মহিলাদের হাইপার থাইরোডিজম হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়। এই সময় মেয়েদের শরীরে এমন অ্যান্টিবডিজ তৈরি হয় যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এতে মহিলাদের শরীরের জটিলতা পুরুষদের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। অবসাদ, দুর্বলতা, ওজন বৃদ্ধি, কোলেসটেরল বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েডের সমস্যা বলতে কী বোঝায়?
গলার সামনের দিকে থাকা Thyroid গ্ল্যান্ড থেকে যে হরমোন তৈরি হয় সেটা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যাতে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের মেটাবলিক রেট, কার্ডিয়াক এবং হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতেই এই হরমোন বিশেষ ভাবে জরুরি। মস্তিষ্কের বিকাশ, মাংসপেশির উপর নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের সুরক্ষার ভারও অনেকটাই এই হরমোনের উপর নির্ভরশীল। থাইরয়েডের সমস্যা থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্যক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে মেটাবলিজমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন বানাবার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
মহিলাদের এই সমস্যা কেন বেশি হয়?
ফ্যামিলি হিস্ট্রি, বয়স (চল্লিশের আগেই বেশি হয়), অন্যান্য অটোইমিউন সমস্যা থেকে থাকলে, লিঙ্গের কারণে, ইমোশনাল এবং স্ট্রেস-জনিত কারণে, গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর, অতিরিক্ত ধূমপান, থাইরয়েডের সার্জারি, থাইরয়েড বড়ো, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড অত্যধিক বেশি অ্যাক্টিভ হয়ে পড়লে থাইরয়েড হরমোন তৈরির মাত্রা বেড়ে যায়। তখন তাকে বলা হয় হাইপার Thyroid। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে হাইপোথাইরোডিজম এবং হাইপার থাইরোডিজম 10 গুণ বেশি হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে শরীরের অ্যান্টিবডিজ থাইরয়েড গ্ল্যান্ড-কে টার্গেট করে, ফলে হরমোন প্রোডাকশন বেড়ে যায়।
থাইরয়েডের লক্ষণ
প্রথম প্রথম এই সমস্যা চট করে ধরা পড়ে না। সাধারণত সমস্যা বুঝতে বুঝতে এতটাই দেরি হয়ে যায় যে ক্ষতির মাত্রা কমানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
হাইপোথাইরোডিজম-এর লক্ষণ: ক্লান্তি, রুক্ষ শুষ্ক ত্বক, মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প ধরা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঠান্ডা সহ্য করতে না-পারা, চোখের পাতায় ফোলা ভাব, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়া।
হাইপারথাইরোডিজম-এর লক্ষণ: শরীর আনচান করা, ঘুমোনোর সমস্যা, শরীরের ওজন কমতে থাকা, হাতের চেটোয় ভিজে ভাব, খুব জোর এবং অনিয়মিত হার্টবিট, চোখ ভারী হয়ে আসা, চোখের পাতা না ফেলেই এদিক-ওদিক দৃষ্টি যাওয়া, খিদে বেশি পাওয়া, পেটের নানা সমস্যা এবং গরম একেবারে সহ্য করতে না-পারা।
পর্যাপ্ত মাত্রায় আয়োডিন সেবন থাইরয়েডের সমস্যায় খুবই কার্যকরী। ঠিক সময়ে সমস্যা ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডের বেড়ে যাওয়া রোধ করা যেতে পারে। বছরে একবার অন্তত থাইরয়েড পরীক্ষা করানো অত্যন্ত আবশ্যক।