জীবনে সবথেকে প্রিয় মানুষটির কথা জানতে চাওয়া হলে একটা শব্দই হৃদয় ছুঁয়ে প্রতিধ্বনিত হয়, মা। সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন, স্বার্থত্যাগ এসব কিছুই সন্তানকে মাথা উঁচু করে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলতে নানা ভাবে সাহায্য করে।
এই দীর্ঘ সময়টা পেরিয়ে আসতে গিয়ে অনেক মা-ই সমাজ এবং সময়ে অগ্রগতির সঙ্গে নিজেদের ঠিক করে খাপ খাইয়ে নেওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েন। সন্তানই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে তখন। অথচ এই সন্তান যখন জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন মায়ের জন্য সময় থমকে দাঁড়িয়ে যায়। আধুনিকতার আঁচ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ফলে, নতুন নতুন আবিষ্কারের কথা একপ্রকার অজানাই থেকে যায় মায়ের জীবনে।
বাচ্চাকে সামলাতে গিয়ে প্রচুর পরিশ্রম বেড়ে যায় মায়েদের। এই পরিস্থিতিতে তাঁর কাজের সুবিধে হয় এমন কিছু উপহার দিন তাঁকে। এর ফলে সন্তানকে বড়ো করা এবং নতুন মাতৃত্বের দিনগুলোতে তাঁর জীবনযাত্রা সহজ হয়ে যাবে।
সকলেই বাড়িতে কমবেশি মা-কে আধুনিক টেকনোলজির সঙ্গে যুদ্ধ করতে দেখেন। সে মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় সেলফি তুলতে না পারা থেকে ফোন চার্জ করতে ভুলে যাওয়া, ফোন কোথায় রেখেছে মনে না থাকা, শরীর-স্বাস্থ্যের ঠিকমতো খেয়াল না রাখা এসব কিছুই মায়েদের সাধারণ সমস্যা। সুতরাং মাদার্রস ডে অথবা বুড়ি মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে এমন কিছু উপহার দিন যাতে তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজ হয়ে ওঠে।
নতুন মা হয়েছে যাঁরা তাঁদের ঘড়ি নিয়ন্ত্রিত হয় বাচ্চার দেখাশোনায় সময়ে নিরিখে। ফলে মায়েদের সকাল সকাল উঠে পড়তে হয় দৈনন্দিন কাজ সামাল দিতে। দেরি হয়ে গেলেই সমস্যা। তাই ভালো অ্যালার্ম ক্লক কিনে দিন তাঁকে যাতে সময় দেখার সঙ্গে সঙ্গে সাউন্ডও কাস্টমাইজড করতে পারবেন। সকালে উঠেই যাতে দুধ গরম করার জন্য দৌড়োতে না হয় তাই ইলেক্ট্রিক কেটল-এর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
ভারতবর্ষে মায়েরা বেশিরভাগ সময় কাটান রান্নাঘরে। বদ্ধ রান্নাঘরের ধোঁয়ায় অনেকটা সময় কাটাবার ফলে মায়ের স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব পড়ে এবং গরমেও প্রচণ্ড কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। রান্নাঘরের পরিবেশ গরম এবং ধোঁয়া ধুলোময়লা থেকে বাঁচাতে একটা মিনি ইনডোর ফ্যান-এর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। রান্নাঘরে পছন্দমতো চিমনি লাগিয়ে দিন যাতে তেল, ধোঁয়া ইত্যাদি কম হয়। এতে পরিষ্কারের ঝামেলা যেমন কমবে, তেমনি নিজেকে দেওয়ার জন্য মায়ের কাছে সময় বাঁচবে।
বাচ্চার জন্য প্রেশার কুকার, ফ্লাস্ক সব মায়েদেরই লাগে। এখন বাচ্চার ভাত ও সবজির একসঙ্গে সেদ্ধ হয়ে যায় এমন হ্যান্ডি গ্যাজেটসও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। উপহার হিসেবে এটা দারুণ কার্যকরী। এছাড়া হেলদি এবং স্মার্ট কুকিং-এর জন্য মাইক্রো আভেন এবং এয়ার ফ্রায়ার প্রতিটা রান্নাঘরে থাকাটা এখন মাস্ট হয়ে উঠেছে। এতে রান্নায় তেলের ব্যবহার অনেক কম হয়ে যাবে।
আপনার স্ত্রী যদি সদ্য মা হয়ে থাকেন, সময়ে সঙ্গে আপ-টু-ডেট করতে পুরোনো মোবাইলটার বদলে একটা নতুন স্মার্ট অ্যানড্রয়েড ফোন কিনে দিন। সেটাতে ফোন করা ছাড়াও আর কী কী সুবিধা মা পেতে পারেন, যত্ন নিয়ে শিখিয়ে দিন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ফোনটি-ই তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ এখন ফোনেই তিনি পেতে পারেন এক্সারসাইজিং অ্যাপ থেকে বাচ্চার ডায়েট চার্ট পর্যন্ত। এমনকী প্রয়োজনে বাচ্চাকে যোগাযোগ করার সুবিধাও।
সময়ে দাম সকলের কাছে। ঘড়ির শখ যদি থাকে তাহলে নতুন মা-কে স্মার্টওয়াচ কিনে উপহার দিতে পারেন। এতে শরীর ফিট রাখার অনেক ব্যবস্থা দেওয়া থাকে যেমন রানিং হেল্থ অ্যাপ্লিকেশন, ট্র্যাকিং স্টেপস, ট্র্যাকিং হার্ট রেট, স্লিপ মনিটরিং এবং আরও নানা ধরনের সেনসর রিলেটেড ফিচারস। কিছু কিছুতে আবার মোবাইলেরও অনেক সুবিধা ওই একটা ঘড়ির মধ্যেই দেওয়া থাকে। নানা অ্যাপ পেয়ে যাবেন, মেসেজ পাঠানো যাবে এবং কল রিসিভ-ও করা যাবে। ফোন নিয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার অসুবিধা থাকলে একটা ঘড়িতেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যারা বই পড়তে ভালোবাসেন সেই মায়েদের জন্য কিনডেল, হতে পারে একটি ভালো উপহার। কিন্তু বই কিনে রাখার জায়গার অভাব অথচ দেশ-বিদেশের লেখকদের বই তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। এক্ষেত্রে এই উপহারটি খুব কার্যকরী। ভারী বই বেশিক্ষণ ধরে থাকতে অসুবিধা হতে পারে আবার অত্যধিক ট্র্যাভেল করতে হওয়ার কারণে বই ক্যারি করা সবসময় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। উপহার দিতে পারেন ই-বুক রিডার। হাজারেরও বেশি ই-বুক পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে এই একটি গ্যাজেট-এর মাধ্যমেই।
বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটা সব মায়েদেরই পছন্দ তাই ভ্যাকিউম ক্লিনার, মায়ের পরিশ্রম অনেকটাই কমাতে সাহায্য করবে।
সবশেষে মায়েদের স্বাস্থ্য এবং আরাম এই দুটোর প্রয়োজন অন্য আর সব প্রয়োজনকে ছাপিয়ে ওঠে। সারাদিনের সংসারের কাজ মিটিয়ে বাইরে গিয়ে শরীর ফিট রাখতে ওয়াক করাটা হয়তো ইচ্ছের মধ্যে নাও পড়তে পারে অথবা বাইরে বেরোনো যে-কোনও কারণেই সম্ভবপর নাও হতে পারে। তাই বাড়িতে ট্রেডমিল কিনে দিতে পারেন। এতে সকাল সন্ধে মা ছাড়াও বাড়ির বাকি সদস্যরাও শরীর ফিট রাখতে কিছুটা কসরত করে নিতে পারেন।
এছাড়াও মায়েদের সারাটা দিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থেকে পরিবারের সকলের খেয়াল রাখতে হয়। সুতরাং পা-টাকে একটু আরাম দেওয়া যায় না কি? রাত্রে শোয়ার আগে যাতে আরামে ঘুমোতে যেতে পারেন তার জন্য উপহার হিসেবে কিনে দিন ফুট অ্যান্ড লেগ মাসাজার।
মায়েরা যদি আনন্দে থাকেন একটা পরিবারে খুশিও দ্বিগুন হয়ে ওঠে। তাহলে অপেক্ষা কীসের! যে-কোনও উপলক্ষ্যেই উপহারগুলির মধ্যে একটি অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন।