সংসার মানেই সাতরকম ঝামেলা। বাড়িঘরের সারাই মেরামত তো লেগেই আছে, সেইসঙ্গে আছে টুকিটাকি সমস্যা। এখানে আলোচনা করা হল তেমনই কিছু সমস্যার বিষয়ে। সঙ্গে রইল তার সমাধানসূত্র।

রান্নাঘরের সিংক, বেসিন কিংবা বাথটাব বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন – বেসিন অথবা টাব, যাই আটকে যাক প্রথমে জল দিয়ে বেসিনটি ভরুন (যার জন্য বেসিনের ছিদ্র আটকাচ্ছে সেটিকে ঠেলে পরিষ্কার করার জন্য জলের প্রয়োজন রয়েছে।) বেসিনের উপরে যে বাতাস এবং জল যাওয়ার জায়গাটি রয়েছে সেটাকে স্পঞ্জ অথবা কাপড়ের টুকরো দিয়ে ভালো করে আটকান যাতে ওটা খুললেই জল তোড়ে ওখান দিয়ে ঢুকতে পারে। দোকানে প্লাঞ্জার অথবা পাম্প কিনতে পাওয়া যায়। সেটার সাহায্যে জোরে পাম্প করলেই, যার জন্য বেসিন আটকেছে সেটা খুলে যাবে।

প্রত্যেকবার যখন পাম্প করবেন তখন কিছুটা করে জল অবশ্যই ড্রেনের ভিতর বেশ তোড়ে ঢোকা উচিত। প্রত্যেকবারই পাম্প করার সময় এই নিয়ম মানা উচিত। এরকম নিয়মে কয়েকবার পাম্পিং এবং ফ্লাশিং করার পর বেসিনের ড্রেনের মুখ খুলে দিন।

বাথরুমে দুর্গন্ধ দূর করতে – একটি প্লেটে বেকিং সোডা রেখে টয়লেটের পিছনে রেখে দিলে দুর্গন্ধ চলে যাবে।

মাছ অথবা পচে যাওয়া খাবারের দুর্গন্ধ দূর করতে – যেখান থেকে গন্ধ আসছে সেখানে একটা বোলে সাদা ভিনিগার রেখে দিন কিছু ঘণ্টার জন্যে। গন্ধ নিজে নিজেই গায়েব হয়ে যাবে।

স্টিকার, মরচে, আঠার দাগ দূর করতে – আসবাবপত্র, কাচ, প্লাস্টিক থেকে দাগ ওঠাবার জন্য ভেজিটেবল অয়েল দিয়ে জায়গাটা ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তারপর একটু রগড়ালেই দাগ উঠে আসবে।

মেটাল জিপার যদি বার বার আটকে যায় – কোনও পেনসিলের শিষ হালকা করে জিপারের গায়ে বুলিয়ে দিন। পেনসিলের গ্রাফাইট, জিপারকে লুব্রিকেট করে এবং এটিকে মসৃণভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র মেটাল জিপারের ক্ষেত্রেই কাজ করে।

জামাকপড়, জিনস-এ চিউয়িংগাম আটকে গেলে – চিউয়িং গাম শুদ্ধু কাপড় খানিক্ষণের জন্য ফ্রিজারে রেখে দিন। চিউয়িংগাম ঠান্ডায় জমে ফাটা ফাটা হয়ে যাবে। তারপর কপড় ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

নেল ভার্নিশ, বেয়াড়়া আঠা তুলতে সাহায্য করে। শার্ট অথবা ব্লাউজের কলারে লেগে থাকা নোংরা তুলতে শ্যাম্পু ব্যাবহার করুন। যেভাবে মাথায় শ্যাম্পু করা হয় সেই একই পদ্ধতিতে কলারে শ্যাম্পু লাগাতে হবে। বডি অয়েল তোলার জন্য বিশেষভাবে শ্যাম্পু প্রস্তুত করা হয়। ওয়াশিং মেশিনের পাশে সবসময় একটা কমদামি শ্যম্পুর বোতল রাখুন যাতে কাপড়ের দাগে ওটা ব্যবহার করতে পারেন।

কালির দাগ – সবথেকে ভালো হল, কালির দাগ জামাকাপড়ে লাগলে, দাগের উপর অ্যালকোহল ঘষে দেওয়া। তাহলেই দেখবেন দাগ উধাও। কাপড় ধুতে দেবার আগেই এই প্রক্রিয়া করা দরকার।

বলপয়েন্ট পেনের দাগ সহজে উঠে যাবে যদি তার উপর হেয়ার স্প্রে করা হয়। হেয়ার স্প্রে শুকিয়ে গেলে কাপড় ধুয়ে ফেলুন। দাগ পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ভিনাইলের উপর ক্রেয়ন-এর দাগ – সিলভার পলিশ দিয়ে এই দাগ তোলা যায়। ওয়ালপেপারের উপর বাচ্চারা ক্রেয়ন দিয়ে দাগ করলে, বেকিং সোডা ছড়িয়ে ভিজে কাপড় দিয়ে আস্তে করে মুছে দিন।

শক্ত যে-কোনও সারফেস-এ দাগ লাগলে, স্টিল উল সাবানে ডুবিয়ে হালকা করে দাগের জায়গাটা মুছে নিন। জায়গাটা ভেজাবেন না।

পেইন্ট করা দেয়ালে ওয়্যাক্স ক্রেয়ন দিয়ে দাগ করা হলে, ডব্লুডিফরটি (এক ধরনের স্প্রে লুব্রিকেন্ট) দাগের উপর স্প্রে করুন। কাপড় দিয়ে হালকা করে মুছে ফেলুন। লিকুইড সাবান যে-কোনও ধরনের লুব্রিকেন্ট-এর দাগ দেয়াল থেকে মুছে ফেলতে সাহায্য করে। গাঢ় রঙের জায়গা হলে, দাগ ওঠাবার জন্যে হয়তো বেশিবার স্প্রে করার দরকার হতে পারে এবং স্প্রে লাগিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দেওয়ারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

মাখনের দাগ – দাগের মধ্যে মাখনের দাগ তোলা খুব শক্ত। মাখনের দাগ তোলার জন্য দরকার নরম স্পঞ্জ, হলকা গরমজল, শ্যাম্পু এবং অল্প পরিমাণে গ্রিজ সলভেন্ট। দাগের উপর সামান্য গ্রিজ সলভেন্ট লাগিয়ে শুকোতে দিন। স্পঞ্জে অল্প শ্যাম্পু ঢেলে গরমজলে ভিজিয়ে হালকা করে দাগটা মুছে নিন।

কেচ-আপের দাগ – দাগ তোলার জন্য গ্লিসারিন, সাবান ও জল দরকার। দাগ লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলুন নয়তো দাগ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

রক্তের দাগ – যত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলা যায় ততই ভালো। সব থেকে ভালো উপায় শ্যাম্পু ব্যবহার করা।

অন্যান্য উপায় – ভুট্টার মাড় রক্তের দাগ ওঠাতে সাহায্য করে। কাপড়ে রক্তের দাগ লাগলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর ভুট্টার মাড় ভিজিয়ে জায়গাটাতে লাগিয়ে দিন। রোদ্দুরে রেখে শুকোতে দিন।

পেশাদারি প্রক্রিয়া – ঠান্ডা জলে প্রথমে দাগটা ধুয়ে ফেলুন। গরমজলে ধুলেই দাগ বসে যাবে। তখন দাগ ওঠানো খুব মুশকিল। রক্তের দাগ তুলতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করা সবথেকে ভালো উপায়। দাগ লাগার সঙ্গে সঙ্গে করতে পারলে ভালো কিন্তু শুকনো রক্তের দাগও চেষ্টা করলে উঠে যাবে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড জামাকাপড়ের কোনও ক্ষতি করে না।

ঘষটানি দাগ – এক বালতি জলে ৩ চা চামচ টিএসপি (ট্রিসোডিয়াম ফসফেট) মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ঘষটানির দাগ এবং দেয়ালে ক্রেয়নের দাগ ওঠাতে সাহায্য করে। যে-কোনও পেন্টের দোকানে অথবা হার্ডওয়্যার স্টোরে টিএসপি কিনতে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহারের সময় অবশ্যই দস্তানা পরা উচিত। গ্লস, সেমি গ্লস অথবা কাঠের সারফেসের উপর টিএসপি ব্যবহার করবেন না।

ম্যাজিক মার্কার-এর দাগ – হেয়ার স্প্রে দিলেই মার্কার কালির দাগ উঠে যায়।

মরচে অথবা জলে আয়রন বেশি থাকলে যদি দাগ হয় – ভিনিগার অথবা পাতিলেবুর রসে উপকার পাওয়া যাবে।

তামার পাত্র – পাতিলেবু কেটে নুনে ভিজিয়ে তামার গায়ে বোলালে পাত্র পরিষ্কার হবে (অথবা ভিনিগার দিয়েও পরিষ্কার হবে)।

কফি ও চায়ের কাপ – বেকিং সোডা দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।

সাবধান থাকবেন – কোনও জিনিস ব্যবহারের আগে, সেই জিনিসটি পোশাকের দাগ ওঠানোর জন্য জামাকাপড়ের সেই অংশে লাগিয়ে একবার পরীক্ষা করে নিন, যে অংশটির কোনও রকম ক্ষয়ক্ষতি হলে তা দৃষ্টিগোচর হবে না। সিল্ক এবং উলের কাপড়ে অ্যামোনিয়া ব্যবহার করবেন না। রেয়ন, ভেলভেট, সিল্ক এবং লেস কোনও ভালো দোকান থেকেই (কাচার দোকান) কাচিয়ে নিয়ে আসা ভালো।

বাচ্চাদের খুব পছন্দের খেলা হল, টয়লেটের মধ্যে খেলনা এবং জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া। ছুতোর মিস্ত্রি ডাকার আগে, নিজেই চেষ্টা করুন টয়লেট থেকে জিনিসটা তুলে ফেলতে। বালতি ভরে জল নিয়ে টয়লেটের মধ্যে তোড়ে ঢালুন। অন্য কোনওভাবে হঠাৎ টয়লেট আটকে গেলে জলের তোড়ে অনেকসময়ে খুলে যায়। তাও যদি সমস্য থেকে যায়, টয়লেটে জল ঢেলে পাম্প অথবা আবার প্লাঞ্জারের সাহায্যে জোরে জলটা পাম্প করলেও অনেকসময় টয়লেট খুলে যায়। এছাড়াও হার্ডওয়্যার-এর দোকানে সরু তার কিনতে পাওয়া যায় যেটা সহজেই ইচ্ছামতো বাঁকানো যায়। এটাও টয়লেট আটকালে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...