হেয়ার কালার বর্তমানে অন্যতম ফ্যাশন। পাকাচুল ঢাকতে শুধু কালো করা নয়, এখন চুল নানা রঙে রাঙিয়ে তোলা কেতাদুরস্ত ফ্যাশন-এ পরিণত হয়েছে। স্কিন টোন অনুযায়ী মানানসই হেয়ার কালার আপনাকে করে তুলতে পারে আকর্ষণীয় এবং সুন্দর।
একটা সময় ছিল যখন হেয়ার কালার করানোটা ফিল্মস্টার ও সেলিব্রিটিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভাবনাটা বদলে গেছে গত কয়েক বছরে। টিনএজার থেকে মাঝবয়েসি, এমনকী সিনিয়র সিটিজেনরাও নিজেদের একঘেয়ে রূপকে বদলে ফেলতে দিব্যি গা ভাসাচ্ছেন এই হালফ্যাশনে।
কালার নির্বাচন
বাজারে বিভিন্ন ধরনের আলাদা আলাদা রঙের শেডস্ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই, কোম্পানি অনুযায়ী সেগুলির কোয়ালিটি, টেক্সচার এবং গুণগত মানও আলাদা।
সুতরাং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজের ত্বক, চোখের রং ও চুলের স্বাভাবিক রঙের নিরিখেই বেছে নিতে হবে সঠিক হেয়ার কালার।
ত্বক অনুযায়ী কালার নির্বাচন
আপনার ত্বক যদি ফরসা ও উজ্জ্বল হয়, তাহলে যে-কোনও রং-ই সুন্দর লাগবে আপনাকে। ত্বকের রং মাঝামাঝি হলে শ্যাম্পেন, কুল ব্রাউন অথবা অ্যাশ ব্লন্ড কালারই মানানসই। স্কিন টোন গোলাপি হলে গোল্ডেন ব্লন্ড বা রেড হেয়ার কালার এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এতে আপনার ত্বক আরও বেশি লালচে দেখাবে, যা বেখাপ্পা।
যেসব মহিলার ত্বক গমরঙা কিংবা অলিভ কমপ্লেকশন-এর, তাদের ডার্ক কালার ব্যবহার করাই উচিত। তেমনই আবার ভায়োলেট, বারগান্ডি এবং ব্লু টিন্ট, কৃষ্ণবর্ণের মহিলাদের আরও বেশি আকর্ষণীয় ও সেক্সি করে তুলবে। ঘন কালো চোখের কন্যাদের জন্য কপার, ব্রাউন, ডিপ রেড পারফেক্ট ম্যাচিং।
চুলের স্বাভাবিক রঙের ভিত্তিতে কালার নির্ধারণ
চুলের স্বাভাবিক রঙের উপর বেস করে মূলত কালার করা হয়। কারণ স্বাভাবিক চুলের রঙের কাছাকাছি শেডই ব্যবহার করা উচিত। তবে আপনি যদি এক্সপেরিমেন্ট করতে চান তাহলে একটু আলাদা শেড বেছে নিতেই পারেন।
ধরুন আপনার চুল ঘন কালো তাহলে রেড, কপার, হালকা ব্রাউন রঙের শেড-ই যথাযথ। ফ্যাকাশে হলে সোনালি অথবা শ্যাম্পেন ব্লন্ডও ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচাপাকা চুলের মিশেল থাকলে সহজে মনপসন্দ হেয়ার কালার পাওয়া সমস্যা। এইরকম পরিস্থিতিতে পুরো চুলের বদলে, কিছু কিছু অংশে কালার দিয়ে দেখে নিন কোনটা আপনার লুকের সঙ্গে যাচ্ছে। কালার নির্বাচনে পোশাকও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানানসই হেয়ার কালারও করতে পারেন আপনি। সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডরোবে ওয়ার্ম কালার না কুল কালার-এর পোশাক বেশি রয়েছে, তা দেখে নিন। ওয়ার্ম কালার মূলত অরেঞ্জ, ইয়েলো, পিংক ও রেড। এই ধরনের রঙের পোশাকের সঙ্গে গোল্ডেন ব্রাউন, মেহগিনি ও স্যান্ডি ব্লন্ড একদম পারফেক্ট শেড।
কুল কালার-এর মধ্যে পড়ে ব্লু, গ্রে, ভায়োলেট, ব্ল্যাক, গ্রিন ইত্যাদি। এই ধরনের পোশাকের সঙ্গে কুল জেট ব্ল্যাক, অ্যাশ ব্লন্ড, প্ল্যাটিনাম, বারগান্ডি শেড-এ রাঙাতে পারেন। হয়ে উঠতে পারেন নজরকাড়া।
স্থায়িত্বের উপর আবার হেয়ার কালার-এর পার্থক্য হয়। আগে ঠিক করে নিন কালার দীর্ঘদিনের জন্য চাইছেন নাকি অল্পদিনের জন্য। পাকা চুলকে আড়াল করতে চাইলে পার্মানেন্ট কালার বাঞ্ছনীয়। চাইলে আপনি পুরো চুল কালার করতে পারেন কিংবা হাইলাইট-ও করতে পারেন। সমস্তটাই নির্ভর করবে আপনার সিদ্ধান্তের উপর।
প্রথমবার কালার করার সময় কোনও ভালো পার্লার-এ প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নিন। কালার করার ৫ ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
হেয়ার বিশেষজ্ঞ জাভেদ হাবিবের মতে, ‘কালার দেশি হোক বা বিদেশি এর মধ্যে অ্যামোনিয়া থাকা আবশ্যিক। অ্যামোনিয়া চুলের গোড়ার ছিদ্রগুলি উন্মুক্ত করে দেয়, যার ফলে চুলের রং মাথার ত্বকে প্রবেশ করে। অ্যামোনিয়া মিক্স না থাকলে একবার শ্যাম্পু করার পরই কালার ফেড হয়ে যাবে। কিন্তু এটার একটা কুফলও আছে। অ্যামোনিয়া আর্দ্রভাব শুষে নিয়ে চুলকে ড্রাই করে তোলে। চুলে হেনা ব্যবহারের পর কালার করা উচিত নয়। কারণ চুল ও কালারের মধ্যে অন্তরায় তৈরি করে হেনা। তাই হেয়ার কালার করার অন্তত মাস ছয়েকের মধ্যে হেনা না করাই ভালো।
পার্মানেন্ট টিন্টস
এই হেয়ার কালার-এর মধ্যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে, যা চুলকে রুক্ষ করে তোলে এবং চুল ফাঁপিয়ে দেয়।
সেমি পার্মানেন্ট
এই ধরনের প্রোডাক্ট-এ পারঅক্সাইড খুবই অল্প পরিমাণে থাকে। যার ফলে চুলের স্বাভাবিক রঙের থেকে সামান্য আলাাদা একটি টোন পাওয়া যায়। প্রতিবার শ্যাম্পুর পর রং ফিকে হতে থাকে।
সেমি পার্মানেন্ট ভেজিটেবেল কালার
এই প্রোডাক্টগুলি মূলত ভেজিটেবেল এক্সট্র্যাক্ট এবং প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারাই তৈরি। এই কালার আপনার চুলে আলাদা মাত্রা যোগ করে। বার আষ্টেক শ্যাম্পুর পর, এর রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
তরল, পাউডার, তেল, ক্রিম, জেল– সব আকারেই বর্তমানে হেয়ার কালার বাজারে পাওয়া যায়। পার্মানেন্ট কালারের ক্ষেত্রে মূলত জেল ব্যবহার করা হয়। অস্থায়ী ও সেমি পার্মানেন্ট-এর ক্ষেত্রে সাধারণত হেয়ার মাসকারাস, ক্রেয়ন্স এবং হেয়ার স্প্রে-ই প্রযোজ্য। হাইলাইটিং, স্ট্রিকিং, ফ্রস্টিং, ফিঙ্গার প্রিন্টিং– হেয়ার কালার-এর একাধিক পন্থা আছে। আজকের টিনএজাররা হাইলাইটিং ও স্ট্রিকিং-এই বেশি আগ্রহী।
পরিচর্যা
কালার দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলে কপার ও রেড কালার এড়িয়ে চলুন। কারণ এই দুটি কালারই খুব তাড়াতাড়ি ফ্যাকাশে হয়। উপযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা দরকার, যা আপনার কালার অনেকদিন ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
কালারিং-এর সৌজন্যে লুকটা বদলালেই চলবে না, প্রতিদিন চুলের পরিচর্যার জন্য সময় দিতে হবে। এটাই আপনার চুলকে তরতাজা এবং কালার-কে মেনটেন করতে সাহায্য করবে।
কড়া রোদ এড়িয়ে চলুন। অবশ্য হালকা রোদে রেড হেয়ার কালার আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। আপনার শ্যাম্পুটিও পিএইচ ব্যালান্স হতে হবে।
সপ্তাহে একদিন হেয়ার স্পা করতে পারলে ভালো হয়। চুলকে উজ্জ্বল করতে স্পা-এর জুড়ি মেলা ভার। চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিরুনি ব্যবহার করবেন না। এতে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অতিরিক্ত তাপ চুল ও রঙের জন্য ক্ষতিকারক। হেয়ার ড্রায়ার ও আয়রনিক মেশিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি উত্তাপ এড়িয়ে চলুন। ঠান্ডা হাওয়াতে চুল শুকিয়ে নিতে পারলে সবথেকে ভালো হয়। পনেরো দিনে একটা হট অলিভ অয়েল অথবা আমন্ড অয়েল মাসাজ করতে পারেন। এতে চুল পড়া কমবে। চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং চুলের গোড়া শক্ত হবে।