বাচ্চা যাতে জেদি হয়ে উঠতে না পারে তাই শৈশব থেকেই প্রয়োজন তাদের শাসন করা। তবে অতিরিক্ত আদর অথবা অতিরিক্ত শাসন দুটোই অনুচিত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। বাচ্চার জেদের কারণ, তার পিছনে কী মানসিকতা কাজ করছে সে বিষয়ে ধৈর্য ধরে মা-বাবাকে বুঝতে হবে এবং সেই মতো তাদের পদক্ষেপ করতে হবে।
সাধারণত বাচ্চার জেদের কারণগুলি হল :
বাচ্চার একটা জেদ যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় কোনও জিনিস নিয়ে বাচ্চাকে সাধারণত জেদ করতে দেখা যায়। দ্বিতীয়বারও যদি বাচ্চা বোঝে বাবা-মা এটাও মেনে নিচ্ছেন, তাহলে তৃতীয় কোনও জিনিস পাওয়ার জন্য বাচ্চা জেদ দেখাতে শুরু করে এবং এভাবেই জেদ করাটা বাচ্চার অভ্যাসে পরিণত হয়। যে-কোনও জিনিস নিয়ে বাচ্চা জেদ করতে পারে কিন্তু কীভাবে বড়োরা সেটার মোকাবিলা করবেন, বড়োদেরই তার সমাধান খুঁজে নিতে হবে।
মোবাইলের জেদ : বড়োদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেখে বাচ্চারাও মোবাইল নেওয়ার জন্য বায়না করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বড়োদের উচিত বাচ্চাকে বোঝানো যে, মোবাইল তাদের কোনও কাজের জিনিস নয়। চ্যাঁচামেচি, কান্নাকাটি করলেও ভোলানোর জন্যও বাচ্চার হাতে মোবাইল তুলে দেওয়া উচিত নয়। এতে বাচ্চাও বুঝতে পারবে যতই জেদ দেখাক, মোবাইল তাকে কেউ দেবে না।
অনেক সময় বাচ্চাকে চুপ করাতে অথবা মা-বাবা নিজেদের সুবিধা দেখতে গিয়ে ভাবেন, কিছুক্ষণ মোবাইল বাচ্চাকে দিলে এমনই বা কী ক্ষতি হবে, কিছুক্ষণ তো স্বস্তি মিলবে। অথচ নিজেদের অজান্তেই তারা বাচ্চার জেদকে প্রশ্রয় দিয়ে বসেন। এতে বাচ্চার জেদ করার অভ্যাস আরও বেড়ে যায়। শিশুদের ব্যস্ত রাখতেও মা-বাবা তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেন গেম খেলবার জন্য। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চা কৈশোরে পড়লেই নিজের আলাদা মোবাইল কেনার জন্য মা-বাবার উপর প্রেশার দিতে থাকে।
জাংক ফুড খাওয়ার জেদ : দেখা যায় বাড়ির খাবার খেতেই বাচ্চাদের যত অনীহা। অথচ রেস্তোরাঁ বা রাস্তার জাংক ফুড খাওয়ার জেদ কিছুতেই ছাড়তে পারছে না। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে রেস্তোরাঁর মতো সাজিয়ে এবং বাড়িতেই সুস্বাদু খাবার বানিয়ে বাচ্চাকে পরিবেশন করতে পারেন। এতে বাচ্চারও বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগবে এবং অভ্যাসও তৈরি হবে। সবুজ শাসকসবজি, প্রয়োজনীয় প্রোটিন সবই বাচ্চার ডায়েটে রাখার চেষ্টা করুন যাতে বাচ্চার শরীরে পুষ্টির অভাব না হয়। রান্না নিয়ে বিভিন্নরকম এক্সপেরিমেন্ট করুন এবং একই খাবার রোজ বাচ্চাকে না দিয়ে বদলে বদলে দিন।
পকেট মানি পাওয়ার জেদ : কখনও চকোলেট বা পিৎজা, অথবা আইসক্রিম, কুরকুরে, চিপস, বার্গার ইত্যাদি খাবার জন্য বাচ্চা হামেশাই পকেট মানি পাওয়ার জেদ করতে থাকে। বাচ্চার এই জেদ কখনওই মেনে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। খাবার কিছু খেতে চাইলে বলতে পারেন, আপনি কিনে এনে দেবেন। কারণ ছোটো থেকেই হাতে টাকা দেওয়ার অভ্যাস করলে, বাচ্চার অন্য কোনও ধরনের খারাপ অভ্যাসও রপ্ত করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। স্কুলে টিফিন খাওয়ার জন্য টাকা চাইলে টাকা না দিয়ে সুস্বাদু কোনও খাবার প্যাক করে দিতে পারেন একটু বেশি করে, যাতে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেতে পারে। এতে সন্তানের বন্ধু-বান্ধবরাও বাড়ির খাবারের প্রতি টান অনুভব করবে।
নতুন খেলনা অথবা গ্যাজেট কেনার জেদ : পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখে বা তাদের বাচ্চাদের দেখে অথবা বিজ্ঞাপনে দেখে, বাচ্চা প্রায়শই নতুন খেলনা বা নতুন নতুন গ্যাজেটস কেনার জেদ করতে থাকে। বাচ্চার জেদে কর্ণপাত না করে এইসব জিনিসের বদলে বাচ্চার মানসিক বিকাশ বা পড়াশোনা বা যাতে জ্ঞান বাড়বে সেই সম্পর্কিত জিনিস বা বই কিনে দিতে পারেন। খেলাধুলোয় উৎসাহ দিতে পারেন। ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, টেনিস সবরকমের স্পোর্টসই শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ছোটো থাকতেই সাঁতারে বাচ্চাকে ভর্তি করে দিতে পারেন।
পড়াশোনা না-করার জেদ : অনেক বাচ্চাই কিছুতেই পড়াশোনায় মন দিতে চায় না অথবা স্কুলের দেওয়া হোমওয়ার্ক না করার অজুহাত খুঁজতে থাকে। এমনকী শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে মা-বাবাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। কান্নাকাটি করে জেদ দেখিয়ে বই-খাতাও ছিঁড়ে ফেলে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত সন্তানের মানসিক ভারসাম্য খতিয়ে দেখা যে, বাচ্চার পড়াশোনায় এতটা ভীতির কারণ কী? ক্লাসে পড়া বুঝতে কি ওর কোনও সমস্যা হচ্ছে অথবা স্কুলে অতিরিক্ত শাসনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে কী আপনার সন্তানকে? এই বিষয়গুলির সমাধান করা মা-বাবার দায়িত্ব।