ডে-কেয়ার সার্জারি-র সুযোগ সুবিধে

বর্তমান জীবনযাত্রায় সবারই ব্যস্ততা বাড়ছে। সুযোগ থাকলে সবকিছুই দ্রুত সেরে নিতে চান সবাই। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তাই। কোনও অসুখের ক্ষেত্রে যদি অপারেশন করতেই হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে চান রোগী। কারণ, হাসপাতালে অপারেশন করাতে গিয়ে দিনের পর দিন ভর্তি থাকতে হলে যেমন কষ্ট হয় রোগী এবং তাঁর পরিজনদের, ঠিক তেমনই হাসপাতালে মেটাতে হয় মোটা টাকা। কিন্তু সময় বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সুবাদে যেমন বিভিন্ন রোগের দ্রুত উপশমের উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে, ঠিক তেমনই এসেছে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি, যার ফলে জটিল অস্ত্রোপচারের পর একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছুটিও পেয়ে যেতে পারেন রোগী। আর এই দ্রুত রোগমুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।

ডে-কেয়ার সার্জারি কী?

অ্যানাস্থেশিয়া ও অস্ত্রোপচারের গুণগত উন্নতির জন্য আজকাল রোগী সকালে অপারেশন করিয়ে বিকেলেই বাড়ি চলে যেতে পারেন, রাতভর হাসপাতালে থাকার দরকার পড়ে না। ডাক্তারি পরিভাষায় এটিই ডে-কেয়ার সার্জারি নামে পরিচিত।

কোন কোন অপারেশনের ক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সার্জারি করা সম্ভব?

সাধারণত চক্ষু চিকিৎসার জন্য এই পদ্ধতি সর্বাধিক জনপ্রিয় হলেও, ইদানীং বিভিন্ন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি অর্থাৎ গলব্লাডার, অ্যাপেনডিক্স ও হার্নিয়া অপারেশনের ক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সার্জারি করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পাইলস, ফিশার, ফিসচুলা ইত্যাদির চিকিৎসাতেও আজকাল একদিনে রোগীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

ডে-কেয়ার সার্জারির জন্য কোনও আলাদা পদ্ধতি করা হয় কী?

অত্যাধুনিক কিছু অ্যানাস্থেটিক পদ্ধতি রয়েছে, যা প্রয়োগ করলে অসুস্থ মানুষটি স্বাভাবিক ভাবে অপারেশন সামলে উঠে ওই একইদিনে বাড়ি চলে যেতে পারেন। পাইলস বা সমজাতীয় সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় মডার্ন সেই পলিং টেকনিক। যার সুবিধা হল, এতে রোগীর ব্যথা যেমন কম হয়, তেমনই অপারেশন পরবর্তী দেখভালের প্রয়োজনও কমে।

যে-কোনও রোগীই ডে-কেয়ার সার্জারি করাতে পারেন?

অবশ্যই না। যাদের হাসপাতাল থেকে বাড়ি বেশ কিছুটা দূরে, তাদের অপারেশনের দিনই ধকল নিয়ে এতটা পথ যাতায়াত না করাটাই শ্রেয়। আবার, যে সমস্ত রোগীর হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, বুকব্যথা সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও পরামর্শ দেওয়া হয়। অপারেশনের পর বেশ কিছু ঘণ্টা, প্রয়োজনে কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য। বিশেষ কোনও জটিল অস্ত্রোপচারের পরেও রোগীকে হাসপাতালেই রাখা উচিত।

ডে-কেয়ার সার্জারির বিশেষ সুবিধা কী?

ডে-কেয়ার সার্জারির অন্যতম সুবিধা হল, এই ক্ষেত্রে যেহেতু রোগী মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে অস্ত্রোপচারের অস্বস্তিজনক পরিবেশ থেকে নিজের চেনা পরিবেশে ফিরে আসতে পারেন, তাই তার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও একইদিনে অপারেশন করে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হলে হাসপাতালের ডেভাড়া ও নার্সিং সংক্রান্ত খরচাপাতি অনেক কমে যায়। তাই, চিকিৎসার নিত্যনতুন পদ্ধতির ডে-কেয়ার সার্জারির চাহিদাও দিনে দিনে বাড়ছে।

পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাত

মেনোপজ মহিলাদের জীবনের এমন একটি অবস্থা, যখন তাদের রজঃস্রাব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা আর গর্ভধারণ করতে পারে না।

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হয়। আবার একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সেই মাসিক বন্ধও হয়ে যায়। যাকে মেনোপজ বলে। মেনোপজ একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। তবে, পিরিয়ড চলাকালীন মহিলাদের হরমোনাল ডিসব্যলেন্সের পাশাপাশি বহু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তেমনই, মেনোপজের সময়ও কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। যা থেকে বহু ক্ষেত্রে যৌন জীবনেও পরিবর্তন আনে। তবে মেনোপজ মানেই যে যৌন জীবন শেষ, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

মেনোপোজ সাধারণত ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সে হয়ে থাকে।সাধারণত মহিলাদের একবছর রজঃস্রাব বন্ধ থাকলে চিকিৎসকরা এটাকে মেনোপোজ বলে থাকেন। এসময় ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম  বন্ধ হয়ে যায়।

মেনোপজের লক্ষণ কী কী?
মাসিকের অনিয়ম যেমন পিরিয়ড বন্ধ হওয়া, বাধাগ্রস্ত হওয়া, ভারী বা কম প্রবাহ ইত্যাদি মেনোপজের সাধারণ লক্ষণ। এছাড়া মেনোপজ আসছে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি দ্বারা ধারণা করা যেতে পারে। হঠাৎ করে সারা শরীরে তাপ ছড়িয়ে পড়া, যা সাধারণত মুখ, ঘাড় এবং বুকে সবচেয়ে তীব্র হয়, সঙ্গে ঘাম হয়।

পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাত কী?

  • পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাত হল যোনিপথে রক্তপাত যা আপনার শেষ মাসিকের এক বছর বা তার বেশি পরে ঘটে। এটি যোনিপথের শুষ্কতা, পলিপস (ক্যান্সারবিহীন বৃদ্ধি) বা আপনার প্রজনন ব্যবস্থার অন্যান্য পরিবর্তনের লক্ষণ হতে পারে।
  • প্রায় ১০% মহিলাদের মধ্যে মেনোপজের পরে রক্তপাত জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাতের কারণ কী?

হরমন প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা

  • জরায়ু পলিপ (জরায়ুতে বৃদ্ধি)
  • জরায়ুর টিউমার
  • এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া
  • এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (জরায়ুর আস্তরণে ক্যান্সার)
  • এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাট্রোফি (জরায়ু বা যোনির আস্তরণ পাতলা এবং শুষ্ক হয়ে যায়)
  • সার্ভিকাল ক্যান্সার

পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাতের লক্ষণ:

হট ফ্লাশ (hot flushes)

যোনির শুষ্কতা

যোনিপথের ঝিল্লি পাতলা হওয়া ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া

প্রস্রাব আটকে রাখার অক্ষমতা (ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স)

ত্বকের শুষ্কতা

ওজন বৃদ্ধি

স্তনের আকার বৃদ্ধি ও ব্যথা

জয়েন্টে ব্যথা

মাথা ব্যথা

বুক ধড়ফড়

অনিদ্রা

মূত্রনালীর সংক্রমণ বৃদ্ধি

ওজন বৃদ্ধি

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া

অ্যাথেরোসক্লেরোসিস, অস্টিওপোরোসিস বা অস্থিক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।

পোস্ট মেনোপজাল রক্তপাত কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

  • শারীরিক পরীক্ষা এবং একটি কেস হিস্ট্রি বিশ্লেষণ
  • পেলভিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে প্যাপ স্মিয়ার
  • ট্রান্সভ্যাজিনাল আল্ট্রাসাউন্ড
  • হিস্টেরোস্কোপি: এটি একটি ক্যামেরা দিয়ে  সার্ভিক্স এবং জরায়ু পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি
  • প্রসারণ এবং কিউরেটেজ (D & C): এই পদ্ধতিতে একটি বড়ো টিস্যুর নমুনা পাওয়ার জন্য জরায়ুর মুখকে প্রসারিত করা বা প্রশস্ত করা হয়
  • এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি: এই পদ্ধতিতে জরায়ু থেকে টিস্যুর আস্তরণের নমুনা নেওয়া হয়

কী করা উচিত?

  • আপনি যদি মেনোপজ-এর পর যোনিপথে রক্তপাত অনুভব করেন, তবে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে  যোগাযোগ করুন।
  • আপনার মাসিক বন্ধের পরে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।

মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা

মাতৃত্বের অনুভূতির মতো সুন্দর অনুভব আর হয়  না। যে-কোনও আসন্ন প্রসবার সৌন্দর্যও তার এই মাতৃত্বের সুখেরই প্রতিচ্ছবি। চিকিৎসকরাও বলেন গর্ভবতীর সৌন্দর্য এ সময় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হল, এই অবস্থায় একজন নারী সবচেয়ে প্রসন্ন থাকেন এবং স্বাস্থ্যবর্ধক ডায়েট গ্রহণ করেন। ভেতর থেকে আনন্দের অনুভূতি কাজ করে বলে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ।

জেনে রাখা জরুরি এই সময়টা হল গর্ভস্থ ভ্রূণের পরিণত হওয়ার কাল। সুতরাং গর্ভবতী মা-কে শিশুটির কথা ভেবেই নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। পুষ্টির প্রয়োজন এই সময়  সবচেয়ে বেশি। সুস্বাস্থ্য ও প্রসন্নতায় ভরা মন এই দুইয়ের মেলবন্ধনেই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হওয়া বাঞ্ছনীয় ।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান

নিয়মিতভাবে চিকিত্সকের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এসময়ে একান্ত জরুরি। শুরুর 7 মাসে একবার করে, তারপর থেকে 15 দিন অন্তর এবং শেষের মাসটায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে চিকিত্সকের কাছে যান। তাঁকে যে-কোনও শারীরিক সমস্যার কথা বলুন এবং সেই সংক্রান্ত কোনও টেস্ট করাতে হলে করিয়ে নিন।

গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ হবে ভেবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্যগ্রহণ করবেন না। এতে আপনার ওজন বেড়ে যাবে এবং প্রসবে সমস্যা হতে পারে। চিকিত্সকের পরামর্শ মতো ব্যালেন্সড ডায়েট গ্রহণ করা জরুরি। এই সময় দুধ পান করাও খুব প্রয়োজন। দুধ ও দুধের প্রোডাক্ট শিশুকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের জোগান দেবে, যা তার অস্থিগঠনে সাহায্য করবে। ক্ষীর, পুডিং, দই এগুলো আহারে রাখুন।

ফল খাওয়াও জরুরি

এই সময়ে স্বাভাবিক কারণেই পর্যা‌প্ত পরিমাণে প্রোটিনের চাহিদা থাকে। ডিম, মাছ, মাংস যেমন খাবেন, তেমন পনির আর ফলও রাখুন ডায়েট-এ। শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয়  আয়রন ও ভিটামিন-এর জোগান পাবেন। কাঁচা স্যালাড খাওয়া আবশ্যক। দিনে দু’বার ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল খাবেন, যেমন পাকা পেঁপে, কমলালেবু, মুসম্বি প্রভৃতি।

ফ্যাট-যুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা

চিকিত্সকের পরামর্শমতো পরিমাণ বুঝে ফ্যাট রাখুন প্রাত্যহিক ডায়েট-এ। মাখন খেতে পারেন ব্রেকফাস্ট-এ। ১৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফ্যাট রোজ গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে সুফলদায়ক হবে।

ব্যালেন্সড আহার

সবজি, ডাল, রুটি, ভাত যাই খাবেন সেটা যেন পরিমাণমতো হয়। চিকিত্সকের পরামর্শমতো ডায়েট চার্ট ফলো করুন। এরফলে আপনার ও গর্ভস্থ শিশুর, উভয়ের ওজনই ঠিক থাকবে।

ধূমপান করবেন না

এই অবস্থায় সব ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, এ সময়  এড়িয়ে চলুন। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর উপর নেশার সামগ্রীর কু্প্রভাব পড়বে না।

আরামদায়ক পোশাক পরুন

এই অবস্থায়  ঢিলেঢালা পোশাক পরাই শ্রেয় । প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে দেবেন না। এ সময় হালকা পরিশ্রম করা জরুরি। পরিচ্ছন্নতা বজায়  রাখুন। পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন। হালকা সাজগোজ করুন। জুতোটাও আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন। পায়ে গ্রিপ ঠিক থাকে এমন জুতোই পরুন বিপদের সম্ভাবনা এড়াতে। ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডরোব পাওয়া যায় এখন বেশকিছু বিপণিতে। সেখান থেকে এই সময়ে উপযুক্ত অন্তর্বাস কিনুন।

মাসাজ জরুরি

স্তন ও পেটে হালকা মাসাজ করুন। এর ফলে স্ট্রেচমার্কস পড়বে না। স্নানের আগে ভিটামিন ডি-যুক্ত তেল দিয়ে ফুল বডি মাসাজ করুন। শোওয়া ও বসার সময় সঠিক পশ্চার মেনটেন করুন। এরফলে শিশুর পজিশন ঠিক থাকবে।

অযথা পায়ের পরিশ্রম বাড়াবেন না

গর্ভকালীন সময়ে এমনিতেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয়  আপনার পা দু’টিকে। তাই পায়ের পরিচর্যা এসময় বিশেষভাবে জরুরি। অযথা পায়ের পরিশ্রম হয়, এমন কাজ করবেন না। যতটা জরুরি ততক্ষণই দাঁড়িয়ে কাজ করুন। বাকি সময় বসে বসে হাতের কাজ করুন। হাত-পায়ে নখ নিয়মিত ভাবে কাটুন, হাত-পা পরিচ্ছন্ন রাখুন।

চুল ও ত্বকের পরিচ্ছন্নতা

চুল শ্যাম্পু করার পাশাপাশি কন্ডিশনিং করাও জরুরি। ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন। ত্বকের নমনীয় ভাব বজায় রাখতে বেশি করে জন পান করুন। স্নানের পর ময়েশ্চরাইজার লাগান। এসময়  অনেকেরই মুখে বলিরেখা দেখা দেয়, কিন্তু প্রসবের পর তা মিলিয়ে যায়। মুখে ক্রিম মাসাজ করুন, এতে ত্বকের নমনীয়তা বজায় থাকবে।

হালকা মেক-আপ মন ভালো করে

নিজে সাজগোজ করে সুন্দর হয়ে থাকুন, এতে মন ভালো থাকবে। কোথাও গেলে হালকা মেক-আপ করতে পারেন। হালকা ফাউন্ডেশন, অল্প একটু ব্লাশার, ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক। চোখে লাউড মেক-আপ না করাই ভালো। একটা কাজলের রেখা টেনে স্নান করে নিন। বিশেষ কোনও সান্ধ্য পার্টিতে গেলে হালকা আইশ্যাডোও লাগতে পারেন।

ঘুম জরুরি

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের এসময়  ভীষণ প্রয়োজন। শোয়ার সময়  কোমরে কষ্ট হলে হাঁটুর নীচে বালিশ দিয়ে শোবেন। পায়ের দিকের উচ্চতা যেন মাথার দিকের চেয়ে বেশি হয় । রোজ খোলা হাওয়ায় ঘণ্টা চারেক বসুন, আর রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোন।

মন চনমনে রাখুন

মনে কোনও উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তাকে ঠাঁই দেবেন না। সবসময় মনে স্ফূর্তি রাখুন। ভালো বই পড়ুন, ভালো মিউজিক শুনুন। স্বামীর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করুন। শারীরিক কষ্টটা কখনও কষ্ট মনে করবেন না। আপনার আসন্ন মাতৃত্বকে সেলিব্রেট করুন।

শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ যেন বজায় থাকে

ছোটো বাচ্চাদের সম্পূর্ণ বোধবুদ্ধি থাকে না। তাই তারা মা-বাবা, বিশেষ করে মায়ের উপর বেশি নির্ভরশীল থাকে। আর যেহেতু ছোটো থেকে বাচ্চাদের উপযুক্ত শিক্ষা এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজন হয়, তাই এই বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা দরকার।

বাড়িতে থাকার কারণে বাচ্চারা এখন অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলছে। আর যে-খাবার খাচ্ছে, তার বেশিরভাগ ফাস্ট ফুড। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, প্রয়োজনের থেকে বেশি খাবার খাওয়া এবং ফাস্ট ফুড এই দুইয়ের মিলিত প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে এই ক্ষেত্রে। অতএব সতর্কতা জরুরি। এক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ স্বাভাবিক রাখতে এবং রোগমুক্ত রাখতে, পুষ্টিযুক্ত সঠিক পরিমাণে খাবার বরাদ্দ করতে হবে। এরমধ্যে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার যেমন প্রোটিন, হেলদি কার্বোহাইড্রেড এবং গুড ফ্যাট জোগান দেওয়া আবশ্যক।

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সুষম খাবারের পাশাপাশি উপযুক্ত ভিটামিন এবং মিনারেল্সও রাখতে হবে শিশুদের খাদ্য তালিকায়। জেনে রাখুন, প্রোটিন শুধু শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটায় না, গড়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আবার শরীরের হাড়সমূহ মজবুত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম এবং খনিজ পদার্থেরও প্রয়োজন মজবুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে গেলে, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে সঠিক মাত্রায়। সমীক্ষা অনুযায়ী জানা গেছে, অধিকাংশ ভারতীয় বাচ্চার প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে এবং এই সমস্যা শুধু গরিব পরিবারের বাচ্চাদের নয়, অর্থবান পরিবারের সন্তানদেরও রয়েছে। কারণ, বাচ্চারা উপযুক্ত খাবার খেতে চায় না, শুধু মুখরোচক খাবার খায়, তাই প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টির অভাব থাকে। এছাড়া, হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কিংবা  স্থূতার কারণেও অনেক বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং নানারকম লাইফস্টাইল ডিজিজ-এ ভোগে।

প্রত্যেক বাবা-মা তাদের বাচ্চার বাজে খাবার খাওয়ার অভ্যাসের জন্য ভীষণ অশান্তিতে থাকেন। কিন্তু ছোটো থেকেই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুব্যবস্থা করার প্রয়োজন এবং তাদের যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো ভাবে গড়ে ওঠে, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। এর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন শাকসবজি, টাটকা ফল ইত্যাদি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ানোর ভীষণ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে তা সবসময় সম্ভব হয় না নানা কারণে।

মনে রাখতে হবে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি, জিংক, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ প্রভৃতির প্রয়োজন।

শীতকালে ফুসফুস ঠিক রাখবেন কীভাবে

যখন শীত জাঁকিয়ে পড়ে, তখন ঠান্ডা লেগে বুকে সর্দি বসে যেতে পারে। অর্থাৎ,কফে ভারাক্রান্ত হতে পারে ফুসফুস। আর ফুসফুস যদি ভারাক্রান্ত হয়, তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেইসঙ্গে, যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে বিপদ আরও বাড়বে।

অতএব, ঠান্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচতে হবে। আর এরজন্য উপযুক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি জোগান দিতে হবে শরীরকে। কারণ, ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফুসফুসের ফাইব্রোসিস ও ফুসফুসের ক্যান্সার রোগ আটকায়। আর ঠিক এই কারণেই, ভিটামিন সি-যুক্ত ফল বেশি করে খাওয়া জরুরি।

 জেনে নিন কোন কোন ফল খাবেন এবং কী কী উপকার পাবেন?

কমলালেবু : শীতকালে সহজলভ্য এই ফল এবং এইসময় দামও কম থাকে। কমলালেবু যেমন সুস্বাদু, তেমনই ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং ফাইবার-যুক্ত। অতএব, এই ফল খেলে সর্দি-কাশি দূর হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ক্যান্সারের মতো মারণরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং হজমশক্তি বেড়ে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হবে।

পেয়ারা : এই ফলটিও ভিটামিন সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। সর্দি-কাশি কমিয়ে হজমশক্তি বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধও করে। তাছাড়া, পেয়ারার সবচেয়ে বড়ো গুণ হল এটি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর শরীরের ওজন আয়ত্বে থাকলে, রোগজীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারবে না।

ডালিম : ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ এই ফল মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ায়, ঠিক তেমনই যে-কোনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুফল দেয়। অতএব মাঝেমধ্যে ডালিম বা বেদানার রস পান করুন।

আঙুর : এই ফলটি যেমন সুস্বাদু, তেমনই ভিটামিন সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা যেমন বাড়ায়, তেমনই রক্তাল্পতা দূর করে। শুধু তাই নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং শরীরকে টক্সিনমুক্ত রেখে অনেক রোগ
আটকায়।

স্বাস্থ্য-সমীক্ষা করুন নিজেই

দিনভর ছোটাছুটি আর ব্যস্ততার ফাঁকে কতটা সময় পান নিজের দিকে তাকাবার? ঠিক কতটা স্বাস্থ্য সচেতন আপনি? নিজেই করুন নিজের অ্যাসেসমেন্ট।

অফিসের কাজের প্রেশার আর একই সঙ্গে যখন সংসারের সমস্ত ঝক্বি সামলান আপনি, তখন আক্ষরিক অর্থেই আপনাকে দশভুজা মনে হয়। কিন্তু এতকিছুর পরে কি নিজের যত্নআত্তি করার ফুরসত পান আপনি? উত্তরটা যদি ‘না’ হয় তাহলে এখনই পালটে ফেলুন এই মনোভাব। কারণ আপনার অজানা নয় যে যতই ওয়ার্কিং উয়োম্যান হোন, সংসারের হালটা আপনারই হাতে। সুতরাং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা আপনার পক্ষে অত্যন্ত অনুচিত। এখানে কিছু প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল, যার দরুণ আপনি বুঝতে পারবেন কতটা হেলথ্ কনশাস আপনি।

১) আপনি কি নিশ্চিত ভাবে প্রতিদিন ৯-১০ গেলাস জল পান করেন?

ক) হ্যাঁ অবশ্যই

খ) দৈনিক ৭-৮ গেলাস জল খাই

গ) জল পান করতে ভালো লাগে না

২)  আপনি কি প্রতিদিন হাঁটতে বেরোন?

ক) ডেলি রুটিনের অঙ্গ

খ) কখনও কখনও বাজার যাওয়ার জন্য হাঁটি

গ) আলাদা করে সময় বের করি না হাঁটার জন্য

৩)  আপনি কি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার ২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাতরাশ করেন?

ক) প্রতিদিন একই সময়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে বসে প্রাতরাশ করি

খ) কখনও অফিস যাওয়ার আগে ব্রেকফাস্ট করি

গ) সময় পাই না প্রাতরাশ করার

৪) ব্রেকফাস্ট  করার সময় পরিস্থিতি কেমন থাকে?

ক) সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে ব্রেকফাস্ট করি

খ) কাজ করার ফাঁকে প্রাতরাশ করি

গ) টিভির সামনে বসে হাতের কাজ সারি আর ব্রেকফাস্টও

৫)  ক্লান্ত বোধ করলে কী করেন?

ক) ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিই

খ) একটু জিরিয়ে নিই

গ) পেইন কিলার ট্যাবলটে খাই

৬)  আপনার দৈনিক ডায়েটে কি ফল, দুধ ও ফাইবার থাকে?

ক) হ্যাঁ নিয়মিত এগুলি ডায়েটে রাখি

খ) মাঝে মাঝে খাই

গ) এগুলি খেয়ে লাভ হয় না

৭)  আপনি কি রুটিন মেডিকেল চেক-আপ করান?

ক) ৫-৬ মাস অন্তর একবার করে

খ) শুধু অসুস্থ হলে

গ) আমি তো সুস্থই আছি, চেক-আপ-এর কী প্রয়োজন

৮)  আপনি কি ফাস্ট ফুড নিয়মিত খান?

ক) ১৫ দিনে ১ বার

খ) প্রায়ই বাড়িতে বানাই

গ) নিয়মিত খাই

৯)  আপনার ওজন বাড়ছে বুঝলে কী করেন?

ক) চিন্তিত হই, বিদেশি ডায়েট চার্ট ফলো করি

খ) ব্রেকফাস্ট স্কিপ করি

গ) স্থূলতা কমানোর ওষুধ খাওয়া শুরু করি

১০)  ব্যায়াম সম্পর্কে আপনার মতামত কী ?

ক) অত্যন্ত জরুরি

খ) নিয়মিত ভাবে করি না

গ) কিছুদিন করে ছেড়ে দিই

১১)  মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন?

ক) ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে থাকে যাতে, সেই পরিমাণ মিষ্টি খাই

খ) কিটি পার্টিতে লোভ সম্বরণ করতে পারি না

গ) মিষ্টি আমার দুর্বলতা

হেল্থ মিটার

আপনার বেশিরভাগ উত্তর যদি (ক) হয়, তাহলে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনি সত্যিই স্বাস্থ্য সচেতন। যদি বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর (খ) তাহলে স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপারে আপনার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আর বেশিরভাগ উত্তর যদি (গ) হয় বুঝতে হবে আপনি আদৌ সচেতন নন, শুধু তাই নয় আপনার নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যথেষ্ট যত্নবানও নন। এভাবে চলতে থাকলে গুরুতর রকমের অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

ডিপ ভেন থ্রমবোসিস

এমন অনেক অসুখ আছে যা বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না। Deep vein thrombosis বা সংক্ষেপে ডিভিটি তেমনই একটি অসুখ। ভারতবর্ষের ১১ টি রাজ্যে মোট ৪৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্য অসুখের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রুগিদের অনেকেই ডিভিটিতে আক্রান্ত হয়েও বুঝতে পারেন না। আর এইসব রুগিদের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। তাই, ডিভিটি অসুখটি সম্পর্কে বিশদে জেনে নিয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে।

ডিপ ভেন থ্রমবোসিস আসলে কী?

কোমরের নীচের অংশে অর্থাৎ থাই থেকে হাঁটুর মধ্যের মাংসল অংশের রক্তনালির মধ্যে কোনওভাবে যদি রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তাহলে ডিপ ভেন থ্রমবোসিস-এর সমস্যা তৈরি হয়। আর রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত রক্ত পৌঁছোতে পারে না। তাই ওই জমাট বাঁধা অংশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সামান্য ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। আর ওই জমাট বাঁধা রক্ত যদি হৃৎপিণ্ডর নালিতে চলে যায়, তাহলে এর পরিণাম ভয়ংকর হতে পারে। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে জ্ঞান হারানোর (সেন্সলেস) ঘটনাও ঘটতে পারে।

ডিভিটির কারণ

  • কোমরের নীচের অংশে বড়ো আঘাতের ফলে রক্তনালিতে এর খারাপ প্রভাব পড়ে অর্থাৎ রক্ত জমে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়।
  • শরীরে যদি লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হঠাৎ খুব বেড়ে যায়, তাহলেও ডিভিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • কোনও মহিলা যদি প্রি-ম্যাচিওর সন্তানের জন্ম দেন, দীর্ঘদিন বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করেন কিংবা সিজারিয়ান বেবির জন্ম দেন, তাহলেও ডিভিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিভিটির লক্ষণ

৬০ বছর বয়সের পরে সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আজকাল নানা কারণে সব বয়সেই হতে পারে এই অসুখ। আর এই অসুখের লক্ষণগুলি হলঃ

  • যে-কোনও একটি পায়ে দেখা যায় লাল দাগ। তবে এই লাল দাগ কখনও কখনও আবার কালচে নীল বর্ণও ধারণ করতে পারে
  • পায়ে হালকা যন্ত্রণা শুরু হয়ে ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। পা ভাঁজ করার সময়ই এই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
  • পায়ের মাংসপেশি কাঁপতে থাকে মাঝেমধ্যে এবং রাতে এই সমস্যা বাড়তে থাকে।

পরীক্ষানিরীক্ষা

উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে যদি একটি লক্ষণও বুঝতে পারেন, তাহলে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করান। এক্ষেত্রে যে-সব পরীক্ষার প্রয়োজন তা হলঃ

ডোপ্লার আল্ট্রাসাউন্ড

এ টেস্ট-এ কোনওরকম যন্ত্রণা অনুভূত হয় না এবং রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে তা এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে।

ভেনোগ্রাফি

ডিভিটির জন্য ভেনোগ্রাফি সবচেয়ে ভালো টেস্ট। তবে এই পরীক্ষায় অল্প ব্যথা হতে পারে। আসলে এই পরীক্ষা করার আগে একপ্রকার লিকুইড ইনজেক্ট করতে হয় রক্তনালিতে, তাই সামান্য ব্যথা হতে পারে।

ইম্পিডেন্স প্লেথোস্মোগ্রাফি

এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎচালিত রে (রশ্মি) দিয়ে রক্তনালিতে রক্ত চলাচলের গতি নির্ণয় করা হয়। তবে কোনও যন্ত্রণা হয় না এই পরীক্ষায়।

সিটি স্ক্যান

পায়ের রক্তনালিতে জমা রক্ত হৃৎপিণ্ডের কাছাকাছি চলে গেছে কিনা, তা সিটি স্ক্যান-এ পরিষ্কার বোঝা যায়। তাই ডিভিটির জন্য এই পরীক্ষা জরুরি।

ডিভিটির প্রবণতা

  • হিপ ফ্র্যাকচার হলে যদি প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়ে থাকে, তাহলে সার্জারির পর ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পায়ের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে।
  • ক্যানসার-এ আক্রান্ত রুগির যদি বড়ো কোনও সার্জারি হয়ে থাকে, তাহলেও ডিভিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ভাঙা পা প্লাস্টার করা অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলেও ডিভিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ডিভিটি-র চিকিৎসা পদ্ধতি

  • পরীক্ষানিরীক্ষার পর যদি ডিভিটি ধরা পড়ে এবং তা প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, তাহলে চিকিৎসক প্রথমে মেডিসিন প্রয়োগ করে জমা রক্ত পাতলা করে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেন।
  • রক্তনালিতে জমা রক্ত পাতলা করার জন্য যদি কয়েকটি ইজেকশন দিতে হয়, তাহলে রুগিকে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
  • ডিভিটির অসুখ যদি গুরুতর রূপ নেয়, তাহলে সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জমা রক্ত যাতে হৃৎপিণ্ডে না পৌঁছোতে পারে, তার জন্য রক্তনালিতে এক বিশেষ ফিলটার বসিয়ে দেওয়া হয় এই সার্জারির মাধ্যমে।

পরামর্শ

  • যদি ১৪ হাজার ফিট কিংবা তারও বেশি উঁচুতে উঠতে হয়, তাহলে মাঝেমধ্যে কয়েকঘণ্টা বিশ্রাম নিতে-নিতে উঠুন। নয়তো ডিভিটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
  • পায়ে বড়ো কোনও সার্জারি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাঁটাচলার চেষ্টা করবেন। এতে ডিভিটির সম্ভাবনা কমবে।
  • দীর্ঘ সময় হাঁটু ভাঁজ করে একইভাবে বসে থাকবেন না।
  • পায়ে বড়োরকম চোট পেলে অবশ্যই চিকিৎসা করাবেন এবং একমাসের মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করিয়ে নেবেন।

অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনে ‘ক্যাস’

অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনে ‘ক্যাস’-এর প্রয়োগ বাড়ছে। এই ‘ক্যাস’ হল চিকিৎসা পদ্ধতির শর্ট ফর্ম বা সংক্ষিপ্তসার। ‘ক্যাস’ বা ‘CAS’-এর ফুল ফর্ম– ‘Computer Assisted Surgery’। শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি খুবই উন্নত এবং কার্যকরী প্রযুক্তি।

কে, কবে, কোথায় এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছিলেন?

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাকরামেন্টোনিবাসী উইলিয়ম বার্গার ১৯৯২ সালে প্রথম এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছিলেন হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর সার্জারিতে। আর ১৯৯৭ সালে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ারই ফ্রেডেরিক পিকার্ড। তবে আমদের দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি।

ম্যানুয়াল সার্জারির পরিবর্তে ‘ক্যাস’-এর প্রয়োজন হল কেন?

অস্থিসন্ধি শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনও দুর্ঘটনা কিংবা ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে যদি অস্থিসন্ধির ক্ষতি হয়, তাহলে অনেকসময় সার্জারির প্রয়োজন হয়। আর অস্থিসন্ধি, বিশেষকরে হাঁটু কিংবা নিতম্বের হাড়ে চোট লাগলে কিংবা ভেঙে গেলে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে বড়ো ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সোজা ভাবে দাঁড়াতে না পারা, বিকলাঙ্গ হয়ে পড়া, এমনকী ইনফেক্শন হয়ে গিয়ে পচন ধরে রুগির জীবনহানিও ঘটতে পারে। অতএব শরীরের এইসব গুরুত্বপূর্ণ অংশে ম্যানুয়াল সার্জারি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এতকাল। বর্তমানে ক্যাস বা সিএএস, অর্থাৎ কম্পিউটার-অ্যাসিস্টেড সার্জারির সুবিধে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করা যাচ্ছে এবং ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

‘ক্যাস’ কীভাবে কাজ করে? অর্থাৎ, কম্পিউটারের সাহায্যে কীভাবে ‘নী’ এবং ‘হিপ্’ রিপ্লেসমেন্ট করা হয়?

এই টেকনোলজি বিশেষভাবে বিজ্ঞান ও কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক গবেষণার ফসল। এই ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন ধরনের অস্থির সঠিক অবস্থান জানা যায় এবং এই ধারণা সার্জারির ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে কাজে লাগে। অস্থিগুলির সঠিক অবস্থান জানার পর প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থিসন্ধিগুলিকে জুড়ে দেওয়া যায় নিখুঁত ভাবে। ফলে, সন্ধি সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় না। বিশেষকরে, হাঁটু এবং নিতম্বের অস্থিতে নিখুঁত অপারেশন করার জন্য অস্থি এবং অস্থিসন্ধির সঠিক অবস্থান জানাটা অত্যন্ত জরুরি। এই টেকনোলজি আমাদের সেই সুবিধেই দেয়। আর এই কম্পিউটার-অ্যাসিস্টেড সার্জারির সময় আমরা (শল্য চিকিৎসকরা) জয়েন্টের সঠিক অবস্থান জানার জন্য একটি পিন ব্যবহার করি। ওই পিনের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ থাকায়, শল্য চিকিৎসার জন্য সমস্ত তথ্য প্রকাশ পায়। ফলে, সার্জারির পর রোগি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

কম্পিউটার-অ্যাসিসেটড সার্জারি বা ক্যাস-কে মাধ্যম করে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করলে কী কী সুবিধে পাওয়া যাবে?

  • ‘ক্যাস’ টেকনিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-এর ক্ষেত্রে অসংখ্য অস্থি প্রতিস্থাপনে সার্জনকে সাহায্য করে
  • অস্থি প্রতিস্থাপন সিংহভাগ সফল হয়
  • ভুল জায়গায় অস্থির সংযোগ, ঝুঁকি কিংবা পুনরায় অপারেশন প্রভৃতি সমস্যার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে
  • অস্থি সন্ধি সঞ্চালনের মাত্রাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে
  • জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-এর পর সামগ্রিক ভাবে দেহের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে
  • রক্তক্ষরণের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়
  • অপারেশনের পর সুস্থ হতে সময় কম লাগে
  • সার্জারির জন্য কম কাটাকাটি করতে হয় এবং সার্জারির পর স্টিচের দাগ প্রায় মিলিয়েই যায়
  • ইনফেকশন-এর সম্ভাবনা কমে যায়

কম্পিউটারের সাহায্যে নী এবং হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর জন্য খরচ কত?

‘ক্যাস’ সিস্টেম-এ নী এবং হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর জন্য খুব বেশি খরচ নেই। ম্যানুয়াল সার্জারির তুলনায় এই পদ্ধতিতে খরচ সামান্যই বেশি। অপারেশনের পরে হাসপাতালে কম সময় থাকতে হয় বলে, বেড ভাড়ার খরচও অনেকটাই কমে যায়।

কর্মরতার ফিটনেস সিক্রেট

আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে, আজকাল বেশিরভাগ Working Woman সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। তাই, ঘরোয়া কাজ ছাড়াও, পেশাগত বাড়তি পরিশ্রমের জন্য দিনান্তে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। এর প্রধান কারণ– অপুষ্টি। আর এই অপুষ্টির প্রধান কারণ সঠিক সময়ে উপযুক্ত খাবার না-খাওয়া।

আসলে, দেহ-যন্ত্রটিকে সচল ও সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য উপযুক্ত রসদের (Healthy food) জোগান দেওয়া যে প্রয়োজন, এ বিষয়ে অনেকে মাথা-ই ঘামান না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়– অসুখ। আর সবচেয়ে মজার ঘটনা এই যে, অসুখে পড়লে সব কর্মরতারই সেই একই অজুহাত, ‘কাজের চাপে একেবারেই খাওয়ার সুযোগ পাই না।’ কিন্তু মনে রাখবেন, এক্সকিউজ দিয়ে আপনজনের বকুনির হাত থেকে বাঁচা যায়, শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায় না। অতএব, দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকার জন্য এবং তারুণ্য ধরে রাখার জন্য শরীরকে উপযুক্ত রসদ জোগান দিতে হবে।

বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান রণিতা ঘোষের মতে, পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের বেশি পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন। কারণ, ঘরে-বাইরের কাজ ছাড়াও, মা হতে হয় মেয়েদের। তাই শরীর ও মনের উপর প্রবল চাপ পড়ে। আর এই চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, সঠিক সময়ে উপযুক্ত মাত্রায় প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।

যে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সময়মতো শরীরকে পুষ্টি জোগানো উচিত। নয়তো, চল্লিশ বছর বয়সের পর চুল পড়া শুরু হবে, বাড়বে রক্তচাপও। শুধু কি তাই, অপুষ্টিতে ভুগে মা হলে, নিজের এবং বাচ্চার উভয়েরই ক্ষতি হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতাও কমবে। অল্প বয়সেই নষ্ট হবে ত্বকের লাবণ্য  এবং কমে যাবে আয়ুও। আর এসবের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে, ব্যবস্থা নিতে হবে নিজেকেই। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে কখন, কী কী খাবেন তা ঠিক করে নিতে হবে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়কে বেছে নিতে হবে শরীরচর্চার জন্য।

ঘুম থেকে উঠে বেড-টি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ক্ষতি নেই। এতে পেট পরিষ্কার হবে। এরপর অফিসে যাওয়ার আগে কম সময়ে খাওয়া যায় এমন কিছু খাবার খেতে হবে। যেমন– বাটারযুক্ত ব্রেড, ওট্স, ডালিয়া প্রভৃতি। এসবের জন্যও যদি সময় না থাকে, তাহলে চারটে ভালো বিস্কুট, খেজুর, আমন্ড, জলে ভেজানো চিনে বাদাম এবং অঙ্কুরিত ছোলা খান কিংবা এক গেলাস ছাতুর শরবত খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন অফিসে।

দুপুরে খাওয়ার জন্য বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়াই ভালো। যদি সকালে ভাত, মাছ, ডাল খেয়ে আসতে পারেন তাহলে খুবই ভালো। নয়তো দুপুরে শরীরকে এইসব খাবার জোগান দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে শরীরকে ভারী খাবার জোগাতেই হবে সুস্বাস্থ্যের জন্য। তবে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে। তাই দুপুরে উপযুক্ত মাত্রায় খাবার খান চাহিদা অনুযায়ী এবং সেই সঙ্গে খান একটা পেয়ারা, সফেদা কিংবা আপেল।

বিকেলের দিকে যদি সম্ভব হয় তাহলে একটা ডিম সেদ্ধ এবং কিছুটা ছানা খেতে পারেন। তবে ভাজাভুজি যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার দশ-পনেরো মিনিট বাদে নির্দিষ্ট মাত্রায় জল খাবেন। সারাদিনে অন্তত চার লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষকরে, শীতকালে উপযুক্ত পরিমাণ জল খাওয়া হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ, ঠান্ডার ভয়ে অনেকে শীতকালে কম জল খান, তাই তাদের হজমের গোলমাল হয় এবং ত্বক রুক্ষ্ম হয়ে ওঠে। অতএব, অবশ্যই জল খাবেন পরিমাণমতো।

সন্ধের সময় বাড়ি পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে নিয়ে গরম চা আর দুটো বিস্কুট খেতে পারেন। রাতে খান সবজি-রুটি কিংবা ভাত-সবজি। তবে রাতে অল্প খাবার খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আর খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না, খানিকক্ষণ হাঁটাচলা করে ঘুমোতে যান। এতে ভালো হজম হবে এবং গভীর ঘুম হয়ে শরীর-মন ভালো থাকবে।

Healthy food habit

খাদ্য তালিকায় সবরকম খাবার রাখা প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন খাবারের থাকে পৃথক গুণ। তাই, সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য শরীরকে সবরকম খাবার সরবরাহ করা উচিত। এবং জেনে রাখুন কোন খাদ্যের কী কী গুণ রয়েছে।

টাটকা শাকসবজি

বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রকোলি, মুলো, গাজর প্রভৃতিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’। এই দুই ভিটামিন চোখের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি, মস্তিষ্ক উর্বর করে। এছাড়া, স্ট্রোকস, অ্যালজাইমার’স, ক্যানসার প্রভৃতি থেকে অনেকটাই রেহাই দেয়।

ফলমূল

শরীরকে ভিটামিন ‘ই’, আয়রন এবং পটাশিয়াম জোগান দেওয়ার জন্য পেঁপে, কলা, পেয়ারা এবং আপেল খেতে হবে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এসব ফল খাওয়া খুবই দরকার। সেইসঙ্গে, খাদ্য-তালিকায় রাখবেন আঙুর এবং স্ট্রবেরি। কারণ, এই দুই ফল খেলে হজম শক্তি বাড়বে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখবে।

টম্যাটো

টম্যাটো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত সবজি। যা করনারি হার্ট ডিজিজ এবং ক্যানসার প্রতিরোধক। তাছাড়া, চোখ এবং ত্বক ভালো রাখার জন্যও টম্যাটো খাওয়া উচিত।

রসুন

কোলেস্টেরল লেভেল লো করার জন্য এবং রক্তচাপ কমানোর জন্য রসুন খাওয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মুখ থেকে উগ্র গন্ধ বেরোবার ভয়ে অনেকে রসুন খান না। কিন্তু মাছ, মাংস কিংবা শাকসবজি রসুন দিয়ে রান্না করে খেলে উগ্র গন্ধের সমস্যা তেমন থাকে না। তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু পরিমাণ রসুন খাবেন।

বাদাম

চিনে, পেস্তা, কাজু প্রভৃতি বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ই’, আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা খেলে ত্বকের তরতাজা ভাব বজায় থাকবে এবং কোলেস্টেরল লেভেলকে স্বাভাবিক রাখবে।

দই এবং মধু

শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দই খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, ভারী খাবার হজম করাতেও সাহায্য করে দই। আর ইন্সট্যান্ট এনার্জির জন্য খাওয়া উচিত মধু। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

সয়াবিন্স

সয়াতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম থাকে। অস্টিয়োপোরোসিস-এর মতো রোগের হাত থেকে মুক্ত করে এবং অস্থি বা হাড়় মজবুত করতে সাহায্য করে সয়া। এছাড়া, অ্যালজাইমার’স এবং হার্ট ডিজিজ থেকেও বাঁচা যাবে মাঝেমধ্যে সয়া খেলে।

ফলের রস

তরমুজ, মুসম্বি, কমলালেবু প্রভৃতি ফলের রস খান নিয়মিত। কারণ, এইসব ফলের রসে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ সবই থাকে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এইসব ফ্রুট জুস খাওয়া খুবই দরকার।

অবশ্য, সঠিক সময়ে উপযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, ফিটনেস-এর জন্য আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।

Fitness tips

প্রতিদিন সকাল-সন্ধে অন্তত ১০ থেকে ২০মিনিট হাঁটুন।

কথা না বলে চুপচাপ একা বসে থাকুন ১০ মিনিট।

রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোবেন।

এনার্জি, এন্থুসিয়জ্ম এবং এমপ্যাথিঃ এই তিন ‘ই-পাওয়ার’-এর উপর জোর দিন।

সারাদিনের কাজ আগের রাতে ভেবে ঠিক করে রাখুন। এতে মানসিক চাপ কমবে।

সারাদিন মুখ গম্ভীর করে রাখবেন না, মাঝেমধ্যে মন খুলে হাসবেন।

হাওয়া বদলের জন্য মাঝেমধ্যে বেড়াতে যাবেন।

কর্মরতাদের ডায়েট চার্ট

সকাল ৭টাঃ

১ গেলাস জল, ১ মুঠো অঙ্কুরিত ছোলা

সকাল ৮টাঃ

লিকার চা, সঙ্গে দুটো বিস্কুট

ব্রেকফাস্ট

সকাল ৯টাঃ

ডালিয়া অথবা ওট্স ৫০ গ্রাম কিংবা

দুটো বাটার ব্রেড এবং ২০০ মিলিলিটার দুধ।

সকাল ১১ঃ৩০ মিনিটঃ

যে-কোনও ১টা মরশুমি ফল

লাঞ্চ

দুপুর ১ঃ৩০ মিনিটঃ

রুটি বা ভাত সঙ্গে ডাল ২৫ গ্রাম,

অল্প সবজি, মাছ ১০০ গ্রাম অথবা দুটো রুটি বা ভাজি সঙ্গে মাছ অথবা চিকেন অথবা ডিম এবং ১টা ফল

বিকেল ৪টেঃ

লিকার চা ১ কাপ, সঙ্গে ১টা বিস্কুট

সন্ধ্যে ৬টাঃ

৩০০ মিলিলিটার দুধের ছানা, সামান্য মুড়ি অথবা খই অথবা ড্রাই চিকেন ফ্রাই ৫০গ্রাম।

ডিনার

রাত্রি ৯টাঃ

রুটি ২ থেকে ৪টি,সঙ্গে ডাল ২০গ্রাম, সামান্য সবজি অথবা ১০০গ্রাম চিকেন অথবা মাছ অথবা পনির এবং স্যালাড।

 

স্বর সমস্যার সঠিক সমাধান

ভয়েস বক্স বা স্বরযন্ত্র আমাদের শরীরের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ, এই স্বরযন্ত্রের মাধ্যমে আমরা সবাক হই। অবশ্য শুধু সবাক হওয়াই নয়, মনের আবেগ-অনুভূতিও প্রকাশ করি। বিশেষকরে লেকচারার, নেতা, সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, আবৃত্তিকার, সঞ্চালক প্রমুখ পেশাদারদের নির্ভর করতে হয় কণ্ঠস্বরের উপর। অতএব, কণ্ঠস্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই কণ্ঠস্বর তৈরি হয় voice box থেকে। এর অবস্থান আমাদের কণ্ঠে। কিন্তু কণ্ঠের কোনও অসুখে যদি আমাদের কণ্ঠ ভেঙে যায়, রুদ্ধ হয় কিংবা যদি পুরোপুরি নির্বাক হয়ে যাই তাহলে?

না-না, দিশাহীন হয়ে পড়া কিংবা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সমস্যা যতই গুরুতর হোক না কেন, বর্তমান চিকিৎসা-বিজ্ঞানের দৌলতে, সবরকম সমাধানের পথ খোলা আছে। কিন্তু এই অসুখ সারানোর জন্য সচেতন থাকা জরুরি এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করাও অত্যন্ত প্রয়োজন। সম্প্রতি কণ্ঠস্বর সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধানের বিষয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিশিষ্ট ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. ধ্রুব রায়।

কীভাবে বোঝা যাবে, একজন সবাক মানুষের কণ্ঠস্বরের সমস্যা হয়েছে?

হঠাৎ যদি গলা ভেঙে যায় কিংবা বাকরুদ্ধ হয়, তাহলে কণ্ঠস্বরের অসুখের সম্ভাবনার কথা ভেবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অনেকসময় ঠান্ডা লেগে কিংবা চিৎকার করার ফলেও গলা ভেঙে যায়। সেক্ষেত্রে অসুখ এবং সাধারণ গলা ভাঙার তফাত বোঝা যাবে কী করে?

সাধারণ গলা ভাঙার বিষয়টি সাময়িক সমস্যা। দু-এক দিন ওষুধ খেলে এবং কথা কম বললে সেরে যায়। কিন্তু গলা ভাঙা কিংবা বাকরুদ্ধ হওয়ার সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

গলার স্বরের অসুখ হয়েছে কিনা কিংবা কী ধরনের অসুখ হয়েছে, এটা আপনারা বোঝেন কীভাবে?

ভয়েস ডিসঅর্ডার-এর অসুখে আক্রান্ত কিনা এটা বোঝার জন্য আমরা প্রথমে ভোকাল কর্ড অর্থাৎ যেখান থেকে গলার স্বর বেরোয়, সেখানটা পরীক্ষা করি। প্রথমে দেখে নিই, প্যারালাইসিস বা দুর্বলতার কারণে স্বরের সমস্যা হয়েছে কিনা। এরপর আমরা দেখি ভোকাল কর্ডে জল জমেছে কিনা কিংবা কোনওরকম গ্রোথ হয়েছে বা ফুলে গেছে কিনা। এরপর রোগ নির্ধারণ হয়ে গেলে শুরু করি চিকিৎসা।

চিকিৎসা পদ্ধতিটাই বা কী? ওষুধ নাকি সরাসরি সার্জারির পথ বেছে নিতে হয়?

ছোটোখাটো সমস্যা হলে প্রথমে আমরা ওষুধ এবং এক্সারসাইজ-এর মাধ্যমে রোগ সারানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু যদি সমস্যা জটিল রূপ নিয়ে থাকে, তাহলে সার্জারি ছাড়া উপায় থাকে না। তবে বর্তমান উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাতে সার্জারিতে কোনও ভয় নেই এবং খুব সহজেই একটা ছোট্ট অপারেশন-এর মাধ্যমে রোগমুক্ত হওয়া যেতে পারে।

ভয়েস ডিসঅর্ডার-এর এখন কতরকম সার্জারি হয়?

স্বর সংক্রান্ত অসুখ সারাতে এখন মোট তিনরকম সার্জারি চালু আছে। প্রথমটি করা হয় মাইক্রোসার্জারি পদ্ধতিতে লেসারের মাধ্যমে। চিকিৎসকদের ভাষায় যাকে বলা হয় ভিডিয়ো ল্যারিঙ্গোস্কোপি। অর্থাৎ স্বরযন্ত্রের পরিস্থিতি ভিডিয়োগ্রাফিতে দেখে নিয়ে মাইক্রোসার্জিক্যাল পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়। দ্বিতীয় ধরনের সার্জারিটিকে বলা হয়, আর্লি ক্যানসার সার্জারি। অর্থাৎ স্বরযন্ত্রে যদি কোনও মাংসপিণ্ড গজিয়ে ওঠে এবং তা বায়োপ্সি করে যদি দেখা যায় প্রাথমিক পর্ব, তাহলে তা আর্লি ক্যানসার স্টেজ ধরে নিয়ে সার্জারি করা হয়। এক্ষত্রে আমরা মাংসপিণ্ডকে লেসার দিয়ে কেটে ফেলে দিই কিংবা ছোটো করে শুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এক্ষেত্রে রুগির কোনওরকম ক্ষতি হয় না এবং তাঁর গলার স্বরও স্বাভাবিক থাকে। তবে তৃতীয় সার্জারিটি একেবারে নতুন ধরনের। এই সার্জারির পদ্ধতিটিকে আমরা চিকিৎসকরা বলে থাকি, ‘সিওটু অ্যাকুব্লেড লেসার’। এই অ্যাকুব্লেড লেসার, সাধারণ লেসারের থেকে একটু আলাদা এবং আরও উন্নত মানের। এরমধ্যে ছুরির মতো একটা যন্ত্র থাকে। এটা ব্রেক-আপ করে লাইনের মতো কাটে। একেবারে ধারালো ব্লেড-এর মতো। এতে ক্যানসার আক্রান্ত জায়গার (মাংসপিন্ডের) আশপাশ অঞ্চল কোনওরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং সংক্রমণ ছড়ায় না। তাছাড়া, সেলাইয়ের ঝামেলা নেই এবং রক্তপাতও তেমন হয় না। দিল্লি, মুম্বই, পুনে প্রভৃতি জায়গার মতো কলকাতাতেও এখন এই ‘সিওটু অ্যাকুব্লেড লেসার সার্জারি’র সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

এই ধরনের সার্জারির ক্ষেত্রে কতদিন বিশ্রামে থাকতে হবে?

খুব কুইক রিকভারি হয় এই ধরনের সার্জারির ক্ষেত্রে। তাই খুব বেশি সময় রুগিকে হাসপাতালেও থাকতে হয় না এবং কাজেও যোগ দেওয়া যায় খুব তাড়াতাড়ি।

এই চিকিৎসার জন্য খরচের পরিমাণ কেমন?

রোগ কতটা জটিল রূপ নিয়েছে, তার উপরই নির্ভর করছে খরচের পরিমাণ। তবে খুব বেশি টাকা খরচ করতে হবে না যদি সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা করা যায়।

চিকিৎসক হিসাবে কী পরামর্শ দেবেন সর্বসাধারণের জন্য?

ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। খুব ঠান্ডা জল কিংবা ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে সঙ্গে সঙ্গে খাবেন না। যাদের বেশি কথা বলতে হয়, তারা মাঝেমধ্যে গলাকে বিশ্রাম দেবেন। খুব চিৎকার করে কথা বলবেন না। গলার কোনওরকম সমস্যা অনুভূত হলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। একসঙ্গে যাতে আর্থিক চাপ না পড়ে, তার জন্য আগে থেকেই চিকিৎসাখাতে অর্থ বরাদ্দ করুন এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যবীমা করিয়ে রাখুন।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব