এর কোনও উত্তর নেই আমার কাছে…। আমি চলি। কথাটা বলে কস্তুরী ক্যাফে কফিডে থেকে বেরিয়ে পড়ে।
এখান থেকে বাড়ি পৌঁছোতে পৌঁছোতে হার্ডলি পঞ্চাশ মিনিট। ওলা, উবের যাহোক একটা বুক করে নিতে হবে। বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সেই দুপুরে। খাওয়ার পরে। সবাই ওই সময়ে টিভি দেখতে ব্যস্ত থাকে। কস্তুরী নিজের কাজ সারতে পারে। কিন্তু শাশুড়ির চায়ে টাইমের আগে পৌঁছোতে না পারলে আবার দক্ষযজ্ঞ। বলে এসেছে, সহেলি, কস্তুরীর কলেজবেলার বান্ধবীর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি, তাই যাচ্ছে দেখা করতে। সন্ধের মধ্যে ফিরে আসবে। ওর কোথাও বেরোনোর কথা শুনলে তমালের মা-বাবার মুখটা সাংঘাতিক রকমের ভারী হয়ে যায়। আজও সেটাই দেখে বেরিয়েছে।
ভালো লাগছে না কিছুই। রাস্তায় না, না একেবারে তমাল বাড়িতে ফিরলে তবেই কথা বলবে। কেন করল ও এরকম? শৈবালদা কস্তুরীর চেয়ে অন্তরঙ্গ হল ওর কাছে? কস্তুরীর নামে কেউ কিছু বললে সেটা ওকেই তো সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারত। তা না করে? তমাল এতটা বদলে গেল কেন? আগে তো এমন কখনও করত না উলটে বলত নিজেদের সম্পর্কে যাই হোক না কেন, কখনও কোনও কথা পাঁচকান করতে নেই। ছি ছি…
বিয়ে হবার পর থেকে কতটা সময় নিজের জন্য পেয়েছে কস্তুরী? চার চারটে বছর কেটে গেছে এইভাবে। শুধু পাগলের মতো চেষ্টা করে চলেছে অন্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য। আর বাকিরা…। যেনতেনপ্রকারেণ ওকে নিজেদের থেকে হেয় দেখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সত্যি সত্যি কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে হয়তো এতটা অশান্তির কথা মাথাতেই আসবে না…। কিছু না কিছুতে ব্যস্ত থাকতেই হবে।
বিকেল গড়িয়ে শহরের বুকে সন্ধ্যা নামছিল। নীল আকাশটা একটু একটু করে কালোমাখা কালিতে ভরে উঠছিল। কস্তুরী ফুটপাথের চৌকো খোপগুলো মাড়িয়ে মাড়িয়ে একটা আলোময় পথ খুঁজছিল। সত্যি কি কোনওদিন খুঁজে পাবে ও পথটা? নাকি এই অন্ধকার খোপগুলোই ওকে মুছে দেবে চিরদিনের মতো।
আরে কস্তুরী না…? খবর কী? কতদিন পর?
হুরপুর করে ওর গায়ে ওপর উঠে পড়ে একটা বেশ মোটাসোটা ভদ্রমহিলা গোছের কেউ। মুখটা চেনা চেনা লাগছে। তবে নামটা ঠিক পেটে এলেও মুখে আসছে না। কে যেন… কে যেন…।
যাহ কেলো। চিনতে পারছিস না? সানগ্লাসটা খুলে কপালে সেঁটে দেন মহিলা।
ওরে বাপরে। রিমলি তো। রিমলি…।
এতক্ষণে মা আমায় দয়া করলেন দেখছি। কস্তুরীর হাতে একটা ছোট্ট চিমটি কাটে রিমলি।
তা কী করে চিনব বল? কী সাংঘাতিক ওজন বাড়িয়েছিস মাইরি।
দিল দেখো দিল, ওজন দেখো না কন্যে। সুর কেটে বলে রিমলি।
একদম বদলাসনি তুই।
তুইও না। ঠিক যেমন ছিলিস তেমন…তখনও ম্যাদামারা ছিলিস, এখনও তাইই আছিস। নো চেঞ্জ। শুধু তোর চোখ দুটো…। হায়। এখনও সেই ঘায়ে করে দেওয়া। ছেলে হলে বিশ্বাস কর কস্তুরী ঠিক তোর প্রেমে পড়ে যেতাম।
ফাজলামো ছাড়। কেমন আছিস তাই বল?
আর কেমন আছি। জরা-ব্যাধি-কাম নিয়ে একেবারে জর্জরিত। তার মধ্যে শেষেরটার পার্সেন্টেজ একেবারে লোয়ে দিকে বুঝলি, নেই বললেও চলে। কথাগুলো বলে নিজেই হো হো করে হেসে ওঠে রিমলি।
উফঃ। এটা রাস্তা…।
ন্যাকামি ছাড়। তোর কী খবর বল। বাই দ্য ওয়ে আনমনা হয়ে এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলিস বলতো? অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলাম। ভাবলাম যদি তুই রাস্তা পেরিয়ে যাস তাই আগেভাগে ডাকলাম। আগে তো এখানে কখনও দেখিনি। আমার তো ওই বিল্ডিংটার ফোর্থ ফ্লোরে অফিস। চল না ক্যাফেতে বসে দুটো কোল্ড কফি মেরে দিই। রিমলি ডানহাতের একটা আঙুল তুলে কাছের সাদা বিল্ডিংটা দেখাল।
—