করোনা আমাদের জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে অনেকাংশে। ভয়, চিন্তা, ভবিষ্যৎ-ভাবনা এসব তো আছেই। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থেকে শুধু দুশ্চিন্তা আর সারাক্ষণ মোবাইল ফোন-এর স্ক্রিনে চোখ রাখার যে কু-প্রভাব পড়েছে আমাদের শরীরে-মনে, তা কাটিয়ে ওঠা দরকার। কারণ, এই বদলে যাওয়া জীবনেও নতুন ভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজতে হবে। নতুন বছরে খুঁজে নিতে হবে বেঁচে থাকার নতুন সংজ্ঞা। রইল গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।

মানসিক সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখুন

সমস্যা এবং দুশ্চিন্তাও পিছু হঠছে না। এই পরিস্থিতিতে ভাবতে হবে নতুন ভাবে। শরীরকে যতটা সুরক্ষিত রাখতে হবে, ঠিক ততটাই গুরুত্ব দিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে। মনে আনন্দ থাকলে অর্ধেক রোগ পালিয়ে যায়।

যারা নানা কারণে করোনার আগে থেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন, তারা করোনা আবহে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বলা যায় মানসিক সংকটে রয়েছেন। আবার যারা আগে সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন মানসিক ভাবে, তারাও অনেকে করোনা আবহে চার দেয়ালের মধ্যে দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকতে থাকতে নানা ভাবে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাই, মানসিক সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখা কিংবা পুনরুদ্ধার করা এখন ভীষণ জরুরি। আর এই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে হবে নিজেকেই। বাড়িতে থাকলেও, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে কথা বলে মন ভালো রাখুন। অবশ্য শুধু ভিডিয়ো কল-ই নয়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেনড করেও মন ভালো রাখা যায়।

সতর্কতা এবং সুরক্ষা

মানুষ সামাজিক প্রাণী। তাই সামাজিক জীবনযাপন করা জরুরি। হেসে, খেলে, কথা বলে দিনের কিছুটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবন যেহেতু অনেকটাই বদলে গেছে, তাই সুরক্ষার জন্য সবরকম সতর্কতা বজায় রেখেই আমাদের সামাজিক হতে হবে। করমর্দন, আলিঙ্গন এসব না করে শুধু কথা বলে, এক ছাদের নীচে বসে খাওয়াদাওয়া কিংবা হইহুল্লোড় করেও অনেকটাই আনন্দ উপভোগ করে শরীর-মন ভালো রাখতে পারি। কারণ, দীর্ঘ বিরতির পর চেনাজানা মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর পর আমরা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারব মানসিক অবসাদ।

আলোর দিশা

মনে রাখতে হবে, সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রবাদ আছে, যে-সমস্যার সমাধান নেই, সেটা কোনও সমস্যাই নয়। অতএব, মনে জোর রেখে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। এই ভেবে মনে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে যে, অন্ধকারের পরই থাকে আলো, তাই অন্ধকার পেরিয়ে আলোর সামনে দাঁড়াতে হবে। প্রায় দুবছর করোনা আমাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত করলেও, জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে ভেবে হায়-হুতাশ করে লাভ নেই। বরং বাঁচার পথ খুঁজতে হবে সবসময় পজিটিভ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে।

তাই সমস্যা থাকলে, সেই সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করতে হবে। যেমন, যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই কোভিড থেকে সেরে উঠলেও, মস্তিষ্কের সামান্য অস্বাভাবিকতা যদি দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকদের পরামর্শ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্কের চিকিতসা করা উচিত সঠিক ভাবে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, অনেকে কিন্তু নিজের অজান্তেই কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। তাই কোভিডের উপসর্গ না থাকার কারণে অনেকে টেস্ট করাননি অথচ তাদের শরীরে করোনো বাসা বেঁধেছিল। অতএব শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত।

প্রথমে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হবে, তারপর অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে আলোর দিশা খুঁজতে হবে। তাই ভালো খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা, ফিজিক্যাল চেক-আপ, সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ফাস্ট ফুড অ্যাভয়েড করা প্রভৃতির মাধ্যমে শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।

যেখানে ভিড়ভাট্টা কম, উপায় থাকলে সেইসব জায়গায় বেড়াতে যাওয়া উচিত মন ভালো রাখার জন্য। আর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার পর, কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে অন্যান্য সমস্যা। নিজে সমস্যার সমাধান করতে না পারলে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।

করোনাকালে যারা কাজ হারিয়েছেন এবং আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আছেন, তাদের একটু অন্যভাবে ভাবতে হবে। যেমন, লজ্জা না করে চেনাজানা মানুষের কাছে নিজের চাকরির প্রয়োজনের কথা বলতে হবে এবং প্রয়োজনে ছোটো কাজও করতে চান, সেই ইচ্ছেও জানিয়ে রাখুন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে পেশা পরিবর্তন করতেও দ্বিধা করবেন না, একথা জানান পরিচিতদের। দেখবেন ঠিক একটা না একটা ব্যবস্থা কোনও একজনের মাধ্যমে হয়ে যাবে।

এমনকী যখন চাকরি একান্তই জোগাড় করতে পারবেন না, তখন হাতে যদি কিছু জমানো টাকা থাকে তাহলে যে-কোনও একটা ব্যাবসা শুরু করে দিন। এতে আর্থিক এবং মানসিক পরিস্থিতি ভালো থাকবে। মনে রাখবেন, পরিস্থিতি যখন খারাপ থাকবে, তখন মনকে আরও বেশি শক্ত করতে হবে এবং মাথা নুইয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার।

প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে কিংবা ব্যক্তিগত ভাবে টাকা ধার নিয়ে ব্যাবসা শুরু করুন। আর কোনও পরিস্থিতিতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে চলবে না। বরং এই সময় শপথ করুন যে, নিজেকে সংযত রেখে সমস্যামুক্ত হবেন। মানসিক জোর বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন। সাঁতার কিংবা সাইক্লিং করেও শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নিজেকে স্বাস্থ্যবান রাখা যায়। অতএব, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করুন, দেখবেন আলোর দিশা খুঁজে পাবেনই।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...