ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে– ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডান। শুরুটা ভালো হলে অর্ধেক কাজ এগিয়ে থাকে। বিষয়টা ঠিক বাড়ির ভিত তৈরির মতো। ভিত যত ভালো হবে, বাড়ি ততই মজবুত হবে। মানবদেহকে শক্তিশালী করে তোলার বিষয়টিও ঠিক একই রকম। শৈশবে শরীরকে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি জোগালে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।

শিশুদের গ্রোথ-এর বিষয়ে অনেক মা-বাবা চিন্তিত থাকেন। কোন বয়সে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী রকম পুষ্টি জোগাতে হবে প্রভৃতি বিষয়ে সঠিক ধারণাও থাকে না অনেক অভিভাবকের। কিন্তু শারীরিক বৃদ্ধি এবং উর্বর মস্তিষ্কের জন্য সঠিক সময়ে শরীরকে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাইল্ড হেল্থ স্পেশালিস্ট (ইন্স্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এর প্রধান) ডা. জয়দেব রায় এ প্রসঙ্গে সমস্ত কৌতূহল মেটালেন সম্প্রতি।

সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরকে পুষ্টিকর খাবারের জোগান দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পর্যাপ্ত ঘুম প্রভৃতি যেমন শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য শরীরকে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের উর্বরতা, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, হাড়ের মজবুতি, মাংসপেশির গঠন প্রভৃতি বিষয়গুলির ভালোমন্দ নির্ভর করে পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়ার উপর। আর এই সবক’টি বিষয়ে সুফল মিলছে কিনা, তা মোটামুটি বোঝা যায় গ্রোথ দেখে। অর্থাৎ, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে গ্রোথ ফ্যাক্টর।

গ্রোথ-এর বিষয়টি কত বছর বয়সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

গ্রোথ-কে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত প্রথম ভাগ এবং দশ থেকে পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাগ। অর্থাৎ, শৈশবের গ্রোথ এবং বয়ঃসন্ধির গ্রোথ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি ধরা হচ্ছে দশ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে বারো বছর।

শৈশবের গ্রোথ ঠিক রাখার জন্য কী করা উচিত?

শৈশবের গ্রোথ-কেও দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। প্রথম ভাগ হল, শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ পান করে এবং দ্বিতীয় ভাগ হল, শিশু যখন মাতৃদুগ্ধ ছেড়ে খাবার খায়। প্রথম ভাগের মেয়াদ ছয় মাস এবং দ্বিতীয় ভাগের মেয়াদ কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে দশ বছর বয়স পর্যন্ত আর পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে বারো বছর পর্যন্ত। প্রথম ভাগে শিশু যেহেতু মাতৃদুগ্ধ পান করে, অতএব ওই সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগাবে দুধ অর্থাৎ পরোক্ষভাবে মা। তাই মাকে ভাত, রুটি, ডাল, সবজি, দুধ ডিম প্রভৃতি সবরকম প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে হবে। দ্বিতীয় স্তরে শিশু যখন দুধ ছেড়ে খাবার খাবে তখন তাকেও খাওয়াতে হবে ওই প্রোটিনজাতীয় সবরকম খাবার। তাহলে শিশুর গ্রোথ হবে সঠিকমাত্রায়।

বয়ঃসন্ধির সময় কি বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন?

হ্যাঁ। কারণ, দ্বিতীয় ভাগের গ্রোথ অর্থাৎ বয়ঃসন্ধির সময় যেহেতু সেক্সুয়াল চেঞ্জ হয়, তাই এই সময় দ্বিগুণ পুষ্টির চাহিদা তৈরি হয় শরীরে। তবে শুধু সেক্সুয়াল নয়, এইসময় শারীরিক উচ্চতা তৈরি হয় দ্রুত, ওজন বাড়ে পঞ্চাশ শতাংশ। তাই, শৈশবের থেকে দ্বিগুণ পুষ্টি জোগাতে হয় শরীরকে। অতএব, সেকেন্ড গ্রোথ ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর জন্য শরীরকে কি পর্যাপ্ত প্রোটিন জোগান দেওয়ার প্রয়োজন হয়?

ঠিক। শুধু ভাত, ডাল, রুটি আর শাকসবজি-ই নয়, শরীরকে জোগাতে হবে কিছু অ্যানিমাল প্রোটিন। কারণ, শরীরে তখন বিভিন্ন রকম অ্যামিনো অ্যাসিড-এর চাহিদা তৈরি হয়। আর এই ‘ডিফারেন্ট টাইপ অফ অ্যামিনো অ্যাসিড’ জোগাবে অ্যানিমাল প্রোটিন।

খাদ্য তালিকায় কী কী রাখতে হবে?

চাল, গম থেকে তৈরি খাবার ছাড়াও, জোয়ার, বাজরা, দুধ, ডিম, সয়াবিন, সামুদ্রিক মাছ এবং কিছু পরিমাণ চিকেন ও মাটন রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।

কন্যা সন্তানকে কোনও বাড়তি পুষ্টি জোগানোর প্রয়োজন আছে কি?

আছে। কারণ, দশ-বারো বছর বয়স থেকেই মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল শুরু হয়ে যায়। আর এই সময় শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে আয়রনযুক্ত খাবার। এই তালিকায় রাখতে হবে কাঁচকলা, কলার মোচা, থোড়, কুলেখাড়া পাতার রস, বেদানা প্রভৃতি।

সঠিক গ্রোথ যাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই কিশোর-কিশোরীদের আর কী কী ভাবে সতর্ক থাকা উচিত?

আজকাল অনেক কিশোর-কিশোরীও মদ্যপান, ধূমপান করে কিংবা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এইসব পরিত্যাগ না করতে পারলে সমূহ বিপদ! আটকে যাবে গ্রোথ, শরীরে বাসা বাঁধবে নানারকম রোগ। আর এই গ্রোথ প্রসঙ্গে যা জানানো জরুরি, তা হল– শরীরকে প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন প্রভৃতি জোগান দেওয়ার পাশাপাশি, পান করতে হবে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জল। কারণ, হজম করানোয় এবং শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে জল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...