স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং এখন অনেক হাই। বেশিরভাগ মানুষই বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাটে থাকছেন, যেখানে হাই-টেক ফেসিলিটি রয়েছে, মডার্ন গাড়ি চড়ছেন, সুস্বাদু খাবারের কোনও অভাব নেই। আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে, ফলে অসুস্থ হলে হাসপাতালগুলোতে ফাইভ স্টার ফেসিলিটিও উপভোগ করছেন। অথচ এতকিছু সত্ত্বেও মানুষের অসুস্থতা বাড়ছে। রক্তচাপ, মধুমেহ, অবসাদ, হাইপার টেনশন, দুশ্চিন্তা, ওবেসিটি, স্ট্রেস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর, ব্রেন হেমারেজ, স্লিপ্ড ডিস্ক, বাত, জয়েন্টের ব্যথা, কিডনি ও গল ব্লাডারে পাথর, নানা রকমের ক্যানসার এবং টিউমার –দিনে দিনে বেড়েই চলেছে এবং ডাক্তার-রাও এখন ব্যর্থ হচ্ছেন পেশেন্ট-কে সম্পূর্ণ নীরোগ করে তুলতে।
সত্যিই কি এর থেকে বেরোবার কোনও উপায় আছে? আছে তো অবশ্যই। প্রথমত আমাদের জানার চেষ্টা করা উচিত যে, এর পিছনে কী কারণ রয়েছে এবং তারপর সমাধানের উপায় বার করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আজ আমরা প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে নিজেদের অনেক দূরে সরিয়ে এনে কৃত্রিম জীবনযাপন করছি। অলস হয়ে পড়ছি। দৈহিক শ্রম করতে চাই না। অথচ আমরা খুব ভালো করেই জানি সুস্থ এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গেলে কায়িক শ্রম, ব্যায়াম, মেডিটেশন এবং সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা। কিন্তু যতক্ষণ না আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এই পুরো বিষয়টাকে আমরা অবহেলা করি। ডাক্তারের কাছে দৌড়োদৌড়ি এবং ওষুধ খাওয়া শুরু হলে তবেই সচেতনতা বাড়ে।
ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট যেমন রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, বাসনপত্র, রান্নার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রিক্যাল মেশিনের অত্যধিক ব্যবহার এবং হাই-টেক গ্যাজেট্স যেমন মোবাইল, ইন্টারনেট-এর রেডিয়েশন আমাদের শরীর, মন এবং পরিবেশকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে।
এমনকী আমরা যে-সমস্ত ফল, শাকসবজি, ডাল, খাদ্যশস্য ইত্যাদি খাই, সেগুলিও এখন কীটনাশক, সার ইতাদি দ্বারা আংশিক ভাবে বিষাক্ত। আধুনিক জীবনশৈলীর নামে আজ আমরা নিজেরাই এই মৃত্যুফাঁদ বেছে নিয়েছি। খাবার, জল, বাতাস, মাটি সর্বত্র দূষণের কারণে আমাদের পরিবেশও দূষিত বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়াও মডার্ন লাইফস্টাইল মেনটেন করতে গিয়ে, আমাদের ঘুমের সঠিক সময় মেনটেন করা হয় না।
অথচ এই অবস্থার কোনও উন্নতি করা সম্ভব নয়, ব্যাপারটা কিন্তু এমন জায়গাতে এখনও পৌঁছোয়নি। বিকল্প সমাধান অনেক রয়েছে।কিছু সমাধানের কথা এখানে বলা হল আপনাদের সুবিধার্থে।
যারা রক্তচাপে ভুগছেন
- মাটির পাত্র অথবা তামার পাত্রে জল রেখে সেই জল পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা উচিত
- খালি পায়ে সবুজ ঘাসের উপর অন্তত একঘন্টা সকালে হাঁটা উচিত
- প্রতিদিন সকালে ব্রেকফাস্টের আগে এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন এবং সঠিক ব্রিদিং প্র্যাক্টিস করা বাঞ্ছনীয়
- তিনটি শিফ্ট-এ খাবার ভাগ করে খাওয়া উচিত– ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার। ব্রেকফাস্টে রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত নয়
- লাঞ্চ এবং ডিনারের জন্য ৫০ শতাংশ রান্না করা খাবার যেমন হাতে গড়া রুটি, ভাত, ডাল, সবজি এবং ৫০ শতাংশ কাঁচা সবজি স্যালাড হিসেবে খাওয়া উচিত
- সন্ধেবেলায় সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটা দরকার
- সকালে খবরের কাগজ পড়ার থেকে গান গাওয়া বা গান শোনা অনেক ভালো, যেটা কিনা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে
- চা, কফি, তৈলাক্ত খাবার বর্জন করা উচিত
- প্রয়োজনের বেশি খাওয়া উচিত নয়
- খিদে না পেলে খাবেন না
- আপনার বা আপনার ফ্যামিলির সঙ্গে কী ঘটেছে অথবা কী ঘটতে পারত, এই অযথা চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন
- রাগ সংযত করে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এর ফলে হার্টে ব্লকেজ দেখা দিতে পারে
শরীরে মেদ জমা ঠেকাতে
পেট অথবা শরীরের যে-কোনও অংশে মেদ জমাটা ডাক্তাররা ভালো চোখে দেখেন না কারণ মেদ জমা মানেই শরীরে সমস্যার সূত্রপাত। এর প্রতিকার হল–
- ৫ থেকে ৬ গ্লাস জল সারাদিনে খাওয়া
- রোজ টয়লেট যাওয়ার পর ১ থেকে ২ ঘন্টা হাঁটা অত্যন্ত জরুরি
- ব্রেকফাস্টে স্প্রাউট, ফাইবার যুক্ত ফল এবং ভিটামিন ‘সি সমৃদ্ধ ফল, শসা ইত্যাদি থাকা বাঞ্ছনীয়
- প্রসেসড বা ফাস্টফুড যেমন পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পকোড়া, সিঙ্গাড়া, কচুরী, পরোটা ইত্যাদি বর্জন করা শ্রেয়
- লাঞ্চ-এ আস্ত শস্যদানা (হোল গ্রেন) বা মাল্টি গ্রেন-এর রুটি সঙ্গে সবরকমের সবজি এবং সব রকমের সবজি দেওয়া রায়তা খাওয়া উচিত। ৫০ শতাংশ রান্না করা খাবার খাওয়াটা এই ক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয়
- লাঞ্চ বা ডিনারের আগে বা পরে জল একেবারেই খাবেন না
- লাঞ্চ ও ডিনারে ফল খাবেন না
- ডিনারে ৪০ শতাংশ রান্না করা খাবার খেতে পারেন যেমন হোল গ্রেন রুটি সঙ্গে সবরকমের শাকসবজি। বাকি ৬০ শতাংশ খাবার স্যালাড হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
যাদের মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা আছে
- ব্যালেন্সড ডায়েট খাওয়া বাঞ্ছনীয়
- রোজ নিয়ম করে হাঁটা উচিত। বাগানে গিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিন
- সকালবেলায়, পারলে সূর্যোদয়ের আগে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট মেডিটেশন করুন
- ক্লাসিক্যাল মিউজিক অথবা ইনস্ট্রুমেন্ট (বাদ্যযন্ত্র) শেখা দরকার
যারা উদ্বেগ, অস্থিরতা এবং অবসাদের শিকার
- সকালে খোলা মাঠে বা বাগানে অনেকক্ষণ হাঁটুন
- জোরে জোরে হাসা অভ্যাস করুন
- ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলুন এবং সি ও ই ভিটামিন-যুক্ত ফল বেশি করে খান
- প্রসেসড এবং ফাস্টফুড একেবারেই খাবেন না
- গান শুনুন। সকালে ও সন্ধেবেলায় অন্তত ৩০ মিনিট মেডিটেট করুন
- বিভিন্ন রঙের ফল খান এবং শাক-পাতা-যুক্ত সবজি বেশি করে খান
- যেসব ফল এবং সবজিতে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে সেগুলি বেশি করে খান
- চা, কফি, অ্যালকোহল, কোল্ড ড্রিংক, প্যাকেট করা ফলের রস খাবেন না
- গ্রিন টি, ফ্রেশ ফলের রস, নুন, চিনি বাদ দিয়ে খান।
যাদের আলসার অ্যাসিডিটি ও গ্যাসট্রিক সমস্যা আছে
- সকালে উঠেই ৫-৬ গেলাস জল খাওয়া উচিত
- খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা দরকার
- সকালে ৩০ মিনিট মেডিটেট করুন
- নানা ধরনের ফল অথবা স্প্রাউট খান (সেদ্ধ অথবা ভাপানো কোনওটাই চলবে না)
- ব্যালেন্সড ডায়েট নিন
- সবরকমের সবজি দিয়ে বানানো রায়েতা এবং নারকেলের শাঁস খান
- সবুজ অথবা লাল লংকা, গোলমরিচ, আচার, ক্যান্ডি, কোল্ড ড্রিংক, প্যাকেটবন্দি ফলের রস, ময়দার তৈরি খাবার ইত্যাদি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়
- তৈলাক্ত এবং মশলাদার খাবার যেমন লুচি, পরোটা, পকোড়া, মিষ্টি, দুধ ইত্যাদি খাওয়া বর্জন করুন
ক্যানসার, টিউমারের মতো সমস্যা যাদের রয়েছে
সব ধরনের ক্যানসার, টিউমার অথবা অন্যান্য অসুখ যেমন সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গু, হার্ট বা লিভারের সমস্যা সবকিছুই অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায় বা চিকিৎসাযোগ্য করে তোলা যায়। এর জন্য ডায়েট, মেনটাল অ্যাটিটিউড-এ বিশাল একটা পরিবর্তন করতে হবে এবং সেটা সম্ভব হবে হাই পাওয়ার নিউট্রিশন, ডিটক্সিফিকেশন, মেডিটেশন এবং এক্সারসাইজের মাধ্যমে। কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশনের দরকারই পড়বে না। স্বাভাবিক নিয়মেই শরীরে প্রতিরোধশক্তি গড়ে উঠবে এবং এটা কোনও বিকল্প সমাধানের রাস্তা নয় বরং বলা যেতে পারে এটাই বেসিক থেরাপি।