‘মিত্রা, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। এখুনি বেরোতে হবে। একটা ফ্ল্যাটের সন্ধান দিল এজেন্ট। এখন না গেলে যার ফ্ল্যাট সে চলে যাবে’, শংকর তাড়া লাগাল বউকে।
আজ এক সপ্তাহ হল শংকর আর মিত্রা বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি এসে হোটেলে উঠেছে। শংকর বেঙ্গালুরুর চাকরি ছেড়ে আরও ভালো প্যাকেজ পেয়ে দিল্লি এসেছে। বরের সঙ্গে থাকবে বলে মিত্রা ওখানকার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। ও জানে এখানে সেটল করে ঠিক একটা চাকরি ও জোগাড় করে নেবে। বেঙ্গালুরুর ফার্নিশড ফ্ল্যাটটাও ওরা আসার সময় ছেড়ে দিয়ে এসেছে। ওরা ঠিকই করে রেখেছে নিজস্ব ফ্ল্যাট না হওয়া পর্যন্ত ফার্নিশড ফ্ল্যাট-ই ভাড়া নিয়ে থাকবে। এতে সুবিধা হচ্ছে, গুচ্ছের জিনিসপত্র কিনে টানা-হ্যাঁচড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। শুধু নিজেদের ব্যবহার্য জামাকাপড় এবং দৈনন্দিন কিছু জিনিস ছাড়া শিফটিংয়ের সময় গুচ্ছের জিনিস বইতে হয় না। সুতরাং দিল্লিতে আসা থেকে ওরা নতুন ফ্ল্যাটের সন্ধানে রয়েছে। কয়েকটা দেখেওছে কিন্তু কোনওটাই ফার্নিশড ছিল না। হোটেলে থাকতেও ওদের আর ভালো লাগছিল না।
নতুন ফ্ল্যাটটা দেখেই দুজনেরই পছন্দ হয়ে গেল। নতুন ফার্নিচারে সাজানো দুটো বেডরুম, ড্রয়িং কাম ডাইনিং, ঝকঝকে মডার্ন কিচেন, বাথরুম– সবই প্রশংসার যোগ্য কিন্তু মিত্রার সবথেকে পছন্দ হল ফ্ল্যাটের সঙ্গে লাগোয়া সার্ভেন্ট কোয়ার্টারটা দেখে। বাড়িওয়ালা জানালেন, ওই সোসাইটিতে প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের সঙ্গে একটি করে সার্ভেন্ট কোয়ার্টার আছে। তাতে একটি রুম সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম এবং রান্নাঘর। কোয়ার্টারে ঢোকার রাস্তাও আলাদা।
ফ্ল্যাটে যে কাজ করবে সে পরিবারের সঙ্গে ওখানে থাকতে পারবে পরিবর্তে কম টাকায় তাকে ওই ফ্ল্যাটের সব কাজ করতে হবে। এটাই নাকী ওই সোসাইটির নিয়ম। যারা এই শর্তে কাজ করতে ইচ্ছুক তারা সিকিউরিটি গার্ডের কাছে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছে সুতরাং যোগাযোগ করতে হলে সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
সব দেখেশুনে সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ করে দিল শংকর। মিত্রার মুখ দেখে বুঝতে পারছিল ওরও খুব পছন্দ হয়েছে পুরো ব্যবস্থা। টাকা দিতে যাওয়ার একটা দিন ধার্য করে ওরা স্বামী-স্ত্রী বেরিয়ে এল সোসাইটি থেকে। মিত্রা আনন্দ চেপে রাখতে পারল না। বাইরে পা দিয়েই বলল, ‘আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে ফ্ল্যাটটা, বিশেষ করে সার্ভেন্ট কোয়ার্টার থাকায় চাকরি করাটা খুব সুবিধা হবে তাই না?’
ছোট্ট একটা ‘হ্যাঁ’ বলেই শংকর চুপ করল।
‘এখানে শিফট করেই একজন কাজের লোক রেখে নেব। তাহলে অফিস জয়েন যখন করব কোনও চিন্তা থাকবে না আর অফিস থেকে ফিরেও রান্না করার ঝামেলায় পড়তে হবে না’, মিত্রা আনন্দ কিছুতেই চাপতে পারে না।
তিন দিনের মাথায় শংকর আর মিত্রা নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করল। মিত্রা এসেই সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে চার-পাঁচজন পরিচারিকার নম্বর নিজের মোবাইলে সেভ করে রাখল, সময় করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলে।
একটু গুছিয়ে বসতেই মিত্রা কাজের লোক খুঁজতে লেগে পড়ল। দুটো তিনটে ফোন করার পর একজনকে পছন্দ হল কিন্তু তার এক মাসের বাচ্চা আছে শুনে পিছিয়ে গেল আবার। অতটুকু বাচ্চা নিয়ে পুরো বাড়ি কীভাবে মেয়েটি সামাল দেবে ভেবে পেল না মিত্রা। অগত্যা তাকেও না করতে হল।
শংকর অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে দেখে মিত্রা রান্নাঘরে ঢুকল। মনটা পড়ে রইল কাজের লোকের চিন্তায়। কী জানি কটা দিন আর অপেক্ষা করতে হবে? আনমনা হয়েই দরজা অবধি এগিয়ে গেল মিত্রা, শংকরকে সিঅফ করতে। দরজা বন্ধ করে সোফায় এসে বসল। এখনও ঘরদোর পরিষ্কার করা হয়নি। মনে মনে কাজের একটা লিস্ট ছকে নেয় ও। সিকিউরিটি গার্ডের কাছ থেকে আরও কটা নম্বর জোগাড় করে নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং দেরি না করে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে। তক্ষুনি ডোর বেলটা বেজে ওঠে। মিত্রা দরজার দিকে এগোয়। দরজা খুলতেই দ্যাখে সামনে দাঁড়িয়ে মাঝবয়সি একটি মহিলা। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সুতির ছাপা একটি শাড়ি পরনে। গায়ের রং শ্যামলা এবং ছিপছিপে শরীর।
মিত্রাকে দেখে মহিলাটি হাত তুলে নমস্কার জানাল। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই মিত্রার জিজ্ঞাসু এবং উৎসুক মুখ দেখে মহিলাটি বলল, ‘ম্যাডাম, আমার নাম শ্যামা। থাকার জন্য আমার ঘরের খুব দরকার। আপনি লোক খুঁজছেন কাজের জন্য। আমি এখানে কাজ করতে রাজি আছি। আমার স্বামী তিনবছর আগে মারা গেছে, দুটো মেয়ে আছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। পাশেই বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। আগে অনেক বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কাজ করতাম কিন্তু এখন আর পারি না। এখন একটা বাড়িতে থেকে সেখানেই রাত-দিনের কাজ করতে চাই। এটুকু বলতে পারি আমাকে নিয়ে বা আমার কাজ নিয়ে আপনাকে নালিশ করতে হবে না। সারাদিন পরিশ্রম করতে আমার কোনও অসুবিধা নেই।’
মহিলাটির কথাবার্তা শুনে, মিত্রার মহিলাটিকে ভালোই মনে হল, তবে কয়েকটা প্রশ্ন আগে থেকে জিজ্ঞেস করে নেওয়াটা উচিত মনে হল মিত্রার। জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি জানো, এখানে সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে থাকতে হলে, তোমাকে কম টাকায় বাড়ির কাজ করতে হবে? তাহলে তোমার মাসে চলবে কী করে?’
‘সে চিন্তা নেই ম্যাডাম। ছয় মাস বাদে বাদে গ্রাম থেকে আমার চাল, ডাল গম সব আসে। গ্রামে আমাদের জমিজমা কিছু আছে। এছাড়া আমার দুই জামাইও খুব ভালো। টাকাপয়সা দিয়ে ওরা সবসময় আমাকে সাহায্য করে। আমার শুধু থাকার জন্য ঘরের খুব দরকার।’
‘ঠিক আছে, তুমি কবে থেকে আসতে পারবে? মিত্রা জিজ্ঞেস করল।’
‘ম্যাডাম, কাল বাদে পরশু সকালেই আমি জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসব’, বলে শ্যামা চলে গেল। মিত্রাও দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসতে আসতে অনেকটা হালকা বোধ করল। মহিলাটি একাই থাকবে সুতরাং ওর নিজের ঝামেলা খুব একটা থাকবে না, ফলে মিত্রার সংসারে ও ভালোমতোই সময় দিতে পারবে। শংকরকে ফোন করে সুখবরটা দিতে হবে ভেবে মিত্রা মুঠোফোনটা হাতে তুলে নিল।
একদিন পরই শ্যামা নিজের জিনিসপত্র নিয়ে মিত্রার কাছে হাজির হল। মিত্রা সার্ভেন্ট কোয়ার্টারের চাবি খুলে দিয়ে শ্যামার হাতে চাবিটা ধরিয়ে দিল। হাতমুখ ধুয়ে জিনিসপত্র রেখে শ্যামা মিত্রার ফ্ল্যাটে চলে এল এবং বাড়ির সব কাজ বুঝে নিল। শ্যামার গোছালো কাজ দেখে মিত্রা নিশ্চিন্ত বোধ করল এবং নিজের চাকরির জন্য খোঁজখবর নিতে শুরু করে দিল। দেখতে দেখতে একটা মাসের মধ্যে তিনটে ইন্টারভিউ দেওয়া হয়ে গেল মিত্রার। মাস কাটতেই হঠাৎই শ্যামার ব্যবহারে কিছু অসংগতি মিত্রার চোখে ধরা পড়তে আরম্ভ করল।
গ্রামের থেকে চাল, ডাল, গম আসে, শ্যামার কাছে এই গল্প প্রথমে বিশ্বাসই করেছিল মিত্রা। কিন্তু রোজ রোজ যখন জিনিস চাওয়া আরম্ভ করল শ্যামা তখনই মিত্রার সন্দেহ হওয়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে সাহস বাড়তে থাকে শ্যামার। মিত্রাকে কিছু না জানিয়েই রান্নাঘর থেকে চাল, আটা, ডাল, ফ্রিজ থেকে দুধ, সবজি নিয়ে যেতে আরম্ভ করল ও।
একদিন মিত্রা এই নিয়ে একটু চ্যাঁচামেচি করতেই শ্যামাও গলার জোর বাড়াল, ‘আমি কি চুরি করেছি নাকি? আপনার সামনেই তো বার করেছি। এখানে কাজ করছি আর গ্রাম থেকেও এখনও কেউ চাল, ডাল দিতে আসেনি। এই অবস্থায় আপনার থেকে নেব না তো আর কোথায় যাব?’
মিত্রা রাগের মাথায় আর কিছু না বলে চুপ করে গেল।
কিন্তু ধীরে ধীরে শ্যামার চাহিদা বাড়তে আরম্ভ করল। কখনও বিছানায় পাতার জন্য চাদর চেয়ে বসে আবার কখনও কোথাও যাওয়ার দরকার হলে মিত্রার থেকে শাড়ি চেয়ে বসে। শুধু চাওয়া নয়, প্রতিটা কথায় মিত্রার আচার আচরণ নিয়ে টিটকিরি দেওয়া শুরু করে দিল। কখনও মিত্রা সিঁদুর পরে না বলে কথা শোনাত তো কখনও বাড়িতে পুজোপাঠ করে না বলে তাচ্ছিল্য করা শুরু করে দিল। অথচ কাজের কথা মিত্রা কিছু বললে, না-শোনার ভান করত। টাকাপয়সাও মাঝেমধ্যেই চাওয়া শুরু করল। মিত্রা দিতে না চাইলে মেজাজ দেখিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেত শ্যামা। মিত্রার কাছে সব শুনে শংকর ওকে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও মিত্রা কিছুতেই মনস্থির করতে পারছিল না শ্যামাকে নিয়ে ও কী করবে।
একদিন ফোনে যখন ব্যস্ত মিত্রা, ডোরবেল বেজে ওঠে। শ্যামাকে ডেকে দরজাটা খুলে কে এসেছে দেখতে বলে মিত্রা। ঝনঝন করে রান্নাঘর থেকে বাসন পড়ার শব্দ পায়। মিত্রা বুঝতে পারে দরজা খুলতে বলায় শ্যামা রেগে বেসিনে বাসন ছুঁড়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেছে। বিরক্ত বোধ করে মিত্রা। সঙ্গে সঙ্গেই একটা প্যাকেট হাতে করে নিয়ে উপস্থিত হয় শ্যামা। ‘নিন, ধরুন, দরজাটা আপনিও তো খুলে দিতে পারতেন… এই ভাবে কাজই তো শেষ করতে পারব না… সারাদিনটা কি এখানেই কাটাব আমি?’
রাগ সামলে প্যাকেট খোলায় মন দেয় মিত্রা। অনলাইনে বুক করা নতুন জুতোটা পাঠিয়েছে। প্যাকেট খুলতেই নতুন জুতো দেখে শ্যামা চুপ থাকতে পারে না, ‘বাবাঃ, শু-র্যাক-টা তো আগে থেকেই উপচে পড়ছে, আবার একটা জুতো কিনলেন? একেবারে বাজে খরচা। এর জন্য আপনাদের কাছে টাকা রয়েছে আর আমরা গরিব মানুষরা একটা জিনিস নিলেই আপনাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়।’
শ্যামার স্পর্ধা দেখে মিত্রা অবাক হয়ে গেল। কয়েক মাসের মধ্যে শ্যামার চরিত্রের এই পরিবর্তন মিত্রার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে মিত্রা, শ্যামাকে কাজ থেকে বরখাস্ত করে দিল আর চার ঘণ্টা সময় দিল কোয়ার্টার ছেড়ে দেবার জন্য।
শ্যামাও রাগ দেখাতে ছাড়ল না, ‘দরকার নেই আমার এরকম কাজের। আমি মেয়ে জামাইয়ের কাছে আরামে থাকব… লোক রেখে দেখুনই না… বুঝতে পারবেন’, বলে দুড়দাড় করে কোয়ার্টারে ঢুকে গেল। খানিক্ষণ পরেই মেয়ে, জামাই এসে শ্যামাকে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় মিত্রা, কোয়ার্টারের চাবিটা ওদের কাছ থেকে চেয়ে নিল।
রাগের মাথায় শ্যামাকে ছাড়িয়ে দিয়ে আর এতগুলো কথা বলে বড়ো ক্লান্ত অনুভব করছিল মিত্রা। বাড়ির পড়ে থাকা সমস্ত কাজ সেরে মিত্রা একটু গড়িয়ে নিতে বিছানায় এসে বসে। ক্লান্ত শরীরে কখন যে চোখ বুজে এসেছিল ও নিজেও বুঝতে পারেনি। দরজায় ধাক্বা শুনে ঘুমটা ভাঙে ওর। বাইরেটা বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। শংকরের ফেরার সময় তো এখনও হয়নি। তবে কে এল এই অসময়ে? উঠতে ইচ্ছে করছিল না, জোর করে উঠল।
দরজা খুলে দেখল তেইশ-চব্বিশ বছরের একজন যুবতি মেয়ে। দেখে মনে হচ্ছিল নতুন বিয়ে হয়েছে বেশ হাসি মুখ। পাশেই দাঁড়িয়ে একটি যুবক। মিত্রার মনে হল মেয়েটির স্বামী নিশ্চয়ই।
‘দিদি, আমার নাম সীমা, এ হল রানা… আমার… আমি কাজের জন্য এসেছি।’
ছেলেটি হাতজোড় করে মিত্রাকে নমস্কার জানাল। দুজনের মুখের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মিত্রা জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কী করে জানলে আমি কাজের জন্য লোক খুঁজছি? আমার লোক তো আজ সকালেই ছেড়ে গেছে। আমি তো এখনও কাউকে কিছু জানাইনি পর্যন্ত’, কথা শেষ করে মিত্রা দুজনকে ভিতরে এসে কথা বলার জন্য ইশারা করল। দুজনে ভিতরে এসে দরজার গা ঘেঁষে দাঁড়াল।
‘দিদি, আপনার কাছে আমার পিসি এতদিন কাজ করছিল। আজকে রেগে গিয়ে আপনাকে কী বলেছে জানি না কিন্তু বাড়ি গিয়ে নিজেকেই দোষারোপ করছিল। পিসি খুব ভালো করেই জানে ওকে আপনি আর কাজে নেবেন না তাই আমাকে এখানে কাজের কথা বলল’ সীমা মিত্রার উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগল।
‘ও… তাই বলো! তোমাকে তাহলে শ্যামা আমার কাছে পাঠিয়েছে? তুমি পারবে সব কাজকর্ম ঠিক করে করতে?’ মেয়েটির ব্যবহার মিত্রার ঠিকই মনে হল অগত্যা মেয়েটিকে কাজে বহাল করার কথা ঠিক করে নিল মিত্রা।
‘দিদি, আমি এই হাউজিং-এ আমার ভাসুর-জায়ের সঙ্গে সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে থাকি, বাইরের একটা কাজও করি… কিন্তু দিদি থাকার খুব অসুবিধে হচ্ছে। আমার জায়ের দুটো বাচ্চা সঙ্গে আবার আমরা দুজন। একটা ঘরে গাদাগাদি করে কোনওমতে থাকা। এখানে আপনার কাছে কাজ করলে থাকার অসুবিধে থাকবে না। এবার যদি আপনি আমাকে রাখেন।’
সীমাকে রাখার সিদ্ধান্ত আগেই মনে মনে নিয়ে নিয়েছিল মিত্রা। সুতরাং মুখে বলল ‘ঠিক আছে, তোমরা তাহলে চলে এসো। যখন আসবে চাবিটা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিও।’
রাত্তিরেই একটা খাট আর কিছু জামাকাপড় নিয়ে সীমা, রানার সঙ্গে মিত্রার সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে চলে এল।
পরের দিন সকালেই রানা নিজের কাজে চলে গেলে সীমা মিত্রাদের ফ্ল্যাটে চলে এল। মিত্রার কাছ থেকে সব কাজ বুঝে নিয়ে মিত্রাকে জোর করে বসিয়ে দিল, ‘দিদি, আপনি বসে থাকুন, আমি সব কাজ করে দেব। যদি মনে হয় কাজটা ঠিকমতো হয়নি তাহলে আমাকে ডেকে শুধু বলে দেবেন।’
রবিবার সাধারণত সীমা, অর্ধেক দিনের ছুটি চেয়ে নিত মিত্রার কাছে। দুপুরে কাজ সেরে বরের সঙ্গে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যেত ও। কখনও সিনেমা দেখতে, কখনও এমনি ঘুরতে অথবা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িও যেত ওরা। কখনও কখনও বেরোত যখন, মিত্রার চোখেও পড়ত। সীমার সাজগোজ দেখে মিত্রার একটু অবাকই লাগত কারণ ইমিটেশন গয়না থেকে মেক-আপ, পোশাক-আশাক কিছুতেই কোনও খামতি ওর চোখে পড়ত না। এত সব করার টাকা কোথা থেকে আসে বুঝতে পারত না মিত্রা।
মিত্রা যখনই এ বিষয়ে সীমার সঙ্গে কথা বলত, একই উত্তর শুনত, ‘দিদি, আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে… ও সেজেগুজে থাকা খুব পছন্দ করে। সাজগোজের বেশিরভাগ জিনিসই তো ওই কিনে আনে।’
বেশি মাথা ঘামায়নি মিত্রা এই নিয়ে। এটা ওদের ব্যক্তিগত জীবন, যতক্ষণ বাড়ির কাজ ঠিকমতো হয়ে যাচ্ছে এইসব ব্যাপারে মাথা ঘামাবার কোনও কারণ নেই মিত্রার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাকরি খুঁজে জয়েন করাটাই মিত্রার লক্ষ্য। এই নিয়েই আপাতত ও ব্যস্ত থাকতে চায়।
ল্যাপটপ-টা খুলে মেলগুলো চেক করতে বসে মিত্রা। হতাশ হয়, কোনও মেল ঢোকেনি দেখে। কী করবে ভেবে না পেয়ে অনলাইন শপিং সাইটগুলো একটার পর একটা দেখতে শুরু করে। অবসাদ কাটাবার একমাত্র উপায় শপিং, সুতরাং তাতেই মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে সে। হঠাৎ চোখ আটকায় একটা কুর্তা দেখে। কিনলে বেশ খানিকটা রিবেট পাওয়া যাবে দেখে প্লাস্টিক কার্ডটা নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। মনে করার চেষ্টা করে পার্সটা কোথায় রেখেছে। খেয়াল হয় কাল থেকে ড্রয়িংরুমের টিভির পাশেই পড়ে রয়েছে পার্সটা। তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু ঘরে ঢুকেই যে দৃশ্য চোখে পড়ে, তা দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে মিত্রা। সীমা সোফায় গা এলিয়ে বসে মিত্রার পার্সটা নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করছে। সীমার পিঠ মিত্রার দিকে থাকায় ও মিত্রাকে দেখতে পায়নি। মিত্রা সোফা অবধি পৌঁছোতে পৌঁছোতে সীমা পার্স থেকে টাকা বার করে ব্লাউজের ভিতর ঢুকিয়ে নেয়। মিত্রাও বিন্দুমাত্র শব্দ না করে পিছন থেকে সীমার হাতটা ধরে ফেলে। চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়াতে সীমা ঘাবড়ে যায়।
‘দিদি, তুমি!’ মিত্রার মুখ-চোখ দেখে সীমা তোতলাতে থাকে, ‘আমা…কে ক্ষমা করে দাও। আমি কখনও চুরি করি না… আজ শরীরটা ঠিক নেই তাই ডাক্তার দেখাতে যাব… টাকার দরকার ছিল, তাই এই টাকাটা… আর কখনও হবে না দিদি’। ব্লাউজের ভিতর থেকে পাঁচশোর নোটটা বার করতে করতে সীমা বলে।
‘তোমার শরীর খারাপ? কিন্তু সকাল থেকে তো দেখে কিছু মনে হয়নি, বরং আনন্দেই আছ বলে মনে হচ্ছিল। এখন বুঝতে পারছি বাথরুম থেকে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার কীভাবে এত তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে? কয়েকটা লিপস্টিকও আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তারপর তো আরও আছে, মাঝেমধ্যেই কাজ করতে করতে কোয়ার্টারে চলে যাও… এখন বুঝতে পারছি যাওয়ার কারণ। আমি আর কিছু জানতে চাই না। তোমাকে আর কাজ করতে হবে না। যত তাড়াতাড়ি পারো কোয়ার্টার খালি করে দাও’, রাগে আর কথা বলতে পারে না মিত্রা। ইচ্ছে হয় এখুনি পুলিশ ডেকে সীমাকে ওদের হাতে তুলে দিতে।
সন্ধেবেলায় শংকর বাড়ি ফেরার পরেই সীমা এসে কোয়ার্টারের চাবি মিত্রাকে ধরিয়ে গেল। চুপচাপ স্বামী-স্ত্রী জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যায়।
আবার সেই কাজের লোকের সমস্যা। মিত্রা মুষড়ে পড়ল তবুও প্রতিজ্ঞা করল এবার আর কোনওরকম তাড়াহুড়ো করবে না। দেখেশুনে তবেই বাড়িতে কাজের লোক ঢোকাবে। সিকিউরিটি গার্ডকেও ফোন করে একটু চেনাশোনা লোকের খোঁজ করতে অনুরোধ করল।
রবিবার শংকরের অফিস ছুটি, ফলে উঠতে একটু দেরিই হয়েছে। মুখ ধুয়ে চা বানিয়ে মিত্রা শোবার ঘরে ঢোকে। শংকর তখনও বিছানা ছাড়েনি। বেডসাইড টেবিলে চায়ের ট্রে টা নামিয়ে বিছানায় গুছিয়ে বসে মিত্রা। কাপটা এগিয়ে দেয় শংকরের দিকে। এই একটা দিনই শংকরের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে পারে মিত্রা। নয়তো রোজই তো সকালে উঠেই অফিস যাওয়ার তাড়া। আর প্রাইভেট চাকরিতে ফেরার কোনও ঠিক নেই।
সবে গল্প করতে করতে চায়ের কাপটা শেষ করেছে, এমন সময় কলিং বেলটা কারও আসার বার্তা জানায়। এই সময় কে রে বাবা! অজান্তেই ঘড়ির দিকে চোখটা চলে যায় মিত্রার। সবে আটটা বাজছে।
বিরক্ত হয়েই বিছানা ছেড়ে দরজার দিকে পা বাড়ায় ও। হয়তো সিকিউরিটি গার্ড কাউকে পাঠিয়েছে সকাল সকাল, ভেবে খানিকটা স্বস্তি অনুভব করে মিত্রা।
দরজা খুলতেই দ্যাখে সামনে দাঁড়িয়ে পঁয়ষট্টি-সত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধ দম্পতি। সঙ্গে রয়েছে ছোটোখাটো চেহারার কুড়ি-একুশ বছরের একটি যুবতি।
মিত্রাকে দেখতেই বৃদ্ধটি হাতজোড় করে বলে, ‘ম্যাডাম, আমি রিটায়ার্ড সরকারি চাপরাশি। বহুদিন ধরে কৈলাশ কলোনিতে একটি ফ্যামিলির সঙ্গে রয়েছি। আমার বউ আগে ওখানে কাজ করত এখন বয়স হয়ে যাওয়াতে আমার এই নাতনি ওদের সব কাজ করে।’
‘আচ্ছা এটি আপনার নাতনি?’ মিত্রা প্রশ্ন করে।
‘হ্যাঁ ম্যাডাম। আমরা ওই সাহেবের বাড়ির সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে এতদিন ধরে রয়েছি। এই মাসে ওই সাহেব দিল্লির বাইরে বদলি হয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং আমাদেরও কোয়ার্টার ছাড়তে হবে। শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকার ক্ষমতা নেই আমাদের। আমার পেনশনে সংসারটা চলে কোনওরকমে। তাই এখানে কোয়ার্টার পাওয়া যাবে শুনেই আমি এসেছি।’
‘আপনাদের ছেলে, ছেলের বউ কোথায় থাকে? নাতনি তো দেখছি আপনাদের সঙ্গেই থাকে।’
‘ম্যাডাম, আমাদের ভাগ্যের কথা আর বলবেন না। মেয়েটির জন্মের সময়ই ওর মা মারা যায়। কয়েক বছর বাদেই মাত্র কয়েকদিনের জ্বরে আমার ছেলে…’ বলতে বলতে বৃদ্ধের গলা
ধরে আসে।
‘আপনাদের নাম কী’, মিত্রা জানতে চায়।
‘আমার নাম রতন আর আমার স্ত্রী সারদা। নাতনির নাম ওর বাবাই রেখেছিল রেশমি।’
‘একটু দাঁড়ান, আমি আসছি’, বলে মিত্রা শোবার ঘরে এসে ঢোকে। শংকর ততক্ষণে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে। শংকরকে রতনের সম্পর্কে সব বলে মিত্রা। দুজনেরই মনে হয় ওদের সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে রাখলে কোনওরকম অসুবিধায় পড়তে হবে না। বৃদ্ধের কথায় মিত্রা বুঝে গিয়েছিল রেশমিই ওর কাছে কাজ করবে। সুতরাং বাইরে এসে মিত্রা ওদের জানিয়ে দেয়, ওদের কাজে বহাল করতে ও রাজি।
সন্ধের আগেই রতন, স্ত্রী এবং নাতনিকে নিয়ে মিত্রার কাছে হাজির হল। মিত্রা কোয়ার্টারের দরজা খুলে দিয়ে ওদের সবকিছু বুঝিয়ে দিল। মিত্রার মনেও সামান্য আশার সঞ্চার হল, ওর মনে হল এবারটা শ্চিয়ই ওর কাজের লোকের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে।
পরের দিন দরজা খুলতেই সকালে, মিত্রা দেখে রতন আর সারদা দরজায় দাঁড়িয়ে। কী ব্যাপার জিজ্ঞেস করতেই রতন জানায়, ‘ম্যাডাম, রেশমির জ্বর এসেছে। ওর বদলে আমরা দুজন মিলে কয়েকদিন আপনার কাজ করে দেব।’
বয়স্ক মানুষকে দিয়ে কাজ করাতে মিত্রার খুবই খারাপ লাগছিল কিন্তু ওর কাছে কোনও উপায়ও ছিল না। ওদের কাজটাও ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না মিত্রার।
দু সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও যখন রেশমি কাজ করতে এল না, মিত্রার সন্দেহ হতে লাগল, ওরা মিথ্যা কথা বলে কোয়ার্টার পাওয়ার লোভে এখানে ঢোকেনি তো? মেয়েটা হয়তো অন্য কোনও বাড়ির কাজ ধরেছে।
এইভাবে তো চলতে পারে না, এই ভেবে মিত্রা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে কোয়ার্টারের দরজায় কড়া নাড়ল। রতন আর সারদা তখন মিত্রার ফ্ল্যাটে কাজ করছিল। দরজার কড়া নাড়তেই রেশমি এসে দরজা খুলে দিল। মিত্রার ওকে দেখে এতটুকুও অসুস্থ বলে মনে হল না।
‘তুমি তো দেখছি দিব্যি সুস্থ আছ, তাহলে কাজে আসছ না কেন?’ মিত্রা জানতে চাইল।
‘না… মানে… আমার…. আমি একটু….’ রেশমি তোতলাতে থাকে।
মিত্রা কথা না বাড়িয়ে নিজের ফ্ল্যাটে এসে দরজা বন্ধ করতে যাবে, চোখে পড়ল তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের একটি লোক রতনদের কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে লিফটের দিকে যাচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে গেল মিত্রা। ওদের কাছে কোনও আত্মীয়স্বজনের কথা মিত্রা তো কিছু শোনেনি। তাহলে পুরুষটি কে হতে পারে? চোরের মতন লুকিয়ে পড়ারই বা কী দরকার বুঝে পেল না মিত্রা। কিন্তু মিত্রা মনে মনে স্থির করে নিল, এই রহস্যের অনুসন্ধান ওকে করতেই হবে।
লক্ষ্য রাখা শুরু করল মিত্রা। রতন আর সারদা কাজ করতে সকালেই এসে যেত। ওরা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেই মিত্রা খেয়াল করত, প্রত্যেকদিনই আলাদা আলাদা পুরুষমানুষ কোয়ার্টারে আসছে। মিত্রা, কয়েকদিন পর পর নতুন নতুন পুরুষকে কোয়ার্টারে আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেল, ওখানে এরা দেহব্যাবসা ফেঁদে বসেনি তো? শংকরকে জানানোটা সবথেকে আগে দরকার।
একদিন বাড়ি ফিরে আসার পর মিত্রা শংকরকে সবকিছু খুলে বলল। শংকর সব শুনে প্রচণ্ড রেগে গেল, ‘প্রথম দিনই তোমার আমাকে সব খুলে বলা উচিত ছিল। এতগুলো দিন হয়ে গেল। কিন্তু দোষ চাপালেই তো হবে না! হাতেনাতে ওদের ধরতে হবে। তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখো। হতে পারে এটা একটা র্যাকেট।’
পরের দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে শংকর বাড়িতেই থেকে গেল। রোজের মতোই রতন আর সারদা এসে কাজে লেগে পড়ল। মিত্রা আগেই নিজেকে তৈরি রেখেছিল, ওদের কাজের মাঝেই মিত্রা জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার রতনদা? আপনার নাতনির অসুখ এতদিনেও ঠিক হল না? আপনারা আমাকে গাধা ভেবেছেন? আজ আমি সত্যিটা না জেনে ছাড়ছি না।’
কথার মাঝেই শংকরও এসে দাঁড়াল মিত্রার পাশে, ‘হ্যাঁ, রতনদা আজকে উত্তর তো তোমাকে দিতেই হবে। আর একবার আমার সঙ্গে তোমাদের কোয়ার্টারে চলো। আমি একটা ছোটো আলমারি ওখানে রাখব। জায়গাটা তাই আমি আগে একটু দেখে নিতে চাই।’
‘কিন্তু সাহেব… এখুনি…’, রতনের কিন্তু কিন্তু ভাব দেখে শংকর ধমক দিয়ে উঠল জোরে।
শান্ত স্বভাবের শংকরের অগ্নিমূর্তি দেখে রতন ভয় পেয়ে গেল। সারদা ভয়ে রতনের হাত জড়িয়ে ধরল, ‘তুমি এনাদের সব কথা বলে দাও… এভাবে আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
ততক্ষণে রতন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছে। ও বলতে শুরু করে, ‘সাহেব, আমরা মিথ্যা বলেছিলাম, রেশমির বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের জামাই খুব বাজে লোক। সবসময় মদ খেয়ে থাকে। যখন বিয়ে হয় জামাইয়ের একটা ছোটো চায়ের দোকান ছিল। বিয়ের পর আমাদের মেয়ের যে-কটা গয়না ছিল সব বিক্রি করে দিল। যখন দোকানটাও বিক্রি করে দিল তখন রেশমিকে দিয়ে খারাপ খারাপ কাজ করাত। আমরা মেয়েটাকে নিজেদের বাড়ি নিয়ে আসি কিন্তু সেখানেও সে আমাদের পিছু ছাড়ল না। ওখানেও লোক পাঠাত জামাই। আপনাদের এখানে কোয়ার্টার পেতেই একরকম লুকিয়েই এখানে পালিয়ে আসি… কিন্তু এখানকার ঠিকানাও ও কী করে জোগাড় করল জানি না, এখানেও লোক পাঠানো…’, চোখের জল আর ধরে রাখতে পারে না রতন।
‘পুলিশে জানাওনি কেন’, শংকর প্রশ্ন করে।
‘ও শাসিয়ে গিয়েছিল, পুলিশে জানালে আমাদের মেয়েটাকে মেরে দেবে’, ভীত রতন স্বীকার করে।
‘ভাবা যায়, মাত্র একটা লোক এতগুলো মানুষকে ভয় দেখিয়ে খারাপ কাজ করাতে বাধ্য করছে?’ শংকরের উক্তিটা মিত্রার উদ্দেশ্যে হলেও অনেকটা স্বগতোক্তির মতোই শোনাল।
‘সাহেব, রেশমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। আমরা ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। ওই জানোয়ারটা আমাদের জীবন নরক করে তুলেছে’, করুণ শোনায় রতনের স্বর।
মুহূর্ত দেরি না করে সারদা আর রতনকে সঙ্গে নিয়ে শংকর পুলিশের কাছে রিপোর্ট লিখিয়ে আসে। পরের দিনই রেশমির স্বামীর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর আসে। খবরটা শুনেই রতনের পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। শংকর আর মিত্রা দুজনেই অনুভব করে, লজ্জা গ্লানির জীবন পিছনে ফেলে আজ এই গরিব পরিবারটি রৌদ্রজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার প্রতীক্ষায় উন্মুখ হয়ে রয়েছে।