বাঙালি মাত্রেই ভোজনরসিক। সুতরাং রান্নাঘরের গুরুত্ব কমবেশি সব বাঙালি বাড়িতেই রয়েছে। এখনকার প্রজন্ম আবার রসনাতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত সচেতন।

এছাড়াও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজন এবং রুচিরও পরিবর্তন হতে থাকে। মা-ঠাকুমাদের সময়ে Kitchen এখনকার সময়ের তুলনায় বড়ো হতো। খালি জায়গা থাকত প্রচুর। যৌথ পরিবারের প্রয়োজনমতো তখনকার রান্নাঘর আজকের প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অর্থহীন কারণ, থাকার জায়গার পরিসর কমেছে। ছোটো পরিবার সমেত এখন মানুষ স্বতন্ত্র ভাবে থাকতে ভালোবাসে। ফলে বাড়ির কনসেপ্ট বদলে ফ্ল্যাট-এ থাকতে পছন্দ অধিকাংশ মানুষের।

মানুষের প্রয়োজনও বদলেছে। কারও কাছে সময় নেই উনুন ধরিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করার। পরিচারিকাও এখন অনেকেই রাখেন না কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বেশির ভাগ কর্মরত। সুতরাং ছোট্ট রান্নাঘরেই গ্যাস, কুকিং রেঞ্জ, মাইক্রোআভেন, কফি মেকার, চিমনি, ডিশওয়াশার ইত্যাদি সরঞ্জামের ঠাসাঠাসি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চটজলদি অথচ স্বাস্থ্যবর্ধক রান্না করতে এবং রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে এই সব কিছুরই এখন প্রয়োজন আছে। নতুন যারা ফ্ল্যাট কিনছেন তারা মডিউলার কিচেন সামর্থ্য অনুযায়ী করিয়ে নেন। তবে ফ্ল্যাট পুরোনো হলে, রান্নাঘরের একঘেয়েমি কাটাতে কম বাজেটেই কিছু পরিবর্তন করিয়ে নিয়ে রান্নাঘরকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন।

পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা : প্রথমেই রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা দরকার। ন্যাচারাল বা ইনডাইরেক্ট এই দুরকমই আলোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। বাইরের আলো আসার জন্য বড়ো কাচের জানলা যেমন দরকার তেমনি সিলিং-এর আলো আপনার রান্নাঘরকে পর্যাপ্ত আলোয় ভরিয়ে তুলতে পারবে। সাধারণত মিস হয়ে যায় রান্নাঘরে ক্যাবিনেটের নীচে আলোর ব্যবস্থা রাখা। ক্যাবিনেটের নীচের আলোকসজ্জা আপনার কিচেনে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিতে পারে। ঠিকমতো আলোর অভাবে ক্যাবিনেটের নীচের কাউন্টার টপটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। সুতরাং এখানে আলোর ব্যবস্থা করলে কাউন্টার টপ-এর উপর কোনও কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

ঝুলবাতির (পেইনডেন্ট লাইট) ব্যবহার : রান্নাঘরের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, বিশেষ করে ওপেন কিচেন-এ পেইনডেন্ট লাইট (রডের সাহায্যে ঝোলানো লাইট) ব্যবহার করতে পারেন। আলো নিয়ন্ত্রণের যদি ব্যবস্থা রাখেন তাহলে রোমান্টিক ডিনার থেকে শুরু করে ঘরোয়া গেট টুগেদার, যে-কোনও সময়ে মুড অনুযায়ী আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ক্যাবিনেটের দরজা বদলে ফেলুন : ক্যাবিনেট যেখানে আছে সেখানেই রেখে শুধু ক্যাবিনেটের দরজা এবং সামনের ফ্রেমটা সরিয়ে নতুন লাগান। এতেই দেখবেন Kitchen প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ক্যাবিনেটের উড পলিশও করাতে পারেন আবার পছন্দের কোনও রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারেন।

রান্নাঘরের দেয়াল সাজিয়ে তুলুন : রান্নাঘরকে নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে খালি দেয়াল সাজিয়ে তুলুন নিজস্ব সৃজনশীলতার সাহায্য নিয়ে। বাঁশ বা বেতের তৈরি সাজাবার জিনিস দোকান থেকে কিনে এনে দেয়ালে টাঙাতে পারেন। বাড়ির পুরোনো প্লেট রং করে বা নিজের শিল্পকাজের সহায়তা নিয়ে সেটাকে নতুন লুক দিন এবং দেয়াল সাজিয়ে তুলুন তাই দিয়ে।

পূর্ণাঙ্গ স্টোরেজ-এর ব্যবস্থা করুন : স্ন্যাক্স বা জলখাবারের জন্য আলাদা ড্রয়ার রাখুন যাতে তাড়াহুড়োতে খুঁজতে অসুবিধা না হয়। গ্যাস স্টোভ যেখানে সেখানে না রেখে, একেবারে হাতের কাছে রাখার ব্যবস্থা রাখুন। মুভমেন্ট-এর সুবিধার কথা ভেবে স্লাইডিং ডোর-এর ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। পুরোনো কন্টেনার জমিয়ে না রেখে সব ফেলে দিন।

খোলা তাক বা ওপেন শেল্ফ রাখুন : খোলা তাক নোংরা বেশি হবে এবং অগোছালো অবস্থা অতিথির নজরে আসবে, এই ভয়ে অনেকেই খোলা তাক করাতে চান না। অথচ কিচেনে খোলা কাঠের তাকে একটা দুটো ইনডোর প্লান্ট এবং একটা ফুলদানি কিন্তু আপনার আভিজাত্যেরই পরিচয় বহন করবে। এছাড়াও খোলা তাকে রাখুন থালা, বাটি। আকর্ষণীয় রঙিন কাচের জার, কোস্টার্স, টুথপিক হোল্ডার, আর্টিফিশিয়াল ফ্রুটস ভেজিটেবলস, নানা রঙের বাস্কেটসও খোলা তাকে সাজিয়ে রাখতে পারেন।

গ্যাজেটস রাখুন প্রয়োজন অনুসারে : রোজের প্রয়োজনীয় গ্যাজেটস যেমন ইলেকট্রিক কেটল, কফি মেকার, মিক্সারগ্রাইন্ডার, চপার, মাইক্রোআভেন ইত্যাদি কাউন্টারে সাজিয়ে রাখুন। বাকি গ্যাজেটস যেমন টোস্টার, এয়ারফ্রায়ার, রাইসমেকার ইত্যাদির জন্য ক্যাবিনেটে জায়গা রাখুন।

রং বাছুন : রান্নাঘরের জন্য হালকা রং বাছুন। খুব গাঢ় রং রান্নাঘরকে অন্ধকার করে তুলবে এবং এতে রান্নাঘর ছোটো মনে হবে। সৌন্দর্য বাড়াতে কন্ট্রাস্ট রঙের টাইলস, বর্ডার এবং নানা ডিজাইন আঁকা টাইলস লাগাতে পারেন। ফ্লোর-এর জন্য ভিনায়েল ফ্লোরিং, সিরামিক টাইলস, ল্যামিনেটেড টাইলস বাছতে পারেন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...