জীবন বাঁচাবে সিপিআর

বোহেমিয়ান জীবনযাপনকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া, সতর্কতা স্লবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞানতার কারণেও রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমনই ফল প্রকাশিত হয়েছে সমীক্ষায়। ধূমপান, মদ্যপান, হরমোন থেরাপির কুফল ছাড়াও, হৃদযন্ত্র  বিকল হতে পারে বেশিদিন জন্মনিরোধক ওষুধ সেবন করলেও। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এবং আরও নানারকম সতর্কতামূলক বিষয়ে সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন ডা. সৌম্য পাত্র।

হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে কী করা উচিত?

অনেকেই এ বিষয়ে সচেতন থাকেন না যে, বুকে ব্যথা হৃদরোগের একটি পূর্বাভাষ। বুকে ব্যথা হওয়াটা হৃদরোগের একটি সাধারণ লক্ষণ হওয়া সত্ত্বেও, অনেক সময়ই বুকে ব্যথার সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্কের কথা ভাবেন না অনেকেই। এক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণ-এর দিকে নজর দিতে হয়। এছাড়া, হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে, পাশে থাকা কাউকে জানানো জরুরি।

মহিলাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের লক্ষণ কী?

মহিলাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের সাধারণ ছয়টি লক্ষণ হল–

  • বুকে ব্যথা এবং অস্বস্তি বোধ হওয়া। বুকে ব্যথা হওয়াটা হৃদরোগের একটি সাধারণ লক্ষণ। তা হলেও কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে পুরুষদের থেকে পৃথক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
  • হাতে, পিঠে, ঘাড়ে অথবা চোয়ালে ব্যথা অনুভব হয়। পাকস্থলিতে ব্যথা হয়।
  • শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত বের হয়, মাথা ঘোরার লক্ষণ দেখা দেয়।
  • ঘাম বের হতে থাকে।
  • শরীরে ক্লান্তি বা অবসাদ আসে।

আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ করতে করতে যদি হঠাৎ করে ক্লান্তি বোধ করেন, তখন আপনাকে এই বিষয়ে অবহেলা না করে নজর দিতে হবে।

ক্লান্তি ভাব এবং সেই সঙ্গে বুকে প্রবল ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন।

সাধারণ ও হালকা কাজ, যেমন বিছানা করা, বাথরুমের দিকে যাওয়া অথবা দোকান-বাজারে যাওয়া, ইত্যাদি কাজেও যদি আপনার অস্বাভাবিক বেশি ক্লান্তি অনুভব হয়, তখন সেদিকে নজর দেওয়াটা জরুরি।

যদি ঘুমে বিঘ্ন ঘটে বা ঠিকমতো ঘুম না হয়, তখন সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ঘাম হওয়া অথবা স্বাভাবিক শ্বাসকার্যের যদি বিঘ্ন ঘটে, তাহলে সতর্ক থাকতে হবে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম ব্যায়াম ও পরিশ্রমের কারণে এবং দেহের ওজন বেড়ে যাবার কারণে শ্বাসকার্যের বিঘ্ন ঘটতে পারে। অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ-এর সময় সাধারণ লক্ষণ হল– শরীর গরম হয়ে যাওয়া এবং জ্বালা-জ্বালা ভাব।

কী কী কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে?

বেশি রাত জাগা, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, ফাস্ট ফুড, ধূমপান, মদ্যপান, হরমোন থেরাপি ছাড়াও, বেশিদিন জন্ম-নিরোধক সেবন করলেও হূদরোগ হতে পারে। ওবেসিটিও হৃদযন্ত্র বিকল করতে পারে। রক্তে ব্যাড কোলেস্ট্রলের মাত্রা বেড়ে গেলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া করোনারি হার্ট ডিজিজ থাকলেও হৃদরোগ জটিল রূপ নেয়।

কোন বিষয়গুলির দিকে নজর দিতে হবে?

চিকিৎসককে যে-সমস্ত বিষয়গুলি খুলে বলতে হবে–

  •  দিন দিন দেহের ওজন লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে গেলে
  • পায়ের তলা, গোড়ালি অথবা দেহের অন্য অংশ ঘেমে যেতে থাকলে
  • স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসকার্য করার পক্ষে কষ্টকর হতে থাকলে
  • দৈনন্দিন কাজকর্মের সময় অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করলে
  • ঘনঘন জ্বর হতে থাকলে

প্রায় সময় বুকে ব্যথা অনুভব করলে

হৃদযন্ত্রটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা সাধারণ ভাবে বুঝবার উপায় কী?

  •  কফের রং লালাভ হয়ে গেলে। কফের সঙ্গে রক্ত মেশা মিউকাস বের হলে
  • মনের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে, ঠিকমতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারছেন না। মাথা ঘোরা ভাব অথবা হালকা মাথাব্যথা অনুভব হলে
  •  খাবার অভ্যাসের বদল ঘটছে অথবা খাবার খেতে অনিচ্ছা দেখা দিলে

এই অবস্থায় কী করা উচিত?

  •  দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এই বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহণ করুন
  • খাবারের লেবেলগুলি ভালোভাবে দেখুন এবং উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম (লবণ) রয়েছে, সেই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন
  • নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হোন এবং সেই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিন।

যদি কারওর শ্বাসকার্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন কী করতে হবে?

সিপিআর তখন জীবনকে রক্ষা করতে পারে। কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) হল প্রকৃত অর্থেই একটি জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতি, যার সাহায্যে হৃদরোগে আক্রান্ত কোনও মানুষের জীবনকে রক্ষা করা যায়। যখন মানুষের হৃদযন্ত্রটি কাজ করতে পারে না, তখন এই পদ্ধতির সাহায্যে রক্তকে পাম্প করে সারা দেহে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীর মুখে মুখ দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে এবং দু’হাত দিয়ে বুকে পাম্প করতে হবে।

সিপিআর ব্যবস্থা চালু করার পর শরীরের মধ্যে কী ধরনের উন্নতির লক্ষণ দেখা দিতে পারে?

  •  কাশি হওয়া
  • চোখ খুলে তাকানো
  • কথা বলতে পারা এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে অঙ্গ সঞ্চালন করা
  • স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসকার্য করতে পারা
  • আর যখন অসুস্থ ব্যক্তি তার চেতনা ফিরে পাবে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে, তখন সিপিআর বন্ধ করে দিতে হবে। যদি দেখা যায় যে, রোগী স্বাভাবিকভাবে শ্বাসকার্য করছে কিন্তু অচেতন রয়ে গিয়েছে, তখন তার জ্ঞান ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তার দিকে নজর রাখুন। দেখা গিয়েছে যে ভারতীয়দের মধ্যে ৯৮ শতাংশই সিপিআর সম্পর্কে কিছু জানেন না।

সিপিআর কেবলমাত্র জলে ডুবে যাওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার পক্ষে কার্যকরই নয়, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা। এর সাহায্যে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা হৃদরোগে  আক্রান্ত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। যারা সিপিআর-এর সাহায্য পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে জীবন রক্ষা দুই বা তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। ভারতে প্রকৃত তথ্যের অভাবে এই বিষয়গুলি পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাহলেও ভারতকেই কিন্তু বলা হয় হূদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ওবেসিটি-র দেশ। আসল বিষয় হল– হৃদরোগ হবার মতো কারণগুলি আমাদের দেশেই বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায়। সেই কারণে হৃদরোগে মৃত্যুর হার আমাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি।।

মহিলাদের সিপিআর গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়গুলি কী কী?

সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় সিপিআর-কে কম পছন্দ করেন। সমাজে লিঙ্গ বিচারের বিষয়টিই এখানে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে নানাবিধ ভয় বেশি করে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে ভুল বোঝার ভয়। তাছাড়া সিপিআর-এর সময় মহিলাদের বুকে বেশি করে চাপ দেবার বিষয়টি অনেকে পছন্দ করে না। সেই কারণে তারা সিপিআর নিতে দ্বিধা করে। তাছাড়া আমাদের সমাজ পশ্চিমি সমাজ ব্যবস্থার চেয়ে অনেক আলাদা। তাই বেশি করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকে আমাদের সমাজ মেনে নিতে পারে না। তাই প্রত্যেককে সিপিআর সম্পর্কে ট্রেনিং দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি সেই সমস্ত মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যারা সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজ করে। যেমন– ট্রাফিক পুলিশ কিংবা জরুরি পরিষেবায় কর্মরত মানুষ। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে হূদরোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় মনে করা যেতে পারে যে, সিপিআর চিকিৎসা পদ্ধতি শিখে নিয়ে এর হাত থেকে রোগীদের রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত প্রত্যেকের।

হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার হাত থেকে আমরা কীভাবে বাঁচতে পারি?

হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতির সার্থক প্রয়োগ আমাদের জীবনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। আমাদের জীবনযাপনের মানকেও বাড়াতে সাহায্য করে। হূদযন্ত্র বিকল হওয়ার চিকিৎসা ওষুধ প্রয়োগের সাহায্যে করা যেতে পারে। যেমন ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে দেহে শক্তির মাত্রা বাড়ানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি মানুষকেও শারীরিক ভাবে সক্ষম হয়ে ওঠার চেষ্টা করে যেতে হবে। সৗভাগ্যক্রমে হূদযন্ত্র বিকল হওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের সামনে রয়েছে। ভালো ভাবে চিকিৎসা এবং পরিচর্যা পেলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ঠিক মতো মেনে চললে, হূদরোগের বিষয়ে সচেতন হলে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করা সম্ভব।

চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যে ওষুধ আপনাকে গ্রহণ করতে বলবেন, আপনি চিকিৎসকের সেই পরামর্শ মেনে চলবেন। তাঁর নির্দেশমতো খাবার গ্রহণ এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করে যেতে হবে আপনাকে। তাহলেই হৃদরোগের হাত থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।

মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি

চিকিৎসকরা হার্ট সার্জারির কথা বললেই, রোগী কিংবা তাঁর বাড়ির লোকেদের মধ্যে খুব ভয় কাজ করে। ভয় হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, কর্মজীবন থেকে দীর্ঘ বিরতি, এমনকী জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে, এই ভয় এখন অনেকটাই কমেছে। মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস) অনেক বেশি নিরাপদ বলে এখন দাবি করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, এমআইসিএস-এর ক্রমসাফল্যে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। কিন্তু, হার্টের কী ধরনের সমস্যার সমাধানে এমআইসিএস উপযুক্ত, কীভাবে হয় এই সার্জারি এবং কেন এই ধরনের সার্জারির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এই সমস্ত বিষয়ে সম্প্রতি কৗতূহল মেটালেন ডা. সুশান মুখোপাধ্যায়।

বাড়ছে হার্ট ডিজিজ। প্রচুর মহিলাও হার্টের নানারকম অসুখেঞ্জভুগছেন এখন। এর কারণ কী?

এত বেশি সংখ্যক লোক হার্টের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন, যা খুবই উদ্বেগজনক। এর মুখ্য দুই কারণ হল– ফুড হ্যাবিট এবং লাইফস্টাইল-এর পরিবর্তন। ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া, মিনিমাম আট ঘন্টা না ঘুমোনো, ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতি ছাড়াও, হার্টের অসুখের জন্য দায়ী মানসিক চাপ। কারণ মানসিক চাপ যত বাড়বে, ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও ততই বাড়বে। আর ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়া মানেই হার্টের অসুখকে আমন্ত্রণ জানানো। তবে মহিলাদের হার্টের অসুখ বাড়ছে অন্য কারণে। যেসব মহিলা দীর্ঘদিন কন্ট্রাসেপ্টিভ পিলস সেবন করছেন কিংবা হরমোন থেরাপি করেছেন, সেইসব মহিলারা হার্টের অসুখে ভুগতে পারেন।

সাধারণত কমবয়সি মহিলাদের যেসব হার্টের সমস্যা লক্ষণীয়, তা হল– হার্টের পর্দার মধ্যে ছিদ্র বা অ্যার্টিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট বা ভেন্টিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট। এই ধরনের সমস্যা খুবই সাধারণ।ঞ্জএছাড়াও হার্টের মধ্যে যে কপাটিকা বা ভাল্ভ আছে, তারও সমস্যা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ভাল্ভ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। আর যে- সমস্ত সমস্যা দেখা যায়, তারমধ্যে অন্যতম হল হার্টের মধ্যে টিউমার। এটি মিক্সমা নামে পরিচিত। এর ফলে ক্যালসিফায়ড ভাল্ভ সংকুচিত হয় এবং অ্যাওঠিক স্টেনোসিস দেখা যেতে পারে, যার জন্য সার্জারির প্রয়োজন। তবে যে- সমস্যাটি আমাদের দেশে মহামারির আকার ধারণ করেছে, তা হল– করনারি আর্টারি ডিজিজ। অর্থাৎ, যার জন্য হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মহিলাদের করনারি ভাস্কুলার ডিজিজ হয়ে থাকে, যা ঋতুকালীন সময় কিছুটা কম থাকে। তবে ঋতুবন্ধের  পর এই সমস্যা পুরুষদের মতোই হয়। আসলে নানা কারণে বাড়ছে করনারি ভাস্কুলার ডিজিজ। শরীরচর্চার অভাব, ওজন বেড়ে যাওয়া, ফ্যাট এবং ব্যাড কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদির কারণেও বাড়ছে এই ডিজিজ।

হার্টের কী ধরনের সমস্যায় সার্জারির প্রয়োজন হয়?

আর্টিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (এএসডি), মাইট্রাল ভাল্ভ ডিফেক্ট, অ্যাওঠিক ভাল্ভ, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, এলএমিসোমা প্রভৃতি ক্ষেত্রে হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়।

সাধারণ হার্ট সার্জারি এবং মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারির মধ্যে তফাত কী?

সাধারণ হার্ট সার্জারির ক্ষেত্রে বুকের পাঁজরের কিছুটা হাড় কেটে সার্জারি করতে হয়। এরজন্য চার থেকে ছয় ইঞ্চির ক্ষত তৈরি হয়। রক্তক্ষরণও হয় অনেকটাই। এই শল্য চিকিৎসা কিছুটা ঝুঁকিসাপেক্ষও। তাছাড়া, প্রায় দু’মাস বিশ্রামে থাকার পর কর্মজীবনে ফেরা যায়। কিন্তু এমআইসিএস বা মিনিম্যালি ইন্ভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য মাত্র দেড় ইঞ্চি কাটতে হয়। বেশি রক্তক্ষরণেরও ভয় থাকে না। সার্জারি হয় ক্যামেরাকে মাধ্যম করে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে। সার্জারির তিন দিন পর রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে এবং পনেরো দিন পর কাজে যোগ দিতে পারেন অনায়াসে।

এমআইসিএস-এর জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে?

মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি বা এমআইসিএস নিয়ে প্রায় আট বছর ধরে কাজ চলছে। প্রথম দিকে এই পদ্ধতিতে নিয়মিত সার্জারি হতো না। কারণ, এই পদ্ধতির সুফল প্রসঙ্গে রোগী এবং তার পরিবারের লোকেরা অবগত ছিলেন না এবং তাদের বোঝানোও একটু কঠিন ছিল। তাছাড়া শুরুতে সার্জারির ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গা থেকে এর কার্যকরী দক্ষতার শিক্ষালাভ করে আসতে হতো চিকিৎসকদের। তখন শুধু জার্মানির বিখ্যাত ‘লাইভ জিগ হার্ট সেন্টার’-এ নিয়মিত ভাবে এমআইসিএস হতো। তো ওখান থকে দক্ষতার শিক্ষা নিয়ে আসতে হয়েছে এবং ওদের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে হয়েছে। তবে এখন আমরা এখানেও দক্ষতার সঙ্গে এই সার্জারি করি এবং আমাদের সাফল্যের কারণে এমআইসিএস-এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।

হার্টের সমস্যা এড়াতে মহিলারা কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবেন?

যেসব মহিলাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাক আটকানোর জন্য অগ্রিম সতর্কতার প্রয়োজন। চল্লিশ বছর বয়স হওয়ার পরই জেনারেল চেক-আপ করানো জরুরি। সেইসঙ্গে, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি, সিটিএনজিও কিংবা কার্ডিয়াক ভেসেল-এ কোনও স্নেহজাতীয় পদার্থ রয়েছে কিনা মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।ঞ্জএছাড়া, কিডনির সমস্যা কিংবা ডায়াবেটিসঞ্জআছে কিনা সেই পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ আমাদের দেশের মহিলাদের যে শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে, অর্থাৎ মহিলাদের ছোটোখাটো গঠন কিংবা ওবেসিটি থাকলে করনারি আর্টারির মাপ ছোটো হয়। এরজন্য যদি করনারি আর্টারিতে কোনও ব্লকেজ দেখা যায়, তাহলে এমআইসিএস-এর প্রয়োজন হয়। সেইসঙ্গে ব্লকেজ না থাকলেও যদি ছোটো ভেসেল হয়, তাহলেও বুকে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। এছাড়া বন্ধ করতে হবে ফাস্ট ফুড খাওয়া, ঘুমোতে হবে পর্যা৫ (কমপক্ষে আট ঘন্টা), শারীরিক ব্যায়ামও জরুরি। বন্ধ করতে হবে ধূমপান এবং মদ্যপান। টাটকা শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।

এমআইসিএস কি খুব কস্টলি ট্রিটমেন্ট?

একেবারেই নয়। সাধারণ হার্ট সার্জারির থেকে সামান্য বেশি খরচ হলেও, তা আয়ত্তের মধ্যে থাকে। বরং সাধারণ হার্ট সার্জারির ক্ষেত্রে বেশি দিন হাসপাতালে থাকার খরচ বহন করতে হয় এবং কাজে যোগ দিতেও সময় লাগে (দু’মাস)। কিন্তু এমআইসিএস-এ মাত্র তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয় এবং পনেরো দিন পর কাজে যোগ দেওয়া যায়। অতএব, সেদিক থেকে এমআইসিএস সাশ্রয়কারী বলা যায়। তবে পেশেন্ট-এর শারীরিক অবস্থা যদি খুব খারাপ হয় কিংবা অসুখ যদি জটিল রূপ নিয়ে থাকে, তাহলে তো খরচ বাড়বেই।

স্তন ক্যানসার

৫০ বছরেরর ঊধের্ব বা তার বেশি বয়সি মহিলাদের মধ্যে কি স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বেশি?

  • সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ৫০ বছর বয়সি কোনও মহিলারও একজন তরুণীর মতোই তাঁর শরীরে স্তন ক্যানসার দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। বয়স্ক মহিলাদের কী কারণে স্তন ক্যানসার হতে পারে, কী ধরনের রিস্ক ফ্যাক্টর কাজ করে, সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা গিয়েছে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলির জন্যই স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে।

এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব কি?

  • সাধারণত একজন মহিলা কোন বয়সে রজঃস্বলা হচ্ছেন এবং কোন বয়সে তাঁর মেনোপজ হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে তাঁর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি। যেসব মহিলা ১২ বছর বয়স হওয়ার আগেই রজঃস্বলা হন এবং ৫৫ বছর বয়স হওয়ার পর যাঁদের মেনোপজ হয়– তাঁদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য বেশি। কারণ, নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের উপস্থিতি এর ফলে শরীরে বেশিদিন থেকে যায়, যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, বয়সজনিত অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনও স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে মহিলাদের স্তনের তন্তুর গঠন পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের ফলেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা কি বয়সভেদে আলাদা?

  • বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় থেরাপি কম্বিনেশেন সংখ্যায় কম হয়। ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যেসব সাইড এফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তা অনেক সময় সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। যদি কোনও বয়স্ক মহিলার স্তন ক্যানসার অ্যাডভান্সড স্টেজে বা প্রাথমিক চিকিৎসার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপিই যথাযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও অল্পবয়সিদের তুলনায় বয়স্কদের শরীরে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হবে। রোগীর শরীর এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতখানি গ্রহণ করতে পারছে এবং তাঁর দৈনন্দিন জীবনে তার কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তার ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।

বয়স্ক মহিলাদের স্তন ক্যানসারের জন্য কী ধরনের শারীরিক পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং হওয়া উচিত?

  • ৪০ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের সব সময়ই স্তন ক্যানসারের জন্য শারীরিক পরীক্ষা হওয়া উচিত। পরীক্ষা দুভাবে হতে পারে। বাড়িতেই কোনও মহিলা নিজের স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। একে হোম সি্্ক্রনিং বলা হয়। আবার চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করতে পারেন। একে বলা হয় ক্লিনিক্যাল সি্্ক্রনিং। পারিবারিক ইতিহাস ও ঝুঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখে চিকিৎসকরা ৫০ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের প্রতি দুই থেকে তিন বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।

কী ধরনের শারীরিক উপসর্গ ও লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত?

  • স্তন ক্যানসার বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় স্তনে নতুন লাম্প বা মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি। এই মাংসপিণ্ড শক্ত হতে পারে, ব্যথা নাও থাকতে পারে। আবার মাংসপিণ্ড তুলনায় নরম ও গোলাকার হতে পারে, তাতে ব্যথাও হতে পারে। এছাড়াও স্তন ক্যানসারের অন্যান্য লক্ষণগুলি হল স্তনের একাংশ বা গোটা স্তনই ফুলে যাওয়া (এমনকী, যদি কোনও মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব আলাদা করে বোঝা না-ও যায়), চামড়ায় জ্বালাযন্ত্রণা এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়া (কমলালেবুর খোসার মতো), স্তন ও স্তনবৃন্তে ব্যথা, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, বৃন্ত লালচে হয়ে যাওয়া এবং তা থেকে রস নিঃসৃত হওয়া। মহিলাদের উচিত নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা এবং কোনও ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কী ভাবে কমাতে পারেন মহিলারা?

  • স্তন ক্যানসার প্রতিরােধের নির্দিষ্ট কোনও পথ নেই। তবে একটু সতর্ক থাকলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যেমন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ করতে হবে, শারীরিক ভাবে সক্ষম থাকতে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে, স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খেতে হবে। যেসব মহিলা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর বেশ কিছু মাস পর্যন্ত দুগ্ধপান করান, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কম। যাঁরা একেবারেই দুধ পান করান না সন্তানকে, তাঁদের ঝুঁকি তুলনায় বেশি।

স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং বা চিকিৎসা শুরুর আগে, মহিলাদের কী কী বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার?

  • ৬০ বা তার বেশি বয়সি মহিলাদের স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা পদ্ধতি অন্যদের তুলনায় জটিলতর হয়। সুতরাং, আগে থেকেই রোগিণীকে এই চিকিৎসা ও স্ক্রিনিংয়ের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। তা ছাড়াও চিকিৎসার খরচ ও ঝুঁকি সম্পর্কে তাঁদের অবগত করা উচিত। চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং রোগিণীদের জীবনযাত্রায় তার প্রভাব সম্পর্কেও তাঁদের সচেতন করা উচিত। যেসব বয়স্ক মহিলা স্ক্রিনিং করানোর কথা ভাবছেন বা যাঁদের কিছু দিন আগে স্তন ক্যানসার ধরা পড়েছে, তাঁদের নিম্নলিখিত বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত-
  •  সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থা (রোগিণীর শরীরে অন্যান্য উপসর্গ, তাঁর পৗষ্টিক ও মানসিক অবস্থা)
  • রোগিণীর অবস্থা ও জীবনের মেয়াদ যাচাই করা
  • স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার সম্ভাব্য সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে রোগিণীকে অবগত করা
  • জীবন ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে ব্যক্তিগত বাছাই– অর্থাৎ রোগিণী কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত চিকিৎসা চান নাকি আগ্রাসী চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে চান। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেহে নতুন করে ক্যানসার ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যায় ।

তরুণীদের তুলনায় বয়স্ক মহিলাদের চিকিৎসার ফলাফল ভালো নাকি খারাপ হতে পারে?

  • বিষয়টি ব্যক্তিনির্ভর। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বদল, বয়স্ক নারীদের চিকিৎসা সফল হতে ও তাঁদের জীবনের মেয়াদ বাড়াতে সাহায্য করছে। গবেষণা বলছে, যদিও ৬০ বছর বয়সের পর মহিলাদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তবু ওই বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।

আপনি কেন মনে করেন, বয়স্ক মহিলাদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনার প্রতি বেশি নজর দেওয়া উচিত?

  • আমরা সকলেই জানি, বয়স্কদের শরীরে নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তার সঙ্গে যদি স্তন ক্যানসার যোগ হয়, তা হলে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়ে। আরোগ্যের সম্ভাবনাও কমে যায়। সে জন্যই বয়স্ক মহিলাদের সচেতন করা উচিত, যে-কোনও বয়সেই স্তন ক্যানসার হতে পারে এবং তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিহ্নিত করা দরকার। এ জন্য নিয়মিত সি্্ক্রনিং ও রিস্ক ফ্যাক্টর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। এর ফলে সময় থাকতে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় ও চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।

বর্তমানে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের চেয়েও স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যদিও কমবয়সি মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বেড়ে যাওয়া নিয়ে মাথাব্যথা দেখা দিয়েছে, তবু বয়স্ক মহিলাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, কোনও নতুন ওষুধ বাজারে এলে বা চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হলে বয়স্ক বা বৃদ্ধাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা গবেষণামূলক পরীক্ষার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। ভারতে এত বেশি সংখ্যক বয়স্ক মহিলার শরীরে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা দেখা যায় যে, প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা পদ্ধতি খতিয়ে দেখে এবং তাতে উল্লেখযাগ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে তাঁদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা দরকার।

কিডস আই কেয়ার

শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে প্রতিদিন। তাই এই সময় তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা এবং যত্ন নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে, বেড়ে ওঠার সময় শিশুর চোখের কেয়ার নেওয়া মা-বাবার প্রাথমিক দায়িত্ব। কারণ, চোখ অমূল্য সম্পদ। অবহেলার কারণে শৈশবেই যদি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার মূল্য দিতে হবে জীবনভর। তাই, আপনার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা আই চেক-আপ-এর মাধ্যমে জেনে নিয়ে চিকিৎসা করা জরুরি। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিশদে জানালেন কন্সালট্যান্ট অপটোমেট্রিস্ট সুমন অঞ্জয়।

কীভাবে শিশুদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে আপনার মনে হয়?

নানারকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শিশুদের চোখ। কখনও ওদের শিশুসুলভ লাগামছাড়া দুষ্টুমি এবং অজ্ঞতার কারণে, আবার কখনও অভিভাবকদের অযত্ন এবং অসতর্কতার কারণে ক্ষতি হতে পারে শিশুদের চোখ। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি– দুপুরে খেলতে-খেলতে রাস্তার গর্তে থাকা পিচগলা গরম জল এক শিশুর চোখে ছিটিয়ে দেয় অন্য শিশু। এরপর ওই শিশুর চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা করলেও, আই স্পেশালিস্ট-এর কাছে না গিয়ে শুধু চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে যখন শিশুটি পিচের জল পড়া চোখটিতে ঝাপসা দেখে এবং চোখ ফুলে ওঠে, তখন আই স্পেশালিস্ট-এর কাছে নিয়ে যান অভিভাবকরা। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিশুটি সারাজীবনের মতো ওই চোখটির দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।

অসতর্কতার কারণে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যায়। তবে এইরকম বড়ো বিপর্যয় ছাড়াও, অযত্ন এবং অসতর্কতায় শিশুদের চোখ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখে চশমা ওঠে। যেমন– খুব কাছ থেকে টিভির অনুষ্ঠান দেখলে, দীর্ঘসময় মোবাইলে কিছু দেখলে, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে একটানা বেশিক্ষণ কাজ করলে চোখে চাপ পড়তে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে পারে। প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে কিংবা দীর্ঘ সময় প্রোটেকশন ছাড়া রোদে ঘুরলেও ক্ষতি হবে চোখের। শুধু তাই নয়, ছোটোবেলায় অপুষ্টিতে ভুগলেও হতে পারে চোখের সমস্যা।

সাধারণ ভাবে দৈনন্দিন জীবনে চোখের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায় কী?

  • গরমে ঘেমে গেলে অপরিচ্ছন্ন হাত কিংবা রুমাল দিয়ে চোখ-মুখ না মুছে, পরিষ্কার রুমাল কিংবা টিস্যুপেপার ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিন শিশুকে
  • বৃষ্টির জলে ভিজে এলে, পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে দিন শিশুর চোখ। এরপর পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে দিয়ে চোখ মুছে দিন
  • সুইমিং পুল-এ সাঁতার কেটে এলে, শিশুকে পরিষ্কার জলে আবার স্নান করিয়ে মুছে দিন। কারণ, সুইমিং পুলের জল জীবাণুমুক্ত না-ও থাকতে পারে, তাই চোখের ক্ষতি হতে পারে
  • রোদে বেরোলে মাথায় টুপি এবং চোখে সানগ্লাস দিয়ে শিশুর চোখকে প্রোটেক্ট করুন
  • নামি ব্র্যান্ড-এর বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। কারণ, বাজে শ্যাম্পু ছোটোদের চোখের ক্ষতি করতে পারে

কখন আই চেক-আপ করা জরুরি মনে করেন আপনি?

চোখের কোনও সমস্যা কিংবা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে, দেরি না করে তখনই আই স্পেশালিস্ট-এর পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে আই চেক-আপ করান। আর যদি ছোটোদের চোখের কোনও সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে বোঝা না-ও যায়, তাহলেও বাচ্চার যখন ১৩ বছর বয়স হবে, তখন অবশ্যই একবার আই চেক-আপ করাবেন। কারণ, বয়ঃসন্ধির সময় নানা কারণে অপুষ্টির সমস্যা হতে পারে এবং ওই সময় আই চেক-আপ জরুরি।

ছোটোদের চশমা নির্বাচনে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

ছোটোরা সাধারণত চশমা পরতে চায় না। কিন্তু চোখ ঠিক রাখার জন্য যদি সত্যিই চশমা পরাতে হয় কোনও বাচ্চাকে, তাহলে টেকসই সুন্দর ফ্রেম এবং আল্ট্রা ভায়োলেট রে প্রোটেকটেড আই গ্লাস সিলেক্ট করা প্রয়োজন। প্লাস্টিক ফ্রেম-এ অনেকসময় অ্যালার্জি হয় বাচ্চাদের, তাই ব্যবহার করুন মেটাল ফ্রেম। হালকা এবং ভাঙবে না এমন মেটাল ফ্রেম এখন বাজারে এসে গেছে। লেন্স-এর ক্ষেত্রে পলি কার্বোনেটেড মেটিরিয়াল লেন্স ব্যবহার করা উচিত। এই লেন্স সহজে ভাঙবে না এবং দাগ পড়বে না। তাছাড়া, এই মেটিরিয়াল লেন্স সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করবে। সহজে পরিষ্কারও করা যাবে এই লেন্স। আর এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, যে-সব বাচ্চারা চশমা পরতে চায় না, তাদের নির্দ্বিধায় ভালো মানের কনট্যাক্ট লেন্স পরাতে পারেন। তবে, প্রেসক্রাইব করা পাওয়ার যেন সঠিক থাকে চশমার গ্লাস-এ অথবা কনট্যাক্ট লেন্স-এ। এরজন্য ভালো অপ্টোমেট্রিস্ট-এর সাহায্য নিন।

ডাস্ট-অ্যালার্জি থেকে বাঁচুন ঘরোয়া উপায়ে

নানা কারণে ডাস্ট-অ্যালার্জির শিকার হন অনেকে। আসলে, বাতাসে ভাসমান ধুলিকণার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র জীবাণু। আর এই অদৃশ্য় শত্রু আমাদের নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে য়খন শ্বাসনালিতে আক্রমণ করে, তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা বেশি আক্রান্ত হন। হাঁচি, কাশি ছাড়াও, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু খুব প্রয়োজন না হলে অ্যান্টি অ্যালার্জির ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, বেশি ওষুধ খেলে তার কু-প্রভাব পড়তে পারে আমাদের শরীরে। তাই, এরজন্য যেমন ধুলো-ময়লা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে, ঠিক তেমনই ডাস্ট-অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে ঘরোয়া উপায়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এরজন্য় কী কী ব্য়বস্থা নেবেন, রইল তারই পরামর্শ।

  • সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খান প্রচুর পরিমাণে। কারণ, টাটকা সবজি এবং ফল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে
  • সপ্তাহে অন্তত দুদিন ঘি খান। কারণ ঘি খেলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে শরীর
  • এক চা-চামচ মধু খান সপ্তাহে তিন দিন। কারণ, মধু যেমন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ঠিক তেমনই, র‌্যাশ কমাতে সাহায্য় করে
  • প্রতিদিন সকালে পান করুন গ্রিন-টি। কারণ, গ্রিন-টি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস্ সমৃদ্ধ। তাই, অ্যালার্জি আটকায়
  • অ্যালার্জির কারণে য়দি খুব হাঁচি, কাশি হয়, তাহলে এক কাপ তেঁতুল জলে একটা লবঙ্গ ভেঙে, মিশিয়ে সেই জল পান করলে উপকার পাবেন
  • অ্যালার্জির শিকার হলে, হালকা গরম জলে সামান্য় নুন মিশিয়ে গার্গল করুন।

ফুসকুড়ি দূর করুন সহজে

বয়ঃসন্ধিকালে, পেট পরিষ্কার না থাকলে এবং আরও নানা কারণে মুখে ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা যায়। আর ফুসকুড়ি মানেই মুখের সৌন্দর্য নষ্ট।  ঠিকঠাক চিকিৎসায় ব্রণ বা ফুসকুড়ির হাত থেকে মুক্তি মেলে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য যে সব ওষুধ বা ক্রিম বাজারে উপলব্ধ সেগুলি যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই তা থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও থেকে যায়। ফুসকুড়ি হবার একটি অন্যতম কারণ হল অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে৷ তাই, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। জেনে নিন ফুসকুড়ির সমস্যা থেকে পরিত্রাণের ঘরোয়া উপায়।

ঘরোয়া টোটকা

১. এক কাপের মতো পাকা পেঁপে চটকে নিন । এর সঙ্গে মেশান এক চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন মতো চালের গুঁড়ো। মিশ্রণটি মুখের ফুসকপড়ির উপর লাগান। ২০-২৫ মিনিট মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস।

২. পুদিনা পাতার রস করে নিয়ে সেটা দিয়ে আইস কিউব তৈরি করুন।এই আইস কিউব ঘষুন ১০-১৫ মিনিট। ফুসকুড়ির নিরাময়ে এটা বেশ কার্যকর৷ এতে ফুসকুড়ি ও ব্রণের সংক্রমণ তো কমবেই, সেই সঙ্গে ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হবে।

ফুসকুড়িতে নাজেহাল হলে, জানা জরুরি

  • ফাইবার-যুক্ত খাবার খান বেশি পরিমাণে
  • তিন থেকে চার লিটার জল খান প্রতিদিন
  • কোনও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের ফলে যদি ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তাহলে তখনই সেই প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধ করুন
  • নিমপাতা পিষে, তার সঙ্গে মুলতানি মাটি এবং গোলাপজল মিশিয়ে টানা সাতদিন ফুসকুড়ির উপর লাগান, সুফল পাবেন
  • ফিটকিরি জলে ভিজিয়ে হালকা ভাবে ফুসকুড়ির উপর ঘষুন, উপকার পাবেন
  • ফুসকুড়ি শুকিয়ে গেলে দই এবং শসার পেস্ট বানিয়ে লাগান, দাগ দূর হয়ে যাবে।

বিশেষ সতর্কতা : ফুসকুড়ি নখ দিয়ে খুঁটবেন না।

ফুসফুস সুস্থ রাখার উপায়

শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান হল ফুসফুস। সতর্কতা এবং যত্নের অভাবে, ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে নিউমোনিয়া, যক্ষা, এমনকী ক্যান্সার-এও। তাই, ফুসফুসকে সুস্থ রাখতেই হবে।খাদ্যতালিকায় খাদ্য উপাদানের সঠিক উপস্থিতি ফুসফুস ভালো রাখতে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ও সচল রাখতে সাহায্য করে থাকে। কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে না, সেজন্য চাই স্বাস্থ্যকর খাবার সমৃদ্ধ তালিকা। আর এর জন্য কী খেলে উপকার পাবেন তা জেনে নিন।

দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল, নানা বীজ জাতীয় খাবার ইত্যাদি প্রোটিনের উত্স হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রতিদিন পরিমাণ মতো প্রোটিন খাবার তালিকায় রাখলে তা শ্বাসযন্ত্রের পেশি বা ফুসফুসের পেশির কার্যকারিতা সঠিক রাখে।

লাল চাল, লাল আটা বা এদের তৈরি সামগ্রী, ওটস্, বার্লি ইত্যাদি ফুসফুস ভালো রাখতে কার্যকর। এগুলো থেকে যে খাদ্য আঁশ পাওয়া যায় তা যেমন ফুসফুসের জন্য উপকারী তেমনি এতে রয়েছ এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য, ভিটামিন-ই, সেলেনিয়াম ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে ও ফুসফুসকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

আর কী খাবেন?

হলুদ : সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রস পান করুন সকালে। কারণ, হলুদে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, ফুসফুসকে সুস্থ রাখে এবং এর কার‌্যকরি ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

ভেষজ চা : আদা, তেজপাতা, হলুদ, লেবু এবং দারচিনি দিয়ে তৈরি লিকার-চা পান করলে ফুসফুস সুস্থ থাকবে।

মুসুর ডাল : মুসুর ডালে ভরপুর পরিমাণে থাকে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, এবং পটাশিয়াম। তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মসুর ডাল রান্না করে খেলে, ফুসফুসের কার‌্যকরি ক্ষমতা বাড়বে।

টম্যাটো : ক্যারোটিনয়ে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস সমৃদ্ধ থাকে টম্যাটো। নিয়মিত টম্যাটো খেলে ফুসফুস ঠিক থাকবে এবং হাঁপানির হাত থেকে বাঁচবেন।

আপেল : প্রতিদিন একটা করে আপেল খাওয়া ভালো। কারণ, ভিটামিন সি ছাড়াও, ফ্লাভোনয়েস এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস-এ সমৃদ্ধ থাকে আপেল। তাই, আপেল খেলে ফুসফুস ভালো থাকবে।

ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য-র প্রতিকার

অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্য-র বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু যখন সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে, তখন গুরুত্ব না দেওয়ার মাশুল গুনতে হয়।  আসলে, এই কোষ্ঠকাঠিন্য হয় দুটি কারণে। একটি কারণ বংশগত। আর অন্যটি অনিয়ম এবং ভুল খাদ্যাভাসের জন্য।

শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি ফাইবার-যুক্ত খাবার কম খাওযা, পর্যাপ্ত জলপান না-করা, কম পরিশ্রম করা ইত্যাদি নানারকম কারণ থাকে এই কোষ্ঠকাঠিন্য-র মূলে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে বিছানায় একটানা শুয়ে থাকা, সহজে হজম হয় না এমন খাবার বেশি খাওয়া, মানসিক চাপ, এমনকী মস্তিষ্কে টিউমার থাকলেও কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হতে পারে।

আর শরীর থেকে মল ঠিক মতো বের না হওয়া, অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা যদি থাকে, তাহলে পাকস্থলীতে পাথর, অশ্ব, কোলন ক্যানসার প্রভৃতি নানারকম রোগভোগেরও সম্ভাবনা থাকে। অতএব, কোষ্ঠকাঠিন্যর চিকিৎসা জরুরি। কতগুলি ঘরোয়া পদ্ধতি এবং সহজলভ্য উপাদানকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবেন, সেই বিষয়ে জেনে নিন বিশদে।

প্রতিকার

  • সকালে উঠে একটু শরীরচর্চা করুন এবং তারপর এক গেলাস হালকা গরম জলে এক চা-চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে পান করুন
  • হালকা গরম দুধে একটা এলাচ ভেঙে মিশিয়ে রাখুন পাঁচ মিনিট। রাতে শুতে যাওয়ার তিরিশ মিনিট আগে পান করুন ওই দুধ
  • দুপুরে ভারি খাবার খাওয়ার একঘন্টা বাদে একটা আপেল কিংবা পেয়ারা খান, উপকার পাবেন
  • পাকা বেলের শরবত বানিয়ে খান মাঝেমধ্যে। দিনের যে-কোনও সময় পান করতে পারেন এই শরবত
  • লেবুর রস দিয়ে ছোলার ছাতুর শরবত পান করুন খালি পেটে, উপকার পাবেন
  • কুমড়ো, বেগুন, মুলো, গাজর প্রভৃতি ফাইবার-যুক্ত খাদ্যউপাদান পেটে গেলেও দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা

সতর্কতা : কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূরীকরণে ঘরোয়া পদ্ধতি প্রযোগের সুফল পেতে গেলে, পরিত্যাগ করতে হবে ধূমপান এবং মদ্যপান।

পেটের অসুখ এবং সঠিক চিকিৎসা

প্রবাদ আছে– যার পেট ভালো, তার সব ভালো। যারা পেটের অসুখে ভুগেছেন অথবা ভুগছেন, তারা অন্তত এই প্রবাদের যথার্থতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আসলে, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ভালোমন্দ অনেকটাই নির্ভর করে পেটের সুস্থতার উপর। একটু ভালো ভাবে নজর রাখলে প্রমাণ পাবেন, মাথার চুল পড়ে যাওয়া এবং ত্বকের জৗলুস হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ওই পেটের অসুখ। তবে শুধু চুল পড়া কিংবা ত্বকের সমস্যাই নয়, পেপটিক আলসার কিংবা লিভার ক্যানসারের মতো বড়ো অসুখগুলির সূত্রপাতও কিন্তু নিয়মিত হজমের গোলমাল কিংবা অ্যাসিডিটি থেকে। অতএব, পেটের সুস্থতা জরুরি। কীভাবে পেট ভালো রাখবেন, সেই বিষয়ে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।

প্রতিদিন সকালে অ্যান্টাসিড খাওয়া কি পাকযন্ত্রের পক্ষে ভালো?

বিনা প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কেবলমাত্র সেই সমস্ত মানুষেরই ওষুধ খাওয়া উচিত, যাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই বিষয়টি অ্যান্টাসিড গ্রহণের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। নিয়মিত কখনওই অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত নয়।

একজন ডায়াবেটিক রোগী কীভাবে তাঁর পরিপাক সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে বিবেচনা করবেন?

একজন ডায়াবেটিক রোগীকে প্রথমেই চিনি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য বর্জন করতে হবে। তাঁদের খাদ্য-তালিকায় রাখতে হবে প্রোটিন জাতীয় খাবার। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই অত্যধিক তেল ও মশলা জাতীয় খাবারকে তাদের খাদ্য-তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। খাদ্য-তালিকা হতে হবে সুষম এবং খাদ্য গ্রহণ করতে হবে পর্যাপ্ত সময়ের ব্যবধানে। ডায়াবেটিক রোগীকে ভরপেট খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। খাবারের মধ্যে ক্যালোরি’র মাত্রাকে সঠিক ভাবে বিচার করে খাবার খেতে হবে। একজন ডায়াবেটিক রোগীকে ইনসুলিন ও ওরাল হাইপোগ্লিসিমিক্সকে এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।

প্রাত্যহিক কর্মজীবনে পাকযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য কোন কোন বিষয়গুলিকে মাথায় রাখতে হবে?

ব্রেকফাস্ট করতে হবে ভারী। লাঞ্চ হবে হালকা এবং ডিনারটিও করতে হবে হালকা। এটাই হচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনের ভালো খাদ্যাভ্যাস। তাছাড়া তেল-মশলা জাতীয় খাবারকে বর্জন করতে হবে। অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করতে হবে। ভালো ভাবে তৈরি টাটকা খাবার খেতে হবে এবং রেস্তোরাঁর খাবারকে এড়িয়ে চলতে হবে।

বর্তমান সময়ে পড়াশোনার কারণে ছাত্রদের মধ্যে প্রচন্ড ভাবে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে দেখা যায় যে তাদের পাচন প্রক্রিয়াটিও যথাযথ নয়। ছেলেমেয়েদের পাকযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য তাদের বাবা-মায়েদের কী টিপ্স দেবেন?

ছেলেমেয়েদের বাড়িতে তৈরি খাবার দিতে হবে। খাবারকে হতে হবে সুষম ও পুষ্টিকর। বাইরের রেস্তোরাঁর খাবার থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। ছেলেমেয়েদের টাটকা ফল ও তরিতরকারি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। ঠান্ডা ও নরম পানীয় এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

কেউ যদি তার জীবনচর্চার প্রাত্যহিক নির্ঘন্টকে নতুন করে সাজাতে চায়, তাহলে সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিকল্পনা কী হতে পারে?

নিয়মিত ভাবে ব্যয়াম করতে হবে। সময়মতো খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সঠিকমাত্রার ক্যালোরি-যুক্ত খাবার খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবারকে বর্জন করতে হবে।

ডায়েটিং কতটা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা সঠিক ডায়েটটাই বা কী?

খাবারকে এড়িয়ে গিয়ে কখনওই ডায়েটিং হতে পারে না। সঠিক সময় উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত মাত্রায় খাবার গ্রহণ করেই সঠিক ডায়েটিং হতে পারে। একজন মানুষকে সবসময় অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, চিনি ও তেল-মশলা জাতীয় খাবারকে এড়িয়ে চলতে হবে।

অ্যাসিডিটি’র কারণ কী, এর প্রভাব এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

অ্যাসিডিটি হল কোনও মানুষের দেহের পাকস্থলি থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যাসিড ক্ষরণের ঘটনা। এর কারণে পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয় এবং বমি বমি ভাব তৈরি হয়। এর মাত্রা বেড়ে গেলে পাকস্থলিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে রক্ত বের হয় এমনকী অন্ত্রে ছিদ্রও হয়ে যেতে পারে। এর চিকিৎসায় অ্যান্টাসিড খেতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার-এর সাহায্যে, যাকে পিপিআই বলা হয়ে থাকে।

সুস্থ পাকযন্ত্রের জন্য কোনও ব্যায়াম কি রয়েছে?

সুস্থ পাকযন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম নেই। তবে সার্বিক ভাবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে সেটা শরীর এবং পরিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভালো হয়।

সুস্থ জীবনপ্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হলে দিনের শুরুতে ব্রেকফাস্ট কীরকম হতে হবে?

ব্রেকফাস্ট হল দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহার। ব্রেকফাস্ট-এ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালোরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। ব্রেকফাস্ট কিংবা অন্য যে-কোনও খাবারই হোক না কেন, খাবার হতে হবে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এবং অত্যধিক পরিমাণে তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।

ভারী অথবা তেল, মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক ভাবে এর প্রতিকার কী হতে পারে?

যে-কোনও মানুষেরই উচিত সবসময় ভারী আহার এড়িয়ে চলা। তবে যদি কোনও কারণে ভারী আহার হয়ে যায়, তখন সমস্যা দেখা দিলে অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে এনজাইমও খেতে হবে। এই এনজাইম খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে।

পেপটিক আলসার গ্যাস্ট্রাইটিসকে এড়াতে হলে কী করতে হবে?

তেল ও মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে এবং সেইসঙ্গে বর্জন করতে হবে ধূমপান এবং মদ্যপান।

জীবনে সুস্থ ও কর্মক্ষম ভাবে বাঁচার জন্য দৈনন্দিন সঠিক নির্ঘন্ট কী হওয়া উচিত?

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়ম করে আহার গ্রহণ করতে হবে। মানসিক চাপমুক্ত হয়ে থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় চা, কফি ও এনার্জি ড্রিংকস বর্জন করতে হবে।

ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস-এর কারণ ও তার চিকিৎসা কী, এর জন্য কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে– খাবার আগে ভালো ভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাবার তৈরি ও সংরক্ষণ করতে হবে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে। টাটকা ও সঠিক ভাবে তৈরি খাবার খেতে হবে। ফল ও তরিতরকারি খাবার আগে সেগুলিকে ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যদি কারোর গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস দেখা দেয় তাহলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে এবং ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন নিতে হবে। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেইমতো চলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অধিকাংশ সময়ই গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস ভাইরাল অসুখ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না।

ক্ষুধামান্দ কী, এর কারণ ও প্রতিকার কী?

নানান কারণে ক্ষুধামান্দ দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ সময়ই এটা দেখা দেয় সীমিত সময়ের জন্য। তখন এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। তবে যদি এই ঘটনা বেশিদিন ধরে চলতে থাকে এবং দিন দিন দেহের ওজন কমে যেতে থাকে তখন অবশ্যই এই বিষয় নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক তখন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে ক্ষুধামান্দ’র প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে পারবেন। সেই ভাবে তিনি তখন চিকিৎসা করতে পারবেন।

৫০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের পরিপাক ক্রিয়া সঠিক ভাবে করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টিপস কী হতে পারে?

প্রতি ঘন্টা ধরে হালকা খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ এবং অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বর্জন করতে হবে।

——-

গলস্টোন

জীবনশৈলীর বদল ঘটলে, খাদ্যাভ্যাসও বদলায়। কেউ হয়তো ঠিক সময়ে সঠিক খাবার খাওয়ার সময় পান না, কেউ আবার মশলাদার মুখরোচক খাবার খেতে অভ্যস্ত। এরফলে শুরু হয় হজমের গণ্ডগোল। আর দীর্ঘদিন যদি হজমের গণ্ডগোল হতে থাকে, তাহলে তার পরিণতিতে হতে পারে গলস্টোন– যা কিনা বিপদবহুল। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. মহেশ গোয়েঙ্কা।

গলব্লাডার এবং গলস্টোন বিষয়টি ঠিক কী?

মানুষের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল গলব্লাডার। মাত্র ৩ ইঞ্চি লম্বা এক অরগান যা আপনার লিভারের ঠিক নীচে থাকে আর লিভারে তৈরি হওয়া পিত্তকে স্টোর করে। ‘বাইল’কে ‘গল’ও বলা হয় যার থেকে এই অরগানের নামকরণ হয়েছে। পিত্তের কাজ হল চর্বিকে হজম (ইমস্লিফিকেশন) করা। তাই আপনি যখনই মুখরোচক খাবার খান, তখন তৈলাক্ত পদার্থ (ফ্যাট) হজম করে উপযোগী জ্বালানির রূপ দেওয়ার কাজ গল ব্লাডার করে থাকে। আপনার পেটে আর আপনার অন্ত্রে যখনই হজম প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন গল ব্লাডার ‘বাইল ডাক্ট’ নামের একটি নল থেকে আপনার ছোটো অন্ত্রে বাইল পাঠায়, যাতে ফ্যাটের ইমস্লিফিকেশন হতে পারে।

কিন্তু গল ব্লাডার বা বাইল ডাক্টে ‘পাথর’ থাকলে, বাইল ডাক্টে বাইলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় যা এই প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। বাইল ডাক্টের পাথরকে ‘কোলেডোকোলাইথিয়াসিস’ বলা হয়। গলস্টোন (পাথর) হওয়ার কারণে বাইলের কিছু পদার্থ শক্ত হয়ে যায়। কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, গল ব্লাডারে পাথরের পনেরো শতাংশ রোগীর, বাইল ডাক্টেও পাথর হয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কেবল একটি পাথর হয়, আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক পাথর হতে পারে। পাথর বালুর দানার মতো খুব ছোটো বা লেবু বা গলফ বলের মতো বড়ো হতে পারে।

কী কারণে হয় গলস্টোন?

বেশির ভাগ গল স্টোন কোলেস্টেরল থেকে হয়ে থাকে। সেই কারণে ডাক্তার মনে করে স্থূলতা, মধুমেহ, খাবারে বেশি ফ্যাট আর ফাইবার কম থাকা এবং শরীর কম সক্রিয় থাকলে তা গল ব্লাডারের সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানায়। অন্য এক ধরনের গলস্টোন বিলুরুবিন থেকে তৈরি হয়, যা বস্তুত লিভার  দ্বারা ব্লাড সেল নষ্ট হওয়ার সময় তৈরি হওয়া পিগমেন্ট। লিভার সিরোসিসের রোগীর যদি রক্তের কোনও অসুখ বা বিলিয়রি ট্র্যাকে সংক্রমণ হয়, তাহলে লিভারে বিলুরুবিন অনেক বেশি তৈরি হওয়ার আর গল ব্লাডারে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে পাথর তৈরি হওয়া শুরু হয়।

পাথর হওয়ার বিপদ মহিলাদের মধ্যে বেশি থাকে। যদি পরিবারে আগে থেকেই কারও পাথর থাকে, তার ওজন দ্রুত কমতে থাকে। এস্ট্রোজেন যুক্ত (কেবল মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ওষুধ বা ট্যাবলেট যদি নেন আর তার বয়স ৪০ এর বেশি যদি হয়, তবে পাথর হওয়ার বিপদ বেড়ে যায়।

পাথর হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী?

  •  পেটের ওপরে ডানদিকে হঠাৎ ব্যথা
  •  স্তনের হাড় (ব্রেস্টবোন)-এর নীচে পেটের মাঝখানে হঠাৎ ব্যাথা
  • কোমরের ব্যথা, ঘাড়ের (শোল্ডার ব্লেড) মাঝের অংশে ব্যথা
  •  ডান কাঁধে ব্যথা, এই ব্যথা কয়েক মিনিটের জন্য হতে পারে বা কয়েক ঘন্টা ধরে সমস্যায় ফেলতে পারে।

অন্য লক্ষণগুলি হল–

  •  বমি
  •  মাথা ঘোরা
  •  ধূসর রঙের মল

গলস্টোন হলে কী কী সমস্যা দেখা দেয়?

পাথর হয়ে থাকলেও সবক্ষেত্রে স্পষ্ট লক্ষণ দেখা দেয় না। কিন্তু এই সব সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যেমন–

  •  কোলেসিস্টাইটিস ছ এটি গল ব্লাডার ফুলে যাওয়ার সমস্যা, যা গল ব্লাডারের গলায় পাথর আটকে গেলে হয়। এর ফলে রোগীর খুব ব্যথা বা জ্বর হতে পারে।
  •  বাইল ডাক্টে ব্লকেজ ছ যদি পাথরের ফলে বাইলকে লিভার হয়ে অন্ত্রে নিয়ে যাওয়ার ডাক্ট ব্লক হয়ে যায়, তবে সংক্রমণ এবং জন্ডিস (চোখ এবং ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া কারণ বিলুরুবিন জমতে থাকে) হতে পারে।
  •  প্যানক্রিয়াটাইটিস ছ যদি পাথর প্যানক্রিয়াটিক ডাক্ট (প্যানক্রিয়াসকে কমন বাইল ডাক্ট-এর সঙ্গে যুক্ত করার নল)-কে ব্লক করে দেয়, তবে এ থেকে পাথরের সবচেয়ে বিপজ্জনক অসুখের মধ্যে অন্যতম, প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। এর ফলে প্যানক্রিয়াস ফুলে যায় এবং খুব ব্যথা হয় আর প্রায়ই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হয়। প্যানক্রিয়াটাইটিস কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে।
  •  গল ব্লাডারের ক্যান্সার ছ যদিও এই ক্যন্সারের বেশি প্রকোপ নেই কিন্তু যদি কারও পাথরের সমস্যা থেকে থাকে, তবে তার গল ব্লাডারের ক্যান্সার হওয়ার বিপদ থাকে

এই রোগের নিরাময় কীভাবে সম্ভব?

ল্যাব টেস্ট আর ইমেজিং টেস্ট থেকে পাথর সম্পর্কে জানা হয়। ইমেজিং টেস্ট থেকে ডাক্তারদের পক্ষে গল ব্লাডার, বাইল ডাক্ট আর এসবের সঙ্গে যুক্ত অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজ হয়, যাতে পাথর সম্পর্কে জানা যায়। আজ ডাক্তারদের কাছে ইমেজিং-এর অনেক বিকল্প আছে যেমন–

  •  আল্ট্রা সাউন্ডঃ  এটি পাথর সম্পর্কে জানার অন্যতম ভালো পদ্ধতি। আল্ট্রা সাউন্ড মেশিন সাউন্ড ওয়েভের সহায়তায় অঙ্গের ইমেজ তৈরি করে আর এটাও দেখায় যে সেই অংশে পাথর আছে কি না। এতে রোগীর কোনও কষ্ট হয় না। এটি গর্ভবতী মহিলা সহ সকলের জন্য সুরক্ষিত।
  •  কম্পিউটেড টোমাগ্রাফি (সিটি) স্ক্যানঃ  এতে এক্সরে আর কম্পিউটার টেকনোলজির সামঞ্জস্যে গল ব্লাডার, বাইল ডাক্ট আর প্যানক্রিয়াসের ইমেজ তৈরি করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই প্রযুক্তি খুব কার্যকর নয় আর কিছু কিছু পাথর এতে ধরা পড়ে না।
  •  ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)ঃ  এই মেশিন এক্সরে-এর পরিবর্তে রেডিও ওয়েভস আর শক্তিশালী চুম্বকের সহায়তায় অঙ্গের সুক্ষ্ম ছবি তৈরি করে আর সমস্ত স্থানে পাথরের বিষয়ে জানার কার্যকরী পরীক্ষা।
  •  এইচআইডিএ স্ক্যানঃ  একে কোলেসাইন্টিগ্রাফিও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীরের ভেতরে খুব অল্পমাত্রায় সুরক্ষিত রেডিও অ্যাক্টিভ মেটিরিয়াল ইঞ্জেক্ট করা হয় আর একটি বিশেষ ক্যামেরার সহায়তায় এর ওপর দৃষ্টি রাখা হয়, যাতে গল ব্লাডারে যদি কিছু অস্বাভাবিক থাকে বা বাইল ডাক্ট ব্লক হয়, তার ছবি সামনে দেখা যায়।
  •  এন্ডোস্কোইক রেট্রোগ্রেড কোলেজিয়োপ্যাংক্রিয়েটোগ্রাফি (ইআরসিপি)ঃ  এই পরীক্ষা উররোক্ত অন্যান্য পরীক্ষার চেয়ে বেশি ইনভেসিভ হয়ে থাকে। এতে রোগীর মুখে একটি লম্বা নমনীয় টিউব প্রবেশ করান হয়, যা গলা হয়ে পেট এবং অন্ত্র পর্যন্ত যায়। এই প্রক্রিয়ায় পাথর দেখা এবং বের করাও যায়।

গলস্টোন-এর কোনও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে কি?

‘কোলেজিয়োস্কোপি’র জন্য উপলব্ধ নতুন প্রযুক্তিতে একটি ইআরসিপি (ওপরে তথ্য দেওয়া হয়েছে) থেকে ডাক্ট-এর ভেতর পাথর দেখা এবং নষ্ট করা সম্ভব হয়েছে। আগে বাইল ডাক্ট দেখার জন্য এন্ডোস্কোপি টুলস ব্যবহার করা হতো, যা তাদের রোগীর মুখের ভেতরে প্রবেশ করাতে হতো, সেইসঙ্গে এক্সরে-র ব্যবহার করতে হতো, যাতে পাথর কোথায় আছে তা সঠিক ভাবে জানা যায়। আজকের আধুনিক টুলসের ফলে এক্সরে-র প্রয়োজন নেই আর ডাক্তার আধুনিক ইন্সট্রুমেন্ট এবং ছোটো ক্যামেরার সহায়তায় গল ব্লাডারের পাথর সোজা দেখতে পারেন। এতে ডাক্তাররা পাথরের সঠিক অবস্থান জানতে পারেন আর সঠিক চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি পাথরের সেই সব ঘটনায় সাহায্য করে, যেখানে চিকিৎসা কঠিন।

পাথর অন্য অঙ্গে, যেমন কিডনিতে হলে ডাক্তার শরীরের বাইরে থেকে শক ওয়েভ দিয়ে পাথর ভেঙ্গে ফেলতে পারেন। কিন্তু এই পদ্ধতি গল ব্লাডারের পাথরের কঠিন জায়গায় হওয়ার দরুন খুব কার্যকর নয়। তবে এই সমস্যারও সমাধান এসে গেছে। আজ ডাক্তার লেজারের সহায়তায় পাথর সনাক্ত করে, সঙ্গে সঙ্গে বের করতেও পারেন। এই সার্জারি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে ন্যূনতম সার্জারির প্রক্রিয়া। রোগীর কষ্ট কম হয়, কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ নিতে পারেন।

——-

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব