ব্যাবসা-বৃত্ত

ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত হতাশ সমীর। কী-ই বা করবে, ওকে তো মালিকপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে যে, সামনের মাসেই ইস্তফা দিতে হবে।

বাজোরিয়া ড্রাগস-এ সেল্সম্যান-এর চাকরিটা ওর অনেকদিনের। তবে এই কোম্পানিতে ওর খুব সুনাম, বিশ্বস্ত কর্মচারী হিসাবে। মার্কেট থেকে অর্ডার তোলার ব্যাপারে সমীর এক নম্বর। ওর কাজে খুশি হয়ে ওকে অতিরিক্ত দায়িত্ত্ব দিয়েছিল মার্কেট থেকে বকেয়া টাকা কালেকশানের। ও অনেক অনেক টাকা মার্কেট থেকে কালেক্ট করে আনত সময় মতো মালিকপক্ষের হয়ে, তার জন্য ইনসেনটিভও পেত। সব মিলিয়ে ভালোই রোজগার হতো।

অলক মুখার্জি, মুখার্জি এন্টারপ্রাইজের মালিক। ওষুধেরই ব্যাবসা। এই মার্কেটেই অফিস। সমীরের একদম ছোটোবেলার বন্ধু। দুই পরিবারের মধ্যে যথেষ্টই ভালোবাসা, আসা-যাওয়া। অলকেরও প্রথমে ছোটো ব্যাবসা ছিল, এখন ব্যাবসা বৃদ্ধি ঘটেছে।

সমীরের চিন্তা বাড়ছে চাকরি নিয়ে ইদানীং সে লক্ষ্য করছিল মিঃ বাজোরিয়া ওর হাতে আর টাকা পয়সা ছাড়ছে না। ক্রমেই ও মনমরা হয়ে যাচ্ছিল। ওর স্ত্রী একদিন বলল, তুমি অলকদাকে বলে দেখতে পারো তো একবার।

ব্যস চাকরিও হয়ে গেল বলা মাত্র। শুধু অলক বলল, দ্যাখ তোকে অত টাকা এখুনি দিতে পারব না। তোকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি বাড়তি উপার্জনের। তুই চাকরি ছাড়ার সময় যে-প্রভিডেন্ট ফান্ড আর গ্র্যাচুইটির টাকা পাবি, সেটা একসাথে করে আমার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে পারিস- তোকে আমি ব্যাংকের থেকে অনেকটাই বেশি সুদ দেব মাসে মাসে। তাতে তোর মাস গেলে আয় বাড়বে আবার আসল টাকাটাও খরচা হবে না, সুরক্ষিত থাকবে।

মুখার্জি এন্টারপ্রাইজের অর্ডার বাড়তে লাগল মার্কেটে আর বাজোরিয়ার কমতে থাকল।

একদিন পুরোনো অফিসের দুলালবাবুর সঙ্গে দেখা। দুলালবাবু ফস করে বলে বসলেন- এখন তো আমি রিটায়ার্ড, তাই নির্ভয়ে বলতে পারি, যত নষ্টের মূল আপনার ওই বন্ধুটি, অলক মুখার্জি। একদিন এসে বাজোরিয়ার কাছে ঢেলে নিন্দে করে গেছে আপনার। বলল, আপনি নাকি খুব ড্রিংক করেন, আপনার হাতে টাকাপয়সা না ছাড়তে।

ব্যস! সমীর অঙ্কটা চট করে ধরে ফেলল। ওর মার্কেট পপুলারিটি আর সেল্সম্যানশিপ স্কিল কাজে লাগিয়ে অলকের নিজের ব্যাবসা বৃদ্ধি, তাই বাজোরিয়া ইন্ডাসট্রিজ থেকে সমীরকে ভাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগটা ও চট করে লুফে নেয়৷ ও যাতে চাকরি ছাড়তে না পারে, তাই নিজের কোম্পানিতেই বাড়তি উপার্জনের নামে ওর টাকাটাই কায়দা করে আটকে রাখে।

সমীর ড্রিংক করে না, তবে ওর আজ মনে হল, যদি ড্রিংক করে বন্ধুর এই প্রতারণা ভুলতে পারত!

  গল্প  :   দেবারতি ভট্টাচার্য

 

অন্তর্দৃষ্টি

 

Antardrishti story in bangla

 

ই-বুকের বর্ষা সংখ্যার জন্য সোমনাথের কাছে জমা পড়েছে প্রচুর কবিতা। এগুলো দেখা হয়ে গেলে যাবে এডিটিং-এ। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় রাতের নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে সে পড়ে চলেছে কবিতাগুলো। মোটামুটি লেখাগুলো ভালোই, যেটুকু বাদ দিচ্ছে তা ওই ব্যাকরণগত ত্রুটি ও যতি চিহ্নের জন্য।

এর মধ্যেই মোবাইলে মেসেজের টুংটাং, লেখা এখনও জমা পড়ছে। ফোন নাম্বারও দেওয়া আছে, কোনও সমস্যায় ফোন করার জন্য। একটা লেখা সে সরিয়ে রেখেছে, কান্না নামের এই কবিতাটার আয়তন পরিসীমা সীমার লাইনের বাইরে হওয়ায়। সামান্য কমালে লেখাটা ঠিক হতো।

কিন্তু এভাবে সংশোধনের নিয়ম তো প্রকাশনা সংস্থার নেই। এসে যাওয়া মেসেজগুলো চেক করে দেখল, একই নাম্বার থেকে এসেছে, যে কান্না কবিতাটা জমা দিয়েছে। কথার ভিড়ে বাকি কবিতাগুলো হারিয়ে না যায়, সে সন্ত্রস্ত হল! অনুরোধ জানাল ফোন করার জন্য যদি কান্না কবিতাটাকে কোনও ভাবে নিয়মে আনা যায়। এদিকে ও-প্রান্ত থেকে ফোন তো ধরলই না, উলটে একের পর এক মেসেজ আসতে থাকল।

সোমনাথ ক্লান্ত হয়ে নিজের কাজে মন দিল। কৌতূহল বশত কান্না কবিতাটার প্রেরকের ঠিকানাটা দেখতে গিয়ে দেখল, ডেফ অ্যান্ড ডাম্ব হোম দমদম। এতক্ষণে সে বুঝতে পারল ফোন না ধরার কারণটা। হোয়াটস্অ্যাপে লিখল তোমার কবিতাটা ষোলো লাইনে করে দাও, তাহলে ছাপবার অসুবিধে হবে না, ভালো থেকো।

ও-প্রান্ত থেকে একটা সুন্দর স্মাইলি এল। ওই স্মাইলির আড়ালে সোমনাথ তার নির্বাক পৃথিবীর হাসিখুশি মুখটা দেখতে পেল।

              গল্প  : সুতপা রায়

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...