আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তেল। বিভিন্ন ভাবে আমরা Different types of oil ব্যবহার করে থাকি। ‘চুল তাজা তেলে’ — একথাটা ছোটোবেলা থেকে সবাই শুনে আসছি। রুক্ষ জট-পড়া চুল দেখলেই মা-ঠাকুমারা বলতেন, ‘আয় চুলে তেল দিয়ে ভালো করে আঁচড়ে দিই।’ আজকের ফ্যাশনে চুলে তেল বর্জনীয় হলেও খ্যাতনামা কেশবিশেষজ্ঞরাও বলে থাকেন সপ্তাহে অন্তত একদিন গরম তেলের মাসাজ চুলে করা অবশ্য প্রয়োজন। সারারাত তেল মাথায় রেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে নিলে চুল ঝলমল করে। ঠিক একই ভাবে সারা শরীরে তেলমাখা অত্যন্ত জরুরি। ছোট্ট শিশুকে স্নানের আগে রগড়ে রগড়ে তেল মালিশ করা এবং রোদে রাখার চল এখনও আছে। তেল মালিশের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনও বেড়ে যায়, যা ত্বককে আরও চকচকে করে তোলে। আজকের ফ্যাশন দুনিয়ায় দৈনন্দিন ব্যবহারে তেলের জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন লোশন, ক্রিম। যার মূল উপযোগিতা কিন্তু তেলের গুণাগুণ। শুধুমাত্র বাহ্যিক প্রয়োগই নয় খাদ্যাভ্যাসে পরিমাপ মতন তেল গ্রহণ খুবই জরুরি। ভারতীয়রা বিভিন্ন ধরনের তেলের ব্যবহার বিভিন্ন ভাবে করে থাকে। দক্ষিণ ভারতে নারকেল তেল ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়, অন্যদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে অলিভ তেল, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে সরষের তেল ব্যবহারের চল। সারা দেশ জুড়ে ব্যবহূত হয় সূর্যমুখী বীজের তেল, তিল তেল, রেপসিড তেল, বাদাম তেল ইত্যাদি। সঠিক পরিমাণে তেল শরীরে গ্রহণ করলে তা, কমিয়ে দেয় সুগার, হার্ট-ডিজিজ, কোলেস্টেরল, ক্যানসার ও আরও অনেক রোগ।
নারকেল তেল
রাজীব গান্ধি ক্যানসার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র অংকোলজিস্ট ডা. বিনীত তলোয়ারের কথায়, নারকেল তেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের সঙ্গে এটি অ্যান্টি-ইনফ্লোমেটারি ক্যানসার রোধে সহায়ক।
নারকেল তেলের গুণাগুণের শেষ নেই। সাধারণ কাটা, ছেঁড়া, জ্বালা ভাব দূর করতে, দাদ, পাঁজরা চুলকানি কমাতে এই তেলের প্রলেপ কার্যকরী। খাদ্যের মাধ্যমে এই তেল গ্রহণে তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড (এমসিএফএ) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে এই তেল উপযোগী। হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত মানুষরা এই তেল খাদ্যে গ্রহণ করলে ভালো ফল লাভ করে। নারকেল তেল শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মতো কাজ করে এবং এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে।
শরীরের অভ্যন্তরে যদি একবার নারকেল তেল শোষিত হয়ে যায় অর্থাৎ অ্যাবজর্ব হয়ে যায় তাহলে তা কার্বোহাইড্রেটের মতোই এনার্জি উৎপন্ন করে। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ আরও সক্রিয় হয়। পাকস্থলীর অভ্যন্তরে পাচন প্রক্রিয়া আরও সক্রিয় হয় এবং এমসিএফ-এ সক্রিয়তায় শরীরে ফ্যাট গলিয়ে দিতে সাহায্য করে।
নারকেল তেলের উপযোগিতা
– ত্বক নরম রাখতে নারকেল তেলের মাসাজ উপযোগী
– নারকেল তেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর
– ভোজ্য নারকেল তেলে অভ্যস্তদের, শরীরে বলিরেখা চট করে দেখা যায় না
– নারকেল তেল ঘাম কম করে
– ফ্যাট কমাতে নারকেল তেল অদ্বিতীয়
– অগ্ন্যাশয়ের কোনও প্রদাহের জন্য নারকেল তেল উপযোগী
– শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
– সংক্রামিত স্থানে নারকেল তেলের প্রলেপ ক্ষত ঠান্ডা করে
– প্রস্টেটের অসুবিধায় এবং পিত্তাশয়ের রস নিঃসরণের অসুবিধায় নারকেল তেল সাহায্যকারী
– রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ককারী
– এইচআইভি এবং ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের ক্ষেত্রে নারকেল তেলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলের অন্য নাম লিক্যুইড গোল্ড। যে-কোনও ভাবে ব্যবহার করা যায় এই তেল। শরীরের মাসাজ, রূপচর্চা, রান্না সবেতেই অলিভ অয়েল। অলিভগাছের ফল টাটকা অবস্থাতেও খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। আবার খুব সহজেই তেল নিষ্কাশন করা যায়। অলিভ-কে সহজপাচ্য ‘সুপার ফুড’ মানা হয়। শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে, ভিটামিন-ই’র উৎস অলিভ অয়েল। গবেষণায় দেখা গেছে অলিভ অয়েল এলডিএল কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এই এইচডিএল কোলেস্টেরল স্তর বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অলিভ অয়েল গুরুত্বপূর্ণ। এটি সহজপাচ্য তেল। নিয়মিত ব্যবহারে শরীরে ক্যানসার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। পিত্তথলির মধ্যে পাথর হওয়ার আশঙ্কা দূর করে।
অলিভ অয়েলের উপযোগিতা
– সহজপাচ্য
– নিয়মিত মাসাজে স্ট্রেচমার্ক কমিয়ে দেয়
– চুল ঝরা রোধ করে
– আর্থারাইটিসের ব্যথা কমায়
– কোলন, স্কিন এবং ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসার পর খাদ্য প্রস্তুতিতে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকরী
– ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করে
সরষের তেল
বর্তমানে সরষের তেল বিক্রির ক্ষেত্রে অনেক দেশই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যদিও শতাব্দী প্রাচীন এই তেল মালিশের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে এসেছে। রান্নায় এই তেলের ব্যবহার স্বাদ বাড়িয়ে দেয় বহুগুনে
সরষের তেলের উপযোগিতা
– হার্ট সমস্যা প্রতিরোধে এই তেল উপযোগী
– মাথায় নিয়মিত মাসাজ করলে চুলপড়া বন্ধ হয়। চুল ঘন কালো হয়
– সর্দি-কাশিতে এই তেল গরম করে মালিশ লাভদায়ক
– জ্বালানির কাজেও এই তেল ব্যবহূত হয়
– রান্নার ক্ষেত্রে এই তেল স্বাস্থ্যসম্মত
– আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সরষের তেলের ব্যবহার সুপ্রচলিত
বাদাম তেল
বাদাম তেল শরীর তথা হার্টের পক্ষে খুবই স্বাস্থ্যকর। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এই তেল। ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ এই তেলে পাওয়া যায়। কাঁচা বাদাম চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। এজন্য ছোটোদেরও সকালে ৩-৪টে বাদাম খাওয়ানো প্রয়োজন। রূপচর্চাতেও বাদাম তেল গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রাবিং-এর জন্য বাদাম তেল প্রয়োজন হয়।
বাদাম তেলের উপযোগিতা
– চামড়ার ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিলে ঠান্ডা হয়
– মুখের কালো ছোপ দূর করে
– চুল লম্বা ও মজবুত করতে সহায়তা করে
– বাদাম তেল ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
– বাদাম তেলের মাসাজ মাংশপেশিকে আরও সক্রিয় করে
– রান্নায় বাদাম তেলের ব্যবহারে খাদ্য সহজপাচ্য হয়
খেজুর তেল
অন্য নাম আফ্রিকান পাম অয়েল। এই তেলের ট্রাইগ্লিসারেয়েড মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যাথলিটরা খাদ্যে এই তেল বেশি পছন্দ করে কারণ এই তেল খুবই এনার্জিটিক। বাদাম, নারকেল তেলের মতো খেজুর তেলও রূপচর্চার কাজে লাগে।
খেজুর তেলের উপযোগিতা
– বিটা-ক্যারোটিন পূর্ণ
– অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ
– ধমনীর রক্ত সংবহনে সহায়তা করে
– খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে এই তেল প্রবেশ করলে শরীরকে চট করে ক্লান্ত হতে দেয় না
– খনিজ লবণ পাওয়া যায় এই তেলে
এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক বর্ণিত তেলের খাদ্যগুণাগুণ যা মানব শরীরে লাভদায়ক।