নিয়ন্ত্রণে রাখুন কোলেস্টেরল-এর মাত্রা

কোলেস্টেরল শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শরীরে নির্দিষ্ট হরমোন তৈরি ছাড়াও, এটি কোশ গঠন করতে সাহায্য করে। আসলে এটি একটি রাসায়নিক যৌগ। ভালো এবং খারাপ এই দুরকম কোলেস্টেরল থাকে শরীরে। ভালো কোলেস্টেরল লাইপোপ্রোটিন নামে পরিচিত। আর এই লাইপোপ্রোটিন-এর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এর ভালো-খারাপের বিষয়টি এবং এই খারাপ কোলেস্টেরল-ই আসলে বিপদের ঝুঁকি বাড়ায়।

শরীরে ব্যবহারের জন্য যতটা ক্যালোরির প্রয়োজন, বেশি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে তার চেয়ে যদি অতিরিক্ত ক্যালোরি তৈরি হয শরীরে, তখন ওই অতিরিক্ত ক্যালোরি ট্রাইগ্লিসারাইড-এ পরিণত হয়। আর এই ট্রাইগ্লিসারাইড হল রক্তে জমা হওযা অন্যরকম ফ্যাট। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, যদি আপনার শরীরে কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে রক্তবাহী ধমনীতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমা হয়ে সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে ধমনীর রক্তবাহী পথ। আর এই অবস্থা হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে, এমনকী হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পরীক্ষা এবং চিকিত্সা :  সামান্য শ্বাসকষ্ট ছাড়া যেহেতু আর তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বেশি থাকলে, তাই বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন। পরিবারে যদি মা কিংবা বাবা কারও-র হাই কোলেস্টেরল-এর ইতিহাস থাকে, তাহলে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছরে একবার এবং ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে রক্তে কোলেস্টেরল-এর মাত্রা পরীক্ষা করানো আবশ্যক। এই পরীক্ষাটিকে বলা হয় লিপিড প্যানেল বা লিপিড প্রোফাইল। এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় এলডিএল কোলেস্টেরল, এইচডিএল কোলেস্টেরল, মোট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড। এই পরীক্ষার ফল দেখে চিকিত্সক বুঝে যাবেন, আপনার রক্তে কোলেস্টেরল উপযুক্ত মাত্রায আছে নাকি বেশিমাত্রায ব্যাড কোলেস্টেরল রয়েছে এবং তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

চিকিত্সকরা সবদিক বিবেচনা করে ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন এ ক্ষেত্রে। তবে নির্দিষ্ট পাওয়ার-এর লিপিকাইন্ড কিংবা ড্যাজটোর নামের ওষুধ দিতে দেখা যায় সাধারণত। কিন্তু চিকিৎসকের  পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না। আর ব্লাডপ্রেশার হাই থাকলে কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাবেন। সেইসঙ্গে, ধূমপান, মদ্যপান কিংবা কোনও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করতে হবে এবং মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি খাদ্যগ্রহণও কমাতে হবে যদি কোলেস্টেরল হাই থাকে।

শিশুদের বডি হাইজিন বজায় রাখুন

শিশুদের বোধশক্তি যেহেতু কম, তাই তাদের যত্নে রাখার দাযিত্ব মা-বাবার উপর বর্তায়। আর এই যত্নে রাখার মধ্যে অন্যতম বিষয় হল বডি হাইজিন বজায় রাখা। অতএব, জেনে নিন শিশুদের বডি হাইজিন মেনটেইন করবেন কী করে।

  • বাচ্চাকে প্রতিদিন সম্পূর্ণ স্নান করার অভ্যাস করান
  • স্নানের সময় বাচ্চারা যেন শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন হাত, পা, বগল, কোমর, নাভি, হাত ও পাযে জযে্টস, আঙুলের খাঁজ, কুঁচকি, নিতম্ব প্রভতি ভালো ভাবে ধোয়, সেই অভ্যাস তৈরি করান
  • স্নানের পর বাচ্চাকে পরিষ্কার জামাকাপড় পরাবার অভ্যাস করান এবং ইনার গারমেন্টসও চেঞ্জ করতে শেখান
  • সপ্তাহে দুবার বাচ্চার চুল শ্যাম্পু দিযে পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করান। এতে বাচ্চার স্কাল্পে তেল, ধুলোময়লা ইত্যাদি জমবে না এবং জীবাণু বাসা বাঁধবে না।
  • বাচ্চার হাত ও পাযে নখ সপ্তাহে একবার করে কেটে দিন
  • মাথার চুল বেড়ে গেলেই কাটানোর ব্যবস্থা করুন
  • বাচ্চার পার্সোনাল হাইজিন-এর জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

অ্যালজাইমার্স এবং রিস্ক ফ্যাক্টর

জার্মান মনোচিকিৎসক অ্যালয়েস অ্যালজাইমার এই রোগটি সম্পর্কে প্রথম বিস্তারিত জানান। তাই তাঁরই নামানুসারে এই রোগটির নামকরণ হয় ‘অ্যালজাইমার্স’।

এটি স্মৃতিভ্রংশের প্রাথমিক রূপ। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষ বেশি আক্রান্ত হন এই অসুখে। তবে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কম বয়সিরাও। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ক্রমশ বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ এবং চিকিৎসকরা মনে করছেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি ৮৫ জন ষাটোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে অন্তত ১জন আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে। তাই, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। ডা. দেবাশিস চক্রবর্তী রোগটির কারণ, ফলাফল এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন সম্প্রতি।

অ্যালজাইমার্স কী?

অ্যালজাইমার্স ডিজিজ হল একটি নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের প্রথম ধাপ। শুধু ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষই নয়, কম বয়সিরাও আক্রান্ত হতে পারেন এই অসুখে।

অ্যালজাইমার্স-এর কারণ কী?

কী কারণে এই রোগ হয়, তা সঠিক ভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি এখনও। তবে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, এটি মস্তিষ্কের প্লাক ও টেঙ্গুল অর্থাৎ, হাইড্রোফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের সমষ্টির কারণে ঘটে। ফলে, অ্যালামাইড প্লাক, নিউরোফাইব্রিলারি টেঙ্গুল এবং অ্যাসিটাইলকোলিন উপাদানের অস্বাভাবিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় আক্রন্তের মস্তিষ্কে। অনেকের মতে, এই রোগের সূত্রপাত হয় অ্যামাইলয়েড বিটা নামের এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধ্যমে, যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভিতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক তৈরি করে। আর এই অ্যামাইলয়েড প্লাক-ই নিউরন বা মস্তিষ্ককোশের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সাধারণত অ্যামাইলয়েড প্লাক দুটি ঘটনার মাধ্যমে মস্তিষ্ককোশের মৃত্যু ঘটায়। এক, প্রদাহ ও জারণক্রিয়ায় স্নায়ুর ক্ষতি করে। দুই, নিউরোফাইব্রিলারি টেঙ্গুল গঠনের মাধ্যমে। মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ও সম্মুখভাগে পিরামিড আকৃতির অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরন থাকে, যা অ্যাসিটাইলকোলিন ক্ষরণের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রোগে টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তনের কারণে এই অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে স্মৃতি হ্রাস পেতে থাকে।

কী কী লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় এই রোগের ক্ষেত্রে?

তাৎক্ষণিক কিছু ভুলে যাওয়া এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে এই প্রাথমিক উপসর্গকে অনেকেই ভুল করে বার্ধক্যজনিত সমস্যা কিংবা মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ মনে করেন। কিন্তু উপসর্গ দেখে অসুখ ধরতে না পারলে কিংবা চিকিৎসা না করিয়ে অবহেলা করলে কী কুফল ভোগ করতে হয়, তা রোগী টের পান কিছুদিন পরে। কারণ, রোগ বাড়লে দ্বিধাগ্রস্থতা, অস্থিরতা, রাগ বেড়ে যাওয়া, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা, দীর্ঘ সময় কিছু মনে না পড়া প্রভৃতি সমস্যা প্রকট হতে থাকবে।

শোনা যায় অ্যালজাইমার্স-এর কিছু রিস্ক-ফ্যাক্টর আছে, সত্যিই কি তাই?

হ্যাঁ, অ্যালজাইমার্স ডিজিজ হওয়ার সঙ্গে কিছু রিস্ক-ফ্যাক্টর যুক্ত থাকে। এগুলি এই রোগ তৈরিতে এবং তীব্রতায় প্রভাব ফেলে। যেমন–

  •  নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণি
  •  বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন
  •  দুর্বল সামাজিকতা
  •  অলস মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের যথোপযুক্ত ব্যবহার না করা
  •  প্রবল পারিবারিক চাপজনিত বিষণ্ণতা
  •  হাইপারটেনশন ও ব্লাড সুগারের মতো ভাস্কুলার রিস্ক ফ্যাক্টরসমূহ, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে, যার ফলে ডিমেনশিয়া বৃদ্ধি পায়। যদিও, এরফলে সরাসরি অ্যালজাইমার্স ডিজিজ তীব্রতর হয় না

কাদের সর্বাধিক আশঙ্কা রয়েছে অ্যালজাইমার্স ডিজিজ হওয়ার?

নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পন্ন, একাকী থাকা, সারাদিন করার মতো কিছু না থাকা ও এভাবে কোনও সক্রিয়তার সঙ্গে নিজের মস্তিষ্কের ব্যবহার না করা এবং প্রবল পারিবারিক চাপের জন্য বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন যে-কোনও ব্যক্তির ভবিষ্যতে আলজাইমার্স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বয়স্ক মানুষজনের মধ্যে অ্যালজাইমার্স বেড়ে যাচ্ছে কেন?

পরিবর্তিত সামাজিক কাঠামোয় জয়েন্ট ফ্যামিলির তুলনায় নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও উন্নত জীবিকার সন্ধানে তরুণ প্রজন্ম শহর ছেড়ে বা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে বলে পরিবারের পুরোনো প্রজন্ম হয় একা থাকছে নয়তো কারও সহায়তা নিয়ে বাস করছে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোশে ‘স্লো ডিগ্রেডেশন’ হতে থাকে পর্যাপ্ত ‘স্টিমুলেশন’-এর অভাবে। এটিই রোগ বৃদ্ধির সম্ভাব্য অন্যতম কারণ।

অ্যালজাইমার্স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে জীবনযাত্রায় কী ধরনের সহজ পরিবর্তন আনা যেতে পারে?

যেসব ব্যক্তির কোনও সক্রিয় জীবন নেই, তারা ক্রসওয়ার্ড পাজল সমাধান করতে পারেন, নিয়মিত সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে পারেন এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ভিত্তিক বিতর্কে অংশ নিতে পারেন। এর ফলে মস্তিষ্ক সর্বদা সক্রিয় থাকবে। আর মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে পারলে, অ্যালজাইমার্স ডিজিজকেও দূরে রাখা সম্ভব।

অ্যালজাইমার্স কি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব?

না। এই রোগের কোনও স্থায়ী প্রতিকার নেই। এর চিকিৎসা, রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখে কিছু ওষুধ এবং কাউসেলিং-এর মাধ্যমে করা হয়। এক কথায়, এই রোগের চিকিৎসা প্রতিরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই, আগাম সতর্কতার যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনই এই রোগে আক্রান্তদের সুস্থ রাখার জন্য এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে। আন্তরিক যোগাযোগ এবং সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমেই সুস্থ রাখতে হবে রোগীকে।

সোরিয়াসিস কী এবং কেন

অনেকেই হয়তো ‘সোরিয়াসিস’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন। অবশ্য পরিচিতি না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, এটি চিকিৎসা পরিভাষা। আসলে, সোরিয়াসিস হল এক ধরনের চর্মরোগ। সাধারণ ভাবে পুরুষদের তুলনায় এই রোগ বেশি হয় মেয়েদের। তবে রোগটি সাধারণ হলেও, এর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়তে পারে শরীরে এবং মনে। তাই, সতর্কতা জরুরি। ডা. অভিষেক দে রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন সম্প্রতি।

সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?

একমাত্র বংশগত কারণ ছাড়া, সোরিয়াসিস রোগের নির্দিষ্ট কোনও কারণ নির্ণয় করা দুরূহ। তবে এটি ত্বকের প্রদাহজনিত একটি রোগ। কোশ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলে এই রোগ হয়।

সোরিয়াসিস-এ আক্রান্ত হলে বোঝা যাবে কীভাবে?

সোরিয়াসিস-এ আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন– হাত, পা, বাহু, কনুই এবং হাঁটুর চামড়া ফেটে যায়, আঁশযুক্ত ও লাল-লাল দাগ হয়ে যায়। অনেক সময় ফুসকুড়ি বেরোয়।

এই সময় কী রকম সমস্যা হয় রোগীর?

সোরিয়াসিস-এর লক্ষণ দেখা গেলে নানারকম শারীরিক অস্বস্তি হয়। চামড়ার ওই অংশে চুলকানি হতে পারে, জ্বালা ভাব হতে পারে, এমনকী রক্তও পড়তে পারে।

কী প্রভাব পড়ে শরীরে?

সোরিয়াসিসের প্রভাব পড়তে পারে দেহের হাড়ের সন্ধির ওপর। এতে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে এবং অক্ষমও হয়ে পড়তে পারেন। এছাড়া, যাদের সোরিয়াসিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, চোখের অসুখ এমনকী মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞ হিসাবে কী পদক্ষেপ নেন প্রথমে?

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে, যখন প্রথম আমরা কোনও রোগীকে দেখি, তখন আমাদের প্রাথমিক গুরুত্ব থাকে চামড়ার ওপর সোরিয়াসিসের দৃশ্যমান লক্ষণগুলিকে পরীক্ষা করে দেখা, অবস্থাটাকে নির্ণয় করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া। আমরা প্রায়ই এটা দেখতে পাই যে, একাধিক কারণে মহিলাদের ওপর সোরিয়াসিসের নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে। ফলে আমাদের দায়িত্ব এসে পড়ে সেই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা এবং এটা নিশ্চিত করা যাতে রোগীরা প্রয়োজনীয় যত্ন পান।

সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হলে কতটা মানসিক অবসাদ আসতে পারে?

যাদের সোরিয়াসিস নেই, তাদের তুলনায় যাদের সোরিয়াসিস রয়েছে, তাদের মানসিক অবসাদে ভোগার সম্ভাবনা দেড়গুণ বেশি। রোগীরা যখন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাদের সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি আরও খারাপের দিকে যায়। এর উলটোটাও হতে পারে। অর্থাৎ যখন সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি বেড়ে ওঠে, তা থেকেও মানসিক অবসাদ ছড়াতে পারে। সোরিয়াসিস ও মানসিক অবসাদের মধ্যে একটা জীববৈজ্ঞানিক যোগাযোগ রয়েছে। দেহের যে-রাসায়নিকগুলি চামড়ার ওপর নানা উপসর্গ ফুটে ওঠার পিছনে সক্রিয় থাকে– সেইগুলোই মানসিক অবসাদে আক্রান্তদের শরীরে আরও বেশি পরিমাণে দেখা যায়। তাছাড়া, চামড়ার ওপর দাগ-দাগ হয়ে থাকার দৃশ্যটা রোগী বা অন্যদের কাছে উদ্বেগজনক কিংবা বিরক্তিকর হতে পারে। এটাও জানা তথ্য যে, মদে আসক্তি এবং সোরিয়াসিসের মধ্যেও সম্পর্ক রয়েছে, যা থেকে আরও অবসাদগ্রস্ত ভাব আসতে পারে।

স্বাভাবিক ভাবেই এটা সব রোগীদের কাছেই একটা সমস্যা। বিশেষত যে-সব মহিলা কর্পোরেট কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে কাজ করেন এবং যাদের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে হয়, তাদের কাছে এটা সমস্যা তো বটেই। বেশিরভাগ মহিলা চান, তাদের চেহারা যেন নিখুঁত থাকে। যাদের সোরিয়াসিস রয়েছে তারা সবসময় চামড়ার সেই অংশটি ঢেকে রাখার বিষয়ে সচেতন থাকেন, যাতে অন্যরা তা দেখতে না পান। কখনও কখনও মোটা কোনও কাপড় বা স্কার্ফ দিয়ে তারা জায়গাটা ঢেকে রাখেন। এতে ফল আরও খারাপ হয়।

সোরিয়াসিস কি ছোঁয়াচে?

সোরিয়াসিস বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা অসম্পূর্ণ। লোকে মনে করে, সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে এবং তাদেরও এই রোগ ধরবে যদি তারা সোরিয়াসিস আছে এমন কোনও মহিলার সংস্পর্শে থাকেন। এথেকে এমন একটা ভয় জন্ম নিতে পারে, যার ফলে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন। যেমন স্কুলের কোনও অনুষ্ঠানে, সোরিয়াসিস রয়েছে এবং তা দেখা যাচ্ছে এমন কোনও মেয়েকে বাবা-মায়েরা আলাদা করে দিতে পারেন। কিংবা, সোরিয়াসিস রোগীর কাছ থেকে সহকর্মীরা দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। এতে রোগীর মানসিক কষ্ট আরও বেড়ে যায় এবং তাতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষত মহিলারা এর ফলে আত্মবিশ্বাস হারাতে পারেন, তাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকতে পারে এবং নিজেদের সম্পর্কে তারা একটা খারাপ ধারণা নিয়ে বসে থাকতে পারেন।

কেউ যদি মনে করেন তার জীবনের সব আশা শেষ হয়ে গেছে, যদি তার কাজে তিনি মনঃসংযোগ করতে না পারেন, যদি অন্যদের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত বোধ করেন কিংবা যদি আদৌ কোনও খিদে না থাকে, ক্লান্তি ও অবসাদে ভোগেন এবং কোনও কিছুতেই উৎসাহ না পান, যদি তার ঘুমোতে অসুবিধা হয় কিংবা আদৌ না ঘুমোন, তাহলেই ধরে নিতে হবে তিনি অবসাদগ্রস্ত। তবে কিছু সময় অনেকে নানারকম কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় থাকেন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে, সেই ব্যক্তি অবসাদগ্রস্ত। কিন্তু যদি একই অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

গর্ভাবস্থায় এবং মা হওয়ার পর কোনও বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে কি রোগীকে?

যেসব মহিলারা সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর গর্ভবতী হয়েছেন, তাদের উদ্বেগের বড়ো বিষয় হল, এই রোগের কারণে তাদের সন্তানধারণে এবং সন্তান হলে তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনও সমস্যা হবে কিনা! রোগীদের আমি এই আশ্বাস দিতে চাই যে, সোরিয়াসিসের ফলে গর্ভধারণে কোনও সমস্যা হয় না। তাই সন্তানধারণের পরিকল্পনা তারা করতেই পারেন। তবে গর্ভাবস্থার সময় হরমোন ও শারীরবৃত্তিয় পরিবর্তন কীভাবে ঘটবে এটা আগে থেকে বলা খুবই কঠিন। আবার বুকের দুধ খাওয়ালে, শারীরিক অবস্থার ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে লক্ষণের কোনও পরিবর্তন হয় না। আবার অন্যদের ক্ষেত্রে কারওর সোরিয়াসিসের লক্ষণ ও চামড়ার ওপর তার প্রকোপ বা প্রভাব পড়তে পারে কিংবা আরও খারাপও হতে পারে। অনেক মহিলার আবার সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর-পরই তাদের সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি আরও বেড়ে যেতে পারে।

এসব কারণে মহিলাদের পক্ষে এটা প্রয়োজনীয় যে, যদি তারা গর্ভধারণ করতে চান, তাহলে সেটা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশারদকে বিষয়টি জানাবেন। গর্ভাবস্থার সময় কিছু রোগের চিকিৎসা করানোটা উচিত নয়, কারণ তাতে বেড়ে ওঠা ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে। কিংবা বলা যায়, এই ধরনের চিকিৎসায় বেড়ে ওঠা শিশুর ক্ষতি হতে পারে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়নি। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়, মহিলাদের সাধারণ ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে স্তনের ওপর তারা যেন কোনও ওষুধ না লাগান। ওই চিকিৎসার প্রভাব সরাসরি ওই শিশুর শরীরে যাতে চলে না যায়, সেটা আটকাতেই এই পরামর্শ দেওয়া হয়।

আদর্শ ব্যবস্থা হল, রোগীর সহযোগিতায় চিকিৎসক বিভিন্ন ধরনের বিকল্প চিকিৎসার সুবিধা ও ঝুঁকি দুটি বিষয়েই বিবেচনা করবেন এবং তার মধ্যে থেকে সেরা বিকল্পটা বেছে নেবেন। গর্ভধারণের সময় কিছু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা ও হালকা থেরাপির (ফোটোথেরাপি) সুপারিশ করা যেতে পারে। বায়োলজিক্স ও মুখে খাওয়া যায় এমন ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন দেওয়া যেতে পারে।

শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় সোরিয়াসিস কোনও প্রভাব ফেলতে পারে কি?

যাদের চামড়ায় সোরিয়াসিস ফুটে ওঠে, এটা সোরিয়াসিসের সবচেয়ে সাধারণ রূপ, তেমন ১০ জনের মধ্যে ৬ জন রোগীর জননেন্দ্রিয়ে কিছু সময়ের জন্য সোরিয়াসিসের দাগ দেখা যেতে পারে। এতে যন্ত্রণা হতে পারে, অস্বস্তি হতে পারে, ওই জায়গায় কিছু ফোটানোর মতো বা জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। এটা হতে পারে যৌন মিলনের সময় কিংবা তার পরে। যাদের সোরিয়াটিক আর্থারাইটিস রয়েছে,তারা ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন বা তাদের হাড়ের সন্ধিতে ব্যথা হতে পারে। ফলে তাদের পক্ষে যৌন মিলন উপভোগ করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও, যদি জননেন্দ্রিয়ের আশপাশে চামড়ার ওপর কোনও লাল দাগ নাও থাকে, সোরিয়াসিসের দরুণ মানসিক অস্বস্তি, কোনও দম্পতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বাধা হয়ে উঠতে পারে। এসবের জেরে মেয়েদের যৌন ভোগান্তি অনেক বেশি হয়। এর মধ্যে পড়ে চুলকানি, লিবিডো বা যৌন আকাঙক্ষা কমে যাওয়া ইত্যাদি। এরফলে সম্পর্কের পরিণাম ভয়ংকর হতে পারে। যাইহোক, এব্যাপারে আমাদের সংশ্লিষ্ট ও পদ্ধতিগত চিকিৎসা রয়েছে, যার সাহায্যে এই ধরনের সমস্যা মেটানো যেতে পারে। জীবনশৈলীতে কিছু পরিবর্তন, যেমন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করা, সুগন্ধিযুক্ত কন্ডোম ব্যবহার না করা, কিংবা টাইট অন্তর্বাস ব্যবহার না করা। এই নিয়ম মেনে চললে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

সোরিয়াসিস রয়েছে এমন রোগীদের কী পরামর্শ দেবেন?

আমি বলতে চাই যে, তাদের অনুভূতি কী রকম বা নতুন কোনও লক্ষণ দেখা গেল কিনা, সেগুলো শারীরিক নাকি মানসিক, এ নিয়ে কথা বলার সময় চিকিৎসকদের কাছে বিব্রত হওয়ার দরকার নেই। বিশেষ করে চিকিৎসকদের কাছে মহিলাদের খোলাখুলি সব কথা বলতে হবে, তাদের দৈনন্দিন জীবনে সোরিয়াসিসের প্রভাব সংক্রান্ত সবকিছু খোলাখুলি জিজ্ঞেস করতে হবে। সেইসঙ্গে, চিকিৎসকের দেওয়া সব ওষুধ প্রতিদিন নিয়ম করে খেতে হবে। চিকিৎসক এই পরামর্শও দিতে পারেন যে, রোগী কোনও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে যান বা যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারও কাছে যান। তাদের পরামর্শে পরিস্থিতির মোকাবিলায় আরও ভালো ভাবে সাড়া দিতে পারেন রোগীরা।

———

সুস্থ থাকার স্বাস্থ্যবিধি

এখন বেপরোয়া জীবনযাপন মানেই জীবনহানির আশঙ্কা প্রবল। কারণ, এই অতিমারীর আবহে, সামগ্রিক জীবনধারণ পদ্ধতিটাই বদলে গেছে। তাই, প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি, বিশেষ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। সতর্ক থেকে সামগ্রিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নিজেকে যত বেশি সুস্থ রাখতে পারবেন, আখেরে লাভ আপনারই। কারণ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গেলে, টীকা নেওয়ার পরও সুরক্ষার স্বাস্থ্যবিধিগুলি এড়িয়ে চললে বিপদ আছে৷এই রোগের কবল থেকে সুস্থ থাকা এখন অত্যন্ত জরুরি। ডা. দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন।

এই অতিমারীর আবহে, একেবারে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে চিকিত্সক হিসাবে কী পরামর্শ দেবেন আপনি?

ছোটোবেলা থেকে আমরা যা শিখে এসেছি, সেইসঙ্গে আর সামান্য কিছু নিয়ম মানলেই, প্রাথমিক দাযিত্ব পূরণ করতে পারবেন। অর্থাত্, বাইরে থেকে এসে হাত-পা-মুখ যেমন সাবান দিয়ে ধুতেন, তেমনই ধোবেন। আর সেইসঙ্গে, বাইরে বেরোলেই মুখে ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরবেন এবং বাড়ি ফিরে সেই মাস্ক ও পরনের পোশাক সাবান দিয়ে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নেবেন। আর রোদ না থাকলে মাস্ক এবং জামাকাপড় গরম জলে সাবান সহযোগে ধুয়ে নেবেন অথবা শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রেস (আয়রন) করে নেবেন। সেইসঙ্গে মনে রাখবেন, অন্তত কুড়ি সেকেন্ড হাতে সাবান রেখে হাত ধোবেন, রাস্তায় বেরোলে চোখে-মুখে হাত ছোঁয়াবেন না এবং হাতে ভালোমানের ব্র‌্যান্ডেড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। আর বাড়ি কিংবা অফিসে দরজা-জানলার হাতল, সিঁড়ির রেলিং, টিভির রিমোট, কম্পিউটার কী-বোর্ড প্রভতি অবশ্যই স্যানিটাইজ করবেন।

 এখন অনেককেই কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে এবং অফিস-এর কমন টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে কী ধরনের সাবধানতা বজায় রাখা জরুরি?

পুরুষরা ইউরিনাল ব্যবহারের আগে জীবাণুনাশক তরল ঢেলে নেবেন অবশ্যই এবং মহিলারা কমোড ব্যবহারের আগে জীবাণুনাশক তরল তো ঢালবেনই, সেইসঙ্গে, সিট কভার-এর উপর স্যানিটেশন স্প্রে ব্যবহার করবেন। ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় এই স্যানিটেশন স্প্রে। সম্ভব হলে বড়ো ওষুধের দোকান থেকে শি-পি কিনেও ব্যবহার করতে পারেন মহিলারা। এই উপকরণটি ব্যবহার করলে মহিলারাও দাঁড়ানো অবস্থায় মূত্রত্যাগ করতে পারবেন। বিদেশের মতো আমাদের দেশেও এই উপকরণটির ব্যবহার বাড়ছে। আর সবসময় টয়লেট ব্যবহারের পর, অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। কারণ, শৌচালয়ে দরজার হাতলে, করোনা ছাড়াও থাকতে পারে অন্য ভাইরাস।

বাইরের থেকে বাড়ি ফিরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং নিজেকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে?

প্রথমে বাড়ির বাইরে জুতো খুলে রাখুন। তারপর জুতোর উপর-নীচে ভালো ভাবে স্যানিটেশন স্প্রে ব্যবহার করে, নির্দিষ্ট জায়গায় তুলে রাখুন। বাড়ির চাবি, গাড়ির চাবি, চশমা এবং ছাতা লিকুইড সাবানজলে ভালো ভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। ঘড়ি এখন না পরাই ভালো। আর যদি পরেন তাহলে কিছুটা তুলোয় বা শুকনো কাপড়ে স্যানিটেশন স্প্রে নিয়ে ঘড়ি মুছে নিন। মোবাইলের ক্ষেত্রে ক্যামেরার লেন্সটুকু বাদ দিয়ে ঘড়ির মতো একই ভাবে স্যানিটাইজ করে নিন। ব্যাগ-এ স্প্রে করুন স্যানিটাইজার। সাবান দিয়ে কেচে নিন ব্যবহৃত পোশাক। স্নান করুন সাবান মেখে। সম্ভব হলে হালকা গরম জলে মাথায় শ্যাম্পু করুন।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কী কী করণীয়?

দেখুন, আমাদের দেশে যেভাবে বাসে-ট্রামে যাতায়াত করতে হয়, সে ক্ষেত্রে বাস্তবিক ভাবে শারীরিক দূরত্ব খুব বেশি বজায় রাখা যায় না অনেক সময়। তাই, অফিস কিংবা বাড়িতে ঢুকে নিজেকে স্যানিটাইজ করে নেওয়াই প্রধান উপায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যতটা সম্ভব। হাঁচি-কাশি হচ্ছে, এমন ব্যক্তির থেকে দূরে থাকতে হবে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, সেলুন, শপিং মল প্রভতি জায়গায় এখন না যাওয়াই ভালো। গণপরিবহন মাধ্যমকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যানবাহনে বসার জায়গায় স্যানিটেশন স্প্রে ব্যবহার করে বসুন এবং নেমে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত রাখুন। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় অন্তত ছফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। অফিসেও অন্যের থেকে একই ভাবে দূরত্ব রেখে বসুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে অন্যের মুখোমুখি বসে দীর্ঘসময় কাটাবেন না।health awareness

সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে উপযোগী আর কী কী মেনে চলা উচিত?

কফ, থুতু, পানের পিক প্রভতিতে পা ফেলবেন না। ধূমপান, মদ্যপান কিংবা অন্য কোনও মাদকদ্রব্য গ্রহণ কঠোর ভাবে বন্ধ রাখুন। বাইরের খাদ্য এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, বাড়ির খাবার খান। বাড়িতে এবং অফিসে নিজের খাবার এবং জলপানের পাত্র আলাদা রাখুন। জলের বোতলের বাইরের অংশ সাবানজলে ধুয়ে ব্যবহার করুন। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট জলে মিশিয়ে শাকসবজি, ফলমূল ধুয়ে নিন অথবা কিছুক্ষণ রোদে রেখে তারপর রান্না করুন অথবা খান। লন্ড্রি থেকে আনা জামাকাপড় অন্তত দুদিন রেখে ব্যবহার করুন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অবশ্যই টাটকা শাকসবজি এবং ফল খান। প্রোটিনও যেন থাকে খাদ্য-তালিকায়। আর শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না।

মাথার চুল এবং হাতপায়ে নখ কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে?

মাথার চুল জীবাণুমুক্ত রাখতে হলে বাইরে বেরোনোর আগে সার্জিক্যাল হেয়ার-ক্যাপ ব্যবহার করুন এবং বাড়ি ফিরে হালকা গরমজলে শ্যাম্পু করে নিন। আর হাত ও পায়ে নখ কেটে পরিষ্কার রাখুন সবসময় এবং মাঝেমধ্যে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় কী?

সামান্য সুযোগ পেলেই মুখের ভিতরে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধে। মুখগহ্বরে সঠিকমাত্রায় লালারস ক্ষরিত হলে, মুখে বাস করা ব্যাক্টেরিয়া অনেকটাই ধ্বংস হয়।

কিন্তু অতিরিক্তি ধূমপান ও মদ্যপান করলে এবং নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করলে, মুখের ভিতরে লালাক্ষরণ কমতে থাকে। তাই, সমস্যা সৃষ্টিকারী এইসব উপাদান পরিত্যাগ করতে হবে। সেইসঙ্গে, মুখগহ্বরে যাতে কোনও জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে, তার জন্য প্রতিদিন সকালে এবং রাতে খাওয়ার পর অবশ্যই ভালোমানের টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। আর সম্ভব হলে মাঝেমধ্যে মাউথওয়াশ দিয়ে এবং হালকা গরম জলে গার্গল করতে হবে। এছাড়া, কোনও ভাবেই হাতের অপরিষ্কার আঙুল মুখে ঢুকিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বের করবেন না এবং দাঁত দিয়ে নখ কাটবেন না। দাঁতে আটকে থাকা খাবার বের করার জন্য পরিষ্কার টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।

শারীরিক মেলামেশার ক্ষেত্রে কী কী বিধিনিষেধ মানা উচিত?

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাস করলে, দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই এই করোনার আবহে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে সাবান দিয়ে সম্পূর্ণ স্নান করে তারপর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। সেইসঙ্গে, কন্ডোম অবশ্যই ব্যবহার করবেন এবং শারীরিক মিলনের পর অবশ্যই নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।

গর্ভবতী মহিলাদের কী করণীয়?

তাকেও একই ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং বাড়তি গুরুত্ব হিসাবে, তাকে নির্দিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট-এর পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

বেলের স্বাস্থ্যগুণ

কথায় বলে, খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল, নাকে-কানে তেল, মাঝেমধ্যে বেল। অর্থাৎ, বেলের অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিযাম প্রভতিতে সমৃদ্ধ এই ফলটি। অতএব, বাজারে পাকা বেল বিক্রি হতে দেখলেই কিনে আনুন এবং পান করুন বেলের শরবত। আসুন বেলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

বেলের স্বাস্থ্যগুণ

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : বেল খেলে হজমশক্তি বাড়ে, তাই পেট পরিষ্কার হয়। আর এই কারণেই দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা।

আলসার আটকায় : বেলে থাকে ট্যানিন নামক একটি উপাদান। আর এই উপাদান পেপটিক আলসার আটকাতে সাহায্য করে।

লিভার এবং কিডনিকে সুস্থ রাখে : হালকা গরমজলে বেলের শরবত বানিয়ে পান করলে, লিভার এবং কিডনির কার‌্যক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে, রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকারক টক্সিন উপাদান বেরিয়ে যাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।

ডাযাবেটিস প্রতিরোধ করে : বেলে থাকে ফেরোনিযা গাম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ফুসফুসের কার‌্যক্ষমতা বাড়ায় : যারা প্রায়ই সর্দি-কাশিতে ভোগেন, তারা বেল খেলে উপকার পাবেন। কারণ, বেল ফুসফুসের কার‌্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে কফ বেরিয়ে যায় ফুসফুস থেকে।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে : বেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে, সর্দি-কাশি থেকে যেমন মুক্তি পাওযা যায়, ঠিক তেমনই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।

এনার্জি বাড়ায় : বেলে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান থাকার কারণে, শরীরের প্রতিটি কোশের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে।

স্ট্রোক

করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্বেগ, আতঙ্কে রয়েছেন সবাই। তার উপর কমেছে হাঁটাচলা, পরিশ্রম। সাবধান! করোনা থেকে বাঁচলেও, এই সময় হতে পারে স্ট্রোক। বিশেষ করে যাদের ব্লাড প্রেসার হাই কিংবা যারা ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত, সেইসব মানুষের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য, স্ট্রোক-এর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিলেন ডা. অমিত হালদার।

স্ট্রোকের বেশ কয়েকটি আগাম লক্ষ্মণ

  • কথা জড়িয়ে যাওয়া
  • হাত বা পা দুর্বল হওয়া
  • অস্থিরতা বা কম্পন
  • দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া বা দ্বিগুণ দর্শন।

কেমন করে জানতে পারব যে আমি অথবা আসপাশের কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত কী না?

স্ট্রোকের আগাম লক্ষ্মণগুলি হলঃ

  • কথা জড়িয়ে যাওয়া
  • হাত বা পা দুর্বল হওয়া
  • অস্থিরতা বা কম্পন
  • দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া বা দ্বিগুণ দর্শন

এই লক্ষণগুলি হঠাত্ই শুরু হয়। এগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্যগত সূচক হলঃ

  • মুখের বৈসাদৃশ্য
  • অঙ্গশক্তি হ্রাস
  • অসংলগ্ন চক্ষু সঞ্চালন বা ঢোক গেলা

স্ট্রোকের কারণ বা রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো কী কী?

স্ট্রোকের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টরসমূহ হলঃ

  • পারিবারিক ইতিহাস
  • বয়স
  • ডায়াবেটিস মেলিটাস
  • ডিস্লিপিডেমিয়া বা রক্তে অস্বাভাবিক পরিমাণ লিপিডের উপস্থিতি
  • হাইপারটেনশন
  • ধূমপান
  • স্থুলতা

প্রথম দুটি ফ্যাক্টর অশোধনযোগ্য হলেও ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বাকিগুলি সংশোধন করা যেতে পারে।

আসপাশের কাউকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখলে কী করা উচিত?

প্রথম পদক্ষেপ হল, ওই রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে প্রেরণ করা। যথোপযুক্ত (ওয়ে ইকু্ইপড) অর্থে আমরা বলতে চাইছি যে, হাসপাতালটিতে যেন সিটি স্ক্যানার ও নিউরোলজিস্ট-সহ আইসিইউ থাকে, যিনি অ্যাকিউট স্ট্রোক মোকাবিলা করতে সক্ষম।

সময় কেন গুরুত্বপূর্ণ? স্ট্রোকের পর প্রতি মিনিটে ২ মিলিয়ন নিউরনের মৃত্যু ঘটে! সেই কারণে টাইম ইজ ব্রেন।

স্ট্রোক কি শুধু বৃদ্ধ বয়সে ঘটে?

স্ট্রোক যে-কোনও বয়সে হতে পারে। কমবয়সে এটা হয় হৃদরোগ বা ভাস্কুলাইটিস বা থ্রম্বোফিলিক ডিসঅর্ডারের কারণে। ৪৫-এর পর, এটা বেশিরভাগ সময়ে হয় চিরাচরিত রিস্ক ফ্যাক্টর সমূহের কারণে।

কারও কি একাধিকবার স্ট্রোক হতে পারে?

হ্যাঁ পারে। রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি সংশোধন করা না হলে স্ট্রোক বারবার হতে পারে। কি ধরনের চিকিত্সা হয়েছে তার উপর এটা নির্ভর করে।

দুটি মুখ্য টাইপের স্ট্রোক রয়েছে ইস্কেমিক স্ট্রোক ও হেমারেজ। ইস্কেমিক স্ট্রোক বা ইনফার্ক্ট-এর জন্য একটি ক্লট লিটিক এজেন্ট পাওয়া যায়। স্ট্রোকের প্রথম সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে দেওয়া হলে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এই কারণে যত দ্রুত সম্ভব ইকু্ইপড এমার্জেন্সি-তে যেতে হবে রোগীকে।

ডা. অমিত হালদার

কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট অ্যান্ড এপিলেপ্টোলজিস্ট

ফর্টিস হসপিটাল, আনন্দপুর, কলকাতা

নতুন বছরে ফিটনেস Unlimited

নতুন বছরে শরীর-স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে বিশেষ সংকল্প অলরেডি নিয়ে ফেলেছেন? কী ঠিক করলেন? নিজেকে ফিট রাখতে কিছু বাড়তি ওজন ঝরাতে হবে, না কি নিজের হারানো ফিটনেস ফিরিয়ে এনে তাকে মেইনটেন করবেন? এমন নয় তো যে, চট্জলদি ফিট্নেস ফিরে পেতে কিছু শর্টকাট পদ্ধতি ট্রাই করতে শুরুও করে ফেলেছেন?

তাহলে আপনার জানা উচিত, আপনার এই প্রচেষ্টার ফল সুদূরপ্রসারী নয়। সুতরাং বুঝেশুনে এমন চেষ্টা করা উচিত, যাতে ওজন লাগাতার কমার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কন্ট্রোলেও থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে জুম্বা এবং ওয়েট লিফটিং ব্যায়াম।

জুম্বা-র গুরুত্ব

রোগা হওয়ার উপায় হিসাবে, অনেকেই জিম যেতে পছন্দ করেন। কিন্তু জিমে সাধারণত যেসব উপকরণ এবং মেশিন থাকে সেগুলিতে গতানুগতিক ভাবে ওয়ার্কআউট করে যাওয়া তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পছন্দ করেন না। তাঁরা ফিট্নেস পেতে কিছু অন্যরকম চেষ্টা করে দেখতে চান। আর জুম্বা তাদের মনোরঞ্জন করবে সঙ্গে উৎসাহও জোগাবে।

৯০-এর দশকে কলোম্বিয়ান ডান্সার অ্যালবার্তো ‘বেটো’ পেরেজ, জুম্বা ফিটনেস প্রোগ্রাম-টির সূচনা করেন। এটি নাচ এবং অ্যারোবিক এক্সারসাইজের একটি সমন্বয়। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন ডান্স শৈলীর উপর নির্ভর করে এই জুম্বা শৈলী গড়ে তোলা হয়েছে। এই ওয়ার্কআউট খুব দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। পায়ের উপর ভর করে হিপহপ এবং সালসার সংমিশ্রিত বিট্‌স ফলো করে বডি-কে মুভ করাতে হয়।

এই ডান্স সাধারণত ভরপুর এনার্জির সঙ্গে  দল বেঁধে করা হয়ে থাকে এবং এর মূল লক্ষ্য হল ফিট্নেস কায়েম রাখা। জুম্বা যেহেতু খুব দ্রুতগতির ওয়ার্কআউট, তাই ট্রেডমিল অথবা ক্রসট্রেনার-এর চাইতে অনেক তাড়াতাড়ি ফ্যাট বার্ন করতে সক্ষম।

ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়েঃ কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজের খুব ভালো বিকল্প হল জুম্বা। দ্রুত এবং মধ্যম গতিতে এই এক্সারসাইজটি করতে হয় এবং ইন্টারভাল ট্রেনিং-এর মতো কাজ করে। ফলে শরীরের সমস্ত মাংসপেশি, বিশেষ করে পিঠ এবং পেটের জন্য খুব লাভদায়ক। জুম্বা-য় ব্যবহৃৎ জটিল মুভমেন্ট, শরীরের মাংসপেশির ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়, শরীরকে ব্যালেন্সড রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও শক্তিতে ভরপুর এই ওয়ার্কআউটের আর একটা লাভ হল – শরীরের সমস্ত মাংসপেশিকে সক্রিয় রেখে শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে। যে-কোনও বয়সেই এই এক্সারসাইজ-টি করা যেতে পারে। কারণ, শরীরের জয়েন্টের উপর এর প্রভাব খুব কম পড়ে। ফিট থাকার জন্য ৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সি যে-কোনও ব্যক্তি জুম্বা প্রাকটিস করতে পারেন।

——-

 

রিমোট মনিটরিং সিস্টেম

এখনও আমরা রয়েছি করোনার আবহে। তাই, জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যে-কোনও সময় চাইলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের মুখোমুখি হয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়া কষ্টকর। অতএব, জরুরি পরিষেবা নেওয়ার প্রযোজন ছাড়া, চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিত। এক্ষেত্রে, রিমোট মনিটরিং সিস্টেম একটি অত্যন্ত সহায়ক চিকিৎসা পরিষেবা। সম্প্রতি এই বিষয়ে যাবতীয় কৌতূহল মেটালেন ডা. আফতাব খান।

রিমোট মনিটরিং সিস্টেম কী?

এটি চিকিৎসক এবং রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একটি মাধ্যম। অ্যাপ-নির্ভর এই মাধ্যমটির জন্য চাই একটি স্মার্ট ফোন। রোগী এবং তার দ্বারা নিযুক্ত চিকিৎসকের স্মার্ট ফোন-এ নির্দিষ্ট একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে, চিকিৎসার সুযোগ নিতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যম।

সব রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কি রিমোট মনিটরিং সিস্টেমএর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে?

না, এটি সব রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার‌্যকরী নয়। তবে, কয়ে সেকেন্ড যার স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে দেহে আর প্রাণ থাকবে না, সেই গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান অর্থাৎ হৃদয়ন্ত্রের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম। যাদের হার্ট-এ ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট করা আছে অর্থাৎ পেসমেকার বসানো আছে, তাদের সবসময় পর‌্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। কারণ, মুহূর্তের অসতর্কতা কিংবা সমস্যা, বড়ো বিপদে ফেলতে পারে রোগীকে। তাই, জীবনের সুরক্ষার জন্য রিমোট মনিটরিং সিস্টেম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

কীভাবে কাজ করে এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম?

এটি আসলে একটি ট্রান্সমিটার সিস্টেম। পেসমেকার-এর সঙ্গে রিমোট মনিটরিং অ্যাপ-এর সুন্দর ভাবে যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে ওঠার কারণে, হৃদয়ন্ত্রের ভালোমন্দ অবস্থার সম্পূর্ণ তথ্য সর্বদা পাওয়া যায় স্মার্ট ফোনে।

রিমোর্ট মনিটরিং সিস্টেমএর সুবিধাগুলি কী কী?

এটি একটি স্বযংক্রিয় পদ্ধতি। রক্তচাপ, রক্ত সঞ্চালন এবং হৃদস্পন্দনের মাত্রার তথ্য স্বযংক্রিয় ভাবে পরিবেশিত হয় স্মার্ট ফোন-এর নির্দিষ্ট অ্যাপ-এ। এমনকী, রোগী যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখনও হার্ট-এর ভালোমন্দ পরিস্থিতির সমস্ত তথ্য পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। হার্ট-এর সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই তৎক্ষণাৎ সতর্ক করবে এই সিস্টেম। রোগী নিজেই বুঝতে পারবেন হার্ট-এর অস্বাভাবিকতা। অর্থাৎ, কোনও সমস্যা হলেই অ্যাপ-এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন-এ রেড-অ্যালার্ট পাবেন রোগী কিংবা তার বাড়ির লোকেরা। এরপর, চিকিৎসক যদি ব্যস্তও থাকেন তখন রোগীর রিমোট মনিটরিং সিস্টেম-এর তথ্য না দেখে থাকলেও, বিপদের বার্তা পাওয়া মাত্র রোগী কিংবা তার বাড়ির লোকেরা বিষয়টিকে চিকিৎসকের নজরে আনতে পারবেন দূরভাষের মাধ্যমে। চিকিতসক তখন তাঁর মোবাইল-এ থাকা সংযোগকারী অ্যাপ-এর মাধ্যমে রোগীর হার্ট-এর সমস্যা বুঝতে পারবেন এবং প্রযোজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন। যদি কোনও ওষুধের মাধ্যমে বিপদ এড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, তাহলে চিকিত্সক সেই পরামর্শ দেবেন। আর যদি গুরুতর কোনও সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে রোগীকে তখনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেবেন। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এক্ষেত্রে। তাই, অহেতুক মানসিক চাপ নিতে হয় না এবং প্রযোজন না থাকলে হাসপাতালে যাওয়ার কিংবা ভর্তি হওয়ার ঝামেলা থাকে না। শুধু তাই নয়, পেসমেকার বসানো রোগী যদি তাঁর হোম টাউন-এ না থাকেন, তিনি যদি ট্রাভেল করেন কিংবা বহু দূরে থাকা অবস্থায় হার্ট-এর কোনও সমস্যা দেখা দিলে, বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হবে না রোগীকে। কারণ, তিনি তাঁর শারীরিক অসুস্থতার বার্তা রিমোট মনিটরিং সিস্টেম-এর মাধ্যমে যেমন নিজে জানতে পারবেন সঠিক সময়ে ঠিক তেমনই তিনি তার বর্তমান পরিস্থিতি চিকিৎসকের  নজরে এনে, উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিত্সা পরিষেবা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে, রোগীর জীবনরক্ষার সুযোগও অনেক বেশি। কারণ, রোগীর স্মার্ট ফোন ছাড়াও চিকিৎসকের ফোন সেট-এ এসএমএস, ই-মেইল এবং অ্যাপ-এর নোটিফিকেশন-এও রোগীর শারীরিক সমস্যার বার্তা পেঁছে যাবে।

এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম কতটা নির্ভরযোগ্য?

এটি বিজ্ঞানের একটি ফলপ্রসু আবিষ্কার। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম। ক্লিনিক-এ গিয়ে চিকিৎসকের মুখোমুখি হয়ে যে-পরিষেবা পান রোগীরা সেই সমতুল্য বা তার থেকেও ভালো পরিষেবা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেমকে মাধ্যম করলে। কারণ, এই সিস্টেম হার্ট-এর ভালোমন্দ খবর দিতে থাকে প্রতি মুহূর্তে। আর এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বলেই আমরা কার্ডিওলজিস্টরা এর ব্যবহার বাড়িয়েি। তাছাড়া, রিমোট মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করলে রোগীরাও অতিরিক্ত মানসিক জোর পান। কারণ, তারা নিশ্চিন্ত থাকেন যে, হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হওয়ার প্রাথমিক পর‌্যায়ে সতর্ক করবে এই রিমোট মনিটরিং সিস্টেম। তাই সঠিক সময়ে সতর্ক হয়ে ভালো ভাবে চিকিৎসা পরিষেবাও নেওয়ার সুযোগ থাকে এক্ষেত্রে।

রিমোট মনিটরিং সিস্টেম কি খুব ব্যয়বহুল?

খুব ব্যয়বহুল নয়। পেসমেকার-এর খরচের সঙ্গে সামান্য টাকা খরচ করলেই রিমোট মনিটরিং

সিস্টেম-এর সুবিধা নেওয়া যায়। তাছাড়া, এককালীন কিছু টাকা খরচ করলেই বারবার ক্লিনিক-এ যাওয়ার খরচ এবং ঝামেলা এড়ানো যায়। প্রসঙ্গত আরও জানিয়ে রাখি, আগের থেকে এর খরচ এখন অনেকটাই কমেছে।

টেলিহেল্থ ফেসিলিটি এবং রিমোট মনিটরিং সিস্টেমএর মধ্যে কতটা পার্থক্য ?

টেলিহেল্থ ফেসিলিটি হল একটি চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রিপেড-এর মাধ্যমে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এক্ষেত্রে ভয়ে কলিং কিংবা ভিডিযো কলিং-এর মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে চিকিত্সকের যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেয় এবং জরুরি চিকিত্সার ব্যবস্থা করায়। কিন্তু যাদের হার্ট-এর সমস্যা রয়েছে এবং পেসমেকার বসানো আছে, তাদের ক্ষেত্রে রিমোট মনিটরিং সিস্টেম উপযুক্ত জরুরি চিকিৎসা মাধ্যম। কারণ, এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, প্রতি মুহূর্তে স্বযংক্রিয় পদ্ধতি সতর্ক করে এবং সঠিক সময়ে চিকিত্সা পরিষেবা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জীবনরক্ষা করে।

রিমোট মনিটরিং সিস্টেমএর সুবিধে নিলেও, পেসমেকার বসানো রোগীদের কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?

ধূমপান কিংবা মদ্যপানের কু-অভ্যাস থাকলে তা একেবারে বন্ধ করতে হবে। ঘুমের ঘাটতি চলবে না। অর্থাৎ, রাতে নির্দিষ্ট সময়ে (১১টার মধ্যে) ঘুমোতে হবে এবং অন্তত আটঘন্টা ঘুম হওয়া চাই। সেইসঙ্গে, কতটা ভারী কাজ করতে পারবেন কিংবা বেশি উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়াতে যেতে পারবেন কিনা প্রভতি বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

ডা. আফতাব খান

সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট,

অ্যাপোলো গ্লেনেগল্স হাসপাতাল, কলকাতা।

বাড়িতে থেকেই ওজন কমান

ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ‘ডায়েট’ শব্দটা শুনলেই অনেকে ভাবেন অল্প খাওয়াদাওয়া করা। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা একেবারেই সেরকম নয়।দিনের পর দিন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কম খেলে সেক্ষেত্রে আপনার মেটাবলিজম কমে যেতে পারে। অর্থাত্ আপনি যতই কম খান না কেন, সেটা ধীরে ধীরে হজম হবে। ফলে কোনওদিন একটু বেশি খেলেই তা ফ্যাট হিসেবে শরীরে স্টোর হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।

দেহের ওজন আয়ত্বে রাখতে হলে, খেতে হবে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার। এমন হবে সেই খাবার, যা শরীরকে হাইড্রেট রেখে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

বাজারে সহজলভ্য কিছু উপকরণকে আমরা ওজন কমানোর জন্য বেছে নিতে পারি। এর মধ্যে আছে করোলা, কাঁচা আম এবং তরমুজ। এই তিনটি উপকরণ দেহের চর্বি কমিয়ে ওজনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কমেছে হাঁটাচলা, পরিশ্রম। তাই, গৃহবন্দি থেকেও কীভাবে ওজন কমাবেন, বিশদে জেনে নিন।

  • করোলা : তেতো স্বাদের এই সবজিটি রান্না করে খেলে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমবে এবং শরীরের ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করবে। আর ক্যালোরি গ্রহণ কমলে, দেহের ওজনও কমবে।
  • কাঁচা আম : কেটে, নুন মাখিয়ে কিংবা চাটনি বানিয়ে খেতে পারেন কাঁচা আম। আর এই আম ফাইবার, ম্যাগনেসিযাম, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস এবং আয়রন সমৃদ্ধ। এটি তাই খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। আর খিদে নিয়ন্ত্রণ করার কারণেই, দেহের ওজনও আয়ত্তে থাকে।
  • তরমুজ : তরমুজ খেলে যেমন শরীরে জলের ঘাটতি হবে না, ঠিক তেমনই এতে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট লাইকোপেন থাকার কারণে, দেহের ফ্যাট পোড়াতে সাহায্য করবে। আর চর্বি না জমলে, দেহের ওজন বেড়ে যাওযারও সম্ভাবনা থাকবে না।

এগুলি খাওয়ার পাশাপাশি, সম্ভব হলে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করুন। বডিওয়েট এক্সারসাইজ, যেমন পুল আপ, পুশ আপ, স্কোয়াটস্ ইত্যাদি করুন। এতে শরীরে পেশি বৃদ্ধি পাবে। পেশি যত বাড়বে, ততই আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে। তখন বেশি খেলেও সেই ক্যালোরি দ্রুত খরচ হয়ে যাবে।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব