হেপাটাইটিস সি থেকে সাবধান

হেপাটাইটিস এ এবং বি নিয়ে অনেকে আলোচনা করেন কিন্তু হেপাটাইটিস সি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা অনেকেরই নেই। অথচ হেপাটাইটিস সি একটি বিপজ্জনক অসুখ। তাই এই রোগকে ঠিক মতো প্রতিরোধ করতে না পারলে কিংবা চিকিৎসা করতে না পারলে, মৃত্যুও ঘটতে পারে। কারণ, হেপাটাইটিস এ এবং বি-র ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও, হেপাটাইটিস সি-র কোনও ভ্যাকসিন নেই। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে, হেপাটাইটিস সি রোগটি সম্পর্কে বিশদে জানালেন অ্যাপোলো গ্লেনেগল্স হসপিটাল, কলকাতা-র ইন্সটিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোসায়েন্সেস-এর হেড ডা. মহেশ কুমার গোয়েংকা।

হেপাটাইটিস সি হল এমন একটি ভাইরাস যার থেকে লিভারের (যকৃতের) জটিল রোগ হয় এবং এর থেকে সিরোসিস, লিভার ফেলিওর এবং লিভার ক্যানসার হতে পারে। যেহেতু অনেক বছর ধরে এর কোনও উপসর্গ তৈরি হয় না, তাই হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকই জানেন না যে তারা সংক্রমিত, তাই হেপাটাইটিস সি-কে নীরব মহামারি বলা হয়। প্রাথমিক ভাবে প্রকাশ পাবার অনেকদিন পরে লিভারে সিরোসিস, লিভার ফেলিওর এবং লিভার ক্যানসার হতে পারে।

হেপাটাইটিস সংক্রমণ হল একটি তাৎপর্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যাতে এইচসিভি-সম্পর্কিত জটিলতার কারণে প্রাথমিক ভাবে বছরে অনেক রুগির প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু হচ্ছে।

যেহেতু ক্রনিক হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই কোনও উপসর্গ থাকে না, তাই তারা পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত জানতেই পারেন না যে, তারা সংক্রমিত। ক্রনিক হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত লোকেরা কোনও উপসর্গ ছাড়াই বা অসুস্থ না হয়ে কয়েক দশক পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন। যখন উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়, তখন সেগুলো প্রায়শই অ্যাডভান্সড্ লিভারের রোগের একটি লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয়। হেপাটাইটিস সি-এর উপসর্গের মধ্যে আছে—- জ্বর, ক্লান্তি, খিদে না পাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পেটে ব্যথা, গাঢ় রঙের প্রস্রাব, ধূসর রংয়ের মল, গাঁটে ব্যথা এবং জন্ডিস।

ডা. মহেশ কুমার গোয়েংকা জানিয়েছেন, হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত কিছু লোক ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু বেশিরভাগ লোক যারা সংক্রমিত হন, তাদের একটি ক্রনিক বা জীবনব্যাপী সংক্রমণ তৈরি হয়। চিকিৎসার বিলম্বে ক্রনিক হেপাটাইটিস সি থেকে লিভারের জটিল সমস্যা হতে পারে যার মধ্যে আছে লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া বা সিরোসিস, লিভার ফেলিওর বা লিভার ক্যানসার।

যাদের হেপাটাইটিস সি হয়, তাদের ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৭৫ জন লোকের ক্রনিক (দীর্ঘকালীন) সংক্রমণ তৈরি হয়। আর ওই ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৭৫ জন লোকের, যাদের হেপাটাইটিস সি আছে, তারা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিভারকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে সাধারণত অনেক বছর সময় লেগে যায়।

হেপাটাইটিস সি সাধারণত তখন ছড়ায়, যখন হেপাটাইটিস সি-র ভাইরাসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির রক্ত একজন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে, যার সংক্রমণ নেই। এটি বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। ভারতে হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের সবথেকে সাধারণ উপায় হল রক্ত দান করা, বিশেষত যারা এগুলি ২০০১-এর আগে নিয়েছেন বা যাদের অনেক বার রক্ত দেওয়া হয়েছে। কিছু লোকের হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমণ হয়েছে ওষুধ ইনজেক্ট করার জন্য একই সুচ অথবা অন্যান্য কোনও যন্ত্র ব্যবহার করে। এছাড়াও কিছু লোক বডি পিয়ার্সিং বা ট্যাটু করেও হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন যেগুলো বাড়ি গিয়ে করা হয়েছে, বা অন্য কোনও লাইসেন্সহীন ফেসিলিটিতে। কদাচিৎ কোনও ক্ষেত্রে, হেপাটাইটিস সি যৌন মিলনের দ্বারাও সংবাহিত হতে পারে। শিশুর জন্ম দেওয়ার সময় কোনও মায়ের হেপাটাইটিস সি থাকলে সেই শিশুরা সংক্রমিত হতে পারে। কিছু লোকের এই সমস্ত কোনও ঝুঁকির বিষয়গুলিই থাকে না এবং তাও সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়াও কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির রেজার বা টুথ ব্রাশ বা কোনও ধারালো জিনিস (যেমন নেল ট্রিমার) ব্যবহার করলে সংক্রমিত হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করলে নির্ণয় করা যায় এবং কখনও কখনও এটি লিভারের স্বাস্থ্যে কোনও প্রভাব ফেলেছে কি না তা পরীক্ষা করবার জন্য কখনও কখনও লিভার বায়োপসি করা হয়।

ডা. মহেশ কুমার গোয়েংকা আরও জানিয়েছেন, যেহেতু এইচ সি ভি-তে সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না, তাই স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে সিরোসিস বা লিভার ক্যানসার হবার আগেই অনেক বেশি রোগীর রোগ নির্ণয় করা যায়। যদিও এর কোনও প্রতিরোধক টিকা নেই। প্রত্যেক বছর ২৮  জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ হিসাবে স্মরণ করা হয় জনগণের স্বার্থে। সেইসঙ্গে, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগ্যানাইজেশন (ডব্লুএইচও বা হু)-এর মতো আন্তর্জাতিক, সমিতিগুলোর কাছ থেকেও সহায়তা পাওয়া যায়।

যদি আপনি কোনও উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে হেপাটাইটিস সি-এর বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। বর্তমানে এমন কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, যা আপনাকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খরচ হতে পারে আশি হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

গ্রিন ডায়েট

শুধু যৌবন ধরে রাখার জন্যই নয়, আমাদের ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকা এবং শরীরকে ফিট রাখা খুবই দরকার। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ফিট থাকার জন্যে কোনওরকম প্রচেষ্টা নিই? এটা ভাবার বিষয়। বোধহয় যতটা সচেতন আমাদের হওয়া উচিত ততটা আমরা হই না। ভারতবর্ষে যদি মহিলাদের শরীরের সুস্থতা ও  Fitness নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয় তাহলে দেখা যাবে, খুব কম সংখ্যক মহিলাই নিজেদের Health এবং Fitness নিয়ে মাথা ঘামান। তাই,এদেশে অনেক মহিলাই স্থূলতার শিকার।

বেশিরভাগ মহিলাই, সে গৃহিণীই হোক অথবা কর্মরতা, খাওয়াদাওয়া ও ডায়েটের উপর বিশেষ নজর দেন না। তাই বলে তারা খাবার খান না, এমনটা কিন্তু নয়। আসলে কোন খাবারের কী গুণ সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। সারাদিনে যেটা হাতের কাছে পাওয়া যায় সেটাই গলধঃকরণ করলেই সমস্যার শেষ। পেট-টা ভরা নিয়ে কথা। কিন্তু এর ফলে স্থূলতা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা শারীরিক সুস্থতার অন্তরায় হয়ে ওঠে। তাই, ভারতীয় মহিলারা যথার্থ পুষ্টির অভাবে নানান সমস্যায় জর্জরিত। এই অপুষ্টির কারণ হল রোজকার ডায়েটে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব।Green Diet এই কারণেই এত গুরুত্বপূর্ণ৷

মধ্য বয়সে স্থূলতা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। স্থূলতা এবং অন্যান্য অসুস্থতা এড়াবার জন্যে অনেকেই ডায়েটিং-এর সাহায্য নিয়ে থাকেন। এখন চারিদিকে ফিটনেস সেন্টার, হেলথ ক্লাব ইত্যাদির রমরমা। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসতেই থাকে যে, কম খেয়ে এবং ইচ্ছেমতো ডায়েট কন্ট্রোল করে ফিট থাকা কি সম্ভব? কম খেয়ে রোগা হওয়া যায় কিন্তু শরীরের সুস্থতা এবং ফিটনেস কখনওই সম্ভব নয়। আসলে কতটা খাচ্ছেন সেটা যতটা না দরকারি, তার থেকেও বেশি প্রয়োজনীয় হল আপনি কী কী খাচ্ছেন।

বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র শাকসবজি অথবা গ্রিন ডায়েটের উপর খুব বেশি করে জোর দেওয়া হচ্ছে।

দেশ-বিদেশের সেলিব্রিটিরাও আমিষ ছেড়ে নিরামিষ ডায়েটের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ডাক্তাররা শাকসবজি নানা ভাবে খাওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন। এতে কাঁচা সবজি দিয়ে তৈরি স্যালাড থেকে শুরু করে রান্না করা নানা পদে সবুজ শাক ও সব রকমের সবজি রাখতে বলা হচ্ছে।

খাদ্যগুণের উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, পাতাবহুল সবজি অথবা সবুজ সবজির ডায়েট, মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এখন নিউট্রিশনিস্টরাও মহিলাদের ফিট থাকার জন্যে গ্রিন ভেজিটেবলের উপর বিশেষ করে জোর দিচ্ছেন। শহরের বিশিষ্ট নিউট্রিশনিস্ট রণিতা ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে, তাঁর কাছে যে-সব মহিলা ডায়েটের সমস্যা নিয়ে আসেন, তারা বেশিরভাগই শরীরের বাইরের সৌন্দর্য নিয়েই সচেতন। শরীরের ভিতরের ঘাটতি পর্যবেক্ষণ করা অথবা হেলদি লিভিং সম্পর্কে জানার আগ্রহ তাদের খুবই কম। দৈনন্দিন খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা অথবা লোকের কথা শুনে ডায়েটিং করে রোগা করার প্রচেষ্টাকেই মহিলারা সঠিক বলে ভেবে নেন অথচ এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। ‘স্লিম অ্যান্ড ট্রিম’ হয়ে যাওয়া মানেই যে ফিট থাকা, এই ধারণা ঠিক নয় বরং ইন্টারনালি ফিট থাকা বেশি জরুরি।

স্যালাডের প্রয়োজনীয়তা

রোজকার খাদ্যতালিকায় গ্রিন ডায়েট আবশ্যিক। প্রাত্যহিক বাজার করতে গিয়ে সেইসব সবজি কিনুন যেগুলি দিয়ে হেলদি এবং জিভে জল আনা পদ সহজেই বানানো যায়। সবুজ সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ব্রোকোলি, গাজর, টম্যাটো, কড়াইশুঁটি, পালংশাক ইত্যাদি রোজকার খাদ্যতালিতায় রাখা চলে। সকালের জলখাবার থেকে শুরু করতে হলে সবথেকে ভালো হয় সবজির জুস দিয়ে যদি দিন শুরু করা যায়। সবজির মধ্যে টম্যাটো, বিট, গাজর, আদার রস বিশেষ ভাবে উপকারী। জুসের মধ্যে বিটনুন, জোয়ান ইত্যাদি মিশিয়ে খেলে এগুলি স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে।

দুপুরবেলা স্যুপ অথবা স্যালাড হিসেবে সবজি খাওয়া যেতে পারে। স্যুপের মধ্যে পালং, কর্ন, টম্যাটো অথবা মিক্স ভেজিটেবল স্যুপ খুবই পুষ্টিকর। খেতেও খুবই সুস্বাদু এবং ধীরে ধীরে শরীরের স্থূলতা কমাতেও সাহায্য করে।

অনেকেই সবুজ শাকসবজি স্যালাড হিসেবে খেতেও পছন্দ করেন। গ্রিন স্যালাড হিসেবে ব্রোকোলি, পালংশাক, টম্যাটো, পেঁয়াজ, স্প্রিং অনিয়ন, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, ক্যাপসিকাম, লেটুস পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। স্যালাডে অলিভ অয়েল, ক্রিম, মধু, ভিনিগার অথবা মাস্টার্ড সস ইত্যাদি ব্যবহার করে স্যালাডের স্বাদ বাড়িয়ে তোলা যায়।

আমরা সকলেই জানি যে শাকসবজি কাঁচা খেলে তার পরিপূর্ণ খাদ্যগুণ পাওয়া যায়। রান্না করা খাবারে সম্পূর্ণ খাদ্যগুণ পাওয়া যায় না। সুতরাং সবজি যদি কাঁচা খেতে হয়, তাহলে শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে তবেই খেতে হবে, যাতে সেটি ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয়। গ্রিন ডায়েট শুধুমাত্র ফিট থাকতেই সাহায্য করবে এমন নয়, নানারকম অসুখের থেকেও শরীরকে সুরক্ষিত রাখবে।

শরীরের জন্য আরও একটি প্রয়োজনীয় তত্ত্ব হল ফাইবার। শাকসবজিতে ফাইবার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ক্যানসারের প্রতিরোধক হিসেবেও গ্রিন ডায়েট খুবই উপকারী। এছাড়া ভিটামিনও প্রচুর থাকে শাকসবজিতে। সবজিতে মজুত ফলিক অ্যাসিড, ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।

শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি সবুজ শাকসবজি

হার্ট স্পেশালিস্ট ডা. কেকে আগরওয়াল নিজের পেশায় একজন বিখ্যাত পর্সোনালিটি। তাঁর মতে, সমস্তরকম সবুজ এবং ফাইবারযুক্ত সবজি শরীরের সতেজতা বাড়াতে সাহায্য করে সুতরাং রোজকার ডায়েটে এগুলো রাখাই উচিত। তাঁর মতে, ডায়েটিং-এর বিকল্প হিসেবে গ্রিন ডায়েটের তুলনা নেই।

দেশে-বিদেশে বহু সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, রোজ শাকসবজি খেলে ত্বকের কমনীয়তা বাড়ে, চেহারায় গ্লো আসে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি হওয়ায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা যায়। সবুজ শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও শরীর সুস্থ রাখার কাজে আসে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তত্ত্ব, শরীরের যে-কোনও রোগ প্রতিরোধ করার শক্তি জোগায়। গ্রিন ডায়েটের সবথেকে উপকারিতা হল, এটি কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট দুটোই বাড়তে দেয় না। এগুলি কন্ট্রোলে থাকার ফলে হার্ট-ও সুরক্ষিত থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের শরীরে ক্যালসিয়াম-এর অভাব হয়ে থাকে। শাকসবজি রোজ ডায়েটে রাখলে, ক্যালসিয়ামের অভাব মিটবে। তাছাড়াও সবুজ পাতা যেসব সবজিতে রয়েছে (পালং, বাঁধাকপি, লেটুস) সেগুলি নিত্য খেলে, বোন ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। এছাড়াও ত্বক এবং চুলের পুষ্টিও গ্রিন ডায়েটে প্রচুর পাওয়া যায়। অনেক মহিলাই নিয়মিত ডায়েট প্ল্যান অথবা জিম রুটিন মেনে চলতে পারেন না। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, যদি নিয়মিত শাকসবজি খাওয়া যায়, তাহলে হেলদি লাইফ লিড করতে কোনও অসুবিধাই হবে না। রোজকার ডায়েটে চিনি এবং ফ্রায়েড খাবারের মাত্রা একেবারে কমিয়ে ফেলা উচিত। প্রকারান্তরে যৌবন দীর্ঘায়িত করতে এটি সাহায্য করবে।

একবারে অনেকটা খাবার খাওয়ার বদলে, যদি কিছুক্ষণ বাদে বাদে অল্প করে খাবার খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীরের জন্য বেশি ভালো তবে খাবার অবশ্যই হেলদি হওয়া উচিত। সাধারণত অনেকক্ষণ কিছুই না খেয়ে খিদের মুখে বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। এতে শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে। তিরিশ পেরোলেই যোগব্যায়াম করাও মহিলাদের জন্য খুবই জরুরি। এতেও নানা ধরনের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

চিনি, চাল এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার ডায়েটে বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়। লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনুন, জাংক ফুড একেবারেই খাওয়া অনুচিত। সকালে বা বিকালে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে একদিন আনাজ না খেয়ে ফল খেয়ে থাকতে পরলে শরীর সুস্থ থাকবে।

সুতরাং শারীরিক সৌন্দর্য এবং ফিটনেস, এই দুইয়ের জন্যই গ্রিন ডায়েট অপরিহার্য। চিরসবুজ থাকুন গ্রিন ডায়েট-এ।

ডায়াবেটিস ও কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ

হৃদরোগের প্রসঙ্গ তুলতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করলেন ডা. শুভানন রায়। বিয়াল্লিশ বছর বয়সি এক ব্যক্তি বুকে সামান্য ব্যথা নিয়ে একজন কার্ডিয়োলজিস্ট-এর চেম্বার-এ যান। ওই চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে যা জানান, তাতে মর্মাহত হয়ে পড়েন রোগী। আসলে, রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। আর ধমনিতে ছিল ব্লকেজ। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই রোগীকে আবার পরীক্ষা করা হয়। আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষার পর দেখা যায়, ওই রোগীর কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ ছাড়াও রয়েছে দুই ধরনের ডায়াবেটিস।

অ্যাঞ্জিওগ্রাফির পর আরও জানা যায় যে, অধিকাংশ ধমনিগুলি বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। ওই অবস্থায় একমাত্র আশার আলো দেখায় রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি অর্থাৎ ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ডিইএস) চিকিৎসা। করোনারি আর্টারি ডিজিজ-এ (সিএডি) আক্রান্ত রুগি, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য এই চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী। আর এই পদ্ধতিতে ওই বিয়াল্লিশ বছর বয়সি রোগীর চিকিৎসা করে ফলও পাওয়া গিয়েছে।

বর্তমানে গোটা বিশ্বে কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এর কারণে মৃত্যু ঘটছে অনেকের। অত্যধিক মাত্রায় ধূমপান, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্ত উপসর্গগুলিকে হৃদরোগের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। আর কার্ডিও ভাস্কুলার রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগ যুক্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্ত রুগিদের দুই তৃতীয়াংশ মারা যান ডায়াবেটিস থাকার দরুন। ডায়াবেটিক হৃদরোগীদের  রোগের মাত্রা দুই থেকে চারগুণ বেড়ে যায় সাধারণ হৃদরোগীদের তুলনায়। প্রায় ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী হৃদরোগ এবং স্ট্রোক-এ মারা যান। এরকম হওয়ার কারণ, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় শর্করার উপস্থিতি। এছাড়া অস্বাভাবিক মাত্রায় কোলেস্টেরল ও ফ্যাট থাকার কারণে রোগীদের রক্ত সংবহন পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত মানুষের বিশেষ ভাবে প্রয়োজন ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ওষুধযুক্ত এই স্টেন্ট রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না)। এটি হল রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি, যা প্রথম এবং একমাত্র অনুমোদিত এলুটিং স্টেন্ট। এরই মাধ্যমে ডায়াবেটিক কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়।

কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পর্কে এখনও অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাছাড়া সাধারণ মানুষ অনেকসময় রোগের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না কিংবা বুঝতে ভুল করেন। অথচ ডায়াবেটিস হল একটি গুরুতর অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলেও আপাতভাবে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। বাইরে থেকে এই রোগের লক্ষণও সবসময় প্রকাশ পায় না। অথচ এই রোগ ভিতরে-ভিতরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের লিভার, কিডনি, চোখ ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমশ নষ্ট হতে শুরু করে।

এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগীদের ভিন্ন ধরনের হার্ট অ্যানাটমি দেখা যায়। তাদের রক্তবাহী নালিগুলি ছোটো এবং ভঙ্গুর হয়ে থাকে। ধীরে-ধীরে এগুলির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় চিকিৎসা। সেই কারণে বলা যেতে পারে যে, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হলে, শরীরে অন্য রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে।

এভাবেই ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, এই দুই জুড়িদার, মৃত্যুদূত হিসাবে উপস্থিত হয় রোগীর সামনে। তাই, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ-এর সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে ধমনির ব্লকেজ দ্রুত দূর করার জন্য অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা প্রয়োজন।

রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি পদ্ধতি এই চিকিৎসায় অন্যতম শক্তিশালী ব্যবস্থা। ডায়াবেটিক কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ডিইএস) চিকিৎসা পদ্ধতি ইউএসএ-র ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা অনুমোদিত। এই রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি নানাভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে। যেমন, এটি খুব সরু ধমনির মধ্যে, যেখানে চিকিৎসার প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে কাজ করে। তাছাড়া এর বায়োকম্প্যাটিবল বায়োলিংক্স পলিমার, রোগীদের দেহে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। অতএব, ডায়াবেটিক কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের অমূল্য জীবনকে রক্ষা করার জন্য, মাধ্যম করা উচিত ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট বা ডিইএস-কে।

বেরিয়াট্রিক সার্জারি এবং মাতৃত্বলাভ

ওবেসিটি আসলে লাইফস্টাইল ডিজিজ। হাই ক্যালোরি ইনটেক এবং ক্যালোরি এক্সপেনডিচার-এ যদি ভারসাম্য না থাকে, তাহলেই এই সমস্যা হয়। ফাস্ট ফুড, সেড্যানটরি (অলস) লাইফস্টাইল, ল্যাক অফ এক্সারসাইজ, জেনেটিক এবং কিছু হরমোনাল ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ওবেসিটির ক্ষেত্রে।শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করা ছাড়াও, নানারকম অসুখের যেমন জন্ম দেয় মেদবহুল অথবা স্থূলকায় চেহারা, ঠিক তেমনই মাতৃত্বলাভের ক্ষেত্রেও প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ওবেসিটি। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশিষ্ট বেরিয়াট্রিক সার্জন ডা. ওম তাঁতিয়া-র কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন সম্প্রতি।

ওবেসিটি মাপা হয় কীভাবে? অর্থাৎ কতটা মোটা হলে সমস্যা হতে পারে ধরে নেওয়া হবে?

হাইট এবং ওয়েট-এর রেশিয়ো-কে বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স বলা হয়। এই বিএমআই-এর পরিমাণ থেকেই ওবেসিটির সমস্যা আছে কিনা বোঝা যায়। কারও বিএমআই যদি ১৮ থেকে ২২.৫ হয়, তাহলে নর্ম্যাল। যদি ২২.৫ থেকে ২৭.৫ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওভারওয়েট। কিন্তু যদি ২৭.৫-এর বেশি হয়, তাহলে ওবেসিটির সমস্যা ধরে নিতে হবে।

ওবেসিটির সমস্যা দূর করতে লাইপোসাকশন না করে, বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা হবে কেন?

লাইপোসাকশন একটা কসমেটিক সার্জারি। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বডি স্কাল্পটিং সার্জারি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে স্কিন-এর নীচের অতিরিক্ত ফ্যাট সাক করে বাদ দেওয়া হয়। কোমর, পেট এবং থাই-এর শেপ ঠিক রাখার জন্য সাধারণত লাইপোসাকশন করা হয়। কিন্তু বেরিয়াট্রিক সার্জারি-তে পাকস্থলির উপর অপারেশন করে ওজন কমানোর চেষ্টা করা হয়। এই অপারেশন-এ পাকস্থলিকে কেটে ছোটো করা হয়, যাতে রোগীর ওজন কমে যায়। সেইসঙ্গে, ডায়াবেটিস, প্রেসার ও অন্যান্য নানারকম অসুখের হাত থেকে অনেকটা রেহাইও পান রোগী।

ধরুন, কোনও মহিলা অতিরিক্ত ওজনের জন্য মা হতে পারছেন না, বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র পর কি তিনি মা হতে পারবেন?

বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র পর মা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অবশ্য সেই মহিলার যদি ইনফার্টিলিটির অন্য কোনও সমস্যা না থাকে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বেরিয়াট্রিক সার্জারি করার দেড় থেকে দুই বছর পর সন্তান নেওয়া উচিত।

কারও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন না হয়ে যদি বেশি হয় এবং সেই ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং তার ইউরিক অ্যাসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড যদি বেশি থাকে, তাহলে তিনি কি বেরিয়াট্রিক সার্জারি করিয়ে কোনও উপকার পাবেন?

ডায়াবেটিস থাকলে কিংবা ইউরিক অ্যাসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলেও বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা যায় এবং উপকার পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত আহারের জন্য কারও যদি ওজন বেশি হয় এবং তিনি যদি বেরিয়াট্রিক সার্জারি করান, তাহলে সার্জারি-র পরেও কি তিনি আগের মতো খাদ্যাভাস চালু রাখতে পারবেন?

দেখুন, বেরিয়াট্রিক সার্জারি ওবেসিটি-র সমস্যা দূর করে ঠিকই কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। অতএব সার্জারি-র পর সবকিছু খাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু পরিমাণ কমাতে হবে।

ভারী চেহারার লোকেদের মধ্যে অনেকেই বলেন, গাড়ি চালানোর সময়ও তাদের ঘুম পায়। এক্ষেত্রেও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব?

যাদের বডি ওয়েট স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ, সাধারণত তারাই এই সমস্যায় (ঘুম পাওয়া) ভোগেন। এই সমস্যাকে বলা হয় ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনোইয়া’। বেরিয়াট্রিক সার্জারি এই সমস্যার সমাধান করে এবং অনেকবেশি এনারজেটিক করে তোলে।

দীর্ঘ দশ বছর ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এবং ওবেসিটির সমস্যাও আছে, এমন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র সাহায্য নিতে পারেন?

ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার এবং প্রৌঢ়ত্ব, এসব বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র ক্ষেত্রে কোনও বাধা নয়।

যদি কেউ মানসিক অবসাদে ভোগেন, নিয়মিত মদ্যপান করেন এবং যদি তার ওবেসিটির সমস্যা থাকে, তাহলে তিনিও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে সত্যিটা জানিয়ে রাখছি, যদি মদ্যপান বন্ধ না করা হয়, তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরও কোনও সুফল পাওয়া যাবে না। অতএব, প্রফেশনাল হেল্প নিয়ে আগে মদ ছাড়িয়ে, তারপর রোগীর বেরিয়াট্রিক সার্জারির কথা ভাবা উচিত।

অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেক মহিলার পিরিয়ড-এর সমস্যা হয়। কী করা উচিত তাদের?

প্রথমে, ‘ভিগরস ওয়েট থেরাপি’-র সাহায্য নেওয়া উচিত। তারপরও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা যেতে পারে।

ওবেসিটি সমস্যার সমাধানে বেরিয়াট্রিক সার্জারি-ই কি একমাত্র মাধ্যম?

আমরা প্রথমে ডাইরেক্টলি ওয়েট কন্ট্রোল-এর পরামর্শ দিই। অর্থাৎ, যদি এক্সারসাইজ করে কিংবা ওষুধে ওজন কমানো যায়, তাহলে সার্জারি-র পথে যাই না। কিন্তু যদি স্বাভাবিক ওজনের দ্বিগুণ ওজন হয় এবং তা ডাইরেক্টলি কন্ট্রোল করা সম্ভব না হয়, তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারি করিয়ে নেওয়াই ভালো।

বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর কোনও সাইড এফেক্ট হতে পারে কি?

সত্যি বলতে কি, অন্যান্য সার্জারি-র মতো বেরিয়াট্রিক সার্জারি-র পরেও কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে। তবে তার সম্ভাবনা খুবই কম, মাত্র দুই শতাংশ। লং টার্ম সাইড এফেক্ট-এর মধ্যে হতে পারে নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি। তবে তা ওষুধ দিয়ে ঠিক করা সম্ভব। তাই এককথায় জানাচ্ছিঃ বেরিয়াট্রিক সার্জারি খুবই নিরাপদ।

সন্তানধারণে আইভিএফ

প্রমিতা কাঞ্জিলাল হাই স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের টিচার। স্বামী কুণাল সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এককথায় দুজনে শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন মানুষ। জীবনে স্বচ্ছলতার অভাব নেই। অভাব শুধু দুটি কচি হাতের আদরের। বিয়ের পাঁচ বছর বাদেও ওরা কেউ ‘মা-বাবা’ ডাক শুনতে পায়নি। আত্মীয় পরিজনেরা যে যেমন বলেছে, তেমনটি করেছে। ডাক্তার, বৈদ্য, ঠাকুর-পিরবাবা কিছুই বাদ যায়নি। নিজেরা তাবিজ মাদুলিতে বিশ্বাস না করলেও গুরুজনদের মুখ চেয়ে সব কিছু চুপচাপ মেনে নিতে হয়েছে। যদিও প্রমিতা-কুণাল দুজনে ফ্ল্যাটে থাকে তবুও কোনও এক সংস্কার কাজ করছে।

তাই প্রমিতা খুলতে পারেনি মাদুলি। ‘মা’ হওয়ার আকাঙক্ষায় মেয়েরা বোধহয় সবকিছুতেই বিশ্বাস রাখে। প্রমিতারা দু’জনে যা যা প্রয়োজন সব পরীক্ষা করিয়েছিল, সব কিছুর রিপোর্ট নর্মাল। তবু ওই অসম্পূর্ণতা। শেষে সবকিছু ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে প্রমিতা-কুণাল।

এটা একটা ঘটনা মাত্র। অনেক দম্পতি আছে যাদের ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমনভাবে কোনও শারীরিক ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়েনি, তবু তাদের কোল জুড়ে কোনও শিশু আসেনি। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আজ আইভিএফ অর্থাৎ ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন-এর সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে সন্তানোৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে এটা একটা বড়ো আশীর্বাদ।

কে না চায় সন্তান সুখ

যে-কোনও মানুষের দুর্বলতম স্থান হচ্ছে নিজের সন্তান। বড়ো বড়ো রাজা, উজিরের যে অনুভূতি, সেই একই অনুভূতি সাধারণ মানুষ তথা ভিখারিরও নিজের সন্তানের জন্য। সন্তানের জন্য মা-বাবা করতে পারে না হেন কাজ নেই। যারা নিঃসন্তান দম্পতি তারা সন্তানকামনায় কী না করে। পুরাকালে অযোধ্যার রাজা দশরথ পুত্রলাভের জন্য যজ্ঞ করেন। এ কাহিনি প্রায় সকলেই জানে। আমাদের বাঙালিদের বারো মাসের ব্রতকথায়ও সন্তান কামনায় অনেক বার-ব্রতর প্রচলন আছে। ঈশ্বরী পাটনির বিখ্যাত উক্তি ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। যার সন্তান নেই সেও কামনা করে সন্তানের সাফল্য।

আজকের মেডিকেল সায়েন্স জানাচ্ছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে  ৬ জন মানুষ সন্তানহীনতার শিকার হয়। আরও জানা গেছে প্রতি ৮ জনের মধ্যে এক দম্পতি পরিবার দু’বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ করতেই পারে না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ৭৫ শতাংশ দম্পতি বিবাহের একবছরের ভিতরে সন্তানের জন্ম দিচ্ছে।

নিঃসন্তান হওয়ার কারণ

আজকের আধুনিক লাইফস্টাইল, কিংবা প্রদূষণঃ সব কিছুরই প্রভাব পড়ছে শরীরের উপর। চাপা টেনশন, পরিবেশে কিংবা নিদ্রাহীনতার ফলে ধীরে ধীরে মানব শরীরের ক্ষমতা অনেক কমে যাচ্ছে, ফলে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের সমস্যা। আমাদের খাদ্যাভ্যাস শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের মূল কারণ। ফাস্ট ফুড, জাংকফুড, শরীরের প্রত্যঙ্গগুলোকে করে তুলছে দুর্বল। ফলস্বরূপ জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। দূষণের কারণে দুই শতাংশ মানুষ হচ্ছে নপুংসক।  তাছাড়া সুস্থ সবল সন্তান ধারণ না করতে পারলে জীবনটাই বৃথা। তাই কৃত্রিম উপায়ে সন্তানধারণের জন্য আইভিএফ এখন প্রচলিত উপায়।

কৃত্রিম উপায়ে সন্তানধারণ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া পদ্ধতি এখনও সকল মানুষের কাছে খুব স্বচ্ছ নয়। নিঃসন্তান দম্পতিদের সকলের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকরী না হতেও পারে। ৩০-৪০ শতাংশ মানুষের জন্য এই প্রক্রিয়া কার্যকরী। আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানধারণ কিছুটা খরচসাপেক্ষও বটে। তবে সন্তানলাভের আশায় দম্পতি এবং তার পরিবার অর্থব্যয় করতে কার্পণ্য করে না।

আজ দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতার মতন বড়ো শহরেই নয়, গাজিয়াবাদ, লুধিয়ানার মতন ছোটো শহরেও আইভিএফ সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন এইসব সেন্টারে কৃত্রিম উপায়ে সন্তানলাভের আশায় নিজেদের পরীক্ষানিরীক্ষা করানোর জন্য আসেন বহু নিঃসন্তান দম্পতি।

না জানার বিপত্তি

আইভিএফ পদ্ধতিটা কীধরনের তার সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। মানুষ সন্তানের আশায় ছোটে। কিন্তু ব্যাপারটা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল না হয়ে, ফলস্বরূপ সেন্টারগুলো নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেন্টারগুলোতে যে-হারে ভিড় হচ্ছে, সেখানে অবিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না।

শারীরিক ত্রুটি বিচ্যুতি, মহিলা কিংবা পুরুষের শরীরে কী ধরনের, তার উপর নির্ভর করে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা। সচারচর মহিলাদের মধ্যে যে-ধরনের সমস্যা দেখা যায় তা হল –

১)  ফ্যালোপিয়ান টিউবে কোনও সমস্যা

২) ওভারিতে সিস্ট

৩) হর্মোনাল ডিসব্যালেন্স

৪) নিষিক্ত ডিম্বাণু পরিণত না হওয়া

এছাড়াও ১০ শতাংশ মানুষের অজ্ঞাত কারণে সন্তান লাভ হয় না। মেডিকেল টেস্টে সব ঠিক থাকলেও সন্তানধারণ করতে সক্ষম হন না বেশ কিছু মহিলা। শুক্রাণু ঠিকমতো নিষিক্ত হলেও তিন-চার মাস পর্যন্ত গর্ভধারণ করার পর অজানা কারণে অনেক মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায়। বারংবার এধরনের ঘটনা মহিলাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। কিছু কিছু পুরুষ শরীরে শুক্রাণুর পরিমাণ কম থাকে। এটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবু সন্তানের আশায় ঠিক কবে থেকে আইভিএফে চিকিৎসা করানো উচিত তা বুঝতে বুঝতে কখনও বা অনেক দেরি হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী মোটামুটি এক-দেড় বছর অপেক্ষা করে মা-বাবা হতে চায়। আবার কেরিয়ারিস্ট দম্পতিরা পাঁচ-ছয় বছরের প্ল্যানিং নিয়েও চলেন।

এ  আইভিএফ বিশেষজ্ঞ

বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এক-দুই-তিনবার এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা উচিত মহিলাদের শরীরে নচেৎ অন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ সার্জন আশ্বাস দেন সময় ও অর্থব্যয় না করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে এক মাতৃহৃদয়ের শূন্য হাহাকারে বিশেষজ্ঞরাও পিছপা হন না চতুর্থবার চেষ্টা করার জন্য।

এই আইভিএফ শুধুমাত্র একজন বিশেষজ্ঞের কাজ নয়। এটি একটি টিমওয়ার্ক। একজন গাইনিকোলজিস্ট, একজন এমব্রয়োলজিস্ট, একজন হর্মোন বিশেষজ্ঞ, একজন আল্ট্রাসাউন্ড বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। সর্বোপরি সার্জন তো আছেই। জটিলতা দেখা দিলে তবেই সার্জনের প্রয়োজন। মহিলাদের শারীরিক জটিলতার তুলনায় পুরুষদের জটিলতা অনেক বেশি। শুনতে অবাক লাগলেও পুরুষরা চট করে নিজেদের পরীক্ষা করাতে আসতে সংকোচ বোধ করে। স্বাভাবিক ভাবে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলেও, পুরুষরা প্রথমে স্ত্রীদের এগিয়ে দেন পরীক্ষা করার দিকে।

খরচ সাপেক্ষ

আইভিএফ পদ্ধতি যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। যখন দম্পতিরা ওষুধ, অপারেশন সব ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করেও হতাশ তখন আইভিএফ-এর দিকে ঝোঁকে। মোটামুটি খরচ লক্ষাধিক। ১৯৭৮ সালে লন্ডনে প্রথম আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ভূমিষ্ট হয়। ১৯৯৮ সালে অর্থাৎ কুড়ি বছর বাদে দিল্লিতে প্রথম আইভিএফ-আইসিএসআই শিশুর জন্ম হয়। আশার কথা এই যে, ভারতের মাটিতে এই পদ্ধতির খরচ লক্ষাধিক হলেও ইউএস কিংবা ইউকে-র থেকে অনেক কম। তাই, বিদেশি দম্পতিরা ভারতে আসছেন, রিপ্রোডাকটিভ টুরিজিমের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। বিদেশে আইভিএফ পদ্ধতি প্রয়োগে বিশেষজ্ঞের পারিশ্রমিক অনেক বেশি। সে তুলনায় এদেশে ডাক্তার-বিশেষজ্ঞের পারিশ্রমিক অনেক কম। নিজের উত্তরাধিকারের জন্য দম্পতিরা স্বাগত জানিয়েছেন ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিকে।

মনের চাপে মধুমেহ

বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেকেই কমবেশি নানারকম সমস্যায় জর্জরিত। তাই বাড়ছে ডিপ্রেশন। তাছাড়া, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ঢুকে পড়েছে হটডগ, চাউমিন ইত্যাদি ফাস্ট ফুড। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে টিভি, কম্পিউটারের মতো যন্ত্রের প্রভাব। অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা, দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে টিভি দেখে, কম্পিউটারে গেম খেলে ও ফাস্ট ফুড খেয়ে। ফলে, বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাইকেই ডায়াবেটিসের সমস্যা সহ্য করতে হচ্ছে। তবে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, লখনউ প্রভৃতি শহরের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় এই অসুখের প্রভাব কম।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশেই এই অসুখের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৬ কোটির বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকলে এটা ঘটা স্বাভাবিক।

ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে, যে-খাবারই হোক, সবেতেই কিছু না কিছু খাদ্যগুণ থাকে, যাতে শরীরের পুষ্টি মেলে। পশ্চিমবঙ্গে প্রাত্যহিকভাবে করলা, নিমপাতা থেকে শুরু করে নানান ধরনের শাক অর্থাৎ পাতাযুক্ত তরিতরকারি খাদ্যতালিকায় থাকে। কিন্তু আজকাল এখানেও ফাস্ট ফুড অর্থাৎ বাড়ির বাইরের খাদ্য গ্রহণ করার প্রচলন খুব বেড়ে গেছে। চিকিৎসকরা তাই শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে খুবই চিন্তিত।

মানসিক চাপ

মা-বাবার মাধ্যমে শুরু হওয়া র‍্যাটরেস, বাচ্চাদের ক্ষতি করে চলেছে। তাদের উপর পড়াশোনার চাপ এতটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাদের শৈশব নষ্ট হয়ে গেছে। বইখাতা যেন তাদের জীবনে এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তারের মতে, এই মানসিক চাপেই শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ দেখা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শুধু কলকাতায় নয়, সব বড়ো শহরেই কংক্রিট-এর জঙ্গল বাড়ছে ও সবুজ কমছে। অনেক এলাকায় ফাঁকা মাঠময়দানের অভাব রয়েছে। ফুটবলের রাজধানী কলকাতাতেও, ছোটোদের দেখা যায় রাস্তা ও অলিগলিতে ক্রিকেট খেলতে। ছুটির দিনগুলোতে, বন্ধের দিনে এই ধরনের খেলা বেশি হয়। পার্কের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। তাই শিশুদের খেলার জায়গা খুবই কম। এছাড়া টিভি, কম্পিউটার গেম্স ইত্যাদির জন্য তারা আরও অলস হয়ে গেছে। বডি মুভমেন্ট শিশুদের সুস্থতার একটি বড়ো কারণ। অথচ আজকাল তার সুযোগ কমে গেছে। এরফলেই বাচ্চাদের মধ্যেও ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

ডা. শুভংকর চৌধুরীর মতে, ডায়াবেটিস প্রধানত টাইপ-১ ও টাইপ-২ ধরনের হয়ে থাকে। ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, কম খেলাধুলো ও অত্যধিক মনের চাপ এনে দেয় টাইপ-২ ধরনের ডায়াবেটিস। এই রোগের শিকার যারা হচ্ছেন, যাদের বয়স কম, তাদের ৬০ শতাংশই টাইপ-২-এর রোগী।

অবস্থাটা এবার এমন হয়েছে যে, টাইপ-১-এর রোগীদের বিয়েটাই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য সমস্যাটা গুরুতর। এই অসুখ সম্বন্ধে সচেতনতা না থাকায়, এটাকে একটা অভিশাপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই ধরনের রোগীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধে বেশিরভাগ মানুষই রাজি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কেবল পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশেই। সম্প্রতি দিল্লিতে ডায়াবেটিস রিসার্চ সেন্টার থেকে এক সমীক্ষা করা হয়েছে। সমীক্ষার বিষয় ছিল, ‘ম্যাট্রিমোনিয়াল অ্যান্ড স্যোশাল প্রবলেম্স ফেস্ড বাই টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিক ইন ইন্ডিয়া’। সেখানে সেন্টারের অধ্যক্ষ ডা. অশোক ঝিংগন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, টাইপ-১-এর বেশিরভাগ রোগী বিয়ে করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ আমাদের সমাজ এবিষয়ে সচেতন নয় যে, ডায়াবেটিস রোগ থাকা বাবা বা মায়ের সন্তান স্বাভাবিক ও সুস্থই হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস একটি মারক রোগ নয়। বস্তুত এনিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। সাধারণভাবে অবশ্য চিকিৎসকরা এর বিরোধী মতই প্রকাশ করে থাকেন। নামকরা সার্জন ডা. অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, আজকাল সুস্থ দম্পতিদের শিশু সন্তানের অনেকসময়ই ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। কিন্তু বাবা বা মা যে-কোনও একজন যদি বিয়ের আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে তাঁদের সন্তানের এই রোগের শিকার হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ১০০ ভাগ হয়ে যায়। ডায়াবেটিস একটি জিনগঠিত অসুখ।

আবার ডা. অভিজিৎ তরফদারের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। তিনি জানালেন, ‘বংশগত কারণে ডায়াবেটিস হতেও পারে আবার নাও পারে। দেখা গেছে বাবা কিংবা মায়ের এই রোগ রয়েছে কিন্তু তারা যদি সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভাসে সচেতন না হন, তাহলে সন্তান ডায়াবেটিক হয়েই জন্মাবে।

আসলে এই রোগের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই রোগীদের নিয়মিতভাবে ইনসুলিন নিতে হয়। সেইসঙ্গে নিয়মিতভাবে ব্লাডসুগারের মাত্রাও পরীক্ষা করাতে হয়। এই মাত্রা সঠিক থাকলে সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না। রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে এখনও পর্যন্ত, পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস টাইপ-১-এর রোগীদের মধ্যে মাত্র ৭.৫ শতাংশ দাম্পত্য জীবনে সুখী। ৯২.৫ শতাংশের মধ্যে কোনও না কোনও বিবাহোত্তর সমস্যা পাওয়া গেছে। সামাজিকভাবে এটা খুবই নিরাশাজনক।

দরকার শারীরিক পরিশ্রম

ডা. আশিষ বসু জানান, ‘অতীতে তাঁর বিভাগের রোগীদের মধ্যে মাত্র ৬-১০ শতাংশ শিশু থাকত। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। উত্তরোত্তর এই বৃদ্ধি হয়েই চলেছে। আজকাল শিশুরা টিভি ও কম্পিউটারের সামনে সময় কাটানোর ফলে, তাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে ঠিকই কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম একদমই হয় না। এছাড়া আজকের জীবনযাত্রায় তাদের উপর প্রচুর মানসিক চাপ পড়ছে। এই জন্য তারা ডায়াবেটিক হয়ে পড়ছে। ইদানীং সদ্যজাত শিশুদেরও ডায়াবেটিক হতে দেখা যাচ্ছে। ডায়াবেটিক গর্ভবতী মহিলাদের থেকে তাদের শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভকালীনই মহিলারা ডায়াবেটিস-এর শিকার হয়ে পড়েন।

এই আলোচনায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, চোখ বুজে পশ্চিমি জীবনযাত্রা পালন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এবিষয়ে আরও সজাগ হওয়া উচিত।

সতর্কতা

  • ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হলে কিডনি, হার্ট, নার্ভাস সিস্টেম প্রভৃতির উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। তাছাড়া একবার ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমেও পুরোপুরি সমস্যামুক্ত হওয়া যায় না। তাই বর্জন করতে হবে ফাস্ট ফুড। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে হবে এবং শরীরচর্চাও করতে হবে নিয়মিত। সেইসঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে মাঝেমধ্যে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধও সেবন করে যেতে হবে।
  • ভিটামিন বি, সি, ই এবং ডি-যুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি পরিমাণে। সেইসঙ্গে ফাইবারজাতীয় খাবারও রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে এমন খাবার বন্ধ করতে হবে।
  • ডায়াবেটিস-এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করা চাই প্রতিদিন।
  • ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে এমন শাক-সবজি খেতে হবে নিয়মিত।
  • বডি ওয়েট স্বাভাবিক রাখুন এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

বন্ধ্যাত্বের বড়ো কারণ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হল একটি শারীরিক অসুখ, যাতে একজন মহিলার ঋতুচক্র, গর্ভধারণ ক্ষমতা, হরমোন এবং তাঁর বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করে। এর দরুন পরবর্তীকালে আরও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রাণী লোধ এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন সম্প্রতি।

পলিসিস্টিক ওভারি কী?

পলিসিস্টিক ওভারি সাধারণ ওভারি অর্থাৎ ডিম্বাশয়ের থেকে আকারে সামান্য বড়ো হয় এবং এর মধ্যে ফলিকল্ বা ছোটো সিস্ট সংখ্যায় দ্বিগুন থাকে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণ কী কী?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণগুলি হলঃ

  •  অনিয়মিত ঋতুচক্র বা ঋতু একেবারেই না হওয়া
  • গর্ভধারণে সমস্যা (গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া)
  • মুখে বা শরীরে সাধারণের তুলনায় বেশি রোম দেখা দেওয়া
  • মাথার চুল পড়ে যাওয়া
  • দ্রুতহারে অত্যধিক ওজন বেড়ে যাওয়া এবং ওজন সহজে না কমা
  • ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া ও অ্যাকনের সমস্যা দেখা দেওয়া
  • ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপ ও ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন অনুভব করা

প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি একইরকম ভাবে প্রকাশ পায় না। কারও ক্ষেত্রে কম আবার কারও ক্ষেত্রে খুব বেশি দেখা দেয়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের একটি বড়ো কারণ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। ঋতু না হলেও সন্তানধারণ করা সম্ভব। যদি সন্তানধারণে বিলম্ব দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হয় কেন?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয় এর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। যদি পরিবারে আগেও অন্য কারও (মা, দিদি বা মাসি) এই রোগ হয়ে থাকে, তাহলে এর সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণগুলি হরমোনের মাত্রায় অস্বাভাবিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হরমোন শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ওভারি থেকে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন নির্গত হয়। যে সমস্ত মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর সমস্যা থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই হরমোনটির মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দেখা যায় এবং এই রোগটির বেশিরভাগ লক্ষণই এই হরমোনটির কারণে হয়ে থাকে।

ইনসুলিন নামক হরমোনটি রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে এই ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এই অবস্থাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এক্ষেত্রে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। বর্ধিত গ্লুকোজের মোকাবিলা করার জন্য আরও বেশি করে ইনসুলিন নির্গত হয়। আর ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত ঋতুচক্র, বন্ধ্যাত্ব এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রায় বৃদ্ধি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর ডায়াগনোসিস বা নির্ধারণ কীভাবে করা হয়?

এই অসুখ নির্ধারণ করতে কখনও কখনও সময় বেশি লাগে।

  •   অনিয়মিত বা বিলম্বিত বা একেবারেই না হওয়া ঋতুচক্র
  •   মুখে বা শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রোম এবং রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রায় আধিক্য।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কারণে ইনসুলিন রেজিসট্যান্স এবং ডায়াবেটিস-এর ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলে?

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে ১-৩ জনের (২০ শতাংশ) কখনও না কখনও ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এর থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে, বয়স ৪০-এর বেশি হলে, বংশানুক্রমিক কারণে এবং গর্ভধারণের সময় ডায়বেটিস হয়ে থাকলে ওবেসিটির কারণে।

হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্ত চাপের প্রবণতা থাকে কি?

যে সমস্ত মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম রয়েছে, তাদের হাই ব্লাড প্রেশারের প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর থেকেও বরং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং অতিরিক্ত ওজন বা ওবিসিটি হতে পারে। হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই এর সঠিক সময়ে চিকিৎসা হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

পরবর্তীকালে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে কি?

ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে পরবর্তীকালে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, শুধুমাত্র পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর কারণে হার্টের অসুখ বা তার দরুণ মৃত্যু হয়, এমন কোনও প্রমাণ নেই।

ক্যানসার-এর আশঙ্কা থাকে কি?

যাঁদের খুব কম ঋতু (বছরে ৩ বার বা তার কম) হয়, তাঁদের এন্ডোমেট্রিয়াম (গর্ভাধানের ভিতরের লাইনিং বা স্তর) পুরু হয়ে গিয়ে এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও খুব কম সংখ্যক মহিলার ক্ষেত্রে এমন হতে দেখা যায়। প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের ব্যবহারে এই সম্ভাবনা কম করা যায়। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসক, এ সম্পর্কে আপনার সঙ্গে সবিস্তারে আলোচনা করবেন। আপনাকে প্রতি ৩-৪ মাসে প্রোজেস্টেরন ট্যাবলেটের একটি ৫ দিনের কোর্স করতে হতে পারে। এতে আপনাকে কনট্রাসেপটিভ (গর্ভনিরোধক) ট্যাবলেট খেতে হতে পারে বা (ইন্ট্রটেরিন কনট্রাসেপটিভ সিস্টেম) অভ্যন্তরীণ গর্ভনিরোধকের ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। এই বিকল্পগুলি তখনই বিবেচনা করা হয়, যখন কেউ মা হওয়ার পরিকল্পনা করেন।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আপনার ব্রেস্ট, সারভাইক্যাল ও ওভারিয়ান ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায় না।

ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপ কিংবা ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে কি?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর একটি উপসর্গ হল আপনি নিজের সম্বন্ধে হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন বা আপনার আশেপাশের মানুষের কথার অযথা ভুল ব্যাখ্যা করে মেজাজ হারাতে পারেন।

স্নোরিং বা নাক ডাকা এবং দিনের বেলাতেও ঘুম ঘুম ভাবের সমস্যা হতে পারে কি?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর জন্য দিনের বেলাতেও ক্লান্তিবোধ ও ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে এবং ঘুমিয়ে নাক ডাকার প্রবণতা দেখা দেয়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর চিকিৎসা কী?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর কোনও চিকিৎসা হয় না। এর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলিকে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে শুধুমাত্র ওষুধেই কাজ হবে না। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অর্থাৎ ওজন কমানো এবং ব্যায়াম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

যে-কোনও রোগের হাত থেকে বাঁচার সবথেকে বড়ো উপায়ঃ

  • স্বাস্থ্যকর, সুষম আহার গ্রহণ করুন, আপনার খাদ্য-তালিকায় ফল, সবজি, সম্পূর্ণ আহার যেমন,  ব্রাউন ব্রেড, ওট বা ব্রাউন রাইস, মাছ, মুরগি ইত্যাদি রাখুন। চিনি, নুন, কফি ইত্যাদির পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলুন।
  • সময়মতো খাবার খান, বিশেষ করে ব্রেকফাস্ট কখনওই বাদ দেবেন না।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন (সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন আধ ঘণ্টা করে)।
  • প্রয়োজনে সুষম খাদ্য-তালিকা তৈরি করতে কোনও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
  • লক্ষ্য রাখুন যাতে ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে, বিএমআই (উচ্চতার অনুপাতে ওজনের হিসাব) ১৯-২৫-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।

ওজন কমানোর উপকারিতাঃ

  • ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমে
  • হার্টের অসুখের আশঙ্কা কমে
  • গর্ভাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কা কমে
  • নিয়মিত ও স্বাভাবিক ঋতুচক্র
  • সন্তানধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি
  • সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকনে ও অবাঞ্ছিত রোমের হাত থেকে অনেকাংশে রেহাই
  • অযথা মেজাজ হারানোর সমস্যা কমে ও আত্মসম্মান বোধ ফিরে আসে

নিয়মিত হেলথ চেক-আপঃ

যে সমস্ত মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আছে এবং ৪০-এর উপর বয়স, তাঁদের বছরে একবার সুগার টেস্ট করানো আবশ্যক যাতে ডায়াবেটিস এড়ানো যায়। যদি আপনি ওবেস হন এবং আপনার পরিবারে অন্য কারও ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তাহলে আপনাকে ৪০-এর আগেই সুগার টেস্ট করাবার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

যদি আপনার ৪ মাস বা তার বেশি সময় যাবৎ ঋতু না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। আপনাকে অন্যান্য টেস্টের সঙ্গে আল্ট্রা সাউন্ড স্ক্যান করাতে বলা হতে পারে।

আপনার চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন যে কত দিন অন্তর আপনার ব্লাড প্রেশার পরীক্ষা করানো উচিত এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা জানার জন্য আপনার রক্ত পরীক্ষা করাবার প্রয়োজন আছে কি না?

রোগ সারাতে যোগ পর্ব-৪

প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।

তারাসন

পদ্ধতি : মসৃণ জায়গায় একটি Yoga-Mat বা মোটা চাদর পাতুন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুটি পায়ের মাঝখানে ছয় ইঞ্চির দূরত্ব বজায় রাখুন। এবার হাত দুটি উপরে সোজা তুলে, দুই হাতের আটটি আঙুল (বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছাড়া) লক করুন। এরপর কোমর থেকে হাত পর্যন্ত শরীরের অংশ যতটা সম্ভব হেলিয়ে একবার বাম দিকে, একবার ডান দিকে নিয়ে যান। এই বাম দিক এবং ডান দিক করার মাঝে, সোজা অবস্থায় দুই থেকে তিন সেকেন্ড স্টে করুন। এভাবে, উভয় দিকে অন্তত দশবার এই আসন অভ্যাস করে শবাসনে (শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। সকাল এবং বিকেল বেলায় প্রতিদিন এই আসন করলে অনেক উপকার পাবেন।

উপকারিতা : এই আসন করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। গর্ভাবস্থার প্রথম দুতিন মাস এই আসন করলে গর্ভস্থ শিশুর গ্রোথ ভালো হবে। স্নাযুসমূহ স্বাভাবিক থাকবে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। হাত, পা, বুক এবং পিঠের মাংসপেশীকে নমনীয় রাখবে। স্পন্ডিলোসিস-এর সমস্যা প্রতিরোধ করবে।

Health
Trikonasana                             Model Anusua Das

ত্রিকোণাসন

ত্রিভূজের যেমন তিনটি কোণ থাকে, এই আসনও তিনটি কোণবিশিষ্ট হয়, তাই এটিকে ত্রিকোণাসন বলা হয়। যে-কোনও জায়গায় খুব সহজেই এই আসন করা যায়। মজার বিষয় হল এই যে, আসনটির পদ্ধতি সহজ হলেও, এর থেকে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

পদ্ধতি : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। পা দুটিকে ছড়িয়ে দিন দু’দিকে। দুটি পায়ের মধ্যে অন্তত চার ফিট-এর ব্যবধান থাকা চাই। এবার বাম হাত ছোঁয়ান বাম পায়ে পাতায়, ডান হাত সোজা উপরে তুলুন। এই অবস্থায় স্টে করুন কয়েক সেকেন্ড। আবার একই ভাবে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতায় ছোঁয়ান এবং বাম হাত সোজা উপরে তুলুন। দৃষ্টি সবসময় উপরের হাতের দিকে থাকবে। আর মনে রাখবেন, নীচের দিকে যে-হাত থাকবে, তা ১৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করবে এবং উপরে যে-হাত থাকবে, তা ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি করবে। সারাদিনে দু’দফায়, দশবার করে এই যোগাসন অভ্যাস করুন।

উপকারিতা : হাত, পা, বুক, কাঁধ প্রভৃতি জায়গার মাংসপেশী নমনীয় রাখে এবং হাড় মজবুত রাখে। হজমে সাহায্য করে। দূর করে মানসিক চাপ। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে স্নাযুরোগ আটকায়।

সর্তকতা : পেট খারাপ থাকলে এই আসন করবেন না।

Health
Ushtrasana                        Model Anusua Das

উষ্ট্রাসন

এই আসনটি করার সময় শরীর উটের মতো আকার ধারণ করে বলেই, এটিকে উষ্ট্রাসন বা ক্যামেল-পোজ বলা হয়। প্রতিদিন দুবার অর্থাৎ, সকালে এবং বিকেলে এই আসন করলে বেশি উপকার পাবেন।

পদ্ধতি : প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসুন। দুই পায়ের হাঁটুর সঙ্গে দুই কাঁধ সমান্তরাল রাখুন। দুটি পায়ের পাতা মাটি ছুঁইয়ে রাখুন এবং গোড়ালি ও পায়ের তলদেশকে রাখুন আকাশমুখী। হাঁটু গাড়া অবস্থায় স্টে করুন দশ সেকেন্ড। এই L শেপ-এ থাকার পর, মাথা হেলিয়ে দিন পিছনে গোড়ালি পর্যন্ত এবং দুই হাত দিয়ে ধরুন দুই পায়ের গোড়ালি। এক্ষেত্রে আপনার মুখমণ্ডল থাকবে ঊর্ধ্বমুখী। এই উটের মতো অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকার পর, আবার ধীরে ধীরে হাঁটু গাড়া অবস্থায় L প্যাটার্ন-এ ফিরে আসুন এবং পাঁচ সেকেন্ড স্টে করার পর আসনটি পুনরায় অভ্যাস করুন। সকাল-বিকেল দু’দফায় পাঁচ বার করে করুন এই আসন।

উপকারিতা : দুই পায়ের হাঁটু এবং গোড়ালিকে মজবুত করে। উরু, নিতম্ব, কাঁধ এবং হাতের মাংসপেশীকে নমনীয় রাখে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। হজমশক্তি বাড়ায়। মেরুদণ্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। সেই সঙ্গে চোয়ালের হার শক্ত করে এই আসন।

সতর্কতা : পেটে, বুকে কিংবা পায়ে কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন করবেন না।

মডেলঃ অনুসূয়া দাস।

রোগ সারাতে যোগ পর্ব-৩

প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।

সাল্ভাসন

সাল্ভ একটি সংস্কৃত শব্দ। যার অর্থ পঙ্গপাল। তাই, সাল্ভাসন-কে ইংরেজিতে বলা হয় লোকাস্ট-পোজ। শস্যখেতে খাদ্যগ্রহণের সময় পঙ্গাপালকে যে-ভঙ্গিমায় দেখা যায়, এই আসনটি সম্পূর্ণ হলে ঠিক একইরকম দেখতে লাগে।

পদ্ধতি : উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন প্রথমে। এরপর হাত দুটিকে পেটের নীচে নিয়ে গিয়ে দুই হাতের দশটি আঙুল লক করুন। এবার পেট এবং বুকের উপর শরীরের পুরো ভার রেখে, ধীরে ধীরে মাথা এবং দুই পা উপরে তুলুন। ভঙ্গিমাটা হবে অনেকটা আধ-ফালি চাঁদের মতো। মাথার তুলনায় পায়ের অংশ একটু বেশি উপরে উঠবে। এভাবে ৩০ সেকেন্ড স্টে করার পর, আগের অবস্থায় ফিরে যান এবং কুড়ি সেকেন্ড বিশ্রাম নেওয়ার পর আসনটি পুনরায় করুন। এই আসনটি অভ্যাস করুন অন্তত পাঁচবার।

উপকারিতা : ঘাড়, মেরুদণ্ড এবং কোমরকে মজবুত করে এই আসন। স্নাযুসমূহের চাপ কমিয়ে স্বাভাবিক রাখে। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শরীরের সমস্ত মাংসপেশী নমনীয় ও মজবুত থাকে। দুটি পায়ের শক্তি বাড়ে। রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হয় এবং তারুণ্য বজায় থাকে।

সতর্কতা : মাথায় চোট থাকলে কিংবা শরীরের অন্য কোথাও সার্জারি থাকলে এই আসন করার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। আর, গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না।

Health
Shashakasana            Model Anusua Das

শশকাসন

শশক মানে খরগোশ। আর এই আসনটি খরগোশের মতো দেখতে লাগে বলে একে শশকাসন বা র‌্যাবিট-পোজ বলা হয়। দিনের যে-কোনও সময় করা যায় না এই আসন। পেটে চাপ পড়ে বলে এই আসন করতে হয় খালি পেটে। অতএব, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং বিকেলে পেট মোটামুটি যখন খালি থাকে, তখন এই আসন করলে সঠিক উপকার পাওয়া যাবে।

পদ্ধতি : হাঁটু গেড়ে বসার পর, নিতম্বকে ছোঁয়ান দুই পায়ের গোড়ালিতে। অর্থাৎ, ঊরু, নিতম্ব সবটাই বসবে দুই পায়ের হাঁটু থেকে শুরু করে গোড়ালির উপর। এবার হাত দুটিকে উপরে তুলুন এবং কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত শুইয়ে দিন সামনের দিকে। এক্ষেত্রে কপাল মাটিতে ছোঁয়ানো থাকবে এবং হাত দুটি সামনে প্রসারিত অবস্থায় আঙুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত মেঝের সংস্পর্শে থাকবে। এই অবস্থায় এক মিনিট থাকার পর সোজা হয়ে বসবেন কুড়ি সেকেন্ড এবং আসনটি পুনরায় অভ্যাস করবেন। এভাবে অন্তত পাঁচবার করুন আসনটি।

উপকারিতা : রক্ত-সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। হাঁটু, গোড়ালি, কোমর এবং মেরুদণ্ড মজবুত থাকে। থাইরয়েড-এর সমস্যা কমায়। যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু তাই নয়, এই আসনটি করলে মানসিক চাপ এবং স্নাযুরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় অনেকটাই।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলা এবং যাদের বড়ো কোনও সার্জারি আছে, তারা এই আসন করবেন না।

Health
Setubandhasana          Model Anusuya Das

সেতুবন্ধাসন

নদী কিংবা জলাশয় অতিক্রম করার জন্য যেমন সেতুর ব্যবস্থা থাকে এবং সেই সেতু যেমন দেখতে লাগে, এই আসনও ঠিক সেতুর মতো রূপ পায়। তাই, এই আসনকে সেতুবন্ধাসন বা ব্রিজ-পোজ বলা হয়। আসনটি করা একটু কঠিন কিন্তু করতে পারলে অনেক উপকার পাবেন।

পদ্ধতি : প্রথমে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দশ সেকেন্ড ওই শোয়া অবস্থায় থেকে, আসনটি করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। এবার দুই হাতের কনুইয়ের উপর ভর করে, পদতল মাটির সংস্পর্শে রেখে বাকি শরীরটাকে উপরের দিকে তুলুন ধীরে ধীরে। এক্ষেত্রে পদতল যেমন মাটিতে থাকবে, ঠিক তেমনই কপাল এবং মাথার কিছুটা অংশ মাটির সংস্পর্শে থাকবে। অর্থাৎ, উপরে তোলা দেহের ভার থাকবে দুই পা, মাথা এবং কনুইয়ের উপর। তবে, কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে আসনটি কয়েকদিন করার পর, হাত কাঁধ বরাবর তুলে, পদতল এবং মাথার উপর রাখতে হবে দেহের ভার। কারণ, এই অবস্থায় আসার পর সম্পূর্ণ হবে আসনটি।

উপকারিতা : এই আসন করলে রক্ত-সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। মাইগ্রেন-এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় অনেকটাই। ঘাড়, পিঠ, মেরুদণ্ড এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশী টানটান এবং সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। পেটে মেদ জমে না। কোষ্ঠকাঠিন্য-র সমস্যা দূর হয়। যৌনক্ষমতা বাড়ে এবং মানসিক অস্থিরতা কমে।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলাদের এই আসন করা উচিত নয়। আর শরীরের কোথাও সার্জারি থাকলে এই আসন করবেন না।

মডেলঃ অনুসূয়া দাস। 

রোগ সারাতে যোগ পর্ব-২

প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।

পদহস্তাসন

পদ অর্থে পা এবং হস্ত অর্থে হাত। অর্থাৎ, পা এবং হাতের আসনকে এককথায় বলা হয় পদহস্তাসন। ইংরেজিতে যা হ্যান্ড আন্ডার ফুট-পোজ হিসাবে পরিচিত। কম-বয়সিরা এই আসন খুব সহজে হয়তো করতে পারবে, কারণ তাদের হাড় এবং মাংসপেশী বড়োদের তুলনায় অনেক নমনীয়। তাই প্রথম দিকে যদি এই আসন করতে খুব কষ্ট হয়, তাহলে প্রাপ্তবয়স্করা ধীরে ধীরে অভ্যাস করুন এই আসন।

পদ্ধতি : সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত প্রথমে উপরে তুলে জোড় করুন। পা-দুটিও জোড়া রাখুন। এবার কোমর থেকে হাত পর্যন্ত অংশ, ধীরে ধীরে পায়ের পাতার দিকে নামান। দুই হাতের আঙুল দিয়ে প্রথমে পায়ের আঙুল ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এই ভাবে কয়েকদিন অভ্যাস করার পর, শরীরকে কিছুটা নমনীয় অবস্থায় আনুন। এরপর আরাম অনুভব করলে, দুই হাতের কবজি পর্যন্ত অংশ পায়ের পাতার নীচের অংশে ঢুকিয়ে দুই হাঁটুর মধ্যে কপাল ছোঁয়ান। এভাবে কয়েক সেকেন্ড থাকার পর, ধীরে ধীরে দাঁড়ানোর অবস্থায় ফিরে যান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হলে আবার করুন আসনটি। সকাল-বিকেল দু’দফায় পাঁচবার করে এই আসন অভ্যাস করলে সুফল পাবেন।

উপকারিতা : রক্ত-সঞ্চালন এবং স্নাযুসমূহ স্বাভাবিক থাকে। স্পন্ডিলোসিস আটকায়। কোমর এবং মেরুদণ্ড সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। মানসিক চাপ কমে। বদহজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

সতর্কতা : হার্নিয়া থাকলে এই আসন করবেন না।

Health
Padmasana                                              Model Anusua Das

পদ্মাসন

পদ্মের মতো দেখতে লাগে বলে এই আসনকে পদ্মাসন বা লোটাস-পোজ বলা হয়। খুব সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আসন। যে-কোনও আসনের পর এই আসন করা ভালো।

পদ্ধতি : প্রথমে পা ছড়িয়ে বসুন এক মিনিট। চোখ বন্ধ রেখে পদ্মাসন করার মানসিক প্রস্তুতি নিন। এবার চোখ খুলুন এবং পা দুটিকে ভাঁজ করুন। এক্ষেত্রে বাম পা ডান পায়ের থাই-এর উপর উঠবে এবং ডান পা বাম পায়ের থাই-এর উপর। অর্থাৎ, হাঁটু থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পা দুটি এমন ভাবে লক হবে, যা ইংরেজি X-এর মতো দেখতে লাগবে। এরপর দুই হাত হাঁটু বরাবর টানটান করে রাখুন। করতল ঠিক হাঁটুর উপর থাকবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তার পরের আঙুল ছুঁইয়ে রাখতে হবে। দুই হাতের বাকি আঙুলগুলি সোজা সামনের দিকে থাকবে। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত রাখতে হবে টানটান। এবার দৃষ্টি সামনে রেখে শ্বাস গ্রহণ এবং বর্জন করতে হবে। দীর্ঘ সময় নিয়ে অর্থাৎ অন্তত পাঁচ মিনিট থাকতে হবে এই আসনে।

উপকারিতা : গর্ভাবস্থায় এই আসন করলে প্রসব যন্ত্রণা লাঘব হবে এবং সন্তানের মানসিক গঠন ভালো হবে। এই আসন উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানসিক শান্তি দেয়। পায়ের হাড় নমনীয় এবং মজবুত থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, রাতে ভালো ঘুম হয় এবং সারাদিন প্রাণ চঞ্চল থাকা যায়।

সতর্কতা : পায়ে কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন করবেন না।

মডেলঃ অনুসূয়া দাস

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব