মাইগ্রেন শুধুমাত্র মাথা ব্যাথা নয়, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক রোগ যা ধাক্কা দেওয়ার মতো মাথা ব্যাথার সৃষ্টি করে। সারা বিশ্বে শিশু সহ প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এর শিকার। মাইগ্রেন, বংশপরম্পরায় ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে। যে সব পরিবারে মাইগ্রেন এর ইতিহাস রয়েছে সেখানে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে সদস্যদেরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ক্রনিক মাইগ্রেন, সাধারণ মাইগ্রেন-এর তুলনায় আরও জটিল অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাসে অন্ততঃ ১৫ বার মাথাব্যথা, অন্ততঃ আট দিন মাইগ্রেন এর লক্ষণযুক্ত মাথাব্যথা, তিন মাসেরও বেশী সময় ধরে চললে তা ক্রনিক মাইগ্রেন বলে ধরা হয়। সাধারণত, প্রাথমিকভাবে তীব্রতা কম হলেও পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে তা আরও তীব্র এবং কম ব্যবধানে হতে থাকে। বিশ্বজুড়ে, ক্রনিক মাইগ্রেন বা CM এর হার ০-৫.১%, যা মোটামুটিভাবে ১.৪-২.২% এর সীমার মধ্যে থাকতে পারে।

অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই, ক্রনিক মাইগ্রেন ধীরে ধীরে বেড়ে চলে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো ঘনঘন হয়। কখনও কখনও মাইগ্রেন এর ব্যথা হয় এমন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২.৫ জনের ক্ষেত্রে, প্রতি বছর ক্রনিক মাইগ্রেন এর আকার নিতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে (১০ জনের মধ্যে ২ জন) ক্রনিক মাইগ্রেন, ক্রনিক[2] হয়ে উঠার দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণতঃ এই রোগে আক্রান্তদের ঘন ঘন মাথাব্যথা, আলো, শব্দ, গন্ধ সম্পর্কে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দৃষ্টিজনিত সমস্যা, কথা বলতে সমস্যা, অসাড়তা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা যায়; এই রকমের অবস্থাকে বলে অরা, যা মাইগ্রেন অ্যাটাকের আগে বা অ্যাটাকের সময় দেখা দিতে পারে।

ক্রনিক মাইগ্রেনের শিকার রোগীদের জীবনেও এর ব্যপক প্রভাব পড়ে। মাইগ্রেন অ্যাটাক সামলানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কারণে, আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হন। কাজেই, এর পরিবর্তনশীল তীব্রতা রোধে, লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা প্রাথমিক মাইগ্রেন অ্যাটাক এর সময়েই একজন নিউরোলজিস্ট এর সঙ্গে কথা বলা খুবই জরুরী।

দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে তীব্র মাইগ্রেনের ওষুধের অত্যধিক ব্যবহার, অকার্যকর চিকিৎসা, স্থূলতা, বিষণ্ণতা এবং জীবনে অত্যধিক চাপ। এছাড়াও আরও কিছু কারণ দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ায়। মাইগ্রেনের কালানুক্রমিকতার প্যাথোফিজিওলজিকে একটি থ্রেশহোল্ড সমস্যা হিসাবে বোঝা যেতে পারে। ঘন ঘন মাথা ব্যাথার সঙ্গে কিছু অনুকূল বা প্রিডিসপোজিং কারণ মাইগ্রেনের আক্রমণের থ্রেশহোল্ড কমিয়ে আনে, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক মাইগ্রেনের অ্যাটাকের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেকগুলি ঝুঁকি রয়েছে; যদিও এতে মৃত্যু বা মস্তিষ্কের সরাসরি ক্ষতির সম্ভাবনা কম, তবে অরা মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যদিও মাইগ্রেন এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলি কীভাবে সংযুক্ত তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে প্রদাহ, রক্ত জমাট বাঁধা এবং ধমনীর উপর আস্তরণ বা লাইনিং এর মতো সমস্যার কারণে হতে পারে। এর সঙ্গেই, মাইগ্রেন অ্যাটাকের সময় মাইগ্রেইনাস ইনফ্রাসন ঘটতে পারে। ঠিক সেই কারণেই, ডাক্তাররা মাইগ্রেনের সময়মত চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

ক্রনিক মাইগ্রেনের চিকিৎসায়, মাইগ্রেন অ্যাটাক হ্রাস করা, মাথাব্যথার কারনগুলি সনাক্ত করা এবং মাইগ্রেন অ্যাটাক সামলানোর দিকে নজর দেওয়া হয়। এর সঙ্গেই, বিশেষজ্ঞরা জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে রুটিন মেনে চলার পরামর্শ দেন।  সময়মতো ঘুমানো, চাপ কমানো, ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকা। আপনার মাথা ব্যাথার ধরণের উপর প্রতিদিন নজর রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়। দৈনিক মাথা ব্যাথায় বৃদ্ধি লক্ষ্য করলে, অবিলম্বে রোগীর ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা এবং ওষুধ শুরু করে দেওয়া উচিত।

এছাড়াও, নিউরোলজিস্টরা মাথা ব্যাথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দিতে পারেন এবং মাইগ্রেনের তীব্রতা অনুযায়ী ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় ডোজ বৃদ্ধি করতে পারেন। উপযুক্ত চিকিৎসার  পরিকল্পনা মাইগ্রেনের অ্যাটাকের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা থাকলে অনেক রোগী দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক মাইগ্রেন থেকে এপিসোডিক মাইগ্রেনেও ফিরে আসতে পারেন। অতএব, ডাক্তারের সুপারিশগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...