একটা ধারণার খুব প্রচলন আছে যে Heart attack বুঝি পুরুষদেরই বেশি হয়। তা কিন্তু কখনওই ঠিক নয়। মহিলারাও এই সম্ভাবনার বাইরে নন। সত্য এটাই যে, মহিলারাই বেশি সংখ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং এই রোগের প্রকোপে তাদের মৃত্যুর হারটাও স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ৪ জন মহিলার মধ্যে ১জন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন এ কথা যেমন সত্যি, ততটাই সত্যি এটাও যে, প্রতি ২ জন মহিলার মধ্যে ১ জন হৃদরোগের শিকার। তাই হার্ট অ্যাটাক-এর সম্ভাবনা রোধ করতে প্রথম থেকেই সজাগ ও সচেতন হওয়া উচিত।

এযুগের মহিলারা অধিকাংশই কর্মরতা, ফলে ঘরে-বাইরে নানান রকম মানসিক চাপ নিয়েই তাদের কাজ করতে হয়। এমত অবস্থায় হৃদযন্ত্র যে নির্বিঘ্নে ক্রিয়াশীল থাকবে এটা ধরে নেওয়া উচিত নয়। তবে আর-পাঁচটা জিনিসের মতোই, নিজের শরীরের ব্যাপারেও এযুগের মহিলাদের সচেতন হওয়া একান্ত ভাবে জরুরি। নিজেই যদি নিজের রোগের লক্ষণগুলি চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে হৃদরোগের সম্ভাবনা ও Heart attack প্রতিহত করাও সম্ভব হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ, পুরুষদের থেকে কিছুটা আলাদা।

হৃদরোগের লক্ষণ

 ১)  ঘাড়, কাঁধ, শিরদাঁড়া ও তলপেটে ব্যথা ও অস্বস্তির অনুভূতি

২)  দম নিতে কষ্ট

৩)  নসিয়া, বমি ভাব

৪)  অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

৫)  মাথা ঘোরা, মাথা ঝিমঝিম করা

৬)  অস্বাভাবিক ক্লান্তি

পুরুষদের ক্ষেত্রে মূল ধমনি ব্লকেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে আর্টেরি ব্লকেজই শুধু নয়, স্মল ভেসেল হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনাও থাকে। পুরুষরা যেমন ব্লকেজ-এর ফলস্বরূপ বুকে ব্যথা অনেক আগে থেকেই টের পান, মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা তেমনভাবে অনুভূত হয় না। আর এই কারণেই অসুস্থতার কারণ বুঝতে দেরি হয়ে যায়। যতক্ষণে রোগটি ধরা পড়ে, ততক্ষণে হার্ট-এর অনেকখানি ক্ষতি হয়ে গেছে। বুকে ব্যথা অনুভব না করার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক-এর শিকার হন মহিলারা। প্রায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক সাইলেন্ট-ই হয়ে থাকে। হার্ট অ্যাটাক-এর শিকার হয়েছেন এটা বুঝতে দেরি হওয়ার কারণে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয় এবং জীবনের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

কয়েকটি রিস্ক ফ্যাক্টর পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। যেমন হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার এবং ওবেসিটির সমস্যা, মহিলাদের ক্ষেত্রেও হৃদরোগের সম্ভাবনা বয়ে আনে। এছাড়াও শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, এমন কয়েকটি রিস্ক ফ্যাক্টরও রয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

মেটাবলিক সিনড্রোম – অ্যাবডোমেন-এ ফ্যাট জমা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পাওয়া এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার মতো বিষয়গুলি হূদরোগ সৃষ্টি করতে পারে।

মানসিক অবসাদ ও স্ট্রেস – ডিপ্রেশনের সমস্যাও মহিলাদের হৃদরোগের অন্যতম কারণ। মহিলারাই ডিপ্রেশন জাতীয় সমস্যার শিকার হন বেশি। এই কারণ থেকেও হার্টের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ধূমপান করা – অতিরিক্ত ধূমপান, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষতি করে বেশি এবং হৃদরোগের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।

ইস্ট্রোজেন হ্রাস পাওয়া – সাধারণত মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রায় একটা তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এই হরমোন কম পরিমাণে নিঃসৃত হলে, তা মহিলাদের ক্ষেত্রে স্মল ভেসেল হার্ট ডিজিজের প্রবণতা বৃদ্ধি করে।

শুধুমাত্র বয়স্ক মহিলাদেরই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, এমনটা ধরে নেওয়া উচিত নয়। পারিবারিক ইতিহাসে যদি এই রোগ থেকে থাকে, তাহলে ত্রিশের পর থেকে যে-কানও মহিলারই সজাগ থাকা উচিত।

হৃদরোগ ঠেকাতে

 ১)  সপ্তাহে পাঁচদিন আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা হালকা ব্যায়াম করুন

২)  ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

৩)  ধূমপান বর্জন করুন

৪)  স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও নুনের পরিমাণ কম রাখুন প্রাত্যহিক ডায়েট-এ।

উচ্চরক্তচাপের শিকার যে-মহিলারা তাদের সচেতনতা বিশেষভাবে প্রয়োজন। হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস থাকলেও আপনি হৃদরোগ জনিত ঝুঁকি কমিয়ে ফেলতে পারেন হালকা ব্যায়াম বা আধঘণ্টা ব্রিস্ক ওয়াকিং-এর সাহায্যে। দেহের ওজন যদি অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ৮-১০ কিলো অবশ্যই কমিয়ে ফেলুন। ওষুধের সাহায্যে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাণকেও নিয়ন্ত্রণে আনুন। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ যা রক্তকে তরল রাখে, তা নিয়মিতভাবে সেবন করুন। অন্তত ১৫০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন-এর ডোজ প্রতিদিন খাবার পর গ্রহণ করুন। ৪৫ বছর বয়স হয়ে গিয়ে থাকলে, বছরে অন্তত একবার করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চেক-আপ একান্ত জরুরি।

হার্ট অ্যাটাক হলে

 প্রাথমিকভাবে হার্ট অ্যাটাক-এর ক্ষেত্রে একটুও সময় নষ্ট করা উচিত নয়। হৃদরোগে মৃত্যুর কারণটাই হল মূলত ঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছোতে না পারা। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন এবং রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত রোগীর বুক দ্রুত মাসাজ করতে থাকুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...