ওয়ার্ক ফ্রম হোম– অর্থাৎ, বাড়িতে বসেই কাজ। হ্যাঁ, এমন কিছু কাজ আছে, যা বাড়ি বসে করা যায় অনায়াসে। ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই-কে মাধ্যম করে পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে বসে কিছু কাজ করা যায় সহজে। এক্ষেত্রে যিনি কাজ করাবেন এবং যিনি কাজ করবেন, দু’জনেরই লাভ। একটা সময় ছিল, যখন শুধু পশ্চিমি দেশগুলিতে এই সুবিধে পাওয়া যেত কিন্তু এখন আমাদের দেশেও ইন্টারনেট-এর প্রসারের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র।
যে সব কাজ বাড়ি বসে করা যায়
এক নয়, একাধিক কাজ করা যায় বাড়ি বসে। শুধু একটু মাথা খাটিয়ে পরিকল্পনা করার প্রয়োজন। কাজের খোঁজ খবর রাখলে প্রায় দশ থেকে বারো রকম কাজ করা যায় বাড়ি বসে। যেমন–
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
নিজের কোম্পানি খুলে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়া যায় বাড়ি বসে। ছোটো কোম্পানির হয়ে কিংবা সেলিব্রিটিদের হয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রচারের কাজ করার বিষয়টি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ধীরে ধীরে। এইরকম কাজে আয়ও বেশ ভালো।
মেডিকেল ট্রান্সস্ক্রিপ্ট
ব্যস্ত চিকিৎসকরা নিজের সময় বাঁচাতে এই রকম মেডিকেল ট্রান্সস্ক্রিপ্ট-এর কাজ করান। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কথা শুনে কম্পিউটার-এ এন্ট্রি করতে হয়। ডক্টর অন্য কোনও দেশে বসেও এই কাজ করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে, মাধ্যম থাকে টেলিফোন।
অনুবাদক
মাতৃভাষা ছাড়াও যদি আপনি একাধিক ভাষা জানেন, তাহলে অনুবাদকের কাজ করতে পারবেন বাড়ি বসে। ভয়েস রেকর্ড বাজিয়ে কিংবা নথি দেখে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করে বাড়ি বসেই ইনকাম করা যায় অনেক টাকা।
ওয়েব ডিজাইনার
এখন ওয়েব সাইট-এর রমরমা বাজার। ওয়েবসাইট খুলে
সংবাদ পরিবেশন কিংবা ব্যাক্তিগত কোনও লেখা, তথ্য ইত্যাদি পরিবেশন করেন অনেকেই। তাই এইসব ওয়েব সাইটগুলির জন্য ওয়েব ডিজাইনার লাগে। আর এই ওয়েব ডিজাইনিং বাড়ি বসেই করা যায় এবং ভালো আয়ও করা যায়।
কল সেন্টার প্রতিনিধি
ছোটো, বড়ো অনেক সংস্থা বড়ো কোনও কল সেন্টার-কে দায়িত্ব না দিয়ে, কল সেন্টার প্রতিনিধি নিয়োগ করে। এতে কোম্পানির আর্থিক সাশ্রয় হয়। এক্ষেত্রে সংস্থার ক্রেতাদের থেকে অর্ডার নেওয়া এবং অভাব-অভিযোগের সমাধান করা-ই কল সেন্টার প্রতিনিধির কাজ। এই কাজ বাড়ি বসেই করা যায়।
সহায়ক টেকনিক বিশেষজ্ঞ
কল সেন্টার-এর কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোডেম, ওয়াইফাই প্রভৃতির সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার হয় সমস্যার সমাধান করার জন্য। তাই কেউ যদি এইসব বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন, তাহলে বাড়ি বসে সহায়ক টেকনিক বিশেষজ্ঞের কাজ করতে পারবেন।
ট্রাভেল এজেন্ট
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় জায়গাগুলি সম্পর্কে যদি জ্ঞান থাকে এবং পর্যটকদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে ট্র্যাভেল এজেন্ট হওয়া যায় অনায়াসে। এই কাজ বাাড়িতে বসেই করা যায়।
প্রাইভেট টিউশন
আজকাল ডিসট্যান্স এডুকেশন কিংবা করেসপন্ডেন্স কোর্স-এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই বাড়ি বসে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনমতো শিক্ষাদান করা যায় অর্থের বিনিময়ে।
লেখক এবং সম্পাদক
লেখা অর্থাৎ কন্টেন্ট রাইটিং, প্রুফরিডিং এবং সম্পাদনার কাজ বাড়ি বসেই করা যায় ওয়েব পোর্টাল-এর জন্য। আর এখন এই ওয়েব পোর্টাল-এর কাজ এবং চাহিদা বাড়ছে। শুধু তাই নয়, এই কাজ করে অনেকে ভালো টাকাও উপার্জন করছেন।
ফ্রাঞ্চাইজি
যদি বাজারে ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ঠিকমতো খোঁজ খবর রাখা যায়, তাহলে ফ্রাঞ্চাইজি নিয়ে বাড়ি বসে কাজ করা যায়। ফুড, এডুকেশন, মেডিসিন প্রভৃতি কাজ এই তালিকায় পড়ে।
দাবার কোচিং
দাবা খেলায় আগ্রহ বাড়ছে অনেকের। কিন্তু না জানলে দাবা খেলা যায় না। তাই কেউ যদি ভালো ভাবে দাবা খেলা শিখে নেন, তাহলে বাড়ি বসে দাবার কোচ হয়ে অর্থ উপার্জন করা যায়।
বাড়ি বসে কাজের নানান সুবিধে
- বাড়ি বসে কাজ করলে পরিবারের সদস্যদের বেশি সময় দেওয়া যায়
- অবসরপ্রাপ্তদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুবিধে
- যে সমস্ত মহিলার স্বামীর বদলির চাকরি, তাদের ক্ষেত্রে বাড়ি বসে কিছু কাজ করা সুবিধেজনক
- শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী কিছু কাজ বাড়ি বসে করতে পারেন
- খুব সকালে উঠে, বাস কিংবা ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে কষ্ট করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই
- বাড়ি বসে কাজ করলে নিজের সুবিধেমতো বিশ্রাম নেওয়া যায়
- বাড়িতে থাকলে ওয়েল-ড্রেসড হওয়ার প্রয়োজন নেই,মেক-আপ করারও প্রয়োজন নেই
- বাইরের খাবার খেয়ে শরীর খারাপ করার ঝামেলা নেই। সঠিক সময়ে নিজের ইচ্ছেমতো বাড়ির খাবার খেয়ে কাজ করা যায়
- যাতায়াত করতে হয় না, তাই কোনও খরচাও নেই
- অন্যের অধীনে কাজ করে অযথা সমস্যা কিংবা চাকরি হারানোর ভয়ও নেই
অবশ্য বাড়ি বসে কাজের সুবিধের দিক বেশি থাকলেও, কিছু অসুবিধেও আছে। যেমন– বর্হিজগতের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়, কাজের আবহ না থাকায় মন বসে না, কিছু সমস্যা হলে অন্যদের সাহায্য পাওয়া যায় না ইত্যাদি। তবে যদি মনযোগ এবং নিষ্ঠা সহকারে কাজ করা যায় এবং সমস্যার সমাধান করা যায়, তাহলে বাড়ি বসে কাজ করতে ক্ষতি কী?