রোগ সারাতে যোগ পর্ব-১

প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রযোগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।

ভুজঙ্গাসন

ভুজঙ্গ একটি সংস্কৃত শব্দ। যার অর্থ সাপ। অনেকের মতে, ভুজঙ্গ আসলে কোবরা সাপ। তাই ভুজঙ্গাসন-কে ইংরেজিতে বলা হয় কোবরা পোজ। এই আসনটি অনুশীলন করলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

পদ্ধতি : প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ভুজঙ্গাসন করার প্রস্তুতি নিন। এর জন্য একবার বাম দিকে, একবার ডান দিকে ঘাড় ঘোরাবার পর, মাথা সোজা রেখে থুতনি মাটিতে ছোঁয়ান। এরপর দুই হাতে ভর করে, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। এক্ষেত্রে নাভি থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে ছুঁইয়ে রাখতে হবে। দৃষ্টি থাকবে আকাশের দিকে কিন্তু শরীরি ভঙ্গিমাটি তৈরি হবে ঠিক সাপের ফণা তোলার অবস্থার মতো। এই বিভঙ্গে ৩০ সেকেন্ড থাকার পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে দশ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় করতে হবে আসনটি। এভাবে অন্তত পাঁচবার আসনটি অভ্যাস করুন।

উপকারিতা : এটি মেরুদণ্ডকে নমনীয় এবং সুস্থ রাখে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গলা এবং পিঠের ব্যথা নিরাময় করে। লিভার সচল ও স্বাভাবিক রাখে। পেটে মেদ জমতে দেয় না। হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শ্বাসকষ্ট কমে এবং শরীর থাকে প্রাণচঞ্চল।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না। আর যাদের শরীরে কোথাও সার্জারি হয়েছে কিংবা যাদের হার্নিয়া আছে, তারা এই আসন করার ঝুঁকি নেবেন না।

Health
Dhanurasana                                                         Model Anusua Das

ধনুরাসন

এই আসনটি সম্পূর্ণ হলে শরীর ঠিক ধনুকের মতো রূপ পায়, তাই এটিকে ধনুরাসন বা বো-পোজ বলা হয়। নিয়মিত এই আসন করলে প্রায় হাফ ডজন উপকার পাবেন।

পদ্ধতি : উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুটি পা মাটি থেকে উপরের দিকে তুলুন এবং দুটি হাত দিয়ে দুটি পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ধরুন। এবার হাতের সাহায্য নিয়ে ধীরে ধীরে পা দুটিকে মাথার দিকে টেনে নিয়ে যান। আর এই হাত দিয়ে পা টানলেই, মাথা এবং বুকও খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে পায়ের দিকে এগোবে। তখন দেখা যাবে, কোমরের নীচের অংশটুকুই শুধু মাটির সংস্পর্শে আছে, আর হাত, পা, মাথা এবং বুকের সাহায্যে শরীর ঠিক ধনুকের রূপ নিয়েছে। এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকার পর, আগের অবস্থায় ফিরে যান। কুড়ি সেকেন্ড বিশ্রামের পর আসনটি পুনরায় করুন। অন্তত পাঁচবার করা চাই ধনুরাসন।

উপকারিতা : এই আসন করলে পেটে মেদ জমবে না। হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস ভালো কাজ করবে। শ্বাসকষ্ট কমবে। রক্ত-সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কোমরে, পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা থাকবে না। শরীরের সমস্ত মাংসপেশী নমনীয় থাকবে। মানসিক চাপ কমবে। মহিলাদের পিরিয়ডকালীন ব্যথা-যন্ত্রণা লাঘব হবে।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিালারা এই আসন করবেন না। শরীরের কোথাও কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন না করাই ভালো।

Health
Halasana                                                                 Model Anusua Das

হলাসন

হাল বা লাঙল ব্যবহার করা হয় কৃষি কাজে। অর্থাৎ, এই যন্ত্রটি দিয়ে জমির মাটিকে চাষের উপযুক্ত করে তোলা হয়। আর এই আসনটিও দেখতে লাগে ওই লাঙল বা হালের মতো। তাই এটিকে হলাসন বা প্লাও-পোজ বলা হয়। প্রতিদিন দুবার (সকাল-বিকেলে) এই আসন করলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে।

পদ্ধতি : শবাসনে থাকুন প্রথমে। এরপর পা দুটিকে জোড় করে উপরে তুলুন এবং ধীরে ধীরে মাথার পিছনে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ছোঁয়ান দুই পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ। এই ভঙ্গিমায় আসতে অসুবিধা হলে, দুই হাতের সাহায্য নিন। অর্থাৎ, হাত দুটি দিয়ে কোমরের পিছনে সাপোর্ট রেখে পা-সমেত পুরো শরীরটাকে উপরে তুলুন। আর দুই পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ যখন মাথার পিছনের মাটি স্পর্শ করবে, তখন হাত দুটিকে কোমরের পিছনের দিকে ছড়িয়ে দিন মাটিতে। এই ভাবে হাল বা লাঙলের শেপ-এ থাকুন ৩০ সেকেন্ড। তারপর শবাসন-এ ফিরে এসে ২০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় করুন আসনটি। অন্তত পাঁচবার অনুশীলন করুন এই হলাসন।

উপকারিতা : পিঠ, কোমর এবং পায়ের মাংসপেশী নমনীয় এবং মজবুত থাকবে। দূর হবে ব্যথা-যন্ত্রণা। মেরুদণ্ড থাকবে সুস্থ ও স্বাভাবিক। ক্লান্তি হ্রাস পাবে। মানসিক চাপ কমবে। স্নাযুরোগ থেকে মুক্তি পাবেন। থাইরয়েডের সমস্যা কমবে অনেকটাই। মেনোপজ-এর পরেও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত করবে এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না এবং শরীরে কোনও সার্জারি থাকলেও এই আসন করা থেকে বিরত থাকুন।

মডেলঃ অনুসূয়া দাস।

ফ্যালোপিয়ান টিউব-এর সমস্যা এবং সমাধান

নারী জীবনের পূর্ণতা সম্ভবত মাতৃত্বে। তাই, নারীর জীবদ্দশায় মাতৃত্ব এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আর মাতৃত্বের জন্য প্রয়োজন সুস্থ স্বাভাবিক গর্ভাশয়। এই গর্ভাশয় বা জরায়ুর মধ্যে থাকে ডিম্বাশয় এবং দুটি ডিম্বনালি বা ফ্যালোপিয়ান টিউব্স। কিন্তু গর্ভাশয়ে কোনও সমস্যা থাকলে গর্ভধারণের অসুবিধা হয় কিংবা মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আর গর্ভাশয়ের সমস্যাগুলির মধ্যে ফ্যালোপিয়ান টিউবের ব্লকেজ অন্যতম। সম্প্রতি এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন ‘জেনোম’-এর বিশিষ্ট চিকিৎসক অজিতাভ শুক্লা।

ফ্যালোপিয়ান টিউব কী এবং প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবের গুরুত্ব কতটা?

ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালি সংযুক্ত থাকে জরায়ু বা গর্ভাশয়ের সঙ্গে। আর ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে ডিম্বাণু আসে দুটি ডিম্বনালি বা ফ্যালোপিয়ান টিউব-এর মাধ্যমে। প্রত্যেক মেন্সট্রুয়াল সাইকেল-এ ডিম্বাশয় থেকে গর্ভাশয়ে একটি ডিম্বাণু আসে ডিম্বনালির মাধ্যমে। এরপর যৌনক্রিয়ার ফলে পুরুষের শুক্রাণু গর্ভাশয়ে গিয়ে ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয় এবং ফার্টিলাইজ করে।

টিউবাল ব্লকেজ কী?

ফ্যালোপিয়ান টিউব-এ অর্থাৎ, ডিম্বনালির পথে যদি গাঢ় জলীয় পদার্থ জমে গিয়ে কোনও অবস্ট্রাকশন বা বাধা তৈরি করে, তাহলে তখন তাকে বলা হয় টিউবাল ব্লকেজ। আর যদি টিউবাল ব্লকেজ থাকে, তাহলে ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণু মিলিত হতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বন্ধ্যাত্বকে মেনে নিতে হবে। ব্লকেজ দুটো টিউবেই হতে পারে। আসলে, বন্ধ্যাত্বের যতগুলি কারণ আছে, তারমধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয় টিউবাল ব্লকেজ-এর কারণে। আর যদি টিউবস-এ সামান্য ব্লকেজ থাকে, তাহলে তা আরও বিপজ্জনক। কারণ, তখন যদি শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলন ঘটে তাহলে ডিম্বনালিতে ভ্রুণ তৈরি হয়ে যেতে পারে এবং গর্ভবতী নারীর জীবনসংশয়ও হতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘একটোপিক প্রেগন্যান্সি’।

টিউবাল ব্লকেজ-এর কারণ কী এবং উপসর্গ-ই বা কী?

মূলত পেল্ভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ এবং সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা এসটিডি-র কারণে হয় টিউবাল ব্লকেজ। শুধু তাই নয়, বারবার যদি গর্ভপাত করা হয় কিংবা অন্য কোনও সার্জারি হয়ে থাকে ইউটেরাস-এ, তাহলেও টিউবাল ব্লকেজ হতে পারে। আর এই টিউবাল ব্লকেজ থাকলে, নানারকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে উপসর্গ যে দেখা দেবেই, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে যা বোঝা যাবে তা হল– অ্যাবনর্মাল ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ। এছাড়া, ফ্যালোপিয়ান টিউব-এ ব্লকেজ থাকলে শরীরে হরমোনাল চেঞ্জ হবে এবং ব্লাড-ফ্লো বেড়ে যাবে। এর ফলে পেল্ভিক পেইন হতে পারে। লোয়ার ব্যাক পেইন হতে পারে এবং মূত্রত্যাগের সময় কিংবা যৌনক্রিয়াও পীড়াদায়ক হতে পারে। সেইসঙ্গে থাকতে পারে হেভি পিরিয়ডস্-এর সমস্যা।

ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লকেজ-এর রোগনির্ণয় পদ্ধতিটাই বা কী?

অ্যাবনর্মাল ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, হেভি পিরিয়ডস্, লোয়ার ব্যাক পেইন, পেইনফুল ইউরিনেশন কিংবা পেইনফুল ইন্টারকোর্স-এর সমস্যার কথা যদি কোনও মহিলা জানান, তাহলে তিনি ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লকেজ-এর সমস্যায় রয়েছেন এমনটাই ধরে নেওয়া হয়। তাছাড়া, বন্ধ্যাত্বের অন্যান্য সমস্যা নেই অথচ মা হতে পারছেন না, তখনও ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লকেজ হতে পারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় এবং সঠিক রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে হিস্টেরোসালপিঙ্গোগ্রাফি বা এইচএসজি-কে মাধ্যম করা হয়। এটি একটি স্পেশাল এক্স-রে। এর মাধ্যমে ফ্যালোপিয়ান টিউব-এ গাঢ় জলীয় পদার্থ জমে গিয়ে ব্লকেজ তৈরি করেছে কিনা তা দেখে নেওয়া হয়। তবে অনেকসময় এইচএসজি-র মাধ্যমে ব্লকেজ না বোঝা গেলে, ল্যাপারোস্কোপি-র সাহায্যে রোগনির্ণয় করা হয়।

টিউবাল ব্লকেজ-এর সমস্যায় কীভাবে সাহায্য করে ‘আইভিএফ’?

যদি একটি ফ্যালোপিয়ান টিউব অর্থাৎ একটি ডিম্বনালিতে ব্লকেজ থাকে, তাহলে মেডিসিন দিয়ে সমস্যামুক্ত করে গর্ভধারণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যদি দুটি টিউবেই ব্লকেজ থাকে, তাহলে তা বড়ো সমস্যা ধরে নেওয়া হয় এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসায় সাফল্যের বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। মেজর সার্জারি করেও সেক্ষেত্রে চল্লিশ শতাংশের বেশি সাফল্যের সম্ভাবনা থাকে না। বয়স যদি পঁয়ত্রিশের বেশি হয়, তাহলে সাফল্যের সম্ভাবনা আরও কমে যায়। তখন টেস্টটিউব বেবি বা আইভিএফ-এর (ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) সাহায্যে মা হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই আইভিএফ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু এবং নারীর ডিম্বাণু সংগ্রহ করে এক বিশেষ পদ্ধতিতে ফার্টিলাইজ করা হয় এবং ফার্টিলাইজ করার পরে তা সরাসরি ইউটেরাস-এ প্লেস করা হয়। আর এই কৃত্রিম গর্ভাধান পদ্ধতিতে সাফল্যের হার ভালো এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও খুব বেশি থাকে না।

কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন

হাঁটু দেহের বৃহত্তম অস্থিসন্ধি। আমরা যখন হাঁটি, নীচু হই, ঘুরি, লাফাই বা ওই ধরনের কোনও কাজ করি, তখন হাঁটুর উপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। সুস্থ অবস্থায় এটা আমরা টেরও পাই না। কিন্তু যখনই হাঁটু ব্যথা করে, ফোলে বা শক্ত হয়ে যায়, তখনই আমরা আমাদের গতিবিধির স্বাধীনতার অর্থ বুঝতে পারি।

সৌভাগ্যবশত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন করে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সমগ্র বিশ্বে এই অপারেশন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে হয়ে চলেছে।

কীভাবে হাঁটু কাজ করে

হাঁটুর অস্থিসন্ধি একটি উল্লেখযোগ্য কারিগরি। উরুর হাড়ের (Femur) শেষপ্রান্ত, পায়ের হাড়ের (Tibia) উপরপ্রান্ত এবং মালাইচাকি (Patella) দিয়ে তৈরি এই সন্ধির ভিতরে মোটা তরুণাস্থির আস্তরণ থাকে। এই আস্তরণটি হাঁটুর মসৃণতা এবং সাবলীলভাবে চলাচল সুনিশ্চিত করে। সুস্থ হাঁটুর মধ্যে একটি পর্দা থাকে, যাকে সিনোভিয়াল মেমব্রেন (synovial membrane) বলে। এই পর্দা থেকে এক ধরনের তরল বেরিয়ে হাঁটুর সাবলীল চলাকে মসৃণতর করে এবং তরুণাস্থির পুষ্টি যোগায়। আর্থ্রাইটিস বা বাত হলে এই পর্দা, তরল এবং তরুণাস্থির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

আর্থ্রাইটিস এবং হাঁটুর সমস্যা

আর্থ্রাইটিস কিন্তু শুধুমাত্র বার্ধক্যের লক্ষণ নয়। এটি সন্ধিস্থলের স্ফীতি বা বিকৃতি যা স্বাভাবিক বার্ধক্যের মধ্যে পড়ে না। প্রকৃতপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই এটি বাল্যকাল বা যৌবনে প্রকাশ পায়। অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস এমনই একটি আর্থ্রাইটিস যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। আর্থ্রাইটিস হাঁটুর তরুণাস্থির ভয়ানক ক্ষতি করে। তরুণাস্থি নিজে থেকে ঠিক হয় না। চাপের ফলে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায় কিংবা ভেঙে যায়। ফলে হাঁটুর চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়। রোগ আরও এগিয়ে গেলে হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে হাড় ক্ষয়ে যায় এবং হাঁটু বেঁকে যায় আর আটকে যেতে থাকে। ক্রমে হাঁটাচলার ক্ষমতা কমে যায়। ওজন বেশি হলে এই ক্ষতি আরও তাড়াতাড়ি হয়।

আর্থ্রাইটিস-এ দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটে এবং ধীরে ধীরে সাধারণ কাজ করার ক্ষমতাগুলিও হ্রাস পায়। টোটাল নি-রিপ্লেসমেন্ট (Total Knee Replacement বা  TKR) এই সময় জীবনযাত্রাকে আবার স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম।

কখন অপারেশনের প্রয়োজন

ব্যথা যখন অসহ্য হয়ে ওঠে এবং তা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যহত করে, তখন TKR-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রাত্রে ব্যথা হলে কিংবা মাঝেমধ্যে পা আটকে যাওয়া মানেই এই অপারেশনের সংকেত।

শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি

হাঁটু প্রতিস্থাপনের আগে চারটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

১)  শল্যচিকিৎসার সাফল্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হোনঃ আপনার চিকিৎসক, আপনার পরিবার এবং পরের সব প্রস্তুতি আগে থেকে সেরে রাখুন। কোন সপ্তাহে কী কী করণীয় সব আগে থেকে বুঝে নিন।

২)  বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলুন বা তার পরিকল্পনা নিন। মনে রাখবেন, ওজন কমানো শল্যচিকিৎসার সুফলকে ত্বরান্বিত করে।

৩)  চিকিৎসক অনুমোদিত হালকা ব্যায়াম শুরু করতে হবে। এই ব্যায়াম হাঁটুর আর কোনও ক্ষতি করবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনও ব্যায়াম করবেন না।

৪)  ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এর ফলে অপারেশনের পরে সেরে উঠতে অনেক কম সময় লাগবে।

সম্পূর্ণ হাঁটু প্রতিস্থাপন সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য তথ্য

বিগত কয়েক বছরে হাঁটুর সন্ধি-প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসা এবং সরঞ্জামের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। উপকরণগুলি আরও দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তপোক্ত হয়েছে। অপারেশনের পদ্ধতি আরও নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত হয়েছে। ফলে অস্ত্রোপচারে সাফল্যের হার অনেক বেশি।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃৎ সন্ধিটি তিন অংশে বিভক্ত। Femoral অংশটি ধাতু নির্মিত, Tibia অংশ ধাতু এবং ঘন পলিথিলিন এবং Patella অংশটি ঘন পলিথিলিন দ্বারা গঠিত।

সন্ধিপ্রতিস্থাপনের উপকারিতা

অপারেশনের পর হাঁটু ঠিক হতে প্রায় ছয় মাস লাগে। তার মানে অবশ্যই এই নয় যে, আপনি ছয় মাস কিছু করতে পারবেন না। বাইরে বেরিয়ে হাঁটা বা স্বাভাবিক কাজকর্ম আপনি মাসখানেকের মধ্যেই করতে পারবেন। কিন্তু পুরো উপকারিতা পেতে ছয় মাস সময় লাগবে। সম্পূর্ণ সেরে যাওয়ার পর আপনি দেখবেনঃ

১)  ব্যথা কমে যাবে অথবা একদম থাকবে না।

২)  হাঁটাচলার ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

৩)  বাঁকা পা সোজা হয়ে যাবে।

৪)  পায়ের শক্তি বাড়বে।

৫)  জীবনের স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। কিন্তু দৌড়ানো, লাফানো এবং অন্যান্য লাফঝাঁপ করা যাবে না।

হাঁটুপ্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি

সব অপারেশনের মতো এখানেও কিছু ঝুঁকি আছে। সেগুলোও জেনে রাখা প্রয়োজন।

  •  সংক্রমণঃ  মুখের থেকে নতুন সন্ধিতে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। অস্ত্রোপচারের আগে দাঁতের সংক্রমণ সারিয়ে নিতে হবে। অপারেশনের পরে দাঁতে সংক্রমণ হলে তৎক্ষণাৎ আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • রক্ত জমাট বাঁধাঃ Thromboembolism symptoms অর্থাৎ শিরার মধ্যে রক্ত জমে যাওয়া একটি গুরুত্বপুর্ণ সমস্যা। এর প্রতিরোধে কিছু ওষুধ এবং এক বিশেষ ধরনের মোজা পরতে হতে পারে।
  • ফুসফুসের সংক্রমণ আর-একটি ঝুঁকি, যা সাধারণত যারা অপারেশনের পর বেশি দিন শয্যাশায়ী থাকেন, তাদের হয়। এই কারণে অপারেশনের পর বিছানা ছেড়ে ওঠা খুব জরুরি।

অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি

  •  পুরো চিকিৎসাগত মূল্যায়নঃ  পুরো স্বাস্থ্যের বিবরণ চিকিৎসকের জানা প্রয়োজন। নানারকম রক্তপরীক্ষা, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, বুকের এক্স-রে ইত্যাদির মাধ্যমে রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা জানা হয় এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

বাড়ির প্রস্তুতি

  •  সাহায্যকারীর ব্যবস্থাঃ  অপারেশনের পরপরই একা একা চলাফেরা করা সম্ভব হবে না। কাজেই এমন একজন চাই যিনি রোগীকে সব কাজে সাহায্য করবেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়া, দোকানপাট করা এবং অন্যান্য গৃহস্থালির কাজে এইরকম সাহায্যকারী প্রথম ছয় সপ্তাহে অপরিহার্য।
  • বাড়ি নতুন ভাবে সাজিয়ে নেওয়াঃ  অপারেশনের পর প্রথমদিকে নীচু হওয়া, হাঁটু গেড়ে বসা সম্ভব নয়। এটাও মনে রাখতে হবে যে প্রথম কিছুদিন আপনাকে ক্রাচ বা ওয়াকারের সাহায্যে চলাফেরা করতে হবে। সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস ওপরের দেরাজে অথবা সহজে পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বৈদ্যুতিক তার যেন মেঝেতে না পড়ে থাকে। মেঝে পিছল রাখবেন না।
  • কিছু প্রয়োজনীয় বস্তু, যেমন একটি কর্ডলেস ফোন, একটি বহুপকেটযুক্ত Apron এবং জিনিস তোলার জন্য একটি লম্বা লাঠি অনেক কাজ সহজ করে দেয়।

ওষুধ সম্পর্কে কিছু জ্ঞাতব্য তথ্য

অপারেশনের আগে আপনি যা যা ওষুধ খান,সবই আপনার ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না। কিছু ওষুধ অজ্ঞান বা অবশ করার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। কিছু ওষুধ রক্ততঞ্চনে বাধা দেয় বা রক্তচাপ বাড়ায়। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এই সময়ে অন্য কোনও ওষুধ খাবেন না।

অপারেশনের পরে

  •  দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সমস্ত নল খুলে যাবে
  • ফিজিওথেরাপি শুরু হবে পরের দিন থেকে
  • দাঁড়ানো শুরু হবে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে
  • দুইদিন পরে আপনার ড্রেসিং বদল হবে
  • সাধারণভাবে পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় আপনি বাড়ি চলে যাবেন
  • প্রথমদিকে ক্রাচ বা ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটতে হবে
  • আপনার বাড়িতে প্রতিদিন ফিজিওথেরাপিস্ট যাবেন
  • তাছাড়াও আপনাকে কিছু ব্যায়াম দেখিয়ে দেওয়া হবে, যা আপনি দিনে তিন চারবার করবেন।

মনে রাখবেন, সঠিক ব্যায়ামই আপনার হাঁটুকে সুস্থ করে তুলবে।

পরামর্শ

  •  কয়েকটি নিয়ম মানলে আপনার হাঁটু আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং সমস্যাশূন্য হবে
  • অপারেশনের পর দাঁতের কোনওরকম সংক্রমণ হলে Antibiotics নিতে হবে
  •  শরীরের কোনওরকম সংক্রমণ সন্দেহ করলেই ডাক্তারের কাছে যাবেন
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • সাঁতারকাটা বা সাইকেল চালানো অভ্যাস করুন
  • নিয়মিত ভাবে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

হাঁটুর বাত এখন হাঁটুর সন্ধি-প্রতিস্থাপন দ্বারা নিরাময় সম্ভব। ভালো ভাবে ভেবে সব জেনে এগিয়ে যান। জীবন আবার উপভোগ করুন।

বর্ষায় যত্নে রাখুন বাচ্চাদের

অপরিচ্ছন্নতা এবং অসতর্কতা বিপদ ডেকে আনতে পারে বর্ষাকালে। তাই, এই সময় নিজে যেমন যত্নে থাকবেন, বাচ্চাদের আরও বেশি যত্নে রাখবেন।

বর্ষাকালে আবহাওয়া বড়ো খামখেয়ালি। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। অতএব, তাপমাত্রা বাড়তে-কমতে থাকে। আর এই তাপমাত্রার ওঠানামা মানব-শরীর মানিয়ে নিতে পারে না অনেক সময়। তাই অনেকে জ্বর-অসুখে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে শিশুরা। এ সময় বাতাসে রোগ-জীবাণু ভেসে বেড়ায়। অতএব, শিশুদের সুরক্ষিত রাখা জরুরি।

বৃষ্টির জল গায়ে লাগলে কিংবা জীবাণু আক্রমণ করলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গিয়ে ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধেবেলা টেম্পারেচার বাড়ে এবং এরকম চলতে থাকে প্রায় পাঁচ থেকে সাতদিন। সঙ্গে বমি, তলপেটে ব্যথা, লুজ মোশন প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্ত উপসর্গ যদি একইসঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সেইসঙ্গে, পুরো বর্ষাকালে হয় জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে অথবা কার্বোনেটেড ওয়াটার কিনে খেতে হবে।

শাকসবজি গরম জলে নুন মিশিয়ে ধুয়ে, তারপর রান্না করতে হবে। ফল কেটে দীর্ঘ সময় রেখে খাওয়া যাবে না। প্রতিবার খাওয়ার আগে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে। ফুটপাতে বিক্রি করা খাবার খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে বর্ষাকালে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে।

জামাকাপড় রোদে ঠিকমতো না শুকোলে আয়রন করে পরাতে হবে বাচ্চাদের। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে, বাড়িতে এসে সঙ্গে সঙ্গে শুদ্ধ হালকা গরমজলে স্নান করে নিতে হবে। রাতে মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে এবং বিছানায় বাসি চাদর রাখা যাবে না। নালা নর্দমায় ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে রাখবেন এবং কোথাও খোলা জায়গায় জল জমিয়ে রাখবেন না। সাধারণ জ্বরে প্যারাসিটামল ওষুধ খেলেও, যদি জ্বর দু’দিনের বেশি কন্টিনিউ করে, তাহলে নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ না খেয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খান।

সতর্কতা এবং পরামর্শ

বর্ষাকালে বিভিন্ন অসুখ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কী কী করা উচিত, সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস (কলকাতা) হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

বর্ষাকাল মানেই শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা এবং জল-বাহিত অসুখ দ্রুত ছড়ায়। যদি আগে থেকে প্রতিরোধ গড়ে না তোলা যায়, অসুখ অনেক দূর গড়াতে পারে এমনকী প্রাণহানিও হয়। ডায়েরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ঠান্ডা লাগা, কনজাংটিভাইটিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, লেপাটোসপাইরোসিস ইত্যাদি রোগ এই মরশুমে অসতর্কতা ও অপরিচ্ছন্নতার জন্য ছড়ায়।

বর্ষার সময়ে শিশুদের ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ভাইরাল এবং পেটের সংক্রমণ বেশি হয়। এই সময়ে কোনও শিশু যদি দূষিত খাবার বা জল পান করে তাহলে অস্বস্তি, বমিভাব, জ্বর এবং অস্বাভাবিক রকমের ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। কেউ যদি এইরকম শারীরিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসা ও শুশ্রুষার প্রয়োজন।

বর্ষা জাঁকিয়ে আসার আগে আবহাওয়ায় তাপমাত্রার তারতম্য ও বাতাসে জলকণার আধিক্যের ফলে ভাইরাল, ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাইক্রো-অর্গানিজম অর্থাৎ ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক শহরের পানীয় জলে মিশে যেতে পারে বন্যার সময় বা জলের পাইপ লাইন ফেটে গিয়ে। এর ফলে ইনফেকশন ছড়াতে পারে আর ডায়েরিয়া, গ্যাস্ট্রো এন্ট্রাইটিস, জন্ডিস, জ্বর ও টাইফায়েড-এর প্রকোপ বাড়ে।

বর্ষা মানেই মশার বংশ বিস্তারের সময়। অনেক জায়গাতেই জল জমার সমস্যা রয়েছে, যা, জমা জলে মশার বংশ বিস্তারে প্রভূত সহায়তা করে। আর ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগেরও এই সময় প্রাদুর্ভাব ঘটে, তাই প্রয়োজন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের।

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়াও এই মরশুমে বাড়তে থাকে। তাই যথাসম্ভব নজরে রাখুন শিশুদের। কারণ, তারাই সবার আগে অসুস্থ হয়। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়, তাহলে অবশ্যই প্রযুক্তি ও যথাযথ চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে এমন হাসপাতালে রোগাক্রান্তকে নিয়ে যান। কারণ, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এইসব রোগ থেকে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে।

বর্ষায় রোগ প্রতিরোধের উপায়

কী করবেন

  •  লম্বা হাতা জামা ও মোজা পরুন মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে
  • মশা দূর করার রেপেলেন্টস ও মশারি ব্যবহার করুন
  • প্রচুর জল পান করুন
  • খাবার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন
  • অস্বস্তি হলে বা যদি নির্দিষ্ট কোনও লক্ষণ দেখা দেয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কী করবেন না

  •  খোলা খাবার ও কাটা ফল খাবেন না
  • পথের ধারে বাইরের খাবার খাবেন না
  • বর্ষাকালে বেশিক্ষণ স্নান না করাই ভালো
  • অপরিশোধিত জল পান করবেন না

—–

স্পাইস ইট্ আপ

জীবনে যৌনতা অপরিহার্য। খাওয়া-পরার মতো দাম্পত্য জীবনে যৌনতার গুরুত্ব অপরিসীম। এই বক্তব্য মেনে নিলে, যৌনসুখ পেতেও হবে, আবার পার্টনার-কে যৌনসুখ দিতেও হবে। তবেই মজবুত হবে সম্পর্কের ভিত। কিন্তু সত্যিটা এই যে, ভরপুর যৌনতা বা যৌনক্ষমতা সবার মধ্যে থাকে না। এই না-থাকার বিষয়টিতে খলনায়কের ভূমিকা নিয়েছে আধুনিক জীবনশৈলী।

আমরা এখন এতটাই যান্ত্রিক, এতটাই আরামপ্রিয় যে, শরীরকে ফিট রাখার মতো সামান্য পরিশ্রমও করি না। তাছাড়া ফার্স্ট ফুড, ভেজাল খাবার খেতে খেতেও আমরা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ফেলেছি। সেইসঙ্গে, এখন বাতাসে ভাসছে বিষ। তাই জল, বায়ু সবই দূষিত। আর এই দূষিত জলবায়ুও সুস্বাস্থের পরিপন্থী। এছাড়া অফিসে ওয়ার্কলোড, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, সাংসারিক ঝুট-ঝামেলা প্রভৃতির কারণেও বাড়ছে মানসিক চাপ এবং অবসাদ।

এরই পাশাপাশি রয়েছে অপুষ্টি, অনিদ্রা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, ওবেসিটি এবং ডায়াবেটিস-এর সমস্যা। ফলে এখন অনেকেরই কমছে যৌনইচ্ছে কিংবা যৌনক্ষমতা। অনেকে তো আবার চল্লিশ বছর বয়সেই যৌনশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। অতএব, যৌনক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যম করা যেতে পারে মশলাকে। কারণ, ভারতীয়দের রান্নায় ব্যবহৃৎ মোট ছ’টি মশলায় রয়েছে যৌনক্ষমতা বাড়ানোর রসদ। এবার জেনে নিন, কোন্ কোন্ মশলা কীভাবে খেলে বাড়বে আপনার যৌনক্ষমতা।

রসুন

সেক্স ড্রাইভ বৃদ্ধির জন্য সেরা মশলা রসুন। রোজ সকালে খালি পেটে দু’কোয়া কাঁচা রসুন আপনার পুরুষ সঙ্গীকে চিবিয়ে খেয়ে নিতে বলুন কিংবা রাতে সঙ্গমের দু’ঘন্টা আগেও খাওয়াতে পারেন। কিন্তু রসুন খেলে যেহেতু মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই রসুন খাওয়ার পর টুথপেস্ট দিয়ে ভালোভাবে ব্রাশ করে নিতে বলুন এবং মাউথ ফ্রেশনার গাম-এর সাহায্য নিয়েও ব্যাড স্মেল-এর সমস্যা দূর করতে পারেন।

আসলে, কাঁচা রসুনের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। আর এই ভিটামিন ‘সি’ যেমন আপনার পুরুষ সঙ্গীর শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াবে, ঠিক তেমনই শুক্রাণুর সংখ্যাও বাড়াবে। তবে মনে রাখবেন, কোনও কিছুই মাত্রাছাড়া খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেশি খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন– কাঁচা রসুন যদি কেউ খুব বেশি খায়, তাহলে চুলকানি কিংবা ত্বকে র‍্যাশও বেরোতে পারে। তাই সেক্স ড্রাইভ বাড়ানোর জন্য আপনার পুরুষ সঙ্গীকে প্রতিদিন দু’কোয়া রসুন খাওয়ান।

দারুচিনি 

যারা মধুমেহ রোগে আক্রান্ত, তাদের যৌন উত্তেজনা কমে যায়। এক্ষেত্রে দারুচিনি মহৌষধি। কারণ দারুচিনি ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোল-এ রাখে এবং স্বাভাবিক যৌনশক্তি ফিরিয়ে দেয়। তবে দারুচিনি সরাসরি খাবেন না। মাছ-মাংস প্রভৃতি রান্নায় ব্যবহার করে কিংবা একটুকরো দারুচিনি চা-এ ফুটিয়ে খান। এতে যেমন সেক্স ড্রাইভ বৃদ্ধি পাবে, ঠিক তেমনই পুরুষাঙ্গ হবে দৃঢ় এবং নারীর সেক্স অরগান (ব্রেস্ট এবং ভ্যাজাইনা)-এ শৈথিল্য আসবে না। টাইট থাকবে। কিন্তু মনে রাখবেন, দারুচিনি একবার খেয়েই সেক্স ড্রাইভ বাড়ানো যায় না, সেক্স বেনিফিট পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে কয়েকদিন এবং অল্পমাত্রায় নিয়মিত দারুচিনি খেয়ে যেতে হবে।

এলাচ 

যৌনক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এলাচ। এই মশলাটি খেলে যেমন মুড ভালো থাকে, তেমনই যৌন উত্তেজনা বাড়ে। তাছাড়া, সঙ্গমকালে শরীরকে ঠান্ডা রেখে চট করে ডিসচার্জ হতে দেয় না। এলাচ আপনি সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন কিংবা চায়ের সঙ্গে ফুটিয়ে খেতে পারেন। সেক্স ড্রাইভ বৃদ্ধির জন্য নারী-পুরুষ উভয়েই খেতে পারেন এলাচ। তবে এটা শুধু যৌনক্ষমতাই বৃদ্ধি করে না, ডিপ কিস করার আগে কিংবা ওরাল সেক্স করার আগে এলাচ চিবিয়ে খেলে মুখ থেকে সুগন্ধ বেরোয় এবং মুখের ভিতরের জীবাণু নাশ হয়।

আদা 

রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি, সেক্স গ্রন্থিগুলিকে অ্যাক্টিভ রাখতে সাহায্য করে আদা। আসলে ব্রেস্ট, ভ্যাজাইনা কিংবা পেনিস এই তিনটি প্রধান সেক্স-অরগান-এ রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হলে তবেই যৌনসঙ্গমে সাফল্য পাওয়া যায়। আর এই যৌন সাফল্যের রসদ লুকিয়ে আছে আদায়।

হলুদ 

স্নায়ু দুর্বল হলে যৌনসঙ্গমের সাফল্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তাই স্নায়ুকে সবল করতে হবে। আর এর জন্য চাই হলুদ। খালি পেটে নিয়মিত কিছুটা কাঁচা হলুদ চিবিয়ে কিংবা বেটে শরবত বানিয়ে খেতে পারলে যেমন আপনার নার্ভাস ডিসঅর্ডার-এর সমস্যা মিটবে, ঠিক তেমনই বাড়বে আপনার যৌনক্ষমতা। নারী-পুরুষ উভয়েই খেতে পারেন এই কাঁচা হলুদ।

লবঙ্গ 

সেক্স ড্রাইভ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে কাজ করে লবঙ্গ। মাত্র দুটো লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারলে কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার শরীর গরম হয়ে উঠবে এবং যৌন অঙ্গগুলি প্রো-অ্যাক্টিভ হয়ে উঠবে। তবে লবঙ্গ যাদের চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হয়, তারা চা-কফিতে ফুটিয়ে কিংবা হট্ চকোলেট দিয়ে খেলেও একই ফল পাবেন।আজই ট্রাই করে দেখুন৷

ডেলিভারির সহজ উপায় ওয়াটার বার্থ

গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রায় প্রতিটি মহিলাই সহজাতভাবে এই আনন্দে গা ভাসিয়ে দেন। এই সময়ে গর্ভবতী মহিলারা সব কাজই করতে পারেন, তবে একটু সাবধানে। বর্তমানে অধিকাংশ ডাক্তারই সিজারিয়ান ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে কেরলের কোচি-র চাইল্ড বার্থ এডুকেটর প্রিয়ংকা ইডিকুলা এর ঘোর বিরোধী। ওনার মতে সিরিয়াস কনডিশন না হলে, সিজার এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে পরবর্তীকালে মায়েদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই তিনি নর্ম্যাল ডেলিভারিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাঁর হাত ধরেই কেরলের মানুষ, প্রথম ওয়াটার বার্থ সম্পর্কে জানতে পারেন। পিবিএস হাসপাতালে হানি নামের এক মহিলা সর্বপ্রথম এই পদ্ধতিতেই তার শিশুকন্যা জাহ্নবীর জন্ম দেন। এখন অনেক মহিলাই প্রসবযন্ত্রণা এবং কাটাছেঁড়ার হাত থেকে বাঁচতে ওয়াটার বার্থ পদ্ধতিকেই বেছে নিচ্ছেন।

শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে কিছুটা দূরে কোচির পনংবিল্লিতে এই বার্থ ভিলেজের অবস্থিতি। গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, গর্ভ সম্বন্ধিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি, তাদের মনের কোণে জমে ওঠা শঙ্কাও দূর করা হয়ে থাকে এখানে।

চাইল্ড বার্থ এডুকেটর প্রিয়ংকা বলেন, ‘আমি নর্ম্যাল ডেলিভারিরই পক্ষপাতী। সর্বদা এটাই চেষ্টা করি কোনও টেনশন ছাড়াই গর্ভবতী মহিলারা প্রাকৃতিক ভাবে প্রসব করুক।’

‘আমিও নর্ম্যাল ডেলিভারির দ্বারাই বাচ্চার জন্ম দিয়েছি। সেই কারণেই আমি এব্যাপারে একটু বেশিই জোর দিই। যখন আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, তখন অন্যান্য মহিলাদের ভয়, প্রসব সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা পোষণ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, প্রসবের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে না পারা দেখে মনে মনে স্থির করেছিলাম, ভবিষ্যতে এই বিষয়ে, আমাকে নতুন কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে পড়ার জন্য এই ধরনের কোনও কোর্স ছিল না, সেই কারণেই আমেরিকা গিয়ে ‘লামাজে সার্টিফায়েড কোর্স’ করা।

ভারতেও ১২-১৩টি জায়গায় এই ধরণের কোর্স করানো হয়। হায়দ্রাবাদ, দিল্লি, মুম্বইতেও কোচির মতো বার্থ ভিলেজ রয়েছে। এখানে হসপিটাল বেসড আর ইন্ডিপেন্ডডেন্ট কোর্সও চালু আছে। চাইল্ড বার্থ এডুকেশনে, নর্ম্যাল বার্থ কতটা সাপোর্টেবল, এই কোর্সগুলিতে এটাই বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হয়।

ওয়াটার বার্থ কী ? 

প্রসবের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে ওয়াটার বার্থ হল একটি। এই প্রক্রিয়ায় প্রসববেদনা আনার জন্য ইনজেকশনও পুশ করা হয় না, আর যোনিদ্বার কাটাছেঁড়ারও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু তাই নয়, প্রসবের সময় গর্ভবতী মহিলার দুর্বলতা দূর করার জন্য স্যালাইনও দিতে হয় না। ঈষদুষ্ণ জলে ভরা ওয়াটার পুলে প্রসব করানো হয়ে থাকে।

প্রসবপীড়া দূর করার জন্য সব থেকে ভালো উপায় হল ওয়াটার পুল। ‘ওয়াটার বার্থ’ এর বিশেষত্বই হল এই যে, প্রসূতি মহিলাদের প্রসবযন্ত্রণা যতটা সম্ভব (প্রায় ৭০ শতাংশ) লাঘব করে নর্ম্যাল ডেলিভারি করানো। বিদেশে আকছার বাড়িতেই এই বিধি অনুযায়ী শিশুর জন্ম দেন মহিলারা। শুধু সহকারী হিসাবে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ (নার্স) থাকলেই কাজ চলে যাবে। ঈষদুষ্ণ জলের অনুভূতি, গর্ভবতী মহিলাদের মানসিক ও শারীরিক কষ্ট থেকে রিল্যাক্সেশন প্রদান করে। গর্ভস্থ শিশুরও কোনও অসুবিধা হয় না। সায়েন্টিফিক্যালি আজ এটা প্রমাণিত। কারণ গর্ভাশয়ে অ্যামনিওটিক দ্রব্য (গর্ভাশয়ের মধ্যে থাকা তরল)-এর উষ্ণতায় অভ্যস্ত বাচ্চার পদার্পণও সেই হালকা গরম জলেই। যার জন্য জন্ম নেওয়ার পরমুহূর্তের নতুন পরিবেশে কোনও অসুবিধা হয় না সদ্যজাতের।

ওয়াটার বার্থ-এর প্রকারভেদ 

সাধারণত ওয়াটার বার্থ দুটি উপায়ে করানো হয়ে থাকে।

১. ডেলিভারি ইন ওয়াটার

২. কমফর্ট ওয়াটার বার্থ ইন ল্যান্ড

‘ডেলিভারি ইন ওয়াটার’ পদ্ধতিতে শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জলেরও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তারপর তাপমাত্রাকে মনিটার করা হয়ে থাকে। হালকা গরমজলের কারণে শরীর ঢিলে হতে শুরু করে, ফলে খুব সহজেই গর্ভাশয়দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। সেই সময় গর্ভবতী মহিলা একটু পুশ করলেই অনায়াসে বাচ্চা গর্ভাশয়দ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রসবের সময় পাওয়া হালকা ক্ষতও খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এই ওয়াটার বার্থ পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ফলে। আজ তাই অধিকাংশ মহিলাই এই বার্থ ভিলেজে ডেলিভারির জন্য আসেন।

কোয়েম্বাটুর, মাদুরাই, ত্রিচী, ব্যাঙ্গালুরু-র মতো জায়গা থেকেও প্রচুর মহিলা এই বার্থ ভিলেজে আসেন ক্লাস অ্যাটেন্ড করার জন্য। কখনও কখনও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফের অভাবে ওয়াটার বার্থ-এর সিদ্ধান্তও বদল করতে হয়। এর জন্য খরচ পড়ে আনুমানিক ৩৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

পাঁচ মাস থেকে শুরু করে ডেলিভারির সময় পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলে। প্রেগন্যান্সির সময়ে, প্রেগন্যান্সি সম্বন্ধিত জটিলতাকে সহজভাবে নেওয়ার মানসিক শক্তি যোগানো হয় এখানে। এই সময়ে মিউজিক থেরাপির মাধ্যমেও দেহের কষ্ট খানিকটা লাঘব করা হয়।

অভিজ্ঞতা সঞ্চয়

বার্থ ভিলেজের ওয়ার্কিং টাইম সকাল ৯ঃ৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ পর্যন্ত। তৎসত্ত্বেও ক্লাস অ্যাটেন্ড করার জন্য যে-কোনও সময়েই আসার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন শরীরের যথাযথ মুভমেন্টের জন্য, মেঝেতে বসে পদ্মাসন করার কথা বলা হয়ে থাকে। ঠাকুমা-দিদিমাদের আমলে বেডরেস্ট শব্দটাই শোনা যেত না। তখন অধিকাংশ মহিলাই ঘরের সমস্ত কাজ করতেন। কিন্তু আজ টেনশন আর ব্যস্ত জীবনশৈলীর কারণে বহুল পরিবর্তন এসেছে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, গর্ভবতী মহিলা যত অ্যাকটিভ হবে, ডেলিভারিও ততই সহজসাধ্য হবে।

১৮ ঘন্টা আর ১৪ ঘন্টার শিডিউলে চলে ক্লাস। প্রত্যেক দিন ২ ঘন্টার ক্লাসে, প্রসবের সময় শরীরে হওয়া বিভিন্ন পরিবর্তন, প্রসব সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের স্বামীদেরও এবিষয়ে জ্ঞাত করা হয়ে থাকে এখানে। এই সময় গর্ভে থাকা বাচ্চার সঙ্গে কথা বলা, তার দেখভাল করা, নতুন অতিথির অভ্যর্থনার জন্য মনকে তৈরি করা সমস্তই চলে ক্লাসে। জীবনে ইতিবাচক ভাবনা ভীষণ ভাবে জরুরি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করলে তাদের জন্যও আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় থাকুন ফ্যাশনেবল

সাধারণত গর্ভাবস্থার সময় মহিলারা ঢিলেঢালা কাপড়ই বেছে নেন, যে তালিকায় থাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রক শেপের কুর্তা, ফিড টপ্স, ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ওপেন টপ্স, সালোয়ার, স্ট্রেচড ড্রেসও থাকে। বার্থ ভিলেজে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কমফর্টের কথা মাথায় রেখে ৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে ড্রেসও রাখা হয়েছে। যেগুলি কমফর্টের পাশাপাশি ফ্যাশনেবলও বটে।

খাবার আর ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় ওজন বেশী বাড়লেও চলবে না, আবার কম হলেও চলবে না। এই সময় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত, যা মা এবং বাচ্চার জন্য উপযোগী। এই সময় অধিক ক্যালোরি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। তৈলাক্ত খাবার আর মিষ্টি বাচ্চার বিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি করে। তাই এগুলি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এই সময় টেনশন আর উত্তেজনা থেকে দূরে থাকুন।

মাতৃত্ব ও ক্যালসিয়াম-এর প্রয়োজনীয়তা

মাতৃত্বই সেরা উপহার প্রত্যেক নারীর কাছে। যা তিনি উপভোগ করেন নিজের মতো করে। আসলে এই পৃথিবীতে একটি নতুন জীবন আনার এক অন্যরকম অনুভতি কাজ করে। আর মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয়, যার ফলে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ, এই সময় মায়ের থেকে পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে, শিশুটি মায়ের দেহের অভ্যন্তরেই বাড়তে থাকে। মাতৃগর্ভের নাড়ির মধ্য দিয়ে যা প্লাসেন্টা বা নাড়িকে নাভির সঙ্গে যুক্ত করে, তা দিয়ে মায়ের শরীরে বাড়তে থাকা শিশুটি খাদ্যগ্রহণ করতে থাকে। শুধু তাই নয়, জন্মের পরও অন্তত ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খেয়ে শিশুটি তার শরীরকে পুষ্টি জোগায়। তাই আয়রন এবং ভিটামিন ডি-র পাশাপাশি, মায়ের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম।

ক্যালসিয়াম কী এবং এটি মানব শরীরে কী কাজ করে?

ক্যালসিয়াম এমন একটি খনিজ যা বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়। হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং অন্যান্য অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। প্রায় সমস্ত ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতে জমা থাকে, যেখানে এটি তাদের গঠনে এবং তাদের শক্ত করতে সহায়তা করে। পেশিগুলির মুভমেন্টের জন্য এবং স্নাযুর দ্বারা মস্তিষ্ক এবং শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মধ্যে বার্তা বহন করতে, শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রযোজন হয়। এছাড়াও, ক্যালসিয়াম রক্তবাহী নালিকাগুলিকে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চারে এবং মানব দেহের প্রায় প্রতিটি কাজকে প্রভাবিত করে এমন হরমোন এবং এনজাইমগুলি রিলিজ করতে সহায়তা করে।

আমাদের দেহে সাধারণ ভাবে ক্যালসিয়ামের প্রযোজনীয়তা কতটা?

ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন দ্বারা প্রস্তাবিত ক্যালসিয়াম-এর তালিকাটি হল :

  • মহিলা, ৫০ এবং তারচেয়ে কমবয়সী : প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
  • পুরুষ, ৭০ বা তারচেয়ে কমবয়সী : প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
  • ৫০ ঊর্ধ্বে মহিলাদের প্রতিদিন : ১২০০ মিলিগ্রামের বেশি
  • ৭০ ঊর্ধ্বে পুরুষরা প্রতিদিন : ১২০০ মিলিগ্রামের বেশি

মাতৃত্বের পরে মাহিলাদের কতটা ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন?

ক্যালসিয়াম শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত তৈরিতে সহায়তা করে এবং রক্ত সংবহন, পেশি এবং স্নাযুতন্ত্রের স্বাস্থ্যকর কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের দিনে একহাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া উচিত। ক্যালসিয়ামের স্বাস্থ্যকর উৎসগুলির মধ্যে স্বল্প ফ্যাট-যুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, ক্যালসিয়াম-সুরক্ষিত কমলার রস এবং শাকসবজি রয়েছে। যদি আপনার শরীর ক্যালসিয়াম তৈরি করতে না পারে, তাহলে আপনার এটি খাদ্য বা পরিপূরক থেকে নেওয়া উচিত। আপনি যদি ১৮ বা তার চেয়ে কমবয়সি হন তবে আপনার কমপক্ষে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।

কেন গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ?

ক্যালসিয়াম আপনার শিশুর দ্রুত বিকাশশীল হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। পেশি, হার্ট এবং স্নাযুর বিকাশকেও বাড়ায়। এছাড়াও এটি মায়ের দাঁত এবং হাড়ের জন্য এই পর্যায়ে যথারীতি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম না পান, তবে আপনার শরীর আপনার শিশুর জন্য যে-ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, তা গ্রহণ করে নেবে ও শিশু প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম থেকে বঞ্চিত হবে। বিশেষত ত্রৈমাসিকের সময়, যখন আপনার কাছ থেকে এবং আপনার শিশুর শরীরে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম স্থানান্তরিত হয় হাড়ের বিকাশের জন্য। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পাওয়া গেলে আপনাকে অস্টিওপোরোসিসের জন্য আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। এর ফলে এমন একটি অবস্থা হয় যা ভঙ্গুর হাড় সৃষ্টি করে।

গর্ভাবস্থায় সেরা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

দুধ ক্যালসিয়ামের সর্বাধিক ভরসা করা ব্যবহৃৎ উত্স। প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদার এক তৃতীযাংশ অর্থাৎ আট আউন্স পাওয়া যায় এক গেলাস দুধ থেকে। আপনি যদি ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ দুধ নির্বাচন করেন, তাহলে ভালো। আপনি যদি সরাসরি দুধ পান করতে না পারেন, তবে এটি স্মুদি বা স্যুপ হিসাবে গ্রহণ করুন। অথবা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্যসামগ্রী যেমন দই সরাসরি খান বা ফলের টপিং হিসাবে গ্রহণ করুন। পনির খনিজগুলির একটি শক্তিশালী ডোজ সরবরাহ করে। পাস্তা বা স্টিমযুক্ত শাকসবজিগুলি খেতে পারেন অথবা কম ফ্যাটযুক্ত পনির খান সস দিয়ে।

ক্যালসিয়াম-এর পরিমাণ

  • সাধারণ চর্বিযুক্ত দই : ৮ আউন্স প্রতি ৪১৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-সুরক্ষিত কমলার রস : ১ কাপ প্রতি ৩৪৯ মিলিগ্রাম
  • পার্ট-স্কিমডমোজারেলা : প্রতি ১ আউন্স-এ ৩৩৩ মিলিগ্রাম
  • চেডার পনির : প্রতি ১ আউন্স ৩০৭ মিলিগ্রাম
  • স্কিম মিল্ক : প্রতি ৮ আউন্সে ৩০০ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-সুরক্ষিত সোয়া মিল্ক : ৮ আউন্স প্রতি ৩০০ মিলিগ্রাম
  • স্বল্প ফ্যাট-যুক্ত বাটার মিল্ক : ৮ আউন্স প্রতি ২৮৪ মিলিগ্রাম
  • কলার্ড গ্রিনস : প্রতি কাপে ২৬৬ মিলিগ্রাম
  • কটেজ চিজ : প্রতি কাপে ১৮৭ মিলিগ্রাম।
  • তোফু : প্রতি কাপে ২৫৩ মিলিগ্রাম
  • ক্যানড সালমন : ২ আউন্স প্রতি ১৮১ মিলিগ্রাম
  • চিয়াবীজ : প্রতি আউন্স প্রতি ১৭৮ মিলিগ্রাম
  • সবুজ শালগম : ১ কাপ প্রতি ১৪৮ মিলিগ্রাম
  • কড়াইশুঁটি : প্রতি কাপে ১০৬ মিলিগ্রাম
  • ব্রকোলি : প্রতি কাপে ২১ মিলিগ্রাম।

মনে রাখবেন যে, ক্যালসিয়াম প্রক্রিয়া করার জন্য আপনার দেহে ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই সালমন, টুনা, ডিম এবং মাশরুমের মতো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলি গ্রহণ করুন। আপনার শরীর সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি উৎপাদন করে, তাই প্রতিদিন কয়েক মিনিট রোদে সময় কাটান যা আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-র স্তরকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। শরীরে ক্যালসিয়াম-এর জোগান সঠিক রাখতে, প্রসব-পূর্বেও শরীরে যেন রোদ পড়ে এবং শরীর যেন সঠিক মাত্রায় ভিটামিন পায়।

ডা. মধুজা নাথ, এম ডি (ফিজিসিয়ান),

মেডিকেল অফিসার,

মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, কলকাতা।

সন্তানের চোখের যত্ন নিন

যাদের দৃষ্টিশক্তি আছে, তারা বোঝেন না অন্ধের যন্ত্রণা! কিন্তু চোখের যত্ন না নিলে কিংবা অবহেলা করলে যদি দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায় কিংবা দৃষ্টিহীন হয়ে যান তখন? অতএব, আজীবন দৃষ্টি সুখের আনন্দ উপভোগ করার জন্য, চোখের যত্ন নেওয়া জরুরি। আর এই যত্ন নিতে হবে ছোটো থেকেই। সন্তানের চোখ ভালো রাখার জন্য গুরুদায়িত্ব নিতে হবে বাবা-মাকেই। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিলেন ডা. সুরভি গুপ্ত।

বর্তমানে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা এবং অসুখ বাড়ছে। ক্লাস ওয়ান-টুতে পড়া অনেক বাচ্চার চোখেই এখন চশমা দেখা যায়। আসলে, বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় পিছনে, পুরোনো কারণগুলির সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন কিছু কারণ। আর এই নতুন কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বেশি টিভি দেখা এবং কম্পিউটার-এর সামনে দীর্ঘ সময় বসে থাকা।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঘর অন্ধকার করে টিভিতে কার্টুন চ্যানেল দেখছে বাচ্চা। এইভাবে আলোহীন ঘরে বসে দীর্ঘসময় চড়ারঙের কার্টুন ছবি দেখার যে অভ্যাস, তা চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ, তীব্র গতিযুক্ত এবং নানারকম চড়া রং সমৃদ্ধ আলোর বিচ্ছুরণ চোখের নার্ভের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কম্পিউটার-এর ক্ষেত্রেও তাই। অনেকটা সময় একনাগাড়ে কম্পিউটার-এ স্ক্রিন-এর উপর দৃষ্টি রেখে ছোটোছোটো লেখা পড়তে থাকলে, বাচ্চার সফ্ট নার্ভের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে বাধ্য। অবশ্য শুধু কম্পিউটার কিংবা টিভি দেখার খারাপ প্রভাবই নয়, আরও নানা চিরাচরিত কারণে বাচ্চাদের কচি চোখে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। যেমন, ঘরবাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সবুজ ধবংস করা হচ্ছে। আর চোখ সবুজ যত কম পাবে, ততই বাড়বে চোখের সমস্যা। তাছাড়া, অতিরিক্ত যানবাহন হওয়ার কারণে যে-পরিমাণ তেলযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে থাকছে, তাও চোখের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, অপুষ্টি তো রয়েছেই। অনেক বাচ্চা ফাস্ট ফুড খেতে যতটা আগ্রহী, শাকসবজিজাতীয় খাবার খেতে চায় না ততটা। তাই, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট-যুক্ত ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ থেকে বঞ্চিত হয় চোখ। ফলে, ধীরে-ধীরে বাচ্চার চোখের ক্ষতি শুরু হয় এবং শেষপর্যন্ত চোখ গভীর অসুখে আক্রান্ত হয়। তবে বাচ্চাদের চোখের অসুখ আর যাতে না হয় কিংবা চোখের সমস্যা শুরু হলে তা যাতে এড়ানো যায়, তারজন্যই চোখের অসুখের লক্ষণ, ডায়েট, এক্সারসাইজ এবং চিকিৎসার বিষয়ে বিশদে জানিয়েছেন ডা. সুরভি গুপ্ত।

লক্ষণ

  •  টিভি দেখার সময় চোখ দিয়ে জল গড়ানো।
  • চোখে উজ্জ্বল আলো পড়লে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • ঘনঘন চোখের পাতা উঠানামা করা
  • ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা ঠিকমতো পড়তে না-পারা
  • চোখে যন্ত্রণা হওয়া
  • মাথা ধরা বা ব্যথা হওয়া
  • চোখে উত্তাপ অনুভব করা
  • একটু দূরে থাকা কোনও কিছু দৃষ্টিতে স্পষ্ট হতে সময় লাগা
  • চোখ লাল হয়ে থাকা
  • টিভি দেখার সময় ক্রমশ টিভি স্ক্রিনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রভৃতি

ডায়েট

চোখ ভালো রাখার জন্য খেতে হবে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার। তাই, সবুজ শাকসবজিজাতীয় খাবার ছাড়াও খেতে হবে কড়াইশুঁটির দানা, বিন্স, গাজর, টম্যাটো, লেবু, আঙুর প্রভৃতি।

চোখের ব্যায়াম

  •  প্রথমে খুব কাছ থেকে কোনও জিনিস দেখার পর, দূরে সরে গিয়ে আবার ওই একই জিনিস দেখতে হবে। এই প্রক্রিয়া রেগুলার রিপিট করতে হবে অন্তত চারবার।
  • মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে, পায়ের গোড়ালির উপর ভর করে সোজা ভাবে (পিঠ টানটান করে) বসতে হবে কিছুক্ষণ। এরপর, প্রতি দশ সেকেন্ড অন্তর চোখ বন্ধ করতে হবে এবং খুলতে হবে। কয়েকবার এটা করার পর, দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ চোখের খুব কাছে রেখে, ধীরে ধীরে দূরে নিয়ে যেতে হবে এবং দৃষ্টি থাকবে হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের উপর। এই ব্যায়ামে চোখের নানা সমস্যা দূর হবে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়বে।

জরুরি বিষয়

  •  দিনে অন্তত দুবার ঠান্ডা জলে ভালো ভাবে চোখ ধুতে হবে।
  • সূর্যের আলো কিংবা কোনও উজ্জ্বল আলো সরাসরি যেন বাচ্চাদের চোখে না পড়ে
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও আইড্রপ বাচ্চাদের চোখে ব্যবহার করা উচিত নয়
  • টিভি দেখার সময় যেন অন্তত দশ ফিট দূর থেকে বসে দ্যাখে এবং টিভি ও কম্পিউটার-এ এক্সট্রা স্ক্রিন (প্রোটেকটর) ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • বাচ্চারা যেন অল্প আলোয় লেখাপড়া না করে।
  • চোখ ভালো রাখার জন্য অন্তত আট থেকে দশঘন্টা ঘুমোনো উচিত ছোটোদের।

করোনাকালে ডায়েট এবং ফিটনেস

নিয়মিত প্রায় ৩৪-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে যাচ্ছে তাপমাত্রা। এই তীব্র তাপমাত্রা এবং করোনা-অতিমারির আবহে, আমাদের শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সঠিক হজমের গুরুত্ব রয়েছে। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে, সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন ডা.সঞ্জয় মণ্ডল।

এই করোনা সংক্রমণের আবহে কী ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত আমাদের?

গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে, প্রচুর তরল পান করা উচিত আমাদের। অর্থাৎ, দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার তরল গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্লেইন জল পান করা উচিত। এক্ষেত্রে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ফ্লাস্কগুলিতে জল বহন করা উচিত এবং দোকানগুলি থেকে বোতলজাত ভালোমানের জল কেনা উচিত। ক্যান-আকারে থাকা কোমল পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিংকস প্রভৃতি এড়ানো উচিত।

মনে রাখতে হবে, কৃত্রিম পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ক্যালোরি থাকে এবং হাইপারটোনিক হয়। অতএব, কোমল পানীয় ভালো স্বাদ দিতে পারলেও, আসলে শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে না। সফট ড্রিংকস-এ বেশি পরিমাণে শর্করা উপস্থিত থাকার কারণে, স্বাস্থ্যের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই, ক্যানজাত ফলের রসের পরিবর্তে, আমাদের সর্বদা গোটা ফল খাওয়া উচিত। কারণ, গোটা ফল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অন্যান্য খনিজ সরবরাহ করে। যা ফলের রসে পাওয়া যায় না সঠিক পরিমাণে।

আর ডায়াবেটিস না থাকলে, নারকেল জলও পান করতে পারেন। এতে থাকা ইলেক্ট্রোলাইটগুলি মারাত্মক ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক ইত্যাদি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর হতে পারে।

অত্যধিক গরম এবং এই করোনাআবহে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?

খাবারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, গরমের সময় সহজেই হজম হয় এমন কম তেলমশলা-যুক্ত হালকা খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফাস্ট ফুড খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এই সংকটপূর্ণ সময়ে পরিবর্তে খেতে হবে মরশুমি ফল, স্যালাড এবং শাকসবজি। যেহেতু বেশিরভাগ খাবার এই গরম আবহাওয়ায় সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই সবসময় টাটকা অর্থাৎ, তখনই তৈরি করা হয়েছে এমন খাবার খেতে হবে। বাইরের তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় খোলা রাখা খাবারগুলি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া, রাস্তার খাবার একেবারে খাওয়া উচিত নয় এখন। কারণ, করোনা ছাড়াও এই সময় টাইফয়েড এবং গ্যাস্ট্রো এন্টেরাইটিসের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এই সময় আর কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?

কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা থাকে এই সময়। আর কোষ্ঠকাঠিন্য স্পষ্টতই পাইলস এবং ফিশারের মতো অ্যানোরেক্টাল সমস্যাগুলির প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। সঠিক ভাবে তরল গ্রহণের অভাবে এগুলি মূলত ঘটে থাকে। তাই নিয়মিত সঠিক পরিমাণে জল পান করুন।

এখন বেশিরভাগ সময়ই আমরা বাড়িতে কম পরিশ্রম করে দিন কাটাচ্ছি ফিটনেস এবং শরীরে সঠিক ক্যালোরি বজায় রাখব কী করে?

আমাদের মাথায় রাখতে হবে, স্থূলতাও এক বিপজ্জনক অসুখ। অতএব, দীর্ঘ সময় বসে কাজ না করে, মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করুন এবং সঠিক ক্যালোরির খাবার খান। সেইসঙ্গে, খাবার হজম করার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না। আর স্থূলতা এড়াতে এক্ষেত্রে আপনার শরীরের ওজন, বয়স এবং অন্যান্য ঘাটতি দেখে নিয়ে চিকিৎসক আপনাকে জানিয়ে দেবেন প্রতিদিন কত ক্যালোরির প্রয়োজন আপনার এবং এর জন্য কতটা কী খেতে হবে।

এই করোনার আবহে বিশেষ আর কী কী সতর্কতা নিতে হবে?

এই করোনার আবহে রোগ প্রতিরোধের তিনটি স্তম্ভ অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। এর মধ্যে মাস্ক, নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব এবং হাতের স্বাস্থ্যবিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অথবা হাত স্যানিটাইজ করতে হবে কিছু সময়ের ব্যবধানে। তবে গরমে সবসময় মাস্ক পরা কঠিন মনে হলে, ফাঁকা জায়গায় থাকলে মাস্ক একটু নামিয়ে ভালো ভাবে অক্সিজেন নিয়ে নিন। আর এখন কোথাও ভিড় করা উচিত নয়। আর যে-সমস্ত খাবার কাঁচা খাওয়া হয়, সেগুলো গরমজলে ভালো ভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় এখন না যাওয়াই ভালো। পরিবর্তে, নিরাপদে ঘরে বসে খাবার তৈরি করে খাওয়া উচিত। কারণ ঘরের খাবার খেলে যেমন শরীর ভালো থাকবে, ঠিক তেমনই আর্থিক সাশ্রয় ঘটাবে।

এ প্রসঙ্গে আরও মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে খেতে হবে এবং রাত ১১টার মধ্যে ঘুমোনোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করতে হবে পুরোপুরি।

ডা. সঞ্জয় মণ্ডল,

গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল সার্জন এবং অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কোপিক ও জিআই অঙ্কো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ

এএমআরআই হাসপাতাল,

সল্টলেক স্পেশালিটি ক্লিনিক, কলকাতা

স্বাস্থ্যরক্ষায় আমন্ড

এই অতিমারীর আবহে পারিবারিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ক্যালিফোর্নিয়ার আমন্ড বোর্ড। দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়াও, পরিবারগুলি তাদের প্রতিদিনের ডায়েট এবং জীবনযাত্রায় কতটা গুরুত্ব দেবে, সেই সমস্ত বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। এই ভার্চুয়াল সভাটি সঞ্চালনা করেন আরজে শেলী। আর এতে অংশ নিয়েছিলেন ওড়িয়া অভিনেত্রী অর্পিতা চ্যাটার্জী এবং  দিল্লী ম্যাক্স হেলথ কেয়ার-এর রিজিওনাল হেড-ডায়েটিক্স ঋত্বিকা সমাদ্দার।

Health tips
RJ Shelee, Oriya actress Arpita Chatterjee & Dietetics Ritika Samaddar

এখন বেশিরভাগ লোক বাড়ি থেকে কাজ চালাচ্ছেন এবং শিশুরা ভার্চুয়াল ক্লাসে যোগ দিয়েছে। পারিবারিক রুটিনে তাই এমন কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বিশৃঙ্খলা এবং বেমানান শিডিউলের কুফল প্রকট করে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ছাড়াও,  শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব, উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং স্ট্রেসের কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যরক্ষা হচ্ছে না সকলের। অধিবেশনটির মাধ্যমে এই বিষয়গুলিকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেন অর্পিতা এবং ঋত্বিকা। তাঁরা স্বাস্থ্যের তিনটি ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টি আকর্ষন করেন। যেমন—- পুষ্টি, ডায়েট এবং নিয়মিত অনুশীলন। উভয় অতিথি তাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে অভিজ্ঞতা এবং উদাহরণ ভাগ করে নিয়েছেন এবং ডায়েট ও জীবনযাত্রার সামঞ্জস্য বজায় রাখার এমন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যা প্রত্যেক পরিবারের স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক কল্যাণকে উৎসাহিত করবে।

সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে ইমিউনিটি বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে অর্পিতা চ্যাটার্জী বলেছেন, ‘আমরা সকলেই এই নতুন জীবনশৈলীকে স্বাভাবিকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করে যাচ্ছি। আমি অনুভব করি যে, এটি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যা আমার পরিবারের নিরাপত্তা এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। এর জন্য আমি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অভ্যাসের উপর নির্ভর করার পাশাপাশি, জিংকের মতো ইমিউনিটি-সমর্থনকারী পুষ্টি সরবরাহকারী খাবারগুলিতে মনোনিবেশ করি। আমন্ড, জিংকের উৎস হিসাবে পরিচিত, যা বৃদ্ধি, বিকাশ এবং ইমিউনিটি কার্যকারিতা রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, আমি ঘরে সব সময় আমন্ড রাখি এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতিদিন এক মুঠো আমন্ড খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করি। আমি এখন এই অনুশীলনটি অনুসরণ করে চলেছি এবং অবশ্যই অন্যান্য পরিবারগুলিকেও এটি করার অনুরোধ করছি। কারণ এতে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, রাইবোফ্লাভিন, জিংক ইত্যাদি জাতীয় পুষ্টি রয়েছে যা দীর্ঘকাল ধরে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করবে। তবে এগুলি ছাড়াও কিছুটা শারীরিক অনুশীলন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে ফিট থাকা এবং এই অভূতপূর্ব সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাও উচিত।’

অধিবেশন চলাকালীন দিল্লির ম্যাক্স হেলথ-কেয়ারের আঞ্চলিক প্রধান এবং ডায়েটিক্স ঋত্বিকা সমাদ্দার বলেছেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ভারতীয় পরিবারগুলির মধ্যে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনের গুরুত্ব অনুভব করতে শিখিয়েছে। অনেক ভারতীয় উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি), ডায়াবেটিস এবং স্থূলত্বের মতো অসুস্থতায় ভোগেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই এই বিদ্যমান অসুস্থতা কোভিড-১৯ রোগীদের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আপনি যদি এর যে-কোনও একটি রোগে ভোগেন বা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, তাহলে আপনার পরিবার এবং আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে আমন্ড এর মতো পুষ্টিকর আহার রাখুন এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার অনেকটা নিশ্চিত করুন। এ ছাড়াও, আমন্ড-এ যেহেতু কপার, ফোলেট, আয়রন এবং ভিটামিন-ই রয়েছে, এমন পুষ্টি যা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই, প্রতিদিন ডায়েটে এক মুঠো আমন্ড অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন! কারণ, মনে রাখবেন, এখন বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতে ব্যয় করছি আমরা, তাই স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রতিদিন আমন্ড সহ পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, নিয়মিত শরীরচর্চা করাও জরুরি।

 

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব