ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে— ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডান। অতএব, শুরুটা ভালো হওয়া চাই। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এই শুভারম্ভের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিশেষ করে মা হওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অর্থাৎ, সুপ্রশিক্ষিত চিকিত্সক এবং সঠিক চিকিত্সা পদ্ধতিকে বেছে নিতে হবে।

মা হতে চেয়ে সঠিক যৌনমিলনের পরও যখন কোনও নারী অসফল হন, খুব স্বাভাবিক ভাবে নিরাশা, হতাশা, অবসাদ ইত্যাদি তাকে গ্রাস করে। সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি তখন নানারকম উপায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে, অনেকে সঠিক চিকিত্সা থেকে বঞ্চিত হন। ফলে, সমস্যা থেকে মুক্তিলাভ হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মাধ্যম করা হয় আইভিএফ-কে। কিন্তু এই আইভিএফ-এর সাকসেস রেট চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি নয়। শুধু তাই নয়, বন্ধ্যাত্বের আসল সমস্যা দূর না করে, আইভিএফ-কে মাধ্যম করলে সুফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আধুনিক শল্য চিকিত্সায় কীভাবে প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা যায়, সেই বিষয়ে সম্প্রতি বিস্তারিত জানালেন উর্বরা আইভিএফ-এর মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ইন্দ্রানী লোধ।

বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের শ্রেষ্ঠ উপায় কী?

কিছু শারীরিক সমস্যা নারীকে অনেকসময় বন্ধ্যা করে রাখে। তাই, প্রজননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী সমস্যাগুলিকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই মতো চিকিত্সা শুরু করতে হবে। বন্ধ্যাত্ব যদি হয়, তাহলে প্রথমেই আইভিএফ-এর কথা না ভেবে, দেখতে হবে ইউটেরাস, ফ্যালোপিয়ান টিউব কিংবা ওভারিতে সিস্ট বা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা। যদি দেখা যায় সার্জারির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে, তাহলে মনে রাখতে হবে, ওটাই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।

প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সার্জারি-ই শ্রেষ্ঠ উপায় কেন?

কারণ, কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিস্ট কিংবা অন্য এমন কোনও সমস্যা ইউটেরাস, ফ্যালোপিয়ান টিউব কিংবা ওভারিতে রয়েছে, যা ল্যাপারোস্কোপি অথবা হিসটেরোস্কোপির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের মাধ্যমে ছোট্ট এই সার্জারি করানোর পর হয়তো পেশেন্ট স্বাভাবিক ভাবেই কনসিভ করবে এবং হেলদি শিশুর জন্ম দেবে।

কাউন্সেলিং-এর পর পেশেন্ট কি এইরকম সার্জারিতে রাজি হন?

ঠিক মতো বোঝালে বেশিরভাগ পেশেন্ট-ই রাজি হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউটেরাইন টিউমার (ফাইব্রয়েড) থাকলে সার্জারির মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বের সমাধান সম্ভব। রিপ্রোডাক্টিভ এজ গ্রুপের মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড একটি কমন প্রবলেম। এক্ষেত্রে অবশ্য ফাইব্রয়েডের সংখ্যা, আকার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে সার্জারির প্রযোজনীয়তা এবং সাফল্য। যদি টিউমার পাঁচ সেন্টিমিটারের বেশি মাপের হয় এবং একাধিক পরিমাণে থাকে, তাহলে মায়োমেকটমির (রিমুভিং ফাইব্রয়েড সার্জারি) মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মিসক্যারেজ আটকাতেও সহায়ক ভূমিকা নেয় হিসটেরোস্কোপি।

আইভিএফ ট্রিটমেন্ট করার আগে কি ইউটেরাইন ক্যাভিটি অ্যাসেসমেন্ট করেন নিয়মিত?

হ্যাঁ। বেটার ইমপ্লানটেশন-এর জন্য এমব্রায়োজ পুট করার সঠিক লোকেশন খুঁজে বের করি আগে। স্মল পোলিপ অথবা স্কার টিশুর (সিনেটিয়া) অস্তিত্ব জেনে সেইমতো ব্যবস্থা নিয়ে আইভিএফ ট্রিটমেন্ট করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।

ফ্যালোপিয়ান টিউব-এ সমস্যা থাকলে কীরকম সার্জারি সাজেস্ট করবেন আপনি?

অনেকসময় ইনফেকশন, এন্ডোমেট্রিয়োসিস কিংবা টিউবারকিউলোসিস-এ আক্রান্ত হয়ে থাকে ফ্যালোপিয়ান টিউব। তবে টিউবাল ব্লক খুব কমন একটি সমস্যা। ল্যাপারোস্কোপি কিংবা এই যৌথ পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই এই টিউবাল ব্লক-এর সমস্যা দূর করা যায়। আর যদি টিউব-এর আয়তন বেড়ে যায় এবং টিউব টক্সিক ফ্লুযিড-এ (হাইড্রোসালফিন্ক্স) ভরে থাকে, তাহলে সালপিনোগ্রাফির মাধ্যমে ওই ফ্লুয়িড রিমুভ করে দিলে, প্রজননের সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

এই সার্জারির জন্য কী স্পেশাল ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করতে হয়?

হাই ডেফিনেশন অথবা থ্রিডি রেকডিং সিস্টেম ছাড়াও, সঠিক ভাবে সার্জারির জন্য কাস্টমাইজড ইন্সট্রুমেন্ট যেমন, মডার্ন ডায়াথার্মি মেশিন অথবা হারমোনিক মেশিন-এর সাহায্যে টিশুগুলিকে ড্যামেজ হওয়া থেকে বাঁচানো যায়। এছাড়া চাই সার্জারির উপযুক্ত পরিচ্ছন্ন এবং হাইজিনিক ওটি।

ল্যাপারোস্কোপি এবং হিসটেরোস্কোপি-র তফাৎ কী?

এ হল দুটি ভিন্ন অপারেশন পদ্ধতি। ল্যাপারোস্কোপি-তে পেটে একটা ছোট্ট ফুটো করে সার্জারি করা হয়। আর হিস্টেরোস্কোপিতে সার্জারির জন্য ব্যবহার করা হয় ভ্যাজাইনাল ট্র‌্যাক। তবে দুটি পদ্ধতিতেই ব্যবহার করা হয় ছোট্ট ক্যামেরা এবং অপারেট করা হয় কম্পিউটার মনিটর-এর মাধ্যমে।

একনজরে

  • সন্তান ধারণ করতে চেয়ে অক্ষম হলে দেরি না করে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন
  • আধুনিক চিকিত্সায় বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ করার চেষ্টা সফল হতে পারে, তাই কারও তির্যক মন্তব্যে মন খারাপ না করে উপযুক্ত চিকিত্সা পরিষেবা নিন
  • স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কার কারণে সন্তানধারণ সম্ভব হচ্ছে না তা আগে মেডিকেল টেস্ট-এর মাধ্যমে যাচাই করুন এবং সেইমতো চিকিত্সা করান
  • বন্ধ্যাত্বে প্রথমেই আইভিএফ নয়। বরং, শুরুতে উপযুক্ত সাধারণ চিকিত্সাকে মাধ্যম করুন।

ডা. ইন্দ্রানী লোধ,

ফাউন্ডার অ্যান্ড মেডিকেল ডিরেক্টর,

উর্বরা আইভিএফ, কলকাতা।

www.urvaraaivf.net

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...