শক্তি বাড়াতে খুবই কার্যকরী। এগুলি নানা ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ আটকাতে সাহায্য করে মানুষের শরীরে।
  • তুলসী অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। রোগপ্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে, সঙ্গে শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। রোজ সকালে খালি পেটে ৪-৫টি তুলসীর পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও মধুর সঙ্গে তুলসীপাতা সেবন করলে সর্দি, কাশির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • মশলার মধ্যে সবথেকে উপকারী বলা হয় হলুদকে। ইমিউনিটি বাড়াবার সঙ্গে সঙ্গে, হলুদ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি ফাংগাল এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি গুণ, যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সহাযতা করে। খাবার তৈরির সময হলুদের ব্যবহার করা এবং দুধের মধ্যে হলুদ দিয়ে খাওয়া এই সময় খুবই প্রয়োজন।
  • যদি উপরে দেওয়া খাবারগুলি কোনও কারণে খাওয়ার অসুবিধা থাকে, তাহলে মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট খাওযা যেতে পারে। ইমিউনিটি বাড়াবার জন্য ক্যালসিয়াম, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস যেমন জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন ডি থ্রি বেশি মাত্রায খাওযা বাঞ্ছনীয়।
  • জল শুধু তেষ্টা মেটায় না, শরীরে ওষুধের মতো কাজ করে। শরীরের বর্জনীয় বিষাক্ত তত্ত্ব বাইরে বার করে দিতেও সাহায্য করে। এতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সারাদিনে অন্ততপক্ষে তিন লিটার জল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
  • ইমিউনিটি বাড়াতে ব্যায়ামের প্রয়োজন । নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের ইমিউনিটি বাড়িয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীর ফিট রাখতে আমরা ব্যায়াম করি কিন্তু শুধুমাত্র বাইরে থেকে নয়, ভিতর থেকেও শরীরকে মজবুত করতে ব্যায়াম করা প্রযোজন। এর আরও একটা সুফল হল মানসিক সুস্থতা। সুতরাং শুধুমাত্র করোনার কারণেই নয়, শারীরিক ভাবে সুস্থ ও সক্রিয় থাকতে পারলে অনেক রকম রোগ থেকেই নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। সেজন্য যোগব্যায়াম, এক্সারসাইজের সঙ্গে সিঁড়ি ওঠানামা, ডান্স, হাঁটাচলা করা, খেলাধুলা সবকিছুই জীবনশৈলীর অন্তর্ভক্ত করা বাঞ্ছনীয়।
  • সূর্যের রশ্মিতে এমন অনেক গুণ রয়েছে যা নানারকম সংক্রমণ দূরে রাখতে শরীরকে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন ডি-এর পরিপূরক যা শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। হাড় শক্ত করে। রোজ সকালে অন্তত আধ ঘন্টা সূর্যের আলো শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং ওই সময়টায় গাযে সূর্যের রোদ লাগালে ইমিউনিটি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...