অনেকেরই একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, ব্যায়াম করতে গেলেই হয়তো কোনও একটা জিম বা ফিটনেস ক্লাব-এর সদস্য হতে হবে। কিন্তু প্রতিদিনের ব্যস্ত শেডিউল থেকে সময় বের করে, ক’জনই বা পারেন জিম-এ গিয়ে একটা ‘ফিটনেস রেজিম’ মেনটেইন করতে! এটা বুঝতে হবে যে, ঠিক যে-ধরনের জীবনশৈলীতে আমরা ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি, তাতে শরীরকেও খানিকটা মজবুত করে তোলার প্রয়োজন, কারণ প্রতিদিনকার রুটিনে নিজেকে চনমনে রাখতে, সময়ের দাবি মেনে সুস্থভাবে বাঁচার একটাই মন্ত্র – সেটা হল এক্সারসাইজ।
ব্যায়াম আপনাকে শুধু শারীরিক ভাবেই নয় – মানসিক ভাবেও ফিট রাখে। কোনও প্রপস ছাড়াই, ঘরোয়া ব্যায়ামে আপনি চনমনে আর চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারবেন, যদি সঠিক প্রক্রিয়াটি আপনার জানা থাকে। কোনও যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই, স্রেফ ওয়ার্কআউট করে ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। আসলে উদ্দেশ্য যা-ই হোক, Physical Exercise জিনিসটা একধরনের কমিটমেন্ট যার মূল উদ্দেশ্য হল নিষ্ঠাসহকারে একটি বিধিবদ্ধ এক্সারসাইজ রুটিন ফলো করা, যার ফলে আপনার দেহের আকারে, আপনার খাদ্য-তালিকায় এবং অবশ্যই লাইফস্টাইল-এ একটা বড়ো ধরনের পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য।
আপনি কি জানেন, আপনার হূদযন্ত্রটিকে সুস্থ সবল রাখতে এবং ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১০,০০০ পদক্ষেপ ফেলা উচিত। এটাকে সম্ভব করতে হলে কাছাকাছি জায়গার কাজগুলো পায়ে হেঁটেই সারতে চেষ্টা করুন। আর সেই সঙ্গে থাকুক কিছু সহজ ব্যায়াম।
যে-কোনও ওয়ার্কআউট রুটিন বাড়িতে শুরু করার আগে ফুল বডি চেক-আপ করিয়ে নেওয়া ভালো। এর ফলে কী ধরনের ব্যায়াম করা আপনার উচিত হবে না তার একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন। ওয়ার্কআউট রেজিম-এর শুরুতে ওয়ার্ম আপ এবং শেষে কুল ডাউন এক্সারসাইজ করতে ভুলবেন না। এক্সারসাইজ এনজয় করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল একজন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে ব্যায়াম করা। এর ফলে Physical Exercise করার একটা তাগিদ থাকবে এবং পরস্পর-কে মোটিভেট করতে পারবেন।
স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ : দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ান। দুহাতে দেয়ালে ভর দিয়ে প্রথমে বাঁ-পা পেছন দিকে যতটা প্রসারিত করা যায় করুন। কয়েক সেকেন্ড এইভাবে দাঁড়িয়ে একই প্রক্রিয়া রিপিট করুন ডান পায়ের ক্ষেত্রে।
আর-একটি সহজ স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা যায়। মাটিতে ফ্ল্যাট হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুহাত দিয়ে প্রথমে ডান হাঁটুটা চেপে বুকের কাছে নিয়ে আসুন, রিল্যাক্স করুন। পুনরায় একই প্রক্রিয়া করুন বাঁ-হাঁটুর ক্ষেত্রে।
কার্ল : মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। মাথার উপর দিকে দু’হাত ছড়িয়ে দিন। এবার হাত ও শরীরের উপরের অংশ মাটি থেকে উপরে তোলার চেষ্টা করুন। এটি পনেরো থেকে কুড়ি বার পুনরাবৃত্তি করুন।
লেগ লিফ্টস : একটি চেয়ারের ধারের দিকে বসুন। হাতের পাতা দুটি, শরীরের পিছন দিকে চেয়ারের উপর পেতে রাখুন। পা দুটি ৯০ ডিগ্রি অবস্থানে মাটিতে থাকবে। এবার দুটি পা-কে একসঙ্গে যতদূর সম্ভব সামনে প্রসারিত করুন। কোমর ও তার নীচের অংশের মাসল-এ যতটা সম্ভব চাপ দিয়ে এই ব্যায়াম করুন। এবার আস্তে আস্তে পা-দুটি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনুন। পা’দুটি উপরে তোলার সময় নিশ্বাস নিন ও পা মাটিতে নামানোর সময় প্রশ্বাস ছাড়ুন। এই ব্যায়াম দশবার রিপিট করুন।
লাঞ্জেস : সোজা দাঁড়িয়ে পা-দুটি ছড়িয়ে দিন। একটা পা সামনে থাকবে অন্যটি পিছনে। দু’পায়ের মধ্যেকার দূরত্ব যেন দু’ ফিটের বেশি না হয়। এবার তলপেটের মাসল-এ চাপ দিয়ে শরীরের উপরি অংশ সামনের পা পর্যন্ত ঝোঁকান। দেখবেন হাঁটু যেন কোনও অবস্থায় পায়ের পাতার দৈর্ঘ্যের থেকে বেশি না ঝোঁকে। একই ভাবে এই ব্যায়াম দুটি পায়ের ক্ষেত্রেই করুন।
জগিং : টি-ভি চালিয়ে বা মিউজিক শুনতে শুনতে জগিং করা খুব ভালো ব্যায়াম। জগিং এক জায়াগায় দাঁড়িয়ে থেকেই করা যায়। তবে ব্যায়ামের জন্য নির্দিষ্ট জুতোই ব্যবহার করুন, এতে পা স্ট্রেসমুক্ত থাকবে।
পুশ-আপস : হাতের পাতা ভিতর দিকে ঘুরিয়ে মাটিতে ভর দিন। হাঁটু টান টান রেখে মুখ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে গোটা শরীরের পেশি টানটান রেখে পুশ-আপ করুন। শরীরকে আরও টান করে রাখতে পা দুটিকে উঁচু বেঞ্চ-এর উপর তুলে রাখুন আর হাতে ভর রাখুন মাটিতে। শরীর মেঝে বরাবর ঝোঁকানোর সময় অর্থাৎ ডন দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন, আপনার বুক যাতে মেঝে স্পর্শ করে।
ডিপস : দুটি চেয়ারকে সমান্তরাল অবস্থায় রাখুন। দুটি হাত চেয়ারে ভর দিয়ে বৈঠক দিন। এই ব্যায়াম করার সময় মাথা সোজা রাখবেন এবং শরীরের মাসল যথাসম্ভব টানটান রাখবেন।
বাড়িতে বসে কম্পিউটারে টানা কাজ করলেও ব্যায়ামের কথা ভুলবেন না। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে পায়ের পাতা উপর-নীচ করুন। এতে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ভালো ভাবে হবে। নাচ খুব ভালো ব্যায়াম, নাচ জানলে তাও চর্চা করতে পারেন। তবে যে-কোনও ব্যায়ামের শুরুতে স্ট্রেচিং ওয়ার্ম-আপগুলি অবশ্যই করবেন। ব্যায়াম করতে বোরিং লাগবে না যদি হালকা মিউজিক বা টিভি চালিয়ে ব্যায়াম করেন। লিফট-এর পরিবর্তে যতটা সম্ভব সিঁড়ি ব্যবহার করুন। খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস বজায় রাখুন।