গুরুতর সাইনাসাইটিস থাকা শিশুদের মধ্যে অরবাইটাল অ্যাবসেসের ঘটনা ১ শতাংশেরও কম। এ এক বিরল এবং গুরুতর অবস্থা। অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করলে তবেই এক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো যায়। দীর্ঘস্থায়ী সাইনাসাইটিস হতে পারে কোনও সংক্রমণ থেকে, সাইনাসে (নাকের পলিপে) কোনও বৃদ্ধি বা সাইনাসের লাইনিং ফুলে গেলে। এর লক্ষণ হিসাবে নাক আটকে যেতে পারে, যাতে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং চোখের আশপাশ, গাল, নাক বা কপাল ফুলে যেতে পারে। সাইনাসাইটিস সাধারণত ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু ভাইরাস আপার এয়ারওয়ে থেকে সাইনাসগুলোতে ছড়িয়ে যাওয়ার ফল।

Health article

সম্প্রতি অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতা, ৬ বছরের রুদ্রাঞ্জন সিনহা বাবুকে নতুন দৃষ্টিশক্তি দিল। রুদ্রাঞ্জন সিভিয়ার সাইনাসাইটিস উইথ রাইট সাইডেড অরবাইটাল সেলুলাইটিসের রোগী। বাঁকুড়ার জিরাবাদের এই শিশুর ডিসেম্বর ২০২২-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে জ্বর ছিল, সঙ্গে ছিল সর্দিকাশি। ওষুধ খেয়ে জ্বর কমে গেলেও চোখ ক্রমশ ফুলছিল, সঙ্গে ছিল ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া এবং চোখ নাড়ানোর অসুবিধা।

স্থানীয় ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তার চিকিৎসা করেছিলেন কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতায় রেফার করেন। রুদ্রাঞ্জনকে তার উদ্বিগ্ন বাবা-মা ডিসেম্বর ১০, ২০২২-এ অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার সিনিয়র ইএনটি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জেন ডা. শান্তনু পাঁজার কাছে নিয়ে আসেন। রোগী আসামাত্রই চিকিৎসা চালু করা হয় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সিটি স্ক্যানে প্রকাশ পায় যে, শিশুটির গুরুতর সাইনাসাইটিস উইথ রাইট সাইডেড অরবাইটাল সেলুলাইটিস হয়েছে।

এরকম গুরুতর পরিস্থিতিতে ডিসেম্বর ১২, ২০২২ তারিখে ডা. পাঁজা ও তাঁর দল শিশুটির উপর জরুরি অস্ত্রোপচার করেন। তাঁরা এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি উইথ অরবাইটাল ডিকম্প্রেশন করেন এবং আই সকেট ও সাইনাসে জমে থাকা সংক্রমিত জিনিসগুলো বার করে দেন। গোটা অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বাইরের দিকে কোনও কাটাকাটি ছাড়াই। এ এক ক্ষতহীন প্রোসিডিওর, যা এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রথমে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে সাইনাসগুলোতে ঢোকা হয়েছে এবং সংক্রমিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। তারপর চোখের মণি আর সাইনাস ছিদ্রের মধ্যেকার দেয়াল সরিয়ে দেওয়া হয় এবং অরবিটের যে আবরণকে পেরিঅরবাইটা বলা হয়, তাকে সামনে আনা হয়। এরপর পেরিঅরবাইটা কাটা হয় এবং চোখের মণির উপাদানগুলো ঘেঁটে দেখা হয়। চোখের মণির ভিতরের পুঁজ ও অন্যান্য নিঃসৃত জিনিস বার করে দেওয়া হয়, ফলে অপটিক ক্যানাল সমেত সম্পূর্ণ অরবিট ডিকম্প্রেসড হয়ে যায়।

চোখের চাপ থেকে স্বস্তি মেলায় এবং পুঁজ বেরিয়ে যাওয়ায় শিশুটির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অভাবনীয় উন্নতি হয়। ফোলার সমস্যা কেটে যায়, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং রং দেখার ক্ষমতা সম্পূর্ণ ফিরে আসে। হাসপাতালে থাকার পুরো সময়টা শিশুটির মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনা চলেছে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক মৌলিক ও তাঁর দলের তত্ত্বাবধানে। তিনি অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিক্স। দুর্গাপুরের বাসিন্দা রুদ্রাঞ্জনের বাবা-মা নিশ্চিন্ত এবং খুশি যে, যথাসময়ে হস্তক্ষেপ এবং সতর্ক যত্নের ফলে তাঁদের ৬ বছরের ছেলের দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো গেছে।

এই উপলক্ষ্যে কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিক্স ডা. কৌশিক মৌলিক জানিয়েছেন, ‘সাইনাস থেকে ইনফেকশন চোখে ছড়িয়ে গিয়েছিল আর আই সকেটে পুঁজ জমে গিয়েছিল। বাচ্চাটা খুবই অসুস্থ ছিল। চোখের মণির নড়াচড়া কমে গিয়েছিল এবং দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে যাচ্ছিল। এটা সাইনাস ইনফেকশনের সবচেয়ে ভয়ংকর জটিলতাগুলোর একটা। এখানে সময় মতো চিকিৎসা না হলে বাচ্চার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা ছিল।’

Health article
Dr. Shantanu Panja and the patient

ইএনটি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জেন ডা. শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, ‘এই অপারেশনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ বাচ্চার বয়স মাত্র ৬ বছর। এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে খুব সীমিত জায়গা নিয়ে চরম সূক্ষ্মভাবে, যাতে চোখের মণি আর অপটিক নার্ভের কোনও ক্ষতি না হয়। এমনকি আমরা কানের মাইক্রোসার্জারিতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এই অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন স্তরে সেগুলো ব্যবহার করেছি, কারণ ওগুলো আকারে বেশি ছোটো এবং খুব ছোটো জায়গায় সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করা যায়।’

অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতায় সাম্প্রতিকতম ইমেজ গাইডেড ন্যাভিগেশন সিস্টেমের সুবিধাও আছে, যা প্রায়ই এই ধরনের গুরুতর কেসের অস্ত্রোপচারে ব্যবহার করা হয়। এটা ডাক্তারদের অস্ত্রোপচারের সময়ে শরীরের জরুরি কাঠামোগুলো খুঁজে বার করতে সাহায্য করে এবং সেগুলোর ক্ষতি আটকানো যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...