বেশ বড়ো সংখ্যায় মহিলাদের মধ্যে সন্তানের জন্মের পর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা এই প্রসবোত্তর অবসাদ দেখা দেয়। হঠাৎ হঠাৎ মুড চেঞ্জ, কষ্ট পাওয়া, রাগ হওয়া, কারও সঙ্গে কথা বলায় অনীহা, বিরক্তি, কান্নার ভাব, একা থাকতে চাওয়া, নিজের সন্তানকেই সহ্য করতে না পারা এগুলো এই ডিপ্রেশন খুব স্বাভাবিক কিছু লক্ষণ।
পোস্টপার্টাম ডি্প্রেশন হল আসলে শারীরিক, মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনের একটি জটিল সংমিশ্রণ যা প্রসবের পর মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। মূলত প্রসবের 4 সপ্তাহের মধ্যেই এর লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। এর প্রধান লক্ষণগুলি হল নিজেকে সবসময় অপরাধী ভাবা, অজানা আশঙ্কায় দিন কাটানো, অতিরিক্ত ঘুম, ইরেগুলার জীবনশৈলী, সবসময় শরীর খারাপ ইত্যাদি। আসলে প্রসবের পর মহিলাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হয়। হরমোনের ভারসাম্য থাকে না, ফলে নানা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। মাথায় অদ্ভুত জটিল সব চিন্তা আসে।
তবে এই লক্ষণগুলি সাধারণ মনে করে, এড়িয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এগুলি যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে এগুলি থেকেই যায়। এর মধ্যে খুব কমন সমস্যাগুলি হল ঘুম না আসা, ক্ষুধামান্দ্য, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রবণতা, বাচ্চা কাঁদলে রাগ হওয়া ইত্যাদি।
ডিপ্রেশন কারণ
Postpartum Depression মা ও বাচ্চার দুজনেরই হতে পারে। হরমোনাল পরিবর্তন হল প্রধান কারণ। এছাড়াও প্রসবের পর মহিলাদের অনেক রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বাচ্চা হওয়ার পর নতুন মায়ের উপর অনেকটা দাযিত্ব এসে পড়ে। এর উপর শারীরিক দুর্বলতা, শরীরে স্ট্রেচ মার্কস স্পষ্ট হয়ে ওঠা, অবসাদ শুরু হলে পিঠে ব্যথা হওয়া, চুল উঠতে থাকা, স্তনের আকারে পরিবর্তন ঘটা ইত্যাদি নানা স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে মা-কে এই সময় কাটাতে হয়। এর সঙ্গে ওয়ার্কিং মাদার হলে কেরিয়ারের চিন্তা মনকে অশান্ত করে তোলে।
সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে
নিজের সন্তানের যত্নের সঙ্গে নিজেরও ভালো ভাবে দেখভাল করুন, নিজের যত্ন নিন। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার খান ডাক্তারের পরামর্শ মেনে। নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দিন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করুন, শপিং-এ যান। ঘরবন্দি জীবন কাটাবেন না। পরিবারে সকল সদস্যের মধ্যে থেকে সকলের সঙ্গে গল্পগুজব করুন। সমস্যাগুলো পছন্দের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন। সবথেকে প্রযোজন হল পর্যাপ্ত বিশ্রামের। সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই দরকার।
পরিবারের সহযোগিতা
মানুষের নির্ভরতার জায়গা হল তার ফ্যামিলি। পরিবার থেকে যদি নেতিবাচক মানসিকতা দেখানো হয় তাহলে অবসাদের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে দেরি হবে না। পরিবারকে এসময় পাশে থাকতে হবে। নতুন মায়ের জন্য ঘুমটা খুব দরকার, কিন্তু খানিকক্ষণ পরপর বাচ্চাকে খাওয়ানো, ডায়পার-কাঁথা বদলানো ইত্যাদি কারণে মায়ের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে।
ব্রেস্টমিল্ক আগে থেকে পাম্প করে রাখলে বা ফর্মুলা ফিডিং-এর ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যরা একটা নির্দিষ্ট সময় বাচ্চাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়ে নিতে পারে। এতে মা-ও কিছুটা সময় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। নতুন মায়েরা প্রথমে শিশুর দাযিত্বে কিছুটা ভুলভ্রান্তি করলেও ধীরে ধীরে সবাই ঠিকই শিখে যায়। তাই মায়ের ভুল না ধরে তাকে উৎসাহিত করা উচিত। বাচ্চার সঙ্গে সঙ্গে মা-কেও ছোটো ছোটো উপহার দেওয়া যেতে পারে। এই সাধারণ ব্যাপারগুলোই প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা থেকে মা-কে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।