গ্রীষ্মে রোদের তেজ প্রখর হয়। রোদে বেরোলে ঘাম হয়, ত্বক জ্বালা করে। অনেকের ত্বকেই লাল চাকা চাকা র্যাশ বেরিয়ে ত্বক ফুলে ওঠে এবং দাগ হয়ে যায়। সংবেদনশীল ত্বকেই এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতি এড়াতে হলে ত্বককে সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে বাঁচানো দরকার। এছাড়া শরীরের যে-অংশ পোশাকে ঢাকা থাকে না, সেই খোলা ত্বকে নিয়মিত সানস্ক্রিন ক্রিম অথবা লোশন লাগান রোদে বেরোবার আগে। সাধারণত মুখ, ঘাড়, গলা এবং হাতে সানব্লক লোশন লাগাবার দরকার পড়ে। সুতির পোশাক গরমের দিনে আদর্শ। গরমে ত্বককে শীতল করতে সন্ধের সময় অ্যালোভেরা জেলের ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
ডি-হাইড্রেশন থেকে ত্বককে বাঁচান
গরমকালে ঘাম হয়ে শরীর যেমন ডি-হাইড্রেটেড হয়ে পড়ে তেমনি ত্বকের ডি-হাইড্রেশনের সমস্যাও হয়ে থাকে। ক্রমাগত ঘাম হতে থাকার কারণে শরীরে জল কমে যায়। জলের অভাব পূরণ করার জন্যে পর্যাপ্ত পানীয় নেওয়া আবশ্যক নয়তো ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক এবং নিষ্প্রাণ ও অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। ঠোঁট ফেটে যায়। এই সমস্যা রোধ করার জন্য প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর জল খাওয়া উচিত। রসালো ফল, যেমন তরমুজ, ফুটির মতো ফল শরীর এবং ত্বকের জন্য গরমে খুব উপকারী। ত্বককে হাইড্রেট করার জন্য কিছু ডিপ হাইড্রেটিং ট্রিটমেন্ট রয়েছে যেমন হাইড্রেটিং ইলেক্ট্রোপোরেশন থেরাপি, অক্সিজেন থেরাপি, জুভেডার্ম রিফাইন ইত্যাদি।
ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ
গ্রীষ্মের আবহাওয়া, ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাস গ্রোথের জন্য অনুকূল। সর্বত্র ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি থাকলেও খালি চোখে তাদের দেখা যায় না। যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন, ভিড়, কনজেসটেড জায়গায় যাতায়াত করেন তাদের ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ হওয়ার ভয় বেশি থাকে। বাস, ট্রামে ওঠার সময় হ্যান্ডেল ধরতে হয়, সিট বা জানলায় অজান্তেই আমরা হাত দিয়ে ফেলি। এইসব জায়গায় ব্যাকটিরিয়া জমা হয়ে থাকে। পরে ওই হাত অসাবধানতাবশত নিজেদের মুখে দিয়ে ফেলি। এইভাবে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। সুতরাং হাত পরিষ্কার রাখার জন্য সঙ্গে হ্যান্ডওয়াশ রাখলে ভালো। কয়েক ঘণ্টা পরপর হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে সংক্রমণের ভয় থাকবে না। হাত ধুতে যদি অসুবিধা থাকে তাহলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে এবং বারবার মুখে হাত দেওয়ার বদভ্যাস ছাড়তে হবে।
গরমে ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা
গরমকালে ঘাম হলে ধুলো ময়লা এবং দূষণের কারণে ত্বক সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘর্মাক্ত কলেবরে ধুলো ময়লা সহজে আটকে ধরে এবং ত্বকের কোশ বন্ধ হয়ে যায়। ত্বকের এই অবস্থা, ব্রণ, ফুসকুড়ির মতো সমস্যা তৈরি করে। ত্বকের কোশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিতরে ব্যাকটিরিয়াগুলি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রণর সমস্যা হ্রাস করার জন্য ত্বক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে সবসময় ফেসওয়াশ রাখা খুব দরকার। ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্যে সারাদিনে কম করে চারবার মুখ ধোওয়া উচিত। ত্বকের রোমছিদ্র যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য রোজ সন্ধেবেলা ভালো কোয়ালিটির স্কিন ক্লিনজার অথবা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। রাত্রে মুলতানি মাটি অথবা চন্দন পাউডারের প্যাক লাগান, এতে ত্বক ঠান্ডা থাকবে। ত্বকে ব্রণর সমস্যা যদি ঘরোয়া উপায়ে ঠিক না হয়, তাহলে স্কিন স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন কারণ হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর জন্যও ব্রণর সমস্যা হতে পারে।
ঘামাচির সমস্যা
গরমে ত্বক বেশিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ছোটো ছোটো কারণেই ত্বকে ইরিটেশন হতে থাকে। ঘামের সমস্যা শুরু হয়। রাস্তার ধুলোমাটি ঘামে আটকে রোমকূপের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় ফলে ত্বক শ্বাস নিতে পারে না। ত্বক লাল লাল র্যাশে ভরে যায় এবং চুলকোতে থাকে। এর থেকে বাঁচতে ত্বক পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়। দিনে অন্তত তিনবার স্নান করুন। সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর রাত্তিরে স্নান করা একান্ত জরুরি। স্নানের সময় অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল সোপ অথবা বাথ জেল ব্যবহার করুন। ত্বক সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ত্বকে যেখানে ঘামাচি হয়েছে সেখানটা বরফ ঘষুন, এতে জ্বালা ভাব কিছুটা কমবে। পরিস্থিতি না শোধরালে ডাক্তার দেখান।
ট্যানিং-এর সমস্যা
ত্বক সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে এলে, ত্বকে উপস্থিত মেলানিন, ত্বককে বাঁচাতে একটা সুরক্ষাকবচ তৈরি করে। মেলানিনের কারণেই ত্বকে ডার্ক স্পটের সমস্যা হয়। কখনও কিছু কিছু জায়গায় আবার কখনও পুরো ত্বক জুড়ে এই সমস্যা হয়ে থাকে যাকে স্কিন ট্যানিং বলা হয়। এই ধরনের সমস্যায় ৩০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন অল্প সময়ের ব্যবধানে ত্বকে লাগানো উচিত। ট্যানিং-এর প্রভাব দূর করার জন্য লেজার স্কিন রিজুভিনেশন, কেমিক্যাল পিলস অথবা মাইক্রোডার্মাব্রেজন এর মতো চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিন। এই ছোটো ছোটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলি মেনে চললে গরমে মন খুলে বেড়ানোর মজা যেমন উপভোগ করতে পারবেন তেমনি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, সুন্দর ত্বকও বজায় রাখতে পারবেন।