ক্লেফ্ট লিপ এবং ক্লেফ্ট প্যালেট

বিশ্বে প্রতি তিন মিনিটে একটি শিশু cleft lip বা cleft palette-এর সমস্যা নিয়ে জন্মায়। অর্থ, পরিকাঠামো আর সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবে শিল্পোন্নত দেশের এমন কয়েক লক্ষ শিশুই স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পায় না। শুধুমাত্র ভারতেই ক্লেফ্ট লিপ আর প্যালেটের সমস্যায় ভোগা শিশুদের একটা বড়ো অংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর বিকৃত চেহারা নিয়েই সম্পূর্ণ জীবন কাটিয়ে দেয়। ভারতে ৫০০ শিশুর মধ্যে ১টি শিশু এই জন্মগত সমস্যায় ভোগে। সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা আর চিকিৎসা নিয়ে কুসংস্কারের জেরে দশ লক্ষেরও বেশি শিশু কোনও চিকিৎসা পায় না।

ক্লেফ্ট লিপ আর প্যালেট কী?

জন্মগত সমস্যার নিরিখে ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটেই সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। এর ফলে বিকৃত হয় ঠোঁট আর মুখের গঠন। ওরাল ফেসিয়াল ক্লেফ্ট-এ ঠোঁটের চারপাশ বা প্যালেট বিকৃত হয় গর্ভসঞ্চারের প্রথম চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে। এইসময় ওপর আর নীচের ঠোঁট আর প্যালেটের টিস্যু জিভের দু’পাশ থেকে গঠিত হয়ে ওপরের ঠোঁট এবং শক্ত আর নরম প্যালেট তৈরি করে। মহিলারা তাঁদের গর্ভাবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার আগে অর্থাৎ প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঠোঁট আর প্যালেটের গঠনের কাজ শুরু হয়ে যায়। এই টিস্যু যদি ঠিকঠাক না জোড়ে তাহলেই বিকৃতি দেখা দেয়। এরই ফল হল ক্লেফ্ট। শিশু বিশেষে এই সমস্যার গভীরতা ভিন্ন হয়। সবথেকে বেশি ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে হয় ক্লেফ্ট লিপ বা প্যালেটের সমস্যা। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে একতরফা ক্লেফ্ট লিপের সমস্যা দেখা দেয়।

ক্লেফ্ট প্যালেটঃ  মুখের ভিতরে তালুর অংশ ঠিকঠাকভাবে না জুড়লে ক্লেফ্ট প্যালেট তৈরি হয়। প্যালেটের দু’দিক থেকে শুরু করে নাসারন্ধ্র পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে এই বিকৃতি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হার্ড প্যালেট-সফট প্যালেট থেকে গলা পর্যন্তও প্রসারিত হতে পারে তাতে বিকৃত হতে পারে ঠোঁটও।

ক্লেফ্ট লিপঃ  ঠোঁটের দু’দিকের গঠন ঠিক না হলে ক্লেফ্ট লিপের সমস্যা দেখা দেয়। এই ক্লেফ্ট ঠোঁট থেকে নাক পর্যন্ত (অসম্পূর্ণ) কখনও বা নাসারন্ধ্র পর্যন্ত প্রসারিত হয় (সম্পূর্ণ)

ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটের কারণ

কী কারণে শিশুদের মধ্যে ক্লেফ্ট লিপ আর প্যালেটের সমস্যা দেখা দেয় তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

জিনগত সমস্যাঃ  এ ব্যাপারে জিনের ভূমিকা থাকে। পরিবারের যত বেশিজন সদস্য ক্লেফ্ট-এর সমস্যায় ভোগেন গর্ভস্থ শিশুর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়ে।

খাদ্যাভ্যাসঃ  ভিটামিন ডি আর ফোলিক অ্যাসিডের অভাবে গর্ভস্থ ভ্রূণের বেড়ে ওঠায় বিশেষ করে স্নায়ুর বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টস খেলে শিশুর ক্লেফ্ট সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

ওষুধ ও রাসায়নিক ব্যবহারঃ  বেশ কিছু ওষুধ আর রাসায়নিকের আধিক্যে ফোলিক অ্যাসিডের অভাব হয় শরীরে।

সমস্যাসমূহ

শারীরিক গঠনের বিকৃতি ছাড়াও ক্লেফ্ট লিপ আর ক্লেফ্ট প্যালেটের আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি হল–

খাবার খাওয়ায় সমস্যাঃ  ক্লেফ্ট প্যালেটের সমস্যা থাকলে শিশুদের খাবার খেতে সবথেকে বেশি সমস্যা হয়। সে কারণে ওদের পুষ্টির দিকে খুব বেশি জোর দিতে হয়। মুখের তালুর গঠন ঠিকঠাক হয় না বলে শিশুরা খাবার খেতে সমস্যায় পড়ে। অনেক সময় খাবার নাকে চলে যায়। চিবোতে বা গিলতেও সমস্যা হয়। এধরনের সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা মায়ের দুধও খেতে পারে না। কারণ মুখ ও নাকের গঠন ঠিকঠাক থাকে না। খাবার গিলে খাওয়ার পরই তা নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে। কথা বলতেও সমস্যা হয়।

হাসতে সমস্যা

মুখ খোলা আর বন্ধের সময় ব্যবহৃৎ পেশির গঠনে ত্রুটি থাকায় হাসতেও সমস্যা হয়।

সামাজিক ও মানসিক সমস্যা

অভিভাবক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবং বন্ধুরা শিশুটির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যায় পড়েন। এর ফলে শিশুটির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও পরিবার আর বন্ধুদের থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

কানে সংক্রমণ আর বধিরতা

কানের মধ্যবর্তী অংশ আর গলার মধ্যে সংযোগসাধনকারী নালির কোনও কাজ থাকে না বলে কানে সংক্রমণ দেখা দেয়। বারবার এমন সংক্রমণ থেকে শিশুটির শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে।

কথা বলা আর ভাষা শেখায় সমস্যা

মুখের তালুর অংশ আর ঠোঁট উন্মুক্ত থাকায় পেশির কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে অনেক দেরিতে কথা বলা শুরু করে শিশুরা এবং কখনও কখনও কথা বলার সময় অসঙ্গতিও দেখা দেয়।

দাঁতের সমস্যা

এই ধরনের মৌখিক বিকৃতি থাকার জন্য দাঁতের গঠনও সঠিক হয় না। সেই কারণে দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি

চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার। বিকৃতির ওপর নির্ভর করে, পুরোপুরি সারিয়ে তোলাও সম্ভব কিনা। ব্যক্তিবিশেষে এক থেকে সর্বোচ্চ আটটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে এক্ষেত্রে। সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হতে ক্লেফ্ট সমস্যায় ভোগা শিশুর গড়ে চারটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে যে-ধরনের অস্ত্রোপচার হয় সেগুলি হল –

প্রাথমিক ঠোঁটের মেরামতিঃ  শিশুর বয়স দশ সপ্তাহ হলে এই অস্ত্রোপচার হয়।

প্যালেটের মেরামতি ৯ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে এই অস্ত্রোপচার হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ের মেরামতি প্রয়োজন হলে ৪-৬ বছর বয়সে এই চিকিৎসা হয়।

অ্যালভিওলার ক্লেফট-এর চিকিৎসা ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে করতে হয়।

চূড়ান্ত মেরামতির প্রয়োজন হলে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সে করা হয়।

এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসাও করা হয়। যেমন – স্পিচ থেরাপি, দাঁতের গঠন মেরামতি ও মানসিক চিকিৎসা।

কুসংস্কার, অবহেলা এবং ফলাফল

ভারতবর্ষের গ্রামগুলির মূল সমস্যা কুসংস্কার আর অশিক্ষা। গ্রামীণ এলাকায় যেখানে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়,  সেখানে এর জন্য মাকে দায়ী করা হয় এবং ওই শিশুটির ওপর ‘শয়তান ভর’ করেছে বলে মনে করা হয়। শিশুটিকে দুর্ভাগ্যের বাহক বলে বিশ্বাস করে মানুষ। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুটির বয়স ৫ বছর হওয়ার পর বিষয়টি চিকিৎসকের গোচরে আনা হয় এবং ১৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের পর চিকিৎসার কথা ভাবেন অভিভাবকরা। অস্ত্রোপচার শুধুমাত্র গঠনগত সমস্যা নিরসন করতে পারে। কিন্তু কার্যকরিতায় পরিবর্তন আনা যায় না। ফলে যে সমস্ত রোগীদের প্যালেটের অস্ত্রোপচার হয় না, তাদের কথা বলার সমস্যা তো থাকেই, পাশাপাশি মানসিক সমস্যা ও চোখে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাছাড়া বেশ কিছু অভ্যাসগত ত্রুটিও দেখা দেয় যা একটু বেশি বয়সে পুরোপুরি নিরসন করাও সম্ভব হয় না। সেকারণেই চিকিৎসকরা দ্রুত চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ দেন।

বাচ্চাদের যত্নে রাখুন বর্ষাকালে

এবছর বর্ষা বেশ প্রলম্বিত৷এদিকে দুষ্টুমি, জেদ এবং আরও নানারকম কারণে বর্ষাকালে বেশি অসুস্থ হতে দেখা যায় শিশুদের। শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা, জলবাহিত প্রভৃতি অসুখে বাচ্চারা আক্রান্ত হতে পারে বর্ষাকালে। আসলে, অপরিচ্ছন্নতা এবং অসতর্কতা বর্ষাকালে বেশি বিপদে ফেলে বাচ্চাদের। তাই, এই সময় বড়োরা যেমন নিজেরা যত্নে থাকবেন, ঠিক তেমনই child care ও নিতে হবে। অর্থাৎ, rainy season-এ বাচ্চাদেরও আরও বেশি যত্নে রাখবেন। বিশেষ করে, বর্তমান করোনা পরিবহে এই সতর্কতা আরও জরুরি।

বৃষ্টির জল গায়ে লাগলে কিংবা জীবাণু আক্রমণ করলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফ্যারেনহাইট হয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধেবেলা টেম্পারেচার বাড়ে এবং এরকম চলতে থাকে প্রায় পাঁচ থেকে সাতদিন। সঙ্গে বমি, তলপেটে ব্যথা, লুজ মোশন প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্ত উপসর্গ যদি একইসঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের  পরামর্শমতো চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সেইসঙ্গে পুরো বর্ষাকালে হয় জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে অথবা কার্বোনেটেড ওয়াটার কিনে খেতে হবে।

শাকসবজি গরমজলে নুন মিশিয়ে ধুয়ে তারপর রান্না করতে হবে। ফল কেটে দীর্ঘ সময় রেখে খাওয়া যাবে না। প্রতিবার খাওয়ার আগে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে অথবা ব্যবহার করতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। রাস্তার দোকান থেকে খাবার কিনে খাওয়া বন্ধ করতে হবে বর্ষাকালে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে। সারাদিনে বাচ্চারা যেন চার থেকে ছয় গেলাস জল পান করে।

বর্ষাকালে জামাকাপড় রোদে ঠিকমতো না শুকোলে আয়রন করে পরাতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে, বাড়িতে এসে সঙ্গে সঙ্গে হালকা গরম জলে স্নান করে নিতে হবে। রাতে মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে এবং বিছানায় বাসি চাদর রাখা যাবে না। নালা নর্দমায় ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে রাখবেন এবং কোথাও খোলা জায়গায় জল জমিয়ে রাখবেন না। সাধারণ জ্বরে প্যারাসিটামল ওষুধ খেলেও যদি জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যথা, হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট কিংবা লুজ মোশন ইত্যাদি উপসর্গ থাকে বাচ্চাদের, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো করোনা টেস্ট করিয়ে চিকিৎসা করান।

সতর্কতা এবং পরামর্শ

বর্ষাকালে বিভিন্ন অসুখ থেকে বাচ্চদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কী কী করা উচিত, সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বর্ষাকাল মানেই শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা এবং জলবাহিত অসুখ দ্রুত ছড়ায়। যদি আগে থেকে প্রতিরোধ গড়ে না তোলা যায়, অসুখ অনেক দূর গড়াতে পারে, এমনকী প্রাণহানিও ঘটতে পারে। ডায়ারিয়া, ছত্রাক সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ঠান্ডা লাগা, কনজাংটিভাইটিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, লেপাটোসপাইরোসিস ইত্যাদি রোগ এই মরশুমে অসতর্কতা এবং অপরিচ্ছন্নতার জন্য ছড়ায়। তার উপর এখন আবার করোনার সংক্রমণ তো রয়েছেই।

তবে করোনার বিষয়টি বাদ দিলে, বর্ষাকালে শিশুদের ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ভাইরাল এবং পেটের সংক্রমণ বেশি হয়। এই সময় কোনও শিশু যদি দূষিত খাবার বা জল পান করে, তাহলে অস্বস্তি, বমিভাব, জ্বর এবং অস্বাভাবিক রকমের ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। কেউ যদি এইরকম শারীরিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসা ও শুশ্রুষার প্রয়োজন।

বর্ষা জাঁকিয়ে আসার আগে, আবহাওয়ায় তাপমাত্রার তারতম্য ও বাতাসে জলকণার আধিক্যের ফলে ভাইরাল, ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাইক্রোঅর্গানিজম অর্থাৎ ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক শহরের পানীয় জলে মিশে যেতে পারে অতিবৃষ্টি কিংবা জলের পাইপলাইন ফেটে গিয়ে এর ফলে ইনফেকশন ছড়াতে পারে আর ডায়ারিয়া, গ্যাস্ট্রোএন্টাইটিস, জন্ডিস, জ্বর ও টাইফয়েড-এর প্রকোপ বাড়ে।

বর্ষা মানেই মশার বংশ বিস্তারের সময়। অনেক জায়গাতেই জল জমার সমস্যা রয়েছে। আর জমা জলে মশার বংশ বিস্তারে প্রভূত সহায়তা করে। ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগেরও এই সময় প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই প্রয়োজন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের এবং সতর্কতার।

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়াও এই মরশুমে বাড়তে থাকে। তাই, যথাসম্ভব নজরে রাখুন শিশুদের। কারণ, তারাই সবার আগে অসুস্থ হয়। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়, তাহলে অবশ্যই প্রযুক্তি ও যথাযত চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে এমন হাসপাতালে ভর্তি করান। কারণ দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা না নিলে কিংবা উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে, রোগীর প্রাণহানিও ঘটতে পারে এ ক্ষেত্রে। আর বর্তমানে করোনার আবহে যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো খুবই মুশকিল, তাই বাচ্চারা যাতে অসুস্থ না হয়, তার জন্য বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে বাচ্চার বাবা-মাকেই।

জরুরি পরামর্শ

  • লম্বা হাতা জামা ও মোজা পরান বাচ্চাদের মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
  • মশা দূর করার জন্য রেপেলেন্টস ও মশারি ব্যবহার করুন
  • চার থেকে ছয় গেলাস জল পান করান বাচ্চাদের
  • খাবার আগে ভালো করে হাত ধোওয়ার অভ্যাস করান বাচ্চাদের
  • অস্বস্তি হলে অথবা কোনও উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন দ্রুত
  • বাইরে বেরোলে বাচ্চাকে মাস্ক পরান এবং বাড়ি ফিরলে ভালো ভাবে স্যানিটাইজ করান
  • খোলা খাবার এবং অনেকক্ষণ কেটে রাখা ফল খাওয়াবেন না
  • হালকা গরম জল মিশিয়ে স্নান করান বাচ্চাকে
  • অপরিশোধিত জল খাওয়াবেন না।

বাচ্চার মা-বাবাকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং বাচ্চাদের সমস্যামুক্ত রাখতে হবে। যেমন ত্বক। বর্ষাকালে বাচ্চাদের ত্বকের কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্রামের থেকে শহরের বাচ্চারা বেশি ভোগে স্কিন ডিজিজ-এ। কারণ, শহরে দূষণ বেশি। স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ি, ঠিকমতো না শুকনো করা জামাকাপড়, বিছানার চাদর প্রভৃতিতে ফাংগাস থাকার কারণে, বাচ্চাদের পিঠ, ঘাড়, হাত-পায়ে আঙুল এবং কুঁচকিতে হতে পারে স্কিন অ্যালার্জি। আর এর থেকে পরিত্রাণ পেতে বাচ্চার শরীরে ভালো বডি ট্যাল্ক ব্যবহার করুন এবং সাবান মাখিয়ে হালকা গরম জলে স্নান করান। সেইসঙ্গে, মাথায় যাতে খুশকি না হয়, তার জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে শ্যাম্পু করান। পরিষ্কার রাখুন বাচ্চাদের চোখও। এর জন্য মাঝেমধ্যে চোখে স্বাভাবিক ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। আর বর্ষাকালে বাচ্চাদের জ্বর হলে কিংবা পেট খারাপ হলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করান। এক্ষেত্রে নিজে ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করার ঝুঁকি না-নেওয়াই ভালো।

রোবটিক সার্জারি

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে রোবটিক সার্জারি। এই Robotic Surgery কলকাতায়ও চালু হয়েছে। এই বিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে কলকাতার এক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র।এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, গাইনিকোলজিক্যাল ক্যান্সার-এর চিকিৎসারও মাধ্যম এখন  রোবটিক সার্জারি। এই বিষয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রোবটিক সার্জারির তথ্যগত এবং ব্যবহারিক দিকটি তুলে ধরতে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ডা. জয়ন্ত গুপ্ত, ডা. অর্ণব বসাক এবং ডা. ভাস্কর পাল ছাড়াও, Robotic Surgery সংক্রান্ত সমস্ত কৌতূহল মেটালেন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গাইনিকোলজিক অঙ্কলজি গ্রুপ-এর অধ্যাপক এবং রিসার্চ ডিরেক্টর ডা. কৃষ্ণাংশু এস তিওয়ারি।

কোন সার্জিক্যাল সিস্টেম ব্যবহৃৎ হচ্ছে রোবটিক সার্জারি-তে?

‘দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম’ ব্যবহৃৎ হচ্ছে সারা পৃথিবীতে।

সার্জারিতে বিশ্বব্যাপী কত সংখ্যক রোবট ব্যবহার হচ্ছে বর্তমানে?

সারা পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ১৫০০ হাসপাতালে প্রায় ১৯০০ সংখ্যক ‘দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম’-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

সার্জারিতে ব্যবহৃৎ এই রোবট-টির বর্তমান ক্রয়মূল্য কত?

টু মিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মূল্যে প্রায় দশ কোটি টাকা।

সার্জিক্যাল এই রোবট-টির গঠনগত বৈশিষ্ট্য কি?

এটি চার বাহুবিশিষ্ট। অর্থাৎ, দুজন সার্জেন-এর কাজ একসঙ্গে করতে পারে একাই। এর আছে একটি অপারেটিং মনিটর এবং ভিউ স্ক্রিন।

এই রোবটিক সার্জারির বিশেষত্ব কি? অর্থাৎ, ট্র্যাডিশনাল অথবা ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারি না করে কেন রোগীরা রোবটিক সার্জারি করাবেন?

দেখুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলায়। মানুষ সবসময় আরও ভালো কিছু, আরও সুবিধেজনক কিছু চান। যেমন, সিংহভাগ মানুষ এখন আর সাদা-কালো টেলিভিশন দেখেন না, রঙিন টিভি দেখেন। আর এই রঙিন টিভির ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট টিভি, এলসিডি এবং সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সন এলইডি। অর্থাৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত এবং ভালো গুণমানের জিনিসই সবার প্রথম পছন্দ। রোবটিক সার্জারিও ঠিক তাই। এই সার্জারির অনেকগুলি বিশেষত্ব কিংবা বলা যায় অনেকগুলি পজিটিভ দিক আছে। প্রথমত, শুধুমাত্র কম্পিউটার ‘কি বোর্ড’-এর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক পুরো সার্জারি করে নিতে পারেন খুব সহজে এবং সুষ্ঠুভাবে। দ্বিতীয়ত, ওপেন এবং ল্যাপরোস্কোপিক এই দু’রকম সার্জারিতেই রোবটিক সার্জারি খুব এফেকটিভ। তৃতীয়ত, যে-কোনও জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও এই সার্জিক্যাল রোবট খুবই কার্যকরী। তাছাড়া, রোবটিক সার্জারি পেনলেস, প্রায় ব্লাডলেস, সেফ, অ্যাকুরেট এবং এই শল্যচিকিৎসার পর খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন রোগী।

এখনও পর্যন্ত কী কী ধরনের সার্জারি করেছেন এই রোবট-এর মাধ্যমে?

গাইনিকোলজি, কার্ডিওথোরোসিস, ইউরোলজি এবং জেনারেল সার্জারির ক্ষেত্রেও আমরা রোবট ব্যবহার করেছি এবং সফল হয়েছি। তবে বর্তমানে আমরা গাইনি-অঙ্কলজি-র ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

গাইনি-অঙ্কলজির ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কোনও বিশেষ কারণ আছে কি?

‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস’ উপলক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। অবশ্য এটা সাধারণ কারণ। কিন্তু গাইনি-অঙ্কলজির ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিশেষ কারণ হল, অস্ত্রোপচারের পর কোনওভাবে সংক্রমণ ছড়ায় না এই সার্জারি-তে। অর্থাৎ, এই ধরনের সার্জারিতে পাওয়া যায় বেটার ক্লিনিক্যাল রেজাল্ট।

আজ পর্যন্ত মোট কতগুলি অস্ত্রোপচার করেছেন রোবট-এর মাধ্যমে?

সব বিভাগ মিলে মোট চল্লিশটি অস্ত্রোপচার করেছি রোবট-এর মাধ্যমে।

রোবটিক সার্জারি-তে কত সময় লাগে?

খুব জটিল অস্ত্রোপচার না হলে, চল্লিশ মিনিটের মধ্যে সার্জারি কমপ্লিট করা যায়। তবে রোবটিক সার্জারিতে, অস্ত্রোপচার শুরু করার আগে প্রস্তুতি পর্বে প্রায় তিরিশ মিনিট ব্যয় হয়।

গাইনি-অঙ্কলজিক্যাল রোবটিক সার্জারির ক্ষেত্রে কত টাকা খরচ পড়বে এবং সাধারণ সার্জারির তুলনায় সেই খরচ কতটা বেশি?

গাইনি-অঙ্কলজিক্যাল রোবটিক সার্জারির জন্য বর্তমানে খরচ পড়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। যা সাধারণ সার্জারি-র তুলনায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা বেশি।

রোবটিক সার্জারির খরচ কি কমবে ভবিষ্যতে?

খরচ কমার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। রোবটের সাহায্যে অস্ত্রোপচার বাড়লে, খুব স্বাভাবিকভাবে খরচ কমবে। কারণ, সার্জিক্যাল রোবট কেনার খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তখন বেশিসংখ্যক রোগীর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে।

রোবটিক সার্জারি-তে কতটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন রোগীরা?

রোবটিক সার্জারির পজিটিভ দিকগুলোর প্রচার চলছে বর্তমানে। তবে এরমধ্যে রোগীদের অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ফোন করছেন এবং সবকিছু জেনে রোবটিক সার্জারিতে আগ্রহী হয়েছেন। আসলে, এই সার্জারিতে খরচ বেশি হলেও, যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন রোগী, তাই তাঁকে হাসপাতালে বেশি দিন থাকতে হচ্ছে না। অতএব, মোটের উপর বিচার করলে সাধারণ সার্জারি এবং রোবটিক সার্জারির মধ্যে খরচের তেমন কোনও তারতম্য নেই।

সাত সমস্যা এবং সতর্কতা

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, প্রায় সব বাড়িতেই মহিলারা যতটা তার পরিবারের মানুষদের রোগ-অসুখের ব্যাপারে সচেতন, নিজের ব্যাপারে ঠিক ততটাই উদাসীন। কিন্তু সব মহিলারই, এ যুগে আত্মসচেতন হওয়া বিশেষভাবে জরুরি। যে-কোনও রোগকেই যদি একদম প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে গুরুতর ফল ভোগ করতে হয় না। কিছু কিছু কমন সমস্যার কথা এখানে দেওয়া হল, যার ঝামেলা কম-বেশি সব মহিলাকেই কখনও না কখনও ভোগ করতে হয়েছে।

ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন

মেডিক্যাল সায়েন্স-এর এক সার্ভে অনুযায়ী, গড়ে ৯৫ শতাংশ মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন হন। এই ধরনের সমস্যা কমন হলেও, যতটা তাড়াতাড়ি এর নিরাময় সম্ভব তা করুন।

লক্ষণঃ  ভ্যাজাইনা অর্থাৎ যৌনাঙ্গে প্রদাহ, চুলকানি, সাদা ডিসচার্জ, ত্বক ফুলে ওঠা, বারবার প্রস্রাব পাওয়া এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথার অনুভূতি হলে বুঝতে হবে আপনি ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন-এর শিকার হয়েছেন।

কারণঃ  বস্তুত মহিলাদের যৌনাঙ্গে কিছু ইস্ট ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিক ভাবেই থাকে কিন্তু হঠাৎই তা সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সংক্রমণ ছড়ায়। এর কারণ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার, অনিদ্রা, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন, নায়লন বা লাইক্রা ইনার ওয়্যার ব্যবহার, গর্ভধারণকালে ডায়াবেটিজ হওয়া বা বেশি সময় ধরে গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট গ্রহণ করা কিংবা অতিমাত্রায় টক বস্তু খাওয়া।

এড়াবেন কী করেঃ  ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। সুইমিং পুল থেকে উঠে বেশিক্ষণ ভেজা পোশাকে না থেকে, সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে নিন। কটনের ইনারওয়্যার পরুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টি-বায়োটিক গ্রহণ করবেন না। ডায়াবেটিজ থাকলে ব্লাড সুগারের স্তর-কে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। এরজন্য কোনও বিশেষজ্ঞের দেওয়া নির্দেশগুলি মেনে চলুন।

ইউরিন লিকেজ

এই সমস্যা প্রতিনিয়ত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কারণ জোরে হাসতে গেলে, কাশতে গেলে বা অতর্কিত হাঁচি এসে গেলে প্রস্রাব হয়ে যায়। ডেলিভারির পরে এই সমস্যায় পড়তে হয় বহু মহিলাকেই, কারণ ইউরিনারি ব্লাডার-কে সাপোর্ট দেওয়া পেলভিক ফ্লোরগুলি ঢিলে হয়ে যায় এই সময়টাতে।

এড়াবেন কী করেঃ  একজন ভালো যোগ ইন্সট্রাক্টরের সাহায্য নিয়ে এই সমস্যা রোধ করার জন্য তলপেটের ব্যয়াম করলে উপকার পাবেন। এরফলে যোনির মাশলগুলির শিথিল ভাব কমবে। বেশি ঝাল মশলা-যুক্ত খাবার খাবেন না। এড়িয়ে চলুন চা, কফি, চকোলেট, ডেয়ারি প্রোডাক্টস্ ও অ্যাসিডিক ফ্রুট্স।

ইউটিআই

নারী শরীরের আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গই খানিকটা এই সমস্যার জন্য দায়ী। মলদ্বার ও ভ্যাজাইনার মাধ্যমে এক বিশেষ ধরনের ব্যকটিরিয়া , ইউরেথ্রা দিয়ে সোজা ইউরিনারি ব্লাডার ও ইউরিনারি ট্র্যাক-এ পৌঁছে যায়, যার ফলে মহিলাদের ইউটিআই সমস্যার শিকার হতে হয়। সহবাসের পরে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন না করাও এই ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্লাডারের মাসলগুলিতে বিপুল পরিমাণ চাপ পড়ে ও মাসলগুলি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। ফলত এই ধরনের ইনফেকশনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

লক্ষণঃ  ইউরিন ডিসচার্জ-এর সময় যন্ত্রণা ও প্রদাহ অনুভব করা, বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা, থেমে থেমে ইউরিন ডিসচার্জ করা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তের ফোঁটা, তলপেটে যন্ত্রণার অনুভব হওয়া মানেই বুঝবেন আপনি এই ধরনের ইনফেকশনের শিকার হয়েছেন।

এড়াবেন কী করেঃ  ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতি সজাগ থাকুন। প্রচুর জল পান করুন। মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। ভিটামিন সি যুক্ত খাবারে সেই গুণ থাকে, যা এই ব্যকটিরিয়া নির্মূল করতে সহায়ক। তাই লেবু, কমলালেবু, মুসম্বি জাতীয় ফল খান।

পেটে ভার অনুভব করা

ঋতুচক্রের পরেও যদি তলপেটে ভার অনুভব করেন, তাহলে বিষয়টিকে মোটেই ফেলে রাখবেন না। কারণ এটি গভীর কোনও অসুখ, যেমন ডিম্বাশয়ে ক্যানসার অর্থাৎ কোলোরেক্টল ক্যানসারের পূর্বাভাস হতে পারে। চল্লিশোর্ধ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অসুখের সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল। কিন্তু এর কমবয়সি মহিলারাও অনেক সময় এই সমস্যাকে প্রথমে ঋতুচক্র বা গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা বলে হেলাফেলা করেন এবং পরে এই ক্যানসারের শিকার হন। পেটে ভার অনুভব করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য, খাবারে অনীহা, ক্লান্তি ভাব, ওজন হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা টের পান, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এগুলি সবই একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তা ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।

মেনোপজ

যে-কোনও নারীর জীবনে এটি অবশ্যম্ভাবী হলেও এর সূত্রপাতে কিছু কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ জ্বর এসে যাওয়া, ঘাম হওয়া, স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অনিদ্রা, যৌনেচ্ছা হ্রাস পাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া, এমনকী হৃদরোগের সূত্রপাতও হতে পারে এর ফলস্বরূপ। এই সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রেও একটা ইমব্যালেন্স সৃষ্টি হয়। যার ফলে ইউটিআই এবং কাশতে গেলে ইউরিন ডিসচার্জ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এড়াবেন কী করেঃ  খাদ্য-তালিকায় সবুজ শাক-সবজি, স্যালাড, অঙ্কুরিত দানা শস্য, ডাল, টাটকা ফল, জুস প্রভৃতি রাখুন। মেনোপজের সময়ে অন্তত ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম শরীরে প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন দুধ-দই প্রভৃতি ডায়েটে রাখুন।  সুতির পোশাক পরুন কারণ এ সময় ঘাম হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ব্রিস্ক ওয়াকিং, জগিং, সুইমিং করতেই পারেন, তবে একবার চিকিৎসকের মত নেওয়া জরুরি।

অ্যানিমিয়া

কাটা-ছেঁড়া, সার্জারি বা পিরিয়ড্স-এ রক্তপাত হওয়ার পর, খাদ্যগ্রহণে ভারসাম্য না থাকার ফলে, গর্ভধারণকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড না সেবন করলে, অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মাথার যন্ত্রণা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, এ অসুখের কমন সিম্পটম। এছাড়া হৃদস্পন্দনে অসঙ্গতি, জ্ঞান হারানো, খাবারে অরুচি, চোখের নীচে কালি, নখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এগুলিও প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

এড়াবেন কী করেঃ  ব্যালেন্সড ও পুষ্টিকর খাবার, আয়রন যুক্ত শাক-সবজি, ফল, রেড মিট, বিট, আমলকী, গাজর, আপেল, বেদানা, খেজুর, বাদাম, গুড় ও শুকনো মেওয়া খান। ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পানিফলের আটা, দুধ, মাশরুম, ব্রোকোলি ও মধু খান। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের টেবলেটও খেতে পারেন। বছরে একবার হিমোগ্লোবিন চেক করান।

সার্ভিক্স ক্যানসার

এই ক্যানসার সাধারণত গর্ভাশয়ে হয়। কম বয়সে বিবাহ, একাধিকবার গর্ভধারণ বা গর্ভপাত হওয়া, ধূমপান, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন করা বা সহবাসের সময় সংক্রামিত হওয়া এর কারণ।

লক্ষণঃ  পিরিয়ড-এর সময়কাল ছাড়াই মাঝেমধ্যে রক্তস্রাব হওয়া, সাদা স্রাব, তলপেটে ব্যথা, সহবাসের সময় রক্তপাত— এই ধরনের লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন, কারণ তা সার্ভিক্স ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায় হতে পারে।

এড়াতে কী করবেনঃ  ভিটামিন সি ও ই আপনার বিশেষ ভাবে প্রয়োজন, কারণ এগুলি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা এই রোগের প্রতিরোধক। যে-মহিলারা প্রাত্যহিক ডায়েটে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই বরাদ্দ রাখেন, তাদের ওভারিয়ান ক্যানসারের সম্ভাবনা কম।

জরুরি টেস্ট

বছরে একবার অন্তত চেক-আপ। ব্লাড টিএসএইচ (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) টেস্ট করা অত্যন্ত আবশ্যক কারণ এই গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।  পিরিয়ডের সময়কাল ছাড়াও ব্লাড স্পটিং, অতিমাত্রায় বা স্বল্প পরিমাণে ঋতুস্রাব, ডিপ্রেশন, ওজন বেড়ে যাওয়া, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, ক্লান্তি— এসবই হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর ফল। গর্ভধারণকালেও এই টেস্ট করানো ভীষণ জরুরি। কারণ, অ্যাসমিটোম্যাটিক থাইরয়েড-এর অপর্যাপ্ত ক্ষরণে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক পরিণত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

জরায়ুর ক্যানসার

জরায়ু হল গর্ভাশয়, অর্থাৎ যেখানে ডিম্বানু তৈরি হয় বা গর্ভসঞ্চায় হয়। স্ত্রী যোনিপথ যেখানে শেষ হয়, সেখানেই জরায়ুর অবস্থান। আর এই জরায়ুতে যখন মারণ রোগের জীবাণু বাসা বাঁধে, তখন সেই অবস্থাকে বলা হয় জরায়ু ক্যানসার-এ আক্রান্ত। চিকিৎসা পরিভাষায় অবশ্য বলা হয়— এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার।

ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীতে মহিলাদের জরায়ুর ক্যানসার কি বাড়ছে বলে মনে হয় আপনার?

জরায়ুর ক্যানসার বাড়ছে তো অবশ্যই। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ওবেসিটি এবং আধুনিক জীবনশৈলীই জরায়ুর ক্যানসার-এর জন্য মূলত দায়ী। সমীক্ষার রিপোর্ট (আইসিএমআর) অনুসারে, প্রতি এক লক্ষ ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ৪.৩ শতাংশ জরায়ুর ক্যানসার-এ আক্রান্ত হন প্রতি বছরে। ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিজ-এর মধ্যে ইউনাইটেড স্টেট্স-এই, বছরে প্রায় ৪১,২০০ কেস নথিভুক্ত হয়।

জরায়ুর ক্যানসার-এর লক্ষণ কি?

এক নয়, একাধিক লক্ষণ থেকে জরায়ু ক্যানসার আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়। বিশেষকরে অনিয়মিত ঋতুচক্র, ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, পেলভিক পেন, অ্যানিমিয়া এবং যৌনমিলনের পরে যোনিতে যন্ত্রণা প্রভৃতি। এইসব লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করান।

কী কী কারণে জরায়ু ক্যানসার-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়?

ইস্ট্রোজেন-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া, ওবেসিটি, হাইপারটেনশন, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, বন্ধ্যাত্ব, অপরিণত বয়সে বা স্বাভাবিক সময়ের আগে ঋতুমতি হওয়া, লেট মেনোপজ, ডায়াবেটিস, ফ্যামিলি হিস্ট্রি অফ কোলোনিক ক্যানসার, বয়স যখন ৩৫ বছরের বেশি, অতিরিক্ত মদ্যপান প্রভৃতির কারণে জরায়ুর ক্যানসার আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

কোন কোন পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর ক্যানসার নির্ধারণ করা হয়?

জরায়ু ক্যানসার-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েকটি মেডিকেল এগ্জামিনেশন-এর প্রয়োজন। স্পেশালিস্ট গাইনিকোলজিস্ট-এর তত্ত্বাবধানে পেলভিক এগ্জামিনেশন জরুরি। সেইসঙ্গে, ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানিং, হিসটেরোস্কোপি, বায়োপসি প্রভৃতি পরীক্ষারও বিশেষ প্রয়োজন।

জরায়ুর ক্যানসার-এ ক’টি স্টেজ বা পর্যায় আছে এবং কোন পর্যায়ের কী পরিণতি হয়?

আলট্রাসাউন্ড, হিসটেরোস্কোপি, বায়োপসি, কম্পিউটারাইজ্ড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান, এমআরআই, ব্লাড টেস্ট প্রভৃতি করার পর, তবেই জরায়ুর ক্যানসার-এর স্টেজ নির্ধারণ করা সম্ভব। শুধুমাত্র ইউটেরাস বা জরায়ুতে ক্যানসার-এর জীবাণু পাওয়া গেলে (অল্পসংখ্যক) সেই স্টেজ-কে ফার্স্ট স্টেজ বা স্টেজ ওয়ান বলা হয়ে থাকে। যদি ইউটেরাস (জরায়ু) এবং সারভিক্স-এ (জরায়ু গ্রীবা) ক্যানসার-এর জার্ম পাওয়া যায় তাহলে তা স্টেজ টু ধরে নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে, ইউটেরাস, সারভিক্স ছাড়াও যদি রেকটাম এবং ব্লাডার-এ ক্যানসার-এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা স্টেজ থ্রি-তে চলে যায়। আর এসবের বাইরে যখন সারা শরীরে ছড়াতে থাকে ক্যানসার-এর জীবাণু, তখন তা চলে যায় স্টেজ ফোর-এ।

জরায়ুর ক্যানসার-এর চিকিৎসা পদ্ধতি কি?

জরায়ুর ক্যানসার-এর চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং হরমোন থেরাপি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি মনে হয়, জরায়ু কেটে বাদ দিলেই ক্যানসার-মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাহলে পেশেন্ট-এর অনুমতি নিয়ে বাদ দেওয়া হয় জরায়ু। অবশ্য যদি সার্জারি-তে রিস্ক থাকে কিংবা সার্জারির আগে পরে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব হয়, তাহলে তাই করা হয়। এছাড়া আছে কেমোথেরাপি। রেডিয়েশন এবং কেমো এই দুই থেরাপিতেই ক্যানসার সেল নিধন করা হয়। তবে তফাত হল, প্রথমটিতে ‘রে’ দেওয়া হয় (রেডিয়েশন) এবং দ্বিতীয়টিতে কেমিক্যাল ড্রাগ (কেমো) দেওয়া হয়। কিন্তু স্টেজ থ্রি কিংবা ফোর ছাড়া কেমোথেরাপির ঝুঁকি নেওয়া হয় না। আর যদি ক্যানসার স্টেজ ফোর-এ গিয়ে সারা শরীরে ছড়াতে শুরু করে, তাহলে হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হয়।

জরায়ু ক্যানসার-এ আক্রান্ত হলে, চিকিৎসার মাধ্যমে কোন স্টেজ-এ কতটা রোগ নিরাময় সম্ভব হয়?

জরায়ুর ক্যানসার-এর যদি সঠিক চিকিৎসা করা হয়, তাহলে স্টেজ ওয়ান-এ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, স্টেজ টু-তে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, স্টেজ থ্রি-তে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ এবং স্টেজ ফোর-এ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগ নিরাময় সম্ভব হতে পারে।

জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

  • মেনোপজের পর হরমোন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
  • ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল ব্যবহার করা ভালো।
  • শারীরিক উচ্চতা এবং বয়স অনুসারে দেহের ওজন সঠিক পরিমাণে ধরে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করা উচিত।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের (গাইনিকোলজিস্ট) পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করান।

স্পন্ডিলোসিস

কয়েকটি স্তম্ভ (পিলার) যেমন বাড়ির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক তেমনই মেরুদণ্ডও গোটা শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, মেরুদণ্ড হল শরীরের মূল স্তম্ভ। তাই অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মেরুদণ্ড ঠিক আছে, সহজে মাথা নোয়াই না।’ বহুল ব্যবহৃৎ এই উক্তি থেকেই পরিষ্কার, মেরদণ্ড ঠিক না থাকলে, মস্তিষ্ক, এমনকী পুরো শরীরটাই বিগড়ে যায়। তাই, মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখা জরুরি। কিন্তু বহু মানুষেরই মেরুদণ্ড সুস্থ নেই। আধুনিক জীবনশৈলী এবং আরও নানা কারণে মেরুদণ্ডের অসুখে ভুগছেন অনেকে।

চিকিৎসকদের ভাষায় মেরুদণ্ডের অসুখকে বলা হয় ‘স্পন্ডিলোসিস’। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন ‘স্পাইনাল অস্টিয়ো আর্থ্রাইটিস’ কিংবা শুধু ‘স্পাইনাল আর্থ্রাইটিস’।

স্পন্ডিলোসিস অসুখটি যত পুরোনো হবে, ততই বাড়বে শারীরিক সমস্যা এবং যন্ত্রণা। অবশ্য স্পন্ডিলোসিস-এর অবস্থান থেকে বোঝা যাবে, এই অসুখ শরীরের ঠিক কোন জায়গায় কুপ্রভাব ফেলবে।

সাধারণত ঘাড়ে, বুকে এবং পিঠের নীচের অংশে কুপ্রভাব ফেলে স্পন্ডিলোসিস। চিকিৎসকরা অবশ্য এই তিনটি ভাগকে বলে থাকেন স্যারভিকল (নেক) স্পাইন, থ্যরাসিস (মিড-ব্যাক) স্পাইন এবং লাম্বার (লো-ব্যাক) স্পাইন।

কোন ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলে স্পন্ডিলোসিস?

স্যারভিকল (নেক) স্পাইন

  • মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হবে।
  • ক্রমশ ব্যথা ছড়াবে কাঁধ, হাত এবং হাতের আঙুলে।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ঘাড় এবং কাঁধ স্টিফ (শক্ত) হয়ে থাকবে। বেশি নাড়াচাড়া করতে গেলেই ব্যথা হবে।
  • ঘাড়, কাঁধ, হাত এবং হাতের আঙুল খুব অসাড় এবং দুর্বল হয়ে পড়বে।
  • মাথার পিছনের অংশে যন্ত্রণা অনুভূত হবে।
  • চলাফেরা করার সময় মাথা ঘুরবে অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হবে।

থ্যারাসিস (মিড-ব্যাক) স্পাইন

  • পিঠের ওপরের এবং মাঝের অংশে যন্ত্রণা অনুভূত হবে।
  • বসতে এবং দাঁড়াতে গেলে যন্ত্রণা বাড়বে।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, পিঠের মাঝের অংশ অসাড় মনে হবে।

লাম্বার (লো-ব্যাক) স্পাইন

  • ব্যথা বাড়বে-কমবে
  • সকালে বিছানা ছাড়ার পর, পা এবং কোমর অসাড় মনে হবে।
  • পায়ের মাঝখানে ব্যথা অনুভূত হবে
  • হাঁটার সময় শরীরের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হবে

কী কী কারণে স্পন্ডিলোসিস হয়?

আধুনিক জীবনশৈলীতে শরীরের প্রতি অযত্ন-ই স্পন্ডিলোসিস-এ মূল কারণ। অর্থাৎ শরীরকে বিশ্রামে না রেখে, ননস্টপ কোনও কাজ করে যাওয়ার ফলেই স্পন্ডিলোসিস-এর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—  দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার-এর সামনে বসে কাজ করা, দিনে-রাতে অনেকটা সময় নীচে বসে লেখাপড়া করা, সঠিকভাবে না শুলে কিংবা বসলে, একনাগাড়ে অনেকটা সময় হাঁটলে, গাড়ি চালালে কিংবা চাষের কাজ (নুয়ে) করলে হতে পারে স্পন্ডিলোসিস। তবে এসবের ফলে স্পন্ডিলোসিস-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তখনই প্রবল হয়, যখন শরীরে ক্যালসিয়াম-এর অভাবে হাড় (অস্থি) দুর্বল হয়ে থাকে।

স্পন্ডিলোসিস নির্ধারণের জন্য কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন হয়?

কোথায়, কী ধরনের ব্যথা-যন্ত্রণা হচ্ছে তা প্রথমে রুগির থেকে জেনে নেন চিকিৎসক (স্পাইন স্পেশালিস্ট)। তারপর চিকিৎসকের যদি মনে হয়, স্পন্ডিলোসিস-এর সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে রুগিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে রয়েছে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান্, এমআরআই এবং এনসিভি (নার্ভ টেস্ট) প্রভৃতি।

কোন বয়সে বেশি স্পন্ডিলোসিস-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

এর কোনও স্পেসিফিক এজ গ্রুপ নেই, যে-কোনও বয়সের মানুষই স্পন্ডিলোসিস-এ আক্রান্ত হতে পারেন।

স্পন্ডিলোসিস-এর চিকিৎসা পদ্ধতিটাই-বা কী?

স্পন্ডিলোসিস-এর চিকিৎসার কয়েকটি ভাগ আছে। রোগ-নিরাময়ের জন্য প্রত্যেকটি পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনঃ

বেড রেস্টঃ  এক থেকে তিন দিন কমপ্লিট বেড রেস্ট-এ থাকলে স্পন্ডিলোসিস অনেকটা নিরাময় হয়।

ব্রেস ইউজঃ  যদি স্পাইনাল মাস্ল্স দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা বেশি যন্ত্রণা অনুভূত হয়, তাহলে ব্রেস (বর্ম) ব্যবহার করা হয়। অন্তত এক সপ্তাহ ব্রেস-এর সাহায্য নিলে উপকার পাওয়া যায়।

স্যারভিকল ট্র্যাকশনঃ  খুব কম রুগির ক্ষেত্রে হলেও, অনেকসময় স্যারভিকল ট্র্যাকশন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, এই থেরাপিতে খুব তাড়াতাড়ি রোগ নিরাময় সম্ভব হয়।

জীবনশৈলীর পরিবর্তনঃ  রোগ থেকে মুক্তিলাভের জন্য ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। খেতে হবে পুষ্টিকর ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার (দুধ, অ্যালমন্ডস, মুসম্বি লেবু, সয়াবিন প্রভৃতি)। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। এসব ‘স্পাইন ফাংশন’ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

ওষুধ সেবনঃ  মাংসপেশী অসাড় হওয়া এবং ব্যথা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ‘মাএ রিলাক্সসেন্ট’ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, মাসল পেইন যখন অসহ্যকর হয়ে ওঠে, তখন দেওয়া হয় ‘এনএসএআইডি’ বা নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ্স।

ফিজিক্যাল থেরাপিঃ  হিট অর আইস প্যাক, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন এবং আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপির মাধ্যমেও স্পন্ডিলোসিস-মুক্ত করার চেষ্টা করা হয়।

সার্জাারিঃ  স্পন্ডিলোসিস দূরীকরণের জন্য সার্জারির প্রয়োজন হয় না সহজে। কিন্তু যদি ওষুধ প্রয়োগ এবং থেরাপিতে কাজ না হয়, কিংবা যদি জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবেই সার্জারি করা হয়।

পরামর্শ

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা করান
  • ফিজিয়ো থেরাপিস্ট-এর নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত ফিজিয়ো থেরাপি করুন। সম্ভব হলে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করুন
  • সোজা হয়ে দাঁড়াবেন এবং বসবেন (সিট অ্যান্ড স্ট্যান্ড প্রপারলি)
  • বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করুন
  • পুষ্টিকর খাবার খাবেন। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য-তালিকায় রাখুন ফল এবং শাকসবজি
  • ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করুন
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না, মাঝেমধ্যে বিশ্রামে থাকুন।

হিপ রিপ্লেসমেন্ট এখন সহজ ও নিরাপদ

বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আমরা আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় কবে ফিরবো কিংবা আদৌ ফিরতে পারবো কিনা জানি না। আর এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হলে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আমাদের সুস্থ থাকতেই হবে। তাই, কোনও ব্যাথা-যন্ত্রণা পুষে রাখলে চলবে না। বিশেষকরে হিপ-জয়েন্টের মতো ব্যাথা দূরীকরনের ব্যাবস্থা করতে হবে দ্রুত। এই ধরনের সমস্যায় কীভাবে আধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নেবেন,সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন বেলভিউ ক্লিনিকের কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক ও রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডা. সন্তোষ কুমার।

আমাদের দেশে, বিশেষকরে পূর্বভারতে প্রায়ই দেখা যায়,অনেকের ক্ষেত্রে জন্মগত অর্থাৎ জেনেটিক আর্থ্রাইটিস যেমন— অ্যাঙ্কিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, আভাস্কুলার নেক্রোসিস অথবা টিউবারকুলার আর্থ্রাইটিস-এর শিকার অনেকেই। ডা. কুমারের মতে, এক্ষেত্রে হিপ-জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-ই একমাত্র চিকিৎসা। প্রবীনদের মধ্যে দেখা যায় ভারসাম্যের অভাব, পেশীর সচলতার অভাব অথবা  আর্থ্রাইটিস-এর ফলে চলাফেরায় অসুবিধায় পড়েন। এর উপর যদি পড়ে গিয়ে হিপ জয়েন্ট-এ বা তার আশপাশের হাড়ে চিড় ধরে বা ভেঙে যায়,তাহলে আরও বিপদ।

Health article
X-ray scan image of hip joints with replacement

হিপ জয়েন্ট-এর ভিতরের ফ্র্যাকচারকে বলে ‘ইন্ট্রা ক্যাপ্সুলার হিপ জয়েন্ট ফ্র্যাকচার’। এই ধরনের ফ্র্যাকচার-এ হাড় অনেক সময় ভেঙে ঘুরে যায় এবং দুটি ভাঙা অংশের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ফলে,হাড় সহজে জুড়তে চায় না বা জোড়ে না। এ ক্ষেত্রে হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-ই  চিকিৎসার একমাত্র উপায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত মেনোপজের পরে হরমোনের ভারসাম্যের অভাব ঘটে, ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় নরম বা ফাঁপা হতে থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় অস্টিওপোরোসিস। এরফলে পড়ে গিয়ে খুব অল্প আঘাতেই হিপ জয়েন্ট-এর বাইরে বা ভিতরে চিড় ধরতে পারে অথবা ভেঙে যেতে পারে। হিপ জয়েন্টের বাইরের ফ্র্যাকচারকে বলা হয় ‘এক্সট্রাক্যাপ্সুলার নেক অফ ফেমার ফ্র্যাকচার’ বা ‘ট্রোকান্টার ফ্র্যাকচার’। এই ফ্র্যাকচার ‘আনডিসপ্লেসড’ থাকলে অনেকক্ষেত্রেই ডাইনামিক প্লেট অ্যান্ড মাল্টিপল স্ক্রু ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়।

ডা. কুমার এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘এখন হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করা হয় উন্নত প্রযুক্তি অর্থাৎ কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেকনোলজি দ্বারা। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অর্থোপাইলট সিস্টেম। এর ফলে রুগি কম ব্যাথা-যন্ত্রণা পান এবং চিকিৎসায় সাফল্যের হার অনেক বেশী, প্রায় একশ শতাংশ। এটি মিনিমাল ইনভেসিভ পদ্ধতিতে করা হয় বলে রক্তপাতের সম্ভাবনা কমে যায় এবং রুগি খুব কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয়, অস্ত্রোপচারের পর রুগি হাঁটাচলা, দৌড়ানো,সাঁতারকাটা প্রভৃতি করতে পারেন অনায়াসে। সেইসঙ্গে, এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে বোথ সাইড হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করা যায়। এর ফলে চিকিৎসার খরচও অনেকটা কম হয়।’

স্ট্রেস-এর কারণে ডিপ্রেশন

জীবনে সমস্যা থাকবেই। সারাজীবন সমস্যামুক্ত থেকে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিনযাপন করতে পেরেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম কিংবা নেই বললেই চলে। আসলে, কিছু-না কিছু সমস্যা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। অবশ্য সমস্যার শিকড় যখন গভীরে চলে যায়, তখনই তৈরি হয় মানসিক (পড়ুন মস্তিষ্কে) চাপ। এই চাপ যিনি কাটাতে পারেন, তিনি সুখী মানুষ। কিন্তু যিনি মানসিক চাপমুক্ত হতে পারেন না, তিনি ভোগেন অবসাদে। আর এই মানসিক অবসাদ এক ধরনের গুরুতর অসুখ। যে- অসুখের কুফল ভোগ করতে হয় নিজেকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও। Depression -এর বিষয়ে সম্প্রতি আরও বিস্তারিত জানিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম মণ্ডল।

Depression বা মানসিক অবসাদের সংজ্ঞা কী?

কোনও সমস্যা যখন মনে (মস্তিষ্কে) প্রভাব ফেলে, তখন মনখারাপ হয় অর্থাৎ মনে চাপ পড়ে। আর একই সমস্যা কিংবা একাধিক সমস্যার কারণে যখন মনের উপর চাপ দীর্ঘস্থায়ী (অন্তত দু’সপ্তাহ) হয়, তখন তৈরি হয় মানসিক অবসাদ।

আপনার মতে, শতকরা কত শতাংশ মানুষ মানসিক অবসাদে ভোগেন?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে অন্তত দু’জন মানসিক অবসাদের শিকার হন। মহিলাদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন এবং পুরুষদের মধ্যে প্রতি দশজনের একজনকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সকলকেই বলতে শুনি, ‘I am depressed’। আর অবসাদের কারণ হিসাবে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘আই অ্যাম ফেড-আপ বিকজ আই হ্যাভ হ্যাড আ ফাইট, অর ফেল্ড অ্যান এগ্জাম, অর লস্ট মাই জব’ ইত্যাদি। তাছাড়া, একটু খেয়াল রাখলে কিংবা খোঁজখবর নিলে আপনিও বুঝতে পারবেন, আপাতদৃষ্টিতে হাসিখুশি থাকা মানুষটিও জীবনে অন্তত দুই বা তার বেশি সময়ে Depression -এর শিকার হয়েছেন।

কেউ মানসিক অবসাদের শিকার হলে তা বোঝা যাবে কীভাবে?

বিচক্ষণ লোকেরা মানসিক অবসাদের শিকার হলে তা বুঝতে পারেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যাঁরা অবসাদে ভুগলেও বুঝতে পারেন না এবং তাঁরা সাধারণ শারীরিক অসুস্থতা ভেবে ভুল করেন। তাই তাঁদের মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলি জেনে রাখা প্রয়োজন।

  • সারাদিন মন খারাপ থাকে। এই সমস্যা চলে টানা কয়েকদিন। সবকিছুই ‘ঝাপসা’ মনে হয়।
  • কোনও কাজেই আগ্রহ থাকে না। আনন্দের পরিবেশও বিষাদপূর্ণ মনে হয়।
  • অস্বাভাবিক দুঃখবোধ, এমনকী কান্নাও পায়।
  • নিজেকে অকেজো, অপদার্থ এবং অপরাধী মনে হয়।
  • মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে এবং সহজ কাজকেও কঠিন মনে হয়।
  • ঘুমের সমস্যা হয়। কখনও বেশি ঘুম পায়, আবার কখনও ঘুম-ই আসে না।
  • শরীর শক্তিহীন মনে হয় এবং ক্লান্ত লাগে সারাক্ষণ।
  • অনুভূতি কমে যায় এবং যৌন ইচ্ছা জাগে না।
  • খিদে এবং ওজন কমে যায়।
  • মনে রাগ, ক্ষোভ এবং অস্থিরতা তৈরি হয়।
  • সারাদিনের তুলনায় সকালে শরীর-মন কিছুটা সুস্থ মনে হয়।
  • মাথা ভার বা ব্যথা হওয়া, চঞ্চলতা এবং বুকে ব্যথাও হতে পারে।
  • সারাক্ষণ মনে কর্মহীন হয়ে পড়ার ভয়, এমনকী মৃত্যু ভয়ও হয়। অনেকে আত্মহত্যার কথাও ভাবেন এবং জীবন ‘বৃথা’ মনে হতে থাকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্যক্তিবিশেষে সমস্যার ধরন বদলে যায়। তবে উল্লিখিত লক্ষ্যণগুলির মধ্যে বেশিরভাগই যদি মিলে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে, মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন।

মানসিক অবসাদের কোনও বিশেষ কারণ আছে কি?

বিশেষ কারণের কথা উল্লেখ করা কঠিন। আসলে মানসিক অবসাদের প্রকৃত কারণ লুকিয়ে থাকে অবসাদগ্রস্ত মানুষটির মানসিক গঠন, জীবনশৈলী প্রভৃতির মধ্যে। যদি কোনও নির্দিষ্ট ঘটনা কিংবা কারণে মানসিক অবসাদ আসে, তাহলে তা খুব তাড়াতাড়ি জটিল রূপ নেয়। আর এরমধ্যে রয়েছে কর্মহীনতা, অর্থাভাব, শারীরিক অসুস্থতা, সম্পর্কের সমস্যা প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি ভোগেন মানসিক অবসাদে। বিশেষকরে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে (পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন) এবং মেনোপজের পরে। তবে মস্তিষ্কের কেমিক্যাল ইমব্যালেন্সও মানসিক অবসাদের জন্য বিশেষভাবে দায়ী থাকে।

মানসিক অবসাদের বিষয়ে সাধারণ মানুষ কতটা সচেতন বলে মনে হয় আপনার?

দেখুন, প্রায় প্রত্যেককেই জীবনে নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে হয়। সেই সমস্যার দিনগুলিতে কেউ সহজেই সমাধান সূত্র বের করে মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করেন, কেউ তা পারেন না। আব্রাহাম লিংকন কিংবা উইনস্টন চার্চিল-এর মতো বিশ্বখ্যাত নেতারাও ডিপ্রেশন-এর শিকার হয়েছেন, আবার তা কাটিয়ে উঠতেও পেরেছেন। আসলে যাঁরা সচেতন থাকেন, তাঁরা অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেন সহজেই। কিন্তু এখনও অনেক মানুষই মানসিক অবসাদের বিষয়ে সচেতন নন। তাই, বেশি মাথা যন্ত্রণা করলেই বলতে শোনা যায়, ‘অ্যাম আই গোয়িং ম্যাড?’ ব্যস, ওইটুকু বলেই উদ্বেগে দিন কাটান কিন্তু অবসাদ কাটানোর উদ্যোগ থাকে না। তবে হ্যাঁ, নিজের ব্যাপারে উদাসীন থাকলেও কিংবা সচেতন না হলেও, অন্যকে ‘জ্ঞান’ দিতে ভুল করেন না অনেকেই। ‘বি স্ট্রং’, ‘কাম আউট অফ ইট’ প্রভৃতি উপদেশ বাক্য দিয়েই শুভাকাঙক্ষী হিসাবে জাহির করেন নিজেকে। কিন্তু যদি সত্যিই অবসাদ কাটাতেই হয়, তাহলে প্রথমে যে-কারণে অবসাদগ্রস্ত, সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে হবে।

মানসিক অবসাদের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতিটাই বা কী?

মানসিক অবসাদের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির অনেকগুলি ধাপ আছে। প্রথম ধাপটি হচ্ছে ডেটা কালেকশন। এই ধাপে মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে অবসাদের কারণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে সমস্যার শিকড় কতটা গভীরে তা দেখে নিয়ে কাউন্সেলিং অথবা সাইকোথেরাপি করতে হবে। এই পর্যায়ে ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ১৬ থেকে ২০ টি সিটিং-এর প্রয়োজন হতে পারে। তবে মানসিক অবসাদে সমস্যার শিকড় যদি গভীরে না যায়, তাহলে অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট মেডিসিন দিয়েই চিকিৎসা করা যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলে ‘ফার্স্ট-লাইন ট্রিটমেন্ট ফর ডিপ্রেশন’। সাধারণত বিষণ্ণতা, ঘুমের সমস্যা এবং মনোযোগে বিঘ্ন ঘটার হাত থেকে বাঁচাতে, এই ‘ফার্স্ট-লাইন ট্রিটমেন্ট’ করা হয়। কিন্তু এই অসুখের চিকিৎসায় অনেকসময় হসপিটালাইজেশন-এরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রুগি যদি হঠাৎ উন্মাদের মতো আচরণ করে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তখন রুগিকে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করতে হয়।

কেউ যদি মানসিক অবসাদের চিকিৎসা না করান, তাহলে তার কী ধরনের সমস্যা কিংবা ক্ষতি হতে পারে?

চিকিৎসা না করালে, রুগি, মানসিক থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ব্লাড-প্রেসার, ব্লাড-সুগার বেড়ে গিয়ে যেমন বিপদে পড়তে পারেন, ঠিক তেমনই মদ্যপান, ধূমপান প্রভৃতিতে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং নিষিদ্ধ মাদক সেবনের কুঅভ্যাসও তৈরি হতে পারে। এতে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে অফিসের সহকর্মী সকলেই চিকিৎসা না-করানো ব্যক্তির কারণে অসুবিধায় পড়বেন। চিকিৎসক হিসাবে এমনও প্রমাণ পেয়েছি যে, দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদের চিকিৎসা না-করানোর ফলে, রুগি অনকসময় আত্মহত্যাও করেছেন।

চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পরও কি পুনরায় মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

যদি সঠিক চিকিৎসা করানো হয় এবং নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ব্যতিক্রমও ঘটে। সংখ্যায় কম হলেও, কেউ কেউ জীবনে দুই কিংবা তিনবার অবসাদের অসুখে ভোগেন। অবশ্য এইসব ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে তাঁদেরই ক্ষেত্রে, যাঁরা জীবনে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত থাকেন। কিন্তু যতবারই হোক-না কেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো জরুরি।

মানসিক অবসাদ এড়াতে কী কী করা উচিত এবং কী কী করা উচিত নয় বলে মনে করেন আপনি?

  •  নিজেকে কখনও একা এবং অসহায় ভাবা উচিত নয়
  • কোনও সমস্যায় মানসিক চাপ নিজে না নিতে পারলে, শুভাকাঙক্ষীর সঙ্গে আলোচনা করে সুপরামর্শ নেওয়া উচিত
  • মনে চাপ পড়লে, চুপচাপ বসে না থেকে কোনও কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত। আর যদি কোনও কাজ না-ও থাকে, তাহলে গান শুনুন কিংবা সিনেমা দেখুন
  • শরীরকে উপযুক্ত পুষ্টি জোগাতে সবরকম খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষকরে নিয়মিত শাকসবজি খাওয়া উচিত
  • ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ধূমপান এবং মদ্যপানের ফলে মানসিক অবসাদ বেড়ে যায়
  • মানসিক অবসাদে ভুগলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন না। তাহলে তা সঠিক সিদ্ধান্ত না-ও হতে পারে এবং ভুল সিদ্ধান্তের ফলে মানসিক অবসাদ আরও বেড়ে যেতে পারে
  • জীবনের সবকিছু যদি ‘বৃথা’ মনে হয় এবং বারবার আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে, তাহলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন
  • নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করবেন না এবং অতিরিক্ত চাপ নেবেন না।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিশেষ কোনও পরামর্শ?

মনে রাখবেন, সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে। যে- সমস্যার সমাধান নেই, তা কোনও সমস্যাই নয়। অতএব, কবির ভাষায়…. ‘সঙ্কটেরও কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মান

মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়…’

Thyroid ডিসঅর্ডারস্

‘থাইরয়েড’ শব্দটির সঙ্গে সকলে পরিচিত হলেও, থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্-এর বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা নেই অনেকেরই। কিন্তু এই রোগটি সম্পর্কে কিছু জ্ঞান এবং সচেতনতা থাকা আবশ্যক এবং লাভজনক। কারণ, ক্ষতিকারক রোগগুলির মধ্যে Thyroid Disorders অন্যতম। তাই সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা শুরু হওয়া জরুরি। এ প্রসঙ্গে ডা. সুবীর রায় জানালেন বিশদে।

Thyroid Gland কী এবং মানব শরীরের কোথায় এর অবস্থান?

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড হল অন্তক্ষরা বা অনালগ্রন্থি। মানবদেহের গলার সামনের দিকে এর অবস্থান। এর আকার প্রজাপতির মতো অনেকটা।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড-এর কাজ কী?

রক্তপ্রবাহ থেকে দু’রকম হরমোন তৈরি করে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। এই দুটি হরমোনের একটির নাম থাইরক্সিন (T4) এবং অন্যটির নাম ট্রায়োডোথাইরোনাইন (T3)। এই হরমোনগুলি দেহকোশগুলিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড-এর কন্ট্রোলে থাকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। এই থাইরয়েড-এর হরমোন লেভেল যদি বেড়ে-কমে যায় তাহলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড প্রভাবিত হয়ে হরমোন ক্ষরিত হয়, তাকে বলে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা টিএসএইচ।

Thyroid Hormones-এর কাজ কী?

T-4 এবং T-3 হরমোন দুটি সরাসরি ক্ষরিত হয় থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে এবং হরমোনগুলি দেহকোশের মেটাবলিজম-কে প্রভাবিত করে। যদি টি-ফোর এবং টি-থ্রি এই দুটি থাইরয়েড হরমোন বেশি মাত্রায় ক্ষরিত হয়, তাহলে দেহকোশ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কাজ করে এবং অবস্থাটিকে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজ্ম। আর এর ঠিক উলটো অর্থাৎ যদি থাইরয়েড হরমোন কম ক্ষরিত হয় (হাইপোথাইরয়েডিজ্ম), তাহলে শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিও কম কাজ করবে, অর্থাৎ অসুস্থ হয়ে পড়বে। অতএব, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনকে (টিএসএইচ) সঠিক মাত্রায় (৪.৪ – ৪) রাখতে হবে।

থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্-এ কারা বেশি আক্রান্ত হন?

থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্-এ যুবক-যুবতি, মধ্যবয়স্ক নারী-পুরুষ, প্রবীণ-প্রবীণা, এমনকী, শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে।

থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্-এর কারণ কী? এটি কি বংশগত?

থাইরয়েড সাধারণত বংশগত রোগ নয়। এটি আসলে অটো ইমিউন ডিজিজ। শরীরে আয়োডিনের মাত্রা কম হলে থাইরয়েড-এ আক্রান্ত হয়। এছাড়া বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েও থাইরয়েড অ্যান্ডিবডি তৈরি করে। এরফলে থাইরয়েড কোষগুলি হয় অতি সক্রিয় কিংবা অল্প সক্রিয় হয়।

এই রোগের উপসর্গগুলি কী কী?

থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্ যেহেতু দু’রকমের, তাই হাইপোথাইরয়েডিজ্ম এবং হাইপারথাইরয়েডিজ্ম ডিজিজ-এর উপসর্গও আলাদা। শীত সহ্য করতে না পারা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি, ওজন বেড়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মানসিক অবসাদ, চুল পড়া, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুচক্র, প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায় হাইপোথাইরয়েডিজ্ম ডিজিজ-এর ক্ষেত্রে। আর অস্থিরতা, গরম সহ্য করতে না পারা, বুক ধড়ফড়, কাঁপুনি, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, গা জ্বালা করা প্রভৃতি লক্ষণ হাইপারথাইরয়েডিজম ডিজিজ-এর ইঙ্গিত করে।

থাইরয়েড ডিসঅর্ডারস্-এর চিকিৎসা পদ্ধতিটাই বা কী?

অন্যান্য রোগের মতো এই রোগের ক্ষেত্রেও প্রথমে ক্লিনিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন। তারপর থাইরয়েড-ব্লাড টেস্ট করিয়ে নিয়ে দেখতে হবে টি-থ্রি, টি-ফোর এবং টিএসএইচ-এর কী অবস্থা। তবে হাইপোথাইরয়েডিজ্ম এবং হাইপারথাইরয়েডিজ্ম-এর ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। হাইপোথাইরয়েডিজ্ম-এর ক্ষেত্রে এল-থাইরক্সিন জাতীয় ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। অন্যদিকে, হাইপারথাইরয়েডিজ্ম হলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টি-থাইরয়েড ড্রাগস এবং রেডিয়ো-আয়োডিন থেরাপিকে মাধ্যম করতে হয়। আর যদি এই চিকিৎসাতেও কাজ না হয়, তাহলে সার্জারি ছাড়া উপায় থাকে না। মহিলারা যদি রেডিয়ো-আয়োডিন থেরাপি করান, তাহলে অন্তত তিনমাস তাদের প্রেগন্যান্সি অ্যাভয়েড করতে হবে।

চোখের রিফ্র্যাক্টিভ এরর

চোখের যত রকমের রোগ আছে, তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল রিফ্র্যাক্টিভ এরর অর্থাৎ অসংশোধিত দৃষ্টিহীনতা। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী সারা বিশ্বে ১৫ কোটি লোক অসংশোধিত দৃষ্টিহীনতায় ভোগেন।

এই দৃষ্টিহীনতার চিকিৎসাস্বরূপ চশমা সর্বাধিক জনপ্রিয়। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চোখ চেয়েছে মুক্তি পেতে চশমার বাঁধন থেকে, আবিষ্কৃত হয়েছে কনট্যাক্ট লেন্স। তারপর কেটে গেছে বহু বছর, সময় বয়ে চলেছে এবং বিজ্ঞান নিয়ে এসেছে এক অসম্ভব স্বপ্নপূরণ। আবিষ্কৃত হয়েছে লাসিক। চশমা নয়, কনট্যাক্ট লেন্স নয়, খালি চোখে দেখা যাবে সব কিছুই। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা থাকে, যেমন আছে চশমার সীমাবদ্ধতা, তেমনই সীমাবদ্ধতা আছে কনট্যাক্ট লেন্সের কিংবা লাসিকের। অতএব, কোনটা কখন কার্যকরি, তা জানা প্রয়োজন। সম্প্রতি এ বিষয়ে কৌতূহল মেটালেন ডা. অয়ন মোহান্ত।

চশমা কী?

আমাদের চোখ একটা স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মতো। চোখের কিছু গঠনগত ত্রুটি থাকলে, আমরা কোনও বস্তুকে ঝাপসা দেখি। একটি অতিরিক্ত লেন্স ব্যবহার করে আমরা বস্তুটিকে নিখুঁতভাবে দেখতে পাই। চোখের বাইরের এই অতিরিক্ত লেন্সকে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে লাগিয়ে ব্যবহার করা হয়, একেই বলে চশমা।

চশমা কত রকমের?

চশমা তিন প্রকারঃ  ১) ইউনিফোকাল লেন্স, যা সাধারণত ৩৫-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। ২) বাইফোকাল লেন্স, এটি চল্লিশ-এর কাছাকাছি পৌঁছোলে প্রয়োজন বা একে বলা হয় চালশের চশমা। যাতে দূরের দৃষ্টি ও কাছের দৃষ্টির জন্য আলাদা আলাদা লেন্স থাকে এবং মাঝখানে একটি বিভাজন রেখা থাকে। ৩) প্রোগ্রেসিভ লেন্স নামক আরও এক ধরনের চশমা আছে, যাতে কোনও বিভাজন রেখা ছাড়াই ক্রমানুসারে বিন্যস্ত থাকে। আর এই চশমা শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত যে-কোনও সময় প্রয়োজন হতে পারে।

চোখের পাওয়ার নির্ধারণ করা হয় কীভাবে?

চোখের পাওয়ার নির্ধারণ করার পদ্ধতির প্রথমে একটি কম্পিউটারের সাহায্যে (অরোরিফ্র্যাক্টোমিটার) আমরা প্রাথমিকভাবে চোখের পাওয়ার নির্ধারণ করি। এর দ্বারা পাওয়ার সংক্রান্ত মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। এরপর প্রত্যেকের আবার হাতেকলমে (ম্যানুয়াল রিফ্র্যাকশন টেস্ট) ট্রায়াল এবং এরর পদ্ধতিতে গ্রহণযোগ্য পাওয়ার নির্ধারণ করা হয়। এই পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য।

আর যদি কোনও শিশুর পাওয়ারের ঘাটতি থাকে এবং যদি চশমা না থাকে, ওই চোখে দেখার অভ্যাস তৈরি হয় না। ধীরে ধীরে চোখ অলস হয়ে যায়, একে বলে এমব্লায়োপিয়া বা লেজি আই। তাই প্রত্যেক শিশুর অন্ততপক্ষে ৩-৪ বছর বয়সের মধ্যে একবার দৃষ্টি এবং চশমার পরীক্ষা জরুরি।

শিশুদের ক্ষেত্রে চোখে অ্যাট্রোপিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে পাওয়ার নির্ধারণ করা জরুরি। চোখের অভ্যন্তরীণ পেশির অতিরিক্ত সংকোচনশীলতার জন্য পাওয়ার নির্ধারণে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা, তাই এই বিশেষ ব্যবস্থা।

Health

চশমার ফ্রেম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আজকাল চশমার ফ্রেম মানেই ফ্যাশনের জগতে নতুন সংযোজন। তাই আকার বা মাপের নতুনত্ব বা অভিনবত্ব আনতে গিয়ে চশমার মূল উদ্দেশ্যের কথা উৎপাদকেরা অনেক সময় ভুলে যান।

ফ্রেম বাছাই করতে গিয়ে কয়েকটি বিষয় জানার প্রয়োজন আছে। একদিকে ফ্রেম শক্তপোক্ত হবে, অন্যদিকে তা হবে হালকা এবং সুরক্ষাদায়ক। দুটি লেন্সকে ঠিকমতো আটকানোর ব্যবস্থা থাকে এবং ফ্রেমের সঙ্গে তা যেন উলম্ব তলে থাকে। চশমার ফ্রেম ব্যবহারে যাতে কোনও অস্বস্তি না হয় তা দেখার দায়িত্ব একজন অপটিশিয়ানের।

যে-সমস্ত পদার্থ দিয়ে ফ্রেম তৈরি করা হয়, সেইগুলি হল বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক, ধাতু বা ধাতুসংকর এবং এই দুইয়ের মিশ্রণ। প্লাস্টিকের মধ্যে সেলুলোজ নাইট্রেট বা অ্যাসিটেট (সেলুলয়েড ফ্রেম) হতে পারে। ধাতুগুলির মধ্যে স্টিল, নিকেল, রোল্ড গোল্ড বা অ্যালুমিনিয়ামও হতে পারে। ‘রিমলেস’ চশমাতে লেন্সের সাপোর্ট অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফ্রেমের জন্য অ্যালার্জি হওয়া বিচিত্র নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় নিকেলের ফ্রেমে। ফ্রেমের যে-অংশ ত্বকের সংস্পর্শে থাকে সেখানে চাকা-চাকা লাল দাগ, চুলকানি (কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস) হতে পারে। এছাড়াও ভারী চশমাতে ঘর্ষণ ও চাপের জন্য নাকের বা কানের গোড়ার ত্বকে ঘা হতে পারে।

চশমার ফিটিং-এর সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাপ খুবই দরকার। যেমন, দুটি তারারন্ধ্রের মধ্যে দূরত্ব (আইপিডি), নাকের ব্রিজের মাপ, কর্ণমূলের উপরিভাগ থেকে লেন্সের অবস্থান কতদূরে হবে তার মাপ, কাটিং-এর সময় লেন্সের কেন্দ্রের মাপ ও সিলিন্ড্রিক্যাল লেন্সের ক্ষেত্রে অক্ষ-র (অ্যাক্সিজ-এর) মাপ। এইসব দেখার দায়িত্ব একজন ভালো অপটিশিয়ানের।

বড়ো ফ্রেমের কিছু অসুবিধা আছে। প্রথমত চশমা ভারী হলে, লেন্সের কেন্দ্র ঠিকঠাক মেপে লাগানো অসুবিধাজনক। হাই পাওয়ারের ক্ষেত্রে বড়ো ফ্রেমের চশমা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

প্রথম চশমা বা নতুন চশমাতে অসুবিধা হয় কেন?

চশমা ঠিকমতো চোখের সামনে না বসলে নানা অসুবিধা হতে পারে। নাক ও কানের গোড়ায় অস্বস্তি বা বেশি ঢিলে মনে হচ্ছে কিনা অর্থাৎ চশমা ঠিকমতো ‘ফিট’ করেছে কিনা সেটা দেখা দরকার। প্রয়োজনে কিছুদিন অন্তর দোকানে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে নিতে হবে। সবসময় নতুন বা প্রথম চশমা ব্যবহারে কিছু না কিছু অসুবিধা হয়ে থাকে। সেইগুলি কাটাতে মোটামুটি তিন সপ্তাহ সময় লাগে।

যেমন সমতল জায়গা উঁচু নীচু মনে হওয়া, সমান্তরাল জায়গা বাঁকা, সিঁড়িতে ওঠা-নামায় অসুবিধা। কোনও জিনিসের উচ্চতা বা গভীরতা নিয়ে খটকা, বৃত্তাকার জিনিস যেন ঠিক বৃত্তাকার নয়, সাইকেল চালাতে অসুবিধা ইত্যাদি।

আবার বাইফোকাল চশমাতে দুই অংশের সংযোগস্থলে চোখ পড়লে উঁচু-নিচু মনে হওয়া অসম্ভব নয়।

অন্যদিকে হাইপাওয়ারের ক্ষেত্রে মাথাধরা গা বমি-বমি ভাব– এমনটি মনে হতেই পারে। ফ্রেমের জন্য অসুবিধা হতে পারে। লেন্সের কেন্দ্রের অবস্থান ঠিক না হওয়ার জন্য প্রিজমাটিক এফেক্ট– যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।

চশমা ঠিকমতো ‘ফিট’ না হওয়ার কারণ কী?

১) কোথাও কোনও ভুল না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ‘প্রথম’ চশমা ব্যবহার করার জন্য। অর্থাৎ এটা মানসিক অস্বস্তি।

২) অপ্টোমেট্রিস্টের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে চশমা না বানানো।

৩) চশমার ফ্রেমের ত্রুটি।

৪) অপ্টোমেট্রিস্টের প্রেসক্রিপশনে ভুল থাকা।

৫) চশমার কাচের স্বভাবগত কারণ যেমন উচ্চ মাইনাস বা প্লাস পাওয়ারের জন্য।

খুব বেশি ডায়াবেটিস বা চোখের প্রেসার বেশি থাকলে চশমার পাওয়ার ঘনঘন পালটাতে থাকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেও হতে পারে এই সমস্যা। তাই এই রোগ দুটি থাকলে ডাক্তারবাবুকে জানাতে ভুলবেন না।

কনট্যাক্ট লেন্স কী?

চশমাতে ফ্রেমের সাহায্যে প্রয়োজনীয় পাওয়ার চোখের ১২ মিমি দূরে রেখে দৃষ্টিশক্তি সঠিক করা হয়, তেমনি কনট্যাক্ট লেন্সে চোখের মণির উপর সরাসরি লাগিয়ে দৃষ্টিশক্তি ঠিক করা হয়। মণির উপর এটা ভাসলেও পড়ে যায় না, তার কারণ, অশ্রুর পাতলা পর্দার উপর এটা আটকে থাকে।

এটি ছোটো প্লাস্টিকের বোতামের মতো যা আঙুলের ডগায় রেখে সরাসরি মণির উপর বসানো হয়, আবার ইচ্ছে মতো খোলাও যায়।

কনট্যাক্ট লেন্স দুই ধরনেরঃ

১) সেমি সফ্ট লেন্স, ২) সফ্ট লেন্স

সফ্ট লেন্স দৈনিক ব্যবহার (ডিডব্লুএস) বা একনাগাড়ে অনেক দিন পরার (ইডব্লুএস)– দুরকমেরই পাওয়া যায়। সফ্ট লেন্স অনেক বেশি আরামদায়ক সেমি সফ্ট লেন্সের থেকে।

এছাড়া যাদের বিষম দৃষ্টি বেশি, তাদের জন্য টরিক লেন্স আছে– এটিও সফ্ট লেন্স।

আবার প্রতিমাসে বা ছয় মাস অন্তর পালটানোর লেন্সও আছে যার নাম ডিসপেনসেবল কনট্যাক্ট লেন্স। এটি চোখের পক্ষে খুবই ভালো। কারণ, কম সময় ধরে ব্যবহার করে আবার নতুন লেন্স ব্যবহার করা হয়।

সামগ্রিকভাবে কনট্যাক্ট লেন্সের কী কী সুবিধা আছে?

১) পাওয়ার বেশি হওয়া সত্ত্বেও কনট্যাক্ট লেন্সের মাধ্যমে কোনও বস্তুকে বড়ো বা ছোটো দেখায় না।

২) ফ্রেম না থাকায়, দেখাটা পুরো দৃষ্টিলব্ধ ক্ষেত্র জুড়েই হয়।

৩) কিছু কর্নিয়া রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্সই একমাত্র ভরসা। শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায় একটি চোখে অনেকটা পাওয়ার। এইসব ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্স ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ১৮ বা ৩৫ বছর বয়সের পর এদের লাসিক করা হয়।

৪) কখনও শিশুদের ছানি অপারেশনের পর হাই প্লাস পাওয়ার পরতে হয়, যা চশমায় সম্ভব হয় না, কনট্যাক্ট লেন্সের সাহায্য নিতে হয়।

৫) এছাড়া কেরাটোকোনাস নামক কর্নিয়ার রোগে কনট্যাক্ট লেন্স ছাড়া গতি নেই।

কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্স দেওয়া হয় না?

১) যাদের চোখে অ্যালার্জিজনিত কোনও রোগ লেগেই থাকে

২) যাদের ধুলো বা ধোঁয়ার মধ্যে কাজ

৩) বারে বারে যাদের চোখ লাল হয় বা ব্যথা হয়

৪) যাদের চোখের জল কম

৫) উচ্চ ডায়াবেটিস

৬) যারা নিজেদের স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে উদাসীন

উল্লেখ্য, কনট্যাক্ট লেন্স কাউকে জোর করে দেওয়া যায় না। সফলভাবে কনট্যাক্ট লেন্স পরতে গেলে মানসিক প্রস্তুতি সবার আগে দরকার।

কনট্যাক্ট লেন্স-এর ব্যবহারের পদ্ধতি কী?

সকলপ্রকার লেন্স (আরজিপি এবং ডিডব্লুএস) একটানা বারো ঘণ্টা ব্যবহার না করাই ভালো। প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা লেন্স খুলে রেখে আবার ছয় ঘণ্টা টানা লেন্স পরলে তা চোখের মণির পক্ষে ভালো। কারণ, আমাদের মণির খাদ্য বা পুষ্টির উৎস হল অক্সিজেন, যার বেশির ভাগ সরাসরি বাতাস থেকে আসে।

কীভাবে কনট্যাক্ট লেন্সের যত্ন নিতে হবে?

১) লেন্স পরা বা খোলার সময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

২) লেন্স খোলার পর নির্দিষ্ট দ্রবণে ভিজিয়ে রাখুন। লেন্স পরার পর দ্রবণটি ফেলে দিন।

৩) প্রতিদিন লেন্সের দ্রবণ পালটান ও দ্রবণের পাত্রটি সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করুন।

৪) ডান ও বাম দিকের লেন্স গুলিয়ে ফেলবেন না।

৫) চোখে কাজল না দেওয়াই ভালো। যদি একান্তই দিতে হয়, তবে লেন্স পরার পরই কাজল দেবেন।

৬) আরজিপি (সেমি সফ্ট) লেন্সের ক্ষেত্রে, লেন্স পরিষ্কার করার সময় কখনওই নোংরা জল ব্যবহার করবেন না।

৭) আঙুলে, বিশেষকরে তর্জনীতে নখ রাখবেন না। নখের আঁচড়ে লেন্স নষ্ট হবার ভয় থাকে। এছাড়া চোখে নখের আঘাত লাগতে পারে।

৮) কনজাংটিভাইটিস বা অন্য কোনও কারণে চোখ লাল হলে লেন্স পরা বন্ধ রাখুন এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই সকল কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের প্রাথমিক শর্ত।

লাসিক কী?

যদি কারও চোখের পাওয়ার হয় মাইনাস ১৩ পর্যন্ত মায়োপিয়া বা প্লাস পাওয়ার ৬ পর্যন্ত হাইপারমেট্রোপিয়া এবং সিলিন্ড্রিকাল পাওয়ার +৬ (অ্যাস্টিগমাটিজম্) পর্যন্ত থাকে এবং বয়সীমা ১৮-৩৫ বছর পর্যন্ত হয়, তাহলে লাসিক করাতে পারেন। তবে ৩৫ বছরের উপর বয়স হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলেই তা সম্ভব।

লাসিকের আগে আমরা বেশ কিছু পরীক্ষা করে থাকি, তার মধ্যে অন্যতম হল পেন্টাক্যাম বা কর্নিয়ার বিভিন্ন কোণ থেকে ছবি তুলে কম্পিউটার-এর মাধ্যমে তার বিশ্লেষণ করা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্নিয়া হল চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ যার উপরে লাসিক করা হয়। অর্থাৎ, কর্নিয়াতে কোনওরকম গঠনগত সমস্যা থাকলে তা এই পেন্টাক্যাম নামক যন্ত্রে ধরা পড়ে যায়। সেসব ক্ষেত্রে আমরা তাদের লাসিক করাতে নিষেধ করি।

এছাড়াও রেটিনা চেক-আপ করাও বাধ্যতামূলক। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই মায়োপিক রোগীদের রেটিনা পরীক্ষা করে কিছু দুর্বলতা পাওয়া যায়। লাসিকের আগে তার চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

লাসিক করার আগে রোগীকে অজ্ঞান করা বা কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র এক ফোঁটা ওষুধ দিয়ে চোখকে অবশ করে নেওয়া হয়। রোগী কোনওরকম ব্যথা অনুভব করেন না।

এরপর মাইক্রোকেরাটম নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে নিখুঁতভাবে কর্নিয়ার একটি ছবি তোলা হয়। ছবিটি তোলার পর এক্সাইমার লেজারের সাহায্যে কর্নিয়াটির আকারের পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। ব্যস, হয়ে গেল লাসিক চিকিৎসা। এক একটি চোখে পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে লাসিক সম্পন্ন হয়।

ভাবতে গর্ব হয় এই যে এক্সাইমার লেজার আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন দুই ভারতীয়। প্রথমজন বাঙালি ড. মণিলাল ভৌমিক যিনি প্রথম এক্সাইমার লেজার আবিষ্কার করেন এবং অপরজন ড. রঙ্গস্বামী শ্রীনিবাসন যিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে, এটিকে চোখের উপর প্রয়োগ করা সম্ভব। অনেকে এমন আছেন যাঁরা লাসিক করাতে এসেছেন কিন্তু এমন প্রফেশনে আছেন যেখানে চোখে চোট লাগার প্রবণতা বেশি যেমন, খেলাধূলা করেন, পুলিশের চাকরি করেন বা করবেন ইত্যাদি। এঁদের ক্ষেত্রে আমরা পিআরকে করে থাকি। এতে আমরা কর্নিয়ার ফ্ল্যাপ না তুলে শুধুমাত্র এপিথেলিয়াম তুলে লেসার প্রয়োগ করি। এরপর একটি কনট্যাক্ট লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই এপিথেলিয়াম কর্নিয়ার উপর দিয়ে পুনরায় গজিয়ে যায়। তবে পিআরকে সাধারণত মাইনাস ৩ থেকে মাইনাস ৪-এর বেশি পাওয়ার থাকলে করা হয় না।

আরও একটি খবর আপনাদের জানিয়ে রাখি, সম্প্রতি মার্কিন সরকার নৌবাহিনীর পাইলটদের ও নাসার মহাকাশচারীদের লাসিক করানোর অনুমতি দিয়েছেন। এর থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন লাসিক চিকিৎসা কতখানি নিরাপদ।

অতএব, চশমা নাকি কনট্যাক্ট লেন্স নাকি লাসিক, এ নিয়ে আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে পরামর্শ নিন।

চশমা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, যদি অসম পাওয়ার থাকে তবে দুটি চোখ একসঙ্গে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কনট্যাক্ট লেন্স বা লাসিকের প্রয়োজন হয়।

আবার কেউ যদি মনে করেন চশমা একটি বোঝার মতো, তাদের জন্য কনট্যাক্ট লেন্স বা লাসিক পদ্ধতি রয়েছে। কনট্যাক্ট লেন্স কখনও কখনও ৩৫-৪৫ বছর বয়সের পর ব্যবহারের কিছু কিছু অসুবিধে দেখা দেয়। কনট্যাক্ট লেন্স দিনের কিছু সময় ব্যবহার করা যায় বাকি সময় তাকে চশমার সাহায্যে চলতে হয়।

লাসিক ১৮-২০ বছর বয়সের আগে করা যায় না, তবে এ পদ্ধতির পর চশমার সাধারণত প্রয়োজন হয় না, হয় চল্লিশ পেরোলে কাছে দেখার জন্য।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব