প্রথম সন্তানের জন্মের পর অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানের বয়স অনুযায়ী বাচ্চার গ্রোথ রেট কতটা কী হওয়া উচিত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ থাকেন। বাচ্চার গ্রোথ চার্ট দেখে, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার উচ্চতা, ওজন কতটা হওয়া উচিত জানা যায়।
এছাড়াও কোন বয়সে বাচ্চার কী কী করা উচিত যেমন হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটা, কথা বলা ইত্যাদি বাচ্চা বয়স অনুযায়ী ঠিকমতো।স্বাভাবিক ভাবে করতে পারছে কিনা সেটাও এই চার্ট দেখেই বোঝা যায়।
চোখের সামনে বাচ্চাকে বড়ো হয়ে উঠতে দেখে সব মা-বাবাই আনন্দ পান। এই আনন্দ মুখে বর্ণনা করা অসম্ভব। অবশ্য এটা এমনই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেটা বাচ্চা বড়ো হয়ে গেলে, মা-বাবার স্মৃতি থেকে এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভাবে মুছে যায়।
অবশ্য সময় বদলাচ্ছে। এখনকার মা-বাবা অনেক বেশি সচেতন। তারা নবজাতকের গ্রোথ সংক্রান্ত সব তথ্য পেতে উৎসুক। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এখনও বহু অভিভাবকেরাই মনে করেন যদি বাচ্চা গোলগাল মোটা এবং ওজন বেশি হয় তাহলে তার গ্রোথ ঠিকঠাক হচ্ছে। কিন্তু বাচ্চা যদি রোগা হয় তাহলে মা-বাবা চিন্তিত হয়ে ওঠেন। এই ভেবে যে, তাদের বাচ্চার গ্রোথ অন্য বাচ্চাদের তুলনায় কম হচ্ছে। অথচ এই চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভুল।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লুএইচও) দ্বারা প্রস্তুত। নবজাতকদের গ্রোথ চার্ট সারা বিশ্বে প্রায় ১০০-রও বেশি দেশে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই দেশের বেশির ভাগ চিকিৎসক নিজস্ব চার্ট তৈরি করে সেটাই মেনে চলার নির্দেশ দেন।
চার্ট অনুযায়ী বাচ্চার গ্রোথ
আমাদের দেশে সাধারণত যে-চার্ট ব্যবহার করা হয়, সেটা দেশের বড়ো বড়ো শহরের সম্পন্ন পরিবারের নবজাতকদের বিকাশের উপর অধ্যয়ন করে, সেটার ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়। যেহেতু খালি ভারতীয় শিশুদের বিকাশের গবেষণালব্ধ এই চার্ট, তাই বেশিরভাগ চাইল্ড স্পেশালিস্ট এই চার্ট-টি ব্যবহার করতেই বেশি আগ্রহ বোধ করেন।
চার্ট অনুযায়ী বাচ্চার গ্রোথ হলে বুঝতে হবে সবকিছুই ঠিকঠাক রয়েছে। অবশ্য চার্টের সামান্য তারতম্য কিছু ঘটলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে চার্ট থেকে বাচ্চার গ্রোথ রেটের বিশাল ফারাক যদি নজরে আসে, তাহলে অবশ্যই সেটা চিন্তার বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ, চার্ট অনুযায়ী ১০ মাস বয়সে একজন কন্যা সন্তানের ওজন ৮.৮ কিলোগ্রাম এবং উচ্চতা ৭১.৬ সেন্টিমিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যদি দেখা যায় বাচ্চাটির ওজন ৭ কিলোগ্রামের কম এবং উচ্চতা ৬৫ সেন্টিমিটারের কম, তাহলে স্পেশালিস্ট ডক্টর-এর পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
চার্টের হিসেবে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন এবং উচ্চতায় যদি সামান্য তারতম্য থাকে, তার জন্য চিন্তা করা উচিত নয়। কিন্তু পার্থক্য খুব বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ঘাটতি জানার চেষ্টা করুন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসা করাতে দেরি করবেন না।
বোঝার সুবিধা
এক বছর বয়সি পুত্রসন্তানের ওজন যদি ৮ কিলোগ্রামের কম হয়, যা কিনা চার্ট অনুযায়ী ৯.৬ কিলোগ্রাম হওয়া উচিত, তা হলে ডাক্তার বাচ্চার ডায়েট চার্ট বদলাবার পরামর্শ দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে। বাচ্চার প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের। নবজাতকের ক্ষেত্রে ফিডিং-এর ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। যদি সঠিক নিয়মে বাচ্চাকে ফিড করানো না হয়, তাহলে সেটা শোধরাবার পরামর্শ চিকিৎসক অনেক সময় দিয়ে থাকেন। যে-মায়েরা কাজের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময়টা বাড়ির বাইরে কাটান তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিশুর গ্রোথ চার্ট দেখে সাধারণত বাচ্চার শারীরিক কোনও সমস্যা বা অসুখ থাকলে, সেটা জানতে পারা যায় না। তাই চিকিৎসকের মত হল— চার্ট অনুযায়ী বাচ্চার গ্রোথ সঠিক না হলে, অভিভাবকদের উচিত চাইল্ড স্পেশালিস্টের পরামর্শ নেওয়া। নিজেদের ইচ্ছেমতন শিশুর ডায়েটে পরিবর্তন না করাটাই বাঞ্ছনীয়।
প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চার ক্ষেত্রে তাদের গ্রোথ, নর্মাল গ্রোথ চার্টের সঙ্গে মিলবে না। কারণ জন্মের সময় এই বাচ্চাদের গ্রোথ এমনিতেই নর্মাল বাচ্চার থেকে কমই থাকে। এই ক্ষেত্রে ডাক্তার আলাদা করে বাচ্চার ডায়েট চার্ট প্রেসক্রাইব করেন। বংশানুক্রমিক এবং জিনগত কারণেও নবজাতকের উচ্চতা এবং ওজনের হেরফের হয়ে থাকে। সবক্ষেত্রেই ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।
অল্প সময়ের ব্যবধানেই নবজাতকের গ্রোথে পরিবর্তন হতে থাকে যেটা ৩ বছর পর্যন্ত খুব তাড়াতাড়ি হয়। গ্রোথ চার্ট দেখে প্রতি মাস অন্তর বাচ্চার ওজন এবং উচ্চতা মাপা হলে এবং কতটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা মা-বাবারা বুঝতে পারেন। যদি বড়ো কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে শিশুকে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে।