কোথাও যেন একটা ছন্দপতন। কোথাও যেন তাল কেটে যাচ্ছে। তমাল নিজেকে কস্তুরীর মধ্যে মিশিয়ে দিলেও সেই পুরোনো ওম-টা যেন নেই। সেটা কি তমাল নেশা করেছে বলে নাকি…। তাহলে কি সেই বিশ্বাসের ভিতটাই হারিয়ে গেছে?

তারপরেই একটা প্রচণ্ড ধাক্কায় কস্তুরীর শরীরটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তমাল এক ঝটকায় ওর পাশ থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

( ১০ )

তোমার সামনে গিয়ে আর দাঁড়াতে চাই না আমি। হয়তো তুমিও মনে মনে চাও না। তোমার কাছে এত তাড়াতাড়ি আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে পারিনি আমি, ভেবেছিলাম বাকিরা ঠিক যেভাবে আমাকে ছুঁতে চেয়েছে তুমি তার থেকে অনেকটাই আলাদা। তোমার সঙ্গে কথা বলে, তোমাকে ভালোবেসে একটা অন্যরকম আকাশ খুঁজে পেতাম। যে-আকাশে সারসার ভিড় করে থাকত আমার বাড়িঘর। আমার পছন্দের রঙিন রামধনু।

বু সব মিথ্যে, সবটুকু…

তোমার হয়তো মনে হতে পারে আমি মেয়েটা খুবই স্বার্থপর। নাহলে তোমার কেরিয়ারের কথা না ভেবে কী করে এসব বলতে পারি? বড্ড ভয় হয়। পা টলমল করে। মনে হয় তোমাকে ছাড়া গোটা পৃথিবীটা রাহুর মতো গিলতে আসছে। তোমার ওই নিরাপদ হাত দুটোর ছোঁয়া যে আমাকে কী ভরসা দিয়েছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কিন্তু এতটাও স্বপ্ন দেখা হয়তো আমার ঠিক হয়নি।

ঠিক হয়নি স্বার্থপরের মতো আমার বিশ্রী জীবনে তোমাকে নিয়ে আসায়। জানি না পারব কিনা তবু চলে যেতে চাই, তোমার থেকে অনেক অনেক দূরে। যেখানে এতটুকু মনে পড়বে না তোমাকে। মনে পড়বে না তোমার কথাদের। কারুর জন্য নয়, নিজের মধ্যে নিজেকে আরও ডুবিয়ে রেখে তোমাকে ভুলে যেতে চাই। তুমি ভালো থেকো। ভালো থেকো সবার সাথে।

…কস্তুরী।

চিঠিটা মুড়ে ওর ভাইয়ের হাতে দিয়েছিল কস্তুরী।

আচ্ছা দিদি তোমাদের দুজনের কী হয়েছে বলো তো?

কিছুই হয়নি, তুই চিঠিটা ওকে দিয়ে দিস। আর বেশি বিরক্ত করব না তোদের।

দাদাকে জিজ্ঞেস করলে তো কোনওদিনই কোনও কথার যথাযথ উত্তর পাওয়া যায় না। তুমি তো অন্তত বলো। মুখ গোমড়া করে থাকলে কী করে চলবে?

আরে না না কিছুই হয়নি। ঠিকই আছি।

কতটা ঠিক আছ সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। চোখ মুখ লাল করে ফেলেছ কেঁদে কেঁদে। ও দিদি বলো না প্লিজ।

বলার তো তেমন করে কিছু নেই। সবকথাই আমি চিঠিতে লিখে দিয়েছি।

বেশ তাহলে আমি চললাম। বলবেই না যখন তাহলে আর আমি এখানে বসে থেকে কী করব? তবে তোমরা দুজনে যাই করো না কেন আমি কিন্তু তোমার কাছে আসব বারবার। সে তুমি যতই খারাপ মনে করো।

ইচ্ছে হলে আসিস।

কস্তুরী কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। ছেলেটা আর বেশিক্ষণ দাঁড়ায়নি। চলে গেছিল। হয়তো বাচ্চা ছেলেটার সঙ্গে খুব রুড বিহেভ করা হয়ে গেল। মনটা একদম ভালো নেই। সব কিছু ভেঙে গেল। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। একটা সম্পর্ক তৈরি হতে যতটা ভালোবাসা, যত্ন, ধৈর‌্য লাগে শেষ হয়ে যাওয়ার সময় ততটাই সমপরিমাণ ঘৃণা জমা হয় যেন। মধুমাখা সেই আবেশটাই উবে গিয়ে তৈরি হয় বিষের আকর। হয়তো কস্তুরীই ওর যোগ্য নয়। হয়তো কস্তুরীই এই কদিনে ওর মনের কাছাকাছি পৌঁছোতে পারেনি।

স্বাগতা যে বুকে চায়, একথা ওর ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছিল আগেই। মেয়েটার পরিবার ওদের মায়ের দিকের কোনও দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তাছাড়া দূর সম্পর্ককে কাছের করতে সময় তো আর বেশিদিন লাগে না! নাহলে ওদের বাড়িতে এত ঘন ঘন যাতায়াত করবে কেন ওরা?

সেদিন মামারবাড়ি থেকে ফোনটা করে তো পরিষ্কার শুনেছে ওর গলার আওয়াজ। স্বাগতাকে নাম ধরেও ডাকছিল। তখন ফোনটা নামিয়ে রাখলেও ঘন্টাখানেক পরে আবার রিং করেছিল। মনকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিল না। এও কি সম্ভব?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...