করোনার আবহ আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।তাই এখনও আমরা এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আর এই পরিস্থিতি আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন সূচিত করেছে। কেউ এখন কর্মহীন, কেউ-বা আবার কোনও রকমে নিজের কাজ টিকিয়ে রেখেছেন। অনেক সংস্থা খরচ বাঁচানোর জন্য অফিস বন্ধ করে কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে নির্দেশ দিয়েছে। আবার বেতন কমে যাওয়ার কারণে অনেকক্ষেত্রে কর্মীরাও মালিকপক্ষকে আনুরোধ করে ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর ব্যবস্থা করেছেন। অর্থাৎ, আয় আনুযায়ী ব্যয়ের রাস্তা বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার এক অঘোষিত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সব্বাই।
এই নতুন পথে চলতে গিয়ে কিছু বাধা-বিপত্তির মুখোমুখিও হতে হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি প্রধান সমস্যা হল শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা। আর এসবের মূল কারণ হল, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং কিছু বেনিয়ম। তবে ভয় নেই। বিশেষজ্ঞের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চললেই, সমস্যামুক্ত হওয়া সম্ভব। এর জন্য যা যা করতে হবে, তারই বিবরণ রইল বিশদে।
রুটিন ঠিক রাখুন : বাড়িতে থেকে কাজ করছেন মানে এই নয় যে, আপনি সময়ে তোয়াক্কা না করে, যখন খুশি খাবেন, যখন খুশি শোবেন আর যখন খুশি কাজ করবেন! এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শরীর একটা মেশিনের মতো। মেশিনের যত্ন সঠিক ভাবে না নিলে যেমন মেশিন বিগড়ে যায়, তেমনই অবহেলা করলে শরীরও খারাপ হতে বাধ্য। অতএব, অফিস যখন যেতেন, তখন খাওয়া, ঘুমোনো কিংবা শরীরচর্চা যেমন করতেন, বাড়িতে থেকে কাজ করেও একই রুটিন মেনে চলুন।
ওয়ার্কআউট করুন নিয়মিত : মর্নিংওয়াক-এর চেয়ে ভালো এক্সারসাইজ আর হয় না। পারলে কুড়ি মিনিট জগিং করুন। সেইসঙ্গে, দশটা পুশ-আপ এবং কুড়িটা স্কোয়াট। এই পদ্ধতিতে শরীরের ওজন আয়ত্তে থাকবে। তবে ওভার ওয়ার্কআউট এড়িয়ে চলুন। এর ফলে চোট-আঘাত লাগতে পারে। এছাড়া আপনার শরীরের ব্যায়ামেরও যেমন প্রয়োজন আছে, বিশ্রামেরও ঠিক ততটাই দরকার। কিন্তু, খালি পেটে ব্যায়াম করবেন না। ব্যায়ামের জন্যও শরীরের পুষ্টির দরকার, তবেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবেন ওয়ার্কআউট করার জন্য।
মনে রাখবেন, পেটে যদি একেবারেই খাবার না থাকে এবং সেই অবস্থায় এক্সারসাইজ চালিয়ে যান, তাহলে অচিরেই পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে একই এক্সারসাইজ দীর্ঘদিন করবেন না। এর ফলে শরীর একই ফর্ম-এ অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন আর সুফল পাবেন না। আর ওয়ার্কআউট শেষ করার আগে, অবশ্যই কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন। এতে শরীর ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ পাবে।
পোস্ট এক্সারসাইজ-এ আপনার হার্টবিট-ও স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেইসঙ্গে, মাসলগুলি আগের অবস্থায় ফিরে এসে রিলাক্সড হবে।
ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি কাটান : সকালে শরীরচর্চার পর হালকা মেলোডি গান শুনুন, সারাদিন মন ভালো থাকবে। আগের রাতে ঠিক করে রাখুন, পরের দিন কোন কাজটা কীভাবে এবং কখন করবেন। যতটুকু সময় কাজ করবেন, মনযোগ সহকারে করবেন। এর ফলে কাজে ভুল হবে না এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
কাজের জায়গা এবং ব্রেক : অফিসের মতো বাড়িতেও কাজের জন্য চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করুন। এতে, শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা হবে না। আর, বাড়িতে হই-হট্টগোল এড়াতে, দরজা বন্ধ রাখতে পারেন কিন্তু জানলা খোলা রাখবেন। এতে আলো-হাওয়া পাবেন পর্যাপ্ত এবং মন হালকা থাকবে। কাজের মধ্যে ব্রেক নেওয়া জরুরি। কারণ, একটানা কাজ করলে একঘেয়েমি এবং বিরক্তি তৈরি হতে পারে। তাই, কাজ থেকে মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়ে হাঁটাচলা করুন।
আপনজনের সঙ্গে কথা বলুন : বাড়িতে একা একা বসে একটানা কাজ করলে মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে। তাই, সময় পেলেই পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন, হাসি-মজা করুন। দূরভাষে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলে মন হালকা রাখুন। তবে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। এতে মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে। তাই, কথা বলুন অল্প সময়ে জন্য।
খাদ্য এবং পানীয় : বাড়িতে থেকে কাজ করলে যেহেতু অনিবার্য ভাবে পরিশ্রম এবং হাঁটাচলা কিছুটা কমে যায়, তাই খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বেশি তেলমশলা-যুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না। সেইসঙ্গে, খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে টাটকা শাকসবজি। স্যালাড এবং ফলও খেতে হবে নিয়মিত। খাবার খাওয়ার সময়টাও ঠিক রাখতে হবে।
ব্রেকফাস্ট স্কিপ করবেন না। চেষ্টা করুন ব্রেকফাস্ট ৩০০ ক্যালোরির মধ্যে রাখতে। এতে ফাইবার আর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। স্যান্ডউইচ বা টোস্ট-এ সাধারণ মাখনের বদলে পি-নাট বাটার ব্যবহার করুন। এটা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে এবং বারবার খাওয়ার হ্যাবিট থেকে বেরোতে পারবেন। আর, প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল পান করতে হবে। চা, কফি পানের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বন্ধ করতে হবে ধূমপান ও মদ্যপান।
স্নান এবং ঘুম : শীতকাল হোক আর গরমকাল, স্নান করতে হবে সম্পূর্ণ। প্রয়োজনে হালকা গরম জল ব্যবহার করুন শীতকালে। সেইসঙ্গে, রাতে দশটার মধ্যে ঘুমোতে যেতে হবে এবং অন্তত আট ঘন্টা ঘুমোতে হবে প্রতিদিন। আর ঘুমোনোর এক ঘন্টা আগে থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।