কিডনি সুস্থ রাখবেন কীভাবে?

সময়ে সঙ্গে-সঙ্গে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। যে-রোগ ৪০ বছরের পর হতো, সেটা ২০ বছর বয়সেই হচ্ছে। বাচ্চারাও অল্প বয়স থেকে বিভিন্ন অসুখে ভুগছে। ডাক্তাররা বলছেন যে, কিডনির সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সঠিক পরিমাণমতো জল না খাওয়ার কারণে লোকেদের কিডনিতে স্টোন হচ্ছে। ব্লাড প্রেসার এবং সুগার বাড়ার কারণে বাড়ছে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ।

ফোর্টিস হসপিটালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উপল সেনগুপ্ত জানালেন, কিডনির অসুখ যদি দীর্ঘদিন ধরে শরীরে থাকে, তবে একে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলা হয়। এই রোগ এড়াতে তিনি কিছু গাইডলাইন দিলেন

  • ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)-এর পেছনের প্রধান কারণগুলি হল হাই ব্লাড প্রেশার এবং হাই ব্লাড সুগার লেভেল। সুতরাং, সিকেডি এড়ানোর জন্যে এই মাত্রাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • অনেক ওষুধ রয়েছে যা কিডনির জন্যে ক্ষতিকারক, সেগুলোকে কম খাওয়া উচিত। যেমন, পেইনকিলার এবং অ্যান্টাসিড
  • গরমকালেই শুধু নয়, সারা বছরেই সঠিক পরিমাণে জল পান করা দরকার
  • ৪০ বছর বয়সের পরে নিয়মিত কিডনি চেক-আপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষত যদি কেউ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন এবং পরিবারে সিকেডির ইতিহাস থাকে
  • কিছু মহিলাদের নির্দিষ্ট রোগ যেমন এসএলই, গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত কিডনি রোগ রয়েছে, যার ফলে সিকেডি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতে নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ফোর্টিস হসপিটালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ কর্মকার বললেন, কিডনি সুস্থ রাখার সবথেকে সহজ উপায় হল, সঠিক পরিমাণে জল খাওয়া। পরিমিত জল না খেলে, কিডনিতে স্টোন, পলিসিস্টিক কিডনি রোগ এবং ইউরিনারি ইনফেকশন হতে পারে। তিনি কয়েকটি তথ্য তুলে ধরে বললেন

  • জল-ই হল জীবন। কিডনি সুস্থ রাখতে ডিহাইড্রেশন এড়ান
  • জল খাওয়ার পরিমাণ এক একজনের এক এক রকম। তেষ্টা বুঝে জল পান করতে হবে
  • অতিরিক্ত জল খেলে, সোডিয়াম-এর মাত্রা কমে যেতে পারে। সেটাও শরীরের জন্যে ক্ষতিকারক।

স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি

স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি, একটি সঞ্চালন ব্যাধি যা স্বাভাবিকভাবে পেশির সঞ্চালন ব্যহত করে। যার ফলে রোগীর সমস্যার সৃষ্টি হয়। সীমিত গতিসঞ্চালন, দৈনিক জীবনযাত্রা ব্যহত হওয়া এবং ঘুমের বিশৃঙ্খলা– এসবগুলি স্প্যাস্টিক রোগীদের জীবনযাত্রার উপর অসম্ভব প্রভাব ফেলে, যার ফলে স্বাভাবিক কাজকর্মগুলিও হয়ে ওঠে কঠিন।

এই রোগে আক্রান্তরা কী ধরনের সমস্যার শিকার হন?

স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি হল, পেশির চরম দৃঢ়তা এবং ব্যথাযুক্ত খিঁচুনিসহ শিথিলসঙ্কল্প গতির বিশৃঙ্খলা, যা অনেক পরিমাণে রোগীর জীবনের মানের অবনতি ঘটায়। যেসব রোগীর মধ্যে স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি আছে, তারা কেবলমাত্র শরীর কুঁকড়ে যাওয়া এবং অঙ্গবিকৃতির দ্বারা আক্রান্ত হন না, তার সঙ্গে খিঁচুনি-সংক্রান্ত ব্যথাতেও আক্রান্ত হন, যা তাদের আরও বেশি নিস্তেজ করে দেয়। ব্যথাপূর্ণ খিঁচুনির সঙ্গে অন্যান্য অবস্থাগুলি কখনও কখনও এত চরমে ওঠে যে, রোগী ব্যথায় কেঁদে ফেলেন। এটি হয় যখন পেশি অস্বাভাবিকভাবে দৃঢ় হয় এবং পেশি উপরদিকে বাড়তে থাকে। এই ব্যথাপূর্ণ অবস্থাকে বলা হয় ফ্লেক্সর স্প্যাজমস।

স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তরা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে ওঠেন কি?

স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসিকে সম্পূর্ণভাবে সারানো যায় না, কিন্তু কার্যকরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ব্যাসলোফেন হল পালসি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবথেকে বেশি কার্যকরি খাওয়ার ওষুধ। ব্যাসলোফেন নিউরোফ্লেক্স পাথওয়েসের মধ্যে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং ব্লাড ব্রেনের বাধা অতিক্রম করে শিরদাঁড়ার উপর কাজ করে।

অবশ্য ব্যাসলোফেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হল দৃঢ় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, যেমন ওষুধের বাধা-নিষেধ, মাথাঘোরা, দুর্বলতা, প্রভৃতি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন এই ওষুধের ব্যবহার থেকে মানুষের শরীরে এই ওষুধটির কার্যকারিতার প্রতি প্রতিরোধকতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই সব পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও, ব্যাসলোফেন চরম স্প্যাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃৎ ওষুধ। কেবলমাত্র রিহ্যাবিলিটেশন (ফিজিওথেরাপি) পদ্ধতি যথেষ্ট উপকার করতে পারে না।

এই অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনও পথ খোলা আছে কী?

আছে। জরুরি সময়ের জন্য এমন উদ্ভাবনী চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন, যেটি এই সমস্যা সমাধানের জন্য হবে অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি স্প্যাস্টিসিটির মতো অবস্থার নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন এক ইন্ট্রাথেক্যাল পাম্প সিস্টেমের উদ্ভাবন হয়েছে, যেটি মেরুদণ্ডে ওষুধ যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ইন্ট্রাথেক্যাল ব্যাসলোফেন বা ‘আইটিবি’-র প্রয়োগের ফলে ব্যাসলোফেনের প্রতিক্রিয়া সর্বাধিক করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম করে।

‘আইটিবি’ আসলে কী এবং এই রোগের চিকিৎসায় কীভাবে কাজে লাগে?

এই নবতম যন্ত্রটি হল একটি অটোমেটিক পাম্প, রোগীর ত্বকের নীচে লাগানো থাকে। এটি যুক্ত করা থাকে একটি ক্যাথেটারের সঙ্গে, যেটি সোজা পৌঁছোয় মেরুদণ্ডে এবং শেষ হয় ইন্ট্রাথেক্যাল স্পেসে, যেখান থেকে এটি অল্পমাত্রায়, মাইক্রো-ফাংশনে ওষুধ নিষ্ক্রমণ করে সরাসরি মেরুদণ্ডের দিকে।

ওষুধ সরাসরি ইন্ট্রাথেক্যাল স্পেসে দেওয়া হয় বলে সেটি আরও বেশি কার্যকরি বলে প্রমাণিত। কারণ, ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছোয় বলে রোগীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি হয় এবং তিনি ব্যথা থেকে মুক্ত হন। আর এই পাম্পটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে অল্প অল্প পরিমাণে ওষুধ মেরুদণ্ডে সঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছোয়, যেখান থেকে এটি সরাসরি পৌঁছোয় মস্তিষ্কে এবং তার ফলে কেবলমাত্র ওষুধের প্রভাব অধিক মাত্রায় কার্যকরি এবং পেশির সঞ্চালনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া শরীরের অন্যান্য জায়গার উপর থেকে প্রায় সম্পূর্ণ লোপ পায়।

উল্লেখ্য ৫০ ইউজি ইন্ট্রাথেক্যাল ব্যাসলোফেন বোলাস ট্রায়ালের এক ডোজ, স্প্যাস্টিসিটি এবং স্প্যাজম থেকে আরাম দেয় এবং থ্রি পয়েন্টস ডাউন অন অ্যাশওয়ার্থ এবং স্প্যাজম স্কোর করে। রোগীকে তারপরে ইন্ট্রা-অপারেটিভ ফ্লুরোস্কোপিক গাইডেন্সের, অর্থাৎ একটি প্রোগ্রাম করা ইন্ট্রাথেকাল ব্যাসলোফেন (আইটিবি) ইনফিউজন সিস্টেমের অধীনে রাখা হয় এবং প্রতিস্থাপন করা হয়।

সাম্প্রতিকতম ফলো-আপে দেখা যাচ্ছে যে, রোগীর উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে অ্যাশওয়ার্থ স্কেল অফ স্প্যাস্টিসিটি অনুযায়ী। সেইসঙ্গে স্প্যাস্টিসিটি, ক্লোনাস এবং স্প্যাজম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। এছাড়া, এডিএল (অ্যাক্টিভিটিস অফ ডেইলি লিভিং) অর্থাৎ দৈনিক জীবনযাত্রার কাজে এবং কিউওএল (কোয়ালিটি অফ লাইফ), অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত হয় এবং শারীরিক ব্যায়ামে, পেশি চালনার শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এই বিরল ধরনের সার্জারি হাজার হাজার অক্ষম স্প্যাস্টিক রোগীদের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক নতুন অবদান, এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছে।

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, আইটিবি অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে শুভফল দান করেছে। ফলে ব্যথা হ্রাস পেয়েছে এবং পেশির সঞ্চালনের কাজ এবং নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যা

একজন মানুষকে জীবনের নানা পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মানুষ হিসাবে আরও যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য তাকে এক পর্বের শিক্ষাকে অন্য পর্বে বহন করে নিয়ে যেতে হয়। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, শেক্সপিয়র যথার্থই বলেছিলেন, বার্ধক্য হল- দ্বিতীয় শৈশব। জীবনের এই চূড়ান্ত পর্বে প্রায়ই এমন সব বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জ সামনে এসে হাজির হয়, যেগুলি পেরিয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক তথা লেখক ডেভিড বাওয়ি একবার বলেছিলেন, মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়াটা হল একটা অসাধারণ প্রক্রিয়া। যখন আপনি হয়ে ওঠেন সেই রকম ব্যক্তি, ঠিক যেমনটি আপনার হয়ে ওঠা উচিত ছিল। জীবনে পরিবর্তনই শাশ্বত, এটা মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা ততটাই কঠিন।

আনুমানিক হিসাবে শুধুমাত্র ভারতেই যাঁরা বযস্কদের মধ্যে পড়েন (৬৫ বছরের বেশি), তাঁদের ২০.০৫ শতাংশের কোনও না কোনও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কো-মরবিডিটি রয়েছে। এদের মোট সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষ। এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে। পরম্পরাগত ভাবে ভারতীয়রা যৌথ পরিবার ব্যবস্থার মধ্যে থাকেন। এইসব পরিবারের অর্থনীতি হল কৃষিভিত্তিক, যেখানে প্রত্যেকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকে। আর্থিক লাভ-ক্ষতি কিংবা সামাজিক দায় সকলে ভাগ করে নিয়ে থাকেন। এইসব পরিবারে ছোটোরা বড়োদের সম্মান করে।

গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এত দ্রুতগতিতে সবকিছু বদলে দিয়েছে যে, সমাজ নিজেকে দ্রুত গতির নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী করে তুলতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই জীবিকার খোঁজে পূর্বপুরুষদের বাসস্থান থেকে বহু দূরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন এবং এর ফলে ভেঙে পড়েছে যৌথ পরিবার।

পরিবারের সন্তান সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে এবং তারাও শিক্ষা ও জীবিকার কারণে দূরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এর জেরে দ্রুত গড়ে উঠছে ছোটো পরিবার এবং বয়স্করা পড়ে থাকছেন পূর্বপুরুষদের ভিটেয়। ব্যক্তিগত সাহায্য, জনবলের সমর্থন, মানসিক ভরসা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহায়তা কিংবা যত্ন বেশি বয়সে পৌঁছে, নিঃসঙ্গ জীবনে তাঁরা এসব কিছুই পাচ্ছেন না।

বেড়ে ওঠার পর্বে কারও-র জীবনে প্রথম মৃত্যুর আশঙ্কা হতেই পারে। কিন্তু লোকের যখন বয়স বাড়ে, তখন জীবনে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি হয়, আরও ঘন ঘন হয়। এর ফলে জীবনের অনিবার্য সত্য হিসাবে এই শূন্যতার সঙ্গে বয়স্করা আরও মানিয়ে চলতে বাধ্য হন। তাছাড়া, অতিমারি এসে এই বয়স্ক মানুষদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে।

লকডাউনের ফলে তাঁরা নিজেদের দৈনন্দিন কাজকর্মের রুটিন মেনে চলতে পারেননি। বাড়ির বাইরে কিংবা সমবয়স্কদের সঙ্গে মিলে সময় কাটানোর সুযোগ তাদের জীবনে কমছে। এই অতিমারি বয়স্কদের মধ্যে মানসিক বিড়ম্বনা, শূন্যতাবোধ ও দুঃখের অনুভূতিকে তীব্র করার অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। এইসব বয়স্কদের জীবনে বার্ধক্যজনিত সমস্যা তো থাকছেই। তার সঙ্গে মন ও শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, নিঃসঙ্গতা, মৃত্যুভীতির মতো অনুভূতির মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রায়ই যেতে হচ্ছে।

বৃদ্ধ বয়সের যে-শারীরিক দুর্বলতা এবং স্বাধীন ভাবে চলাফেরার ক্ষমতা হারানো, এগুলোকেও তাঁরা রীতিমতো ভয় পেতে শুরু করেন। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে এই ধরনের অনুভূতির মধ্যে দিয়ে অনেককে যেতে হয়। এই রকম সব পরিস্থিতির মোকাবিলায় গুরুত্ব রয়েছে বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের। এর ফলে বয়স্ক প্রজন্ম বুঝতে পারবেন যে, জীবনের যাত্রাপথে তাঁরা মোটেই নিঃসঙ্গ নন।

থেরাপি উপযুক্ত চিকিৎসা 

  • এক্ষেত্রে হতে পারে বৃদ্ধ বয়সের লাঠির মতো ভরসা। যাকে আঁকড়ে ধরে বয়স্করা তাঁদের জীবনের সোনালি দিনগুলো আরও বেশি মানসিক ধৈর্য ও প্রশান্তির সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারেন
  • বার্ধক্য হল জীবনচক্রের স্বাভাবিক পর্ব এই বিষয়টার সঙ্গে তাঁরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন
  • জীবনে যে-লক্ষ্য এখনও তাঁরা অর্জন করতে পারেননি, বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছেও সেই অর্জনের সময় যে এখনও ফুরিয়ে যায়নি, এটাও তাঁরা উপলব্ধি করতে পারবেন
  • কাউন্সেলিং-এর দরুণ বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের বিষয়টা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।

ধীরে ধীরে কিন্তু নির্দিষ্ট গতিতে লোকেরা ক্রমশ এটা উপলব্ধি করতে পারছেন যে, জীবনের চূড়ান্ত পর্বটা এমনই একটা পর্ব যখন আশা ও সুখের অনুভূতিকে সঙ্গী করে একটা পূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা যায়।

কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন বা সি পি আর

সিপিআর জানা থাকলে, আপনিও একজন রোগীকে দিতে পারেন বেসিক লাইফ সাপোর্ট। আর তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন মৃত্যুর মুখ থেকে।

মনে করুন আপনার চোখের সামনে কেউ বুকের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। আপনি ডাক্তার ডাকার চেষ্টা করলেন। অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিলেন। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এই সময় থেকে ডাক্তারের হস্তক্ষেপ শুরুর সময়ের মধ্যে ঘটে যেতে পারে মৃত্যুর মতো চরম ঘটনাও।

অথচ ডাক্তার ডাকা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদির পাশাপাশি তাকে সিপিআর-এর মাধ্যমে বেসিক লাইফ সাপোর্ট দিলে, তিনি ফিরে আসতে পারেন মৃত্যুর মুখ থেকে।

কেন এমন হয়?

এমনটি হয় হৃদযন্ত্র ঠিকমতো কাজ না করলে।

হৃদযন্ত্র অচল হওয়ার কারণ কী?

হার্ট বা হৃদযন্ত্র গঠিত হয় দুটি নিলয়, দুটি অলিন্দ, অনেক শিরা ও ধমনি দিয়ে। ধমনির মাধ্যমেই হার্ট-এ অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত যায় এবং হার্ট সচল থাকে। কখনও কখনও ধমনির মধ্যে এমন পরিমাণে কোলেস্টেরল জমে যে তার মধ্য দিয়ে অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত হার্ট-এ পেৌঁছোতে পারে না, তখন হার্ট অচল হয়ে যায়। আর এই অবস্থাকেই বলে হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

কাকে বলে সিপিআর?

হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যে পদ্ধতিতে বেসিক লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় তাকেই বলে সিপিআর বা কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন। এটি হার্ট মাসাজ করার একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।

সিপিআর শুরু করার আগে যে কাজগুলো আপনাকে করতে হবেঃ

১) প্রথমে রোগীকে জোরে জোরে ডাকুন। জিজ্ঞেস করুন তিনি ঠিক আছেন কিনা। তাঁর কি অসুবিধে।

২) সাড়া না পেলে সাহায্যের জন্য লোক ডাকুন।

৩) অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিন।

৪) লক্ষ্য করে দেখুন রোগীর মুখ থেকে কোনও শব্দ বেরোচ্ছে কিনা। দেখে নিন মুখের ভিতর অন্য কোনও বস্তু আটকে আছে কিনা। তাহলে সেটা চামচ বা অন্য কিছু দিয়ে বের করে নিন। আঙুল ঢোকাবেন না। এবারে রোগীর মাথাটি ধরে পিছনে হেলিয়ে দিন, সঙ্গে সঙ্গে থুতনিটি ধরে ওপরে তুলুন। এই পদ্ধতিটি ‘হেড টিল্ট চিন আপলিফ্ট’ নামে পরিচিত। এতে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। এবার লক্ষ্য করুন রোগীর বুক ওঠা নামা করছে কিনা। তিনি শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন কিনা।

৫) এরপর খেয়াল করুন রোগীর পালস ঠিক আছে কিনা।

যদি দেখেন যে, ব্যাক্তিটি শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন না বা তার পালসও চলছে না, তাহলে তার হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে বলে মনে করতে পারেন। এবার শুরু করা প্রয়োজন সিপিআর-এর মাধ্যমে বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রদান।

সিপিআর-এর পদ্ধতিঃ

রোগী শায়িত অবস্থায় থাকবেন। এবার একটি হাতের পাতার উপর অন্য হাতের পাতা রেখে, হাতের তালু দিয়ে ব্যক্তিটির বুকের ঠিক মাঝখানে জোরে জোরে চাপ দিয়ে যেতে হবে। কনুই যাতে ভাঁজ না হয় এভাবে হাত সোজা রেখে, শরীরের উপরের অংশের ওজন কাজে লাগিয়ে মিনিটে ১০০ বার চাপ দিতে হবে। দেখতে হবে যাতে চাপের সময় ব্যক্তির বুক ৫-৬ সেন্টিমিটার নীচে নেমে যায়। তার মানে যথেষ্ট জোরে এবং দ্রুত চাপ দিতে হবে। এরকম জোরে এবং এই গতিতে ৩০ বার বুকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

এবারে মাথার কাছে এসে ‘মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে কার্ডিয়াক মাসাজটাই হল প্রাথমিকভাবে বেশি জরুরি।

রিসাসিটেশন

প্রথমে রোগীর মাথাটি পিছনে হেলিয়ে, থুতনিটিকে উপরদিকে তুলতে হবে। আবার দেখে নিতে হবে তার মুখের ভিতরে কোনও বস্তু আছে কিনা। থাকলে সেটি বের করে নিতে হবে। এরপর তার নাকটিকে চেপে ধরে, মুখে মুখ দিয়ে হাওয়া ভরতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে হাওয়া দেবার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাক্তিটির বুক ওঠা নামা করছে কিনা।

এভাবে দু’বার হাওয়া ভরার পরে যদি কোনও পরিবর্তন না দেখতে পান, তাহলে আবার একই পদ্ধতিতে মিনিটে ১০০ বার হিসেবে ৩০ বার বুকে চাপ প্রয়োগ করে ‘মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। যতক্ষণ না ডাক্তারের হস্তক্ষেপ শুরু হচ্ছে, রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হলে এভাবেই সিপিআর প্রয়োগ করে বেসিক লাইফ সাপোর্ট দিয়ে যেতে হবে। ৫.১  অনুপাতে বুকে চাপ এবং ‘মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।

একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, আমাদের দেশে প্রতি বছর শহরাঞ্চলে ৩২.৮ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামাঞ্চলে ২২.৯ শতাংশ মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। প্রতি বছর ২.৮ মিলিয়ন মানুষ ভারতবর্ষে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে পেৌঁছোনোর আগেই বা ডাক্তারের হস্তক্ষেপ শুরু হওয়ার আগেই মারা যান।

অতএব এই ৫০ শতাংশ মানুষকে সিপিআর প্রয়োগ করে বেসিক লাইফ সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন। আর এঁদের উপর সিপিআর প্রয়োগ করলে মৃত্যুর হার নিশ্চিতভাবে অনেক কমে যাবে। এটি জানা থাকলে, সাধারণ মানুষই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সময়ে রোগীকে এই জীবনদায়ী প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, নতুন জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারেন।

আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম

শরীরের কাঠামোর উপকরণ হচ্ছে অস্থি বা হাড়। তাই শরীরের প্রতিটি অস্থি এবং অস্থিসন্ধিকে সতেজ ও সবল রাখতে হবে। আর এই অস্থিকে বাঁচিয়ে রাখে সঠিক রক্ত চলাচলের ধারা। কিন্তু কোনও কারণে যদি কোনও অংশে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, তাহলে সেই অংশের হাড় বা অস্থির মৃত্যু ঘটে। এই অবস্থাটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম’ বা এভিএন।

আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম-এর আক্ষরিক অর্থ কী ?

‘আভাস্কুলার’ শব্দের অর্থ নো ব্লাড ভেসেল্স এবং ‘নেক্রোসিস’ শব্দের অর্থ ‘ডেথ’। এককথায় বলা হয় অস্টিয়োনেক্রোসিস অর্থাৎ ‘বোন ডেথ’।

কোন বয়সের লোকেরা বেশি শিকার হন এই রোগের?

সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের লোকেরা এই রোগের শিকার হন বেশি। তবে শরীরের যে-কোনও জায়গার হাড়ে এই রোগ হতে পারে। অর্থাৎ, শুধু হিপ জয়েন্ট কিংবা গ্রোইন এরিয়া-র (কুঁচকি) জয়েন্ট এই রোগে আক্রান্ত হয় না, এভিএন শরীরের যে-কোনও অস্থিসন্ধিতে হতে পারে। তবে হিপ জয়েন্ট-এ যেহেতু ব্লাড ভেসেল (রক্তবাহী নালি) কম থাকে, তাই হিপ জয়েন্ট বেশি আক্রান্ত হয় এভিএন-এ।

কী কারণে ব্লাড ভেসেল ড্যামেজ হয়ে এভিএন-এর শিকার হয় অস্থিসন্ধি?

দুর্ঘটনাজনিত কারণে হাড় যদি ভেঙে যায় কিংবা স্থানচ্যুত হয়, তাহলে ব্লাড ভেসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এভিএন-এর শিকার হয়। তবে ব্লাড ভেসেল ড্যামেজ হওয়ার অন্য কারণও আছে। যেমন– বেশি পেইনকিলার সেবন, মদ্যপান কিংবা ধূমপানের কারণে অনেকসময় রক্তবাহী নালি ছোটো হয়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।

এভিএন-এর শিকার হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেবে?

এভিএন-এর শিকার হলে, কোনও ভারী জিনিস তোলার সময় কোমরে, কুঁচকিতে, নিতম্বে, উরুতে কিংবা শরীরের অন্য কোনও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভূত হবে। এই ব্যথা উৎসস্থল থেকে আশপাশের অংশে ছড়াবে। বিশ্রামের সময়, এমনকী ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এই ব্যথা।

এভিএন-এ আক্রান্তরা কী ধরনের চিকিৎসার সুযোগ পাবেন?

রোগী কতদিন ধরে এই রোগে ভুগছেন, অর্থাৎ কতদিন আগে এভিএন-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তার ওপর নির্ভর করবে চিকিৎসার পদ্ধতি। অবশ্য শুধু ডিডিজ-এর টাইম পিরিয়ড-ই নয়, আক্রান্তের বয়স, পেশাগত ধরন এবং স্বাস্থ্যগত দিকটিও চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়। এভিএন ছাড়াও যদি অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে শরীরে, তাহলেও চিকিৎসা পদ্ধতির হেরফের হতে পারে। তবে নন-সার্জিক্যাল এবং সার্জিক্যাল দু’রকম চিকিৎসা পদ্ধতিই আছে এভিএন-এর ক্ষেত্রে।

নন-সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্টঃ নন-সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট-এর ক্ষেত্রে বেশিরভাগই পেইনকিলার ট্যাবলেট সেবন করেই রোগমুক্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে হিতে বিপরীত হবে। অর্থাৎ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই, আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ড্রোম বা এভিএন যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, তাহলে বডি ওয়েট-এর ফলে যাতে হাড় ভেঙে না যায়, সেইজন্য রোগীকে ক্রাচ কিংবা ওয়াকার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন বা শক্ ওয়েব থেরাপির মাধ্যমে রক্তবাহী নালিগুলিকে সতেজ করার চেষ্টা করা হয়।

সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্টঃ আভাস্কুলার নেক্রোসিস সিন্ডোম বা এভিএন যদি অ্যাডভান্স স্টেজ-এ থাকে, তাহলে সার্জারি ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এভিএন অসুখটি যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিপ জয়েন্ট-এ হয়, তাই টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম হিপ-বোন ব্যবহার করা হয় এবং লেটেস্ট টেকনোলজি-র (শর্ট ফেমোরাল স্টেম উইদ অক্সিডাইজ্ড জারকোনিয়াম) সাহায্য নিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হয়। এরফলে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান। তবে সার্জারির পর কিছুদিন ফিজিয়ো থেরাপি করতে হবে দিনে অন্তত দুবার, কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট।

হার্টের অসুখ এবং চিকিৎসা

হঠাৎ বুক ধড়ফড়, কখনও অল্পস্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে কেউই খুব একটা মাথা ঘামান না। এমনকী অল্প সময়ের জন্য ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলেও অ্যাসিডিটিকে দায়ী করেন। অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ হার্টের ছন্দের তারতম্য হলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মাঝে মধ্যেই ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসে, একটু উত্তেজিত হলেই প্যালপিটেশন শুরু হয়, কখনও আবার চোখের সামনে ক্ষণিকের জন্য নেমে আসে অন্ধকার পর্দা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে কার্ডিয়াক ডিসরিদিমিয়া, সাধারণের কাছে পরিচিত হার্ট অ্যারিদমিয়া নামে। অর্থাৎ কিনা হার্টের ছন্দের গোলমাল। কখনও হার্ট প্রয়োজনের থেকে দ্রুত গতিতে পাম্প করে, কখনও আবার অত্যন্ত ধীর গতিতে। একথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হার্টের ছন্দের এই গোলযোগ বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে, যে-কোনও সময়েই অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ডা. প্রকাশ চন্দ্র মণ্ডল।

হার্টের অসুখে বিপদ এড়ানোর উপায় কী?

স্বাভাবিক  হৃদস্পন্দনের থেকে কম বা বেশি হৃদস্পন্দন হলেই নানান শরীরিক সমস্যার সূত্রপাত হয়। মিনিটে ১০০ বা তারও বেশিবার হৃদস্পন্দন হলে তাকে বলে ট্র্যাকিকার্ডিয়া। আর মিনিটে ৬০-এর কম বার হলে তাকে বলা হয় ব্র্যাডিকার্ডিয়া। হার্টের এই অসুখকে গ্রাহ্য না করলে আচমকা বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদিও অল্পস্বল্প গোলযোগ হলে ব্যাপারটা খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু অনেক সময় অ্যারিদমিয়া থেকে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেলিয়োরের মতো মারাত্মক শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। তাই হার্টের যে-কোনও সমস্যা হলে গ্যাস অম্বল ভেবে ফেলে না রেখে, অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।

হার্টের ছন্দ কম বেশি হয় কেন?

বিভিন্ন কারণে হার্টের ছন্দ বিঘ্নিত হতে পারে। যেমন–

  •   হার্টের কোনও জন্মগত ও গঠনগত ত্রুটি থাকলে
  •   ধূমপান ও নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান
  •   ডায়াবিটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার
  •   থাইরয়েড
  •   লাগাতার স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি
  •   হার্বাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  •   প্রচলিত ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
  •   বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অসুখের প্রবণতা বাড়ে

কী কী উপসর্গ দেখলে সাবধান হতে হবে?

এই অসুখের অন্যতম উপসর্গ বুক ধড়ফড় করা। এছাড়াও কিছু আনুষঙ্গিক লক্ষণ দেখলে অবশ্যই হার্ট স্পেশালিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

  •   বুকে ব্যথা
  •   নিশ্বাসের কষ্ট
  •   সামগ্রিক দুর্বলতা
  •   মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। এছাড়া বুক ধড়ফড় আর হাঁপিয়ে যাওয়া তো আছেই।

কী কী পরীক্ষা করাতে হবে?

  •   ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি
  •   হল্টার মনিটর
  •   ইকোকার্ডিওগ্রাম
  •   চেষ্ট এক্স-রে
  •   টিল্ট টেবল টেস্ট ও ইপি স্টাডি, এছাড়া রক্তের ও প্রস্রাবের কিছু রুটিন পরীক্ষা করানো দরকার। হৃৎপিন্ডের অবস্থা বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঠিক কী চিকিৎসা করা দরকার।

হার্টের ছন্দ বিঘ্নিত হওয়ার চিকিৎসা কী?

এই ধরনের হার্টের অসুখে প্রথমেই রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ দেওয়া হয়। কেননা এর মধ্যে রক্তের জমাটবাঁধা ডেলা আটকে গেলে রোগীর অবস্থা আচমকা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া যদি রোগীর হৃদস্পন্দন আচমকা থেমে যায়, তখন ডিফিব্রিলেটরের সাহায্য নিতে হয়। তবে এই রোগের সব থেকে ভালো চিকিৎসা আইসিডি পেসমেকারের প্রতিস্থাপন। অ্যারিদমিয়ার চিকিৎসা না করালে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভাবনা থাকে। তাই সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সুচিকিৎসা করানো দরকার। আর অবশ্যই ধূমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস ছেড়ে দিতেই হবে।

টেক্সট নেক সিন্ড্রোম

বর্তমানে আমাদের দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, সংখ্যার গণনায় ভারতবর্ষ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এবং মোবাইল কানেকশন আছে এমন ভারতীয়র সংখ্যা ৯০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর যোগাযোগ করার জন্যে মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরতা এমন অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার জন্য, টেক্সট অর্থাৎ এসএমএস করার মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে একটি অসুখ, যার নাম– ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’।

৭৫ শতাংশেরও বেশি ব্যক্তি প্রতিদিন অন্তত ১৮ ঘণ্টা তাঁদের কাছে একটি সেল ফোন রাখেন। কেবলমাত্র মোবাইল ফোন-ই নয়, কিন্ডল্স, ট্যাবলেটস এবং আই-প্যাডস– এই ডিভাইসগুলির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেও মহামারীর মতো একটি অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, যার নাম ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’। যদিও ‘টেক্সট নেক’ নতুন কোনও বিস্ময়কর ঘটনা নয়, কিন্তু বর্তমানে যেহেতু বিশাল সংখ্যক মানুষ এর শিকার হচ্ছেন, তাই এই বিষয়টির প্রতি সকলের মনোযোগ অনেক পরিমাণে বেড়েছে।

সম্প্রতি বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে টেক্সট-নেক সিন্ড্রোমের লক্ষণ দেখা গেছে। কিছুদিন পরে এই টেক্সট নেক থেকে হতে পারে স্পাইন্যাল আর্থ্রাইটিস এবং ডিস্ক প্রোল্যান্স, যার জন্য হয়তো শল্য চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আবিষ্কারের ফলে, ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি এখন হয়েছে অনেক নিরাপদ।

মাথা ব্যথা, পিঠের উপরের অংশে অর্থাৎ কাঁধ এবং ঘাড়ে ব্যথা এবং তার উপর শিরদাঁড়ায় বর্ধিত বক্রতা, এইসবগুলির যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তার থেকে স্পাইনাল ডিজেনারেটিভ সমস্যা, যেমন ডিস্ক প্রোল্যান্সও হতে পারে। ডিস্ক প্রোল্যান্সের ক্ষেত্রে ঘাড় থেকে বাহুর দিকে চিন্চিনে ব্যথা হয় এবং তারপর অসাড়ভাব, মুষ্টিবদ্ধ করার ক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং হাত ও পায়ের শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া শুরু হয়। যদিও অল্প বা মাঝারি অবস্থায় ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসার দ্বারা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু যদি চরম আকার নেয়, তাহলে ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির মতো শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে অসচেতন। অনেকে বেশিরভাগ সময়েই সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে তাঁদের সেল ফোন ব্যবহার করেন। এঁদের মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে ‘টেক্সট নেক’-এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বারবার সামনের দিকে ঝোঁকা এবং ভঙ্গিগত পরিবর্তনের জন্য তাদের সার্ভিকাল স্পাইনে পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে তাদের পেশিতে স্টিফনেস এবং ব্যথা হতে পারে। আর শীতকালে শীতের পোশাকের ভারের জন্যে ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে শিরদাঁড়া-সংক্রান্ত অসুখের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়।

আমাদের মেরুদণ্ড তৈরি হয়েছে ৩৩ টি হাড়ের সমষ্টি (২৪  আর্টিকুলেটিং এবং ৯ ফিউজড) দ্বারা যেগুলিকে বলে কশেরুকা। এগুলি আবার স্পঞ্জের মতো ইন্টার-ভার্টিব্রাল ডিস্কের দ্বারা যুক্ত, যা কেবলমাত্র আমাদের ঘাড় ও পিঠেই সাপোর্ট দেয় না, আমাদের গতিশীলতাতেও সাহায্য করে। যেমন, অসমুচিত দেহ ভঙ্গি, অপুষ্টিকর আহার অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রম মেরুদন্ডকে করে তোলে অনমনীয় এবং তার সঙ্গে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

প্রথাগত শল্য চিকিৎসাতে যা করা হয়, তা হল দুটি সার্ভিক্যাল কশেরুকার মাঝখানের অসুস্থ ডিস্কটি সরিয়ে ফেলে সেখানে একটি হাড় গ্র্যাফটিং করে লাগানো হয়। যা থেকে দৃঢ় হাড় তৈরি হতে পারে এবং দুটি কশেরুকার মাঝখানের ফাঁক ভরিয়ে দিতে পারে। সম্পূর্ণভাবে এই অসুস্থ হাড়টিকে সরিয়ে ফেললে ব্যথা সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারে কিন্তু এক্ষেত্রে ফিউজন পদ্ধতির জন্য মেরুদণ্ডের গতিশীলতা এবং নমনীয়তাতে বাধার সৃষ্টি করে।

কৃত্রিম সার্ভিক্যাল ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসায়, পুরাতন এবং অসুস্থ ডিস্ক একটি নকল যন্ত্র (কৃত্রিম ডিস্ক) দ্বারা বদল করা হয়, যেটি মেরুদণ্ডের কশেরুকা বিভাগটির গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করে তৈরি করা হয়। এই গতিশীল ধাতুর ডিস্কটি কশেরুকাগুলির মাঝখানে ঢুকিয়ে, যতটা সম্ভব গতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়, যেমন ভাঁজ করা, ছড়ানো, পাশের দিকে বাঁকানো, ঘোরানো এবং সোজা রাখা, অর্থাৎ উচ্চতা এবং বক্রতার মতো স্বাভাবিক ডিস্কের মতো এটি যাতে কাজ করতে পারে।

আগে ডিস্ক সমস্যার চিকিৎসা করা হতো দুটি কশেরুকাকে মিলিয়ে দিয়ে বা ফিউজন করে কিন্তু ফিউজন চিকিৎসা শিরদাঁড়ার গতিশীলতা কম করে দেয় এবং অন্যদিকের কশেরুকার উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে দীর্ঘদিন পরে একই ধরনের ব্যথার উপসর্গ দেখা দিত। তবে এখন আধুনিক ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসা এই সমস্যার জন্য একটি অবিশ্বাস্য সমাধান হিসাবে উদ্ভাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. সুজয় সান্যাল।

যারা এখনও বয়সে তরুণ, অর্থাৎ যাঁরা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কাজকর্মকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতো ততটা ফেলে রাখতে পারেন না, তাদের জন্যে ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট একটি আদর্শ উপায়। তাছাড়া একটি কৃত্রিম সার্ভিক্যাল ডিস্ক রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতির পরে, রোগী খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন এবং সার্জারির দুই থেকে তিনদিন পরেই বাড়ি চলে যেতে পারেন এবং আরও পাঁচদিন পর থেকেই সাধারণ জীবনযাত্রা শুরু করতে পারেন।

বর্তমানের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে প্রযুক্তি এবং মোবাইল ডিভাইস থেকে সরে থাকা সত্যিই অসম্ভব। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে পরামর্শ হল, যেন বর্তমান প্রজন্ম এগুলিকে যথেষ্ট সমীচীন ভাবে ব্যবহার করেন। কিছুক্ষণ পর পর স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা, মোবাইল ফোন যতটা সম্ভব চোখের সঙ্গে লেভেল করে ব্যবহার করা এবং অফিস আর্গোনোমিক্সের অধ্যয়ন করার মতো কিছু কিছু উপায় ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’ হওয়া থেকে বিরত করতেও পারে।

স্বাস্থ্যরক্ষার বিশেষ উপায়

প্রতিদিনের ঝক্কি সামলাতে হলে, আমাদের শরীর মন আরও বেশি সুস্থ রাখা দরকার। এর জন্য হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো কিংবা যোগব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমরা কতটা হাঁটলাম, কত ক্যালোরি খরচ হলো বা শারীরিক কসরতের সময় আমাদের হৃদ্পিণ্ড কেমন সাড়া দিলো,এসব জানাও খুব প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখুন,এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  আমাদের স্বাস্থ্যের কথাও জানাবে একটা স্মার্ট ওয়াচ।

দেশের অগ্রণী ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা সিস্কা  নিয়ে এসেছে আধুনিক এই স্মার্ট ওয়াচ SW100, যা আমাদের সময় জানাবে, স্বাস্থ্যের খবর দেবে, সঙ্গে সঙ্গে ফোনে আসা মেসেজ, ই-মেল পড়তে, ক্যালেন্ডার-এ ইভেন্ট দেখতে, সোশ্যাল মিডিয়া বা কে কল করছে তা দেখতেও পাওয়া যাবে। সঙ্গে থাকছে ম্যাগনেটিক চার্জার। একবার ফুল চার্জ করলে চলবে এক টানা ১৫দিন। ফোনে মাপা যাবে ব্লাড প্রেসার, হার্ট রেট, কতখানি হাঁটলাম আর তাতে কত ক্যালোরি খরচ হলো, যোগব্যায়াম করার সময় নির্দিষ্ট মোড চালু করলে  শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্যও করে, ব্যায়াম করার সময় কখন শ্বাস নেবো আর কখন ছাড়বো, তা হাতে পরে থাকা এই ঘড়িই বলবে।

Lifestyle article
A special way of health awareness

হাঁটা, দৌড়োনো, সাইক্লিং, ভারোত্তোলন  এমন বিভিন্ন কাজের সময় স্টেপস, হার্ট রেট , ক্যালোরি ইত্যাদি মাপার জন্য বিভিন্ন স্পোর্টস মোড  রয়েছে এই ঘড়িতে। পরিমিত পরিমাণ ঘুম হচ্ছে কিনা তাও বলে দেবে এই ওয়াচ। নিজের পছন্দ মতো ঘড়ির ফেসও সেট করা যাবে। উন্নত মানের বডি ও ডিটাচেবল বেল্ট, ঘড়িটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দৌড়োনোর সময়ে ঘাম বা কাজ করার সময় ঘড়িতে জল লাগলেও ভয় নেই।

Grihshobha lifestyle article
A smart watch SYSKA SW100 for health care

IP68 ওয়াটার রেসিস্টেন্ট প্রযুক্তিতে স্মার্ট ওয়াচটিতে জল, ধুলো, কাদা লাগলেও ক্ষতি হবে না। ৩০ মিনিট জলের নিচে ১.৫ মিটার অবধি থাকতে সক্ষম। স্মার্ট ওয়াচটিকে ফোনের সঙ্গে সংযোগ করে সব তথ্য ঘড়িতেই ব্যবহার করা যাবে। ব্যস্ত জীবনে ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি,  নিজের স্বাস্থ্যের উপরও নজর রাখতে বেছে নিতে পারেন এই স্মার্ট ওয়াচ।

 

আধুনিক চিকিৎসায় টেলিমেডিসিন

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর মতানুযায়ী, টেলিমেডিসিন হল এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় প্রযোজনে। আর সেই সকল তথ্যের আদান-প্রদান করা, যার দ্বারা রোগ নির্ণয়, রোগীর চিকিৎসা ইত্যাদি সবকিছুর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা, এছাড়াও, বিভিন্ন পরীক্ষক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের মূল্যায়ন এবং শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা। এই পদ্ধতির  অন্যতম লক্ষ্য হল প্রত্যেকের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

ভারতে টেলিমেডিসিন পদ্ধতির শর্তানুযায়ী, একজন কর্মরত চিকিৎসক তখনই এই পদ্ধতির ব্যবহার করতে পারবেন, যখন তিনি যথেষ্ট দক্ষ হবেন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যে, রোগীকে সামনাসামনি পরিদর্শন জরুরি নাকি অনলাইনে পরামর্শদান যথেষ্ট। চিকিৎসককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তার চিকিৎসায় কোনওরকম খামতি না থাকে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের পক্ষ থেকে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ টেলিমেডিসিন পদ্ধতি অনুশীলন করার বিভিন্ন নিয়মাবলী, ২০২০ প্রকাশ করা হয়েছে। যা ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৫৬-র অধীনে প্রযোজ্য। তবে, এই নিয়মাবলীর অধীন থেকে বর্জিত থাকবে ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল। যাইহোক, টেলিমেডিসিনের উদ্দেশ্য হল সকলের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটানো। উপরোক্ত নিয়মাবলী প্রযোজ্য হবে রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র‌্যাক্টিশনার (RMP)-দের উপর, ১৯৫৬-এর আইন অনুযায়ী। উল্লিখিত নিয়মাবলী অনুযায়ী কর্মরত চিকিৎসক টেলিমেডিসিন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করতে পারবেন। টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে রোগীদের কাছে শব্দ, কথা, লেখনী বা ডিজিটাল যে-কোনও উপায়ে তথ্য পাঠানো সম্ভব।

টেলিমেডিসিন পদ্ধতি চালনার জন্য সাতটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে লক্ষ্য রাখা জরুরি। যেমন যার সাহায্য নেবেন তিনি আরএমপি অর্থাৎ রেজিস্টার্ড প্র‌্যাক্টিশনার কিনা, সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয়, যোগাযোগের সঠিক মাধ্যম, প্রশ্নোত্তর পর্ব, সঠিক পরামর্শদান, রোগীর মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে সক্ষম কিনা।

একজন আরএমপি, টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পরামর্শ প্রদানের জন্য যে-কোনও রকমের মাধ্যম অর্থাৎ টেলিফোন, ভিডিও, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল, বিভিন্ন চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশন যথা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ইত্যাদির ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে তথ্যপ্রদানের জন্য ইমেল, স্কাইপ, ফ্যাক্স ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশনও ব্যবহার করা যেতে পারে।

টেলিমেডিসিন পদ্ধতি, যোগাযোগের মাধ্যম অনুযায়ী বা তথ্যজ্ঞাপনের সময় অনুসারে, চিকিৎসক-রোগী অথবা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী বা এক চিকিৎসকের সঙ্গে অন্য চিকিৎসকের পরামর্শদান অনুসারে মোট চার প্রকারের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট (চ্যাট, ইমেল, মেসেজ, ফ্যাক্স ইত্যাদি) অন্যতম। এই সকল প্রযুক্তির প্রত্যেকটির নিজস্ব সুবিধা, অসুবিধা এবং গ্রহণযোগ্যতা আছে। যার জন্য অনেক সময়ই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শদান পর্যাপ্ত এবং অপর্যাপ্ত উভয়ই হতে পারে। সেইজন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই সকল প্রযুক্তির উপকারিতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। যদিও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শদান আরএমপি-দের বিভিন্ন সংক্রামক অবস্থার থেকে রক্ষা করতে পারে, তবুও এটি কখনই শারীরিক উপস্থিতির দ্বারা পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসার পদ্ধতির মতো সুফলদায়ক নয়। যেখানে স্পর্শ এবং অনুভব করা অত্যাবশ্যক, সেখানে এই নতুন প্রযুক্তি খুব একটা কার্যকরী নয়।

টেলিমেডিসিনের ভিডিও প্রণালী যেমন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ভিডিও চ্যাট, ফেসটাইম ইত্যাদি রোগীকে পরামর্শদানের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। তবে, এই পদ্ধতির থেকে সম্মুখে রোগীকে পরীক্ষা করে পরামর্শ দেওয়া আরএমপি-দের জন্য বেশি সহজতর। ভিডিও প্রণালীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো সীমাবদ্ধতা হল উভয়পক্ষের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও, ভিডিও প্রণালীতে রোগীর গোপনীয়তা বজায় রাখা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ফোনে অডিও প্রণালী অর্থাৎ, ভিওআইপি, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের দ্বারা পরামর্শদান যদিও অতি সহজলভ্য এবং কিছুক্ষেত্রে উপযুক্ত, তবুও, ত্বক, চোখ, জিভ ইত্যাদির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুপযুক্ত।

টেক্সট-প্রযুক্তি ব্যবস্থা বলতে বোঝায় বিশেষত চ্যাট সংক্রান্ত ব্যবস্থা। স্মার্টফোনে অথবা কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল হ্যাংআউটস, ফেসবুক, মেসেঞ্জার অথবা এসএমএস ইত্যাদির মাধ্যমে সুবিধাজনক ভাবে এবং খুব কম সময়ে মধ্যে পরামর্শদান সম্ভব। তবে সনাক্তকরণ এবং ডকুমেন্টেশন এই প্রণালীর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনও জরুরি অবস্থায় তৎক্ষণাৎ পরামর্শপ্রদান এই পদ্ধতির মাধ্যমে করা সম্ভব। চাক্ষুষ পরিদর্শন এবং শারীরিক স্পর্শ ছাড়াও এই প্রণালীর আরেকটি বড়ো সীমাবদ্ধতা হল মৌখিক সংকেতের অনুপস্থিতি। যার ফলে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে অনেকাংশেই বাধা পেতে পারে।

ASYNCHRO-NOUS প্রণালীর অর্থাৎ ইমেইল, ফ্যাক্স ইত্যাদির সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হল কোনও বিশেষ নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই সহজলভ্য। ছবি, রিপোর্ট, তথ্য ইত্যাদিও সহজেই ডাউনলোড এবং শেয়ার করা সম্ভব। কোনও দ্বিতীয় পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে এই প্রণালী বেশ উপযোগী। কিন্তু এই প্রণালীর সীমাবদ্ধতা হল এই প্রণালীতে রোগের সনাক্তকরণ শুধুমাত্র ডকুমেন্টের উপর নির্ভর করেই করতে হয়।

টেলিমেডিসিনের সুবিধাগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল— কম খরচে রোগীরা চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত এবং সহজেই গ্রহণ করতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এই পদ্ধতির সুবিধা হল—  বিশেষ ঝামেলা ব্যতীত বাড়তি আয় সম্ভব এবং রোগ ছড়ানোর ভয়ও কম থাকে।

৫ মশলায় বাড়ান ইমিউনিটি

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এই সতর্কতার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি। আর এই ইমিউনিটি এতটাই স্ট্রং রাখা উচিত যে, শুধু করোনা ভাইরাস-ই নয়, কোনও জীবাণু যাতে শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা উচিত। তবে এই প্রতিরোধ তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন ডায়েটে ইমিউনিটি বুস্টিং উপকরণ থাকবে। অবশ্য এই উপকরণের জন্য খুব কষ্ট করতে হবে না কিংবা অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না। এইসব উপকরণ আপনার রান্নাঘরেই রয়েছে।

ইমিউনিটি বাড়ানোর যে-সব উপকরণের কথা জানানো হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম কার‌্যকরী ভূমিকা পালন করে মশলা। তাই জেনে রাখুন, মশলা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, ইমিউনিটি বুস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফরিদাবাদের ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স-এর ডায়েটিসিয়ান ডা. বিভা জানিয়েছেন, কোন কোন মশলা ইমিউনিটি বাড়ায়।

হলুদ

হলুদ এমন এক মশলা, যা সবার রান্নাঘরে মজুত থাকে। আর এই সহজলভ্য উপাদানটি প্রায় সব রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই হলুদকে বলা হয় ফ্লু-ফাইটার। এক রিপোর্ট-এ প্রকাশিত যে, করকিউমিন নামক এক উপাদান থাকে হলুদে, যা অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ সমৃদ্ধ। তবে রান্নায় হলুদ ব্যবহার করে, শরীরের যা লাভ হয়, তার থেকে বহুগুণ বেশি সুফল পাওয়া যায় দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে।

ডায়েটিসিয়ান ডা. বিভা জানিয়েছেন, আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী হলুদের সঙ্গে অন্যকিছু মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। অনেকে সীসাও মিশিয়ে দেন, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই যখনই হলুদ কিনবেন, তা ১০০ শতাংশ খাঁটি কিনা তা যাচাই করে নেবেন। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে শুকনো গোটা হলুদ কিনে এনে জলে ভিজিয়ে রেখে বেটে নিয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করবেন। অথবা, কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে তাও দুধে মিশিয়ে পান করতে পারলে সুফল পাবেন। কারণ, হলুদ খেলে রেসপিরেটরি ট্র‌্যাক ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে বাঁচাতে পারবেন।

হলুদের পরিমাণ : রান্নায় হলুদ ব্যবহার বেশি করলেও, দুধের সঙ্গে মাত্র এক চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে, বেশি নয়। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সতর্কতা : শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে হলুদ। তাই খুব বেশি হলুদ খাবেন না। এতে পেট গরম এমনকী পুরো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফলে, পেট খারাপ, শরীরের অতিরিক্ত ঘাম প্রভৃতি সমস্যায় কষ্ট হতে পারে। এমনকী আয়রনের ঘাটতিও হতে পারে।

দারচিনি

সর্দিকাশি হলে দারচিনি মেশানো চা পান করলে যেমন তৃপ্তি পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই তা সর্দিকাশি দূর করতেও সাহায্য করে। কারণ, দারচিনি অ্যান্টিবায়োটিক-এর কাজ করে এবং শরীরকে গরম রাখে। তবে শুধু চা-এ নয়, দারচিনি রান্নায় ব্যবহার করেও রান্না যেমন মুখরোচক করা যায়, তেমনই কিছু উপকারও পাওয়া যায়। অর্থাৎ, দারচিনি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে দারুণ ভাবে। আর এই দারচিনি খেতে পারেন সব বয়সের মানুষ এবং সবাই কমবেশি উপকার পাবেন।

দারচিনিতে থাকে পেলিফেনোল্স নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস্ উপাদান। এই উপাদান শরীরকে ফ্রোরেডিক্যাল্স থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে সিনেমেল্ডিহাইড নামের উপাদান থাকে, যা সবরকম সংক্রমণ থেকেও বাঁচায় শরীরকে। গোটা কিংবা গুঁড়ো সবরকম ভাবে ব্যবহার করা যায় দারচিনি।

দারচিনির পরিমাণ : প্রতিদিন এক গ্রাম করে চা-এ মিশিয়ে কিংবা রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন। এতে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।

সতর্কতা : দারচিনিতে যেহেতু সিনেমেল্ডিহাইড উপাদান থাকে, তাই বেশি খেলে চুলকানির সমস্যা হতে পারে এবং মুখে ঘা হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১ গ্রামের বেশি দারচিনি কোনও ভাবেই ব্যবহার করবেন না।

মেথিদানা

পাঁচফোড়নের মধ্যে অন্যতম উপাদান হল মেথি। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মেথির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মেথিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না কিন্তু লিভার ঠান্ডা রাখতে কিংবা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক উপাদান হল মেথি। মেথি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে, কপার, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে, শরীরকে পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে।

মেথির ব্যবহার : রান্নায় ব্যবহার করে কিংবা জলে ভিজিয়ে সেই জল পান করলে উপকার পাবেন। তবে দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি নয়।

সতর্কতা : মেথি যেহেতু একটু তেতো স্বাদের, তাই বেশি খেলে বমি ভাব আসতে পারে। অতএব, সঠিক মাত্রা বজায় রাখুন।

গোলমরিচ

শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষ নানা ভাবে খান গোলমরিচ। কেউ রান্নায় ব্যবহার করেন, কেউ বা আবার বিভিন্ন খাবার অথবা স্যালাড-এ গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে স্বাদ বাড়ান।

গোলমরিচে রয়েে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। এই দুই উপাদান সবরকম সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে আমাদের শরীরকে। এছাড়া, নাক বন্ধ থাকলে কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে, গোলমরিচের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে, চুলকানির সমস্যা থাকলে কিংবা দাঁতে ব্যথা হলে গোলমরিচ-যুক্ত চা পান করলে উপকার মেলে। হজমশক্তি বাড়িয়ে লিভার ভালো রাখতেও সাহায্য করে গোলমরিচ। আর লিভার ভালো থাকলেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গোলমরিচের পরিমাণ : চা চামচের চারভাগের এক ভাগ গোলমরিচ খেতে পারেন প্রতিদিন, তবে এর বেশি নয়।

সতর্কতা : গোলমরিচ যেহেতু শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তাই যাদের হাই ব্লাড প্রেসার-এর সমস্যা আছে, তারা গোলমরিচ খাবেন না।

আদা

অত্যন্ত সুফলদায়ক মশলা হল আদা। প্রতিদিন একটু আদা খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কারণ, আদায় রয়েে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস। তাই, অনেকরকম জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে আদা। অর্থাৎ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, গ্যাস-অম্বল এবং হজমের সমস্যাও দূর করে আদা। আর্থরাইটিস-এর সমস্যায় যারা ভোগেন, যন্ত্রণা লাঘব করতে তাদের আদা খাওয়া উচিত প্রতিদিন। আদা ওজন কমায়, মাথা ধরার সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। সর্দিকাশি দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয় আদা।

আদার ব্যবহার : প্রতিদিন এক টুকরো অর্থাৎ, ১০ গ্রামের মতো আদা খেতে পারেন কিন্তু এর বেশি নয়। রান্না ছাড়াও, চা-এ কিংবা গরম জলে আদা ফুটিয়ে সেই আদা-জল পান করতে পারেন প্রতিদিন একবার।

সতর্কতা : যারা সুগারের রোগী, তারা আদা কম খাবেন। কারণ, বেশি আদা খেলে শরীরে ইনসুলিন-এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রযোজনের তুলনায় বেশি আদা খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে এবং স্টমাকে কুপ্রভাব পড়তে পারে।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব