বর্ষাকালে মুখরোচক খাবারের প্রতি লোভ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু খাবারের ইনটেক Monsoon Diet এ সামান্যতম অসাবধানতা শরীরে রোগ বাসা বাঁধার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং এই সময় খাবার ও পানীয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কারণ রোগ ও সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায় এই সময়। এমন পরিস্থিতিতে সামান্যতম অসাবধানতা আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
বর্ষাকালের জন্য ডায়েট প্ল্যান
– প্রাতঃকাল : গ্রিন টি অথবা লেবু চা বা দুধ দেওয়া চা ১ কাপ। সঙ্গে ১-২টি বিস্কুট অথবা রাস্ক।
– জলখাবার : ২টি মিসসি রুটি দই দিয়ে অথবা ১ বাটি দালিয়া কিংবা ওটস অথবা ১টি পুর দেওয়া পরোটা দই সহযোগে।
– ১১টার সময় : টাটকা মরশুমি ফল অথবা টাটকা ফল দিয়ে চাট বানানো কিংবা বাড়িতে তৈরি টাটকা ফলের রস ১ গেলাস।
– মধ্যাহ্নভোজন : ২টি রুটি অথবা ১ বাটি ভাত। রান্না করা সবজি ২০০ গ্রাম। রান্না করা হাই প্রোটিনযুক্ত আহার ২০০ গ্রাম (মাছ, চিকেন, ডিম, নিউট্রি নাগেট, রাজমা, কালো ছোলা, তোফু চিজ অথবা বাড়ির তৈরি ছানা) দই – ২০০ গ্রাম, স্যালাড – ১ প্লেট (স্যালাডপাতা খেতে হলে ভালো করে ধুয়ে নেবেন)।
– বিকেলের চা : চা অথবা ২০০ গ্রাম গরমদুধ। যে-কোনও পছন্দমতো মিল্কশেকও খেতে পারেন।
– নৈশভোজের আগে : বাড়িতে তৈরি টাটকা সবজির অথবা চিকেনের স্যুপ। মাখন দেবেন না।
– নৈশভোজ : ২টি রুটি, ২০০ গ্রাম মুগডাল, হালকা সবজি ১৭৫ গ্রাম।
– শুতে যাওয়ার আগে : হালকা গরমদুধ ২০০ গ্রাম। ডায়েটেশিয়ানদের মতে, এই ডায়েট মেনে চলতে পারলে শরীর সুস্থ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে। বর্ষার দিনগুলোতে ফিট থাকার সহজ উপায় এটাই। বর্ষায় রান্নাঘরে যাওয়ার আগে কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
– রান্না করার আগে অথবা খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
– বাজার থেকে ফল বা সবজি কিনে এনে রান্না করার আগে অথবা ফ্রিজে রাখার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
– ফুটিয়ে নেওয়া জল বোতলবন্দি করে খান। জলে খুব তাড়াতাড়ি জীবাণু ছড়ায়। প্রতিদিন বোতল ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার জল ভরুন। জল ফুটিয়ে তুলসী পাতা দিয়ে খেতে পারেন।
– টাটকা সবজি দিয়ে রোজ টাটকা খাবার বানিয়ে খান। এটা শরীরের জন্য উপকারী এবং তাড়াতাড়ি হজম করাতেও সাহায্য করে। ফাইটোকেমিক্যালযুক্ত টাটকা ফল এবং সবজি খাবেন। সবুজ, লাল এবং হলুদ ফল ও সবজির মধ্যে এটি বেশি পরিমাণ পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থও প্রচুর পরিমাণে থাকে।
– বাসি খাবার একেবারেই খাবেন না।
– শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন পদার্থ, যেমন – পুদিনা, নিম, তুলসী এবং তেঁতুলপাতা খাওয়া উচিত।
– কিছুটা সময় গ্যাপ দিয়ে দিয়ে, অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া উচিত।
– অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। ননস্টিক প্যানে অল্প তেল চারিয়ে নিলেই অল্প তেলেই খাবার বানানো যেতে পারে। সম্ভব হলে ভারী তেল ব্যবহার করবেন না।
– কিচেন স্ল্যাবে কাজ হয়ে গেলে নুনজল দিয়ে মুছে নিন।
– চপিং বোর্ড, প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর ভালো করে ধুয়ে রাখুন। ধুয়ে না রাখলে জীবাণু জন্মায় এবং স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক।
– ছুরি, কাঁচি যা রান্নাঘরের কাজে লাগে, ব্যবহারের পর ভালো করে ধুয়ে রোদ্দুরে শুকিয়ে রাখুন।
– বর্ষার সময় ভাজাভুজি, অতিরিক্ত মশলা দেওয়া খাবার না-খাওয়াই ভালো।
– বাইরের কেটে রাখা ফল, সবজি খাবেন না।
– সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলুন।
– বাসি ফল অথবা অতিরিক্ত পেকে যাওয়া এবং রং বদলে গেছে এমন ফল খাবেন না।
– ফুলকপি, রাজমার মতো খাদ্যপদার্থ যা পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে, বর্ষাকালে খাওয়া উচিত নয়।
– হালকা ব্যায়াম করুন।
– বেদানা অথবা বেদানার রস, আমাশায় আরাম দেয়।
– এইসময় নতুন যে আনাজপাতি বাজারে আসে তা না-খেতেই চেষ্টা করবেন। নতুন আনাজ শরীর গরম করে।
– বর্ষার সময় দুধ অথবা জল মধু মিশিয়ে খেলে শরীর ভালো থাকে এবং এটি শরীরকে এনার্জি প্রদান করে।
ফল ও সবজি খান
টাটকা ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে জল, পৌষ্টিক তত্ত্ব, ভিটামিন, মিনারেল, ন্যাচারাল সুগার এবং ফাইবার উপস্থিত থাকে। বর্ষায় এবং গরমে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি খান, যেমন খরমুজ, কমলালেবু, লিচু, টম্যাটো, শসা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে স্যালাড বানিয়ে অথবা ফলের টাটকা রস তৈরি করে। সময়কালীন ফল-সবজি শরীরকে হাইড্রেট করে উপরন্তু শরীর ঠান্ডাও রাখে। এতে উপস্থিত ফাইবার শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে। আমলকী এবং লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘সি’ শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বর্ষায় ও গরমে ফ্যাটযুক্ত খাবার না খেলেই ভালো হবে।
– একবারে বেশি খাবার খাবেন না।
– আগের দিনের বাসি এবং আঢাকা খাবার খাবেন না।
– সবজি অথবা ফল রান্না করার আগে এবং খাওয়ার আগে অথবা স্যালাড বানাবার আগে, ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
– আগে থেকে সবজি অথবা ফল কেটে রাখবেন না। বাইরের কাটা ফল খাবেন না।
– ফিলটার করা জল অথবা ফোটানো জল খাওয়া উচিত।
– বর্ষায় খাবারের প্রতি সংযম দেখানো বাঞ্ছনীয়।
– ভালো ভাবে রান্না করা খাবার খাবেন।
মনসুন মন্ত্র
প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন : জল শরীরকে হাইড্রেট করে এবং ঠান্ডা রাখে। তাছাড়াও তৃষ্ণার্ত জীবের তৃষ্ণা মেটায়। গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে জল এবং সোডিয়াম বাইরে বেরিয়ে যায়। শরীরে যাতে জলের পরিমাণ কম হয়ে না-যায় তার জন্য প্রচুর জল খাওয়া প্রয়োজন। তেষ্টা না-পেলেও মাঝে মাঝেই জল খাবেন। বাড়ির বাইরে যাওয়ার আগে, সঙ্গে জলের বোতল অবশ্যই সঙ্গে রাখা উচিত। বাড়িতে প্রত্যেক ঘরে একটা করে জলের পাত্র রাখা উচিত যাতে কুঁড়েমির কারণে জল খাওয়া কেউ এড়িয়ে না যায়। হাতের কাছে জল থাকলে, জল খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া যায় না। একসঙ্গে অনেকটা জল খেয়ে নেবার চেষ্টা করবেন না। অল্প সময়ের ব্যবধান রেখে অল্প অল্প জল পান করুন।