চারিদিকেই বেশ একটা উৎসবের আমেজ। বাঙালির নতুন বছরের সূচনা তো আছেই সঙ্গে নতুন বছরের খাওয়াদাওয়া, নতুন জামাকাপড় কেনার ধুম, চড়ক গাজনের মেলা, রামজানের মাস, চৈত্রের সেলের হাঁকডাক। কিন্তু শরীর স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তবে উৎসবের সব আনন্দই মাটি।

শৈশব থেকেই আমরা এটা জেনে এসেছি যে, স্বাস্থ্য ভালো হলে মনে আনন্দ-স্ফূর্তির অভাব হয় না। অথচ করোনা প্যান্ডেমিক মানুষকে দুর্বিষহ এক অতল অন্ধকারময় গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। মানুষ কাজ হারিয়েছে, স্বাস্থ্য হারিয়েছে, নিজের প্রিয়জনদের হারিয়েছে এই দুই বছরের সীমিত ব্যবধানে।

করোনার ভয়াবহতা কাউকে বাদ দেয়নি। এই অতিমারিতে আমরা সেলিব্রিটি থেকে শিল্পী, বহু নামি সাংবাদিক, খেলোয়াড়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হারিয়েছি। সব পেশার মানুষই কোনও না কোনও ভাবে কোভিড ১৯-এর বলয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

গত দুই বছর উৎসবের আনন্দ তেমন ভাবে কেউই উপভোগ করে উঠতে পারেননি। তবুও বলতে হবে আগের তুলনায় মানুষের মনে সচেতনতা বেড়েছে। কী কী নিয়মে চললে মানসিক চাপমুক্ত হয়ে এবছরের উৎসবের নির্মল আনন্দে গা ভাসাতে পারবেন তারই কয়েকটি টিপস এখানে দেওয়া হল।

আগাম পরিকল্পনা করে রাখুন : অতিমারির করাল গ্রাস এখন নেই ঠিকই কিন্তু রোগ ভোগ করে যারা সেরে উঠেছেন বা প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন, তাদের মনে রোগের সংস্পর্শে আসার আতঙ্ক থাকবেই। সাধারণ মানুষও ভয় পাবে। তাই যে-কোনও রোগেরই উপসর্গগুলি জানা ও বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। উৎসবের শুরুতেই প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও দরকারি ফোন নম্বর কাছাকাছি রাখুন। এই কঠিন সময়ে কারা এবং কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক সাহায্য করতে পারে তার একটা পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখুন।

দৈনিক রুটিন মেনে চলুন : রোজের নিয়ম মেনে চললে উৎসবেও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারবেন। সঠিক সময় খাওয়াদাওয়া, দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুম, নিয়মিত এক্সারসাইজ, পছন্দের কোনও কাজ শুরু করা ইত্যাদি মন ও শরীর ভালো রাখবে। তবে সময় সময় বিশ্রাম নিতে যেন ভুল না হয়।

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন : চারপাশের অসুস্থতার খবর কানে আসলেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না। অপরের আনন্দে নিজেকে যুক্ত রাখুন। মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠা এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতার খবরাখবর রাখার চেষ্টা করুন।

সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন : সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে প্রিয়জনদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তুললে হতাশার শিকার হতে পারেন। কেনাকাটা করতে গিয়ে ভিড়ের সম্মুখীন আপনাকে হতেই হবে তবে সাবধানতাগুলো মেনে চলুন যেমন মাস্ক পরা, সময়ে সময়ে হাত ধোয়া, বাড়ি ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে ফেলা ইত্যাদি। ফোনে পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। প্রয়োজনে তাদের বাড়িও যেতে পারেন বা বাড়িতেও অতিথিদের নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন তবে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কম রাখাই বাঞ্ছনীয়। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে অপরকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করুন বা অপরের নিমন্ত্রণ স্বীকার করুন। তবে সবরকম সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করবেন।

উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে : উদ্বেগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন স্বাস্থ্যকর্মীর থেকে বিশদে জেনে রাখুন। ঘরোয়া উপায়ে এগুলো মেনে চলুন। আরামদায়ক অবস্থানে থাকুন, কাঁধ ও ঘাড়কে বিশ্রাম দিন, তলপেট ব্যবহার করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন এবং জোরে জোরে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখলে এবং নিশ্বাস টেনে কিছুক্ষণ ধরে রেখে ধীরে ধীরে প্রশ্বাস ছাড়লে দেখবেন উদ্বেগ এবং উত্তেজনা অনেক কম হয়ে গেছে।

নেতিবাচক চিন্তা এবং অনুভতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন : আপনার চিন্তা-ভাবনা যদি আপনার সমস্যার সমাধান না করে বরং উত্তেজনা ভয়, উদ্বেগ-এর সৃষ্টি করে তাহলে তাকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন। ভাবনা নিয়ে যদি কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাহলে নেতিবাচক অনুভূতি এবং আবেগের বশে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলতে পারেন। মনে রাখতে হবে আমাদের ভাবনাচিন্তা ও কাজকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম কিন্তু করোনার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

সঠিক ডায়েট : পুষ্টিকর, বাড়ির তৈরি খাবার, চিকেন, কম মিষ্টি, প্রোটিন, ফল, স্যালাড, ফলের রস, টাটকা শাকসবজি, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

শরীরচর্চা : ব্যায়াম অবশ্যই করা উচিত। ১৫ মিনিটের জন্য হলেও সূর্যের আলোয় হেঁটে আসা অথবা ঘরের মধ্যে অ্যারোবিকস করাটা আবশ্যক। এই ধরনের অ্যাক্টিভিটি, মাংসপেশিতে রক্তসঞ্চার বাড়িয়ে হাড়ের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি-এর প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের স্ট্যামিনা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মনও পারিপার্শ্বিক আনন্দের শরিক হতে পারে।

ব্যক্তিগত সাবধানতা : যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়ে উৎসব উদযাপন করুন। মাস্ক, স্যানিটাইজার ও দূরত্ববিধির সতর্কীকরণ ভুলবেন না। প্রয়োজন ছাড়া ভীড়ভাট্টা, গণপরিবহণ, এড়িয়ে চলাই ভালো। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...