প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে শরীর গঠন করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই প্রথমেই সাহায্য নিন একজন ডায়েটিশিয়ানের এবং প্রয়োজনে একজন ফিটনেস এক্সপার্ট-এর। সাম্প্রতিক সময়ে কমনীয় সুডৌল শরীর গড়ার আশায় অনেকেই ওয়েট লস বা ইঞ্চ লস করতে ব্যস্ত। ডায়েট, এক্সারসাইজ করেও যখন মনমতো সুফল পাচ্ছেন না– তখন অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন প্লাস্টিক সার্জনের। আসল ব্যাপারটা হল যে-কোনও প্রকারে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার একটা চেষ্টা চলছে।
আজকাল বাজারে লো সুগার ও লো ক্যালোরি -যুক্ত কিছু ফুড সাপ্লিমেন্টস্ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রয়োগ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন সেগুলির সুফল সম্পর্কে। ফিটনেস ম্যানেজমেন্ট-এর প্রথম শর্ত হল ডায়েট ম্যানেজমেন্ট। আর সেটা হওয়া উচিত নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে।
কম খাওয়ার কুফল
প্রত্যেক শরীরের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন আছে। কম পরিশ্রম করলে কম খাবার তথা বেশি পরিশ্রমী শরীরের জন্য হাই ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। ক্যালোরির এই চাহিদাও বয়স অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ওজন যে-গতিতে বাড়ে, সেই গতিতেই তাকে কমতে দেওয়া উচিত। অযথা ক্র্যাশ ডায়েটিং করলেই তৎক্ষণাৎ ওজন কমবে এমনটা ভাবা বোকামি। ১ মাসে ২ কিলো থেকে ৪ কিলোর মধ্যে ওজন কমাতে পারেন। এতে শরীরে কোনও ক্ষতি হয় না।
আপনি যদি আপনার শারীরিক শ্রমের নিরিখে খাদ্যগ্রহণ করেন, তাহলে আপনার বাড়তি ওজন হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র কোনও শারীরিক জটিলতার কারণেই ওজন বাড়ছে বলে ধরে নিতে হবে। তাই ওজন কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণের আগে, একটা মেডিকেল চেক-আপ অবশ্যই করিয়ে নিন। দিনে ৪ গ্রামের বেশি নুন খাবেন না, চিনি থেকে আহরিত ক্যালোরির পরিমাণ ১০০ থেকে ১৫০-র মধ্যে থাকা উচিত। খাবারে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্যাট রাখাও জরুরি। ফ্যাটের পরিমাণ বাড়লে ক্যালোরিও বৃদ্ধি পায়। আমাদের শরীর এক্সট্রা ক্যালোরিকে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে মেদ বৃদ্ধি করে। ডায়েটে ১৫থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন এবং ৪০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট রাখা উচিত। চেষ্টা করুন যাতে প্রতিটি জিনিস প্রাকৃতিক ভাবে খাবারে থাকে, আর্টিফিশিয়াল বা সিন্থেটিক প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন।
ওয়েট লস ও ইঞ্চ লস
ওয়েট লস বিষয়টি শরীরের ওজনের সঙ্গে যুক্ত। আর ইঞ্চ লস-এর ক্ষেত্রে মাসল লস হয় না, শুধুই ফ্যাট লস করানো হয় বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে। এটি করার ফলে শরীর সুডৌল হয়ে ওঠে। সাধারণত দেখা যায় ৩০ পেরোলেই পুরুষ-নারী নির্বিশেষে, শরীরে মেদ জমার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই এই সময় থেকেই নিজের জীবনশৈলি ও খাওয়াদাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা শুরু করুন। বিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত যৌনক্রিয়া ক্যালোরি বার্ন করার কাজটি করে দেয়, ফলে ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফিটনেসের আরও একটি গোল্ডেন রুল হল, আনন্দে থাকা ও সাকারাত্মক চিন্তাভাবনা নিয়ে বাঁচা।
আজকালকার বাচ্চারাও এতটাই জাংক ফুড ও ফাস্ট ফুড-এ অভ্যস্ত যে, ওজন বেড়ে যাওয়াটা তাদের ক্ষেত্রেও একটা কমন সমস্যা। ওয়েফারস, চকোলেট, আইসক্রিম, সফ্ট ড্রিংক্স-এর প্রলোভন এড়িয়ে চলা কঠিন এবং এগুলোই ওজন বাড়ার মূল কারণ। তাই শুধু বড়োদের জন্যই নয়, ছোটোদের জন্যও নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট, ফলো করা একান্ত জরুরি।
আপনি যদি মাঝেমধ্যেই ডায়েট কন্ট্রোল করে ওজন কমানোর কথা ভাবেন, তাহলে জেনে রাখুন, এই পদ্ধতিটাও মোটেই সঠিক নয়। কারণ এর ফলে শরীর ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকেই প্রায় খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেন, কেউ কেউ জুস, জল প্রভৃতি খেয়ে ডায়েট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিও একেবারেই ভুল, কারণ এতে শরীরে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি। অ্যানিমিয়ার সমস্যা, ব্রিটল বোন্স প্রভৃতি নানা রোগ-অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এমনকী কিডনি ও লিভারের সমস্যাও এড়ানো যাবে না।
কেউ কেউ আবার বাজারের টিন-বন্দি খাবার খেতেই অভ্যস্ত। লেভেল-এ ফ্যাট ফ্রি, সুগার ফ্রি বা কোলেস্টেরল ফ্রি লেখা থাকলেও, বাস্তবে তা কতটা অথেনটিক সেটা ভেবে দেখার আছে। সুতরাং এই খাবারেই শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালোরির চহিদা মিটে যাচ্ছে, তা ধরে নেবেন না।
ওজন অতিরিক্ত হওয়া বা কম হওয়া দুটোই একই রকমের ক্ষতিকারক। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার শরীরের ওজন যদি আপনার দৈর্ঘ্যের তুলনায় ৩০শতাংশ কম হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা চিন্তার বিষয়। এক্ষেত্রে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামক রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগের উপসর্গ স্বরূপ খিদে না পাওয়ার সমস্যা হয়।ক্রমশ অপুষ্টিজনিত সমস্যা ঘিরে ধরে। এছাড়াও কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বন্ধ্যাত্বের মতো জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ব্যালেন্সড ডায়েট
প্রত্যেক দিনের খাবারে অবশ্যই রাখুন নির্ধারিত পরিমাণ দুধ, ঘি, মাখন, পনির, মধু, মাছ-মাংস, শুকনো মেওয়া, তাজা ফল, ভাত, সোয়াবিন, বাদাম প্রভৃতি। প্রত্যেকটিরই কিছু না কিছু গুণাগুণ আছে, যা শরীরের পক্ষে লাভদায়ক। যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করুন।প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের হিসাবে ৩০এমএল জল খাওয়া আবশ্যক।
জিমও জরুরি
স্বাস্থ্যসচেতনদের এখন রুটিনের অঙ্গ হয়ে গেছে নিয়মিত জিম বা হেল্থ ক্লাবে যাওয়া। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা ছাড়াও নির্মেদ সুডৌল শরীর বজায় রাখতে এটি একান্ত জরুরি। তবে জিমে গিয়ে অবশ্যই ট্রেনারের সাহায্য নিন। ভুল পদ্ধতিতে এক্সারসাইজ করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না৷