বর্ষায় ফিট থাকার সাতটি উপায়

বৃষ্টিকে উপভোগ করতে হলে আগাম সর্তকতা প্রয়োজন।  এরজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা  জরুরি।এখানে রইল সাতটি জরুরি টিপস।

(১) মশা থেকে সুরক্ষা

ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত এখন ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরমেও রোগ ব্যাধি হয় ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির জল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোকামাকড় বৃদ্ধি পায় এবং আরও নানা রোগ দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। জমে থাকা জলে মশা ডিম পাড়ে এবং দ্রুত বংশ বিস্তার করে। তাই মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে জমা জল পরিষ্কার করুন। মশার ওষুধ স্প্রে করুন। মশারি বা মসকিউটো রিপেল্যান্ট ব্যবহার করুন।

(২) প্রচুর জল খান

এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অত্যধিক। তাই শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয় বেশি। এই জলের ঘাটতি মেটাতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হবে না। এর ফলে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তবে মনে রাখবেন যে-জল পান করবেন তা যেন পরিশুদ্ধ হয়, কারণ বর্ষাকালে জলের দ্বারাও নানারকম সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

(৩)  ব্যাক্টেরিয়াল ও ফাংগাল ইনফেকশন

বর্ষাকালে ব্যাক্টেরিয়াজনিত নানা ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, কারণ বর্ষার আবহাওয়া এই ধরনের সংক্রমণের জন্য আদর্শ সময়। ত্বকের ইনফেকশন এই সময়ের কমন সমস্যা। তাই ত্বক ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ রাখবেন না। ভেজা ত্বকের কারণে ব্যাক্টিরিয়াল ও ফাংগাস ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল সাবান ও ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে আপনার ত্বক যদি অতিমাত্রায় সেন্সিটিভ হয়, তাহলে। তৈলাক্ত ত্বকে পিম্পল্স কিংবা ফুসকুড়ি হওয়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ত্বকে প্রদাহ বা চুলকানি হয়। ঘামে ভেজা বা বৃষ্টির জলে ভিজে যাওয়া জামাকাপড় বেশিক্ষণ গায়ে রাখলে সমস্যা বাড়বে। তাই স্নানের সময় অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড কয়েক ফোঁটা জলে মিশিয়ে স্নান করুন। শুকনো করে শরীর মুছে নিন। পায়ের ফাঁকে যেন জল না থাকে। পুরোপুরি শুকনো না হওয়া জামাকাপড় গায়ে পরবেন না। রাস্তা থেকে ফিরে অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড দিয়ে পা ধুয়ে নিন। ডেটল বা বেটাডিন এক্ষেত্রে অ্যান্টিফাংগাল হিসাবে কাজ করবে।

(৪) তৈলাক্ত বা জাংক ফুড নয়

এসময় শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়ে। পাচনতন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দেয়। গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। পেট খারাপের কমন সমস্যায় এসময় অনেকেই জর্জরিত হন। তাই সহজপাচ্য খাবারই এসময় গ্রহণ করা ভালো। বর্ষাকালে রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল, খোলা জায়গায় তৈরি হওয়া ধাবা বা রেস্তোরাঁর খাবার না খাওয়াই ভালো।

(৫) চোখ পরিষ্কার রাখুন

বর্ষায় চোখের নানা রকম সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই চোখের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিবার বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন। স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করে তবেই হাত চোখে লাগাবেন। কন্ট্যাক্ট লেন্স পরিচ্ছন্ন রাখুন কারণ এটাও ফাংগাল ইনফেকশনের অন্যতম কারণ হতে পারে। রাতে ঘুমোনোর আগে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল চোখে দিন। পরিষ্কার জলে একটুকরো সালফার রেখে, পরে এই জলে চোখ ধুতে পারেন।

(৬) রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান

সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করুন যা একমাত্র সুষম খাদ্য গ্রহণ দ্বারাই হওয়া সম্ভব। প্রতিদিন রসালো ফল, সবুজ শাকসবজি খাবেন। আপেল, নাসপাতি, বেদানা খান। রান্নায় অল্প রসুন ব্যবহার করুন। প্রতিদিন দই খান।

(৭) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

বর্ষায় ইনফেকশন বৃদ্ধি পায় বলে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াতের পর হাত পা ধোয়া, রুমাল পরিচ্ছন্ন রাখা, মোজা শুকনো করে পরা– এই বেসিক নিয়মগুলো মাথায় রাখবেন। বাইরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ফিরলে অবশ্যই স্নান করে নেবেন।

পরামর্শঃ  ডা. রবীন্দ্র গুপ্তা

ইন্টারনাল মেডিসিন কনসালট্যান্ট

কলাম্বিয়া এশিয়া হসপিটাল

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে ইনহেলেশন থেরাপি

সাধারণ মানুষকে অ্যাজমা এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতন করলেন  পালমোকেয়ার ইন্সটিটিউট ফর চেস্ট-এর হেড ডা. পার্থসারথি ভট্টাচার্য এবং অ্যাপোলো হাসপাতালের পালমো ইউনিট-এর এম ডি (চেস্ট) ডা. অশোক সেনগুপ্ত। অ্যাজমা রোগটি সম্পর্কে বিশদে জানানোর পাশাপাশি, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে ইনহেলেশন থেরাপি কতটা কার্যকরি, সেই বিষয়েও আলোকপাত করেছেন এই দুই চিকিৎসক।

অ্যাজমার চিকিৎসায় শুরু থেকে সঠিক ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টি ছিল অন্যতম প্রধান বিষয়।

আ্যাজমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থার নিরিখে প্রাথমিকভাবে রোগ নিদান এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভবপর হয় না, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু একটা ঝুঁকি তৈরি হয়ে যায়। ওই অবস্থায় তাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

ডা. পাথসারথি ভট্টাচার্য এই সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘অ্যাজমা হল একটি ক্রনিক রোগ, যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। অনেক রোগী, যারা প্রাথমিক চিকিৎসায় যখন একটু সুস্থ বোধ করেন, তখন তারা নিজে শরীরের প্রতি অবহেলা করে ইনহেলার নেওয়া বন্ধ করে দেন। এই ঘটনা রোগীদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনও মতেই ইনহেলার বন্ধ করা উচিত নয়।’

অ্যাজমার বিষয়ে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ডা. অশোক সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিন আমি ৭-১০ জন অ্যাজমা রোগীর চিকিৎসা করে তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

ডা. সেনগুপ্ত আরও জানান, ‘রোগীরা ইনহেলার বন্ধ করেন কেন, সেই বিষয়ে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, তারা মনে করেন ইনহেলারের পিছনে অকারণে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ইনহেলারের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন একটা ভুল ধারণাও রয়েছে মানুষের মনে। এছাড়াও বেশ কিছু মনোবৈজ্ঞানিক বাধা রয়েছে ইনহেলার ব্যবহার না করার নেপথ্যে। যেমন– চিকিৎসক সম্পর্কে অসন্তুষ্টি, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতা ইত্যাদি।’

অ্যাজমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল– ইনহেলার থেরাপি, যা ভারতে অনেক কম খরচে ব্যবহার করা সম্ভব। ইনহেলারের জন্য ব্যয় হয়ে থাকে দৈনিক ৪ থেকে ৬ টাকা। এর অর্থ হল, সারা বছর ধরে ইনহেলারের পিছনে যে-পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তার পরিমাণ, এক রাত্রি হাসপাতালে থাকতে হলে সেই খরচের চেয়েও কম।

প্রসঙ্গত ডা. ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় অ্যাজমা নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা সম্ভব হলে ফুসফুসের অবস্থাকে ভালো রাখা সম্ভব। অ্যাজমা হলে দেহের মধ্যে নানা ধরনের লক্ষণের প্রকাশ ঘটে। যেমন কাশি, বুকের মধ্যে চাপ বোধ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। তবে অ্যাজমার ক্ষেত্রে প্রথমেই রোগের নির্ণয় করাটা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে এই সমস্ত লক্ষণগুলি যদি হামেশাই প্রকাশ পেতে থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে প্রথমেই উপসর্গের সঠিক কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। পিক ফ্লো মিটারের মতো সাধারণ একটা যন্ত্র দিয়ে প্রত্যেকের অ্যাজমা নির্ণয় করা যায়। এই রোগ হলে প্রাথমিকভাবে ইনহেলেশন থেরাপির আশ্রয় নেওয়া আবশ্যক। নিয়মিত ও ধারাবাহিক ভাবে অ্যাজমার চিকিৎসা করা হলে, রোগীরা এই রোগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন এবং একেবারে স্বাভাবিক মানুষের মতো তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে যেতে পারবেন।’

‘প্রাথমিক অবস্থায় ইনহেলেশন থেরাপির আশ্রয় নিলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, রোগের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে রক্ষা করা সম্ভব, সর্বোপরি সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাছাড়া ইনহেলেশন থেরাপি হল দ্রুত কার্যকরী একটা ব্যবস্থা। কারণ, এর মাধ্যমে ফুসফুসে সরাসরি ওষুধ পৌছোয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত কম এবং ওরাল মেডিসিনে যে-পরিমাণে ডোজ ব্যবহার করা হয়, তার চেয়ে অনেক কম ডোজ ব্যবহৃৎ হয় ইনহেলেশন থেরাপিতে। সমস্ত বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই এই থেরাপি প্রয়োগ অত্যন্ত নিরাপদ,’ জানালেন ডা. সেনগুপ্ত।

অ্যাজমা সম্পর্কে

অ্যাজমা হল ফুসফুসের স্বাভাবিক শ্বাসকার্যের ক্ষেত্রে একটি ক্রনিক বৈকল্য ঘটিত অসুখ। এই পরিস্থিতিতে ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথ সংকুচিত হয়। এর ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের পরিমাণ কমে যেতে থাকে এবং ফুসফুস নানা ধরনের অ্যালার্জি যেমন– ধুলো, ঠান্ডা, পরাগ রেণু, ভাইরাস, দুষিত বাতাস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকী অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে উত্তেজিত হয়ে পড়ার ঘটনাও দেখা যায়। যখন মানুষ নানা ধরনের অ্যালার্জির সংস্পর্শে আসে তখন ফুসফুসে বায়ু চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়। পেশির মধ্যেও একটা দৃঢ়তা তৈরি হয়। ওই অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যহত হয়। অনেক সময় এই অবস্থা মাত্রাছাড়া হয়ে রোগীকে সংকটাপন্ন করে তোলে।

সাধারণভাবে অ্যাজমা হলে বুকের পেশি দৃঢ় হয়ে বুকের মধ্যে একটা চাপ বোধ তৈরি হয়। শ্বাসকষ্ট হয় এবং কাশির লক্ষণ প্রকাশ পায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অ্যাজমার লক্ষণ প্রকাশ পায় একটিমাত্র উপসর্গের মাধ্যমে। সেটি হল কাশি। এই ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায় রাত্রে আর খুব সকালে। ওই অবস্থায় বিভিন্ন কফ সিরাপ এবং ওষুধ প্রয়োগ করে এর নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। এক একজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম ভাবে অ্যাজমার লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে সব ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। তবেই অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

যদিও অ্যাজমা সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময়যোগ্য নয়, তা হলেও এই অসুখকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করা যেতে পারে। অ্যাজমার চিকিৎসায় বাজার চলতি নানান ধরনের থেরাপি রয়েছে। তা হলেও সারা বিশ্ব জুড়েই অ্যাজমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইনহেলেশন থেরাপিকেই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সেরা এবং নিরাপদ থেরাপি হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এই ক্ষেত্রে ইনহেলেশনের মাধ্যমে ড্রাগ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব এবং ড্রাগের কার্যকারিতাও অত্যন্ত দ্রুত শুরু হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু যদি কেবলমাত্র ট্যাবলেট কিংবা সিরাপের ওপর নির্ভর করতে হয় তবে ওই ড্রাগ তার কাজ শুরু করতে অনেক সময় নেয়। কারণ ড্রাগ প্রথমে পাকস্থলিতে পৌঁছোয়। এরপর সেখান থেকে রক্তের সঙ্গে মিশে সবশেষে ফুসফুসে পৌঁছোয়। এই ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, ইনহেলেশন থেরাপিতে যে ড্রাগ ব্যবহৃৎ হয়, তাতে ডোজের মাত্রা সিরাপ কিংবা ট্যাবলেটের চেয়ে অন্তত ২০ গুন কম হয়ে থাকে এবং একই সঙ্গে এই থেরাপি অনেক বেশি কার্যকরও।

একনজরে

অ্যাজমা সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য রোগ না হলেও, এই রোগের চিকিৎসায় নতুন আবিষ্কৃত ওষুধ অনেক মানুষের রোগকে নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সচল রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিসের মতো অন্যান্য ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর নানারকমের বিধিনিষেধের বেড়ি পড়ানো হয়, সেইরকম না হয়ে ক্রনিক অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসায় অনেক কম বিধিনিষেধের মধ্যে রোগীরা তাদের জীবনযাত্রা অতিবাহিত করতে পারেন। অ্যাজমা হল একটি নীরব প্রকাশিত রোগ। কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট না হলে, এই রোগ নীরবেই বাসা বাঁধে মানুষের দেহে। ওই অবস্থায় নিয়মিতভাবে ড্রাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়তো হয় না। তবে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়মিতভাবে বাজারে চালু ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে ইনহেলার ব্যবহার করলে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এই ড্রাগ কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগের প্রকাশকে বাগে আনতে সাহায্য করে এবং অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে। যে সমস্ত ক্ষেত্রে গুরুতর আক্রমণ হয়, তখন ইনহেলার রোগীকে দ্রুত উপসম ঘটিয়ে অন্তত ৪-৬ ঘন্টার রিলিফ দিতে সাহায্য করে।

জরুরিকালীন ক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। এক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি হয়। তাছাড়া কয়েকদিন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হলে ওই খরচের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। রোগী ওই সময় তার কাজকর্মও করতে পারে না। সব মিলিয়ে রোগী এবং তার পরিবার সার্বিকভাবে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। যদি অ্যাজমা রোগীরা প্রকৃত গাইডলাইন মেনে চলে এবং সেইমতো চিকিৎসা করায় তবে তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে পড়তে হয় না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে যারা সরকারি কিংবা বেসরকারি সাহায্যপুষ্ট হয়ে অ্যাজমা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাইডলাইন দেবার পাশাপাাশি, অনেক কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকে।

কীভাবে সুস্থ থাকবেন এই করোনা আবহে ?

অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি, তবুও করোনার সংক্রমণ আজও অব্যাহত। বরং বলা চলে এতদিনে আরও শক্তি সঞ্চয় করে এই ভাইরাস মানুষের দেহ-মনে ভীতির সঞ্চার করছে। অন্যান্য আরও অনেক সমস্যার কথা মাথায় রেখে আমাদের দেশের সরকার অনেক কিছুতেই ছাড় দিয়ে রেখেছেন। সরকারের একটাই লক্ষ্য, জনজীবনে স্বাভাবিকতা, গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। অতএব এখন করোনার সংক্রমণ-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে জীবনধারণ করতে হবে। অনেকেই এই বাস্তব স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনের গতিস্রোতে নেমে পড়েছেন। আবার অনেকেই সংক্রমণের ভয় কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না, ফলে আজও বাড়িতে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। বাড়ির বাইরেও যারা বেরোচ্ছেন, তাদের মধ্যেও একটাই ভয় কাজ করছে না জানি কবে করোনার সংক্রমণ তাদেরকে ছোবল মারবে।

অনেকে বলছেন, করোনা রোগী যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে সেই রোগীর বিপদের ঝুঁকি আরও ৮ গুন বেড়ে যেতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং পঞ্চাশের উপর বয়স, এক্ষেত্রে তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বেশি। বিশেষ করে যারা ৭০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে, তাদের জীবনহানির আশঙ্কা প্রায় ৯ গুন বেশি এবং যারা ৮০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে, তাদের জীবনহানির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে প্রায় ১৫ গুন। এই অবস্থায় একমাত্র বাঁচার উপায় হল শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়িয়ে নেওয়া এবং নিজেকে শক্তিশালী করে তোলা।

একদিকে এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য যেমন ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং, স্যানিটাইজেশন, হাত ধোয়া, করমর্দন না করা, মাস্ক গ্লাভস পরা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি মেনে চলা জরুরি, তেমনি অপরদিকে ইমিউনিটি মজবুত করাও খুব দরকার। যাদের ইমিউনিটি শক্তি বেশি, তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। বড়ো কোনও অসুখে পড়লেও তাদের সুস্থ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না।

অবসাদ দূরে রেখে যোগ-ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে ইমিউনিটি বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও ইমিউনিটি শক্তি বাড়াতে সুষম এবং পুষ্টিকর আহার অত্যন্ত প্রযোজনীয়।

নিধি ধাওয়ান,

এইচওডি ডাইটিক্স, সরোজ স্পেশালিটি হাসপাতাল

শিশুদের চোখ মূল্যবান

আজীবন দৃষ্টি-সুখের আনন্দ উপভোগ করার জন্য, চোখের যত্ন নেওয়া জরুরি। আর এই যত্ন নিতে হবে ছোটো থেকেই। সন্তানের চোখ ভালো রাখার জন্য গুরুদায়িত্ব নিতে হবে বাবা-মাকেই। কারণ, বর্তমানে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা এবং অসুখ বাড়ছে। ক্লাস ওয়ান-টুতে পড়া অনেক বাচ্চার চোখেই এখন চশমা দেখা যায়। আসলে, বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় পিছনে, পুরোনো কারণগুলির সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন কিছু কারণ। আর এই নতুন কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বেশি টিভি দেখা এবং কম্পিউটার-এর সামনে দীর্ঘ সময় বসে থাকা।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঘর অন্ধকার করে টিভিতে কার্টুন চ্যানেল দেখছে বাচ্চা। এইভাবে আলোহীন ঘরে বসে দীর্ঘসময় চড়ারঙের কার্টুন ছবি দেখার যে অভ্যাস, তা চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ, তীব্র গতিযুক্ত এবং নানারকম চড়া রং সমৃদ্ধ আলোর বিচ্ছুরণ চোখের নার্ভের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কম্পিউটার-এর ক্ষেত্রেও তাই। অনেকটা সময় একনাগাড়ে কম্পিউটার-এ স্ক্রিণ-এর উপর দৃষ্টি রেখে ছোটোছোটো লেখা পড়তে থাকলে, বাচ্চার সফট নার্ভের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে বাধ্য। অবশ্য শুধু কম্পিউটার কিংবা টিভি দেখার খারাপ প্রভাবই নয়, আরও নানা চিরাচরিত কারণে বাচ্চাদের কচি চোখে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। যেমন, ঘরবাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সবুজ ধবংস করা হচ্ছে। আর চোখ সবুজ যত কম পাবে, ততই বাড়বে চোখের সমস্যা। তাছাড়া, অতিরিক্ত যানবাহন হওয়ার কারণে যে-পরিমাণ তেলযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে থাকছে, তাও চোখের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, অপুষ্টি তো রয়েছেই। অনেক বাচ্চা ফাস্ট ফুড খেতে যতটা আগ্রহী, শাকসবজিজাতীয় খাবার খেতে চায় না ততটা। তাই, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট-যুক্ত ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ থেকে বঞ্চিত হয় চোখ। ফলে, ধীরে-ধীরে বাচ্চার চোখের ক্ষতি শুরু হয় এবং শেষপর্যন্ত চোখ গভীর অসুখে আক্রান্ত হয়। তবে বাচ্চাদের চোখের অসুখ আর যাতে না হয় কিংবা চোখের সমস্যা শুরু হলে তা যাতে এড়ানো যায়, তারজন্যই চোখের অসুখের লক্ষণ, ডায়েট, এক্সারসাইজ এবং চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

লক্ষণ

  •  টিভি দেখার সময় চোখ দিয়ে জল গড়ানো।
  •  চোখে উজ্জ্বল আলো পড়লে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া
  •  ঘনঘন চোখের পাতা উঠানামা করা
  •  ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা ঠিকমতো পড়তে না-পারা
  •  চোখে যন্ত্রণা হওয়া
  •  মাথা ধরা বা ব্যথা হওয়া
  •  চোখে উত্তাপ অনুভব করা
  •  একটু দূরে থাকা কোনও কিছু দৃষ্টিতে স্পষ্ট হতে সময় লাগা
  •  চোখ লাল হয়ে থাকা
  •  টিভি দেখার সময় ক্রমশ টিভি স্ক্রিণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রভৃতি।

ডায়েট

চোখ ভালো রাখার জন্য খেতে হবে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার। তাই, সবুজ শাকসবজিজাতীয় খাবার ছাড়াও খেতে হবে কড়াইশুঁটির দানা, বিন্স, গাজর, টম্যাটো, লেবু, আঙুর প্রভৃতি।

চোখের ব্যায়াম

  •  প্রথমে খুব কাছ থেকে কোনও জিনিস দেখার পর, দূরে সরে গিয়ে আবার ওই একই জিনিস দেখতে হবে। এই প্রক্রিয়া রেগুলার রিপিট করতে হবে অন্তত চারবার।
  •  মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে, পায়ের গোড়ালির উপর ভর করে সোজা ভাবে (পিঠ টানটান করে) বসতে হবে কিছুক্ষণ। এরপর, প্রতি দশ সেকেন্ড অন্তর চোখ বন্ধ করতে হবে এবং খুলতে হবে। কয়েকবার এটা করার পর, দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ চোখের খুব কাছে রেখে, ধীরে ধীরে দূরে নিয়ে যেতে হবে এবং দৃষ্টি থাকবে হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের উপর। এই ব্যায়ামে চোখের নানা সমস্যা দূর হবে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়বে।

জরুরি বিষয়

  •  দিনে অন্তত দুবার ঠান্ডা জলে ভালো ভাবে চোখ ধুতে হবে
  •  সূর্যের আলো কিংবা কোনও উজ্জ্বল আলো সরাসরি যেন বাচ্চাদের চোখে না পড়ে
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও আইড্রপ বাচ্চাদের চোখে ব্যবহার করা উচিত নয়
  • বাচ্চাদের ক্ষতিকারক রেডিয়েশন থেকে দূরে রাখুন। টিভি দেখার সময় যেন অন্তত দশ ফিট দূর থেকে বসে দেখে এবং টিভি ও কম্পিউটার-এ এক্সট্রা স্ক্রিণ (প্রোটেকটর) ব্যবহার করা প্রয়োজন
  • বাচ্চারা যেন অল্প আলোয় লেখাপড়া না করে
  • চোখ ভালো রাখার জন্য অন্তত আট থেকে দশঘন্টা ঘুমোনো উচিত ছোটোদের
  • বাচ্চাদের রুটিন আই চেক-আপ জরুরি।

গর্ভাবস্থায় সতর্কতা

মাতৃত্বের মতো সুন্দর অনুভব আর হয় না। যে-কোনও আসন্ন প্রসবার সৌন্দর্যও তার এই মাতৃত্বের সুখেরই প্রতিচ্ছবি। চিকিৎসকরাও বলেন গর্ভবতীর সৌন্দর্য এ সময় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হল, এই অবস্থায় একজন নারী সবচেয়ে প্রসন্ন থাকেন এবং স্বাস্থ্যবর্ধক ডায়েট গ্রহণ করেন। ভেতর থেকে আনন্দের অনুভূতি কাজ করে বলে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

জেনে রাখা জরুরি, এই সময়টা হল গর্ভস্থ ভ্রূণের পরিণত হওয়ার কাল। সুতরাং গর্ভবতী মা-কে শিশুটির কথা ভেবেই নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। পুষ্টির প্রয়োজন এই সময় সবচেয়ে বেশি। সুস্বাস্থ্য ও প্রসন্নতায় ভরা মন— এই দুইয়ের মেলবন্ধনেই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান

নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এসময়ে একান্ত জরুরি। শুরুর ৭ মাসে একবার করে, তারপর থেকে ১৫ দিন অন্তর এবং শেষের মাসটায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁকে যে-কোনও শারীরিক সমস্যার কথা বলুন এবং সেই সংক্রান্ত কোনও টেস্ট করাতে হলে করিয়ে নিন।

গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ হবে ভেবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্যগ্রহণ করবেন না। এতে আপনার ওজন বেড়ে যাবে এবং প্রসবে সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যালেন্সড্ ডায়েট গ্রহণ করা জরুরি। এই সময় দুধ পান করাও খুব প্রয়োজন। দুধ ও দুধের প্রোডাক্ট শিশুকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের জোগান দেবে, যা তার অস্থিগঠনে সাহায্য করবে। ক্ষীর, পুডিং, দই এগুলো আহারে রাখুন।

ফল খাওয়াও জরুরি

এই সময়ে স্বাভাবিক কারণেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের চাহিদা থাকে। ডিম, মাছ, মাংস যেমন খাবেন, তেমন পনির আর ফলও রাখুন ডায়েট-এ। শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় আয়রন ও ভিটামিন-এর জোগান পাবেন। কাঁচা স্যালাড খাওয়া আবশ্যক। দিনে দু’বার ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল খাবেন, যেমন পাকা পেঁপে, কমলালেবু, মুসম্বি প্রভৃতি।

ফ্যাট-যুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা

চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরিমাণ বুঝে ফ্যাট রাখুন প্রাত্যহিক ডায়েট-এ। মাখন খেতে পারেন ব্রেকফাস্ট-এ। ১৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফ্যাট রোজ গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে সুফলদায়ক হবে।

ব্যালেন্সড্ আহার

সবজি, ডাল, রুটি, ভাত— যাই খাবেন সেটা যেন পরিমাণমতো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ডায়েট চার্ট ফলো করুন। এরফলে আপনার ও গর্ভস্থ শিশুর, উভয়ের ওজনই ঠিক থাকবে।

ধূমপান করবেন না

এই অবস্থায় সব ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, এ সময় এড়িয়ে চলুন। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর উপর নেশার সামগ্রীর কুপ্রভাব পড়বে না।

আরামদায়ক পোশাক পরুন

এই অবস্থায় ঢিলেঢালা পোশাক পরাই শ্রেয়। প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে দেবেন না। এ সময় হালকা পরিশ্রম করা জরুরি। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন। হালকা সাজগোজ করুন। জুতোটাও আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন। পায়ের গ্রিপ ঠিক থাকে এমন জুতোই পরুন বিপদের সম্ভাবনা এড়াতে। ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডরোব পাওয়া যায় এখন বেশকিছু বিপণিতে। সেখান থেকে এই সময়ের উপযুক্ত পোশাক কিনুন।এই সময়ের জন্যই চাই রুচিশীল আরামদায়ক পোশাক যাতে উদরের স্ফীতিও চট করে লোকসমক্ষে না আসে। কিন্তু মুশকিল হল, উদরের স্ফীতি ঢাকতে অনেকেই ওভার সাইজড পোশাক পরে বিসদৃশ সাজে পথে বেরিয়ে পড়েন। এটা বোঝা জরুরি যে, হঠাৎ করে নিজের ড্রেসিং না বদলেও, আকর্ষণীয় সাজে নিজেকে প্রেজেন্ট করা যায়।

এথনিক ওয়্যার যারা পরেন তারা ঘেরওয়ালা কামিজ, আমব্রেলা কাট কুর্তি পরতে পারেন। ওয়েস্টার্ন পরলে বেলুন টপ বা ফ্রিলড ড্রেস ভালোলাগবে। আসলে পোশাক যা-ই পরুন না কেন, কমফর্ট-এর শুরুটা হয় অন্তর্বাস দিয়ে। মাতৃত্বের সময়টাতে স্তনের আকারেও পরিবর্তন আসে। সেক্ষেত্রে অন্তর্বাসের মাপেও বদল প্রয়োজন। শুরুতে কেবল নরম স্পোর্টস ব্রা পরুন। শেষের দিনগুলিতে নরম ইলাস্টিক কাপ বেছে নিন, স্টিফ আন্ডার-ওয়্যার যুক্ত ব্রা-এর বদলে। দেখবেন যাতে কাপ আর ব্রা-এর ব্যান্ড অতিরিক্ত টাইট হয়ে শরীরে না চেপে বসে। ভালো হয়, যদি স্তনের আকারের ক্রমপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, সাধারণ ব্রা থেকে ম্যাটারনিটি ব্রা-এ নিজেকে মানিয়ে নেন। একই সঙ্গে ম্যাটারনিটি ব্রা ও পরবর্তী সময়ের জন্য নার্সিং ব্রা হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, এমন ব্রা-ও আজকাল পাওয়া যায়। সে ধরনের ব্রা পরলে দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করতেও অসুবিধা হবে না। সাধারণ অবস্থায় যে-পোশাক পরেন, সেই স্টাইলেই স্টিক করে থাকুন, শুধু উদর স্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে পোশাকে ১-২ সাইজ বাড়িয়ে নিন। কেবল সুতি অথবা কোনও স্ট্রেচেবল ফ্যাব্রিকের পোশাকই কিনুন। আরামদায়ক, ঢিলেঢালা কিন্তু ফিটিং-এও বেঢপ নয়, এমন পোশাকই আপনার প্রায়োরিটি হওয়া উচিত।

এ যুগের নারীদের অন্যতম পছন্দের পোশাক জিন্স। কিন্তু  এ সময়ে জিন্স পরলেও তা ওয়েস্ট ব্যান্ড-যুক্ত জিন্স হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এছাড়া লংড্রেস, স্কার্ট-টপ, স্ল্যাক্স, কেপ্রি– এখন সবই পরছেন সাহসিনীরা। অফিসের জন্য অবশ্য ফ্রিল্ড বা বেশি ঘেরদার স্কার্ট, প্লিটেড কামিজ, লুজ ফিটিং কুর্তি, লেগিংস-ই ভালো। মলমল, ভয়েল, সুতি– এইসব ফ্যাব্রিকই আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশের পক্ষে আদর্শ।

মাসাজ জরুরি

স্তন ও পেটে হালকা মাসাজ করুন। এর ফলে স্ট্রেচমার্কস পড়বে না। স্নানের আগে ভিটামিন ডি-যুক্ত তেল দিয়ে ফুল বডি মাসাজ করুন। শোওয়া ও বসার সময় সঠিক পশ্চার মেনটেন করুন। এরফলে শিশুর পজিশন ঠিক থাকবে।

অযথা পায়ের পরিশ্রম বাড়াবেন না

গর্ভকালীন সময়ে এমনিতেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয় আপনার পা দু’টিকে। তাই পায়ের পরিচর্যা এসময় বিশেষভাবে জরুরি। অযথা পায়ের পরিশ্রম হয়, এমন কাজ করবেন না। যতটা জরুরি ততক্ষণই দাঁড়িয়ে কাজ করুন। বাকি সময় বসে বসে হাতের কাজ করুন। হাত-পায়ের নখ নিয়মিত ভাবে কাটুন, হাত-পা পরিচ্ছন্ন রাখুন।

চুল ও ত্বকের পরিচ্ছন্নতা

চুল শ্যাম্পু করার পাশাপাশি কন্ডিশনিং করাও জরুরি। ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন। ত্বকের নমনীয়ভাব বজায় রাখতে বেশি করে জল পান করুন। স্নানের পর ময়েশ্চারাইজার লাগান। এসময় অনেকেরই মুখে বলিরেখা দেখা দেয়, কিন্তু  প্রসবের পর তা মিলিয়েও যায়। মুখে ক্রিম মাসাজ করুন, এতে ত্বকের নমনীয়তা বজায় থাকবে।

হালকা মেক-আপ মন ভালো করে

নিজে সাজগোজ করে সুন্দর হয়ে থাকুন, এতে মন ভালো থাকবে। কোথাও গেলে হালকা মেক-আপ করতে পারেন। হালকা ফাউন্ডেশন, অল্প একটু ব্লাশার, ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক। চোখে লাউড মেক-আপ না করাই ভালো। একটা কাজলের রেখা টেনে স্নান করে নিন। বিশেষ কোনও সান্ধ্য পার্টিতে গেলে হালকা আইশ্যাডোও লাগাতে পারেন।

ঘুম জরুরি

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের এসময় ভীষণ প্রয়োজন। শোয়ার সময় কোমরে কষ্ট হলে হাঁটুর নীচে বালিশ দিয়ে শোবেন। পায়ের দিকের উচ্চতা যেন মাথার দিকের চেয়ে বেশি হয়। রোজ খোলা হাওয়ায় ঘণ্টা চারেক বসুন, আর রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোন।

মন চনমনে রাখুন

মনে কোনও উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তাকে ঠাঁই দেবেন না। সবসময় মনে স্ফূর্তি রাখুন। ভালো বই পড়ুন, ভালো মিউজিক শুনুন।

স্বামীর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করুন। শারীরিক কষ্টটা কখনও কষ্ট মনে করবেন না। আপনার আসন্ন মাতৃত্বকে সেলিব্রেট করুন।

কিডনি স্টোন গলানো যায় না

কিডনি বা বৃক্বে যে পাথর জমতে পারে, এ বিষয়টি এখন আর কারও অজানা নয়। আর যাদের বৃক্বে পাথর জমেছে, তারা অনুভব করেছেন এর যন্ত্রণা কেমন। কিন্তু কিডনি স্টোন (নেফরোলিথিয়াসিস) হলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে কিংবা এর সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতিটাই-বা কী, এ সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অনেকেরই নেই। ওষুধের মাধ্যমে কিডনি স্টোন গলানো যায়, এই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে অনেকের। স্টোনের আকার বৃদ্ধি হলে নিরাময় কঠিন। তাই শুরুতেই সতর্ক হোন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাকে মাধ্যম করে কিডনি স্টোন থেকে পরিত্রাণ পান। সম্প্রতি এ বিষয়ে আলোকপাত করলেন ডা. অমিত ঘোষ।

উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ  দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতায় কত রোগীর সঙ্গেই তো চিকিৎসকের পরিচিতি ঘটে, কিন্তু কোনও কোনও রোগীর কথা মনে থেকে যায়। বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তি যখন ডা. ঘোষের কাছে আসেন, তখন তাঁর পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা। একে গ্যাসের ব্যথা মনে করে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে তিনি নিজেই ওষুধ খেয়ে গেছেন। শেষে যন্ত্রণা-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এক বিশেষজ্ঞ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে গেলে তিনি সোনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন। আর তাতেই ধরা পড়ে যে, তাঁর কিডনিতে স্টোন হয়েছে। এরপরে তিনি অন্য কোনও ‘প্যাথি’তে না গিয়ে, সরাসরি ডা. ঘোষের কাছে গিয়েছিলেন। ডা. ঘোষ সব শুনে রুগিকে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে কোনও চিকিৎসাতেই কিডনি স্টোন গলানোর ব্যবস্থা নেই, যেমনটা দাবি করা হয়।’

কিডনি ও স্টোনঃ  শরীরে কিডনির বিশেষ ভূমিকা আছে। এই বিশেষ অঙ্গ ফিল্টারের মতো কাজ করে শরীরের অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর পদার্থ বর্জ্য হিসেবে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে বের করে দেয়। যখন ফিল্টারের কাজ চলে তখন মূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কিছু কেলাস, কিডনির ভেতরে এক ধরনের ডেলার সৃষ্টি করে অর্থাৎ জমাট বেঁধে যায়, যা আসলে স্টোন। ছোটো আকারের স্টোন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে গেলেও, বড়ো স্টোন অপসারণ করতে হয়। অপসৃত না হলে এরা নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি সংক্রমণ ও সেপ্টিসেমিয়া ঘটিয়ে কিডনির কার্যকারিতা পর্যন্ত নষ্ট করে দিতে পারে।

উপসর্গঃ  পাঁজরের নীচের অংশ থেকে নিতম্বের হাড় পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। মূত্র ত্যাগের সময়েও অসুবিধে হয়। যেমন, বারে বারে প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় জ্বালা এবং সঙ্গে রক্ত বেরোনো। অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা এত বেশি থাকে যে, রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

চিকিৎসাঃ  যে-স্টোন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে যায়নি, তা অপসারণে অস্ত্রোপচারই আদর্শ চিকিৎসা। ১ সেমি বা তারও ছোটো স্টোন লিথোট্রিপসির সাহায্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সমস্যা হয় বড়ো স্টোনের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পিসিএনএল (পারকিউটেনিয়াস নেফ্রো লিথোটমি) করা হয়। পিসিএনএল একটি কি-হোল সার্জারি। ছোটো ফুটোর সাহায্যে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। অ্যানাস্থিশিয়া করে পাঁজরের পর থেকে নিতম্বের হাড় পর্যন্ত অংশের যে-কোনও স্থানে ফুটো করে তৈরি করা পথে এন্ডোস্কোপের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নেফ্রোস্কোপ নামের যন্ত্রটি কিডনিতে থাকা স্টোনের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করে। এরপর আলট্রাসোনিক, ইলেকট্রোহাইড্রলিক, নিউমোব্যালিস্টিক জাতীয় প্রোব ব্যবহার করে স্টোনকে ভাঙা হয় এবং নেফ্রোস্টোমি টিউব ব্যবহার করে ভাঙা টুকরোগুলিকে সরানো হয়। এর জন্য রোগীকে ১-২ দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। এতে সম্পূর্ণভাবে স্টোন অপসারিত হয় এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়।

জরুরি বিষয়ঃ  ব্যথা কমা মানে স্টোন চলে যাওয়া নয়। কোনও ‘প্যাথিতে’ ব্যথা কমিয়ে স্টোন চলে যাওয়ার দাবি করা হলে, সোনোগ্রাফি করে দেখে তবে নিশ্চিন্ত হবেন। কিডনি স্টোন কিন্তু বারে বারে হতে পারে, তাই সতর্ক থাকবেন। প্রতিদিন অন্তত চার লিটার জল পান করবেন। চকোলেট এবং চিনাবাদাম খাবেন না। মাঝেমধ্যে ডাবের জল পান করবেন।

শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস

শিশু-কিশোরদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে, এটা আগে ভাবাও হতো না। কিন্তু এখন অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বর্তমানে অনেক বাচ্চা-ই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর যেহেতু বাচ্চারা তাদের শারীরিক অসুবিধার কথা ঠিক মতো বলে বোঝাতে পারে না, তাই রোগ সেক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায় এবং একসময় ভয়াবহ রূপ নেয়। তাই সারা বিশ্বজুড়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যাতে কিছু উপসর্গ দেখে রোগটি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাচ্চার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা তা জানতেও পারেন। বিশিষ্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা.সুব্রত দের কাছ থেকে শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে আরও বিশদে জানা গেল সম্প্রতি।

কোন বয়সের বাচ্চারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে?

এক থেকে ষোলো বছর বয়সি শিশু-কিশোররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। এদের সাধারণত টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী। এদের বয়স কুড়ির মধ্যে।

শিশু-কিশোররা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় কী কারণে?

ঠিক কী কারণে শিশু-কিশোররা ডায়াবেটিসে (বিশেষ করে টাইপ ওয়ান) আক্রান্ত হয়, তা এখনও জানা যায়নি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য। তবে এটা বলা যায় যে, ডায়াবেটিস হল- এনার্জি মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে কীভাবে বিঘ্নিত হয় শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তরস কমতে থাকে। ফলে রক্ত ধীরে ধীরে ঘন হতে থাকে এবং রক্তের স্বাভবিক ধারা (ব্লাড-ফ্লো) ব্যাহত হয়। আর রক্ত সঞ্চালন যদি স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে হৃদযন্ত্র এবং কিডনি বিকল হতে থাকে। এরফলে, অগ্নাশয়ে ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। আর ইনসুলিন ঠিক ভাবে উৎপন্ন না হলে, ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং গ্লুকোজ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে না।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এক নয়, একাধিক লক্ষণ থেকে আন্দাজ করতে পারবেন।

প্রাথমিক লক্ষণ

  • ঘন-ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • জল-পিপাসা বেড়ে যাওয়া
  • মুখ এবং গলা শুকিয়ে ওঠা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • খুব ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব করা।

গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

বাচ্চার গায়ে র‌্যাশ বেরোলে তা কোনও ওষুধেও সারে না।

গুরুতর লক্ষণ

  • পেটে অসহ্য যন্ত্রণা
  • সবসময় বমিবমি ভাব
  • প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • সবসময় ঘুমঘুম ভাব (ঝিমুনি)

চিকিৎসা

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসঃ সারা পৃথিবীতে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় একইরকম ভাবে করা হয়।

  • দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্লাড সুগার মনিটরিং করা হয়
  • খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী কী খাবে আর কী খাবে না তা ঠিক করে দেওয়া হয়
  • ইনসুলিন ইনজেকশান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রয়োজনে, ইনসুলিন-এর ডোজ বাড়ানো কমানো হয়।

টাইপ টু ডায়াবেটিসঃ যারা টাইপ টু ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত, তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া ছাড়াও, ঝুঁকি এড়াতে লাইফস্টাইল চেঞ্জ করানো হয়। যেমন–

  • ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
  • সুগার কন্ট্রোলে রাখা যাবে এমন শাকসবজি খেতে দেওয়া
  • সকাল-সন্ধে ঘাসের উপর খালি পায়ে অন্তত তিরিশ মিনিট হাঁটানো
  • সঠিক মাত্রায় (অন্তত আট ঘণ্টা) ঘুমোনো।

জরুরি পরামর্শ

  • প্রতিদিন সঠিক সময়ে খেতে হবে, খালি পেটে থাকা যাবে না
  • সুগার-ফ্রি বিভিন্নরকম খাবার খেতে হবে
  • কাচা নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে
  • শরীরের মেদ কমাতে হবে
  • কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে হবে
  • চর্বিজাতীয় কুকিং অয়েল ব্যবহার বন্ধ কতে হবে
  • ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম ফাইবারজাতীয় খাবার খেতে হবে দৈনিক
  • প্রতিদিন অন্তত দু’রকম ফল খেতে হবে

• ভাজাভুজি খাওয়া কমাতে হবে কিংবা বন্ধ করতে হবে।

ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির প্রয়োজনীয়তা

স্থূলতার সমস্যা মানুষ সাধারণ ভাবে অবেহলা করে থাকেন। ১৯৮০ সাল থেকে বিশ্বে স্থূল ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়ে হয়ছে দ্বিগুন। আমাদের দেশের ৫ শতাংশ-র বেশি মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বে স্থূল মানুষদের পরিসংখ্যানে ভারতের স্থান তৃতীয়। আমেরিকা ও চিনের পরেই। চিন ও ভারত মেলালে বিশ্বের স্থূল জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ-ই এই দুই দেশের। নগরায়ণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৯ সাল থেকে ভারতে স্থূলতা একটা মেডিকেল সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এর জেরে স্থূলরা আরও বেশি অসুখের শিকার হতে শুরু করেন। পুরুষদের তুলনায় এদেশে মহিলাদের মধ্যে অসুস্থতার হার বেশি।

এই অতিমারির আবহে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির প্রয়োজন কতটা?

এখন কোভিড অতিমারির সময়। এই সময়ে দেখা গেছে যে, যেসব স্থূল লোক কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাদের মৃত্যুর হার বেশি। সংখ্যাটা প্রায় ২৭ শতাংশ। ফলে স্থূল ব্যক্তিদের নোভেল করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার কমাতে, ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি খুবই দরকারি। তাই ব্যারিয়াট্রিক সার্জারিকে এখন শুধুই সৌন্দর্য বাড়ানোর চিকিৎসা হিসাবে দেখা হয় না। স্থূলতাকেও এখন একটি মেডিকেল সমস্যা হিসাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এখন এই অতিমারি কোনও না কোনও ভাবে আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক বেশি সময় ধরে স্ক্রিনে চোখ রাখা, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ইত্যাদির কারণে মানুষের জীবনশৈলীতে নানা রকম বদল এসেছে। অতিমারি ও তদ্জনিত লকডাউনের কারণে শারীরিক পরিশ্রমও অনেকাংশে কমে গেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। এসব ক্ষেত্রে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির উপযোগিতা রয়েছে খুবই বেশি। কারণ, এর ফলে মানুষের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং কোভিড ১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনাকে দূরে রাখে। তবে একে জরুরি সার্জারি হিসাবে ধরা হয় না। আবার এই সার্জারি অনন্তকাল ফেলে রাখাও যায় না। কারণ বহু ঘাতক রোগের উৎসে রয়েছে স্থূলতা। এটাকে অবহেলা করলে কোভিড ১৯ আরও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিতে পারে। দেখা গেছে কোভিডে সংক্রমিত স্থূলদের বয়স কম হলেও, তাদের ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হয়েছে। এতে সেরে ওঠা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

কাদের ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি করা অত্যন্ত জরুরি?

যে-কেউ নানা উপায়ে তার ওজন কমাতে পারেন। তবে যারা স্থূল, স্থায়ী ভাবে তাদের ওজন কমানোর একমাত্র উপায় হল ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি। কারও-র শরীরের ওজন বিষয়টা নির্দিষ্ট করা হয় বিএমআই ইনডেক্সের সাহায্যে। যার বিএমআই ২৭.৫-এর বেশি, তাকেই স্থূল বলা হয়ে থাকে। যাদের বিএমআই ৩৫ থেকে ৩৭.৫-এর মধ্যে তাদের বলা হয় অস্বাভাবিক ভাবে স্থূল। যখন কোনও ব্যক্তির ওজন এত বেশি হয়ে যায় যে, তার দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় এবং তার ফলে ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো রোগের শিকার হন তখনই ধরে নিতে হবে যে, তিনি অস্বাভাবিক ভাবে স্থূল। স্থূল ব্যক্তিদের প্রতি ১০ কেজি ওজন বৃদ্ধিতে, আযু তিন বছর করে কমতে থাকে।

ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির সুফল কী কী?

ব্যারিয়াট্রিক অপারেশনকে বলা হয় চিকিৎসাগত ভাবে দরকারি সময়োপযোগী সার্জারি কিংবা চিকিৎসাগত ভাবে প্রয়োজনীয় ইমার্জেন্সি নয় এমন সার্জারি। এই নামকরণ করেছে আমেরিকান সোসাইটি অফ মেটাবলিক অ্যান্ড ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি (এএসএমবিএস)। সার্জারির কার্যকারিতা ভালো করে বোঝানোর জন্য এবং কোভিড ১৯-সহ যেসব নানা ধরনের রোগের চিকিৎসা এই সার্জারির মাধ্যমে হয়, তা ভালো করে বোঝানোর জন্যই এমন নামকরণ করা হয়েছে।

সব রকম ঝুঁকি এড়াতে সার্জারির আগে রোগীকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কোভিড ১৯-এর এই নতুন পর্বে, ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি নিঃসন্দেহে স্থূল রোগীদের জীবন নিরাপদ করে তোলে। কারণ কোভিড ১৯ সংক্রমিত স্থূল রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু-সহ নানা ধরনের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এটা তাই সবসময়ই বাড়তি একটা ঝুঁকি হিসাবে থেকে যায়।

ওবেসিটি মুক্ত হয়ে মাতৃত্বলাভ

শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও,নানারকম অসুখের যেমন জন্ম দেয় মেদবহুল অথবা স্থূলকায় চেহারা,ঠিক তেমনই মাতৃত্বলাভের ক্ষেত্রেও প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ওবেসিটি।এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন আই এল এস হাসপাতালের বেরিয়াট্রিক সার্জন এবং মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. ওম তাঁতিয়া।

ওবেসিটি বা মোটা হওয়ার কারণ কি?

ওবেসিটি আসলে লাইফস্টাইল ডিজিজ। হাই ক্যালোরি ইনটেক এবং ক্যালোরি এক্সপেনডিচার-এ যদি ভারসাম্য না থাকে, তাহলেই এই সমস্যা হয়। ফাস্ট ফুড, সেড্যানটরি (অলস) লাইফস্টাইল, ল্যাক অফ এক্সারসাইজ, জেনেটিক এবং কিছু হরমোনাল ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ওবেসিটির ক্ষেত্রে।

ওবেসিটি মাপা হয় কীভাবে? অর্থাৎ কতটা মোটা হলে সমস্যা হতে পারে ধরে নেওয়া হবে?

হাইট এবং ওয়েট-এর রেশিয়ো-কে বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স বলা হয়। এই বিএমআই-এর পরিমাণ থেকেই ওবেসিটির সমস্যা আছে কিনা বোঝা যায়। কারও বিএমআই যদি ১৮ থেকে ২২.৫ হয়, তাহলে নর্মাল। যদি ২২.৫ থেকে ২৭.৫ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওভারওয়েট। কিন্তু যদি ২৭.৫-এর বেশি হয়, তাহলে ওবেসিটির সমস্যা ধরে নিতে হবে।

ওবেসিটির সমস্যা দূর করতে লাইপোসাকশন না করে, বেরিযাট্রিক সার্জারি করা হবে কেন?

লাইপোসাকশন একটা কসমেটিক সার্জারি। চিকিৎসা-শাস্ত্রে একে বডি স্কাল্পটিং সার্জারি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে স্কিন-এর নীচের অতিরিক্ত ফ্যাট সাক করে বাদ দেওয়া হয়। কোমর, পেট এবং থাই-এর শেপ ঠিক রাখার জন্য সাধারণত লাইপোসাকশন করা হয়। কিন্তু বেরিয়াটিক সার্জারি-তে পাকস্থলির উপর অপারেশন করে ওজন কমানোর চেষ্টা করা হয়। এই অপারেশন-এ পাকস্থলিকে কেটে ছোটো করা হয়, যাতে রোগীর ওজন কমে যায়। সেইসঙ্গে, ডায়াবেটিস, প্রেসার ও অন্যান্য নানারকম অসুখের হাত থেকে অনেকটা রেহাইও পান রোগী।

ধরুন, কোনও মহিলা অতিরিক্ত ওজনের জন্য মা হতে পারছেন না, বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর কি তিনি মা হতে পারবেন?

বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর মা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অবশ্য সেই মহিলার যদি ইনফার্টিলিটির অন্য কোনও সমস্যা না থাকে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বেরিয়াট্রিক সার্জারি করার দেড় থেকে দুই বছর পর সন্তান নেওয়া উচিত।

কারও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন না হয়ে যদি বেশি হয় এবং সেই ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং তার ইউরিক অ্যাসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড যদি বেশি থাকে, তাহলে তিনি কি বেরিয়াট্রিক সার্জারি করিয়ে কোনও উপকার পাবেন?

ডায়াবেটিস থাকলে কিংবা ইউরিক অ্যাসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলেও বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা যায় এবং উপকার পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত আহারের জন্য কারও যদি ওজন বেশি হয় এবং তিনি যদি বেরিয়াট্রিক সার্জারি করান, তাহলে সার্জারির পরেও কি তিনি আগের মতো খাদ্যাভাস চালু রাখতে পারবেন?

দেখুন, বেরিয়াট্রিক সার্জারি ওবেসিটির সমস্যা দূর করে ঠিকই কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। অতএব সার্জারির পর সবকিছু খাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু পরিমাণ কমাতে হবে।

ভারী চেহারার লোকেদের মধ্যে অনেকেই বলেন, গাড়ি চালানোর সময়ও তাদের ঘুম পায়। এক্ষেত্রেও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব?

যাদের বডি ওয়েট স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ, সাধারণত তারাই এই সমস্যায় (ঘুম পাওয়া) ভোগেন। এই সমস্যাকে বলা হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনোইয়া’। বেরিয়াট্রিক সার্জারি এই সমস্যার সমাধান করে এবং অনেকবেশি এনারজেটিক করে তোলে।

দীর্ঘ দশ বছর ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এবং ওবেসিটির সমস্যাও আছে, এমন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারির সাহায্য নিতে পারেন?

ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার এবং প্রৌঢ়ত্ব, এসব বেরিয়াট্রিক সার্জারির ক্ষেত্রে কোনও বাধা নয়।

যদি কেউ মানসিক অবসাদে ভোগেন, নিয়মিত মদ্যপান করেন এবং যদি তার ওবেসিটির সমস্যা থাকে, তাহলে তিনিও কি বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে সত্যিটা জানিয়ে রাখছি, যদি মদ্যপান বন্ধ না করা হয়, তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরও কোনও সুফল পাওয়া যাবে না। অতএব, প্রফেশনাল হেল্প নিয়ে আগে মদ ছাড়িয়ে, তারপর রোগীর বেরিয়াট্রিক সার্জারির কথা ভাবা উচিত।

অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেক মহিলার পিরিয়ড-এর সমস্যা হয়। কী করা উচিত তাদের?

প্রথমে, ‘ভিগরস ওয়েট থেরাপি’র সাহায্য নেওয়া উচিত। তারপরও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা যেতে পারে।

ওবেসিটি সমস্যার সমাধানে বেরিয়াট্রিক সার্জারিই কি একমাত্র মাধ্যম?

আমরা প্রথমে ডাইরেক্টলি ওয়েট কন্ট্রোল-এর পরামর্শ দিই। অর্থাৎ, যদি এক্সারসাইজ করে কিংবা ওষুধে ওজন কমানো যায়, তাহলে সার্জারির পথে যাই না। কিন্তু যদি স্বাভাবিক ওজনের দ্বিগুণ ওজন হয় এবং তা ডাইরেক্টলি কন্ট্রোল করা সম্ভব না হয়, তাহলে বেরিয়াট্রিক সার্জারি করিয়ে নেওয়াই ভালো।

বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর কোনও সাইড এফেক্ট হতে পারে কি?

সত্যি বলতে কি, অন্যান্য সার্জারির মতো বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরেও কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে। তবে তার সম্ভাবনা খুবই কম, মাত্র দুই শতাংশ। লং টার্ম সাইড এফেক্ট-এর মধ্যে হতে পারে নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি। তবে তা ওষুধ দিয়ে ঠিক করা সম্ভব। তাই এককথায় জানাচ্ছি— বেরিয়াটিক সার্জারি খুবই নিরাপদ।

হাইড্রোথেরাপি

পানীয় জল, স্নানের জল, বাসন ধোয়ার জল– এই ব্যবহার প্রণালী আমরা ছোটো থেকেই জেনে এসেছি। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য, ফুলের বাগানের জন্য, খাবার তৈরির জন্য, কারখানায় ব্যবহারের জন্যও জল অপরিহার্য। কিন্তু, এর বাইরেও রোগমুক্তির জন্য জলের গুরুত্ব অপরিসীম। আর রোগমুক্ত হওয়ার জন্য বা সুস্বাস্থ্যের জন্য জলকে মাধ্যম করে যে চিকিৎসা করা হয়, তাকে বলে ‘হাইড্রোথেরাপি’।

এই হাইড্রোথেরাপি-র ইতিহাস ১০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। গ্রিক এবং রোমান সংস্কৃতি ছাড়াও, আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এই থেরাপির উল্লেখ আছে।

জলের কার্যকারিতা

  • এনার্জি বাড়ায়
  • রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে
  • জলকে মাধ্যম করে শরীরচর্চা করলে বাড়তি মেদ এবং ওজন কমে
  • ক্লান্তি দূর করে
  • জলীয় আবহে থাকলে শরীর ও মন সতেজ-স্নিগ্ধ থাকে

কার্যপদ্ধতি

হাইড্রোথেরাপি-র নিয়ম অনুযায়ী বলা হয়, হালকা গরম জল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। উষ্ণ জল পান করলে পেটের অসুখ বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্লান্তি দূর হয়।

আমরা যখন শরীরকে জলে ডুবিয়ে রাখি, তখন শরীর অনেক হালকা মনে হয়। শরীরকে এমনই আরামে রাখার প্রয়োজন আছে। সুইমিং পুল, পুকুর কিংবা নদীর জলে যখন শরীরটাকে ডুবিয়ে রাখি, তখন মালিশের মতো অনুভূতি হয়। আসলে, এইরকম জলের ব্যবহারে আমাদের নির্জীব ত্বক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়, তাই আরাম লাগে। হাইড্রোথেরাপির মাধ্যমে আর্থ্রাইটিস, ডিপ্রেশন, মাথাধরা, স্টমাক প্রবলেম, নার্ভ প্রবলেম, স্লিপ ডিসঅর্ডার্স প্রভৃতি সমস্যার চিকিৎসা করা হয়।

হাইড্রোথেরাপির রকমভেদ

  • সম্পূর্ণ স্নান
  • অর্ধেক শরীরকে জলে নিমজ্জিত রাখা
  • জলে শুধু পা দুটো চুবিয়ে রাখা
  • স্টিম বাথ নেওয়া
  • উষ্ণ জলে শরীর ডুবিয়ে রাখা
  • ঠান্ডা জলে শরীর চুবিয়ে নেওয়া
  • গরম এবং ঠান্ডা জল মিশিয়ে শরীর ভেজানো

চিকিৎসা

যদি বুকে কফ জমে অথবা হাতে পায়ে চোট লাগে কিংবা শরীরের কোথাও ফোড়াজাতীয় কিছু হয়, তাহলে হালকা গরম জলে কাঁচা নিমপাতা ফেলে, সেই জলে তোয়ালে ভিজিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বারবার চেপে ধরতে হবে। কিছুক্ষণ সময় ধরে দিন-দুয়েক এভাবে হাইড্রোথেরাপি করলে রোগমুক্তি নিশ্চিত। তবে যদি জ্বরে আক্রান্ত হন, তাহলে এর ঠিক বিপরীত অর্থাৎ, ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে, কপালে বারবার জলপট্টি দিয়ে জ্বরের থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অর্শ, প্রস্টেট গ্রন্থি ফুলে যাওয়া কিংবা যৌনাঙ্গে যদি সাধারণ রোগজীবাণু বাসা বেঁধে অ্যালার্জি হয়, তাহলে হাইড্রোথেরাপিকে মাধ্যম করলে রোগমুক্তি সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশেষভাবে হাইড্রোথেরাপি করতে হবে।

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনে অন্তত তিন লিটার জল পান করা জরুরি। কারণ জল খেয়ে পরিশ্রম করলে মূত্র এবং ঘামের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য বেরিয়ে যাবে এবং শরীর রোগমুক্ত থাকবে। ঠিকমতো জল পান করলে খাবারও ঠিকঠাক হজম হয়। তাই, লিভার ভালো থাকে, আর লিভার ভালো থাকলে ত্বকও ভালো থাকবে এবং সৌন্দর্য বজায় থাকবে। বিশেষকরে যারা খেলাধুলো করেন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের উচিত প্রতিদিন অন্তত চার লিটার জল পান করা। কারণ, যদি দুই শতাংশ জলও কম খান, তাহলে খেলাধুলো কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা অন্তত ২৫ শতাংশ কমে যাবে।

গরমকালে হাইড্রোথেরাপি

  •  ঠান্ডা জলে স্নান করুন
  • রোদের থেকে ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে জল পান করবেন না, অন্তত পনেরো মিনিট বাদে জল পান করুন
  • কাপড়ের মধ্যে বরফের টুকরো রেখে সারা শরীরে বোলান
  • চোখে মাঝেমধ্যে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন এবং চোখের উপর (বন্ধ করে) গোলাপজলের পট্টি রাখুন
  • তরমুজ, শসা, পেঁপে, লিচু, আঙুর প্রভৃতি রসালো ফল খান, দিনে অন্তত একবার
পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব