( ৯ )
নারে বিশ্বাস কর রিমলি, আমার হাতে একদম সময় নেই। একটু কাজে এসেছিলাম…।
আহা লক্ষ্মী বউমা আমার…। যাও বাবা তুমি ঘরে যাও। শাশুড়ির পা টেপো। মারব মাথায় এক গাঁট্টা। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা দে শিগগির। মুখ ভেংচি দিয়ে রিমলি বলে।
সেভ করে নে ৯৪৫৭২… আমার মোবাইলটা কোথায় গেল? কোথায় রাখলাম এক্ষুনি তো ব্যাগের চেনের ভেতরে ঢুকিয়েছিলাম। রাস্তাটা পার হয়ে ওলা বুক করতাম। কোথায় গেল বলতো…?
দেখ ব্যাগেই রেখেছিস। কী উত্পাত।
কস্তুরী। কস্তুরী এই যে এদিকে এদিকে। ক্যাফের দিক থেকে হাত নাড়তে নাড়তে শৈবাল এগিয়ে আসে।
খুব বাঁচান বাঁচালে বাবারে বাবা। একটা অফিসের কলে ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম। উঠতে গিয়ে দেখি ফোনটাই ফেলে গেছ তুমি। দ্যাখো তো কী কাণ্ড। নাও নাও শিগগিরই ধরো। না হলে যে কী হতো? তোমাকে কুরিয়ার করে ফোন পাঠাতে হতো। নাহলে আমি ফোন ফেরত দিচ্ছি তোমার বাড়ির লোক জানলে…।
থ্যাং ইউ শৈবালদা। সত্যি খুব বিপদে পড়তাম। আসলে আমি…।
ওসব কোনও ব্যাপার নয়, এরকম হয়ে থাকে। পরে কথা হবে, আমাকে বেরোতে হবে জলদি। তোমাকে কি ড্রপ করে দেব?
না না আমি চলে যাব। আপনি যান।
ওকে ডান। সি ইউ নেক্সট টাইম। একটা থাম্বসাপ দেখিয়ে হনহন করে হেঁটে ক্যাফের পার্কিং জোনের দিকে চলে যায় শৈবাল।
ও তাহলে এটাই তোর সেই…? কী রে কস্তুরী? মালটা কে রে? মালটা হেব্বি হ্যান্ডু। তারপর কী সাংঘাতিক টল। উফঃ!
প্লিজ সুপু কাউকে বলিস না, প্লিজ…।
আরে তুই এমন করে ভয় পাচ্ছিস কেন? মালটা তো দেখছিলাম বেশ ডেসপারেট। তোদের এই দেখাটা বেশ চুপিচুপি। তাই না? ওই যে বলল ফোনটা সবার সামনে ফেরত দিতে পারত না। আশা করি তুই নিশ্চয়ই ওকে রাখি পরাতে আসিসনি? ইশারা করে চোখ টেপে রিমলি।
না মানে বিশ্বাস কর, আমি না বেরোতে চাইনি। এমন একটা ঘটনা ঘটল ঠিক না করতে পারলাম না। এখন যে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
কী আর করবি আমার সঙ্গে কফি মারবি। চল তো… মেলা বকিস না। অনেক হয়েছে।
না রে সুপু বিশ্বাস কর দেরি হলে প্রবলেমে পড়ে যাব…।
ওর কোনও কথা না শুনে হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে ক্যাফের মধ্যে ঢুকে পড়ে রিমলি।
কোথায় চরতে গেছিলে? বাড়িতে ঢুকতেই ঠাকুমাশাশুড়ির প্রথম মন্তব্য ছিল এটাই।
চা চেয়ে চেয়ে গলা শুকিয়ে গেল, তোমার শাশুড়ির তো টিভি সিরিয়াল ছেড়ে ওঠবারই সময় নেই। আমাকে চা দেবে কে? তা কোথায় গেছিলে শুনি?
আমি তো বলে গেছিলাম ঠাকুমা। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ওর বাড়ি যাব। অনেকদিন দেখা হয়নি তাই…। রান্নাঘরের দিকে আসতে আসতে বলেছিল কস্তুরী।
এখন চা করে দেব ঠাকুমা?
আর মা। তোমাকে আর কিছু করতে হবেনি, রাতের বেলা হয়ে গেল, ভাত খাব। ঠাকুমা গজগজ করে।
বন্ধু? তোমার শাশুড়ি যে বলল, নাং… নাংয়ের বাড়ি গেছিলে?
কানটা গরম হয়ে ওঠে কস্তুরীর। কী ভাষা। বাইরের কাপড়েই রান্নাঘরে ঢুকে ভাত বসিয়ে দেয়! বাড়ি তো চলে আসতেই চেয়েছিল। শৈবালদার সঙ্গে কথা বলে ফিরে এলেই ভালো হতো। এতটা দেরি হতো না। শুধুমুধু আটকে দিল রিমলি। না করবেই বা কী করে? কতবছর পর দেখা। তবে একদিক থেকে দেখতে গেলে ভালোই হয়েছে। রিমলি তো গোটাকতক সেলফি তুলল ওর সাথে। যদি বাড়ির অবিশ্বাসের সুরটা আরও বাড়ে, তাহলে ছবিগুলো দেখাতে তো পারবে।
সন্ধে থেকে কতজন আইল, বউটারে দেখতে পেল না। ঘরের বউ ঘরে নাই। চরতে গেসে। বউমা আমার কথা না-হয় ছাড়ান দাও। ছেলেটাকে তো কিছু খেতে দেবে। কতক্ষণ আর শুকনা মুখে থাকবে? ঠাকুমার কথা শুনে বুকের ভেতরটা ধক করে উঠেছিল।