মাথার যন্ত্রণার সঠিক চিকিৎসা

মাথা যখন আছে, যন্ত্রণা হতেই পারে। সারা জীবনে একবারও মাথা যন্ত্রণা হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এখন বিষয়টা হচ্ছে, মাথা যন্ত্রণা কেন হয়? মাথা যন্ত্রণা হলেই অনেকে পেইন কিলার খেয়ে নেন। যা একেবারে স্বাস্থ্যবিরুদ্ধ। হতে পারে কোনও সাধারণ কারণে আপনার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু যদি মাথা যন্ত্রণা কোনও কঠিন রোগের উপসর্গ হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন। ডা. হাসিব হাসান এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন সম্প্রতি।

কী ধরনের মাথা যন্ত্রণার ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ জরুরি?

হঠাৎ হঠাৎ তীব্র, অসহ্য মাথা যন্ত্রণা,জ্বর, বমি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা শরীরের কোনও অংশের দুর্বলতার সঙ্গে যুক্ত মাথা যন্ত্রণা,  ক্রমশ বাড়তে থাকা মাথা যন্ত্রণা, ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টির সমস্যা, চোখ বেঁকে যাওয়া, একটানা মাথা যন্ত্রণা, মাথা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা যে-কোনও ধরনের মাথা যন্ত্রণা প্রভৃতি।

মাথা যন্ত্রণা মানেই কি ব্রেন টিউমার?

না। মাথা যন্ত্রণার কারণ বহুবিধ। তার মধ্যে সব থেকে প্রধান হল মাইগ্রেন। এটা একটা ভুল ধারণা যে,শুধু টিউমার থেকেই মাথা যন্ত্রণা হয়। মাথা যন্ত্রণা যাদের হয়, তাদের মধ্যে ১ শতাংশেরও কম জনের ব্রেন টিউমার থাকে।

মাইগ্রেন কী?

মাইগ্রেন একটি অবস্থা যেখানে ব্রেনের কিছু রাসায়নিক অসামঞ্জস্যের কারণে মাথা যন্ত্রণা হয়। শারীরিক ধকল, বেশিক্ষণ রোদে থাকা, চকোলেটের মতো কিছু বিশেষ খাবার এবং খিদে চেপে থাকা মাইগ্রেনের যন্ত্রণা বাড়ায়। মাথার একদিকে বা মাথার সামনের দিকে হালকা যন্ত্রণা থেকে এর সূত্রপাত এবং ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। মাথা যন্ত্রণা বাড়তে শুরু করলে বমিও হতে পারে। সাধারণত দিনে কয়েক ঘন্টার জন্য এই মাথার যন্ত্রণা হয় এবং পেইন কিলার খেয়ে এবং ঘুমিয়ে তা সেরেও যায়। কখনও এই ব্যথা টানা দু-তিন দিনের জন্যও স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত অনিয়মিত ভাবে এই মাথা যন্ত্রণা হয়। তবে তীব্র মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই মাথা যন্ত্রণা হতে পারে।

কোন বয়সে মাইগ্রেন হয়?

যে-কোনও বয়সেই মাইগ্রেন হতে পারে। তবে কৈশোরে বা প্রাপ্তবয়সে মাইগ্রেন হতে বেশি দেখা যায়। আবার পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

মাইগ্রেনের সঙ্গে হরমোনের যোগাযোগ কী?

পরিবর্তনশীল পরিবেশে শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্য বজায় রেখে হরমোন আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়ার সূচনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে। মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময় শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে তা থেকেও মাইগ্রেন হতে পারে।

বাস্তবে দেখা গিয়েছে, মাইগ্রেনে আক্রান্ত মহিলাদের তিন চতুর্থাংশের ক্ষেত্রেই মাইগ্রেন তাদের ঋতুচক্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা হয় কি?

একটা প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে মাইগ্রেনের কোনও চিকিৎসা হয় না। ঘটনা হল, চিকিৎসার মাধ্যমে মাইগ্রেন সারানো যায়। তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সাধারণত ৬-১২ মাসের চিকিৎসাই যথেষ্ট।

মাথা যন্ত্রণা হলে পেইন কিলার খাওয়া কি ঠিক?

মাঝে মাঝে হওয়া মাথা যন্ত্রণার ক্ষেত্রে (তিন মাসে একবারের মতো) নিজে থেকেই ওষুধের দোকান থেকে পেইন কিলার খেয়ে নিলে অসুবিধা নেই। তবে নিমুসোলিড এবং ডিসপিরিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর মাথা যন্ত্রণা যদি ঘন ঘন হয় তাহলে অবশ্যই নিউরোলজিস্টকে দেখান।

মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?

মাইগ্রেন সারানোর জন্য তিনটি পদ্ধতি নিতে হবেঃ

১) খিদে চেপে থাকা, নিদ্রাহীনতা এবং শারীরিক ধকল ইত্যাদি যেসব কারণে মাইগ্রেন হয় সেগুলি এড়িয়ে চলা। যদি রোদের কারণে মাইগ্রেন হয়, তাহলে বাইরে বেরোনোর আগে রোদ-চশমা, ছাতা বা টুপি নিয়ে বেরোন।

২) তীব্র মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পেইন কিলার এবং ট্রিপটান বর্গের কোনও ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৩)  ঘন ঘন মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য সাধারণত প্রতিদিন ওষুধের দরকার হয়। কম করে ৬ মাসের জন্য রোজ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, প্রয়োজনে ২-৩ বছরও এই ভাবে চিকিৎসা চলতে পারে। এই সব ওষুধ পেইন কিলার নয় এবং টানা খেয়ে গেলে মারাত্মক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও নেই।

সব মাথা যন্ত্রণার কারণই কি মাইগ্রেন?

না। মাথা যন্ত্রণার বহুবিধ কারণ আছে। মাইগ্রেন ছাড়াও আরও একাধিক রকমের মাথা যন্ত্রণা আছে এবং মাথা যন্ত্রণার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাও জরুরি। সাধারণত বছর খানেকের বেশি সময় ধরে চলা মাথা যন্ত্রণার কারণ হয় মাইগ্রেন, না হলে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তাজনিত মাথা যন্ত্রণাও খুব সাধারণ ঘটনা। যেহেতু তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া আলাদা তাই তার যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। সাধারণত এই ধরনের মাথা যন্ত্রণা দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ থেকে সৃষ্টি হয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে তার কারণ শুধুমাত্রই মানসিক চাপ নয়। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ কাউন্সেলিং খুবই জরুরি। মানসিক অবসাদ কাটানোর জন্যে যেসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, সেগুলি এই মাথা যন্ত্রণার চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সাইনাসের মাথা যন্ত্রণা কী? কী থেকে এটা হয় এবং কী ভাবে এর চিকিৎসা করা যায়?

কোনও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কিংবা কোনও সংক্রমণ থেকে যখন সাইনাস প্রদাহ হয়, তখন এই প্রদাহ থেকে কাছাকাছি অংশে যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। যদি প্রকৃত অর্থে সাইনাস ব্লকেজ থেকেই কারও মাথা যন্ত্রণা হয় তাহলে একই সঙ্গে তার জ্বরও হতে পারে। এক্স-রে করে সাইনাস ব্লকেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। চিকিৎসক সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকও দেবেন।

যদি হঠাৎ মাথা যন্ত্রণা হয় তাহলে কী করা উচিত?

যদি মাথা যন্ত্রণা খুব তীব্র হয় কিংবা মাথা যন্ত্রণার সঙ্গে বমি, জ্বর, অনিদ্রা, শরীরের এক দিকের দুর্বলতা কিংবা কথা বলতে সমস্যা হয়, তবে তা স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে সংক্রমণের মতো গুরুতর বিষয় হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে কাছাকাছি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

মাথা যন্ত্রণার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য কোন স্পেশালিটির চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ?

যদি মাথা যন্ত্রণা তীব্র হয় এবং হঠাৎ হয় তাহলে কাছাকাছি কোনও ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর যদি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে মাথা যন্ত্রণা চলতে থাকে, তাহলে নিউরোলজিস্ট বা মাথা যন্ত্রণার বিশেষজ্ঞ কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

লিভার ক্যানসার

শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অরগান লিভার। কারণ, এই লিভারের উপর নির্ভর করে শারীরিক সুস্থতার অনেকটাই। লিভারের যে-কোনও অসুখের ছাপ পড়ে চেহারায়। ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণও নষ্ট হয়ে যায় লিভারের অসুখে। মাথায় টাক পড়ে। খাবার হজম না হয়ে গ্যাসের উৎপত্তি হয় এবং সেই গ্যাস অনেকসময় হৃদপিণ্ডের চলন স্তব্ধ করে দিতে পারে। আর লিভারের যে-কয়েকটি অসুখ আছে, লিভার ক্যানসার তারমধ্যে সবচেয়ে বড়ো অসুখ। কিন্তু কখন, কেন হয় লিভার ক্যানসার? এর থেকে পরিত্রাণের উপায়-ই বা কী? এবিষয়ে সমস্ত কৌতূহল মেটালেন ডা. অভীক ভট্টাচার্য।

লিভার ক্যানসার কী?

লিভার সংক্রমিত হয় বেশিরভাগই ভাইরাস দ্বারা। এই তালিকায় রয়েছে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি। এছাড়া ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং সিরোসিস অফ লিভারও রয়েছে। এগুলি থেকেই অনেক সময় হয় লিভার ক্যানসার। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় এখন বলা হচ্ছে হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা এইচ সিসি।

লিভার ক্যানসার-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কি বাড়ছে ক্রমশ?

সত্যি বলতে কি, এই আধুনিক সময়ে লিভার আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম রোগে। আর দশটা সাধারণ রোগের মতোই নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে লিভার। বছরে প্রতি পাঁচজন ভারতীয়-র মধ্যে একজন ভারতীয় আক্রান্ত হচ্ছেন লিভার ডিজিজ-এ। প্রায় আড়াই লক্ষ ভারতীয় এখন ভুগছেন লিভারের সমস্যায়। হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা এইচ সিসি-র কারণে মৃত্যুও ঘটছে রোগীর। সারা পৃথিবীতে এখন এইচ সিসি-তে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। পরিসংখ্যান বলছে, এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

এইচ সিসি-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে কেন?

দেরিতে ডায়াগোনোসিস করার কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বেশি। অথচ এখন আমাদের দেশে প্রপার স্ক্রিনিং ফেসিলিটি রয়েছে। তবুও অনেকে অনীহা কিংবা নানা কারণে শেষ মুহূর্তে লিভার ডিজিজ-এর চিকিৎসা শুরু করেন। তাছাড়া, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অত্যধিক ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতির কারণেও এইচ সিসি-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

কখন এবং কীভাবে ডায়াগোনোসিস করা হয়?

ভারতবর্ষে মাত্র কুড়ি শতাংশ রোগী সঠিক সময়ে ডায়াগোনোস করেন। বাকি আশি শতাংশ রোগী প্রায় শেষ মুহূর্তে ডায়াগোনোস করতে আসেন। কিন্তু আরলি স্টেজ-এ টিউমার স্ক্যানিং করে চিকিৎসা শুরু করলে রোগীকে বহুদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় কিংবা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা যায়। তাই, কোনওরকম শারীরিক অসুবিধা অনুভব করলে কিংবা টিউমার রয়েছে সন্দেহ হলে, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যান এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করান। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ যদি শুরুতেই চিকিৎসা করা যায়, তাহলে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

চিকিৎসা পদ্ধতিটা-ই বা কী?

যদি প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসা করা যায় সহজে। অন্যথায়, সার্জারি কিংবা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। যদি লিভারের কিছুটা অংশ ড্যামেজ হয়, তাহলে হেপাটেক্টমি সার্জারি করা হয়। কিন্তু যদি ক্যানসারে পুরো লিভার নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। তাই এক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক ভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। আর যদি ছোটো টিউমার ধরা পড়ে এবং তার মধ্যে ক্যানসার থাকে, তাহলে টিউমার রিমুভ করা হয়। আর যদি ক্যানসার বেশি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ইন্টারভেনশনাল রেডিয়োলজি করা হয়ে থাকে। একটা নিডল ঢুকিয়ে টিউমার-কে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীর সেরে ওঠার চান্স পঞ্চাশ শতাংশ।

কিডনির সমস্যা ও উপসর্গ

কিডনি যেহেতু আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্গান,তাই কিডনিকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হবে। কারণ,কিডনি বিকল হয়ে পড়লে অসুস্থতা এমন পর্যায়ে যাবে যে,মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

নানা কারণে কিডনি বিকল হতে পারে। কম জলপান, কিডনিতে বড়ো আঘাত,কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, সাপের কামড় কিংবা শরীরে অন্য কোনও বিষক্রিয়ার ফলে হতে পারে কিডনি বিকল। তবে, সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা,প্রয়োজনে কিডনি প্রতিস্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে কিডনির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু,কিডনিকে বাঁচাতে হলে আগে জানতে হবে এর প্রধান উপসর্গগুলি কী কী। এ বিষয়ে রইল বিস্তারিত বিবরণ…।।

  • কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে রক্ত দূষিত হতে থাকে। আর রক্ত দূষিত হলে, রক্তে নতুন করে রক্তকণিকা তৈরি হতে পারে না। ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর রক্তশূন্যতার কারণে শারীরিক দুর্বলতার উপসর্গ তৈরি হয়
  • শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড়ো অংশ হল ইউরিয়া। কিডনি বিকল হলে এই ইউরিয়া শরীরের বাইরে বেরোতে পারে না, রক্তে মিশে যায়। আর এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পেঁছোনোর পর, মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এবং চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন
  • কিডনির সমস্যা দেখা দিলে রক্ত দূষিত হয় এবং সেই রক্ত ফুসফুসে পেঁছোয়। ফুসফুস তখন ওই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বনডাইঅক্সাইড ব্যবহার করতে শুরু করে। যার ফলে পর‌্যাপ্ত অক্সিজেন ঢুকতে পারে না ফুসফুসে এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়
  • কিডনির অক্ষমতার কারণে রেনাল টিবিউলস-এর ক্ষতি হয় এবং পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এর ফলে মূত্রের পরিমাণ কমতে থাকে এবং মূত্রের রং গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের হতে পারে
  • যখন কিডনির কার‌্যক্ষমতা হ্রাস পাবে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করবে। আর রক্ত দূষিত হলে চুলকানির উপসর্গ দেখা দেবে
  • কিডনি বিকল হলে শরীরের বর্জ্য হিসাবে অ্যামোনিয়া ফিলটার করতে পারে না। আর রক্তে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মুখে অরুচি বাড়বে। সেইসঙ্গে, শরীরের ওজনও হ্রাস পাবে। কারণ মুখে অরুচির কারণে শরীরকে ঠিকমতো পুষ্টির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না
  • যখন কিডনির সমস্যা গুরুতর হয়, তখন কিডনি এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট তৈরি হয়, যা টক্সিন বহন করে। আর ওই টক্সিন শিরা-ধমনিতে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে পা, পিঠ এবং কোমরে বেশি ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হিয়ারিং প্রবলেম

যিনি শোনার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তিনি কিংবা তার বাড়ির লোকেরা বোঝেন কী ‘জ্বালা’। রোগী বঞ্চিত হন ভাবের আদানপ্রদান থেকে। পাখির কুজন, ঝরনার আওয়াজ, হাসির ছন্দ, সংগীতের মাধুর্য সবকিছুই তার কাছে নিরর্থক মনে হয়। তখন শুধুই হা-হুতাশই সার হয়। তাই, কানে শোনার সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য আগাম সতর্কতা এবং সুচিকিৎসার প্রয়োজন। ডা. দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি বধিরতার কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা করলেন বিশদে।

কানে কম শোনার কারণ কী?

মূলত দুটি কারণে কানে কম শোনার সমস্যা হয়। এরমধ্যে একটি কনজেনিটাল এবং দ্বিতীয়টি অ্যাকয়ার্ড।

কী কী কারণে কনজেনিটাল এবং অ্যাকয়ার্ড সমস্যা হয়?

কনজেনিটাল সমস্যা

  •  জন্মগত ভাবে কানে শোনার নার্ভটি ডেভেলপ না হলে
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনও জটিল অসুখ হলে
  • জন্মের পর শিশুর কোনও ভাইরাল ইনফেকশন হলে

অ্যাকয়ার্ড সমস্যা

  •  ৬০-৭০ বছর বয়সের পর শরীর কমজোরি হয়ে গেলে
  • কানে কোনও বড়ো চোট পেলে
  • ইমপ্যাকটেড ওয়াক্স, অর্থাৎ কানে ময়লা জমে শক্ত হয়ে গেলে
  • মিডিল-ইয়ার-এ সর্দি জমে গেলে (অর্থাৎ, ওটাইটিস মিডিয়া উইথ ইফিউশন)
  • কানের পর্দা ফুটো হয়ে গিয়ে পুঁজ জমলে
  • অটোস্কেলরোসিস ডিজিজ অর্থাৎ, কানের মধ্যে অবস্থিত স্টেপিস নামের হাড়টি ফিক্সড হয়ে গেলে

সবাই কি একইরকম কম শোনেন কানে নাকি কম শোনারও তারতম্য ঘটে সমস্যাভেদে?

কানে কম শোনার ধরন মূলত দুইপ্রকার –

কনডাকটিভ ডেফনেসঃ  এক্ষেত্রে মধ্যকর্ণে অবস্থিত ম্যালিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস এই তিনটি হাড়ে কোনও সমস্যা হলে কিংবা কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেলে নির্দিষ্ট মাত্রায় কম শোনার সমস্যা হয়।

নার্ভ (সেনসরি নিউরাল) ডেফনেসঃ  এটি একটি জটিল সমস্যা। এক্ষেত্রে কানে শোনার নার্ভ অকেজো হয়ে যেতে পারে এবং শ্রবণশক্তি প্রায় হারিয়ে যায়।

কানে শোনার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?

চিকিৎসা

  •  কানে ময়লা জমলে ওষুধ দিয়ে ওয়াশ করে দিলেই আর শোনার সমস্যা থাকবে না
  • কানের পর্দা ফুটো হলে মাইক্রোসার্জারি করে শোনার সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়
  • যদি অ্যাডেনয়েড বড়ো থাকার জন্য, ক্রনিক ওয়াইটিস মিডিয়া উইদ ইফিউশন (সর্দি) হয়, তাহলে সার্জারি করে অ্যাডেনয়েক্টমি করে সমস্যামুক্ত করা হয়
  • বয়সজনিত কারণে শরীর কমজোরি হয়ে যদি কানে শোনার সমস্যা হয়, তাহলে হিয়ারিং এইড দিয়ে সমস্যা দূর করা যেতে পারে।

হিয়ারিং এইড কী এবং কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র?

হিয়ারিং এইড এমন একটি ছোট্ট যন্ত্র, যা মূলত শব্দকে অ্যামপ্লিফাইড করে দ্বিগুণ জোরে কানে পৌঁছে দেয়। আসলে, কানের ভিতরের নার্ভটি কমজোরি হয়ে গেলে হিয়ারিং এইড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যানালগ হিয়ারিং এইড, ডিজিটাল হিয়ারিং এইড প্রভৃতি পাওয়া যায় বাজারে। তবে অ্যানালগ হিয়ারিং এইড-এ শব্দ জোরে শোনা গেলেও, তা দূষণমুক্ত (শব্দ) থাকে না। ফলে শব্দের উৎস সঠিক নির্ণয় করতে পারেন না রোগী। তাই এই হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা কম। তুলনায় ডিজিটাল হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা বেশি। কারণ, এই ডিজিটাল হিয়ারিং এইড পরিবেশগত শব্দকে অ্যামপ্লিফায়েড করে না, ফলে রোগী নয়েজফ্রি শব্দ শুনতে পান। অবশ্য বাজারে এখন আরও নানারকম মডার্ন হিয়ারিং এইড চলে এসেছে। এগুলি অনেক উন্নত এবং কসমেটিক্যালি গ্রহণযোগ্যও। যেমন– বডি ওর্ন হিয়ারিং এইড, বিহাইন্ড দ্য ইয়ার হিয়ারিং এইড, ইন দ্য ক্যানেল হিয়ারিং এইড প্রভৃতি।

গ্রোথ ফ্যাক্টর

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে– ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডান। শুরুটা ভালো হলে অর্ধেক কাজ এগিয়ে থাকে। বিষয়টা ঠিক বাড়ির ভিত তৈরির মতো। ভিত যত ভালো হবে, বাড়ি ততই মজবুত হবে। মানবদেহকে শক্তিশালী করে তোলার বিষয়টিও ঠিক একই রকম। শৈশবে শরীরকে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি জোগালে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।

শিশুদের গ্রোথ-এর বিষয়ে অনেক মা-বাবা চিন্তিত থাকেন। কোন বয়সে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী রকম পুষ্টি জোগাতে হবে প্রভৃতি বিষয়ে সঠিক ধারণাও থাকে না অনেক অভিভাবকের। কিন্তু শারীরিক বৃদ্ধি এবং উর্বর মস্তিষ্কের জন্য সঠিক সময়ে শরীরকে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাইল্ড হেল্থ স্পেশালিস্ট (ইন্স্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এর প্রধান) ডা. জয়দেব রায় এ প্রসঙ্গে সমস্ত কৌতূহল মেটালেন সম্প্রতি।

সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরকে পুষ্টিকর খাবারের জোগান দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পর্যাপ্ত ঘুম প্রভৃতি যেমন শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য শরীরকে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের উর্বরতা, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, হাড়ের মজবুতি, মাংসপেশির গঠন প্রভৃতি বিষয়গুলির ভালোমন্দ নির্ভর করে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়ার উপর। আর এই সবক’টি বিষয়ে সুফল মিলছে কিনা, তা মোটামুটি বোঝা যায় গ্রোথ দেখে। অর্থাৎ, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে গ্রোথ ফ্যাক্টর।

গ্রোথ-এর বিষয়টি কত বছর বয়সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

গ্রোথ-কে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত প্রথম ভাগ এবং দশ থেকে পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাগ। অর্থাৎ, শৈশবের গ্রোথ এবং বয়ঃসন্ধির গ্রোথ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি ধরা হচ্ছে দশ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে বারো বছর।

শৈশবের গ্রোথ ঠিক রাখার জন্য কী করা উচিত?

শৈশবের গ্রোথ-কেও দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। প্রথম ভাগ হল, শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ পান করে এবং দ্বিতীয় ভাগ হল, শিশু যখন মাতৃদুগ্ধ ছেড়ে খাবার খায়। প্রথম ভাগের মেয়াদ ছয় মাস এবং দ্বিতীয় ভাগের মেয়াদ কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে দশ বছর বয়স পর্যন্ত আর পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে বারো বছর পর্যন্ত। প্রথম ভাগে শিশু যেহেতু মাতৃদুগ্ধ পান করে, অতএব ওই সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগাবে দুধ অর্থাৎ পরোক্ষভাবে মা। তাই মাকে ভাত, রুটি, ডাল, সবজি, দুধ ডিম প্রভৃতি সবরকম প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে হবে। দ্বিতীয় স্তরে শিশু যখন দুধ ছেড়ে খাবার খাবে তখন তাকেও খাওয়াতে হবে ওই প্রোটিনজাতীয় সবরকম খাবার। তাহলে শিশুর গ্রোথ হবে সঠিকমাত্রায়।

বয়ঃসন্ধির সময় কি বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন?

হ্যাঁ। কারণ, দ্বিতীয় ভাগের গ্রোথ অর্থাৎ বয়ঃসন্ধির সময় যেহেতু সেক্সুয়াল চেঞ্জ হয়, তাই এই সময় দ্বিগুণ পুষ্টির চাহিদা তৈরি হয় শরীরে। তবে শুধু সেক্সুয়াল নয়, এইসময় শারীরিক উচ্চতা তৈরি হয় দ্রুত, ওজন বাড়ে পঞ্চাশ শতাংশ। তাই, শৈশবের থেকে দ্বিগুণ পুষ্টি জোগাতে হয় শরীরকে। অতএব, সেকেন্ড গ্রোথ ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর জন্য শরীরকে কি পর্যাপ্ত প্রোটিন জোগান দেওয়ার প্রয়োজন হয়?

ঠিক। শুধু ভাত, ডাল, রুটি আর শাকসবজি-ই নয়, শরীরকে জোগাতে হবে কিছু অ্যানিমাল প্রোটিন। কারণ, শরীরে তখন বিভিন্ন রকম অ্যামিনো অ্যাসিড-এর চাহিদা তৈরি হয়। আর এই ‘ডিফারেন্ট টাইপ অফ অ্যামিনো অ্যাসিড’ জোগাবে অ্যানিমাল প্রোটিন।

খাদ্য তালিকায় কী কী রাখতে হবে?

চাল, গম থেকে তৈরি খাবার ছাড়াও, জোয়ার, বাজরা, দুধ, ডিম, সয়াবিন, সামুদ্রিক মাছ এবং কিছু পরিমাণ চিকেন ও মাটন রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।

কন্যা সন্তানকে কোনও বাড়তি পুষ্টি জোগানোর প্রয়োজন আছে কি?

আছে। কারণ, দশ-বারো বছর বয়স থেকেই মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল শুরু হয়ে যায়। আর এই সময় শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে আয়রনযুক্ত খাবার। এই তালিকায় রাখতে হবে কাঁচকলা, কলার মোচা, থোড়, কুলেখাড়া পাতার রস, বেদানা প্রভৃতি।

সঠিক গ্রোথ যাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই কিশোর-কিশোরীদের আর কী কী ভাবে সতর্ক থাকা উচিত?

আজকাল অনেক কিশোর-কিশোরীও মদ্যপান, ধূমপান করে কিংবা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এইসব পরিত্যাগ না করতে পারলে সমূহ বিপদ! আটকে যাবে গ্রোথ, শরীরে বাসা বাঁধবে নানারকম রোগ। আর এই গ্রোথ প্রসঙ্গে যা জানানো জরুরি, তা হল– শরীরকে প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন প্রভৃতি জোগান দেওয়ার পাশাপাশি, পান করতে হবে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জল। কারণ, হজম করানোয় এবং শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে জল।

হার্নিয়া

যারা হার্নিয়ার শিকার হয়েছেন তারা জানেন, এই অসুখ কতটা যন্ত্রণাদায়ক! অতএব, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হলে হার্নিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি। তবে হার্নিয়ার বিষয়ে অনেকের ভুল ধারণা আছে কিংবা এই অসুখটি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। যেমন– হার্নিয়া শুধু ছেলেদেরই হয় এবং কুঁচকিতে হয়, এমন ভুল ধারণা পোষণ করেন অনেকে। তাই সকলের সুবিধের জন্য  এই বিষয়ে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন ডা. সঞ্জয় মন্ডল।

  •  হার্নিয়া কেন হয় এবং এর লক্ষণ কী?

হার্নিয়াকে আক্ষরিক অর্থে বলা হয় অন্ত্রবৃদ্ধি রোগ। আমাদের পেটের কিছু অংশ আছে, যেগুলি আশপাশের অংশ থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা পাতলা পর্দার মতো থাকে। অনেকের ওই অংশগুলি দুর্বল থাকে জন্মগতভাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কিংবা খুব জোরে হাঁচলে কিংবা কাশলে যদি চাপ বেশি পড়ে পেটের ভেতরে, তাহলে দুর্বল অংশগুলি দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র (খাদ্যনালি) বেরিয়ে আসতে পারে। ভারী কোনও জিনিস তুললে কিংবা বহন করলেও এই সমস্যা হতে পারে। সাধারণত উদর (পেট) এবং উরুর সংযোগস্থলে হার্নিয়া হয় পুরুষদের। ফুলে ওঠে অণ্ডথলি। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে নাভির চারপাশে কিংবা একপাশে ফুলে গিয়ে হার্নিয়া হয়। আগে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এমন কোনও জায়গাতেও হার্নিয়া হতে পারে। সন্তান প্রসবের পর ভারী কাজ কিংবা বারবার সিঁড়ি ভাঙলেও হতে পারে হার্নিয়া।

  •  বাচ্চারাও কী হার্নিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে?

যে-কোনও বয়সের নারী-পুরুষের হার্নিয়া হতে পারে। বাচ্চারাও হার্নিয়ার কবলে পড়তে পারে।

  •  হার্নিয়ার রোগনির্ণয় করা হয় কীভাবে?

শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। কুঁচকির আশপাশের ফোলা ভাব দেখে হার্নিয়া নির্ণয় করা হয় প্রাথমিক ভাবে। আর কাশলে যেহেতু হার্নিয়া স্পষ্ট রূপ নেয়, তাই রুগিকে জোরে কাশতে বলেও রোগনির্ণয় করা হয়। তাছাড়া, বেশি হাঁটাচলা করলে রুগি যদি যন্ত্রণাবিদ্ধ হন, তাহলেও হার্নিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় অনেকটাই।

  •  হার্নিয়া বড়োরকম শারীরিক জটিলতা তৈরি করে কি?

অপারেশন-এর মাধ্যমে যদি হার্নিয়ার চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে হার্নিয়া ক্রমশ বড়ো আকার ধারণ করে চারপাশের টিস্যুগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং এর থেকে বড়োরকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্নিয়ার মারাত্মক জটিলতা হল, যদি অন্ত্রের অংশ পেটের দেয়ালের দুর্বল জায়গায় আটকে যায়। এক্ষেত্রে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, বমি পায় এবং মলত্যাগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে অন্ত্রের আটকে পড়া অংশে রক্ত চলাচল কমে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় স্ট্রাংগুলেশন। এতে আক্রান্ত অন্ত্রের টিস্যুর মৃত্যু ঘটতে পারে। স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া একটি জীবন-মরণ সমস্যা। এই ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সার্জারির প্রয়োজন হয়।

  •  হার্নিয়ার চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

হার্নিয়া কোনও ওষুধে ঠিক হয় না। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান– সার্জারি। হার্নিয়া ছোটো থাকলে, অর্থাৎ প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা হয়। তিন কিংবা চারটি ছোট্ট ছিদ্রকে মাধ্যম করে হার্নিয়ার সমস্যা দূর করা যেতে পারে কিন্তু হার্নিয়া বেড়ে গেলে তা আর সম্ভব নয়। তখন কয়েক ইঞ্চি কেটে হার্নিয়োগ্রাফি কিংবা হার্নিয়োপ্লাস্টি করতে হবে। হার্নিয়োগ্রাফিতে বেরিয়ে আসা অন্ত্রকে ঠেলে পেটের মধ্যে ফেরত পাঠানো হয়। তারপর দুর্বল বা ছেঁড়া মাংসপেশি সেলাই করে ঠিক করতে হয়। আর হার্নিয়োপ্লাস্টিতে এক টুকরো সিনথেটিক মেশ লাগিয়ে সেলাই, ক্লিপ অথবা স্টেপল করা হয়। তবে হার্নিয়া প্রাথমিক অবস্থায় (ছোটো) থাকলে ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারি করাই ভালো। কারণ, এক্ষেত্রে মাত্র দু’দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আর যদি কয়েক ইঞ্চি কেটে হার্নিয়া অপারেশন করতে হয়, তাহলে স্বাভাবিক হয়ে কাজে ফিরতে সময় লাগবে চার থেকে ছয় সপ্তাহ।

জরুরি পরামর্শ

  •  বয়স এবং উচ্চতা অনুসারে সঠিক মাত্রায় দেহের ওজন বজায় রাখতে হবে। এতে হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। এর জন্য ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে উপযুক্ত পরিমাণে। কারণ, মলত্যাগের সময় পেটে চাপ পড়লে হার্নিয়া হতে পারে।
  • বেশি ভারী জিনিসপত্র হাত দিয়ে তোলা কিংবা বহন করা উচিত নয়। আর যদি ভারী জিনিস বহন করতেই হয়, তাহলে হাঁটু ভাঁজ করে করবেন। কারণ, ভারী জিনিস তোলার চাপেও হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ধূমপান বন্ধ করতে হবে। কারণ, ধূমপান দীর্ঘস্থায়ী কাশির সৃষ্টি করে। আর জোরে কাশলে হার্নিয়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হবে।
  • একটানা দীর্ঘ সময় হাঁটবেন না কিংবা দাঁড়িয়ে থাকবেন না, মাঝেমধ্যে বসে-শুয়ে বিশ্রাম নেবেন।

কর্নিয়া প্রতিস্থাপন

শরীরের এক অতি মূল্যবান ইন্দ্রিয় চোখ। যার দ্বারা আমরা দৃষ্টিসুখ উপভোগ করতে পারি। দৃষ্টিহীনদের কাছে যা স্বপ্ন! কিন্তু, এই দৃষ্টিসুখ উপভোগ করতে হলে চোখ ভালো রাখতে হবে, রোগমুক্ত থাকারও চেষ্টা করতে হবে। আর যদি চোখের কোনও সমস্যা বা অসুখ হয়, তাহলে দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করে কী ভাবে রোগমুক্ত থাকতে হবে চিকিৎসকের সাহায্যে, সেই বিষয়ে কিছু জ্ঞান এবং সতর্কতা জরুরি। জানা দরকার– চোখের কী কী সমস্যা হয় কিংবা হতে পারে, কী ভাবে স্বাভাবিক দৃষ্টি ধরে রাখতে হবে, দৃষ্টিহীনদের কী ভাবে দৃষ্টিদান করা যেতে পারে ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে ডা. বাণী বিশ্বাস জানিয়েছেন, চোখের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ‘কর্নিয়া’। আর এই কর্নিয়াকে কীভাবে সুস্থ রাখা যায় এবং কর্নিয়া দান করে কী ভাবে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টিদান করা যায়, সেই প্রসঙ্গে নানা কৌতূহল মেটালেন ডা. বিশ্বাস।

  •  কর্নিয়া কী?
  • চোখের সামনের দিকের স্বচ্ছ অংশ। এটি ঢেকে রাখে আইরিস এবং পিউপিলকে। পিউপিল হল আইরিসের মাঝের ছিদ্র, যা ছানিমুক্ত চোখে কালচে দেখায় এবং ছানিযুক্ত চোখে ছানির পরিপক্বতার মাত্রা অনুসারে ধূসর কিংবা সাদা দেখায়।
  • স্বাভাবিক দৃষ্টিলাভের জন্য কর্নিয়া কেমন হওয়া উচিত?
  • স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য কর্নিয়া স্বচ্ছ থাকা আবশ্যক। কর্নিয়াতে কোনও রক্তনালি না থাকাটা এর স্বচ্ছ হওয়ার অন্যতম কারণ। স্বচ্ছতার কারণে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পেছনের রেটিনার ওপর পড়তে পারে। ওই সময় আমরা কোনও বস্তুকে দেখতে পাই। কর্নিয়া আলোকরশ্মি প্রবেশে সাহায্য করে। মানুষের চোখে কর্নিয়ার প্রতিসরণ ক্ষমতা প্রায় ৪৩ ডায়াপ্টার। কর্নিয়ার প্রধাণত পাঁচটি স্তর থাকে। এগুলি হল– কর্নিয়াল এপিথেলিয়াম, বোম্যান’স লেয়ার, কর্নিয়াল স্ট্রমা, ডেসসিমেটস মেমব্রেন এবং কর্নিয়াল এন্ডোথেলিয়াম। তবে ২০০৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহাম-এর চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হারমিন্দর সিং দুয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, কর্নিয়ার তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরের মাঝে আরও একটি স্তর উপস্থিত। এই স্তরটির নামকরণ হয়েছে প্রি-ডেসসিমেটস লেয়ার বা দুয়া’জ লেয়ার। অবশ্য এই সংক্রান্ত তথ্য অ্যানাটমি কিংবা চক্ষুবিজ্ঞানের কোনও বইতে এখনও সংযোজন করা হয়নি।
  • কী কী কারণে কর্নিয়ার সমস্যা হয় এবং এর প্রতিকার কী?
  • আঘাত লেগে কিংবা জীবাণুর সংক্রমণে কর্নিয়াতে আলসার হতে পারে। দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা না হলে, স্থায়ী ভাবে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। তখন দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওষুধের দ্বারা এর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তখন একমাত্র চিকিৎসা হল, কর্নিয়া প্রতিস্থাপন।
Health
Corneal replacement
  • কর্নিয়া প্রতিস্থাপনে সাফল্যের মাত্রা কতটা?
  • প্রায় ৯৫ শতাংশ সাফল্য পাওয়া যায় কর্নিয়া প্রতিস্থাপনে। তবে এক্ষেত্রে শরীরকে অন্যান্য রোগ (সুগার, কোলেস্টেরল) থেকে মুক্ত করে, সঠিক সময়ে যত্ন নিয়ে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা জরুরি।
  • মরণোত্তর চক্ষুদানের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেকের। এক্ষেত্রে কি পুরো চোখ তুলে দিয়ে দিতে হয়?
  • একেবারেই তা নয়। মরণোত্তর চক্ষুদান মানে শুধু কর্নিয়া দান করা বোঝায়।
  • কারও যদি চোখের হাই পাওয়ার থাকে কিংবা অন্য কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি কি মরণোত্তর চক্ষুদান করতে পারবেন না?
  • পারবেন। যে-কোনও বয়সের নারী-পুরুষ মরণোত্তর চক্ষুদান করতে পারবেন চোখের সমস্যা থাকলেও। এমনকী ক্যাটারাক্ট সার্জারি, রেটিনা সার্জারি এবং গ্লুকোমা সার্জারির পরও আই ডোনেট করা যায়। তবে এইচআইভি এইড্‌স, অ্যাক্টিভ হেপাটাইটিস, অ্যাক্টিভ সিফিলিস, লিউকেমিকা প্রভৃতিতে আক্রান্ত হলে চক্ষুদান সম্ভব নয়।
  • যিনি মরণোত্তর চক্ষুদান করেছেন, তার পরিবারের কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত?
  • যিনি চক্ষুদান করেছেন, তিনি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যদের উচিত খুব তাড়াতাড়ি কাছের কোনও আই ব্যাংকে যোগাযোগ করা। সেই সঙ্গে নিতে হবে ডেথ সার্টিফিকেট। মৃত ব্যক্তির চোখের পাতা বন্ধ করে দিতে হবে খোলা থাকলে। বরফে ভেজানো কাপড় ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে চোখের ওপর। মাথার নীচে রাখতে হবে বালিশ।
  • আরও বেশিসংখ্যক মানুষ যাতে চক্ষুদানে আগ্রহী হন, এরজন্য কী করা উচিত?
  • আরও বেশি প্রচার চালাতে হবে। চক্ষুদান মহৎ কাজ বলে বোঝাতে হবে মানুষকে। ‘মারা যাওয়ার পরও চোখ দুটো বেঁচে থাকবে অন্যের শরীরে, এও বা কম কী!’ চক্ষুদানের স্বপক্ষে এমনই যুক্তি দেখিয়ে প্রচার চালাতে হবে ব্যাপক ভাবে।
  • চক্ষুদানের পদ্ধতি কী?
  • যিনি চক্ষুদান করতে চান, তাকে যে-কোনও আই ব্যাংক-এ গিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে সাক্ষী রেখে। ফর্ম-এ নাম ঠিকানা এবং দূরভাষ নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
  • চক্ষুদানের পদ্ধতিগত কোনও সমস্যা তৈরি হয় কি, যা হওয়া উচিত নয়?
  • বাস্তবিক কিছু ছোটোখাটো সমস্যা আছে এখনও, যা না হলেই ভালো। যেমন– ডেথ সার্টিফিকেট দিতে দেরি হলে চক্ষুদান অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টিহীনের চোখে প্রতিস্থাপন করতে সমস্যা হয়। তাছাড়া কোনও ব্যক্তি-মালিকানাধীন হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমকে চক্ষুদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অধিকার দেওয়া হয়নি এখনও। তাই চক্ষুদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ করতে হয় সরকারি হাসপাতালেই।

চশমাকে বলুন গুডবাই

পাওয়ার ছাড়া চশমা পরে ব্যক্তিত্ব বাড়াতে চান কেউ-কেউ। তবে এই ধরনের ইচ্ছে যাদের হয়, তাদের সংখ্যা খুবই কম। বরং বেশিরভাগ লোকের এর ঠিক উল্টো ইচ্ছেটাই হয় বেশি। বিশেষকরে এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা তো চশমা পরার ঘোর বিরোধী। ‘চশমা মানেই বাড়তি বোঝা’, ‘ভেঙে যেতে পারে’, ‘সৌন্দর্য নষ্ট হয়’– এমন অনেক বক্তব্যই বেশি পাওয়া যায় সমীক্ষায়। অতএব, চশমা ক্রমশ হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। ঠিক এই কারণেই চশমার পরিবর্তে অনেকে ব্যবহার করেন কনট্যাক্ট লেন্স। কিন্তু এই কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারেও রয়েছে পরা-খোলার অসুবিধা। আর এইসব অসুবিধা দূর করার জন্য সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে একটি বিশেষ ধরনের লেন্স।

যারা চশমা পরতে চান না, তাদের কী নতুন খবর দেবেন?

আবিষ্কৃত হয়েছে ‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’ বা ‘টোরিক আইওএল। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন থাকলেও যারা চশমা পরতে চান না, তাদের জন্য এই ‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’। এই লেন্স দেবে স্পেক্ট্যাক্ল ফ্রিডম। বিশেষকরে ছানি অপারেশন-এর পর যখন চশমা পরা অনিবার্য হয়ে পড়ে, তখন চোখে এই লেন্স বসিয়ে দিলে আর চশমা পরতে হবে না এবং সেইসঙ্গে পাওয়া যাবে আরও অনেক সুবিধা। সম্প্রতি এই বিষয়ে সমস্ত কৌতূহল মেটালেন ‘দিশা আই হসপিটাল’-এর আই সার্জন ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য।

দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে যে-কোনও বয়সের নারী-পুরুষ এই লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন কি?

শিশু ছাড়া যে-কোনও বয়সের নারী-পুরুষ এই লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আমরা সাধারণত চোখের ছানি অপারেশন-এর পরই এই ‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।

চোখে ছানি পড়ার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেকের। একটু আলোকপাত করবেন?

ক্যাটার‍্যাক্ট বা চোখের ছানি হল মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো। অর্থাৎ, চোখের মণির ওপর পাতলা পর্দার মতো স্তর পড়ে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এই অবস্থাটিকে এককথায় বলা যায় ‘চিকিৎসাযোগ্য অন্ধত্ব’। ষাট বছর বয়সের ঊধের্ব ভারতীয়দের প্রায় চুয়াত্তর শতাংশই এই রোগের শিকার। এটি সাধারণত বার্ধক্যজনিত চক্ষুরোগ। তবে আজকাল অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদেরও চোখে ছানির সমস্যা দেখা যাচ্ছে। রেডিয়েশেন এক্সপোজার, ডায়াবেটিস, আই ট্রমা কিংবা স্টেরয়েড-যুক্ত ওষুধ শরীরে গেলেও ক্যাটার্যাক্ট-এর সমস্যা হতে পারে। আর এই ছানি অপারেশন-এর পর, পুরোপুরি দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার জন্য চশমা ব্যবহার অনিবার্য হয়ে পড়ে।

ছানি অপারেশন-এর পর রোগীরা এযাবৎ হয় চশমা, নয়তো কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করতেন। কিন্তু দৃষ্টিলাভের এই দুই উপকরণ ব্যবহারের নানা সমস্যা আছে। অনেকের মতে, চশমা সৌন্দর্য নষ্ট করে, পড়ে গিয়ে ভেঙে যেতে পারে, রোদ-বৃষ্টিতে দেখার অসুবিধা হয় প্রভৃতি। কনট্যাক্ট লেন্স-এর ক্ষেত্রেও পরতে কিংবা খুলতে (শোয়ার আগে) অসুবিধা হয়। তাই, এই সমস্যা দূর করার উপায় বের করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার করেছেন ‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’। ক্যাটার্যাক্ট সার্জারির পর, স্পেকট্যাক্ল ফ্রিডম দিতে টোরিক আইওলেন্স-এর জুড়ি নেই।

‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’-এর আর কী কী বৈশিষ্ট্য আছে?

ক্যাটার‍্যাক্ট সার্জারির পর আগের থেকে দৃষ্টিতে অনেকবেশি স্বচ্ছতা দেবে এই লেন্স। শুধু তাই নয়, কাছের, দূরের সবরকম দৃষ্টিসমস্যা দূর করবে ‘টোরিক আইওএল’। সারাজীবন চশমার প্রয়োজন হবে না আর। ছানি অপারেশন-এর পরই এই লেন্স বসিয়ে দেওয়া হবে চোখে। এযাবৎ যেমন ছানি অপারেশন-এর পর চোখে ব্যান্ডেজ থাকত, কালো চশমাও থাকত কয়েকদিন, কিন্তু অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ক্যাটার্যাক্ট সার্জারির পর ‘টোরিক আইও লেন্স’ ব্যবহারের ফলে ওইসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সার্জারির মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা পর, রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন চোখে কোনওরকম ব্যান্ডেজ কিংবা চশমা ছাড়া।

ক্যাটার‍্যাক্ট সার্জারির পর ‘টোরিক ইনট্রা ওকুলার লেন্স’ ব্যবহারের জন্য কত খরচ পড়বে?

মোট আঠারো হাজার থেকে কুড়ি হাজার টাকা খরচ হবে। তবে এই লেন্স-এর ব্যবহার যত বাড়বে, ভবিষ্যতে খরচ তত কমবে বলে মনে হয়।

কারপাল টানেল সিনড্রোম

দীর্ঘদিন ধরে কব্জির চিনচিনে ব্যথায় ভুগছেন? ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছে হাতের আঙুল? এর কারণ কারপল টানেল সিনড্রোম নয়তো? সিংহভাগ মানুষই এই কারপাল টানেল সিনড্রোম রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন কিংবা নামও শোনেননি। কিন্তু, অজান্তেই এই রোগের শিকার হয়ে পড়লে, হয়তো প্রতিবন্ধীও হয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে, বেশি সচেতন হওয়া উচিত মহিলাদের। কারণ, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন এই রোগে। এমনই তথ্য সম্প্রতি তুলে ধরলেন অর্থোপেডিক সার্জন ডা. অরুনাভ লালা। সেইসঙ্গে, এই রোগটির সম্পর্কে সবরকম কৌতূহলও মেটালেন তিনি।

কারপাল টানেল সিনড্রোম রোগটি আসলে কী?

কারপাল টানেল সিনড্রোম একটি সাধারণ এবং ক্ষুদ্র সমস্যা। কিন্তু সচেতন না থাকলে এটি মানুষকে অথর্ব বা বিকলাঙ্গ করে দিতেও পারে। কারপাল টানেল সিনড্রোম আসলে হাতের তালুর নীচের অংশে একটি লিগামেন্ট-এর মধ্যে জল শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা। লিগামেন্ট-এর মধ্যে থাকা হাতের সবচেয়ে সূক্ষ্ম স্নায়ুর নাম মিডিয়ান নার্ভ। এই নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেখা দেয় সমস্যা।

কী কী কারণে এই রোগটি হয়?

বার্ধক্য, রিউমেটয়েড আথর্রাইটিস, থাইরয়েড-এর সমস্যা, গর্ভাবস্থায় কানেকটিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার্স প্রভৃতি কারণে কারপাল টানেল সিনড্রোম হতে পারে। অনেকক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে টাইপিং-এর কাজ, অনেকক্ষণ গাড়ি চালানো কিংবা অনেকক্ষণ হাতের মাংসপেশির উপর চাপ পড়লে হতে পারে কারপাল টানেল সিন্ড্রোম।

এই রোগের প্রধান উপসর্গগুলি কী কী?

এই রোগের প্রধান উপসর্গ হল, অল্প হলেও চিনচিনে ব্যথা হবে হাতের কব্জিতে। ব্যথা আপনার বুড়ো আঙুল এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ আঙুলের একদিকে থাকবে। অন্য যে-কোনও নিউরোলজিক্যাল ব্যথার মতো এই ব্যথাটি রাতের দিকে বা ঘুম থেকে উঠলে বেশি বাড়ে। যত সময় যেতে থাকে, ব্যথা আরও তীব্র হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে হাতের সূক্ষ্ম কাজকর্ম ব্যহত হয়। পেন দিয়ে লেখার অভ্যাস থাকলে, হাত থেকে পেন-ও পড়ে যেতে পারে। যারা বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি হাতের সূক্ষ্ম কাজকর্ম করেন, তাদের কাজের স্মুদনেসও থাকে না। শেষের দিকে ধীরে ধীরে হাতের মাংসপেশিগুলো শুকিয়ে যায় এবং ওই হাত দিয়ে কোনও সাধারণ কাজকর্মও করা সম্ভব হয় না।

কারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন?

গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহিলারা সাতগুন বেশি আক্রান্ত হন এই ব্যধিতে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বেশি আক্রান্ত হন মহিলারা। তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে। তার প্রধান কারণ হল তাদের অস্বাস্থ্যকর লাইফ-স্টাইল।

কীভাবে করা হয় এই রোগের চিকিত্সা?

এই রোগের ডায়াগনোসিস সাধারণত রোগটির উপসর্গ দেখে এবং নার্ভ কনডাক্টিভ ভেলোসিটি টেস্ট করে কনফার্ম হতে হয় যে, কারপাল টানেল সিনড্রোম-এর সমস্যা আছে কিনা।

আর যে-কোনও চিকিত্সাকে মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল এই দুভাগে ভাগ করা হয় এবং এক্ষেত্রেও তাই করা।

প্রথম পর্যায়ে দেখা উচিত, রোগের উপসর্গ কী? যদি গর্ভাবস্থার জটিলতার কারণে কারপাল টানেল সিন্ড্রোম হয়, তাহলে খুব সাবধানে এমন ভাবে ওষুধপথ্য দিতে হয় কিংবা চিকিত্সা করতে হয় যাতে গর্ভস্থ সন্তানের কোনও ক্ষতি না হয়। তবে, অনেকেরই ডেলিভারির পরে এই সমস্যা কমে যায়। সুতরাং, গর্ভাবস্থায় বেসিক পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং সামান্য ফিজিওথেরাপি-র মাধ্যমেও এই রোগের চিকিত্সা করা যায়। আর সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে চিকিত্সা শুরু করার আগে, রোগের উপসর্গ দেখে, সেইমতো চিকিত্সা করা হয়।

আথর্রাইটিস, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার প্রভৃতির কারণে এই রোগ হলে অথবা অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল-এর জন্য এই সমস্যা হলে তাদেরকে সেইমতো ওষুধ দেওয়া হয় কিংবা প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন-কেও চিকিত্সার মাধ্যম করা হয় অনেক সময়। বেশিক্ষণ কম্পিউটার টাইপিং অ্যাভয়েড করা এবং হাতের কিছু সামান্য ব্যায়াম করা, কিছু অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস, লোকাল ইঞ্জেকশনস এবং উচ্চমানের ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেও চিকিত্সা করা হয়। হাতের সমস্যার জন্য স্পেশালিস্ট হ্যান্ড ফিজিওথেরাপিস্ট-কেও নিযোগ করা হয়। অনেক সময় রিস্ট স্প্লিন্ট ব্রইস্ট ইমোবিলাইজার পরলেও ব্যথা কম হয়।

আর যদি সমস্যা জটিল হয়, অর্থাত্ হাত কাঁপতে থাকে কিংবা ব্যথা বেড়ে যায়, তখন প্রযোজন হলে সার্জারি-কেও চিকিত্সার মাধ্যম করতে হতে পারে। হাতের ছোট্ট একটা অপারেশন করেও কারপাল লিগামেন্ট রিলিজ করা যায়। এটি পনেরো-কুড়ি মিনিটের সার্জিক্যাল প্রসিডিযোর এবং সাধারণত এটি একটি ডে-কেয়ার প্রক্রিয়া। অর্থাত্, সকালবেলা ভর্তি হলে, সন্ধেবেলা ছাড়া পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একটি রাতও হাসপাতালে থাকার প্রযোজন হয় না। ডিরেক্ট সার্জারি বা আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি হিসেবেও করা যেতে পারে। ওপেন সার্জারি হলে, হাতের তালুর দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার ওপেন করে, লিগামেন্ট রিলিজ করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি করলে

রিস্ট-এর মধ্যে ক্যামেরা ঢুকিয়ে সার্জারি করা হয়। তবে, দুটো পদ্ধতিতেই সার্জিক্যাল টাইম অ্যান্ড রিকভারি টাইম সমান।

অতএব, যদি আপনার এই রোগের উপসর্গ থাকে, তাহলে এখনই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন এবং আপনার ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন এবং বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক টেস্ট করিয়ে নিন। আপনি যদি এই রোগটির প্রথম পর‌্যাযে থাকেন, তাহলে শুধু ওষুধ দিয়ে রোগ সারানো সম্ভব। কিন্তু যদি দেরি হয়ে যায়, তাহলে অপারেশনের ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, একবার অপারেশন হলে আবার কি এই ব্যাধি হতে পারে? দেখা গেছে, ঠিকঠাক অপারেশন হলে এবং রোগের উপসর্গগুলি দূর করতে পারলে, দ্বিতীয়বার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি

বাড়িঘর, প্রতিমা কিংবা প্যান্ডেল, সবকিছুরই একটি কাঠামো থাকে। এইসব কাঠামোর উপকরণ হিসাবে থাকে রড, বাঁশ কিংবা কাঠ। কোনও কারণে যদি কাঠামোর উপকরণ দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা ভেঙে পড়ে, তাহলেই বিপদ। মানবদেহেরও যে কাঠামো আছে, তার উপকরণ হল অস্থি বা হাড়। ক্যালসিয়াম-এর অভাবে কিংবা কোনও আঘাতজনিত কারণে যদি এই অস্থি বা হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে মেরামতের প্রয়োজন হয়। সেইসঙ্গে, যদি সমস্যা জটিল হয়, তাহলে মেরামতের জন্য মেজর সার্জারিরও প্রয়োজন হয়। আর সার্জারি যাতে সহজ ও সফল হয়, তারজন্য বর্তমানে মাধ্যম করা হচ্ছে আর্থ্রোস্কোপ-কে। কিন্তু কী এই আর্থ্রোস্কোপ, অর্থোপেডিক সার্জারিতে একে মাধ্যম করে কতটা সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে, এই সমস্ত বিষয়ে আলোকপাত করলেন ডা. সুঘ্রাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর্থ্রোস্কোপির বিবরণ

আর্থ্রোস্কোপির অর্থ হল, অস্থিসন্ধির ভিতরে ক্যামেরা দিয়ে দেখা এবং চিকিৎসাযোগ্য কোনও অসুবিধা থাকলে তাকে নিরাময় করে তোলা। তাই, আধুনিক চিকিৎসায় আর্থ্রোস্কোপি হল আর্থোপেডিক সার্জারির একটি অন্যতম মাধ্যম।

আর্থ্রোস্কোপির সুবিধা

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রায় সমস্ত অস্থিসন্ধি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারানো যেতে পারে। সাধারণত হাঁটু, কাঁধ, কনুই এবং পায়ের গোড়ালির অস্থিসন্ধির অপারেশন এই আর্থ্রোস্কোপি পদ্ধতিতে করে সুফল পাওয়া যায়। এই অপারেশন-এর বড়ো সুবিধে হল, সাধারণ ভাবে প্রতিটি অপারেশনেই খুব অল্প সময়ে রুগিকে সুস্থ করে তোলা যায়। এরজন্য হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া, এই অপারেশন ব্যয়বহুলও নয়।

বিদেশে এই অপারেশন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এই অপারেশন-এর প্রকৃত তালিমও দেওয়া হয়। আমাদের দেশে খুব অল্প-সংখ্যক চিকিৎসক বিদেশে তালিম নিয়ে এই পদ্ধতিতে (আর্থ্রোস্কোপি) অপারেশন করে থাকেন।

এই অপারেশন-এ ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম। কিন্তু চিকিৎসার প্রকৃত সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসার রকমফের

  • হাঁটুতে যে সমস্ত জটিল সমস্যা হয়, যেমন – কার্টিলেজ ছেঁড়া, লিগামেন্ট ছেঁড়া, অস্টিয়ো আর্থারাইটিস প্রভৃতি আর্থ্রোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসা করে সাফল্য পাওয়া যায়।
  • কাঁধের সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে সাবঅ্যাক্রোমিয়ান ডিকমপেশন (কাঁধের ব্যথা), রোটেটার কাফ ছিঁড়ে যাওয়া, ফ্রোজেন শোল্ডার প্রভৃতি। এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি সুফলদায়ক।
  • গোড়ালিতে ব্যথা কিংবা লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলেও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারিতে সাফল্য পাওয়া যায়।
  • কনুইর অসাড় ভাব দূর করতে কিংবা কনুই ভেঙে গেলে, ভাঙা হাড়ের টুকরো বের করতে আর্থ্রোস্কোপির সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
  • হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং দৗড়োতে অসুবিধা হয়। সেইসঙ্গে, হাঁটু লক্ হয়ে যায়। তাই হঠাৎ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এই জটিল চিকিৎসাও আর্থ্রোস্কোপির দ্বারা সহজে করা যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি রুগিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
  • যাদের আর্থারাইটিস আছে, তাদেরও হাঁটু আটকে (লক) গিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এই পড়ে গিয়ে যদি হাঁটুতে ভাঙা হাড়ের টুকরো থেকে যায়, তাহলে বড়ো বিপদ। এই জটিল অবস্থাতেও আর্থ্রোস্কোপির সাহায্যে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • কখনও আবার হাঁটুতে কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে আর্থ্রাইটিস বাড়ে। তাই কার্টিলেজ বেশি হয়ে ক্ষয়ে যাওয়ার আগে আর্থ্রোস্কোপির সাহায্যে কন্ডোপ্লাস্টি অপারেশনকে মাধ্যম করে নতুন কার্টিলেজ তৈরি করা যায়। আর এর সঙ্গে ভাস্কোসাপ্লিমেন্টেশন দিলে বহুদিন পর্যন্ত রোগীকে ভালো রাখা যায়।
  • হাঁটুর ভিতরে দুটি কার্টিলেজ থাকে এবং এগুলি ছোটোখাটো আঘাত প্রতিরোধ করে। কিন্তু, এই কার্টিলেজ যদি ছিঁড়ে যায়, তাহলে আর্থ্রোস্কোপির সাহায্যে এই কার্টিলেজ সারানো যায়। এক্ষেত্রে ছেঁড়া অংশ বাদ দিয়ে জায়গাটি মসৃণ করে রোগীকে আগের মতো স্বাভাবিক হাঁটাচলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

আর্থ্রোস্কোপির জনপ্রিয়তা

কয়েকবছর আগে আমাদের দেশে আর্থ্রোস্কোপির সাহায্যে অপারেশন-এর ব্যবস্থা ছিল না কিন্তু বর্তমানে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। আর যেহেতু এই পদ্ধতিতে কোনও কাটাছেঁড়া না করে মাত্র ছোট্ট দুটো ফুটো করে খুব সহজে জটিল অপারেশন করে সাফল্য পাওয়া যায়, তাই আর্থ্রোস্কোপির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব